Header Ads

Islamic Quotes Urdu Facebook Cover. QuotesGram

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ,হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি "নূর" এ বিষয়ে কুরআন শরীফ উনার দলীলঃপর্ব- ২



🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর অয়াক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম তথা আপাদমস্তক নূরের তৈরী প্রসঙ্গে সূরা মায়িদার ১৫ নং আয়াতের তাহক্বীক

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

“সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম যে “নূর” তার প্রমাণস্বরূপ সূরা মায়েদায় বর্ণিত-

(قدجاء كم من الله نور)

“অর্থাৎ তোমাদের নিকট মহান আল্লাহপাক -এর তরফ থেকে নূর বা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন।”
এ আয়াত শরীফ ও তার ব্যাখ্যায় নির্ভরযোগ্য ও অনুসরণীয় তাফসীর ও অন্যান্য তাফসীর সহ প্রায় ৩৩ টি বরাত উল্লেখ করা হয়েছে আগের পর্বে।যার অধিকাংশগুলোতেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নূর বলা হয়েছে।

তবে কেউ কেউ আয়াত শরীফে বর্ণিত “নূর” শব্দ দ্বারা “দ্বীনইসলাম” ও “কোরআন শরীফ কে ও” বুঝিয়েছেন।এখন প্রশ্ন হলো- হযরত মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম গণ ‘নূর’ শব্দের ব্যাখ্যায় যে ইখতিলাফ বা মতভেদ করেছেন,তার সঠিক ফায়সালা কি?

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

অর্থাৎ “নূর” অর্থ মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, দ্বীন ইসলাম ও কোরআন শরীফ এ তিনটি মতের মধ্যে কোন মতটি অধিক সহীহ্, গ্রহণযোগ্য ও প্রাধান্যপ্রাপ্ত?

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

মূলতঃ উল্লিখিত তিনটি মতের মধ্যে প্রথম মত অর্থাৎ আয়াত শরীফে বর্ণিত ‘নূর’হলেন “সাইয়্যিদুল মুরসালীন ,ইমামুল মুরসালীন,হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।এ মতটিই সমধিক সহীহ্, গ্রহণযোগ্য ও প্রাধান্যপ্রাপ্ত। কারণ এটা অধিকাংশ মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম গণ উনাদের অভিমত।

যেমন- এপ্রসঙ্গে ইমামুল মুফাস্সিরীন, তাজুল মানতেক্বীন আল্লামা ফখরুদ্দীন রাজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার “তাফসীরে কাবীর- ১১জিল্দ ১৮৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,

وفيه اقوال (الاول) ان المراد بالنور محمد صلى الله عليه وسلم وبالكتاب القران (الثانى) ان المراد بالنور الاسلام وبالكتاب القران (الثالث) النور والكتاب هو القران وهذا ضعيف لان العطف يوجب المغائرة.

অর্থঃ- “আয়াত শরীফে বর্ণিত ‘নূর’ শব্দের ব্যাপারে একাধিক মত রয়েছে-

(১) ‘নূর’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং ‘কিতাব’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- কোরআনশরীফ।

(২) ‘নূর’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- ইসলাম এবং ‘কিতাব’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- কোরআন শরীফ।

(৩) ‘নূর এবং কিতাব’ উভয়ের দ্বারাই কেরাআন শরীফ উদ্দেশ্য, তবে এমতটি জঈফ বা দুর্বল।কেননা ব্যাকরণমতে এবং অব্যয়পদটি দু’টি পৃথকবস্তুকে বুঝাতেই ব্যবহৃত হয়।”

এপ্রসঙ্গে ফখরুল আল্লামা মাওলানা আমীর আলী সাহেব উনার “তাফসীরে মাওয়াহেবু ররহমান” ৩য় জিঃ ১০৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,

অর্থঃ- “বর্ণিত আয়াত শরীফে ‘নুর’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।এ ব্যাখ্যাই সবচেয়ে শক্তিশালী বা মজবুত ও রাজেহ্ অর্থাৎ প্রাধান্যপ্রাপ্ত।আয়াতাংশের অর্থহলো- মহান আল্লাহপাক উনার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট‘নুর’ অর্থাৎ আখেরী নবী ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন। আর কিতাবে মুবীন অর্থাৎ প্রকাশ্য কোরআন শরীফ এসেছে।”

অনুরূপ পীর করমশাহ আল আযহারী “তাফসীরে জিয়াউল কোরআন” ১ম জিঃ ৪৫৩ পৃষ্ঠায় লিখেন,
অর্থঃ- “বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমামুল মুফাস্সিরীন হযরত ইবনে জরীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেন, ‘নুর’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।যদ্বারা আল্লাহপাক সত্যকে আলোকিত করবেন। ......... যখন আল্লাহপাক স্বয়ং নিজেই উনার হাবীব পাক উনাকে ‘নুর’ বলে সম্বোধন করেছেন, তখন আপত্তি কিসের? আর কিতাবে মুবীন দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুরআন শরীফ।‘নূর’ দ্বারা কুরআন শরীফকে বুঝানো হয়েছে একথা সঠিক নয়।কেননা ওয়ায়েআতেফা ভিন্নতা বা তাগায়ূর-এর জন্যেই ব্যবহৃত হয়।”

উপরোক্ত বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলোযে, সূরা মায়েদায় বর্ণিত‘নূর’ শব্দের ব্যাখ্যায় মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম গণ যে ইখতিলাফ বা মতভেদ করেছেন তন্মেধ্যে ‘নূর’ হলেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।অধিকাংশ মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম গণ উনাদের এমতটিই সবচেয়ে অধিকসহীহ্, গ্রহণযোগ্য, প্রাধান্যপ্রাপ্ত ও শক্তিশালী।

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

আয়াত শরীফে বর্ণিত ‘নূর’ শব্দ দ্বারা যারা ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীকার করেনা তাদের বক্তব্য ও যুক্তিখন্ডন

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

উল্লেখ্য, বর্ণিত আয়াত শরীফের “নূর” শব্দ দ্বারা যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে, তা অসংখ্য বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরের কিতাবসমূহে উল্লেখথাকাসত্ত্বেও এবং অধিকাংশ মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম গণ উনাদের এমতটি অন্যান্য মত থেকে সমধিকসহীহ্, প্রাধান্যপ্রাপ্ত ও শক্তিশালী ছাবেত হওয়ার পরও কেউ কেউ দু’একটি দলীল ও কতিপয় আজগুবী যুক্তি পেশ করে বলে থাকে যে,বর্ণিত আয়াত শরীফে ‘নূর’ শব্দ দ্বারা ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বুঝানো হয়নি। বরং‘কোরআন শরীফকে’ বুঝানো হয়েছে। আর এরূপ ব্যাখ্যার মূলপ্রবক্তা হলো- আবু আলী জুবাঈ ও কাশশাফ প্রণেতা যমখশরী।

যেমন এপ্রসঙ্গে আল্লামা আলুসী বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার তাফসীরে রুহুল মায়ানীতে লিখেন,

وقال ابو على الجبائى عنى بالنور القران لكشفه واظهاره طرق الهدى واليقين واقتصر على ذالك الزمخشرى.

অর্থঃ-“আবূ আলী জুবাঈ বলেন, আয়াতে বর্ণিত ‘নূর’ শব্দদ্বারা উদ্দেশ্য হলো কুরআন শরীফ। কেননা কোরআন শরীফ হলো বস্তুর স্বরূপ উম্মোচনকারী ও হিদায়েতের পথপ্রকাশকারী। কাশ্শাফপ্রনেতা যমখশরীও উক্ত আয়াত শরীফেরএরূপতাফসীরকরেছেন।”

আবূ আলী জুবাঈ ও যমখশরীর এ তাফসীরকে পূঁজিকরে পরবর্তী কেউ কেউ আয়াতে বর্ণিত ‘নূর’ দ্বারা কোরআন শরীফ মুরাদ নিয়েছেন। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, ‘নূর’ শব্দের অর্থ কুরআন শরীফ এ অভিমত মূলতঃ আবূ আলী জুবাঈ ও আল্লামা যমখশরীর। অথচ আবূ আলী জুবাঈ ও আল্লামা যমখশরীর সকল অভিমত আমাদের নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা আবূ আলী জুবাঈ ও আল্লাম যমখশরী তারা উভয়েই ছিলেন বাতিল ও জাহান্নামী ফেরক্বা মু’তাযিলা আক্বীদায় বিশ্বাসী।

যেমন এ প্রসঙ্গে আক্বাইদের বিখ্যাত কিতাব আক্বাইদে নাসাফী-এর শরাহ নিবরাস কিতাবের ২৮-২৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وكان صاحب الكشاف يكنى نفسه ابالمعتوله ابو على الجبائى ........... الخ.

অর্থাৎ “আবূ আলী জুবাঈ ও যমখশরী উভয়েই বাতিল মাযহাব মু’তাযিলাহ ফেরক্বার অনুসারী ছিল।”সুতরাং এব্যাপারে আল্লামা যমখশরী ও আবু আলী জুবাঈ-এর বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

‘নূর’ বিরোধীরা এব্যাপারে যেসকল ভ্রান্তিমূলক যুক্তি ও বক্তব্য পেশ করে থাকে, নিম্নে নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে তাখন্ডন করা হলো-

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

‘নূর বিরোধীদের ভ্রান্তিমূলক প্রথমযুক্তি ও তা খন্ডন:

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

উল্লেখ্য,আল্লামা আবূ আলী জুবাঈ ও যমখশরীর মতকে পূঁজি করে যারা আয়াত শরীফে বর্ণিত ‘নূর’ শব্দ দ্বারা কোরআন শরীফ মুরাদ নিয়েছেন, তাদের একটি ভ্রান্তিমূলক বক্তব্য হলো- আয়াত শরীফে বর্ণিত ‘নূর’ ও কিতাব একই বস্তু অর্থাৎ ‘নূর’ দ্বারাও উদ্দেশ্য হলো কোরআন শরীফ।কারণ "نور وكتاب مبين" -এরমধ্যখানেযে (و) রয়েছে, তাওয়ায়ে তাফসীরী অর্থাৎ তাফসীর বা ব্যাখ্যা করার জন্য এসেছে অর্থাৎ ‘নূর ও কিতাব’ একই বস্তু।

অথচ তাদের এবক্তব্য সম্পূর্ণই অশুদ্ধ ও অবান্তর। যেমন-তাদের এভ্রান্তিমূলক বক্তব্যের জবাবে রঈসুল মুহাদ্দিসীন, হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব শরহুশ শিফার ১মখন্ড ৪২ পৃষ্ঠায় লিখেন,

قد جاء كم من الله نور- اى لظهور الحق وابطال الباطل واطلق عليه الصلواة والسلام لانه يهتدى به من الظلمات الى النور (كتاب مبين) بين الاعجاز وبين الاحكام وهذا شاهد للمدعى الاول بيانه ان الاصل فى العطف المغائرة.

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহপাক উনার পক্ষ হতে তোমাদের নিকট এক মহান ‘নূর’ সত্যের প্রকাশ ও মিথ্যাকে দূরিভূত করার জন্য তাশরীফ এনেছেন। আয়াত শরীফে বর্ণিত ‘নূর’ শব্দটি দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। কেননা উনার কারণে গোমরাহী থেকে হিদায়েতের পথে আসা যায়, “এবং সুস্পষ্ট কিতাব” অর্থাৎ মহান আল্লাহপাক উনার কালাম হওয়ার এক প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ এবং খোদায়ী কানুনের প্রকাশ্য দলীল হয়ে এক সুস্পষ্ট কিতাব এসেছে। আর এটাই মূলতঃ প্রথমদাবী অর্থাৎ ‘নূর’ দ্বারা যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বুঝানো হয়েছে, এটাই তার সুস্পষ্ট প্রমাণ।

আর তা হচ্ছে- আরবী কাওয়ায়েদ অনুযায়ী “হুরুফে আতেফা” এর প্রকৃতি ও স্বভাবই হলো "مغائرة" অর্থাৎ (মাতূফ ও মাতূফ আলাইহি) দু’টি পৃথক বস্তুকে চাওয়া।” তাছাড়া ও যারা (و) ওয়াও কে তাফসীরের অর্থে গ্রহণ করে বলে থাকে যে, নূর ও কিতাব একই বস্তু অর্থাৎ কোরআন শরীফ।তবে আমরাও (و) ওয়াও কে তাফসীরের অর্থেগ্রহণ করে বলবো যে, ‘‘নূর ও কিতাব একই বস্তু অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” আর এ বক্তব্যের প্রতি পরিপূর্ণ সমর্থন রয়েছে- রঈসুল মুহাদ্দিসীন, হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনার।

তিনি বলেন,

وقد حال بعض المفسرين بانه من باب الجمع بين الوصفين باعتبار تغائر هما اللفظى وان المراد بهما القران وقد قال فى مقابلهم واى مانع ان يجعل النعتان للرسول صلى الله عليه وسلم فانه نور عظيم لكمال ظهرره بين الانوار وكتاب مبين ومن حيث انه جامع لجميع الاسرار ومظهر للاحكام والاحوال والاخبار.

অর্থঃ- ‘কোন কোন মোফাস্সির (যেমন-আবূআলীজুবাঈ ও কাশ্শাফ লেখক যমখশরী) "نور وكتاب مبين" -কে (تغائر الفظى) অর্থাৎ শুধুমাত্র শাব্দিক পৃথক হওয়াই যথেষ্ট হিসেবে ‘নূর ও কিতাবে মুবীন’ উভয় শব্দদ্বারা‘ কোরআন’ অর্থ করেছেন।তাদের এবক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, একই নিয়মে উভয় শব্দ অর্থাৎ ‘নূর ও কিতাব’ দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝাতে বাঁধা কিসের? কারণ, সৃষ্টিতে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ ‘নূর’।কেননা তামাম নূরের মধ্যে উনার নূরই পূর্ণ সুস্পষ্ট।আর কিতাবে মুবীন ও তাঁরই ছিফাত ও বিশেষণ। কারণ তিনি মহান আল্লাহ্পাক-এর যাবতীয় রহস্যের ভান্ডার ও যাবতীয় কানুনে ইলাহিয়ার প্রকাশক ও তিনি সমগ্র মাখলুকাতের সামনে মহান আল্লাহ্পাক-এর জাত ও ছিফতের পরিচয়দাতা।”

তাফসীরে রুহুল মায়ানীর লেখক-আল্লামা মাহমুদ আলুসী বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে এরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।অতএব প্রমাণিত হলো যে, (و) ওয়াও কে তাফসীরের অর্থে গ্রহণ করে ‘নূর’ ও‘ কিতাব’ একই বস্তু অর্থাৎ কোরআন শরীফ মুরাদ নেয়া শুদ্ধ নয়।বরংকাওয়ায়েদমোতাবেক‘নূর’দ্বারাউদ্দেশ্যহলো- সাইয়্যিদুলমুরসালীন, ইমামুলমুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।আর ‘কিতাব’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- কোরআন শরীফ।আর যদি ওয়াও কে তাফসীর হিসেবেই ধরা হয়, তবে ‘নূর ও কিতাব’ উভয়শব্দ দ্বারাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্দেশ্য।

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

‘নূর’ বিরোধীদের ভ্রান্তিমূলক দ্বিতীয় যুক্তি ও তা খন্ডন

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

স্মর্তব্যযে, যারা সূরা মায়েদায় বর্ণিত ‘নূর’ শব্দ দ্বারা কোরআন শরীফ মুরাদ নিয়েছে বা কোরআন শরীফকে বুঝিয়েছে, তাদের আরেকটি খোঁড়া যুক্তি হলো- ‘নূর’ সম্পর্কিত আয়াতের শুরুতে এরশাদ হয়েছে-
قد جاء كم رسولنا

অর্থঃ- “তোমাদের নিকট আমার রসূল এসেছেন।” অর্থাৎ এআয়াতে প্রথমেই রসূলের কথা বলে দেয়া হয়েছে, তাই আয়াতের শেষাংশ অর্থাৎجاء كم من الله نور দ্বারা রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদ্দেশ্য নয়।”

অথচ তাদের এবক্তব্যটিও সম্পূর্ণই মনগড়া ও অজ্ঞতামূলক।কারণ এ আয়াতের প্রথমাংশেও (جاء) ফে’ল বা ক্রিয়াপদ এসেছে এবং শেষাংশেও (جاء) ফে’ল বা ক্রিয়াপদ এসেছে।সুতরাং (جاء) ফে’লের (فاعل) বা কর্তা উভয়স্থলে এক হওয়াই অধিকযুক্তিযুক্ত।

যেমন এপ্রসঙ্গে দেওবন্দীদের অগ্রণী আশরাফ আলী থানবী সাহেব তার রেসালায়ে নূর’ কিতাবের ৩১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-
"قد جاء كم من الله نور وكتاب مبين"
এ আয়াতের একটি তাফসীর বা ব্যাখ্যা হলো, আয়াত শরীফে বর্ণিত ‘নূর’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।কারণ আয়াতের শুরুতেও قد جاء كم رسولنا বলা হয়েছে।অতএব (جاء) ফে’লের (فاعل) বা কর্তা উভয়স্থলে এক হওয়াই যুক্তিযুক্ত।সুতরাং যদি তাই হয়ে থাকে, তবে একথা কিকরে গ্রহণযোগ্য হতে পারেযে, ‘নূর’ দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বুঝানো হয়নি?

মূলতঃ সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিতহলোযে, যারা (رسولنا) শব্দের উপর ভিত্তি করে বলে থাকে যে, নূর দ্বারা কোরআন শরীফকে বুঝানো হয়েছে, তাদের সে বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুলওমনগড়া।

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
‘নূর’ বিরোধীদের ভ্রান্তিমূলক তৃতীয় যুক্তি ও তা খন্ডনঃ

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

স্মরণযোগ্য যে, যারা সূরা মায়েদায় বর্ণিত‘নূর’শব্দ দ্বারা ‘মুহম্মদ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীকার করেনা, তাদের আরেকটি যুক্তি এইযে جاء كم من الله نور এআয়াতাংশের পরেই এরশাদ হয়েছে যে, يهدى به الله অর্থাৎ এঅংশে (به) –এর জমীর বা সর্বনাম যেহেতু (واحد) বা একবচনএসেছে, সেহেতু বুঝা যাচ্ছে যে, ‘নূর’ এবং “কিতাবে মুবীন” দ্বারা দু’টি পৃথক বস্তুকে বুঝানো হয়নি।বরং একটি বস্তুই বুঝানো হয়েছে,আর তা হচ্ছে- কোরআন শরীফ।

তাদের এযুক্তিটিও নেহায়েতই জেহালতপূর্ণ।শুধু তাই নয়, তাদের এবক্তব্য কোরআন-হাদীস সম্পর্কিত ইল্মের স্বল্পতারই বহিঃপ্রকাশ।কারণ কোরআন –হাদীস ও আরবী ভাষা সম্পর্কে স্বল্পঅভিজ্ঞ ব্যক্তি ও জানে যে, উদ্দেশ্য ও গুণাগুণের ঐক্যের ভিত্তিতে পবিত্র কোরআন শরীফের বহুস্থানে একের অধিক বস্তুর জন্যে একটিমাত্র জমীর বা সর্বনাম ব্যবহৃত হয়েছে।

যেমন মহান আল্লাহ্পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে মুনাফিকদের স্বভাব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন-

يحلفون بالله لكم ليرضوكم الله ورسوله احق ان يرضوه.

অর্থাৎ “তারা (মুনাফিকরা) তাদেরকে সন্তুষ্টি করার জন্যে মিথ্যা শপথ করে।অথচ আল্লাহ্পাক ও উনার রাসূলই সন্তুষ্ট পাওয়ার সমধিক উপযুক্ত।”

এআয়াত শরীফের প্রথমে বলা হয়েছে- والله ورسوله) অর্থাৎ আল্লাহ্ ও রসূল এই দুই পৃথকসত্ত্বার উল্লেখ রয়েছে, আর পরবর্তীতে বলা হয়েছে- (ان يرضوه) অর্থাৎ এখানে জমীর বা সর্বনাম (واحد) বা একবচন আনা হয়েছে।অথচ এখানে সর্বনাম দ্বিবচন হওয়া উচিত ছিল।কারণ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয়েই সন্তুষ্টি পাওয়ার উপযুক্ত।

যেহেতু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টিই মহান আল্লাহ্পাক উনার সন্তুষ্টি, তাই জমীর বা সর্বনামকে একবচন আনা হয়েছে। সুতরাং সর্বনামকে দ্বিবচন ব্যবহার না করে একবচন ব্যবহার করার এরচেয়ে উৎকৃষ্ট প্রমাণ আরকি হতে পারে?

অনুরূপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও কুরআন শরীফ যদিও দু’টি পৃথক বস্তু কিন্তু উভয়ের উদ্দেশ্য বা গুণাগুণ যেহেতু এক, তাই জমীর বা সর্বনাম দ্বিবচন না এনে একবচন আনা হয়েছে।কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করার অর্থই হলো কুরআন শরীফকে অনুসরণ করা।

কারণ কোরআন শরীফের বাস্তব নমুনাই হলেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।যেমন এপ্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, একবার কতিপয় সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার দরবার শরীফে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে উম্মুল মু’মিনীন! আল্লাহ পাক উনার রসূল, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চরিত্র মোবারক কিরূপ?” জবাবে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম বলেন, “হে সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহুতায়াল আনহুম! আপনারা কি কুরআন শরীফ পাঠ করেননি? কারণ "كان خلقه القران" কুরআন শরীফই আল্লাহ পাক উনার রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরিত্র মুবারক।”

অর্থাৎ কুরআন শরীফের বাস্তব ও পূর্ণাঙ্গ নমুনাই হচ্ছেন- আল্লাহপাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।তাই জমীর বা সর্বনামকে একবচন আনা হয়েছে।

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

“জমীর বা সর্বনাম একবচন আনার কারণ সম্পর্কে মুফাসসিরীনে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি গণেরঅভিমত।”

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

উল্লেখ্য,প্রায়সকল মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম গণই একমত যে, উদ্দেশ্য, গুণাগুণ ও হুকুমের উপর ভিত্তি করেই মূলতঃ (به)-এর জমীর বা সর্বনাম একবচন আনা হয়েছে।

যেমন এক্ষেত্রে জমীর বা সর্বনাম একবচন আনার কারণ সম্পর্কে ইমামুল আইম্মাতিল মুসলিমীন ক্বাজী নাছীরুদ্দীন আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর বায়জবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীর “তাফসীরে বায়জবীতে” উল্লেখ করেছেন-

(يهدى به الله) وحد الضمير لان المراد بهما واحد او لانهما فى الحكم كواحد.

অর্থঃ- “(উক্ত আয়াত শরীফে) জমীর বা সর্বনাম একবচন আনার কারণ এইযে, ‘নূর’ ও ‘কিতাবে মুবীন’ উভয়ের দ্বারা উদ্দেশ্য একটাই এবং হুকুমের ক্ষেত্রে উভয়ে একই রূপ। অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে যেরূপ অনুসরণ করা ওয়াজিব তদ্রুপ কুরআন শরীফকেও অনুসরণ করা ওয়াজিব।”

ইমামুল আলম, আল ফাযেল, কুতুবু য্যামান, শায়খ ইসমাঈল হাক্বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীর গ্রস্থ- “তাফসীরে রুহুল বয়ানে”উল্লেখ করেন-

(يهدى به) وحد الضمير لان المراد بهما واحد بالذات او لانها فى حكم الواحد فان المقصود منهما دعوة الخلق الى الحق احدهما رسول الهى والاخر معجزته.

অর্থঃ-“এখানে জমীর বা সর্বনাম একবচন আনা হয়েছে, কেননা (মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও কুরআন শরীফ) উভয়ের দ্বারা একটাই উদ্দেশ্য। অর্থাৎ হিদায়েত অথবা হুকুমের ক্ষেত্রে উভয়েই এক। সুতরাং উভয়ের দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- মাখলুকাতের প্রতি দাওয়াত।একজন হলেন, মহান আল্লাহপাক উনার রসূল, আর দ্বিতীয় হলো উনার মু’জিজা অর্থাৎ কুরআন শরীফ।”

উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা শায়খ আবূ সাউদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ“তাফসীরে আবূ সাউদে” উল্লেখ করেন-

توحيد الضمير المجرور لاتحاد المرجع بالذات او لكونهما فى حكم الواحد او اريد يهدى بما ذكره.

অর্থঃ-“শাব্দিক ভাবে ‘মারজা’ অর্থাৎ জমীরের উদ্দেশ্য দু’টো হলেও সত্ত্বাগতভাবে এক হওয়ায় জমীর বা সর্বনামকে একবচন আনা হয়েছে।অথবা শরীয়তের দৃষ্টিতে নবী এবং কুরআন শরীফ উভয়ের আনুগত্য তাই যেহেতু ওয়াজিব, সেহেতু সে একক হুকুমকে বুঝাবার জন্যই সর্বনাম একবচন ব্যবহার করা হয়েছে।অথবা শুধুমাত্র ‘পুর্বোল্লিখিত” কথাটা বুঝাবার জন্যই সর্বনাম একবচন আনা হয়েছে।”

আল্লামাতুল হিব্র বাহরুল ফাহহমাহ, হামিলুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, বায়হাক্বি উল ওয়াক্বত, আলামুল হুদা আল্লামা কাজী মুহম্মদ ছানাউল্লাহ্ ওছমানী হানাফী পানিপথী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীরগ্রস্থ তাফসীরে মাযহারীর ৩য় জিঃ ৬৮ পৃষ্ঠায় লিখেন,

يهدى به - وحد الضمير لان المراد بهما اما واحد اوكو احد فى الحكم.

অর্থঃ- “(به)-এর মধ্যে জমীর বা সর্বনাম একবচন এসেছে। কারণ উভয়ের দ্বারা উদ্দেশ্য একটিই অথবা উভয়ের হুকুম ও এক।”

সিহ্বানুল হিন্দ মাওলানা আহমদ সাঈদ দেহলভী দেওবন্দী সাহেব তাঁর তাফসীর গ্রস্থ‘ কাশফুর রহমান’ ১৭৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,

অর্থঃ- “(به)-এর মধ্যে জমীর বা সর্বনাম এর মারজা ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও কুরআন শরীফ উভয়ের দিকেই, যেহেতু উদ্দেশ্যের দিক থেকে উভয়ে একইরূপ। এজন্যই জমীর একবচন নেয়া হয়েছে।”

তাফসীরে বায়জবীর শরাহ্ “হাশিয়াতুশ শিহাব ৩য় জিল্দ ২২৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
(يهدى به) وحد الضمير لان المراد بهما واحد او لانهم كواحد فى الحكم.

অর্থঃ-“(به)-এর জমীর বা সর্বনাম একবচন নেয়া হয়েছে, কারণ উভয়ের উদ্দেশ্য একটাই।অথবা হুকুমের ক্ষেত্রে উভয়েই একরূপ।”

তাফসীরে বায়জবীর শরাহ্ “হাশিয়ায়ে মুহিউদ্দীন শায়খযাদাহ্ ২জিল্দ ১০৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখআছে,

(يهدى به) وحد الضمير لان المراد بهما واحد او لانهما كواحد فى الحكم.

অর্থঃ-“(به)-এর জমীর বা সর্বনাম একবচন নেয়া হয়েছে, কারণ উভয়ের উদ্দেশ্য একটাই।অথবা হুকুমের ক্ষেত্রে উভয়েই একরূপ।” অতএব, উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ‘নূর’ ও‘কিতাবে মুবীন’ একই বস্তু হওয়ার কারণে জমীর বা সর্বনাম একবচন নেয়া হয়নি, বরং ‘নূর’ও‘কুরআন শরীফের’ উদ্দেশ্য ও গুণাগুণ এক হওয়ার কারণেই জমীর বা সর্বনাম একবচন নেয়া হয়েছে। কাজেই যারা বলে জমীর বা সর্বনাম একবচন নেয়া হয়েছে বিধায় ‘নূর’ও‘কিতাব’ এউভয় শব্দদ্বারাই কুরআন শরীফ উদ্দেশ্য তাদের এদাবী সম্পূর্ণই মিথ্যা, অবান্তর ও জেহালতপূর্ণ।

মূলকথা হলো, বর্ণিত আয়াত শরীফে ‘নূর’ দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই বুঝানো হয়েছে, এমতটিই সবচেয়ে শক্তিশালী, সহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য।আর যারা‘নূর’দ্বারা কুরআন শরীফ ও ইসলাম মুরাদ নিয়েছে, তাদের মত জঈফ বা দুর্বল। এ ব্যাপারে‘ নূর’ বিরোধীরা যত দলীল বা যুক্তিই পেশ করুক না কেন তার কোনটাই গ্রহণযোগ্য নয়।

কাজেই কুরআন শরীফের আয়াতদ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপাদমস্তক ‘নূর’ বা নুরে মুজাস্সাম।উনাকে ‘নূর’ হিসেবেঅস্বীকার করার অর্থই হলো কুরআন শরীফের আয়াতকে অস্বীকার করা, যা সকলের মতেই কুফরী।

No comments

ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য।

  ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য। ডাল খাওয়ার ফলে কলব প্রসারিত হয় এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়। পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উ...

Powered by Blogger.