অর্ধ শা’বান বা শবে বরাত উপলক্ষে আয়োজিত মাহফিল বিদয়াত নয় বরং সুন্নত

লা-মাযহাবীদের গোমরাহীমূলক বক্তব্যের
সঠিক জবাব হলো- অর্ধ শা’বান উপলক্ষে
আয়োজিত মাহফিল বিদয়াত নয় বরং সুন্নত | কারণ অর্ধ শা’বান
রাতের বরাকাত, ফুয়ুজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের কথা খোদ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে বর্ণনা করা
হয়েছে এবং তা হাছিলের জন্য উক্ত মুবারক রাতটিকে সারা রাতে জেগে
ইবাদত-বন্দিগী করা এবং দিনের বেলায় রোযা রাখার জন্য আদেশ-নির্দেশ করা হয়েছে |
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا من مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر. رواه ابن ماجه.
অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাতের আগমন ঘটে তখন ওই রাতে তোমরা ইবাদত-বন্দেগী করে জাগ্রত থাকবে এবং দিবাভাগে রোযা রাখবে | কেননা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক ওই শবে বরাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই নিকটবর্তী আকাশে নাযিল হন এবং বলতে থাকেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি ক্ষমা করে দিব | কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি অপরিমিত রিযিক দিয়ে দিব এবং কোন বিপদে বিপন্ন ব্যক্তি আছ কি? যাকে আমি বিপদ থেকে মুক্ত করে দিব | সাবধান! সাবধান! এভাবেই মহান আল্লাহ্ পাক ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন |”
(ইবনে মাজাহ শরীফ, মিরকাত ৩য় খণ্ড ১৯৫-১৯৬, মিরয়াতুল মানাজিহ ৩য় খণ্ড ২৯৩-২৯৫, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত)
অর্ধ শা’বান বা শবে বরাতের রাতটির কি মাহাত্ম্, কি হক্ব তা বান্দা ও উম্মত জানবে কিভাবে? তা জানার জন্য আয়োজিত মাহফিল বা মজলিসই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ মাধ্যম |
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
العلم امام العمل
অর্থ: “ইলম হচ্ছে আমলের ইমাম |” অর্থাৎ কোন আমল করতে হলে ইলমের প্রয়োজন | ইলম না থাকলে আমল বা ইবাদত সঠিকভাবে করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয় |
বান্দা যখন কোন ইবাদত বা আমল করতে যাবে, তখন প্রথম তাকে সে ইবাদত বা আমলের ইলম অর্জন করে নিতে হবে | অন্যথায় তার পক্ষে সে ইবাদত বা আমল করা সম্ভব হবে না |
সে উপলক্ষে মাহফিল বা মজলিসের আয়োজন করা হয় | সুতরাং তা বিদয়াত হবে কেন? মূলতঃ এটা বিদয়াত বলার অর্থই হচ্ছে মুসলমানদেরকে ইলম ও আমল থেকে সরিয়ে দেয়া, আল্লাহ্ পাক জাল্লা শানুহু ও উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি-রিযামন্দি থেকে মাহরূম করা | যা সুস্পষ্ট কুফরী |
কারণ ইলম অর্জন করার জন্য, আমল করার জন্য এবং আল্লাহ্ পাক ও উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি-রেজামন্দি হাছিল করার জন্য আল্লাহ্ পাক-এর কালামে পাকে এবং আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে আদেশ নির্দেশ করেছেন |
যেমন ইলমের ব্যাপারে কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
قل رب زدنى علما
অর্থ: “বলুন, হে আমার রব পরওয়ারদিগার আল্লাহ্ পাক, আমার ইলম বৃদ্ধি করে দিন |”
(সূরা ত্বা-হা: আয়াত শরীফ/১১৪)
এখানে ইলম বৃদ্ধির জন্য আল্লাহ্ পাক-এর নিকট বান্দাকে দোয়া করতে বলা হয়েছে |
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
طلب العلم فريضة على كل مسلم
অর্থ: “ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয |”
(ইবনে মাজাহ শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
من يريد الله به خيرا يفقهه فى الدين
অর্থ: “আল্লাহ্ পাক যার কল্যাণ-ভালাই চান তিনি তাঁকে দ্বীনের ছহীহ-ইলম দান করেন |”
(বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
تعلموا العلم فان تعلمه قر بة الى الله عز وجل
অর্থ: “তোমরা ইলম শিক্ষা কর | নিশ্চয়ই ইলম শিক্ষা দ্বারা আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্য হাছিল হয় |”
(রবী)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
لكل شىء طريق وطر يق الجنة العلم
অর্থ: “প্রতিটা জিনিস অর্জনের জন্য একটা রাস্তা রয়েছে | আর জান্নাত লাভের রাস্তা হচ্ছে ইলম |”
(দায়লামী শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
اذا مررتم برياض الجنة فارتعوا قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم وما رياض الجنة قال مجالس العلم.
অর্থ: “যখন তোমরা (যমীনের বুকে কোথাও) বেহেশতের বাগান দেখতে পাবে তখন তোমরা সেখানে প্রবেশ করে সেখান থেকে ফল খেয়ে নিবে | ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বেহেশতের বাগান কোনটি? তিনি বললেন, ইলমের মজলিস বা মাহফিল |”
(তবারানী)
ইলমী বা দ্বীনি মাহফিল বা মজলিসের ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
مااجتمع قوم فى بيت من بيوت الله يتلون كتب الله ويتدار سونه بينهم الا نزلت عليهم السكينة وغشيتهم الرحمة وحفتهم الملئكة وذكرهم الله فى من عنده.
অর্থ: “যখন কোন এলাকার লোক আল্লাহ্ পাক-এর ঘরে অথবা কোন স্থানে একত্রিত হয়ে আল্লাহ্ পাক-এর কিতাব তিলাওয়াত করে অথবা পরস্পর দ্বীনী আলোচনা বা দরস্-তাদরীস করে তখন আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে তাদের উপর সাকিনা বা শান্তি বর্ষিত হয় | আল্লাহ্ পাক-এর রহমত তাদের উপর ছেয়ে যায় বা তাদেরকে আবৃত করে নেয় | আল্লাহ্ পাক-এর রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ তাদেরকে বেষ্টন করে নেন এবং স্বয়ং আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন উনার নিকটবর্তী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণের সাথে সেই মাহফিলের লোকদের ছানা-ছিফত ও তাদের সম্পর্কে আলোচনা করেন |”
(মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “মাহফিল যখন শেষ হয়ে যায়, তখন সকল মানুষ চলে যায়, ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও চলে যান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে | আল্লাহ্ পাক-এর জানা থাকা সত্ত্বেও ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, “হে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! আপনারা কোথা থেকে আসলেন? ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম বলেন, “আল্লাহ্ পাক! অমুক মাহফিল হতে |” তখন আল্লাহ্ পাক জিজ্ঞাসা করেন, “তারা কি চেয়েছে এবং কি থেকে পানাহ চেয়েছে?” ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন, “আল্লাহ্ পাক! তারা আপনার সন্তুষ্টি চেয়েছে | জান্নাত চেয়েছে এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চেয়েছে |” আল্লাহ্ পাক পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, “হে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! তারা কি আমাকে দেখেছে?” ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন, “না, তারা আপনাকে দেখেনি |” আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন, “তারা কি জান্নাত-জাহান্নাম দেখেছে?” ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন, “না তারা জান্নাত জাহান্নামও দেখেনি | যদি আপনাকে দেখতো তাহলে আপনার রেযামন্দি বা সন্তুষ্টির জন্য আরো বেশি বেশি কোশেশ করতো | আর জান্নাত ও জাহান্নাম দেখলে, জান্নাত বেশি বেশি তলব করতো এবং জাহান্নাম থেকে বেশি বেশি পানাহ তলব করতো |” ইত্যাদি অনেক কথোপকথনের পর আল্লাহ্ পাক বলেন-
فاشهد كم انى قد غفرت لهم
“(হে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম) আপনারা সাক্ষী থাকুন, এই মাহফিলে যারা এসেছে, আমি তাদের প্রত্যেককে ক্ষমা করে দিলাম |” সুবহানাল্লাহ্!
قال ملك من الملائكة فلان ليس منهم اغا جاء لحاجة
“তখন একজন ফেরেশতা বলেন, “আল্লাহ্ পাক! এ মাহফিলে এমন একজন লোক ছিল, যে মূলতঃ ওয়াজ-নছিহত শুনার উদ্দেশ্যে আসেনি | সে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তার কাজে | তখন দেখলো যে, এখনে মাহফিল হচ্ছে, সে দেখার জন্য এখানে বসেছিল প্রকৃতপক্ষে লোকটা খুব বদকার, গুনাহগার | আপনি কি তাকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন?”
قال هم الجلساء لا يشقى جليسهم
“তখন আল্লাহ্ পাক বলেন, এই মাহফিলে যে সমস্ত নেককার লোক এসেছিল, আমি সেই নেককারদের উছীলায় ঐ বদকারের গুনাহ্-খতাও ক্ষমা করে দিয়েছি |” (সুবহানাল্লাহ্)
প্রকৃতপক্ষে দ্বীনি মাহফিল হচ্ছে সাকীনা হাছিলের মাহফিল | রহমত, বরকত হাছিলের মাহফিল | সর্বোপরি ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে নিজের গুনাহ-খতা মাফ করার মাহফিল |
আমলের ব্যাপারে কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ হয়েছে- “আপনার রবের ইবাদত করুন ইন্তিকাল পর্যন্ত |” (সূরা হিজর্: আয়াত শরীফ/৯৯)
আরো ইরশাদ হয়েছে- “নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাঁদের জন্য জান্নাতুল ফিরদাউসে মেহমানদারীর ব্যবস্থা রয়েছে |” (সূরা কাহফ: আয়াত শরীফ/১০৭)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
ان الله تعالى اذا اراد بعبد خيرا استعمله فقيل وكيف يستعمله قال يوفقه لعمل صالح قبل الموت.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা যখন কোন বান্দার কল্যাণ-ভালাই কামনা করেন তখন তাকে আমল করার ব্যাপারে সাহায্য করেন | বলা হলো, কিভাবে আমলে সাহায্য করা হয়? আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাকে ইন্তিকালের পূর্বেই নেক আমল করার তাওফীক দান করা হয় |”
(মাছাবীহুস সুন্নাহ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
طوبى لمن عمل بعلم
অর্থ: “সুসংবাদ ওই ব্যক্তির জন্য যে ইলম অনুযায়ী আমল করে থাকে |”
(শিহাব ফী মুসনাদিহী)
قال رجل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اى الناس خير قال من طال عمره وحسن عمله
অর্থ: “এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, কোন ব্যক্তি উত্তম? তিনি বললেন, যিনি দীর্ঘ হায়াত পেয়েছেন এবং নেক আমল করেছেন |”
(তবারানী, আবূ নঈম)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
اكلفوا من الاعمال ما تطيقون فان الله لا يمل حتى تملوا.
অর্থ: “তোমরা যথাসাধ্য আমলের মধ্যে নিয়োজিত থাক বা লেগে থাক | কেননা তোমরা ক্লান্ত বা বিরাগ হলেও আল্লাহ্ পাক হন না |”
(বুখারী শরীফ)
আল্লাহ্ পাক ও উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি-রিযামন্দি অর্জনই হচ্ছে বান্দা ও উম্মতের মূল মাকছুদ |
আল্লাহ্ পাক কালাম পাকে ইরশাদ করেন- “তারা যদি মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হলো তারা যেন আল্লাহ্ পাক ও উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সন্তুষ্ট করে | কারণ আল্লাহ্ পাক ও উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই সন্তুষ্টি পাওয়ার সমধিক হক্বদার |”
(সূরা তওবা: আয়াত শরীফ/৬২)
স্মরণীয় যে, ইলম অর্জন করতে হয় আমল করার জন্য | আর আমল করতে হয় ইখলাছ তথা আল্লাহ্ পাক ও উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি-রিযামন্দি হাছিলের জন্য | এক কথায় ইলম আমল ও ইখলাছ এ সবের সমষ্টিই হচ্ছে দ্বীন বা শরীয়ত | যা জানার বা বুঝার মাধ্যম হচ্ছে দ্বীনি মাহফিল বা মজলিস | সতরাং এ মাহফিল বা মজলিসকে বিদয়াত বলে অভিহিত করা সম্পূর্ণ কুফরী | আর এটি মূলতঃ ইবলিস শয়তানের কাজ যে, মানুষকে কিভাবে ইলম থেকে, আমল থেকে দূরে সরানো যায় |
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখেনা, যারা অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাত উপলক্ষে মানুষকে ইবাদত-বন্দিগী থেকে সরানোর কূটকৌশলে নিয়োজিত, তারা নিঃসন্দেহে কুরআন শরীফে বর্ণিত-
شيا طين الانس والجن
অর্থাৎ “মানুষ শয়তান ও জিন শয়তানের অন্তর্ভূক্ত |” (সূরা আনয়াম: আয়াত শরীফ/১১২)
এরাই হচ্ছে প্রকৃত ইবলিসের চেলা | এদের কার্যক্রম সম্পর্কে হাদীছ শরীফে একটা ওয়াক্বিয়া বর্ণিত হয়েছে যে, ইবলিসের আসর বসে পানির উপর | সে আসরে ইবলিস তার চেলাদের নিকট থেকে দৈনন্দিন কাজের হিসাব-নিকাশ গ্রহণ করে | একবার সে হিসাব নিচ্ছিল চেলাদের মধ্য থেকে কে কি কাজ করেছে? জবাবে এক চেলা বলে, আমি ওমুক স্থানে খুন খারাবি করিয়েছি | অরেক চেলা বলে, আমি ওমুক খানে মারা-মারি করিয়েছি | আরেক চেলা বলে, আমি ওমুক স্থানে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়ে তালাকের ব্যবস্থা করিয়েছি | এমনিভাবে একেক চেলা একেক অপকর্ম বা নাফরমানীর বিবরণ দিতে থাকে | ইবলিসের অপর এক চেলা সে নিশ্চুপ অবস্থায় পিছনে বসে থাকে | তা দেখে ইবলিস তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, ওহে, তুমি কি কিছুই করনি? সে উত্তর করে, আমি সামান্য একটু করেছি | তা আপনার মনঃপুত হয় কি-না, জানিনা | ইবলিস বলে, কি করেছিস? চেলা বলে, আমি মাদরাসার এক ছাত্রকে এমনভাবে ওয়াসওয়াসা দিয়েছি, সে আর কোনদিন মাদরাসায় যাবে না | এটা শোনার সাথে সাথে ইবলিস খুশিতে নাচতে থাকে এবং বলে, তুই সবচেয়ে বড় কাজ করেছিস | কারণ সেই মাদরাসার ছাত্র যদি মাদরাসায় গিয়ে ইলম অর্জন করতো তাহলে সে আলেম হয়ে আমার কাজের বিরুদ্ধে মানুষকে বুঝাতো, আমার শক্র করে তুলতো | কাজেই ইলমের মসলিস, মাহফিল থেকে ফেরানোই হচ্ছে ইবলিসের সবচেয়ে বড় কাজ |
বুঝা গেল, শবে বরাত উপলক্ষে আয়োজিত ইলমী মাহফিলকে বিদয়াত সাব্যস্ত করা ইবলিস ও তার চেলাদের কাজ | ইবলিস ও তার চেলাদের অনুসরণ থেকে আল্লাহ্ পাক সকলকে হিফাযত করুন | (আমিন)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا من مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر. رواه ابن ماجه.
অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাতের আগমন ঘটে তখন ওই রাতে তোমরা ইবাদত-বন্দেগী করে জাগ্রত থাকবে এবং দিবাভাগে রোযা রাখবে | কেননা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক ওই শবে বরাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই নিকটবর্তী আকাশে নাযিল হন এবং বলতে থাকেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি ক্ষমা করে দিব | কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? যাকে আমি অপরিমিত রিযিক দিয়ে দিব এবং কোন বিপদে বিপন্ন ব্যক্তি আছ কি? যাকে আমি বিপদ থেকে মুক্ত করে দিব | সাবধান! সাবধান! এভাবেই মহান আল্লাহ্ পাক ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন |”
(ইবনে মাজাহ শরীফ, মিরকাত ৩য় খণ্ড ১৯৫-১৯৬, মিরয়াতুল মানাজিহ ৩য় খণ্ড ২৯৩-২৯৫, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত)
অর্ধ শা’বান বা শবে বরাতের রাতটির কি মাহাত্ম্, কি হক্ব তা বান্দা ও উম্মত জানবে কিভাবে? তা জানার জন্য আয়োজিত মাহফিল বা মজলিসই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ মাধ্যম |
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
العلم امام العمل
অর্থ: “ইলম হচ্ছে আমলের ইমাম |” অর্থাৎ কোন আমল করতে হলে ইলমের প্রয়োজন | ইলম না থাকলে আমল বা ইবাদত সঠিকভাবে করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয় |
বান্দা যখন কোন ইবাদত বা আমল করতে যাবে, তখন প্রথম তাকে সে ইবাদত বা আমলের ইলম অর্জন করে নিতে হবে | অন্যথায় তার পক্ষে সে ইবাদত বা আমল করা সম্ভব হবে না |
সে উপলক্ষে মাহফিল বা মজলিসের আয়োজন করা হয় | সুতরাং তা বিদয়াত হবে কেন? মূলতঃ এটা বিদয়াত বলার অর্থই হচ্ছে মুসলমানদেরকে ইলম ও আমল থেকে সরিয়ে দেয়া, আল্লাহ্ পাক জাল্লা শানুহু ও উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি-রিযামন্দি থেকে মাহরূম করা | যা সুস্পষ্ট কুফরী |
কারণ ইলম অর্জন করার জন্য, আমল করার জন্য এবং আল্লাহ্ পাক ও উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি-রেজামন্দি হাছিল করার জন্য আল্লাহ্ পাক-এর কালামে পাকে এবং আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে আদেশ নির্দেশ করেছেন |
যেমন ইলমের ব্যাপারে কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
قل رب زدنى علما
অর্থ: “বলুন, হে আমার রব পরওয়ারদিগার আল্লাহ্ পাক, আমার ইলম বৃদ্ধি করে দিন |”
(সূরা ত্বা-হা: আয়াত শরীফ/১১৪)
এখানে ইলম বৃদ্ধির জন্য আল্লাহ্ পাক-এর নিকট বান্দাকে দোয়া করতে বলা হয়েছে |
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
طلب العلم فريضة على كل مسلم
অর্থ: “ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয |”
(ইবনে মাজাহ শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
من يريد الله به خيرا يفقهه فى الدين
অর্থ: “আল্লাহ্ পাক যার কল্যাণ-ভালাই চান তিনি তাঁকে দ্বীনের ছহীহ-ইলম দান করেন |”
(বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
تعلموا العلم فان تعلمه قر بة الى الله عز وجل
অর্থ: “তোমরা ইলম শিক্ষা কর | নিশ্চয়ই ইলম শিক্ষা দ্বারা আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্য হাছিল হয় |”
(রবী)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
لكل شىء طريق وطر يق الجنة العلم
অর্থ: “প্রতিটা জিনিস অর্জনের জন্য একটা রাস্তা রয়েছে | আর জান্নাত লাভের রাস্তা হচ্ছে ইলম |”
(দায়লামী শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
اذا مررتم برياض الجنة فارتعوا قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم وما رياض الجنة قال مجالس العلم.
অর্থ: “যখন তোমরা (যমীনের বুকে কোথাও) বেহেশতের বাগান দেখতে পাবে তখন তোমরা সেখানে প্রবেশ করে সেখান থেকে ফল খেয়ে নিবে | ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বেহেশতের বাগান কোনটি? তিনি বললেন, ইলমের মজলিস বা মাহফিল |”
(তবারানী)
ইলমী বা দ্বীনি মাহফিল বা মজলিসের ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
مااجتمع قوم فى بيت من بيوت الله يتلون كتب الله ويتدار سونه بينهم الا نزلت عليهم السكينة وغشيتهم الرحمة وحفتهم الملئكة وذكرهم الله فى من عنده.
অর্থ: “যখন কোন এলাকার লোক আল্লাহ্ পাক-এর ঘরে অথবা কোন স্থানে একত্রিত হয়ে আল্লাহ্ পাক-এর কিতাব তিলাওয়াত করে অথবা পরস্পর দ্বীনী আলোচনা বা দরস্-তাদরীস করে তখন আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে তাদের উপর সাকিনা বা শান্তি বর্ষিত হয় | আল্লাহ্ পাক-এর রহমত তাদের উপর ছেয়ে যায় বা তাদেরকে আবৃত করে নেয় | আল্লাহ্ পাক-এর রহমতের ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ তাদেরকে বেষ্টন করে নেন এবং স্বয়ং আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন উনার নিকটবর্তী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণের সাথে সেই মাহফিলের লোকদের ছানা-ছিফত ও তাদের সম্পর্কে আলোচনা করেন |”
(মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “মাহফিল যখন শেষ হয়ে যায়, তখন সকল মানুষ চলে যায়, ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও চলে যান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে | আল্লাহ্ পাক-এর জানা থাকা সত্ত্বেও ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, “হে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! আপনারা কোথা থেকে আসলেন? ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম বলেন, “আল্লাহ্ পাক! অমুক মাহফিল হতে |” তখন আল্লাহ্ পাক জিজ্ঞাসা করেন, “তারা কি চেয়েছে এবং কি থেকে পানাহ চেয়েছে?” ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন, “আল্লাহ্ পাক! তারা আপনার সন্তুষ্টি চেয়েছে | জান্নাত চেয়েছে এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চেয়েছে |” আল্লাহ্ পাক পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, “হে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! তারা কি আমাকে দেখেছে?” ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন, “না, তারা আপনাকে দেখেনি |” আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন, “তারা কি জান্নাত-জাহান্নাম দেখেছে?” ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন, “না তারা জান্নাত জাহান্নামও দেখেনি | যদি আপনাকে দেখতো তাহলে আপনার রেযামন্দি বা সন্তুষ্টির জন্য আরো বেশি বেশি কোশেশ করতো | আর জান্নাত ও জাহান্নাম দেখলে, জান্নাত বেশি বেশি তলব করতো এবং জাহান্নাম থেকে বেশি বেশি পানাহ তলব করতো |” ইত্যাদি অনেক কথোপকথনের পর আল্লাহ্ পাক বলেন-
فاشهد كم انى قد غفرت لهم
“(হে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম) আপনারা সাক্ষী থাকুন, এই মাহফিলে যারা এসেছে, আমি তাদের প্রত্যেককে ক্ষমা করে দিলাম |” সুবহানাল্লাহ্!
قال ملك من الملائكة فلان ليس منهم اغا جاء لحاجة
“তখন একজন ফেরেশতা বলেন, “আল্লাহ্ পাক! এ মাহফিলে এমন একজন লোক ছিল, যে মূলতঃ ওয়াজ-নছিহত শুনার উদ্দেশ্যে আসেনি | সে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তার কাজে | তখন দেখলো যে, এখনে মাহফিল হচ্ছে, সে দেখার জন্য এখানে বসেছিল প্রকৃতপক্ষে লোকটা খুব বদকার, গুনাহগার | আপনি কি তাকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন?”
قال هم الجلساء لا يشقى جليسهم
“তখন আল্লাহ্ পাক বলেন, এই মাহফিলে যে সমস্ত নেককার লোক এসেছিল, আমি সেই নেককারদের উছীলায় ঐ বদকারের গুনাহ্-খতাও ক্ষমা করে দিয়েছি |” (সুবহানাল্লাহ্)
প্রকৃতপক্ষে দ্বীনি মাহফিল হচ্ছে সাকীনা হাছিলের মাহফিল | রহমত, বরকত হাছিলের মাহফিল | সর্বোপরি ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে নিজের গুনাহ-খতা মাফ করার মাহফিল |
আমলের ব্যাপারে কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ হয়েছে- “আপনার রবের ইবাদত করুন ইন্তিকাল পর্যন্ত |” (সূরা হিজর্: আয়াত শরীফ/৯৯)
আরো ইরশাদ হয়েছে- “নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাঁদের জন্য জান্নাতুল ফিরদাউসে মেহমানদারীর ব্যবস্থা রয়েছে |” (সূরা কাহফ: আয়াত শরীফ/১০৭)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
ان الله تعالى اذا اراد بعبد خيرا استعمله فقيل وكيف يستعمله قال يوفقه لعمل صالح قبل الموت.
অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা যখন কোন বান্দার কল্যাণ-ভালাই কামনা করেন তখন তাকে আমল করার ব্যাপারে সাহায্য করেন | বলা হলো, কিভাবে আমলে সাহায্য করা হয়? আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাকে ইন্তিকালের পূর্বেই নেক আমল করার তাওফীক দান করা হয় |”
(মাছাবীহুস সুন্নাহ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
طوبى لمن عمل بعلم
অর্থ: “সুসংবাদ ওই ব্যক্তির জন্য যে ইলম অনুযায়ী আমল করে থাকে |”
(শিহাব ফী মুসনাদিহী)
قال رجل يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اى الناس خير قال من طال عمره وحسن عمله
অর্থ: “এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, কোন ব্যক্তি উত্তম? তিনি বললেন, যিনি দীর্ঘ হায়াত পেয়েছেন এবং নেক আমল করেছেন |”
(তবারানী, আবূ নঈম)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
اكلفوا من الاعمال ما تطيقون فان الله لا يمل حتى تملوا.
অর্থ: “তোমরা যথাসাধ্য আমলের মধ্যে নিয়োজিত থাক বা লেগে থাক | কেননা তোমরা ক্লান্ত বা বিরাগ হলেও আল্লাহ্ পাক হন না |”
(বুখারী শরীফ)
আল্লাহ্ পাক ও উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি-রিযামন্দি অর্জনই হচ্ছে বান্দা ও উম্মতের মূল মাকছুদ |
আল্লাহ্ পাক কালাম পাকে ইরশাদ করেন- “তারা যদি মু’মিন হয়ে থাকে তাহলে তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হলো তারা যেন আল্লাহ্ পাক ও উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সন্তুষ্ট করে | কারণ আল্লাহ্ পাক ও উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই সন্তুষ্টি পাওয়ার সমধিক হক্বদার |”
(সূরা তওবা: আয়াত শরীফ/৬২)
স্মরণীয় যে, ইলম অর্জন করতে হয় আমল করার জন্য | আর আমল করতে হয় ইখলাছ তথা আল্লাহ্ পাক ও উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি-রিযামন্দি হাছিলের জন্য | এক কথায় ইলম আমল ও ইখলাছ এ সবের সমষ্টিই হচ্ছে দ্বীন বা শরীয়ত | যা জানার বা বুঝার মাধ্যম হচ্ছে দ্বীনি মাহফিল বা মজলিস | সতরাং এ মাহফিল বা মজলিসকে বিদয়াত বলে অভিহিত করা সম্পূর্ণ কুফরী | আর এটি মূলতঃ ইবলিস শয়তানের কাজ যে, মানুষকে কিভাবে ইলম থেকে, আমল থেকে দূরে সরানো যায় |
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখেনা, যারা অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাত উপলক্ষে মানুষকে ইবাদত-বন্দিগী থেকে সরানোর কূটকৌশলে নিয়োজিত, তারা নিঃসন্দেহে কুরআন শরীফে বর্ণিত-
شيا طين الانس والجن
অর্থাৎ “মানুষ শয়তান ও জিন শয়তানের অন্তর্ভূক্ত |” (সূরা আনয়াম: আয়াত শরীফ/১১২)
এরাই হচ্ছে প্রকৃত ইবলিসের চেলা | এদের কার্যক্রম সম্পর্কে হাদীছ শরীফে একটা ওয়াক্বিয়া বর্ণিত হয়েছে যে, ইবলিসের আসর বসে পানির উপর | সে আসরে ইবলিস তার চেলাদের নিকট থেকে দৈনন্দিন কাজের হিসাব-নিকাশ গ্রহণ করে | একবার সে হিসাব নিচ্ছিল চেলাদের মধ্য থেকে কে কি কাজ করেছে? জবাবে এক চেলা বলে, আমি ওমুক স্থানে খুন খারাবি করিয়েছি | অরেক চেলা বলে, আমি ওমুক খানে মারা-মারি করিয়েছি | আরেক চেলা বলে, আমি ওমুক স্থানে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়ে তালাকের ব্যবস্থা করিয়েছি | এমনিভাবে একেক চেলা একেক অপকর্ম বা নাফরমানীর বিবরণ দিতে থাকে | ইবলিসের অপর এক চেলা সে নিশ্চুপ অবস্থায় পিছনে বসে থাকে | তা দেখে ইবলিস তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, ওহে, তুমি কি কিছুই করনি? সে উত্তর করে, আমি সামান্য একটু করেছি | তা আপনার মনঃপুত হয় কি-না, জানিনা | ইবলিস বলে, কি করেছিস? চেলা বলে, আমি মাদরাসার এক ছাত্রকে এমনভাবে ওয়াসওয়াসা দিয়েছি, সে আর কোনদিন মাদরাসায় যাবে না | এটা শোনার সাথে সাথে ইবলিস খুশিতে নাচতে থাকে এবং বলে, তুই সবচেয়ে বড় কাজ করেছিস | কারণ সেই মাদরাসার ছাত্র যদি মাদরাসায় গিয়ে ইলম অর্জন করতো তাহলে সে আলেম হয়ে আমার কাজের বিরুদ্ধে মানুষকে বুঝাতো, আমার শক্র করে তুলতো | কাজেই ইলমের মসলিস, মাহফিল থেকে ফেরানোই হচ্ছে ইবলিসের সবচেয়ে বড় কাজ |
বুঝা গেল, শবে বরাত উপলক্ষে আয়োজিত ইলমী মাহফিলকে বিদয়াত সাব্যস্ত করা ইবলিস ও তার চেলাদের কাজ | ইবলিস ও তার চেলাদের অনুসরণ থেকে আল্লাহ্ পাক সকলকে হিফাযত করুন | (আমিন)
No comments