রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক যামানা থেকেই শবে বরাত পালিত হয়ে আসছে
কোন কোন জাহিল বলে থাকে, খাইরুল করুনে ‘শবে বরাত’ ছিল না, তাই এটা বিদয়াত | মূলত তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা বরং সঠিক কথা হলো, শবে বরাত আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব, রসূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানা থেকেই শুরু হয়ে অদ্যাবদি তা পালিত হয়ে আসছে | যা ইতোমেধ্যেই পবিত্র কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ ও বিশ্বখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণ করা হয়েছে |
এ মুবারক রাতটি হচ্ছে উম্মতে হাবীবী উনাদের জন্য মহান আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন উনার পক্ষ হতে খাছ নিয়ামত তথা খাছ রহম, করম ও ইহসানের কারণ |
## শবে বরাত পালনকারী সম্পর্কে রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারকঃ
শবে বরাত পালন করা সম্পর্কে রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বহু নির্দেশ মুবারক রয়েছে | যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا من مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر. رواه ابن ماجه.
অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাতের আগমন ঘটে তখন ওই রাতে তোমরা ইবাদত-বন্দেগী করে জাগ্রত থাকবে এবং দিবাভাগে রোযা রাখবে | কেননা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক ওই শবে বরাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই নিকটবর্তী আকাশে নাযিল হন এবং বলতে থাকেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি ক্ষমা করে দিব | কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি অপরিমিত রিযিক দিয়ে দিব এবং কোন বিপদে বিপন্ন ব্যক্তি আছ কি? যাকে আমি বিপদ থেকে মুক্ত করে দিব | সাবধান! সাবধান! এভাবেই মহান আল্লাহ্ পাক ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন |”
(ইবনে মাজাহ শরীফ, মিরকাত ৩য় খণ্ড ১৯৫-১৯৬, মিরয়াতুল মানাজিহ ৩য় খণ্ড ২৯৩-২৯৫, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত)
# “মিশকাত শরীফ”-এর ১১৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
عن ام المؤمنين حضرت عائشة عليها السلام عن النبى صلى الله عليه وسلم قال هل تدرين ما فى هذه الليلة يعنى ليلة النصف من شعبان قالت ما فيها يا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال فيها ان يكتب كل مولود من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ان يكتب كل هالك من بنى ادم فى هذه السنة وفيها ترفع اعمالهم وفيها تنزل ارزاقهم فقالت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم ما من احد يدخل الجنة الا بر حمة الله تعالى فقال ما من احد يدخل الجنة الا بر حمة الله تعالى ثلثا قلت ولا انت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم فوضع يده على هامته فقال ولا انا الا ان يتغمدنى الله منه برحمته يقولها ثلث مرات. رواه البيهقى.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত আছে | একদা রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি কি জানেন, এ রাত্রিতে অর্থাৎ শবে বরাতের রাতে কি ঘটে থাকে? জবাবে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শবে বরাতে কি কি ঘটে থাকে? তখন রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ওই শবে বরাতে নির্ধারণ করা হয় এই বৎসরে কতগুলো আদম সন্তান জন্মগ্রহণ করবে | অতঃপর এই শবে বরাতের রাতে আরো নির্ধারণ করা হয় কতগুলো আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করবে | ওই রাতে লিপিবদ্ধ করা হয় মানুষের কর্মসমূহ এবং মানুষের রিযিকসমূহ | অতঃপর উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ্ পাক-এর রহমত ব্যতীত কোন ব্যক্তি (আমল দ্বারা) কি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে? জবাবে রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন বার বললেন যে, আল্লাহ্ পাক-এর রহমত ব্যতীত কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না | উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, তখন আমি রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনিও কি নন! ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপন মাথা মুবারক-এর উপর হাত মুবারক রেখে বললেন, আমিও না | তবে মহান আল্লাহ্ পাক আমাকে স্বীয় রহমত দ্বারা আচ্ছাদিত করে নিয়েছেন | এরূপভাবে তিন বার বললেন |”
(বাইহাক্বী শরীফ, দাওয়াতে কবীরে)
# শবে বরাত প্রসঙ্গে উক্ত কিতাবের ১১৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
عن حضرت ابى موسى الاشعرى رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى ليطلع فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن رواه ابن ماجه ورواه احمد. عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضى الله تعالى عنه وفى رواية الا اثنين مشاحن وقاتل نفس.
অর্থ: “হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে | তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেছেন, অর্ধ শা’বানের রাত্রি তথা শবে বরাতে মহান আল্লাহ্ পাক স্বয়ং নায়িল হন এবং উনার সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন তবে মুশরিক এবং বিদ্বেষভাবাপন্ন ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করেন না | (ইবনে মাজাহ) কিন্তু হযরত ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি এটাকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন | আর উনার উপর এক রেওওয়ায়েত রয়েছে, দু’ব্যক্তি ব্যতীত | যথা- বিদ্বেষভাবাপন্ন ব্যক্তি এবং মানুষ হত্যাকারী ব্যতীত সকলকেই ক্ষমা করা হয় |”
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, শবে বরাত অবশ্যই খাইরুল কুরুনে ছিল | আর ছিল বলেই রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শবে বরাতের ব্যাপারে এত উৎসাহ ও নির্দেশ করেছেন
No comments