কাঠের তৈরী প্লেট, বাটি, পেয়ালা ও চামড়ার দস্তরখানা সুন্নতে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
কাঠের তৈরী সুন্নতী প্লেট, বাটি, পেয়ালা, কেমন ছিল সে সম্পর্কে
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
ثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ
الأَسْوَدِ الْبَغْدَادِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ مُحَمَّدٍ ، قَالَ
: حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ طَهْمَانَ ، عَنْ ثَابِتٍ ، قَالَ : أَخْرَجَ إِلَيْنَا
أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ ، قَدَحَ خَشَبٍ , غَلِيظًا , مُضَبَّبًا بِحَدِيدٍ , فَقَالَ
: " يَا ثَابِتُ ، هَذَا قَدَحُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ " .
অর্থ: হযরত ছাবিত রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাদেরকে
একটি লোহার পাতযুক্ত, মোটা কাঠের তৈরি মুবারক
বাটি বের করে দেখালেন। আর বললেন, হে হযরত ছাবিত (রহমতুল্লাহি
আলাইহি)! ইহাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার বাটি মুবারক।” (শামায়িলুত তিরমিযী, হাদীছ-১৪৪, জামউল ওসায়ে্ শরহুস সুন্নাহ, হাদীছ-৩০৩৩)
খাদিমু রসূলিল্লাহ হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেই কাঠের
মুবারক বাটিটি অত্যন্ত আদব ও তা’যীম-তাকরীমের সাথে সংরক্ষণ করেছেন। পরবর্তীতে বংশ পরম্পরায়
তা সংরক্ষিত ছিল। এমনকি হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বছরাতে তা দেখতে
পেয়েছেন এবং তাতে তিনি পানি পান করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। (আশরাফুল ওয়াসায়িল ২৭৫, জামউল ওয়াসায়িল ২৯৪)
(سُفْرٌ) সুফরুন বা দস্তরখানা মুবারক:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দস্তরখান
মুবারক ছিল চামড়ার এবং তা হাল্কা লাল (খয়েরী) রংয়ের ছিল। (শামায়েলে তিরমিযী, আনিসুল আরওয়াহ্,
জামউল ওসায়েল)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ
حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ مَا أَكَلَ
النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى خِوَانٍ وَلَا فِـيْ سُكْرُجَةٍ
وَلَا خُبِزَ لَه مُرَقَّقٌ. قُلْتُ
لِـحَضْرَتْ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَلٰى مَا يَأْكُلُوْنَ قَالَ
عَلَى السُّفَرِ.
অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কখনো ‘খিওয়ান’ (টেবিলের মত উঁচু স্থানে)-এর
উপর খাবার রেখে আহার করেননি এবং ছোট ছোট বাটিতেও তিনি আহার করেননি। আর উনার জন্য কখনো
পাতলা রুটি তৈরী করা হয়নি। রাবী (হযরত ইউনুস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি) বলেন, আমি হযরত ক্বত্বাদাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে উনারা কিসের উপর আহার করতেন? তিনি বললেন, খয়েরী রংয়ের দস্তরখানের
উপর।” (বুখারী শরীফ: ৫৪১৫, ৫৩৮৬, তিরমিযী শরীফ: ১৭৮৮, ইবনে মাজাহ শরীফ: ৩৪১৭)
পরিশেষে বলা যায়, যিনি হায়াতুন নবী, শাহিদুন নবী, মুত্তালা ‘আলাল গইব, হাযির ওয়া নাযির,
নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের জন্য সম্মানিত আদর্শ
মুবারক। কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لَقَدْ
كَانَ لَكُمْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মধ্যেই রয়েছেন আপনাদের জন্য উত্তম আদর্শ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আহযাব
শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)
অর্থাৎ একজন মুসলমান উনার মাথার তালু থেকে পায়ের তলা, হায়াত থেকে মউত,
এমনকি হায়াতের
পূর্ব থেকে মউতের পর পর্যন্ত, তিনি কি খাবেন, কি পরবেন, কিভাবে চলবেন, কি ব্যবহার করবেন,
এক কথায়
উনার যাবতীয় করণীয়-কর্তব্য সম্পর্কে সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ বর্ণনা
মুবারক করেছেন। সুতরাং মনগড়াভাবে কোন কিছু করার সুযোগ নেই। সুতরাং যারা সম্মানিত ও
পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করবেন অর্থাৎ যারা মুসলমান হবেন, পুরুষ কিংবা মহিলা,
উনারা কি
ধরনের আসবাবপত্র ও তৈজসপত্র ব্যবহার করবেন সেটাও শিখতে হবে এবং দেখতে হবে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি কি আসবাবপত্র ব্যবহার করেছেন,
কি তৈসজপত্র
ব্যবহার করেছেন। সেগুলো প্রত্যেকটাই আমাদের জন্য আদর্শ মুবারক। পবিত্র কালামুল্লাহ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
مَّنْ
يُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ
অর্থ: যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার অনুসরণ করলেন তিনি মূলত মহান আল্লাহ পাক উনারই অনুসরণ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
(পবিত্র সূরা নিসা শরীফ; পবিত্র আয়াত শরীফ ৮০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَمَا
اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَـهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا
وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করুন এবং যা নিষেধ করেছেন, তা থেকে বিরত থাকুন এবং এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করুন। নিশ্চয় মহান আল্লাহ
পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা। (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ; পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন-
مَنْ
تَـمَسَّكَ بِسُنَّتِـيْ عِنْدَ فَسَادِ أُمَّتِـيْ فَلَه
أَجْرُ مِائَةِ شَهِيْدٍ
অর্থ: “যিনি আমার উম্মতের ফিতনা-ফাসাদের যুগে কোন একটা সুন্নত মুবারক উনাকে আঁকড়িয়ে
ধরে রাখবেন, উনাকে একশত শহীদ উনাদের ছাওয়াব
প্রদান করা হবে।” সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)
কেমন একশত শহীদের ছওয়াব? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তা‘য়ালা ‘আনহুম উনারা সম্মানিত বদর ও সম্মানিত উহুদ জিহাদে শহীদ হয়ে যে রকম মর্যাদা
মুবারক হাছিল করেছেন ঠিক সেই রকম মর্যাদা হাছিল করবেন এই আখিরী যামানায় একটা সুন্নত
মুবারক আদায় করলেই। সুবহানাল্লাহ! এক হাজার হিজরী শতকের পরবর্তী সময়কে আখেরী যামানা
বলা হয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ
أَحَبَّ سُنَّتِيْ فَقَدْ اَحَبَّنِيْ وَمَنْ أَحَبَّنِيْ كَانَ مَعِيَ فِي
الْـجَنَّةِ
অর্থ:“যিনি আমার পবিত্র সুন্নত মুবারককে মহব্বত করেন অর্থাৎ অনুসরণ করে তিনি যেন
আমাকেই মহব্বত মুবারক করেন। আর যিনি আমাকে মহব্বত মুবারক করেন, আমার সাথেই তিনি সম্মানিত জান্নাতে থাকবেন।” (তিরমিযী শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন-
قُلْ
اِنْ كُنْـتُمْ تُـحِبُّـوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِـيْ
অর্থ: আমার মহাসম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, যদি তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত হাছিল করতে চাও তাহলে
আমাকে অনুসরণ করো।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩১)
No comments