মুহইউস সুন্নাহ, আহলে বাইতে রসূল, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল অভূতপূর্ব তাজদীদ মুবারক! ‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা ও বাস্তবায়ন
পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার ফযীলত মুবারক প্রকাশে সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, নূরে মুকাররম, হাবীবুল্লাহ, মুহইউস সুন্নাহ,
কূল মাখলুকাতের
ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার শ্রেষ্ঠতম ইমাম
ও মুজতাহিদ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম
আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার সম্মানার্থে উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক প্রকাশার্থে পবিত্র সুন্নত
মুবারক উনার সীমাহীন ফযীলত মুবারক প্রকাশ করেছেন।
তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন- “সৃষ্টির শুরু থেকে ক্বিয়ামত অবধি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস
সালাম উনারা, উনাদের সমস্ত উম্মত, পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সমস্ত হযরত আউলিয়া কিরাম রহমাতুল্লাহি
আলাইহিম উনারা সহ দুনিয়ার সমস্ত মানুষের সমস্ত নেক আমলগুলো যদি মীযানের এক পাল্লায়
রাখা হয় এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র একটি সুন্নত মুবারক এক পাল্লায় রাখা হয়; তাহলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার সেই একটি সুন্নত মুবারক উনার ওজন তথা ফযীলত মুবারক-ই সবচেয়ে বেশী
ভারী ও সর্বশ্রেষ্ঠ-সর্বোত্তম এবং সম্মানিত হবেন।” সুবহানাল্লাহ ওয়া সুবহানা রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আর সেই সম্মানিত ফযীলত মুবারক সমূহ যাতে বর্তমান সময়ে সমস্ত উম্মত লাভ করতে পারে, সেই লক্ষ্যে সাইয়্যিদুনা মুজাদ্দিদে আ’যম হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস
সালাম তিনি সীমাহীন পবিত্র সুন্নত মুবারকগুলো সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে তাহক্বীক্ব করে
বের করে জারী করছেন। এক কথায় পায়ের তলা থেকে মাথার তালু এবং হায়াতের শুরু থেকে ইন্তেকাল
পর্যন্ত সমস্ত সুন্নত মুবারক তথা যিন্দেগীর শতভাগ সুন্নত মুবারকগুলো জানিয়ে দিচ্ছেন।
সুবহানাল্লাহ ওয়া সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুবহানা
মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
এমনকি সেই সমস্ত সুন্নত মুবারক পালনের সুবিধার্থে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘আন্তর্জাতিক
পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’।
যাতে করে বর্তমান সময়ের উম্মতগণও সেই মর্যাদাপূর্ণ সুন্নত মুবারকগুলো পালন করে
পূর্বের যামানার মানুষদের মত ফযীলত হাছিল করতে পারেন, যেমনটা হাছিল করেছেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনারাসহ খইরুল কুরুনের মহাসম্মানিত ব্যক্তিগণ। সুবহানাল্লাহ!
পারিবারিক, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ব্যবহৃত
সুন্নতী আসবাবপত্র ও সুন্নতী তৈজসপত্র সমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
সুন্নতী আসবাবপত্র ও তৈজসপত্র উনাদের পরিচয়: সাধারণভাবে আসবাবপত্র শব্দের স্বাভাবিক
অর্থ হচ্ছে ঘরের দ্রব্যাদী, ঘরে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয়
জিনিসপত্র এবং তৈজসপত্র শব্দের সাধারণ অর্থ হচ্ছে বাসন-কোসন তথা দৈনন্দিন জীবনে রান্নাবান্না
ও ব্যবহারিক জীবনে সামগ্রিকভাবে যা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এককথায় মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা এবং হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা ‘আনহুম উনারা যেসমস্ত প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদী, আসবাবপত্রসহ যাবতীয় সরঞ্জামাদী ব্যবহার করেছেন বা ব্যবহার করার
জন্য আদেশ মুবারক করেছেন সেসকল দ্রব্যাদী ও আসবাবপত্রকে সুন্নতী আসবাবপত্র বলা হয়।
আর উনারা যেসকল প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদী, তৈজসপত্র ব্যবহার করেছেন
সেসকল দ্রব্যাদী ও তৈজসপত্রকে সুন্নতী তৈজসপত্র বলা হয়।
সম্মানিত সুন্নতী বিছানাপত্র: ঘুমানোর জন্য প্রয়োজন বিছানাপত্রের। চামড়ার তৈরী
খেজুরের ছোবড়া মিশ্রিত বিছানায় ঘুমানো খাছ সন্নত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন
আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস
সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা প্রায় সকলেই চামড়ার তৈরী খেজুরের ছালভর্তি বিছানায় শুয়ে আরাম করতেন
এবং ঘুমাতেন। পবিত্র সুন্নতী বিছানাপত্র কেমন ছিল সে সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ
حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا
السَّلَامُ قَالَتْ: كَانَ ضِجَاعُ النَّبِـيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
اَلَّذِيْ يَنَامُ عَلَيْهِ بِاللَّيْلِ مِنْ اَدَمٍ مَـحْشُوًا لِيْفًا
অর্থ: উম্মুল মুমিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দিক্বা আলাইহাস সালাম
উনার থেকে বর্ণিত তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে বিছানা মুবারকে ঘুমাতেন
তা ছিল চামড়ার তৈরী এবং তার মধ্যে খেজুরের ছাল ভর্তি ছিল। (মুসলিম শরীফ, আখলাকুন নবী)
(سَرِيْرٍ) সারীর বা চারপায়া বিশিষ্ট চকি মুবারক :
শাল, সেগুন, শীল কড়ই কাঠের তৈরী সুন্নতী চকি মুবারক ব্যবহার করা পবিত্র সুন্নত
মুবারক। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
চকি মুবারক ছিল চার পায়া বিশিষ্ট এবং কাঠের তৈরী। এছাড়াও চারপায়া ছিল দড়ির তৈরী, যার ফলে কখনো কখনো নূরুল মুজাসসাম বা জিসিম (দেহ) মুবারকে দাগ
পড়ে যেত।
পরিমাপ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
দু’ ধরনের চকি মুবারক ব্যবহার করেছেন। একটি ছোট, যার দৈর্ঘ্য সাড়ে চার হাত বা ৮১ ইঞ্চি এবং প্রস্থ দুই হাত বা ৩৬ ইঞ্চি। আর উচ্চতা
এক বিঘত বা নয় ইঞ্চি। আর অপরটির দৈর্ঘ্য সাড়ে চার হাত, প্রস্থ সোয়া তিন হাত বা সাড়ে ৫৮ ইঞ্চি। আর উচ্চতা এক বিঘত বা
নয় ইঞ্চি। উভয়টির মধ্যে চারটি করে পায়া মুবারক ছিল। তাছাড়া সেই চকি মুবারক উনার ছাউনী
মুবারকও দুই ধরনের ছিল। একটি ছিল কাঠের অপরটি ছিল রশির। (সীরাতুন নবী এবং অন্যান্য
সীরত গ্রন্থসমূহ)
খেজুর পাতার চাটাই বিছিয়ে নামায পড়া সুন্নত: বাজারে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ছবি, পবিত্র মসজিদসমূহের ছবি সম্বলিত যায়নামায পাওয়া যায়, যাতে নামায আদায় করলে জায়িয তো হবেই না বরং হারাম ও কুফরী হবে।
তবে খাছ সুন্নত হিসেবে খেজুর পাতার চাটাইয়ে নামায আদায় করা ফযীলতের কারণ। পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ
الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ
اللهِ صلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّيْ عَلَى الْـحَصِيْرِ وَالْفَرْوَةِ
الْمَدْبُوْغَةِ .
অর্থ: হযরত মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (খেজুর পাতার তৈরী) চাটাই ও প্রক্রিয়াজাত
অর্থাৎ দাবাগত করা চামড়ার উপর ছলাত আদায় করতেন। (আবু দাউদ শরীফ)
(حَصِيْرٍ) হাছীর বা খেজুর পাতার চাটাই মুবারক: বর্তমান সময়ে খাট পালংক ও বাহারী ধরনের চকিসহ
আরাম আয়েশের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা ও মাধ্যম তৈরী হয়েছে। অথচ এর বিপরীতে পবিত্র সুন্নত
মুবারক উনার মাঝে রয়েছে অফুরন্ত ফযীলতসমৃদ্ধ বিভিন্ন চকি বা চাটাই ও সংশ্লিষ্ট বিছানাপত্র।
যেগুলো ব্যবহারে অফুরন্ত ফযীলত রয়েছে। এ বিষয়ে দলীলসমূহ রয়েছে। (তিরমিযী শরীফ: ২৩৭৭; ইবনে মাজাহ শরীফ: ৪১০৯; মুসনাদে আহমাদ শরীফ: ২৭৪৪)
(وِسَادَةٍ) উয়িসাদাহ্ বা চামড়ার বালিশ মুবারক:
সাধারনতঃ শয়নকালে মাথার নিচে বালিশ ব্যবহার করা হয়। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বালিশ মুবারক সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ
اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ
كَانَ فِرَاشُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ اَدَمٍ
وَحَشْوُه مِنْ لِيْفٍ.
অর্থ: “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বালিশ মুবারক ছিল চামড়ার তৈরী এবং তার ভেতরে
ছিল খেজুর গাছের ছাল।” (বুখারী শরীফ: ৬৪৫৬)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খেজুর
গাছের পাতা ও ছোবড়া বা ছাল ভর্তি চামড়ার বালিশ মুবারক ব্যবহার করেছেন। যার দৈর্ঘ্য
২৪ ইঞ্চি আর প্রস্থ ছিল ১৮ ইঞ্চি।
চিরুনী ব্যবহার: চিরুনী হলো মাথা পরিপাটি
ও সুন্দর করার এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন
আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত বানাতু রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস
সালাম উনারা সকলেই এবং উনাদের অনুসরণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারা চিরুনী দিয়ে মাথা আচড়াতেন এবং পরিপাটি থাকতেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ
اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ عَنِ
النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّه كَانَ يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ مَا اسْتَطَاعَ
فِيْ تَرَجُّلِهٖ وَوُضُوْئِهٖ
অর্থ: হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
থেকে বর্ণনা মুবারক করেন। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চিরুনী দিয়ে চুল মুবারক আঁচরাতে ও ওযূ মুবারক করতে যথাসাধ্য
ডানদিক থেকে শুরু করতে পছন্দ করতেন। (বুখারী শরীফ)
কোন কোন বর্ণনায় হাতির দাঁতের চিরুনী ব্যবহার করার কথা উল্লেখ রয়েছে।
আয়না ব্যবহার করা খাছ সুন্নত: আয়না ব্যবহার করা খাছ সুন্নত মুবারক। স্বয়ং নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আয়না মুবারক ব্যবহার
করতেন তথা আয়না মুবারকে উনার নুরুর রহমত তথা চেহারা মুবারক দেখতেন। কিছু কিছু বর্ননায়
পাওয়া যায়, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় যেহেতু বর্তমানের মত আয়না ছিল না, তাই পানির পাত্রে চেহারা মুবারক দেখে সম্মানিত পাগড়ী, টুপি, রুমাল মুবারক ইত্যাদি
গোছগাছ করতেন এবং মাথার চুল মুবারক ও দাড়ি মুবারক আচঁড়াতেন। সে মতে আয়না ব্যবহার করাও
খাছ সুন্নতের অর্ন্তভূক্ত। (সীরাত গ্রন্থসমূহ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ
اَيُّوْبَ بْنِ مُوْسٰى أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى
عَنْهُ نَظَرَ فِـي الْمِرْاَةِ لِشَكْوٍ كَانَ بِعَيْنَيْهِ وَهُوَ مُـحْرِمٌ.
অর্থ: হযরত আইয়্যুব ইবনে মূসা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত, চোখে অসুখ হওয়ায় হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তিনি ইহরাম অবস্থায়ও আয়না দেখেছিলেন। (মুয়াত্তা ইবনে মালিক)
কাঠের তৈরী প্লেট, বাটি, পেয়ালা ও চামড়ার দস্তরখানা সুন্নতে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম।
কাঠের তৈরী সুন্নতী প্লেট, বাটি, পেয়ালা, কেমন ছিল সে সম্পর্কে
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
ثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ
الأَسْوَدِ الْبَغْدَادِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ مُحَمَّدٍ ، قَالَ
: حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ طَهْمَانَ ، عَنْ ثَابِتٍ ، قَالَ : أَخْرَجَ إِلَيْنَا
أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ ، قَدَحَ خَشَبٍ , غَلِيظًا , مُضَبَّبًا بِحَدِيدٍ , فَقَالَ
: " يَا ثَابِتُ ، هَذَا قَدَحُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ " .
অর্থ: হযরত ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাদেরকে
একটি লোহার পাতযুক্ত, মোটা কাঠের তৈরি মুবারক
বাটি বের করে দেখালেন। আর বললেন, হে হযরত ছাবিত (রহমতুল্লাহি
আলাইহি)! ইহাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার বাটি মুবারক।” (শামায়িলুত তিরমিযী, হাদীছ-১৪৪, জামউল ওসায়ে্ শরহুস সুন্নাহ, হাদীছ-৩০৩৩)
খাদিমু রসূলিল্লাহ হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেই কাঠের
মুবারক বাটিটি অত্যন্ত আদব ও তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করেছেন। পরবর্তীতে বংশ পরম্পরায়
তা সংরক্ষিত ছিল। এমনকি হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বছরাতে তা দেখতে
পেয়েছেন এবং তাতে তিনি পানি পান করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। (আশরাফুল ওয়াসায়িল ২৭৫, জামউল ওয়াসায়িল ২৯৪)
(سُفْرٌ) সুফরুন বা দস্তরখানা মুবারক:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দস্তরখান
মুবারক ছিল চামড়ার এবং তা হাল্কা লাল (খয়েরী) রংয়ের ছিল। (শামায়েলে তিরমিযী, আনিসুল আরওয়াহ্,
জামউল ওসায়েল)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ
حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ مَا أَكَلَ
النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى خِوَانٍ وَلَا فِـيْ سُكْرُجَةٍ
وَلَا خُبِزَ لَه مُرَقَّقٌ. قُلْتُ
لِـحَضْرَتْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَلٰى مَا يَأْكُلُوْنَ قَالَ
عَلَى السُّفَرِ.
অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো ‘খিওয়ান’ (টেবিলের মত উঁচু স্থানে)-এর
উপর খাবার রেখে আহার করেননি এবং ছোট ছোট বাটিতেও তিনি আহার করেননি। আর উনার জন্য কখনো
পাতলা রুটি তৈরী করা হয়নি। রাবী (হযরত ইউনুস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি) বলেন, আমি হযরত ক্বত্বাদাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে উনারা কিসের উপর আহার করতেন? তিনি বললেন, খয়েরী রংয়ের দস্তরখানের
উপর।” (বুখারী শরীফ: ৫৪১৫, ৫৩৮৬, তিরমিযী শরীফ: ১৭৮৮, ইবনে মাজাহ শরীফ: ৩৪১৭)
পরিশেষে বলা যায়, যিনি হায়াতুন নবী, শাহিদুন নবী, মুত্তালা ‘আলাল গইব, হাযির ওয়া নাযির,
নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের জন্য সম্মানিত আদর্শ
মুবারক। কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَقَدْ
كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মধ্যেই রয়েছেন আপনাদের জন্য উত্তম আদর্শ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব
শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)
অর্থাৎ একজন মুসলমান উনার মাথার তালু থেকে পায়ের তলা, হায়াত থেকে মউত,
এমনকি হায়াতের
পূর্ব থেকে মউতের পর পর্যন্ত, তিনি কি খাবেন, কি পরবেন, কিভাবে চলবেন, কি ব্যবহার করবেন,
এক কথায়
উনার যাবতীয় করণীয়-কর্তব্য সম্পর্কে সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ বর্ণনা
মুবারক করেছেন। সুতরাং মনগড়াভাবে কোন কিছু করার সুযোগ নেই। সুতরাং যারা সম্মানিত ও
পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করবেন অর্থাৎ যারা মুসলমান হবেন, পুরুষ কিংবা মহিলা,
উনারা কি
ধরনের আসবাবপত্র ও তৈজসপত্র ব্যবহার করবেন সেটাও শিখতে হবে এবং দেখতে হবে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি কি আসবাবপত্র ব্যবহার করেছেন,
কি তৈসজপত্র
ব্যবহার করেছেন। সেগুলো প্রত্যেকটাই আমাদের জন্য আদর্শ মুবারক। পবিত্র কালামুল্লাহ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَّنْ
يُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ
অর্থ: যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার অনুসরণ করলেন তিনি মূলত মহান আল্লাহ পাক উনারই অনুসরণ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
(পবিত্র সূরা নিসা শরীফ; পবিত্র আয়াত শরীফ ৮০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَا
اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَـهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا
وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করুন এবং যা নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকুন এবং এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করুন। নিশ্চয় মহান আল্লাহ
পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ; পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন-
مَنْ
تَـمَسَّكَ بِسُنَّتِـيْ عِنْدَ فَسَادِ أُمَّتِـيْ فَلَه
أَجْرُ مِائَةِ شَهِيْدٍ
অর্থ: “যিনি আমার উম্মতের ফিতনা-ফাসাদের যুগে কোন একটা সুন্নত মুবারক উনাকে আঁকড়িয়ে
ধরে রাখবেন, উনাকে একশত শহীদ উনাদের ছাওয়াব
প্রদান করা হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)
কেমন একশত শহীদের ছওয়াব? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তা‘য়ালা ‘আনহুম উনারা সম্মানিত বদর ও সম্মানিত উহুদ জিহাদে শহীদ হয়ে যে রকম মর্যাদা
মুবারক হাছিল করেছেন ঠিক সেই রকম মর্যাদা হাছিল করবেন এই আখিরী যামানায় একটা সুন্নত
মুবারক আদায় করলেই। সুবহানাল্লাহ! এক হাজার হিজরী শতকের পরবর্তী সময়কে আখেরী যামানা
বলা হয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ
أَحَبَّ سُنَّتِيْ فَقَدْ اَحَبَّنِيْ وَمَنْ أَحَبَّنِيْ كَانَ مَعِيَ فِي
الْـجَنَّةِ
অর্থ:“যিনি আমার পবিত্র সুন্নত মুবারককে মহব্বত করেন অর্থাৎ অনুসরণ করে তিনি যেন
আমাকেই মহব্বত মুবারক করেন। আর যিনি আমাকে মহব্বত মুবারক করেন, আমার সাথেই তিনি সম্মানিত জান্নাতে থাকবেন।” (তিরমিযী শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
قُلْ
اِنْ كُنْـتُمْ تُـحِبُّـوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِـيْ
অর্থ: আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত হাছিল করতে চাও তাহলে
আমাকে অনুসরণ করো।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)
হায়াতুন নবী, শাহিদুন নবী, মুত্তালা ‘আলাল গইব,
নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পরিপূর্ণ অনুসরণের লক্ষ্যেই
সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, মুহইউস সুন্নাহ সাইয়্যিদুনা
হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন “আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত
মুবারক প্রচার কেন্দ্র”। এখানে কাঠের প্লেট,
বরতন, বাটি, পেয়ালা, তামার পাত্র, চকি, বালিশ ইত্যাদি ব্যবহার উপযোপী সুন্নতী তৈজসপত্র ও আসবাবপত্রসমূহ
পাওয়া যাচ্ছে। আর এ সমস্ত সুন্নতী বিষয়সমূহ তৈরির জন্য মেশিনারিজও স্থাপন করা হয়েছে।
সুবহানাল্লাহ!
তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত মহাসম্মানিত সুন্নতী তৈজসপত্র ও আসবাবপত্র নিজে গ্রহণ
করতে ও অন্যান্যদের গ্রহণ করাতে “আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্রে”
আসা, দেখা ও জেনে বুঝে নিজেদের জীবনে
বাস্তবায়ন করা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আমাদের সবাইকে সেই তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
No comments