Header Ads

Islamic Quotes Urdu Facebook Cover. QuotesGram

প্রাণীর ছবির ক্ষেত্রে শরয়ী ফায়সালা -- পর্ব-৪ (‘ছবি’ কাকে বলে? ‘ছবির’ শরয়ী ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা! টি.ভি, ভি.সি.আর, সি.সি.টি.ভি ইত্যাদি অবশ্যই ‘ছবির’ অন্তর্ভূক্ত)


পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা, কারানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরয়ী ফায়সালা:

ছবি’ কে আরবীতে تصوىر –তাছবীর, صورة -ছূরত, تصالىب - তাছালীব, تمء شىل -তামাছীল বলা হয়| আর যে ‘ছবি’ আঁকে বা তোলে তাকে مصور -মুছাব্বির বলা হয়| পবিত্র হাদীছ শরীফ, তার ব্যাখ্যা গ্রন্থ ও ফিক্বাহের কিতাব সমূহেও ছবি-এর ক্ষেত্রে উল্লিখিত শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে| যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,

عن عيسى بن حميد قال سال عقبة الحسن قال ان فى مسجدنا ساحة فيها تصاوير قال انحروها.
অর্থঃ- হযরত ঈসা বিন হুমাইদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, হযরত ওকবাতুল হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমাদের মসজিদে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা কাপড় রয়েছে| তখন হযরত ঈসা বিন হুমাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তুমি (মসজিদ থেকে) ওটা সরিয়ে ফেল|

দলীল- মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ৪৬|

عن جابر رضى الله تعالى عنه قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الصورة فى البيت ونهى ان يصنع ذلك.
অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি রাখতে নিষেধ করেছেন এবং ওটা তৈরী করতেও নিষেধ করেছেন|

দলীল- তিরমিযি ১ম জিঃ পৃঃ ২০৭|

عن جابر رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم امر عمر بن الخطاب زمن الفتح وهو بالبطحاء ان ياتى الكعبة فيمحو كل صورة فيها فلم يدخلها النبى صلى الله عليه وسلم حتى محيت كل صورة فيها.
অর্থঃ- হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মক্কা বিজয়ের সময় হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হুকুম করলেন- তিনি যেন পাথর দিয়ে ক্বাবা ঘরের সমস্ত মূর্তি বা চিত্রগুলি ধ্বংস করে দেন|
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্বাবা ঘরের মুর্তি বা চিত্রগুলো ধ্বংস না করা পর্যন্ত ক্বাবা ঘরে প্রবেশ করলেন না|

দলীল- আবু দাউদ শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২১৯|

عن ابى عثمان قال حدثنى لبابة عن امها وكانت تخدم عثمان بن عفان ان عثمان ابن عفان كان يصلى الى تابوت فيه تماثيل فامر به فحك.
অর্থঃ- হযরত আবু উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, লোবাবাহ উনার মাতা হতে আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, উনার মাতা হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খেদমতে ছিলেন, আর হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি সিন্দুকের দিকে নামায পড়ছিলেন| অতঃপর হযরত উসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আদেশে ওটা নিঃচিহ্ন করে ফেলা হলো|

দলীল- মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃঃ৪৬|

عن عائشة عليها السلام حدثته ان النبى صلى الله عليه وسلم لم يكن يترك فى بيته شيئا فيه تصاليب الا نقضه.
অর্থঃ- উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রাণীর ছবি বা ছবিযুক্ত সকল জিনিস (থাকলে) ধ্বংস করে ফেলতেন|

দলীল-বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ৮৮০,
মিশকাত পৃঃ ৩৮৫|

عن ابى حجيفة رضى الله تعالى عنه عن ابيه ان النبى صلى الله عليه وسلم نهى عن ثمن الدم وثمن الكلب وكسب البغى ولعن اكل الربى وموكله والواشمة والمستوشمة والمصور.
অর্থঃ- হযরত আবু হুজায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন, “খতামুন্নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রক্তের দাম, ও কুকুরের দাম নিতে এবং যেনাকারীনীর উপার্জন নিষেধ করেছেন, এবং যে ঘুষ খায়, যে ঘুষ দেয়, যে অঙ্গে উলকি আঁকে এবং যে আঁকায়, আর যে ছবি অংকন করে, এদের সবার ওপর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি লা’নত দিয়েছেন|”

দলীল- বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৮৮১|

অনুরূপভাবে পবিত্র হাদীছ শরীফের শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও ফিক্বাহ-ফতওয়ার কিতাবসমূহেও ‘ছবি’র ক্ষেত্রে تصوىر - صورة ইত্যাদি শব্দাবলী ব্যবহৃত হয়েছে| নিম্নে তার কিছু প্রমাণ তুলে ধরা হলো-

তাওজীহ্’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, জীব জন্তুর ছবি বা প্রতিমূর্তি নির্মাণ করা নিষেধ, বরং কঠোর নিষিদ্ধ কাজ (অর্থাৎ) এটা কবীরাহ্ গুনাহ্| চাই ওটাকে যত্ন বা সম্মান প্রদর্শন করুক কিংবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্যেই বানায়ে থাকুক| এরূপ কাজে আল্লাহর সৃষ্টির অনুকরণ করা হয়| ওটা বস্ত্রে, বিছানায়, মোহরে, মুদ্রায়, পয়সায়, পাত্রে কিংবা প্রাচীন গাত্রে যে কোন স্থানে আঁকা বা নির্মাণ করা হারাম|”

দলীল- উমদাতুল ক্বারী, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া, পৃঃ৩৭৮,
আয্ জাওয়াজির ২য় জিঃ, পৃঃ৩৩|

উক্ত হাদীছসমূহে প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা মূর্তি নির্মাণ করা হারাম হওয়া সম্বন্ধে প্রকাশ্যেই বলা হয়েছে| এটা তৈরী বা নির্মাণ করা জঘন্যতম পাপের কাজ ও হারামও বটে| উক্ত কিতাবে আরও আছে, যদি কেউ মূর্তি বা প্রাণীর ছবি পূজা বা সৃষ্টির অনুকরণের জন্য নাও বানায়ে থাকে তবুও সে ফাসেক হবে এবং কবীরাহ্ গুনাহে গুনাহগার হবে|”

দলীল- শরহে মুসলিম,
নববী,
ফতওয়ায়ে ছিদ্দিকিয়াহ্, পৃঃ৩৭৮|

আমাদের মাশায়েখগণ ও উলামাগণ বলেছেন যে, প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম, এমনকি গুরুতর হারাম| এটা কবীরাহ্ গুনাহ্| কেননা এরূপ কাজের জন্য বিশেষ ভীতিপ্রদ অবস্থা হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে| ওটা কাপড়ে, বিছানায়, মোহরে, কি টাকা-পয়সায় কিংবা যে কোনও স্থানে আঁকা থাকনা কেন তা সমান কথা|”

দলীল- মিরকাত শরহে মিশকাত,
ফতওয়ায়ে ছিদ্দিকিয়াহ্ পৃঃ৩৭৯,
নাইলুল আওতার ২য় জিঃ, পৃঃ১০৫|

ছহীহ্ হাদীছ শরীফ সমূহে প্রাণীর ছবি বা মূর্তি তৈরী করা সম্বন্ধে প্রকাশ্যেই নিষেধ করা হয়েছে| ওটা মানুষের হোক বা জানোয়ারের কি পাখীর হোক সমান কথা অর্থাৎ হারাম|”

দলীল- ফিকহুস সুন্নাহ্ ৩য় জিঃ, পৃঃ৪৯৮|

প্রাণীর ছবি তৈরী করা হারাম, যদি তা পূর্ণ দেহ বিশিষ্ট হয়|”

দলীল- কিতাবুল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়াহ ২য় জিঃ, পৃঃ৪১|

পবিত্র হাদীছ শরীফ, হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও ফিক্বাহের কিতাবসমূহের উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ‘ছবি’কে আরবীতে
تصوىرতাছবীর, صورة -ছূরত, تصالىب - তাছালীব, تمء شىل -তামাছীল বলা হয়| যার অর্থ হচ্ছে- ছবি, প্রতিকৃতি, সদৃশ্য, মূর্তি, প্রতিমূর্তি ইত্যাদি|

প্রশ্ন হচ্ছে তবে কি শরীয়তে সব কিছুর ছবি, প্রতিকৃতি, সদৃশ্য, মূর্তি, প্রতিমূর্তি অঙ্কণ করা, তৈরী করা বা বানানো নিষেধ? না শরীয়তে সবকিছুর ছবি অঙ্কণ করা বা তৈরী করা হারাম বা নিষিদ্ধ নয়| শুধুমাত্র প্রাণীর (যেমন- মানুষ, গরু, ছাগল, পাখি, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদির) ছবি, প্রতিকৃতি, মূর্তি, প্রতিমূর্তি তৈরী করা, আঁকা তোলা হারাম ও নিষিদ্ধ| পক্ষান্তরে প্রাণহীন বস্তুর (যেমন- পাহাড়-পর্বত, গাছ-পালা, তরু-লতা ইত্যাদির) ছবি আঁকতে বা তুলতে শরীয়তে কোন বাধা বা নিষেধ নেই| এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن سعيد قال جاء رجل الى ابن عباس فقال انى رجل اصور هذه الصور فافتنى فيها فقال له ادن منى فدنا منه ثم قال ادن منى فدنا حتى وضع يده على راسه وقال انبئك بما سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم وسمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول كل مصور فى النار يجعل له بكل صورة صورها نفسا فيعذبه فى جهنم وقال ان كنت لا بد فا علا فاصنع الشجر وما لا نفس له.
অর্থঃ- হযরত সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট এসে বলল, আমি এমন এক ব্যক্তি যে প্রাণীর ছবি অংকন করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে ফতওয়া দিন| হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাকে বললেন, তুমি আমার নিকটবর্তী হও| সে ব্যক্তি উনার নিকটবর্তী হল| পুণরায় বললেন, তুমি আরো নিকটবর্তী হও| সে আরো নিকটবর্তী হলে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তোমাকে তা বলব| হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে| এবং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি প্রত্যেকটি ছবিকে প্রাণ দিবেন এবং সেই ছবি গুলো তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে|” এবং ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তোমার যদি ছবি আঁকতেই হয় তবে, গাছ-পালা বা প্রাণহীন বস্তুর ছবি আঁক|

দলীল- মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০২|

ছহীহ্ হাদীছ শরীফ সমূহে যে ছবি বা মূর্তি তৈরী করা নিষেধ করা হয়েছে তা মূলতঃ প্রাণীর ছবি বা মূর্তি| ওটা মানুষের হোক বা জানোয়ারের কি পাখীর হোক সমান কথা অর্থাৎ সবগুলোই স্পষ্ট হারাম|”

দলীল- ফিকহুস সুন্নাহ্ ৩য় জিঃ, পৃঃ৪৯৮|

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হাদীছ শরীফে যে تصوىر বা صورة নিষিদ্ধ করা হয়েছে তা হচ্ছে- تصوىر الحىوان বা صورة الحىوان অর্থাৎ প্রাণীর ছবি বা প্রতিকৃতি|


এখন প্রশ্ন হলো- ‘তাছবীর, ছুরত বা ‘ছবি’ কাকে বলে? ছবির শরয়ী ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি? টি.ভি, ভি.সি.আর, সি.সি.টি.ভি, ইত্যাদিতে প্রদর্শিত দৃশ্যাবলী ‘ছবি’ কিনা?

No comments

ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য।

  ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য। ডাল খাওয়ার ফলে কলব প্রসারিত হয় এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়। পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উ...

Powered by Blogger.