পবিত্র দ্বীন ইসলামে ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস রাখা হারাম ও শিরকে অন্তর্ভূক্ত, সূতরাং যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ২)
জাহিলী যুগের ছোঁয়াচে রোগের বদ আক্বীদা রোধ করার জন্য ‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’
এই হাদীছ শরীফের অবতারনা:
হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, لاَ عَدْوى বা ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই। অর্থাৎ
কোন রোগের নিজস্ব এ ক্ষমতা নেই যে, কাউকে সংক্রমণ করবে। মহান
আল্লাহ পাকের তরফ থেকে রোগ আসে এর শিফাও মহান আল্লাহ পাক দিয়ে থাকেন। রোগের নিজস্ব
কোন ক্ষমতা নেই যে সে কোন প্রানীকে সংক্রমিত করবে।
‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’ এ পবিত্র
হাদীছ শরীফ দ্বারা জাহিলী যুগের সেই বিশ্বাসকে বন্ধ করা হয়েছে যে, জাহিলী যুগে লোকেরা বিশ্বাস করতো রোগীর সংস্পর্শে থাকলে রোগ
তার নিজস্ব ক্ষমতায় অন্যের দেহে চলে আসে। অথচ রোগের সংক্রমণ করার ক্ষমতাকে বিশ্বাস
করা শিরক ও কুফরী বিশ্বাস। সেই কুফরী বিশ্বাসকে এ পবিত্র হাদীছ শরীফের মাধ্যমে বাতিল
করা হয়েছে। বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুনানে কুবরা
বায়হাকীতে ছোঁয়াচে রোগের আলোচনা করতে গিয়ে একটা অধ্যায়ের শিরোনামে বিষয়টা স্পষ্ট করেছেন,
باب: لاَ عَدْوَى
عَلَى الْوَجْهِ الَّذِى كَانُوا فِى الْجَاهِلِيَّةِ يَعْتَقِدُونَهُ مِنْ إِضَافَةِ
الْفِعْلِ إِلَى غَيْرِ اللَّهِ تَعَالَى
“অধ্যায়: ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই
এই নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে জাহিলী যুগের মানুষের আক্বীদার কারনে। তারা এটা গাইরুল্লাহর দিকে
সম্বন্ধযুক্ত করতো। ” [অর্থাৎ তাদের ধারনা ছিলো রোগ ব্যাধির নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে যেকারনে
কোন সুস্থ মানুষ কোন রোগীর সংস্পর্শে গেলে সেও সংক্রমিত হবে। তাদের এ শিরকি আক্বীদা
রদ করতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিষয়টা স্পষ্ট করে দিয়েছেন
ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই] (সুনানে কুবরা বায়হাকী ৭ম খন্ড ৩৫১ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা দারু কুতুব আল ইলমিয়া, বৈরূত লেবানন)
যেকারনে আমরা দেখতে পাই, পরবর্তীতে এ প্রসঙ্গে
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা প্রশ্ন করেছেন যাতে আমরা এ বিষয়ে স্পষ্ট
ধারনা অর্জন করতে পারি ও বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষন করতে পারি। পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত
আছে,
أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ
قَالَ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ عَدْوى وَلاَ صَفَرَ وَلاَ
هَامَةَ فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَمَا بَالُ إِبِلِي تَكُونُ فِي
الرَّمْلِ كَأَنَّهَا الظِّبَاءُ فَيَأْتِي الْبَعِيرُ الأَجْرَبُ فَيَدْخُلُ بَيْنَهَا
فَيُجْرِبُهَا فَقَالَ فَمَنْ أَعْدَى الأَوَّلَ.
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
অলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,
ছোঁয়াচে
বলে কোন রোগ নেই, ছফর মাসের কোন অশুভ আলামত
নেই, পেঁচার মধ্যেও কোন আশুভ আলামত
নেই। তখন এক বেদুঈন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে আমার
এ উটের এ অবস্থা কেন হয়? সেগুলো যখন চারণ ভূমিতে
থাকে তখন সেগুলো যেন মুক্ত হরিণের পাল। এমন অবস্থায় চর্মরোগাগ্রস্থ উট এসে সেগুলোর
পালে ঢুকে পড়ে এবং এগুলোকেও চর্ম রোগে আক্রান্ত করে ফেলে। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
তাহলে প্রথমটিকে
চর্ম রোগাক্রান্ত কে করেছে? (বুখারী শরীফ ৫৭১৭, মুসলিম শরীফ ২২২০)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফের মাধ্যমে আক্বীদা স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। কেউ যাতে কোনভাবেই
ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস না করে সেটা পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। কারন পবিত্র হাদীছ শরীফে
প্রথমেই হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফয়সালা মুবারক করেছেন ‘ছোঁয়াচে
বলে কোন রোগ নেই’। এরপর যখন উনাকে চর্মরোগে আক্রান্ত উটের সাথে অন্য উট রাখার কারনে
তাদের মধ্যেও কিছু উটের চর্মরোগ হওয়ার বিষয়টা বলা হলো তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’ এটা আরো স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে গিয়ে বলেছেন, প্রথম উটটি যেভাবে আক্রান্ত হয়ে এগুলোও সেভাবে হয়েছে। অর্থাৎ
প্রথম উট কারো সংস্পর্শ ছাড়া যেভাবে আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত রোগে আক্রান্ত হয়েছে অন্য
উটও সেভাবে রোগাক্রান্ত হয়েছে, কোন ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত
হয়নি। কেননা ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিন্দুমাত্রও যদি কোন কারন থাকতো (নাউযুবিল্লাহ
মিন যালিক) তাহলে সেটা উল্লেখ করা হতো চর্মরোগে আক্রান্ত উট বিষয়ক প্রশ্নে উত্তর। কিন্তু
এ ধরনের জাহিলী আক্বীদার দরজা বন্ধ করার জন্য স্পষ্ট করে অন্য উটগুলো কিভাবে অক্রান্ত
হলো তার কারনও হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলে দিলেন। আর এটাই আক্বীদা
ও ঈমান। এর ব্যতিক্রম আক্বীদা রাখলে সে স্পষ্ট শিরক করবে। নাউযুবিল্লাহ। (চলবে.......)
No comments