Header Ads

Islamic Quotes Urdu Facebook Cover. QuotesGram

ইয়া নবী, ইয়া রসূল বলে সম্বোধন করার ব্যাপারে ওহাবীদের আপত্তির চুড়ান্ত জবাব




কিছু সংখ্যক জাহিল ও গুমরাহ লোক কিল্লতে ইলম ও কিল্লতে ফাহম অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, “পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ এর সময় ‘ইয়া নবী সালামু আলাইকা, ইয়া রসূল সালামু আলাইকা, ইয়া হাবীব সালামু আলাইকা, ছলাওয়াতুল্লাহ আলাইকা’- এভাবে পবিত্র সালাম শরীফ পেশ করলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানহানী হয়। তাই এভাবে সালাম পেশ করা ঠিক নয়।”


তাদের আপত্তিকর বিষয়গুলো হচ্ছে-
(ক) نبى-رسول- حبيب  এ শব্দলো نكرة (নাকিরাহ) বা অপরিচিত তাই এগুলোকেيا  (ইয়া) হরফে নিদা দ্বারা ডাকলে معرفة (মা’রিফাহ) বা পরিচিত হয়ে যায় বটে, তবে ডাকার পূর্বে অপরিচিত থেকে যায়। তাই يا نبى  ‘ইয়া নবী’ এভাবে সালাম পেশ করা ঠিক নয়। বরংيا ايها النبى  يا ايها الرسول  ইত্যাদি নিয়মে সালাম পেশ করাই সঠিক বা ক্বাওয়ায়িদ সম্মত।
(খ) يا  ইয়া হরফে নিদা শুধু নিকটবর্তী আহ্বানের জন্য আসে। দূরবর্তীর জন্য আসে না। তাই يا نبى  বলে সালাম দেয়া ঠিক হবে না। কারণ, তিনি তো আমাদের দেশ থেকে অনেক দূরে আছেন।
(গ) سلام  এক পেশ দিয়ে পড়া শুদ্ধ হবে না।
(ঘ) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র সালাম শরীফ পাঠের পূর্বে পবিত্র ছলাত শরীফ বা বা পবিত্র দুরূদ শরীফ পড়া যাবে না। প্রথমে পবিত্র সালাম শরীফ দিতে হবে। তারপর পবিত্র ছলাত বা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে।
(ঙ) ছন্দ আকারে মিলযুক্ত বাক্যের মাধ্যমে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা ঠিক নয়। কারণ, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে এভাবে উল্লেখ নেই। নাউযুবিল্লাহ!

জাহিল বাতিল লোকদের আপত্তির কারণে কেউ সুওয়াল করতে পারে, يا نبى سلام عليك  (ইয়া নবী সালামু আলাইকা) এভাবে সালাম পেশ করা শুদ্ধ হবে কিনা? শুদ্ধ হলে তার দলীল-আদীল্লাহ কি রয়েছে?

এদের জবাবে বলতে হয়, মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ان الله وملئكته يصلون على النبى يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস্ সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ করেন। হে মু’মিনগণ! আপনারাও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ তথা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করো এবং পবিত্র সালাম শরীফ প্রেরণ করো প্রেরণ করার মতো।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-৫৬)
এ পবিত্র আয়াত শরীফের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করতে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। তবে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে পাঠ করতে হবে তা সরাসরি নির্ধারিত করে দেননি। আর এককভাবেও এমন কোনো নিয়ম নির্ধারণ করে দেননি যে, কেবলমাত্র সে নিয়মেই পাঠ করতে হবে, তার বাইরে অন্য কোনো নিয়মে পাঠ করা যাবে না। তাই হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করেছেন ও করেন। তন্মধ্যে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মজলিসে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র তাওয়াল্লুদ শরীফ পাঠ করার পর দাঁড়িয়ে যে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা হয় তা ছন্দ, কবিতা বা ক্বাছীদা শরীফ আকারে। যেহেতু ছন্দ, কবিতা বা ক্বাছীদা শরীফ তৈরি করা, পাঠ করা এবং লেখা সবগুলোই সুন্নত মুবারক।
নিম্নে বাতিল ও গুমরাহ ফিরক্বার আপত্তিকর বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাহ উনাদের ভিত্তিতে খন্ডন করে সঠিক বক্তব্য পেশ করা হলো-
বাতিল ও গুমরাহ ফিরক্বার লোকেরা বলে থাকে যে,
نبى-رسول- حبيب
এ লফযগুলো نكره  (নাকিরাহ) বা অপরিচিত তাই এগুলোকে يا  (ইয়া) হরফে নিদা দ্বারা ডাকলে معرفه  ‘মা’রিফাহ’ বা পরিচিত হয়ে যায় বটে, তবে ডাকার পূর্বে অপরিচিত থেকে যায়। তাই يا نبى  (ইয়া নবী) এভাবে সালাম পেশ করা ঠিক নয়। বরং يايها النبى  ইয়া আইয়্যুহান নবী),يايها الرسول  (ইয়া আইয়্যুহার রসূল) ওيايها الحبيب  (ইয়া আইয়্যুহাল হাবীব) ইত্যাদি নিয়মে সালাম পেশ করাই সঠিক বা ক্বাওয়ায়িদ সম্মত।”
এর জবাবে বলতে হয় যে- হ্যাঁ,
يايها النبى يايها الرسول- يايها الحبيب
এ পদ্ধতিতে সালাম পেশ করা ক্বাওয়ায়িদ সম্মত। তবে
يا نبى يا رسول يا حبيب
এভাবে সালাম পেশ করা যাবে না- একথাও শুদ্ধ নয়; বরং সম্পূর্ণ ভুল ও অজ্ঞতামূলক।
ক্বাওয়ায়িদবিদগণ القواعد العربية  বা আরবী ব্যাকরণকে চারভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা- ১. علم الاملاء  বা বর্ণ প্রকরণ, ২. علم الصرف  বা শব্দ প্রকরণ, ৩. علم النحو  বা বাক্য প্রকরণ, ৪. علم العروض  বা ছন্দ প্রকরণ।
স্মরণীয় যে, আরবী ক্বাওয়ায়িদ সম্পর্কে যাদের মোটামুটি ধারণা আছে তারা অবশ্যই اعراب (ই’রাব) এবং محل اعراب (মহলে ই’রাব) সম্পর্কে জ্ঞাত। অর্থাৎ اعراب  হচ্ছে স্বরচিহ্ন আর محل اعراب  হচ্ছে اعراب দেয়ার স্থান। তা হচ্ছে كلمة  বা শব্দের শেষ বর্ণ।
اعراب  (ই’রাব) বা স্বরচিহ্ন দু’প্রকার। যথা- ১. اعراب ابالحروف  ই’রাব বিল হুরূফ যথা- واو  (ওয়াও), الف  (আলিফ), يا  (ইয়া)
২. اعراب بالحركات  ই’রাব বিল হারাকাত। যথা- ضمة  (দাম্মাহ) পেশ,فتحة  (ফাতহাহ) যবর, كسرة (কাসরাহ) যের, ساكن  (সাকিন) জযম।
ক্বাওয়ায়িদের নিয়মানুসারে এ উভয় প্রকার ই’রাবের পরিবর্তন সাধিত হয়। যেমন, اعراب بالحروف-এর উদাহরণ :
جاء ابوهرأيت اباهمررت بابيه.
অর্থ: “তার পিতা এসেছে, আমি তার পিতাকে দেখেছি, আমি তার পিতার সাথে চলেছি।”
আলোচ্য উদাহরণে প্রথম বাক্যে اب -এর সাথে واو, দ্বিতীয় বাকে اب -এর সাথে الف  এবং তৃতীয় বাক্যেاب  এর সাথেياء  রয়েছে: যা ই’রাব বিল হুরূফের পরিবর্তনের মেছাল।
অনুরূপ اعراب بالحركات-এর উদাহরণ:
جاء زيد شربت الماء كتبت بالقلم لم اذهب
অর্থ: “যায়িদ এসেছে, আমি পানি পান করেছি, আমি কলম দ্বারা লিখেছি, আমি যাইনি।”
এ উদাহরণে প্রথম বাক্যে زيد-এর ‘দাল’ বর্ণে পেশ, দ্বিতীয় বাক্যে ماء-এর ‘হামযাহ’ বর্ণে যবর, তৃতীয় বাক্যে القلم -এর ‘মীম’ বর্ণে যের এবং চতুর্থ বাক্যে اذهب-এর ‘বা’ বর্ণে জযম বা সাকিন হয়েছে; যা ই’রাব বিল হারাকাতের পরিবর্তনের মেছাল।
উল্লেখ্য, كلمة বা শব্দ তিন প্রকার। যথা-اسم  (ইসম) বিশেষ্য,فعل  (ফি’ল) ক্রিয়াحرف (হরফ) অব্যয়।
اسم-এর ই’রাব তিন প্রকার। পেশ, যবর ও যের। কিন্তু ওয়াক্ফের অবস্থায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে জযম  পড়তে হয়। আরفعل -এর ই’রাবও তিন প্রকার। পেশ, যবর ও জযম। কিন্তু সন্ধি বিচ্ছেদ বা তা’লীলকৃত কতক শব্দে যেরও হয়ে থাকে।
আর حرف-এর ই’রাব বা হরকত অপরিবর্তিত। যে হরফ যেভাবে বর্ণিত রয়েছে সেভাবেই ব্যবহার করার নিয়ম।
মনে রাখতে হবে, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে যে পদ্ধতিতে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা হয় তা শুদ্ধই রয়েছে। যথা-
يا نبى سلام عليك + يا رسول سلام عليك
يا حبيب سلام عليك + صلوت الله عليك
অর্থ: “হে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম। হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম। হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম। মহান আল্লাহ পাক উনার অসংখ্য পবিত্র ছলাত শরীফ আপনার উপর বর্ষিত হোক।”

পঠিত ইবারতের বিশ্লেষণ:
 يا نبى  পড়া ক্বাওয়ায়িদ علم العروض  (ইলমুল আরূদ্ব) বা ছন্দ প্রকরণের ভিত্তিতে শুদ্ধ। তবে যদি কেউيايها النبى  পড়তে চায় তা পড়তে পারবে। ক্বাওয়ায়িদ বিশারদগণের মতে نكرة  (নাকিরাহ) বা অনির্দিষ্টকে معرفة  (মা’রিফাহ) বা নির্দিষ্ট করার অনেক পদ্ধতি রয়েছে। তন্মধ্যে একটি নিয়ম হচ্ছে نكرة  (নাকিরাহ) বা অনির্দিষ্টকে حرف نداء  (হরফে নিদা) বা আহবান সূচক শব্দ দ্বারা মা’রিফাহ (নির্দিষ্ট) করা।
যেমন, আল্লামা হযরত সিরাজুদ্দীন উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘হিদায়াতুন্ নাহু’ নামক আরবী ক্বাওয়ায়িদের কিতাবে লিখেছেন,
والمعروف باللام والمضاف الى احدهما اضافة معنوية والمعرف بالنداء
অর্থ: “(معرفة  ছয় প্রকারের মধ্যে) চতুর্থ প্রকার হলো: আলিফ-লাম যোগে মা’রিফাহ। পঞ্চম প্রকার: ضمير  বা সর্বনাম, اعلام  বা নামবাচক বিশেষ্য, মুবহামাত বা ইসমে ইশারা, ইসমে মাওছূলা-এর দিকেاضافة معنوية  দ্বারা সম্বন্ধকৃতের মাধ্যমে নির্দিষ্টতা বা মা’রিফাহ। ষষ্ঠ প্রকার: حرف ندا  (হরফে নিদা) দ্বারা মা’রিফাহ।”
আল্লামা হযরত ইবনু হাজিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখা “কাফিয়া’ কিতাবের মধ্যে উল্লেখ আছে যে,
ما عرف باللام او النداء والـمضاف الى احدها معنى
অর্থ: “(معرفة  ছয় প্রকারের মধ্যে) চতুর্থ প্রকার: যা  আলিফ-লাম যোগ করে নির্দিষ্ট করা হয়। পঞ্চম প্রকার: হরফে নিদা দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয় এবং ষষ্ঠ প্রকার: যমীর, আলম, ইসমে ইশারা, মাউছূলা ও আলিফ-লাম যোগে মা’রিফার দিকে اضافة معنوية -এর মাধ্যমে নির্দিষ্টতা বা মা’রিফাহ।”
অনুরূপ ‘মাবাদিউল আরাবিয়া’, ‘নাহুমীর’ ও অন্যান্য ক্বাওয়ায়িদের কিতাবগুলোতে উল্লেখ আছে।
উল্লিখিত ইবারত থেকে স্পষ্ট হলো যে,
 يا نبى، يارسول، يا حبيب  এর মধ্যে نبى، رسول، حبيب  নাকিরাহ শব্দগুলোকে يا  (ইয়া) হরফে নিদা দ্বারা معرفة  (মা’রিফাহ) বা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। যা আমাদের প্রিয় নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। অন্যান্য কোনো হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়নি। কেননা, পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় একমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যই। এতে খাছভাবে সালাম প্রেরণ করা হয় উনারই প্রতি।

বাতিল ও গুমরাহদের ভ্রান্ত কথা

يا نبى  (ইয়া নবী) বলে ডাকলে, ডাকার সময় তিনি পরিচিত হন কিন্তু এর পূর্বে তিনি পরিচিত ছিলেন না বুঝা যায়। কেননা,نكرة  (নাকিরাহ) কে নিদা দ্বারা معرفة   (মা’রিফাহ) মা’রিফা’ করা হয়েছে। তাই الف لام  (আলিফ-লাম) যোগ করে معرفة  (মা’রিফাহ) করার পর নিদা করলে ডাকার পূর্বে অপরিচিত থাকার সম্ভাবনা থাকে না।
এর জবাব হচ্ছে, يا نبى  (ইয়া নবী) বললে যদি ডাকার পূর্বে অপরিচিত হন, তবে النبى  (আন্ নাবী) শব্দে আলিফ-লাম যোগ করার পূর্বেও তিনি অপরিচিত ছিলেন বুঝা যায়। তেমনিভাবেيايها النبى، النبى، يا نبى، نبى  শব্দগুলো লিখা ও উচ্চারণ করার পূর্বেও তিনি অপরিচিত থেকে যান। নাউযুবিল্লাহ!
আরো বলতে হয়, বোবা ব্যক্তি ও লেখা পড়া জানেন না এমন মু’মিন ব্যক্তির কাছে কি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরিচিত নন? অবশ্যই পরিচিত।

মূলকথা হলো- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হিসেবে যারা যেভাবে ‘ইয়া নবী’, ‘ইয়া রসূল’, ইয়া হাবীব বলে খেয়াল করে উনাকে ডাকবে তাই শুদ্ধ হবে। শুধু ‘ইয়া’ ‘হরফে নিদা’ যোগ করার দ্বারাও পূর্বাপর সমস্ত সময়ের জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই নির্দিষ্ট ও পরিচিত হন।
আধুনিক আরবী সাহিত্য বিশারদগণের সম্রাট অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত কবি আহমদ শাওকী বেক উনার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ “আশ শাওকিয়াত” এর  الهمزية النبوية শীর্ষক কবিতায় শুধু يا  ‘ইয়া’ হরফে নিদা উল্লেখ করে رسول  কে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেছেন। যেমন,
يا من له عز الشفاعة وحده + وهو المنزه ماله شفعاء
অর্থ:- “ইয়া (হে) রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিই সেই মহান রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যার রয়েছে পরকালে শাফায়াত করার একক মর্যাদা। জাত ও ছিফাতগতভাবে তিনি পূত-পবিত্র ও কলুষমুক্ত। উনার নিজের জন্য কোনো শুপারিশকারীর প্রয়োজন নেই।”
لى فى مديحك يا رسول عرائس+ تيمن فيك وشاقهن جلاء.
অর্থ: “ইয়া রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রশংসা করার ব্যাপারে আমার রয়েছে প্রেমাস্পদের সাথে সাক্ষাতের আকাঙ্খার মতো অফুরন্ত বাসনা। যা আমাকে পূন্য-ধন্য করবেই। আর ওই বাসনাকে আপনার দিবালোকের মতো উজ্জ্বল সুন্দরতম চরিত্র মুবারক আরো উৎসাহিত করে তুলেছে।
অত্র কবিতায় يا رسول  আলিফ-লাম যোগ করা ছাড়াই লিখা হয়েছে। এটা ক্বাওয়ায়িদ ও কবিতার নিয়মসম্মত। এভাবে ব্যবহার করায় সম্মানহানী হয়না। বরং এতে সম্মান প্রকাশ হয়েছে।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপারে। যেমন কবিগণ يا نبى، يا رسول  (ইয়া নবী, ইয়া রসূল) বলে নিদা করেছেন। তেমনি উনার বংশধর তথা আওলাদে রসূল উনাদেরকেও সাহিত্যিক ও কবিগণ يا  ‘ইয়া’ হরফে নিদা দ্বারা আহ্বান করেছেন।
দুরূসুল্ বালাগাহ” উনার ‘মুহাস্সানাতুল মা’নুবিয়্যাহ’র আলোচনায় জনৈক কবির কবিতায় উল্লেখ আছে-
يا سيد احاز لطفا+ له البرايا عبيد
انت الحسين ولكن + جفاك فينا يزيد
অর্থ: “হে ইমাম, সাইয়্যিদ আলাইহিস সালাম! যিনি প্রত্যেক প্রকারের গুণ ও পবিত্রতা নিজের মধ্যে একত্রিত করে রেখেছেন, সমস্ত সৃষ্ট যার গোলাম। আপনি হলেন হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম। কিন্তু কি করা যাবে যে, আমাদের মধ্যে আপনার অমনোযোগ দৈনন্দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
কবি অত্র শ্লোকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে يا سيد  বলে আহ্বান করেছেন। এতে একমাত্র হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। অথচ পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ সাইয়্যিদ বা আওলাদে রসূল রয়েছেন। অর্থাৎ এখানে سيد  শব্দটি যদিও নাকিরাহ, এর পূর্বে يا  ‘ইয়া’ হরফে নিদা যুক্ত করার সাথে সাথে তা معرفة  (মা’রিফাহ) বা নির্দিষ্ট হয়েছে। যা পূর্বাপর সব সময়ের জন্য হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝাচ্ছে।
তেমনিভাবে يا حبيب، يا نبى، يا رسول  দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই আহ্বান করা হয়েছে বুঝতে হবে। তাই আলিফ-লাম ছাড়া শুধু يا ‘ইয়া’ হরফে নিদা দ্বারা সম্মান ও মর্যাদাই প্রকাশ পায়।

বাতিল ও গুমরাহদের বক্তব্য হলো-معرفة  অর্থ পরিচিত ও نكرة  অর্থ অপরিচিত

এর জবাবে বলতে হয়- আরবী ক্বাওয়ায়িদ অনুযায়ী বাতিলদের প্রদত্ত অর্থ ভুল, ধোঁকাপ্রসূত, মনগড়া ও ফিতনামূলক। কারণ, معرفة  نكرة  আরবী নাহু শাস্ত্রের দুটি অন্যতম পরিভাষা, যার অর্থ হলোمعرفة  (নির্দিষ্ট) ও نكرة  (অনির্দিষ্ট) যদিও লুগাত বিশারদগণ বিভিন্ন অর্থ নিয়েছেন। তবে লুগাতে হাজারো অর্থ থাকলেই যে সব অর্থ সবক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে তা নয়। বরং পরিভাষা অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে। যেমন, আল্লামা হযরত সিরাজুদ্দীন উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “হিদায়াতুন্ নাহু” কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
المعرفة اسم وضع لشىء معين ... والنكرة ما وضع لشىء غير معين كرجل
অর্থ: “معرفة  (মারিফাহ) এমন একটি اسم  (ইস্ম) বা বিশেষ্য যাকে কোনো নির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। .... نكرة  (নাকিরাহ) এমন একটি اسم  বা বিশেষ্য যাকে কোনো অনির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। যেমন, رجل  (রজুলুন) বা এক ব্যক্তি।
হযরত আল্লামা ইবনে হাজিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “কাফিয়া” নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
المعرفة ما وضع لشىء بعينه ... النكرة ما وضع لشىء لا بعينه
অর্থ: “معرفة  (মারিফাহ) এমন একটি اسم  (বিশেষ্য) যাকে কোনো নির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। ... نكرة  (নাকিরাহ) এমন একটিاسم  (বিশেষ্য) যাকে কোনো অনির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রনয়ণ করা হয়েছে।”
অনুরূপ নাহুমীর, মাবাদিউল আরাবিয়া ও অন্যান্য ক্বাওয়ায়িদের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে। তাই প্রমাণিত হলো যে, গুমরাহ ও বেআক্বলদের বক্তব্য অশুদ্ধ; যা ক্বাওয়ায়িদের খিলাফ।

অতএব, প্রমাণিত হলো- يا نبى، يارسول، يا حبيب  এভাবে সালাম পেশ করা সম্মান প্রকাশক, ক্বাওয়ায়িদ হিসেবে শুদ্ধ এবং গ্রহণযোগ্য

ইয়া নবী, ইয়া রসূল বলার ব্যাপারে ক্বাওয়ায়িদ থেকে দ্বিতীয় বিশ্লেষণ:

يا نبى، يارسول، يا حبيب
ওয়াকফ হিসেবে ইয়া নবী, ইয়া রসূল, ইয়া হাবীব পড়া হয়। আসলে يا نبى، يارسول، يا حبيب  যথাক্রমে يا نبيى، يا رسولى يا حبيبى  ছিলো। ক্বাওয়ায়িদ মতে ياء متكلم  বা ضمير  এর প্রতি مضاف  হয়েও نكرة  (নাকিরাহ) বা অনির্দিষ্ট معرفة  (মা’রিফা) বা নির্দিষ্টতে পরিণত হয়।  যেমন, عبده  উনার গোলাম, رسولى  আমার রসূল ইত্যাদি।
আল্লামা হযরত সিরাজুদ্দীন উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “হিদায়াতুন্ নাহু” নামক আরবী ক্বাওয়ায়িদের কিতাবে লিখেছেন,
والمعروف باللام والمضاف الى احدهما اضافة معنوية والمعرف بالنداء
অর্থ: “(معرفة  ছয় প্রকারের মধ্যে) চতুর্থ প্রকার হলো: আলিফ-লাম যোগে মা’রিফাহ। পঞ্চম প্রকার: ضمير  বা সর্বনাম, اعلام  বা নামবাচক বিশেষ্য, মুবহামাত বা ইসমে ইশারা, ইসমে মাওছূলা উনার দিকে اضافة معنوية  দ্বারা সম্বন্ধকৃতের মাধ্যমে নির্দিষ্টতা বা মা’রিফাহ। ষষ্ঠ প্রকার: حرف ندا  (হরফে নিদা) দ্বারা মা’রিফাহ।”
হযরত আল্লামা ইবনু হাজিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা ‘কাফিয়া’ কিতাবের মধ্যে উল্লেখ আছে যে,
ما عرف باللام او النداء والـمضاف الى احدها معنى
অর্থ: “(معرفة  ছয় প্রকারের মধ্যে) চতুর্থ প্রকার: যা  আলিফ-লাম যোগ করে নির্দিষ্ট করা হয়। পঞ্চম প্রকার: হরফে নিদা দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয় এবং ষষ্ঠ প্রকার: যমীর, আলম, ইসমে ইশারা, মাউছূলা ও আলিফ-লাম যোগে মা’রিফার দিকেاضافة معنوية  এর মাধ্যমে নির্দিষ্টতা বা মা’রিফাহ।”
অনুরূপ ‘মাবাদিউল আরাবিয়া’, ‘নাহুমীর’ ও অন্যান্য ক্বাওয়ায়িদের কিতাবগুলোতে উল্লেখ আছে। তাইيا نبى، يارسول، يا حبيب  এভাবে ইবারত হিসেবে পাঠ করলে আলিফ-লাম ও আইয়্যূহা যোগ করে নিদা করা শুদ্ধ হবে না। কেননা, একে ياء متكلم  দ্বারা معرفة  (নির্দিষ্ট) করা হয়েছে। এক্ষেত্রে الف لام  ايها  যোগ করা নিয়মের খিলাফ। যা শুদ্ধ নয়।

এখানে কেউ প্রশ্ন করতে পারে,
 ياء متكلم  বাদ দিয়ে শুধু জযম দিয়ে পড়া হয় কেন?
এর জাওয়াব হলো, ياء متكلم  বাদ দিয়ে তার নিদর্শন হিসেবে যের উনাক রাখার বিধান পবিত্র কুরআন শরীফ ও বিভিন্ন কিতাবাদিতেও রয়েছে।
সেই লক্ষ্যে ياء متكلم  কে বাদ দেয়া হয়েছে। যা মূলত ক্বাওয়ায়িদ সম্মতই।
যেমন, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধে ربى  শব্দের শেষে ياء متكلم  বাদ দিয়ে নিদর্শনস্বরূপ যের রাখা হয়েছে।
واذ قال ابرهيم رب ارنى كيف تحى ا لموتى
 অর্থ: “স্মরণ করুন, যখন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম তিনি বললেন, হে আমার রব! (অনুগ্রহপূর্বক) আমাকে দেখান, কেমন করে আপনি মৃতকে জীবিত করবেন।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-২৬০)
قال رب هب لى من لدنك ذرية طيبة
অর্থ: “হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম তিনি প্রার্থনা করে বললেন, হে আমার রব! আপনার নিকট থেকে আমাকে পূতঃপবিত্র সন্তান হাদিয়া করুন।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৮)
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قال رب فانظرنى الى يوم يبعثون
অর্থ: “শয়তান (মহান আল্লাহ পাক উনার সামনে) বললো, হে আমার মহান রব! আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন।” (পবিত্র সূরা হিজর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)
وقل رب زدنى علما
অর্থ: “বলুন, হে আমার মহান রব! আমার ইল্ম বৃদ্ধি করুন।” (পবিত্র সূরা ত্ব-হা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)
وقل رب اعوذ بك من همزت الشيطين
অর্থ: “বলুন, হে আমার মহান রব! আমি আপনার কাছে (আমার উম্মত উনাদের ব্যাপারে) শয়তানের প্ররোচনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” (পবিত্র সূরা মু’মিনুন শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৭)
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قال رب ان قومى كذبون
অর্থ: “হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম তিনি বললেন, হে আমার মহান রব! আমার সম্প্রদায় তো (অন্যায়ভাবে) আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৭)
رب هب لى من الصالحين
অর্থ: “(হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রার্থনা করলেন:) হে আমার মহান রব! আমাকে একজন সৎপুত্র দান করুন।” (পবিত্র সূরা ছফ্ফাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)
এ রকম সর্বমোট ৬৭ খানা পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ربى  এর শেষে ياء متكلم  বাদ দেয়া হয়েছে। অনুরূপভাবে নিম্নোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফগুলোতেও ياء  বাদ দিয়ে নিদর্শন হিসেবে যের রাখা হয়েছে।
যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون
অর্থ: “আমার ইবাদত-বন্দেগী (মা’রিফত-মুহব্বত অর্জন) করার জন্য আমি জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি।” (পবিত্র সূরা যারিয়াত শরীফ : নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
ان ارضى واسعة فاياى فاعبدون
অর্থ: “(মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন) আমার যমীন প্রশস্ত। অতএব, তোমরা আমারই ইবাদত-বন্দেগী করো।” (পবিত্র সূরা আনকাবূত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ)
পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ উনার ২৫ ও ৯২ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফে অনুরূপ নিয়মে উল্লেখ আছে।
তেমনিভাবে এর বিপরীতও আমরা দেখতে পাই هى  যমীরের সাথে هيه  যুক্ত করে উচ্চাঙ্গের ছন্দ মিলানো হয়েছে।
যেমন, পবিত্র সূরা ক্বারিয়াহ শরীফ উনার ১০, ১১ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
وما ادراك ماهية نار حامية
অর্থ: “আপনি জানেন তা (হাবিয়া দোযখ) কি? তা হচ্ছে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি।”
এখানে   هيهআসলে ছিল هى  যা যমীর বা সর্বনাম। هى  সর্বনামের পরে ه  অক্ষর যুক্ত করণের মধ্যে লক্ষ-কোটি কারণ নিহিত রয়েছে। তন্মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বাক্যের সাথে মিল ও সাদৃশ্যতা বুঝানো। তাই هيه  (হিয়াহ) শব্দ মুবারক ইরশাদ হয়েছে।

অতএব প্রমাণিত হলো, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র সালাম শরীফ প্রেরণের সময়
 يا نبى، يا رسول، يا حبيب  উনাদের ياء متكلم  কে বাদ দিয়ে নিদর্শন হিসেবে যের দেয়া হয়েছে। ওয়াক্ফের সময় উক্ত যের উহ্য রেখে ইয়া নবী, ইয়া রসূল ও ইয়া হাবীব পড়া হয়; যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও ক্বাওয়ায়িদের ভিত্তিতেই ছহীহ।

হযরত আল্লামা আবূ যায়েদ মুহম্মদ ইবনে আবুল খত্তাব আল ক্বারশী সঙ্কলিত “জামহারাতু আশয়ারিল আরব” নামক কিতাবে বিখ্যাত কবি আমর ইবনে সালিম আল খুযায়ী তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রশংসায় বলেন,
يا رب انى ناشد محمد صلى الله عليه وسلم + حلف ابينا وابيه الاتلدا
অর্থ: “হে আমার মহান রব! আমি সাইয়্যিদুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে ছন্দাকারে কবিতা পাঠ করছি। যিনি আমার সম্মানিত পিতা ও উনার প্রবীণ পিতার সঙ্গী।”
এখানে ربى  ছিল, সহজতার জন্য ياء متكلم  কে হযফ করে নিদর্শন হিসেবে যের দেয়া হয়েছে। যের বিশিষ্ট يا رب  এতে ওয়াক্ফ করলে ইয়া রব্ পড়তে হয়।

 তেমনিভাবে  يا نبى، يا رسول، يا حبيب উনাদের শেষে যেياء  ছিল তা বাদ দিয়ে নিদর্শন হিসেবে যের দিয়ে পড়া হয়। এখানে ওয়াক্ফ করার কারণে ইয়া নবী, ইয়া রসূল, ইয়া হাবীব পড়া হয়। যেমন, يا رب  (ইয়া রব) পড়া হয়।
হযরত আল্লামা ইবনে হাজিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘কাফিয়া’ কিতাবে লিখেছেন,
حروف النداء يا اعمها وايا وهيا للبعيد واى والهمزة للقريب
অর্থ:حروف نداء  (হুরূফে নিদা) يا  আম বা ব্যাপক সম্বোধনের জন্য ব্যবহৃত হয় অর্থাৎ নিকটবর্তী, মধ্যবর্তীত ও দূরবর্তীর সকল সম্বোধনের জন্য,ايا  هيا  দূরবর্তীর জন্য এবং اى  همزه  নিকটবর্তী সম্বোধনের জন্য ব্যবহৃত হয়।”
হযরত আল্লামা হাফনী বেগ নাসিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লেখা “দুরূসুল্ বালাগাহ্” কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
واما النداء فهو طلب الاقبال بحرف نائب مناب ادعوا وادواته ثمانية يا والهمزة واى وا واى وايا وهيا و وا فالهمزة واى للقريب وغيرهما للبعيد وقد ينـزل البعيد منـزلة القريب فينادى بالهمزة واى اشارة الى انه لشدة استحضاره فى ذهن المتكلم صار كالحاضر معه كقول الشاعر.
অর্থ: النداء  ‘আন্ নিদা’ বলা হয়,ادعو  (আমি ডাকছি) ক্রিয়ার স্থলাভিষিক্ত কোনো শব্দ দ্বারা সম্বোধিত ব্যক্তির মনোযোগ আকর্ষণ করাকে। নিদা-এর আটটি বর্ণ রয়েছে। যেমন, (১) يا  (২) همزة  (৩) اى  (৪) الف  (৫) ايا  (৬) اى  (৭) هيا  (৮) وا
উক্ত বর্ণসমূহের মধ্যেهمزة  اى  নিকটবর্তীندا  নিদা বা আহ্বানের জন্য এবং বাকিগুলো দূরবর্তীندا  এর জন্য প্রয়োগ হয়ে থাকে। কখনো দূরবর্তীمنادى  ‘মুনাদা’কে নিকটবর্তী  منادى‘ মুনাদা-এর স্থানে রেখে همزة  اى  দ্বারা ডাকা হয়। এটি ওই সময় যখন আহ্বানকারীর কাছেمنادى  দূরবর্তী হওয়া সত্ত্বেও নিকটবর্তীরূপে কল্পিত (মনে) হয়।”
যেমন, কবির কবিতায় উল্লেখ রয়েছে-
اسكان نعمان الاراك تيقنوا + بانكم فى ربع قلبى سكان
অর্থ: “হে নু’মান আরাকের অধিবাসীগণ! বিশ্বাস করো (তোমরা আরাকের অধিবাসী নও, যদিও বাস্তবে তোমরা সেখানেই অবস্থান করছো, প্রকৃতপক্ষে) তোমরা আমার হৃদয়ে অবস্থান করছো।”
ইবারতগুলো থেকে স্পষ্ট হলো,همزة  এবং اى  এ দু’টি ছাড়া অন্যান্য সবগুলি যেমন, يا-ايا-هيا-  ইত্যাদি দূরবর্তীর জন্য ব্যবহার হয়। তবে يا  নিকটবর্তী, মধ্যবর্তী ও দূরবর্তী নিদার জন্যও ব্যবহার হয়ে থাকে।
তবে কোনো কোনো সময় নিকটবর্তী নিদাهمزة  اى  দ্বারা দূরবর্তী মুনাদাকেও ব্যবহার করা হয়; অধিক মনের টান, নিকটবর্তীরূপে কল্পিত হওয়া এবং অধিক মুহব্বতের শর্তে।
যেমন, উপরে বর্ণিত শেষ ইবারতের কবিতাটিতে বর্ণিত রয়েছে। কবিতাটিতেهمزة  হরফে নিদা দ্বারা নু’মান আরাকের অধিবাসীদের ندا  নিদা বা আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু সেই উপত্যকাটি কবি থেকে অনেক দূরে ছিল। এهمزة  ব্যবহার দ্বারা কবি এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন যে, নু’মান আরাকের অধিবাসীরা আমার অন্তরে উপস্থিত, তাই তারা উপস্থিতের মতো হয়েছে। কবি এজন্য কবিতায় همزة  তথা নিকটবর্তী নিদা ব্যবহার করে নু’মানে আরাক তথা দূরবর্তী অধিবাসীদেরকে উদ্দেশ্য করেছেন।

সুতরাং প্রমাণিত হলো, সালাম পাঠ করার সময় ইখতিয়ার অনুযায়ী আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেথায় উপস্থিত হন বা না হন উভয় অবস্থায়ই ইয়া নবী, ইয়া রসূল, ইয়া হাবীব বলে সালাম পাঠ করা ক্বাওয়ায়িদ সম্মত।

বাতিল ও গুমরাহ ফিরক্বার লোকেরা বলে থাকে যে- يا نبى سلام عليك  বাক্যেسلام  (সালামুন) শব্দের মীম বর্ণের তানউয়ীনের এক পেশকেتخفيف  (তাখফীফ) বা গোপন করে পড়া যাবে না। 

বাতিল ও গুমরাহদের এ বক্তব্যও অজ্ঞতা ও মূর্খতাসূচক। কারণ ছন্দের মিল এবং উচ্চারণের সহজতার জন্য শ্লোকের শুরু, শেষ বা মাঝে শব্দের ইরাবকে ক্বাওয়ায়িদের নিয়মের ব্যতিক্রম ব্যবহার করা বা পড়া জায়িয। যাকে বালাগাত ও আরবী ক্বাওয়ায়িদের পরিভাষায় مخالفة القياس  বা নিয়মের বিপরীত বলা হয়।

আরবী ক্বাওয়ায়িদ উনার অন্যতম একটি নিয়ম হচ্ছে ফেলে মুদ্বারের শুরুতে ان (আন), لن  (লান), كى  (কায়), اذن (ইযান) ইত্যাদি নছব বা যবরদাতা হরফ আসলে তার শেষে প্রকাশ্যভাবে যবর দিতে হয়।
কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,ان سيكون  (আন সাইয়াকুনু) ‘পবিত্র সূরা মুয্যামমিল শরীফ’ এর ২০নং পবিত্র আয়াত শরীফ। এখানে ان  (আন) ফেলে মুদ্বারের শুরুতে প্রকাশ্যভাবে আসার পরেও ফেলে মুদ্বারের শেষে যবর হয়নি। বরং পেশ হয়েছে। ইহাও একটি আরবী ক্বাওয়ায়িদের ব্যতিক্রম। যাকেمخالفة القياس  (মুখালিফাতুল ক্বিয়াস) বা খিলাফে ক্বিয়াস বলে।
এরূপ অসংখ্য উদাহরণ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, আরবী সাহিত্যে ও নাহু শাস্ত্রের মধ্যেও রয়েছে। তদ্রুপ এ রকম একটি খিলাফে ক্বিয়াস বা ‘ক্বিয়াসের ব্যতিক্রম’ উচ্চারণ হচ্ছে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার সময় ছন্দ আকারে পবিত্র সালাম পাঠের বাক্যে سلام  (সালামু) শব্দটি। যা মূলে ছিলো يا نبى سلام عليك  কিন্তু ছন্দের মিল এবং উচ্চারণের সহজতার জন্য মুহাক্কিক, মুদাক্কিক, আলিম-উলামাগণسلام  ‘সালামুন’ উনার শেষের তানউয়ীনকে তাখফীফ বা হালকা করে سلام  (সালামু) এক পেশ পড়েছেন এবং বর্তমানেও পড়ছেন। এ রকম নিয়মের ব্যতিক্রম পাঠ শরীয়তে জায়িয রয়েছে। কেননা, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এবং জগৎ বিখ্যাত মশহূর কবিগণের কবিতাগ্রন্থে এবং বালাগাত-ফাছাহাতের কিতাবে এ রকম অনেক সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম নিয়মও পরিলক্ষিত হয়।
মূলত, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে পঠিত سلام  (সালাম) শব্দটি তিন প্রকারে পাঠ করা যায়। যেমন-
এক. ‘মীম’ বর্ণে দুই পেশ যোগে, যা ক্বাওয়ায়িদ শাস্ত্রেরعلم نحو  ইলমে নাহু বা বাক্য প্রকরণের নিয়ম।
দুই. ‘মীম’ বর্ণে এক পেশ যোগে, যা ক্বাওয়ায়িদ শাস্ত্রের علم عروض  ইলমে আরূদ্ব বা ছন্দ প্রকরণের নিয়ম।
তিন. ‘মীম’ বর্ণে সাকিন যোগে, যা ক্বাওয়ায়িদ শাস্ত্রে علم قراءة  ইলমে ক্বিরায়াত বা পঠন প্রক্রিয়া তথা ওয়াক্ফের নিয়ম।
উল্লিখিত প্রতিটি নিয়মই ক্বাওয়ায়িদ সম্মত। যার বিস্তারিত আলোচনা নিম্নে পেশ করা হলো-

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার থেকে প্রমাণ :

১। ক্বাওয়ায়িদ অনুসারে على  হরফে জর উনার সাথে ضمير مجرور متصل  যোগ হলে তা عليهن، عليهم، عليهما، عليه  ইত্যাদি নিয়মে পাঠ করা হয়। যেমন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما
অর্থ: “হে মু’মিনগণ! তোমরাও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর পবিত্র ছলাত শরীফ তথা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করো এবং পবিত্র সালাম শরীফ প্রেরণ করো প্রেরণ করার মতো।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
غير المغضوب عليهم ولا الضالين
অর্থ: “(আয় আল্লাহ পাক!) যারা গযবপ্রাপ্ত এবং পথভ্রষ্ট তাদের পথ আমাদেরকে দিবেন না।” (পবিত্র সূরা ফাতিহা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

উল্লিখিত পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয় এবং এ রকম অসংখ্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে عليهم، عليه  ইত্যাদি নিয়ম ব্যবহার করা হয়েছে।
কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ‘পবিত্র সূরা ফাতাহ শরীফ’ ১০ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মুখালিফাতুল ক্বিয়াস বা নিয়মের বিপরীত নিয়ম হিসেবে عليه  উল্লেখ রয়েছে। যেমন,
ان الذين يبايعونك انما يبايعون الله يد الله فوق ايديهم فمن نكث فانما ينكث على نفسه ومن اوفى بما عهد عليه الله فسيؤتيه اجرا عظيما.
অর্থ: “যারা আপনার কাছে বাইয়াত হয় (আনুগত্যের শপথ করে) উনারা তো মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতী হাত মুবারক তাদের হাতের উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে; অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে মহান আল্লাহ পাক তিনি অতি সত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।”
এখানে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অংশে عليه الله  প্রচলিত সাধারণ ক্বাওয়ায়িদ বা নিয়মের ব্যতিক্রম একটি স্বতন্ত্র নিয়মে হয়েছে। যা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত নিয়ম বা নীতি মুবারক। যা মানুষের জানার বাইরে। তাইعليه  এরهاء  যমীর বা সর্বনামে পেশ যোগে পড়াই নির্দেশ মুবারক। যদিও তা প্রচলিত ক্বাওয়ায়িদ বা নিয়মের ব্যতিক্রম।
অনুরূপভাবে يا نبى سلام عليك  এখানে প্রচলিত সাধারণ ক্বায়দা বা নিয়মের বিপরীত سلام  (সালামুন) উনার দু’পেশের এক পেশকে ‘তাখফীফ’ বা হালকা করে ছন্দ মিলানোর জন্য سلام  সালামু পাঠ করা হয়। যা খিলাফে ক্বিয়াস হিসেবে জায়িয রয়েছে। যেমন, পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে عليه الله  পাঠ করার বিষয়ে সকলেই একমত হয়েছেন। অথচ তা প্রচলিত ক্বাওয়ায়িদ ও অন্যান্য পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ব্যবহৃত নিয়মের বিপরীত।
২. আরবী ক্বাওয়ায়িদ অনুসারেكتابى  অর্থ: আমার আমলনামা, حسابى অর্থ: আমার হিসাব,  مالى  অর্থ: আমার মাল ও سلطانى  অর্থ: আমার ক্ষমতা।
কিন্তু ছন্দ মিলানোর জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ উনার ১৯, ২০, ২৫, ২৬, ২৮ ও ২৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উক্ত শব্দগুলোকে যথাক্রমে سلطانيه، كتابيه، مالياه، حسابيه  এভাবে উল্লেখ করেছেন। এতে শেষের ‘হা’ হরফ উনাকে অতিরিক্ত হিসেবে ছন্দের মিলের জন্য যুক্ত করে ‘সাকিন’ প্রদান করা হয়েছে। যা خلاف قياس  খিলাফে ক্বিয়াস বা নিয়মের বিপরীত। যা স্বতন্ত্র একটি নিয়মের অন্তর্ভুক্ত।
যেমন, পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ নিম্নরূপ:
(۱) فاما من اوتى كتابه بيمينه فيقول هاؤم اقرءوا كتابيه.
অর্থ: “যাঁর আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তিনি (খুশিতে অপরকে) বলবেন: নিন, আপনারাও আমার আমলনামা পাঠ করে দেখুন।” (পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ, ১৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
(۲) انى ظننت انى ملق حسابيه
অর্থ:- “আমি জানতাম যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে।” (পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ : ২০ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
)۳( واما من اوتى كتبه بشماله فيقول يليتنى لم اوت كتبيه.
অর্থ:- “অতঃপর যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে, সে তখন বলবে, হায় আমায় যদি আমার আমলনামা না দেয়া হতো।” (পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ : ২৫ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
ولم ادر ما حسابيه
অর্থ:- “আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব।” (পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ : ২৬ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
(۵) ما اغنى عنى ماليه
অর্থ:- “আমার ধন-সম্পদ আমার কোন উপকারে আসলো না।” (পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ : ২৮ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
(۶( هلك عنى سلطنيه
অর্থ:- “আমার ক্ষমতা-রাজত্বও বরবাদ হয়ে গেল।” (পবিত্র সূরা হাক্কাহ শরীফ : ২৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ)
তাহলে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র সালাম শরীফ পাঠের ছন্দবদ্ধ রূপيا نبى سلام عليك  উনার سلام  (সালামুন) উনার এক পেশ ‘তাফখীফ’ করে سلام  (সালামু) পাঠ করা নিষেধ তা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও রয়েছে কি?

না, নেই বরং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উল্লিখিত শব্দগুলোর মতো খিলাফে ক্বিয়াস বা নিয়মের বিপরীত স্বতন্ত্র একটি নিয়ম হিসেবেسلام عليك  (সালামু আলাইকা) পাঠ করাও জায়িয রয়েছে। যা খিলাফে ক্বিয়াস হিসেবে ছন্দের মিল ও শ্রুতি মাধুর্যতার শর্তে শুদ্ধই রয়েছে।
৩. ক্বাওয়ায়িদ অনুসারে; ‘তিনি আমাকে সম্মান করেছেন’ এর আরবী হলো- اكرمنى  আর ‘তিনি আমাকে হেয় করেছেন’ এর আরবী হলো-اهاننى  কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উক্ত শব্দদ্বয়েরياء  কে বাদ দিয়ে নিদর্শন হিসেবে যের রাখা হয়েছে, আবার ওয়াক্ফের সময় নূনের যেরটিও ‘তাখফীফ’ লুপ্ত হয়ে যায়। এ রকম ব্যবহার পবিত্র কুরআন শরীফ উনার বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে পবিত্র সূরা ফজর শরীফ উনার ১৫ ও ১৬ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়।
যেমন, ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فاما الانسان اذا ما ابتله ربه فاكرمه ونعمه فيقول ربى اكرمن. واما اذا ما ابتله فقدر عليه رزقه فيقول ربى اهانن.
অর্থ:- “মানুষ এমন যে, যখন তার মহান রব তাকে পরীক্ষা করেন অতঃপর তাকে সম্মান ও নিয়ামত মুবারক দান করেন তখন বলে আমার মহান রব আমাকে সম্মান দান করেছেন। আর যখন তাকে পরীক্ষা করেন অতঃপর সংকুচিত করে দেন তার রিযিক, তখন বলে- আমার মহান রব তিনি আমাকে হেয় করেছেন।”
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফদ্বয়ে اكرمنى  اهاننى  এর শেষেরيا  (ইয়া) উনাকে বাদ দিয়ে নিদর্শন হিসেবে যের দিয়ে এবং ওয়াক্ফের সময় সে যেরও তাখফীফ বা গুপ্ত করে সাকিন পড়তে হয়, তাহলে سلام عليك  এর মধ্যে سلام  সালামুন উনার দু’পেশের এক পেশকে তাখফীফ বা গুপ্ত করে শুধু একপেশসহ سلام সালামু পাঠ করতে নিষেধ কোথায়? এতে তো অর্থেরও কোনো পরিবর্তন হয় না এবং লফযেরও কোনো পরিবর্তন হয় না। শুধু ছন্দের মিলের জন্য উচ্চারণের সামান্য পার্থক্য হয় মাত্র।
অতএব, প্রমাণিত হলো, ছন্দের মিলের ক্ষেত্রেسلام  (সালামুন) উনাকে سلام (সালামু) পড়া পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ এবং পবিত্র ক্বাওয়ায়িদ সম্মত তথা জায়িয।

৫. বিশিষ্ট ছাহাবী শায়ির হযরত কা’ব বিন যুহাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ক্বাছীদা শরীফ :
ان الرسول لنور يستضاء به+ مهند من سيوف الله مسلول.
فى فتية من قريش قال قائلهم+ ببطن مكة لما اسلموا زولوا.
انبئت ان رسول الله او عدنى + والعفو عند رسول الله مامول.
مهلا هداك الذى اعطاك نافلة + القران فيها مواعيظ وتفصيل.
অর্থ:- “নিশ্চয়ই আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম। উনার দ্বারা জগৎ হিদায়েতের আলোকে আলোকিত হয়েছে। তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার তরবারিসমূহের মধ্যে ধারাল উজ্জ্বল তরবারি। তিনি কুরাঈশ উনাদের তরুণ দলের মাঝে প্রেরিত হয়েছেন। যখন তারা সম্মানিত ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন পবিত্র মক্কা শরীফ-এ কোন একজন উনাদেরকে বললো যে, আপনারা হিজরত করুন। আমি জানতে পারলাম যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে হত্যার ধমক দিয়েছেন (অর্থাৎ আমাকে হত্যা করা বৈধ ঘোষণা করেছেন) এরপরও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ক্ষমার আশা করা যায়। ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আমার সম্পর্কে হত্যার সিদ্ধান্ত নিবেন না। মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে এমন পবিত্র কুরআন শরীফ দিয়েছেন যাতে রয়েছে অসংখ্য উপদেশ মুবারক এবং সবকিছুর বর্ণনা।”

১নং লাইনেمسلول  ‘মাসলুলু’ رفع-উনার অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় তা নিয়ম অনুযায়ী مسلول  (মাসালূলুন) দুই পেশ পড়তে হতো। কিন্তু কবিতার দ্বিতীয় লাইনেزولوا  উনার সাথে মিল রাখার জন্যمسلول  ‘মাসলূলু’ এক পেশ পড়া হয়েছে। এটা কবিতার মিলের জন্য পড়া বৈধ। অথচ তা আরবী ক্বাওয়ায়িদ ও তাজউয়ীদের নিয়মের খিলাফ।
৩নং ও ৪নং লাইনের শেষে مامول نفصيل  শব্দ দু’টি رفع  উনার অবস্থায় আছে। যা ক্বাওয়ায়িদ অনুসারে দু’পেশসহ পড়া দরকার ছিল অথবা ওয়াক্ফ করে মা’মূল ও তাফছীল উচ্চারণে পড়া দরকার ছিল। কিন্তু কবিতার মিলের জন্য সাধারণ ক্বাওয়ায়িদের খিলাফ করে مامول  تفصيل  মামূলু ও তাফছীলু পাঠ করা হয়েছে ছন্দের মাধুর্যতার জন্য। এটাই ছহীহ্। যদিও নিয়মের ব্যতিক্রম।
অনুরূপ আমভাবে ক্বাওয়ায়িদ অনুযায়ী سلام  ‘সালামুন’ পাঠ করার নিয়ম। কিন্তু ছন্দ ও পঠনের মাধুর্যতার জন্য سلام عليك  সালামু আলাইকা পড়া হয়। যা খিলাফে ক্বিয়াস উনার নিয়ম মুতাবিক শুদ্ধ।
৬. হযরত ওয়ারাক্বা ইবনে নাওফাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রশংসামূলক কবিতা যা “সীরাতুন্ নববিয়্যাহ্ লি ইবনে কাছীর” থেকে সংকলন করা হয়েছে,
(۱) واخبار صدق خبرت عن محمد صلى الله عليه وسلم + يخبرها عنه اذا غاب ناصح
(۲) بان ابن عبد الله احمد مرسل+ الى كل من ضمت اليه الاباطح.
(۳) فان يك حقا يا خديجة عليها السلام فاعلمى+ حديثك ايانا فاحمد مرسل.
(۴) وجبرائيل ياتيه وميكال معهما + من الله وحى يثرح الصدر منزل.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে অনেক সত্য সংবাদ দেয়া হয়েছে। উনার সম্পর্কে সে সব সংবাদ উনার অনুপস্থিতিতে উপদেশকারীগণ দেন। (অর্থাৎ পূর্ব নাযিলকৃত আসমানী কিতাবসমূহ, উনার সম্মানিত পিতা ও সম্মানিত মাতা আলাইহিমুস্ সালাম এবং হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার থেকে যে সংবাদ আমরা জানতে পেয়েছি।)
সে সংবাদের ফল এই যে, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনার পুত্র সাইয়্যিদুনা আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রসূলরূপে প্রেরিত হয়েছেন, প্রত্যেক ওই ব্যক্তির নিকট যাদেরকে কঙ্করময় ভূমি একত্রিত করেছে।
হে হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম! আমাদের নিকট আপনার সংবাদ যদি সত্যই হয়। তবে জেনে রাখুন, সাইয়্যিদুনা আহমদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন শ্রেষ্ঠ রসূল।
হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম ও হযরত মিকাইল আলাইহিস্ সালাম উনারা উভয়েই মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত ওহী মুবারক নিয়ে উনার নিকট আসেন; যা অন্তরকে (বক্ষকে) প্রশস্ত করে।”

কবিতার ১ম, ৩য় ও ৪র্থ লাইনে ناصح  শব্দটি اسم فاعل  আর  منزل مرسل শব্দ দুটিاسم مفعول  প্রত্যেকটিই رفع-র অবস্থায় আছে। সে হিসেবে এগুলো নাছিহুন, মুরসালুন ও মুনায্যালুন দু’পেশসহ অথবা ওয়াক্ফ করে নাছিহ্, মুরসাল, ও মুনায্যাল হিসেবে পাঠ করা ক্বাওয়ায়িদ সম্মত ছিল। কিন্তু এখানে ناصح  নাছিহু مرسل  ‘মুরসালু’ ও منزل  ‘মুনায্যালু’ তথা তানউইনের এক পেশকে তাখফীফ করে পড়া হয়েছে ছন্দের মিল ও মাধুর্যতার জন্যই। এটি ছন্দের বিধানে জায়িয।

৭. জাহিলী যুগের কবি এবং সাবউল্ মুয়াল্লাকার শীর্ষ রচয়িতা কবি ইমরাউল কায়েসের কবিতা যা ‘দিওয়ানে ইমরাউল কায়িস’-এ বর্ণিত আছে,
فقلت له لما تمطى بصلبه + واردف اعجازا وناء بكلكل
الا ايها الليل الطويل الا انجلى + بصبح وما الا صباح منك بامثل
وقد اعتدى والطير فى وكناتها + منجرد قيد الاوابد هيكل.
مكر مفر مقبل مدبر معا + كجلمود صخر حطه السيل من عل.
فعن لنا سرب كان نعاجه + عذارى دوار فى ملاء مذيل.
فعادى عداء بين ثور ونعجة + دراكا ولم ينضح بماء فيغسل.
অর্থ:- “যখন তার পিঠ মোড়া-মুড়ি দিলো এবং পশ্চাদ্ভাগ পিছনের দিকে নিয়ে গেল আর বক্ষকে টেনে দূরে নিয়ে গেল। অর্থাৎ রাত্রি অনেক দীর্ঘ হয়ে গেল, তখন আমি তাকে বললাম, (বক্তব্য সামনের পংক্তিতে) হে দীর্ঘ রাত্রি, ভোর হয়ে আলোকিত হয়ে যাও। (একটু পরে হুঁশ আসলে কবি বললো) আর ভোরও আমার জন্য তোমার চেয়ে উত্তম নয়। আমি কখনো কখনো (ভোর বেলার ভ্রমণের সময়) কম পশম বিশিষ্ট দ্রুতগামী এবং বন্য পশুকে আটককারী, মোটাতাজা একটি ঘোড়া নিয়ে ভোরে এমন সময় বের হই যখন পাখিগুলি তাদের বাসায় অবস্থান রত থাকে। (ঘোড়াটি এত দ্রুতগ্রামী যে) একই সময়ে সে সামনে অগ্রসর হয় আর পিছে ফিরে (এসে বন্য পশুদের আক্রমণ করে) তার দ্রুততা সেই কঠিন পাথরের দ্রুততার মতো যাকে পাহাড়ি ঢল উঁচু স্থান থেকে নিক্ষেপ করেছে। (অর্থাৎ উঁচু স্থান থেকে নিক্ষিপ্ত পাথর যেভাবে দ্রুত গতিতে নেমে আসে তদ্রƒপ ঘোড়াটিও দ্রুত গতিতে চলে।) অতঃপর আমাদের সামনে পড়ল (বন্য পশুর) একটি পাল। সে পালের বন্যগাভীগুলো যেন আঁচল বিশিষ্ট চাদর পরিহিতা ‘দুয়ার’ নামীয় প্রতিমার চতুর্দিকে প্রদক্ষিণকারিনী যুবতীর দল। অতঃপর ঘোড়াটি এক ঝাপটে একত্রে একটি ষাঁড় ও একটি বনগাভী শিকার করে ফেললো। অথচ সে একটু ঘর্মাক্তও হয়নি, যার ফলে তার শরীরও ভিজেনি।”

১ম ও ২য় পংক্তিদ্বয়ের শেষে بكلكل  بامثل  শব্দদ্বয়مجرور  উনার হালতে রয়েছে। সে হিসেবেكلكل  (কালকালিন) নতুবা ওয়াক্ফসহ ‘কালকাল’ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না হয়ে ছন্দের মিলের জন্য এক যেরকে তাখফীফ করেكلكل  (কালকালি) পড়া হয়েছে। যা ক্বছীদা হিসেবে শুদ্ধ। অনুরূপ নিয়ম হিসেবে امثل  ‘আমছালা’ পড়ার কথা ছিল। কেননা, امثل  শব্দটি اسم تفضيل  ফেলের ওজন হিসেবেمجرور  উনার হালতে যবর দিয়ে পড়ার কথা। কিন্তু ক্বাছীদার মিলের জন্য بامثل  বিআমছালি পড়া হয়েছে। অথচ তা ক্বাওয়ায়িদের খিলাফ।
চতুর্থ পংক্তির শেষ শব্দ من على  ক্বাওয়ায়িদ অনুযায়ী অশুদ্ধ। কারণعلى  ‘আলা’ হরফে জরمبنى  ‘মবনী’ তথা সমস্ত হরফসমূহ মবনী। যা কখনো পরিবর্তন হয় না এবং আমিলের পরিবর্তনের জন্য ইরাব ও শব্দ পরিবর্তন হয় না। কিন্তু এইعلى  ‘আলা’ (উপরে) কে ক্বাছীদার মিলের খাতিরেياء  ইয়া বাদ দিয়েعل  আলি পড়া হয়েছে। অথচ এভাবে পড়া সাধারণ নিয়েমের খিলাফ। কিন্তু কবি সাহিত্যিকগণ মাধুর্যতা, ক্বাছীদার মিল ইত্যাদির জন্য এরূপ খিলাফে ক্বিয়াস অসংখ্য জায়গায় ব্যবহার করেছেন। মূলত: এটিও শুদ্ধ।
৬ষ্ঠ পংক্তির শেষ পদ يغسل (ইউগসালি) আসলে ছিলلم يغسل (লাম ইউগসাল) কবিতার মিলের জনلم কে বাদ দিয়ে আবার পূর্বের লাইনের সাথে মিল রেখে যের দেয়া হয়েছে। সবগুলিই ক্বাওয়ায়িদের খিলাফ। অথচ কবি সাহিত্যিকগণ এভাবে প্রণয়ন করেছেন।


বালাগাত-ফাছাহাতের দৃষ্টিতে আলোচনা :
৮. কোনো কোনো সময় শব্দ ইলমে ছরফের বিধানের বিপরীত ব্যবহার হয়। যাকে খিলাফে ক্বিয়াস বা নিয়মের ব্যতিক্রম বলা হয়। যে রকম ব্যবহার আরবী সাহিত্যে ও কাব্যে বৈধ।
যেমন, হযরত আল্লামা হাফনী বেগ নাসিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘দুরূসুল বালাগাহ’ নামক কিতাবে লিখেছেন,
ومخالقة القياس كون الكلمة غير جارية على القانون الصفى كجمع بوق على بوقات فى قول المتنبى.
فان يك بعض الناس سيفا لدولة +  ففى الناس بوقات لها وطبول
اذ القياس فى جمعه للقلة ابواق وكموددة فى قوله.
ان بنى اللئام زهدة + مالى فى صدورهم من موددة. والقياس مودة بالادغام.
অর্থ: ‘ক্বিয়াসের বিরোধী’ বলা হয়, শব্দ ইলমে ছরফের বিধান অনুযায়ী ব্যবহার না হওয়া। বরং এর বিপরীত ব্যবহার হওয়া। যেমন, প্রসিদ্ধ কবি মুতানাব্বী-এর কবিতায়بوقن  ‘বূকুন’ শব্দের বহুবচনেبوقات  ‘বূক্বাতুন’ ব্যবহার করা ইলমে ছরফের ক্বায়িদাহ’র বিরোধী।
৯. ছন্দের মিলের জন্য কখনোمسند اليه  ‘মুসনাদ ইলাইহি’ তথা مبتدى  ‘মুবতাদা’ ও فاعل  ‘ফায়িল’কে; কখনোمسند  ‘মুসনাদ’ তথাخبر  ‘খবর’ ও فعل  ‘ফি’ল’কে; আবার কখনো এদের সাথে যুক্তপদকেও উহ্য বা গুপ্ত করা জায়িয।
এ সম্পর্কে প্রখ্যাত আলিম, বালাগাতবিদ হযরত আল্লামা হাফনী বেগ নাসিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘দুরূসূল বালাগাহ’ নামক বিশ্ববিখ্যাত কিতাবে লিখেছেন,
ومن دواعى الحذف ...
والمحافظة على وزن او سجع فالاول نحو.
نحن بما عندنا وانت بما + عندك راض والراى مختلف
والثانى نحو: ما ودعك ربك وما قلى
অর্থ: “মুসনাদ ইলাইহকে অথবা মুসনাদকে অথবা তার সাথে যুক্তপদকে যে যে কারণে উহ্য করা হয়, ..... (১০টি কারণের মধ্যে) ৭মটি হলো- কখনো কবিতার ছন্দ এবং বাক্যের সমতা রক্ষা করার উদ্দেশ্যে। অতএব, প্রথমটির উদাহরণ:
نحن بما عندنا وانت بما + عندك راض والراى مختلف
অর্থাৎ- “আমরা আমাদের কাছে যা আছে এবং তুমি তোমার কাছে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট। আর মতামত তো বিভিন্ন হয়ে থাকে।”
এবং দ্বিতীয়টির উদাহরণ : মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী-
ما ودعك ربك وما قلى
অর্থাৎ- “আপনার মহান রব আপনাকে পরিত্যাগও করেননি এবং তিনি আপনার প্রতি অসন্তুষ্টও নন।”
نحن  ‘নাহ্নু’ মুবতাদার খবরراضون  ‘রাদূনা’ উহ্য করে দেয়া হয়েছে। যদি খবর উল্লেখ করা হতো তাহলে এ কবিতাটির ছন্দে মিল থাকতো না।
আর বাক্যের সমতা রক্ষার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে যে উদ্ধতি দেয়া হয়েছে তাতেقلى  ‘ক্বলা’ فعل  ‘ফে’ল’ বা ক্রিয়ারمفعول  ‘মাফউল’ বা কর্মك  ‘কাফ’ অক্ষরটিকে উহ্য করে দেয়া হয়েছে। যদি তাকে উল্লেখ করা হতো তাহলে বাক্যের সমতা বজায় থাকতো না।
কবিতার মিলের জন্য যদি মুবতাদার খবরকে এবংفعل  ‘ফে’ল’ বা ক্রিয়ারمفعول  ‘মাফউল’ বা কর্মকে উহ্য করা জায়িয হয় তাহলে سلام عليك  (সালামুন আলাইকা) উনারسلام  (সালামুন) মুবতাদার দুই পেশের এক পেশ হযফ করে سلام  (সালামু) পাঠ করা জায়িয হবে না কেন? মূলত, يا نبى سلام عليك  পাঠ করা জায়িয ও শুদ্ধ।

ফিক্বাহ ও ফতওয়ার দৃষ্টিতে আলোচনা:
১০.ايجاز  ‘ইজায বা সংক্ষিপ্তকরণ : বাক্য থেকে এক শব্দ, এক বাক্য ও একাধিক শব্দ বা বাক্য উহ্য রাখাও বৈধ। যেমন- হযরত আল্লামা হাফনী বেগ নাসিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘দুরূসুল বালাগাহ’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
واما ان يون بحذف كلمة اوجملة او اكثر مع قرينة تعين المحذوف ويسمى ايجاز حذف فحذف الكلمة. كحذف لا فى قول امرئ القيس.
فقلت يمين الله ابرح قاعدا + ولو قطعوا راسى لديك واوصالى
অর্থ:- “সংক্ষিপ্তকরণ হবে এক শব্দ বা এক বাক্য বা একাধিক শব্দ বা বাক্য উহ্য করার মাধ্যমে; এমন এক ইঙ্গিত বাহকের সাথে, যা উহ্য বিষয়কে নির্দিষ্ট করে দিবে। একেايجاز حذف  ‘ঈজাযে হযফ’ বলা হয়। শব্দ উহ্য করার উদাহরণ: যথা- কবি ইমরাউল কায়িসের কবিতাতে لا ‘লা’ শব্দকে উহ্য করে দেয়া। ইমরাউল কায়িসের কবিতা হচ্ছে,
قلت يمين الله ابرح قاعدا + ولو قطعوا راسى لديك واوصالى
অর্থাৎ- “অতঃপর আমি বললাম যে, আল্লাহ পাক উনার নামে শপথ, আমি রীতিমত বসে থাকব, যদিও তারা আমার শির (মাথা) এবং আমার দেহের জোড়াসমূহ টুকরা টুকরা করে ফেলে।”
‘ইজাযে হযফ’ শব্দ উহ্য হবার উদাহরণস্বরূপ যে কবিতার উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে لا  ‘লা’ শব্দকে উহ্য করে দেয়া হয়েছে। কেননা প্রকৃত বাক্য ছিল لا ابرح  ‘লা আবরাহু।’ এ শব্দটি باب سمع يسمع  থেকে نفى فعل مضارع معروف -এর واحد متكلم -উনার ছীগাহ। যার অর্থ আমি সরে পড়বো না, আমি রীতিমত বসে থাকবো, আমি পরিত্যাগ করবো না ইত্যাদি। لا  ‘লা’ যোগেابرح  ‘এ অর্থেই ব্যবহার হয়; যা কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু কবিতায় বাহ্যিকভাবে শুধু ابرح  ‘আবরাহু’ উল্লেখ আছে। যার অর্থ: আমি সরে পড়বো, আমি পরিত্যাগ করবো ইত্যাদি। এ অর্থ গ্রহণ করা হয়নি। বরং গ্রহণ করা হয়েছে উহ্যلا  সহ لا ابرح  ‘লা আবরাহু’ অর্থে।
সাধারণতঃ لا ابرح এর لا  ‘লা’-কে উহ্য করে ابرح  পড়লে ‘না’ -এর জায়গায় হ্যাঁ অর্থ হয়। যা অর্থের ক্ষেত্রে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। তারপরও ابرح  উল্লেখ করে لا ابرح  ‘লা আবরাহু’-উনার অর্থ নেয়া হয়েছে। এটা যদি কবিতার খাতিরে জায়িয হতে পারে, তাহলে سلام عليك  (সালামুন আলাইকা)-উনার এক পেশ তাখফীফ করে سلام  (সালামু) পড়লে জায়িয হবে না কেন? অথচ سلام  (সালামুন)- উনাকে سلام  (সালামু) পড়লে অর্থের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি আসে না। কিন্তু لا ابرح  কে ابرح  পড়লে সাধারণতঃ অর্থে আকাশ-পাতাল ব্যবধান হয়। যদিও উহ্য لا  (লা) উনার অর্থ অনুবাদে যুক্ত করা হয়েছে। তাই প্রমাণিত হলো, يا نبى سلام عليك  (ইয়া নবী সালামু আলাইকা) পাঠ করা ক্বাছীদার দৃষ্টিতে ও বালাগাতের পরিভাষায় ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ রয়েছে।
তাছাড়াওيا نبى سلام عليك  (ইয়া নবী সালামু আলাইকা) এখানেنبى  (নাবিয়্যূ) মুনাদাকে পেশ হিসেবেও পড়া যায়। ইয়া উনার উপর পেশ পড়া কঠিন হেতু ইয়া উনার সমতা রক্ষার্থে সহজ উচ্চারণের জন্য ইয়া- উনাক সাকিন করে পূর্ব বর্ণে যেরের অনুকরণে পড়া হয়। আর এই মুনাদাকে অনুসরণ করে سلام (সালামু)-উনাকে এক পেশ পড়াই যুক্তিসঙ্গত। এটা হযরত আল্লামা খলীল নাহবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উক্তি। আর দ্বিতীয় سلام  (সালামু) শব্দটিمضاف  যা মুবতাদা বা খবর হিসেবে পেশ গ্রহণ করেছে। আরمضاف  কখনোই তানউয়ীন গ্রহণ করে না। তাই ক্বাওয়ায়িদ বা বিধান হিসেবেইسلام  শব্দে এক পেশ পড়া হয়। মূল বাক্যটি হবে سلام قبلى عليك يا نبى  অর্থাৎ হে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পক্ষ থেকে আপনার প্রতি সালাম। এরূপ নিয়ম বহুল পঠিত রয়েছে যে, কখনো কখনো مضاف اليه-কেحذف  (হযফ) বা বিলুপ্ত করে পড়া হয়। যেমন তাফসীরে কাশ্শাফ উনার লিখকের অন্যতম একটি লকব¡ হচ্ছে جار  الله  (জারুল্লাহ) অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতিবেশী। এখানে جار শব্দটি مضاف (মুযাফ); যার مضاف اليه  (মুযাফ ইলাইহি) উহ্য রয়েছে। যেমন- جار بيت الله  (জারু বাইতিল্লাহ) অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার ঘরের প্রতিবেশী। যেহেতু তিনি সুদীর্ঘ চল্লিশ বৎসর ধরে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার পার্শ্বে থেকে ইবাদত-বন্দেগী করেছেন ও পবিত্র তাফসীর শরীফ লিখেছেন। উক্ত ইযাফতفى، من، الى  দ্বারা করা হয়। কেননা ইহা ইযাফতে মানবী। (হিদায়াতুন্ নাহু, কাফিয়া)

এখানে سلام শব্দটিকে তারকীবে মুবতাদা হিসেবে ধরতে হবে। কেননা ক্বাওয়ায়িদ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে নাকিরাহ কখনোই মুবতাদা হতে পারে না। তবে কোনো قرينة  (কারীনাহ) তথা ইঙ্গিত অথবা অন্য কোনো শব্দ দ্বারা তাখছীছ হলে তখন নাকিরাহটিও মা’রিফায় পরিণত হয়।
سلام  শব্দটিقبلى  শব্দের প্রতি ইযাফত হওয়ায় তাখছীছ হয়েছে। বিধায় উহা মুবতাদা। অপরপক্ষে  سلام শব্দটি ইযাফতে মানবী; ইহাও মা’রিফাহ উনার ফায়দা দিয়ে থাকে। সুতরাং উভয় দিক থেকেই বিধান সঙ্গত। (হিদায়াতুন্ নাহু, কাফিয়া)
তানউয়ীনকে নিষেধকারী ৪টি। যথা- (১) ال ولم  (আলিফ ও লাম) (২) مضاف (মুদ্বাফ) (৩) غير منصوب  (গইরে মানছূব) (৪) فعل  (ফে’ল)
ইহা ছাড়াও ক্বাওয়ায়িদ শাস্ত্রের অন্যতম একটি বিধান হচ্ছে, تناسب  (তানাসুব) অর্থাৎ ছন্দের ও পূর্বপর সম্পর্ক হওয়া। যেমন- মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, سلسلا واغللا  (পবিত্র সূরা দাহর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪) উদাহরণে سلسلا  (সালাসিলা) শব্দটি غير مصرف  (গইরে মুনছারিফ); যা কখনোই তানউয়ীন গ্রহণ করে না। কিন্তু تناسب  (তানাসুব) তথা পরের শব্দটি اغللا (আগলালান) উনার প্রতি সম্পর্ক রাখার কারণে তার শেষে তানউয়ীন থাকায়سلسلا  (সালাসিলান) পদটি তানউয়ীন হয়েছে। মূলত: এখানে পদের শেষে আলিফটি তানউয়ীন উনাকে দালালত করেছে। যদিও বাহ্যিকভাবে দেখা যাচ্ছে না। এরূপ নিয়ম কাফিয়া কিতাবে রয়েছে।
তাছাড়াও তাফসীর শাস্ত্রের অন্যতম তাফসীর “তাফসীরে কাশ্শাফ” কিতাব উনার মধ্যে الحمد لله  শব্দকে تناسب  (তানাসুব) উনার ভিত্তিতে কয়েকটি পঠনের নিয়ম উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- (১) الحمد لله  (২) الحمد لله  (৩) الحمد لله سلام عليك  (সালামু আলাইকা) বিভিন্ন ক্বিরায়াতে পড়া যায়। যেমন, (১) سلام عليك  (সালামু আলাইকা) পড়া যাবে  السلام(আস্সালামু) উনারال  (আলিম-লাম) উনাকে হযফ করে এবং আরববাসীগণের থেকে শ্রুত পঠনরীতি হিসেবে তানউয়ীন ছাড়া  শুধু এক পেশ দিয়ে। (২) السلام عليك  (আস্সালামু আলাইকা) ও سلام عليك  (সালামুন আলাইকা) পড়া যাবে مبتدى (মুবতাদা) হিসেবে। (৩)سلام عليك  (সালাম্ আলাইকা) মীম উনাকে জযম তথা সাকীন দিয়ে পড়া যাবে, সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম নিয়মের ভিত্তিতে। যেমন, এ সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত ও সর্বজনমান্য ফতওয়ার কিতাব “দুররুল মুখতার” কিতাব উনার কিতাবুছ্ ‘ছলাত’ অধ্যায়ের
باب ما يفسد الصلاة وما يكره فيها  ২য় জিঃ ৩৭৫, ৩৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
قوله: سلام عليكم بجزم الميم
অর্থ: “তানবীরুল্ আবছার গ্রন্থকারের উক্তি  سلام عليك (সালাম্ আলাইকুম) মীম হরফে জযম বা সাকীন দিয়ে পড়া যায়।”
উক্ত ইবারতের ব্যাখ্যায় “রদ্দুল্ মুহতার” কিতাব উনার একই অধ্যায় ও বাবে
مطلب المواضع التى لا يجب فيها رد السلام নামক আলোচনায় উল্লেখ রয়েছে,
قوله: (بجزم الميم) كانه لمخالفته السنة، فعلى هذا لو رفع الميم بلا تنوين ولا تعريف كان كجزم الميم لمخالفة السنة.
قلت: وقد سمع من العرب سلام عليكم بالا تنوين، وخرجه فى مغنى اللبيب على حذف ال او تقدير مضاف اى سلام الله.
অর্থ: “গ্রন্থকারের উক্তিسلام عليكم  (সালাম্ আলাইকুম) মীম বর্ণে জযম বা সাকীন দিয়ে পড়া যায়। কেননা এভাবে পড়া সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম একটি নিয়ম। যেমন তানউয়ীন ছাড়া মীমের উপর শুধু এক পেশ দিয়ে سلام  (সালামু) পড়া জায়িয, তেমনি সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম নিয়ম হিসেবে মীমের উপর জযম দিয়েسلام  (সালাম) পড়াও জায়িয। (রদ্দুল মুহতার গ্রন্থকার হযরত আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) আমি বলি-سلام عليكم  (সালামু আলাইকুম) উনার سلام  (সালামু) শব্দের মীম হরফে তানউইন ছাড়া পড়তে আরববাসীগণের কাছে শুনা গিয়েছে।
“মুগনিউল লবীব” নামক কিতাবে বর্ণিত আছে যে,ال  (আলিফ-লাম) উনাকে হযফ করে অথবা উহ্য مضاف اليه  (মুযাফ ইলাই) উনারمضاف  (মুযাফ) হিসেবেسلام  (সালামু) উনাকে শুধু এক পেশ দিয়ে পড়া হয়েছে। উহ্যمضاف اليه  (মুযাফ ইলাই) যেমন,سلام الله  (সালামুল্লাহ) বাক্যের মধ্যে الله  (আল্লাহ) লফয।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র তাফসীর শরীফ, নাহু, ছরফ, ফিক্বাহ, ফতওয়ায়, বিশ্ববিখ্যাত কবিগণ উনাদের কবিতা ও বালাগাতের দৃষ্টিতে মোটামুটি বিস্তারিত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, খিলাফে ক্বিয়াস হিসেবে ছন্দের মিলনের ও মাধুর্যতার জন্যسلام  (সালামুন) শব্দের এক পেশকে হযফ বা উহ্য অথবা তাখফীফ বা গোপন করে سلام  (সালামু) পড়া জায়িয। এতে অর্থের, ভাবের এবং বাক্যের কোনো ত্রুটি, অসম্পূর্ণতা ও দুর্বলতা প্রকাশ পায় না।
কারণ, হযরত ইমাম জামালুদ্দীন ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন : بلا تنوين  অর্থাৎ আরববাসীগণের থেকে سلام عليكم  (সালামুন আলাইকুম) বাক্যটি তানবীন ব্যতীত سلام عليكم  (সালামু আলাইকুম) বলতে শুনা যায়। (আল মুগনীউল লবীব ৮৪৫ পৃষ্ঠা)

তাই যারা বলে,  يا نبى سلام عليك(ইয়া নবী সালামু আলাইকা) পড়া শুদ্ধ নয়’- তাদের এ বক্তব্য অজ্ঞতাপ্রসূত, মূর্খতাসূচক ও প্রতারণামূলক বলে প্রমাণিত হলো।
স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকেيا  (ইয়া) হরফে নেদা দ্বারা উনাকে সম্বোধন করার তা’লীম দিয়েছেন। যার ফলে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ও হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সকলে يا (ইয়া) হরফে নেদা দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন করেছেন বলে প্রমাণিত রয়েছে।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিশুদ্ধ বর্ণনায় স্পষ্ট বর্ণিত আছে যে- আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম তিনি নিজে উম্মতদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, তারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত এভাবে ‘ইয়া’ সম্বোধন সূচক অব্যয় দিয়ে আহবান করতে পারেন। পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছিহাহ সিত্তার অন্যতম একটি কিতাব ‘ইবনে মাযাহ শরীফ’-এ বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে,
عن حضرت عثمان بن حنيف رضى الله تعالى عنه ان رجلا ضرير البصر اتى النبى صلى الله عليه وسلم فقال ادع الله لى ان يعافينى فقال ان شئت اخرت لك وهو خير وان شئت دعوت  فقال ادعه فامره ان يتوضا فيحسن وضوءه ويصلى ركعتين ويدعو بهذ الدعاء اللهم اى اسألك اتوجه اليك بمحمد صلى الله عليه وسلم نبى الرحمة يا محمد صلى الله عليه وسلم اى قد توجهت بك الى ربى فى حاجتى هذه لتقضى اللهم شفعه فى قال ابو اسحق هذا حديث صحيح.
অর্থ: “হযরত উছমান ইবনে হুনাইফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত যে, একদা একজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলেন যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আমার জন্যে দোয়া করে দিন, যাতে আমার অন্ধত্ব দূর হয়ে যায়। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বললেন, তুমি যদি সম্মত হও তাহলে তোমার জন্যে বিলম্বিত করে দেই, তা হবে তোমার জন্যে উত্তম। আর যদি তুমি চাও তবে দোয়া করে দেই। তিনি আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার জন্যে দোয়া করে দিন! তাতে আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে নির্দেশ মুবারক করলেন, ভালো করে অজু করো এবং দু’রাকায়াত নামায আদায় করো এবং এই পবিত্র কালাম শরীফ পড়ে দোয়া করো- আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্ আলুকা ওয়া আতাওয়াজ্জুহু ইলাইকা বি-মুহাম্মাদিন নাবিইয়্যির রহমাতি, ইয়া মুহম্মদু ইন্নি আতাওয়াজ্জাহু বিকা ইলা রাব্বী ফী হাজাতি হাজিহি লিতুক্বদ্বা। আল্লাহুম্মা শাফফি’হু ফিইয়্যা। অর্থাৎ আয় আল্লাহ পাক!  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ওসীলা নিয়ে আমি আপনার নিকট সুওয়াল করছি এবং আপনার শাহী দরবারের সম্মুখীন হয়েছি। ইয়া রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার ওসীলা নিয়ে এ হাজতটি পূর্ণ হওয়ার জন্যে আমার মহান রব তায়ালা উনার শরণাপন্ন হয়েছি। আয় আল্লাহ পাক! আপনি উনাকে আমার জন্যে সুপারিশকারী হিসাবে কবুল করুন।” (ইবনে মাজাহ ১৪৮৪) হযরত ইমাম আবূ ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ‘পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ।’

বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার প্রতি বিবেচনার দৃষ্টিপাত করলে স্পষ্ট দেখা যায়, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার একজন উম্মতকে দোয়া শিখিয়ে দিলেন এবং সে শিখানো দোয়ার মধ্যে “ইয়া” সম্বোধন সূচক অব্যয়টি যোগ করে “ইয়া মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” বলে আহবান করার জন্যে শিক্ষা দিলেন। যদি ইয়া মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলা নাজায়িয হতো, তবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে এভাবে শিখিয়ে দিতেন না। এ দোয়াটির বিশুদ্ধতার উপর কোনো সন্দেহ পোষণ করার অবকাশ নেই। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফখানার সনদের মধ্যে কোনো রাবী দুর্বল নয়, বরং সকলেই নির্ভরশীল, বিশ্বস্ত এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ নির্বাচনের সমস্ত দিক থেকে বিশুদ্ধ বলে প্রতিষ্ঠিত।
তাই এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা ইবারতের সামান্য তারতম্যের সাথে হযরত মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নিজ নিজ কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
যেমন হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘জামে শরীফ’ কিতাবে কিতাবুদ্ দাওয়াতে, এমনিভাবে হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মাসনাদুশ্ শামী’ কিতাবের ১৬৬০৪ এবং ১৬৬০৫ নম্বরে এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন।
হাফিযুল হাদীছ হযরত ইমাম মুনযিরি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ গ্রন্থ “আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব” কিতাবের ১ম খন্ডের ৪৭৩ পৃষ্ঠায় এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেছেন। হাফিযুল হাদীছ হযরত আবূ বকর আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবের ৬২৮ নম্বরে ২২৮ পৃষ্ঠায় ছহীহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন।
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ‘ইয়া’ সম্বোধনী অব্যয় দিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার অনুপস্থিতিতে ‘ইয়া’ সম্বোধন করা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শিখানো পদ্ধতি এবং সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে শুধু জায়িযই নয়, বরং সুন্নত মুবারক।
অতঃপর কোনো বিরোধী যদি তর্ক উত্থাপন করে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই নির্দিষ্ট অন্ধ ব্যক্তির জন্যে উনার জীবদ্দশায় নির্দেশ মুবারক করেছিলেন উনার পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পর এ আমলটি আর বলবৎ নয়।
এর জবাবে শুধু একথাটি বলাই যথার্থ হবে যে, হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে মাযাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আইম্মায়ে হাদীছ উনারা কিতাবে ছলাতুল হাজাত অধ্যায়ে এ পবিত্র হাদীছ শরীফটি বর্ণনা করে প্রমাণ করেছেন যে, এ দোয়াটি ক্বিয়ামত পর্যন্ত উম্মতগণ তাদের বিপদে বা হাজতপ্রাপ্তির জন্যে এভাবে দোয়া করবেন। এছাড়া এসব সত্যান্ধ ও বিরোধী লোকদের জন্যে আরো একটি পবিত্র হাদীছ শরীফ পেশ করা যেতে পারে।

পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হযরত ইমাম তিবরানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাবে বিশুদ্ধ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন।
ان رجلا كان يختلف الى حضرت عثمان بن عفان عليه السلام فى حاجة له وكان حضرت عثمان عليه السلام لايلتفت اليه ولا ينظر فى حاجته فلقى حضرت عثمان بن حنيف رضى الله تعالى عنه ائت الميضاة فتوضا ثم انت المسجد فصل فيه ركعتين ثم قال اللهم انى اسألك واتوجه اليك بنينا محمد صلى الله عليه وسلم نبى الرحمة يا محمد صلى الله عليه وسلم! انى اتوجه بك الى رب فيقضى حاجتى. وتذكر حاجتك ورح الى حتى اروح معك فانطلق الرجل فصنع مما قال له ثم اتى باب حضرت عثمان عليه السلام فجاء البواب حتى اخذ بيده فادخله على حضرت عثمان فاجلسه معه على الطنفسة وقال ما حاجتك؟ فذكر حاجته فقضاها له، ثم قال ما ذكرت حاجتك حتى كانت هذه الساعة.
অর্থ: “হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম উনার সাথে জনৈক ব্যক্তির কিছু প্রয়োজন ছিল। কিন্তু হযরত উছমান আলাইহিস সালাম তিনি এদিকে লক্ষ্য করছেন না এবং তার প্রয়োজনটি সমাধান করার প্রতি নজর দিচ্ছেন না। সে ব্যক্তি হযরত উছমান ইবনে হুনাইফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি জানালো। এতে তিনি ওই লোকটিকে বলে দিলেন। তুমি অজুখানাতে গিয়ে ভালো করে অজু করো এবং মসজিদে গিয়ে দুই রাকায়াত নামায শেষে এ দোয়াটি পড়। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস্য়ালুকা ওয়া আতাওয়াজ্জাহু ইলাইকা বি নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদিন ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ইয়া মুহাম্মাদু! ইন্নি আতাওয়াজ্জাহু বিকা ইলা রব্বি ফায়াক্বদ্বি হাজাতি।’ এবং তোমার প্রয়োজনের কথা এখানে উল্লেখ করো। তারপর আমার নিকট চলে আস, আমিও তোমার সাথে যাব। এ ব্যক্তি গিয়ে এভাবে নামায ও দোয়া আদায় করে হযরত উছমান আলাইহিস সালাম উনার দরবারে উপস্থিত হলেন। গেটের  দায়িত্বে নিয়োজিত লোক এসে গেট খুলে উনাকে ভিতরে নিয়ে হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সামনে হাজির করে দিলেন এবং তিনি সেই ব্যক্তিকে উনার সাথে বসায়ে জিজ্ঞাসা করলেন কি প্রয়োজন? সে ব্যক্তি তার প্রয়োজনটি বলে দিলো এবং তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন আর বললেন- তোমার এ কাজটি এ মুহূর্তটির আগ পর্যন্ত আমার স্মরণ ছিল না। আরো বলে দিলেন, তোমার যদি কখনো প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে আমার নিকট চলে আসো।” (আত্ তরগীব ওয়াত্ তারহীব ১ম খ-, পৃষ্ঠা ৩৭৪)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এ দোয়াটির উপর আমল করেছেন। সুতরাং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুপস্থিতিতে ‘ইয়া’ হরফে নিদা অর্থাৎ সম্বোধন সূচক অব্যয় দিয়ে আহ্বান করা জায়িয, এতে কোনো প্রকার সন্দেহ করার অবকাশ নেই। এছাড়া হযরত মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এ দোয়াটিকে ছলাতুল হাজতে ব্যবহার করার জন্যে নির্ধারিত করেছেন।

যেহেতু ছলাতুল হাজত ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি স্থায়ী ব্যবস্থা, সুতরাং ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল মুসলমান এভাবে ‘ইয়া’ সংযুক্ত করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আহ্বান করতে পারেন।
হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব নন্দিত কিতাব “আল আযকার” উনার ‘বাবু মায়াক্কুলুহু ইযা খাদিরাত রিজলাহু’ অর্থাৎ কারো পা যদি ঝিন ঝিন করে অবশ হয়ে যায় তখন সে কি বলতে পারে, এ ব্যাপারে একটি অধ্যায় করে একখানা পবিত্র হাদীছ শরীফ হযরত ইমাম ইবনু সিন্নী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাব উনার বরাত দিয়ে বর্ণনা করেন,
روينا فى كتاب ابن السنى عن حضرت الهيثم بن حنش قال كنا عند عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنهما فخدرة رجله فقال له رجل اذكر احب الناس اليك فقال يا محمد صلى الله عليه وسلم فكانما نشط من عقال.
অর্থ: “হযরত হায়ছাম ইবনে হানাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিদমতে ছিলাম। এমনি সময় উনার পা ঝিন ঝিন করে অবশ হয়ে গেলো। তখন উপস্থিত জনৈক ব্যক্তি উনাকে বললেন, আপনার প্রিয়তম ব্যক্তির নাম স্মরণ করুন! তখন তিনি বললেন, ‘ইয়া মুহাম্মাদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ তখনই যেন পা’খানা পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলো।” সুবহানাল্লাহ! (আল আযকার/২৬০)

হাফিযুল হাদীছ হযরত ইমাম আবূ বকর আহমদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে ইসহাক দিনওয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইবনুস সিন্নী নামে পরিচিত, যাঁর কিতাব থেকে হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। তিনি উনার কিতাবে উপরে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ ছাড়া আরো দুটি পবিত্র হাদীছ শরীফ একইভাবে রেওয়ায়েত করেছেন।
হযরত হায়ছাম ইবনে হানাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে “আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ” নামক কিতাব উনার ৬৪ পৃষ্ঠার ১৬ নম্বর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত আবূ সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কর্তৃক একই ঘটনা বর্ণিত রয়েছে। এছাড়া তিনি উক্ত কিতাব উনার ৬৫ পৃষ্ঠায় ১৭২ নম্বর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার অপর একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফখানা হলো-
عن حضرت عبد الرحمن بن سعد رضى الله تعالى عنه قال كنت عند حضرت عمر عليه السلام فصدرة رجله فقلت يا ابا عبد الرحمن مالربجلك قال اجتمع عصبها من ههنا قلت ادع احب الناس اليك فقال يا محمد صلى الله عليه وسلم فانبسطت.
অর্থ: “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একদা হযরত উমর ফারূক্ব আলাইহিস সালাম উনার নিকট ছিলাম। এমনি সময়ে উনার পা মুবারক ঝিনঝিন শুরু করে দিলো। আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার পা মুবারকে কি হয়েছে? তিনি বললেন, আমার এখানের হাড় একত্রিত হয়ে গেছে। আমি উনাকে বললাম, আপনার সর্বাধিক প্রিয় মানুষকে আহ্বান করুন। তাতে তিনি ‘ইয়া মুহাম্মাদ! ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে আহবান করলেন। তৎক্ষণাত উনার পা মুবারক ভালো হয়ে গেল।”

তাছাড়াও যুদ্ধের মাঠে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরিচিতির জন্যে সাংকেতিক শব্দ ‘ইয়া মুহাম্মাদাহ’ নির্ধারিত ছিল। যেমন, ইয়ামামার যুদ্ধে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পক্ষে সাংকেতিক শব্দ ছিল ‘ইয়া মুহাম্মাদাহ’ বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিছ এবং ঐতিহাসিক হাফিয ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ’ (দারুল কুতুবিল আলামিয়্যাহ, বায়রুত লেবানন থেকে ১৯৮৮ ইং মুদ্রিত) গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খ-ের ৩২৯ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন: শত শত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর ‘ইয়া’ সম্বোধন সূচক শব্দ দিয়ে মরণপণ যুদ্ধের সময়েও আহ্বান করেছেন। যদি এভাবে ডাক দেয়া নাজায়িয হতো, তবে উনারা তা করতেন না।


হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কোনো এক ব্যক্তিত্বের কথা বা কাজ বা সমর্থনকেও তো পবিত্র হাদীছ শরীফ বলে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সমর্থিত কাজকে নাজায়িয বলা যায় না। বললে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে দোষী সাব্যস্ত যারা করবে, তারা আর যাই হোক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাজাত প্রাপ্ত উম্মত উনাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।
যুগ যুগ ধরে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তথা উলামায়ে উম্মাত এবং ওলী-আউলিয়াগণ উনারা সর্বদা ‘ইয়া’ হরফে নিদা দিয়ে আহ্বান করে আসছেন। এ দু’চারটি উদাহরণ পেশ করা যাক।

এক. হযরত ইমাম যায়নুল আবিদীন আলাইহিস সালাম তিনি কারবালায় সংঘটিত ঘটনার পর যে আশআরগুলি বলেছেন, তা হলো-
يا مصطفى يا مجتبى ارحم على عصيانا + محبورة اعمالنا طعما وذنبا والظلم.
يا رحمة للعالمين انت شفيع المذنبين + اكرم لنا يوم الحزين فضلا وجودا والكرم
يا رحمة للعالمين انت شفيع المذنبين + محبوس ايدى الظالمين فى الموكب والمزدحم.
এ তিনটি আশআরে প্রথম শব্দটিতে ‘ইয়া মুস্তফা, ইয়া মুজতবা, ইয়া রহমাতুল্লিল আলামীন’ বলে হযরত যয়নুল আবিদীন আলাইহিস সালাম তিনি কারবালার ময়দান থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আহ্বান করেছেন। যদি এভাবে আহ্বান করা না জায়িয হতো, তবে হযরত ইমাম যয়নুল আবেদীন আলাইহিস সালাম তিনি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এবং হযরত তাবিয়ীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এভাবে কখনো আহ্বান করতেন না।

দুই. (লেবানন-এর বায়রুত থেকে ১৯৮৮ ঈসায়ীতে মুদ্রিত) হাফিয আল্লামা হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্ববিখ্যাত সীরতগ্রন্থ ‘আল বিদায়াহ ওয়ান্ নিহায়াহ’ গ্রন্থের ৮ম খ-ের ১৯৫ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শাহাদাত গ্রহণের পর হযরত আহলে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবারের সম্মানিত মহিলা উনাদেরকে যখন কারবালা প্রান্তর থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, যাওয়ার পথে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার এবং উনার সঙ্গীদের শাহাদাত মুবারক গ্রহণকৃত জিসিম মুবারক কারবালায় পড়ে থাকা অবস্থায় দেখেছিলেন, তখন হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার বোন হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম তিনি যে শব্দ দিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ডেকেছিলেন আর বুক ফাটা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন, অবস্থা দৃষ্টে শত্রু-মিত্র সকলে কেঁদে উঠেছিল; তা ছিল ‘ইয়া মুহাম্মাদাহ!’ ‘ইয়া মুহাম্মাদাহ!’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। পুরো ইবারতটি এভাবে-
يا محمداه يا محمداه صلى عليك الله وملك السماء هذا حسين بالعراء مزمل بالدماء مقطع الاعضاء يا محمد صلى الله عليه وسلم وبناتك سبايا وذريتك مقتلة تسفى عليها الصبا.
এখানে হযরত যাইনাব আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘ইয়া’ হরফে নিদা দিয়ে আহ্বান করলেন। অতঃপর ‘কাফ’ খিতাবিয়াহ (সম্বোধনী সর্বনাম) দিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সালাম দিলেন। ‘ইয়া’ অব্যয় দিয়ে ডাক দেয়া এবং ‘কাফ’ খিতাবিয়াহ সর্বনাম দিয়ে সালাম দেয়া নাজায়িয হলে তিনি ভীষণ বিপদের সময় এভাবে ডাকতেন না।
তিন. হানাফী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কর্তৃক প্রণীত ক্বাছীদা যা ‘ক্বাছীদাতুন্ নু’মান’ নামে বিশ্ব মুসলিমের নিকট পরিচিত। সেখানে হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এভাবে ডাক দিয়েছেন-
يا سيد السادات جئتك قاصادا+
ارجوا رضاك واكتمى بحماك
يامالكى شافعى فى فاقتى+
انى فقر فى الورى لغنا
يا اكرم الثقلين ويا كتر الورى+
جدلى بجودك وارضنى لرضاك.
উপরে বর্ণিত ক্বাছীদা শরীফগুলোর শুরুতেই ইমামে আ’যম হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘ইয়া’ আহ্বান সূচক অব্যয় দিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আহ্বান করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- হযরত ইমাম আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কি পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ফিক্বাহ শরীফ ও নাহু ছরফ জানতেন না বা বুঝতেন না? অবাক হতে হয় যে, আজকাল কিছু সংখ্যক তথাকথিত আলিম নামধারী লোকেরা ‘ইয়া’ অব্যয় দ্বারা আহবান করাকে নাজায়িয বলে তাদের দুঃসাহসিকতা প্রকাশ করছে। নাঊযুবিল্লাহ।

চার. হযরত আব্দুল গানী নাবলিছী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এমনিভবে ‘ইয়া’ হরফে নিদা দিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আহ্বান করেছেন। ‘আল মাসাইলুল মুনতাখাবাহ’ কিতাব উনার ১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
الا يا رسول يا اشرف الورى+ ومن ليس فى العليا له من بنازغ ويا غوثنا فى كل ضيق وشدة ويا من لنا يوم القامة شافع ويا ملجئى يا مقصدى ويا وسيلتى+ ويا سندى يا سيدى انت نافع.
এখানে তিনি ‘ইয়া’ রসূলাল্লাহ’ ইয়া আশরাফাল ওয়ারা’ ‘ইয়া গাউছানা’ ‘ইয়া মালজায়ী’ ‘ইয়া মাকছাদী’ ‘ইয়া ওয়াছিলাতী’ ইত্যাদি শব্দে ‘ইয়া’ সম্বোধন সূচক অব্যয় দিয়ে ডাক দিয়েছেন।

পাঁচ. হযরত ইমাম বারয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন,
يا خير من دفنت فى التراب اعظمه+ فطاب من طيبهن السهل والجبل
نفسى الفداء للقبر انت ساكنه + فيه  الهدى والندى والعلم والاعمال 

ছয়. সাইয়্যিদ হযরত আবুল ফাতাহ ওয়াফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
يا سيدى يا رسول الله خذ بيدى + مالى سواك ولا الوعى احد
فانت نورى الهدى فى كل كائنة + وانت سر الهدى يا خير معتمد
وانت حقا غياث الخلق اجمعهم +  وانت هادى الورى الورى لله يا سندى

সাত. হযরত ইমাম জালালুদ্দীন ইবনে ইয়াহইয়া ছারছীরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
الا يا رسول المليك الذى+ هدانا به الله من كل تيه
سمعت حديثا من المسندات + يسر فؤاد الفقيه النبيه
এইসব আইম্মায়ে কিরাম উনারা উনাদের নিজ নিজ কিতাবে এভাবেই বর্ণনা করেছেন। উনারা নাহু ছরফ বা ইলমে হাদীছ শরীফ উনার হাফিয, ফিক্বাহ শাস্ত্রের যুগের অদ্বিতীয় প-িত, ইলমে মা’রিফাতের চূড়ান্ত উচ্চ শিখরে অবস্থানরত বিশ্ববিখ্যাত ওলী, যাদের খোদাভীতি, তাক্বওয়া, পরহেযগারী বিশ্বের বুকে দৃষ্টান্তস্বরূপ প্রতিষ্ঠিত। উনারা আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘ইয়া’ হরফে নিদা দিয়ে আহ্বান করেছেন। যদি সামান্য একটু ভুলের অবকাশ থাকতো উনারা এভাবে ডাকতেন না। উপরে বর্ণিত চার, পাঁচ, ছয়, সাত নাম্বারে বর্ণিত এ আশআরগুলো হযরত আল্লামা ইউছুফ নাবাহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘শাওয়াহিদুল হক্ব’ কিতাবেও উল্লেখ আছে।

আট. ক্বাছীদায়ে বুরদায় হযরত ইমাম বুসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
يا اكرم  الخلق مالى من الوذبه + سواك عند حلول الحادث العم
ولن يضيق رسول الله جاهك بى + اذا لكريم تجلى باسم منتقم
যুগ যুগ ধরে হযরত ওলী-আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এ ক্বাছীদা শরীফ উনাকে ওযীফা শরীফ হিসাবে ব্যবহার করে আসছেন। ক্বাছীদার প্রণেতা হযরত ইমাম বুসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সকল হযরত মুহাদ্দিছীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে থাকেন। তিনিও এখানে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘ইয়া আকরামাল খালক্বি’ নামে ডাক দিয়েছেন।

নয়. হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাব “আতয়াবুল বয়ানে” ‘ইয়া’ অব্যয় দিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আহ্বান করেছেন,
وصلى عليك الله يا خير خلقه + يا خير مامول ويا خير واهب
انت شفيع يوم لا ذو شفاعة + بمغن كما اثنى سوادين قارب.
এখানে হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘ইয়া’ হরফে নিদা দিয়ে ডাকার সাথে সাথে ‘কাফ’ খিতাবিয়াহ দিয়েও সম্বোধন করেছেন।


বাতিল পন্থীদের মুরুব্বীরাও তাদের কিতাবে “ইয়া হরফে নেদা” ব্যবহার করেছেঃ

আশরাফ আলী থানভী তার ‘নাশরুত্তিব’ নামক কিতাবে ১৯৪নং পৃষ্ঠায় ‘ইয়া’ হরফে নিদা দিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন করে আশ’আর লিখেছে,
يا شفيع العباد خذ بيدى + انت فى الاضطرار متعمدى
غشنى الدهر يا رسول الله +كن مغيثا فانت لى مددى
يا رسول الا له بابك لى + من غمام الغموم ملتحدى
থানভী তার আশ’আরগুলোতে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘ইয়া’ হরফে নিদা এবং খিতাবী সর্বনাম দিয়ে বারবার আহ্বান করেছে। এভাবে ডাকা নাজায়িয হলে থানভী কেন এভাবে সম্বোধন করে লিখলো। এতে স্পষ্ট বুঝা গেল যে, ‘ইয়া’ হরফে নিদা দিয়ে আহ্বান করা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে জায়িয। যুগ যুগ ধরে বিশ্বের সকল আলিম-উলামা, ইমাম-মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ, মুহাদ্দিছ, পীর, মাশায়িখ উনারা সকলেই এভাবে আমল করে আসছেন। তাতে নাজায়িয হওয়ার সামান্যতম সন্দেহ করারও কোনো অবকাশ নেই।


হযরত পীর-মাশায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মধ্যে পাক-ভারত-বাংলাদেশের অন্যতম এক পীর ছাহেব  উনার একটি আমল নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘জিয়াউল ক্বুলুব’ নামক গ্রন্থের ৯নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন, কেউ যদি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে চায়, তবে সে যেন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অবয়ব মুবারক কল্পনায় ধারণ করে মোরাকাবা করে এবং পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করে। অতঃপর ডান দিকে ‘ইয়া আহমাদু’ বাম দিকে ‘ইয়া মুহাম্মাদু’ এবং কলবের উপর ‘ইয়া রসূলাল্লাহ’ বলে এক হাজারবার যিকির করে। তবে সে জাগ্রত অথবা নিদ্রায় আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র যিয়ারত লাভ করতে পারবে ইনশাআল্লাহ। সুবহানাল্লাহ!
হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবে স্বপ্নযোগে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক দীদার লাভ করার জন্যে আরো একটি পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন যে, পবিত্র ইশা উনার নামাযের পর পাক সাফ হয়ে নতুন কাপড় পরিধান করে খুশবু ব্যবহার করে নিতান্ত আদব সহকারে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দিকে মুখ করে বসবে এবং যিয়ারত হাছিলের জন্যে কাকুতি-মিনতি করে দোয়া করবে। এমনি সময় সাদা ধবধবে লিবাছ ও পাগড়ি পরিহিত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্দর নূরানী চেহারার ধ্যান করবে। অতঃপর ডান দিকে ‘আস্সালামু আলাইকা ইয়া নাবিয়্যাল্লাহ’ উপরের দিকে ‘আছ্ছালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া হাবীবাল্লাহ’ বিরামহীনভাবে যত পরিমাণ সম্ভব পড়তে থাকবে। অতঃপর নিম্নে বর্ণিত পবিত্র দুরূদ শরীফটি বেজোড় সংখ্যায় বেশি বেশি করে পড়বে-
‘আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদিন কামা আমারতানা আন নুছাল্লি আলাইহি’ আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদিন কামা হুয়া আহলুহ’ আল্লাহুম্মা ছল্লি আলা মুহাম্মাদিন কামা তুহিব্বু ওয়া তারদ্বা’ স্বপ্নযোগে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দীদার নছীব হবে। ইনশাআল্লাহ।”
এই হলো হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রদর্শিত সবক, যেখানে, ‘ইয়া’ হরফে নিদা যোগে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আহবান করার শিক্ষা দিয়েছেন। যদি এভাবে আহবান করা নাজায়িয হতো, তবে তিনি এভাবে উনার মুরীদানকে শিক্ষা দিয়ে চিরস্থায়ী ব্যবস্থা করে দিতেন না এবং একথা সর্বজন বিদিত যে হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট আশরাফ আলী থানভী এবং রশিদ আহমদ গাংগুহীসহ অনেক উলামায়ে দেওবন্দ বায়াত হয়ে উনাকে মুর্শিদ বা পীর ছাহিব হিসাবে স্বীকার করেছে।

সর্বশেষ ওহাবী আক্বীদায় বিখ্যাত আরো একজন মৌলবী ছাহেবের বর্ণনা দেখুন।
‘ক্বাছীদায়ে আম্বরিয়া’ উনার ৩০ এবং ৩১ পৃষ্ঠায় নওয়াব ছিদ্দীক্ব আলী খান ছাহেব লিখেছে,
يا سيدى يا عروتى ووسيلتى+
 يا عدتى فى شدة ورخاء
يا مقصدى يا اسوتى ومعاضدى +
 وذريعتى يا موحدى ومولانئ

এই আশ’আরগুলোতে সে ‘ইয়া’ সম্বোধন সূচক অব্যয় ব্যবহার করে কিভাবে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ডাক দিয়েছে দেখুন। যদি নাজায়িয হয়, তবে এ সমস্ত আলিমদেরকে নাজায়িয দাবিদাররা কিভাবে (নাজায়িয থেকে) রক্ষা করবে?
বাতিল ও গুমরাহদের বক্তব্য হলো, “নবীজির প্রতি সালাম পাঠের পূর্বে পবিত্র ছলাত শরীফ বা দুরূদ শরীফ পড়া যাবে না। প্রথমে পবিত্র সালাম শরীফ দিতে হবে তারপর পবিত্র ছলাত শরীফ বা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে।”
বাতিল ও গুমরাহদের এ বক্তব্য মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক নাযিলকৃত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাব উনাদের এবং পবিত্র ফিক্বাহ শরীফ ও পবিত্র ফতওয়া শরীফ উনাদের কিতাবের খিলাফ হওয়ায় কুফরী হয়েছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ’ উনার ৫৬নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ان الله وملئته يصلون على النبى يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ করেন। হে মু’মিনগণ! তোমরাও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ তথা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করো এবং পবিত্র সালাম শরীফ প্রেরণ করো প্রেরণ করার মতো।”

এ পবিত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রথমে পবিত্র ছলাত শরীফ বা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করতে বলেছেন। এরপর পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করতে বলেছেন। তাই পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত হলো- সম্মানিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার অনুসারীগণ যে পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের মজলিসে প্রথমে পবিত্র ছলাত শরীফ বা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করেন এবং এরপর দাঁড়িয়ে আদবের সাথে পবিত্র সালাম শরীফ প্রেরণ করেন; এ তরতীব মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকেই নাযিলকৃত। এর বিপরীত যারা করে তারা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত তরতীব মুবারক উনার উপর সন্তুষ্ট নয় বলেই তারা বাতিল ও গুমরাহ ফিরক্বা।

বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ ইত্যাদি প্রত্যেকটি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কিতাবসমূহে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার অনুসরণে বর্ণনাকারীগণ আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নাম মুবারক উনার সাথে সাথে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ লিখেছেন। যার অর্থ হলো- “মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার) উপর পবিত্র ছলাত শরীফ বা পবিত্র দুরূদ শরীফ এবং পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করেন।”
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম, হযরত তাবিয়ীন, তাবি’ তাবিয়ীন, ইমাম-মুজতাহিদ, আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, এক কথায় সকল শ্রেণীর বর্ণনাকারীগণ তথা রাবীগণ উনারা বর্ণনার সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নাম মুবারক উচ্চারণ করে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ পড়তেন এবং লিখার সময় ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহিও ওয়া সাল্লাম’ লিখতেন।

তাই প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনার ধারা অনুযায়ী পবিত্র ছলাত শরীফ বা পবিত্র দুরূদ শরীফ আগে পড়ে এরপর পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করতে হবে।
‘মিশকাত শরীফ’ উনার ১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে,
صلوات الله عليه وسلامه
অর্থাৎ- “মহান আল্লাহ পাক উনার অসংখ্য পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর।”

হযরত আবুল হাসান কুদুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আল মুখতাছারুল কুদূরী’ নামক কিতাব উনার শুরুতেই লিখেছেন,
والصلوة والسلام على رسوله محمد واله واصحابه اجمعين
অর্থ: “পবিত্র ছলাত শরীফ এবং পবিত্র সালাম শরীফ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এবং উনার বংশধর ও সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের প্রতি।”

হযরত মুল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘নূরুল আনওয়ার’ কিতাব উনার ‘মুক্বাদ্দিমা’তে উল্লেখ করেছেন,
والصلوة والسلام على سيدنا محمد صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “সমস্ত পবিত্র ছলাত শরীফ এবং পবিত্র সালাম শরীফ সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি।”

‘আল লুময়াহ্ ফী খছায়িছিল জুমুয়া লিস্ সুয়ূতী’ নামক কিতাব উনার শুরুতেই উল্লেখ আছে,
والصلوة والسلام على سيدنا محمد خير البرية صلى الله عليه وسلم
অর্থ: ‘সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ’ সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ।”

“খছায়িছুল উম্মাতিল্ মুহম্মদিয়া লিল্ আলূবী’ নামক কিতাব উনার মুকাদ্দিমাতে উল্লেখ রয়েছে,
والصلوة والسلام على اشرف المرسلين سيدنا محمد وعلى اله وصحبه اجمعين.
অর্থ: “সমস্ত পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ আশরাফুল মুরসালীন, সাইয়্যিদুনা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এবং উনার বংশধরগণ ও সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি।”

‘আক্বীদাতুস্ সালাফ ওয়া আছহাবিল্ হাদীছ লিছ্ ছাবূনী’ নামক কিতাব উনার মুকাদ্দিমায় মুছান্নিফ লিখেছেন,
والصلوة والسلام على خاتم الانبياء وسيد المرسلين بعثه الله رحمة للعالمين وعلى اله وصحبه الطيبين الطاهرين وعلى من اتبع سنته واقتدى بهداء الى يوم الدين.
অর্থ: “সমস্ত পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি, যাঁকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সারা আলমের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন। এবং উনার বংশধর ও সমস্ত দোষত্রুটি থেকে পূত-পবিত্র পবিত্রতম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের প্রতি এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যাঁরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণ করবেন ও দায়িম-কায়িম থাকবেন তথা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের প্রতিও পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ।”

‘ইলমুছ ছীগাহ্’ নামক কিতাব উনার লিখক হযরতুল আল্লামা ইনায়েত আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত কিতাবের শুরুতেই লিখেছেন,
والصلوة والسلام على سيد الهادين الى محاسن الافعال وعلى له وصحبه المضارعين له فى الصفات والاعمال.
অর্থ: “সমস্ত পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ নেক আমলের প্রতি দিক- নির্দেশনা দানকারীগণের সাইয়্যিদ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর এবং উনার পরিবার ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের উপর। যাঁরা গুণাবলী ও কর্মের ক্ষেত্রে উনার পূর্ণ অনুসারী।’

অতএব, উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, আগে পবিত্র ছলাত শরীফ বা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করা এরপর পবিত্র সালাম শরীফ পৌঁছানোই তরতীব।
তাই যারা বলে, ‘পবিত্র সালাম শরীফ উনার আগে পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ করা জায়িয নেই’- তাদের এ বক্তব্য পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও সমস্ত হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মত মুবারক উনার খিলাফ হওয়ার কারণে কুফরী হবে।

বাতিল ফের্কাদের বক্তব্য হলো- “ছন্দ আকারে মিলযুক্ত বাক্যের মাধ্যমে তথা ক্বাছীদা শরীফ আকারে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা ঠিক নয়। কারণ, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এভাবে উল্লেখ নেই।”

বাতিল ফের্কাদের এ বক্তব্য ‘পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ উনার বৈধতাকে অস্বীকার করায়’ কুফরী হয়েছে। কারণ পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ লিখা, পাঠ করা ও শোনা সবই সুন্নত মুবারক। আর ক্বাছীদা বা কবিতা’র বৈধতার ব্যাপারে পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অসংখ্য দলীল-আদীল্লাহ রয়েছে। আর আমরা যে পবিত্র তাওয়াল্লুদ শরীফ পাঠ করে দাঁড়িয়ে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করি তাও ছন্দ আকারেই।
আমরা পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মাহ্ফিলে দাঁড়িয়ে যে পবিত্র সালাম শরীফ উনার বাক্যগুলো পাঠ করি তা হুবহু সেভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নেই; কিন্তু পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা প্রমাণিত উত্তম ক্বাছীদা শরীফ সুন্নত মুবারক হিসেবে তা পরোক্ষভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের নির্দেশ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ’ ৫৬নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন,
وسلموا تسليما
“তোমরা পবিত্র সালাম শরীফ প্রেরণ করার মতো প্রেরণ করো।”
এখানে পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ বা কবিতা আকারে পবিত্র ছলাত শরীফ, পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করতে নিষেধ করা হয়নি। অপরদিকে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ লিখতে, পাঠ করতে, শুনতে ও শোনাতে নির্দেশ মুবারক ও অনুমতি মুবারক দিয়েছেন। তাই আমরা যেভাবে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করি তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতেই জায়িয তো বটেই; বরং সুন্নত মুবারক।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, যা আমরা নামাযে তাশাহুদে পড়ি-
السلام عليك ايها النبى
“আপনার প্রতি পবিত্র সালাম হে আমার নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
যা মূলত মহান আল্লাহ পাক কর্তৃক পবিত্র মি’রাজ শরীফ রাতে উনার পিয়ারা হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি প্রদত্ত পবিত্র সালাম শরীফ। আর এভাবেই নামাযে পাঠ করা ওয়াজিব করা হয়েছে।

বাতিল ফের্কাদের প্রশ্ন :
আপনারা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত মহান আল্লাহ পাক উনার কর্তৃক শিখানো-
السلام عليك ايها النبى
এ বাক্য দ্বারা পবিত্র মীলাদ মাহফিল উনার মধ্যে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করেন না কেন?

সম্মানিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত তথা হক্বপন্থী উনাদের জবাব :
প্রথমতঃ পবিত্র নামায ও পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার হুকুম এক নয়। পবিত্র নামাযের মধ্যে যেভাবে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা ওয়াজিব আমরা সেভাবেই পবিত্র নামায উনার মধ্যে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করি।
দ্বিতীয়তঃ السلام عليك ايها النبى  এভাবে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করতে তো কাউকে নিষেধ করা হয় না। পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিলে এভাবে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা যাবে না, এ ফতওয়াও দেয়া হয়নি। সম্মানিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত তথা হক্বপন্থীগণ যে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করেন তা ছন্দ বা পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ আকারে। কারণ পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করা সুন্নত মুবারক। এই সুন্নত মুবারক আদায় করার লক্ষ্যে পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিলে ছন্দ বা পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ আকারে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা হয়ে থাকে।
এতে হক্বপন্থীগণ উনারা নামাযে السلام عليك ايها النبى  পাঠ করে যেমন অশেষ মর্যাদার ভাগী হচ্ছেন; তেমনি সাথে সাথে পবিত্র নামায উনার বাইরে পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ আকারে পাঠ করে পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ পাঠের সুন্নত মুবারক আমলের মাধ্যমেও অশেষ বরকত, রহমত ও ছওয়াবের ভাগী হচ্ছি।
অপরদিকে বাতিল ও গুমরাহ লোকেরা শুধু পবিত্র নামায উনার মধ্যেই পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করছে। তাদের ভাব-ভঙ্গীমা এমন যে, মনে হয় পবিত্র নামায উনার বাইরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র সালাম শরীফ পাঠের প্রয়োজন নেই। নাউযুবিল্লাহ! আর পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ যে খাছ সুন্নত মুবারক এ থেকেও তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এ পবিত্র সুন্নত মুবারক থেকেও মাহরূম বা বঞ্চিত হচ্ছে।

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, সম্মানিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত উনার অনুসারীগণ যেভাবে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মাহফিলে ছন্দে বা পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ আকারে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করেন তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতেই করেন। যারা এর বিরোধিতা করে তারা একটা দলীলও পেশ করতে পারবে না যে, এভাবে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠানো পবিত্র সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ। তাহলে এভাবে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠে নিষেধ কোথায়?

No comments

ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য।

  ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য। ডাল খাওয়ার ফলে কলব প্রসারিত হয় এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়। পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উ...

Powered by Blogger.