কুরবানির অর্থননৈতিক গুরুত্ব

হাড়-শিং : ১শ কোটির বাজার ২০ কোটিতে ঝুলছে
কোরবানির পশুর একটি হাড়ও ফেলনা নয়। হাড়, শিং, দাঁত ও খুর রপ্তানি ও এগুলোর
দ্বারা তৈরি পণ্য বাজারজাত করে বর্তমানের ২০ কোটি টাকার বাণিজ্য ১শ কোটিতে নিয়ে
যাওয়া সম্ভব ।
এখানে হাড় ও শিং থেকে সামান্য পরিমানে চিরুনী, বোতাম, হস্তশিল্প তৈরি করা হলেও
চাহিদার অধিকাংশই আমদানি করা হয় বিদেশ থেকে। অথচ দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠা করা গেলেই
আমাদনি বন্ধের পাশাপাশি রপ্তানির জন্য পড়ে রয়েছে বিশাল বাজার।
বাংলাদেশে গরু, মহিষ, ছাগলের সব রকমের হাড়, পায়ের খুর, দাঁত, শিং সবটুকু অংশই ব্যবহার করা
হয়। বিভিন্ন
ক্যাটাগরির হাড়ের মধ্যে দেশে ক্র্যাশবোন- ৩/৮, ৫/৮ নামের ভালোমানের একটি
হাড় প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যার প্রধান ক্রেতা গ্লোবাল
ক্যাপসুল লিমিটেড। কোম্পানিটি বছরে ৩৪টি হাড় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রায়
১২ কোটি টাকা মূল্যের হাড় কেনে। এ দিয়ে তৈরি হয় উন্নতমানের ক্যাপসুল (ওষুধের নমনীয়
মোড়ক) । প্রতিষ্ঠানটি টনপ্রতি ২৮ হাজার টাকা দড়ে প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজার টন হাড় ও
শিং সংগ্রহ করে থাকে।
হাড় প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পানিগুলো বছরে ৭-৮
কোটি টাকার হাড়, শিং বিদেশে রপ্তানি করে। জাপান, জার্মানি, ভারত ও চীনে
সাধারণদ রপ্তানি করা হয়। কিছু জটিলতার কারণে ইরান, ইন্দোনেশিয়াতে ব্যপক চাহিদা
থাকা সত্ত্বেও রপ্তানি সম্ভব হয় না। এ জায়গাতে সরকারের একটু সহযোগিতা পেলে এসব
দেশে হাড় রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ানো সম্ভব।
হাড় থেকে তৈরি হয় বোতম। কিন্তু ভালো মানের
বোতাম তৈরির কোনো কারখানা দেশে নেই। চাহিদার সবটুকুই মেটানো হয় আমাদনি থেকে। অথচ
বোতাম তৈরির কাঁচামাল বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ইউরোপে আবার প্রচুর চাহিদা রয়েছে
ভালোমানের বোতামের।
হাড় থেকে এক ধরনের গুঁড়া তৈরি করা হয়। যা দিয়ে
তৈরি হয় নিটবন নামের মুরগির খাবার। এটি লেয়ার-ব্রয়লার মুরগির খাবারে প্রতি কেজিতে
১৮-২০ শতাংশ মেশানো হয়। এটি পুরোপুরি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। দেশে ব্যপক চাহিদা
এবং কাঁচামাল থাকলেও পুরোটাই আমদানি করা হচ্ছে। এটি আমদানিতে প্রতিবছর খরচ হয়
২শ-২৫০ কোটি ডলার।
‘আমাদের দেশের যে পরিমান
পণ্যের চাহিদা, বিদেশে হাড়-শিং
ও এগুলো থেকে তৈরি পণ্যের যে চাহিদা রয়েছে তা নিয়ে কাজ করতে পারলে বছরে ২০ কোটির এ
বাজারটিকে ১০০ কোটি ছাড়িয়ে নেয়ার প্রচুর সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হাড় শিং
দিয়ে পণ্য তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হলেও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করা সম্ভব
হবে। এতে করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাইরে থেকে লোক আনতে হবে না ।
উল্লেখ্য, এক সময় হাড়-শিং রপ্তানির ওপর
১৫ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেয়া হলেও এখন দেয়া হয় মাত্র ৫ শতাংশ।
No comments