Header Ads

Islamic Quotes Urdu Facebook Cover. QuotesGram

ঐতিহাসিক বদর জিহাদ উনার সংক্ষিপ্ত আলোচনা।



মহান আল্লাহ পাক বলেন,
يوم الفرقان يوم التقى الجمعان.
সে দিন ছিলো হক্ব না হক্ব পার্থক্য করার দিন, যেদিন দু’দল পরস্পরের মুখোমুখী হয়েছিলো।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪১)
মুসলমানদের বদর উদ্দেশ্যে রওনাঃ
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাসের কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সাথে নিয়ে অভিযানে বের হন।
হযরত মুসআব ইবন উমায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে জিহাদের পতাকা অর্পণ করেন (এ পতাকা ছিলো সাদা রঙের) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে ছিলো দুটি কালো পতাকা। এর একটি ছিলো হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে। এ পতাকার নাম ছিলো উকান (ঈগল) আর অন্য পতাকাটি ছিলো জনৈক আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাত মুবারক-এ।
মুসলিম বাহিনীতে দুটি মাত্র ঘোড়া ছিলো। তার একটির আরোহী ছিলেন হযরত মুসআব ইবনে উমায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অপরটিতে আরোহণ করেছিলেন যুবায়র ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
সেনাবাহিনী দক্ষিণ বাহুর (মায়মানা) নেতৃত্বে ছিলেন সাআদ ইবনে খায়ছাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং বাম বাহু (মায়সার) নেতৃত্বে ছিলেন মিকদাদ ইবন আসওয়াদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
মুসলিম বাহিনীতে ৭০টি উট ছিলো, যাতে মুজাহিদরা পালাক্রমে আরোহণ করতেন। রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওযা সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার পথে উঠে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বাইরের গিরিপথ দিয়ে অগ্রসর হতে লাগলেন। বিভিন্ন পথ অতিক্রম করে অবশেষে বদরের প্রান্তরে পৌঁছেন।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মত প্রকাশঃ
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বদর প্রান্তরে যাওয়া সম্পর্কে ছাহাবাগণ থেকে মতামত আহবান করেন। হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম এবং অন্যান্য ছাহাবীগণ উনাদের অভিমত ব্যক্ত করেন।
হযরত মিকদাদ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দণ্ডায়য়মান হন। তিনি বলেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে যা করতে নির্দেশ দেন আপনি তাই করুন, আমরা আপনার সঙ্গে আছি। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, আমরা আপনাকে সে কথা বলবো না, যে কথা বনী ইসরাইলরা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনাকে বলেছিলো। তারা বলেছিলো: ‘আপনি ও আপনার প্রতিপালক জিহাদ করুন, আমরা এখানে বসে থাকলাম।’ নাঊযুবিল্লাহ! কিন্তু আমরা বলছি: ‘আপনি ও আপনার প্রতিপালক’ জিহাদে যান, আমরাও আপনাদের সাথে থেকে জিহাদ করবো। সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, আপনি যদি আমাদেরকে নিয়ে সুদূর বারকূলগিমাদেও যেতে চান, তবে আমরা আপনার সঙ্গী হয়ে সেখান পর্যন্ত পৌঁছবো।’ সুবহানাল্লাহ!
একজন আনছারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ‘সে মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! যার হাতের মুঠোয় আমার জীবন। ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যদি আমাদেরকে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন, তবে আমরা অবশ্যই তাতে ঝাঁপিয়ে পড়বো।’
মতামত নেয়ার পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অভিযানে বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। মুসলিম সেনারা তখন রওনা করে বদর প্রান্তরে উপনীত হন।
মুসলিম বাহিনী যেখানে অবতরণ করেছিলেন সেখান থেকে কুরাঈশ বাহিনী সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়া হয়েছিলো। এরপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাটির উপর হাত রেখে চিহ্নিত করে দেখাচ্ছিলেন যে, কাফিরদের মধ্যে এখানে অমুক এখানে অমুক নিহত হবে। জিহাদ শেষে দেখা গেলো যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চিহ্নিত স্থানগুলো তাদের মধ্যে কেউই অতিক্রম করেনি। (যার জন্যে যেই স্থান চিহ্নিত করেছিলেন, সে সেই স্থানেই নিহত হয়েছে) সুবহানাল্লাহ!
জিহাদের স্থান নির্ধারণঃ
কুরাঈশ বাহিনী উপত্যকার দূরপ্রান্তে আজানকাল টিলার অপর পাশে গিয়ে শিবির স্থাপন করে। বদর ও আজানকালের মধ্যবর্তী মরুময় উপত্যকাটি ছিলো অসমতল- যার পশ্চাতে ছিলো কুরাঈশরা। উপত্যকার নাম ‘বাতনে ইয়ালীল’ বদরের কূপের অবস্থান ছিলো নিকট প্রান্তে। অর্থাৎ ‘বাতনে ইয়ালীল থেকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দিকে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়ে দিলেন:
اذ انتم بالعدوة الدنيا وهم بالعدوة القضوى والركب اسفل منكم.
অর্থ: “স্মরণ করুন, আপনারা ছিলেন উপত্যকার নিকট প্রান্তে এবং তারা ছিলো দূর প্রান্তে আর উষ্ট্রারোহী দল ছিলো আপনাদের অপেক্ষা নি¤œভূমিতে।” (অর্থাৎ লোহিত সাগরের উপকূলে) (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪২)
এ সময় মহান আল্লাহ পাক তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করলেন। উপত্যকার মাটি ছিলো নরম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উনার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অবস্থান স্থলের বালু বৃষ্টির পানিতে জমাট হয়ে যায়। ফলে উনাদের চলাফেরায় কোনো অসুবিধা হয়নি। পক্ষান্তরে কুরাঈশদের এখানে বৃষ্টির পানিতে মাটি কর্দমাক্ত হয়ে যায়। ফলে কাফিরদের চলাফেরায় বিঘ্ন হয়।

হযরত ইমাম কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, “যে দিন সকাল বেলা বদরের জিহাদ সংঘটিত হয়, সে রাতে স্বল্প পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছলাত আদায় করছিলেন এবং জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করছিলেন।”
আরেকজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি বর্ষণের ফলে মুসলিম শিবির এলাকায় ধুলা-বালি উড়া বন্ধ হয়, বালুমাটি জমে যায়, মুসলমানদের মনে শান্তি নেমে আসে এবং উনাদের পা সুদৃঢ় হয়।’
বদরের পূর্ব রাত ছিলো হিজরী ২য় বর্ষের রমাদ্বান শরীফ মাসের ১৭ তারিখ জুমুয়াবার রাত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বদরে একটি বৃক্ষের কাছে ওই রাতটি ছলাত রত অবস্থায় কাটান।
সিজদারত হয়ে তিনি বারবার এই দোয়াটি পড়তে থাকেন:
ياحى ياقيوم
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের বাহিনীকে অগ্রসর করে বদরের কূপের কাছে নিয়ে যান। ওই সময় একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত লুবাব ইবনে মুনযির ইবন জামূহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ স্থানটা জিহাদের জন্যে খুব সুবিধাজনক নয়। আপনি লোকজন নিয়ে শত্রুদের কাছাকাছি পানির কুয়ার নিকট চলুন, সেখানে আমরা অবস্থান করি। এরপর আশেপাশের সব কূপ আমরা নষ্ট করে দিবো আমাদের অবস্থানের জায়গায় একটা পানির আধার তৈরি করে তাতে পানি ভর্তি করে রাখবো। জিহাদের সময় আমরা পানি পান করবো কিন্তু ওরা পানি পান করতে পারবে না।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘আপনি ভালো পরামর্শ দিয়েছেন।’
এমন সময় একজন ফেরেশতা এসে বললেন, ‘ইয়া রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে জানাচ্ছেন যে, হযরত লুবাব ইবনে মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যে পরামর্শ দিয়েছেন তা সঠিক, আপনি সেই মত গ্রহণ করুন।’
এরপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন এবং শত্রুদের নিকটবর্তী কূপের নিকট অবস্থান গ্রহণ করেন। উনার নির্দেশে আশেপাশের সকল কূপ নষ্ট করে দেয়া হয় এবং যে কূপের কাছে উনারা অবতরণ করেছিলেন তার পাশে একটা পানির আধার তৈরি করে তাতে পানি ভর্তি করে রেখে পানি উঠাবার পাত্র রেখে দেয়া হলো। ফলে এদিকে কাফিরদের জন্য আর পানি অবশিষ্ট থাকলো না।

জিহাদ শুরু এবং গায়িবী মদদঃ
জিহাদ শুরু হওয়ার পূর্ব মুহূর্তের চিত্রটা ছিলো এ রকম যে তখন দুটি বাহিনী পরস্পরের মুখোমুখী। দয়াময় মহান আল্লাহ পাক উনার সামনে হক্ব না হক্ব পার্থক্যকারী দুটি দল উপস্থিত। এদিকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট উনার প্রতিশ্রুতি বিজয় ও সাহায্যের জন্য আবেদন করলেন এবং নিম্নোক্ত দোয়া করলেন,
اللهم انك ان تهلك هذه العصابة لاتعبد بعد هافى الارض.
অর্থ: “হে মহান আল্লাহ পাক! কাফিররা যদি মুসলিম বাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়, তবে এই দুনিয়াতে আপনার নামে যিকির করার কেউ থাকবে না।” এবং আরো প্রার্থনা করেন:
اللهم انجرلى ما وعد تنى
অর্থ: “হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি আমাকে দেয়া অঙ্গীকার পূরণ করুন। হে মহান আল্লাহ পাক! আমরা আপনার সাহায্য চাই।”
হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার দোয়া ও মুনাজাতের গভীরতা প্রত্যক্ষ করে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আর দোয়া ও মুনাজাত করতে হবে না। আপনি আপনার রব উনার নিকট যা চেয়েছেন, তিনি তা অবশ্যই আপনাকে হাদিয়া করবেন।”
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। সামান্য সময় উনার কেটে গেলো।
তিনি ঘুম থেকে উঠে মৃদু হেসে বললেন, “হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম! মহান আল্লাহ পাক উনার সাহায্য এসে গেছে। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার অশ্বের লাগাম ধরে এসেছেন। উনার সম্মুখের দুটা দাঁতের নূর চমকাচ্ছে।” সুবহানাল্লাহ!

তারপর তাঁবু মুবারক হতে বাইরে এসে জিহাদ রত হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উৎসাহিত করে বললেন, “আরো জেনে রাখো, আমি সেই মহান আল্লাহ পাক উনার কসম করে বলছি, যার কুদরতী হাত মুবারক-এ আমার জীবন মুবারক, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক ও মহান পুরস্কারের আশায় কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে শহীদ হবে, জান্নাত তার জন্য অবধারিত।”
বদরের জিহাদ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “স্মরণ করুন, আপনারা যখন আপনাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন, তিনি তা কবুল করেছিলেন, আমি আপনাদের সাহায্য করবো ১০০০ ফেরেশতা দ্বারা, যারা একের পর এক আসবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি এটা করেন কেবল শুভ সংবাদ দেয়ার জন্যে এবং এ উদ্দেশ্যে যাতে আপনাদের চিত্ত প্রশান্তি লাভ করে এবং সাহায্য তো শুধু মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট হতেই আসে। মহান আল্লাহ পাক তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”(পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: আয়াত শরীফ ৯, ১০)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো বলেন, “আপনাদের প্রতিপালক হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি প্রত্যাদেশ করেন, “আমি আপনাদের সাথে আছি।” সুতরাং মু’মিনদেরকে অবিচলিত রাখুন। যারা কুফরী করে আমি তাদের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করবো। সুতরাং তাদের স্কন্ধে ও সর্বাঙ্গে আঘাত করুন।”(পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: আয়াত শরীফ ১২)

অতএব, মুসলমানদের সাথে কাফিরদের তুমুল জিহাদ হয় এবং ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারাও সরাসরি জিহাদে অবতীর্ণ হন।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “বদর জিহাদে রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিভিন্ন গোত্রের মুজাহিদদের পরিচয়ের জন্যে বিভিন্ন সাঙ্কেতিক শব্দ ব্যবহার করেন। সুতরাং মুহাজিরদের আহবান করার জন্যে ‘ইয়া বনী আবদির রাহমান’, খায়রাজ গোত্রের কাউকে আহবান করার জন্যে ‘ইয়া বনী আবদিল্লাহ’ শব্দ নির্ধারণ করে দেন।
রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিজ ঘোড়ার নাম রাখেন ‘খায়লুল্লাহ’ ওইদিন মুজাহিদ ছাহাবীদের সাধারণ সঙ্কেতসূচক শব্দ ছিলো ‘আহাদ আহাদ’
গায়িবী মদদঃ
বদরের জিহাদে সার্বক্ষণিকই গায়িবী মদদ হয়েছে; তার কিছু ওয়াকেয়া আমরা এখানে উল্লেখ করবো।
স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “দুটি দল যখন পরস্পরের সম্মুখীন হলো, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রত্যেক দলকে অপর দলের দৃষ্টিতে কম দেখান। যাতে উভয় দলই একে অপরের উপর আক্রমণ করতে উদ্যত হন। এরূপ করার পেছনে নিগূঢ় রহস্য রয়েছে, যা সুস্পষ্ট।”
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো জানিয়ে দেন, “দুটি দলের পরস্পর সম্মুখীন হওয়ার মধ্যে আপনাদের জন্যে নির্দশন রয়েছে। একদল মহান আল্লাহ পাক উনার পথে জিহাদ করছিল, অন্যদল কাফির ছিলো। তারা মুসলমানদেরকে দ্বিগুণ দেখছিলো। মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে ইচ্ছা নিজ সাহায্য দ্বারা শক্তিশালী করেন।”(পবিত্র সূরা ইমরান শরীফ: আয়াত শরীফ ১৩)
ওয়াকেয়া:
সেদিন জনৈক হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একজন মুশরিককে পিছনে জোরে ধাওয়া করছিলেন। এ সময় তিনি তার উপর দিক থেকে বেত্রাঘাতের শব্দ ও অশ্বারোহীর আওয়াজ শুনতে পান। অশ্বারোহী বলছিলেন, “হে হায়যূম (ফেরেশতার ঘোড়ার নাম) সম্মুখে অগ্রসর হও।’ তখন তিনি দেখতে পেলেন উনার সম্মুখে ওই মুশরিক চিৎ হয়ে পড়ে আছে। এরপর তিনি লক্ষ্য করে দেখলেন যে, তার নাক ফাটা ও মুখম-ল ক্ষত-বিক্ষত। যেন কেউ তাকে বেত্রাঘাত করেছে। বেতের আঘাতে তার সমস্ত দেহ নীল হয়ে গিয়েছে। এরপর ওই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। এই সাহায্য তৃতীয় আসমান থেকে এসেছে।’ সেদিন মুসলমানগণ ৭০ জন কাফিরকে হত্যা এবং ৭০ জনকে বন্দি করেন। সুবহানাল্লাহ!
বদরের জিহাদের দিন একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কিছু সংখ্যক গৌরবর্ণের লোককে সাদাকালো বর্ণের ঘোড়ার উপর আসমান ও যমীনের মাঝখানে দেখেছেন। উনারা ছিলেন বিশেষ প্রতীক চিহ্নধারী। উনারা শত্রুদের হত্যা করছিলেন এবং বন্দিও করছিলেন।
বদরের জিহাদে নিহতদের মধ্যে যারা হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের হাতে নিহত হয়েছিলো লোকজন তাদের চিনতে পারতো। কেননা তাদের কাঁধের উপরে ও জোড়ায় আগুনে পোড়ানোর মতো দাগ থাকতো।

বর্ণনাকারী বলেন, বদরের দিন আমি দেখলাম, আকাশ থেকে দিগন্তব্যাপী এক বিরাট চাদর নেমে আসছে। এরপর দেখলাম গোটা উপত্যকা ছেয়ে গেছে। তখন আমার মনে হলো, এটা অবশ্যই আসমান থেকে আগত কিছু হবে, যা দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাহায্য করা হচ্ছে। বস্তুত এ ছিলো হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের আগমন- যার পরিণতিতে কাফিরদের পরাজয় ঘটে।
বর্ণনাকারী বলেন, আমরা উভয় পক্ষ মুখোমুখি হই এবং জিহাদে জড়িয়ে পড়ি। হঠাৎ এক আওয়াজ শুনতে পাই যেন আকাশ থেকে পৃথিবীতে কিছু পড়েছে। তামার পাত্রে পাথরের টুকরা পড়লে যেমন আওয়াজ হয় তেমন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের দিকে এক মুঠো কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। যার ফলে আমরা ভীত হয়ে পড়ি।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ধুলোবালিযুক্ত এক মুঠো কঙ্কর শত্রু পক্ষের দিকে নিক্ষেপ করেন। দেখা গেলো, এমন কোনো মুশরিক ছিলো না, যার দুই চোখে ওই ধুলোবালি লাগেনি। এরপর মুসলমানরা পিছনে ধাওয়া করে তাদেরকে হত্যা ও বন্দি করেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিম্নোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেন,
فلم تقتلوهم ولكن الله قتلهم وما رميت اذ رميت ولكن الله رمى.
অর্থ: “আপনারা তাদেরকে হত্যা করেননি, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে হত্যা করেছেন এবং আপনি যখন ধুলো নিক্ষেপ করেছিলেন তখন আপনি নিক্ষেপ করেননি। বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি নিক্ষেপ করেছেন।”(পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ :আয়াত শরীফ ১৭)
মুজিযা শরীফ:

হযরত উক্কাস ইবনে মিহসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ‘বদর জিহাদে আমার নিজের তরবারিটি ভেঙে যায়। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে একখানা কাঠ দিলেন। আমার হাতে এলে তা একটি ঝকঝকে লম্বা তরবারিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
হযরত কাতাদা ইবনে নু’মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, ‘বদর জিহাদে উনার চোখে দারুণভাবে আঘাত লাগে। এতে চোখের পুত্তলি বের হয়ে গ-দেশে ঝুলতে থাকে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ঝুলে থাকা চোখ কেটে ফেলার জন্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট অনুমতি চান। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুমতি না দিয়ে উনাকে ডেকে কাছে এনে পুত্তলিটি ধরে যথাস্থানে বসিয়ে দেন। এতে উনার চোখ এমন ভালো হয়ে যায় যে, তিনি বুঝতেই পারতেন না যে, কোন চোখে আঘাত লেগেছিলো। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, উনার এ চোখটি অপর চোখের চেয়েও উত্তম দেখাতো। সুবহানাল্লাহ!
বদর কুয়ায় কাফির সর্দারদের লাশ নিক্ষেপঃ
বদরের জিহাদের দিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশে ২৪ জন কুরাঈশ সর্দারের লাশ বদর প্রান্তরের একটি কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছিলো। কূপটি ছিলো ভীষণ নোংরা ও কদর্য। শত্রুদের লাশগুলো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তিন দিন পর্যন্ত রেখে দেন। অবশেষে লাশে পচন ধরে।
তখন তিনি তাদের কাছে অর্থাৎ সেই কূপের কাছে গিয়ে বলেন, “হে উমাইয়া ইবনে খালফ, হে আবূ জাহল ইবন হিশাম, হে উতবা ইবনে রাবীআ, হে শায়বা ইবনে রাবীআ! তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন, তা কী তোমরা যথাযথভাবে পেয়েছো? আমার প্রতিপালক আমার সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন, তা তো আমি যথাযথভাবে পেয়েছি।” সুবহানাল্লাহ!
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা তখন বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কী এমন এক সম্প্রদায়ের সাথে কথা বলছেন, যারা মরে পচে গলে গেছে?
জবাবে তিনি বললেন, “সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার জীবন মুবারক, আমি যা যা বলছি তা তাদের তুলনায় আপনারা অধিক শুনছেন না। কিন্তু তারা উত্তর দিতে পারছে না।” সুবহানাল্লাহ!
আবু জাহিলের পরিণতি:
জনৈক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, আমি বদর প্রান্তর দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি একজন লোক মাটির নিচ থেকে উপরের দিকে উঠে আসছে। আর একজন তাকে হাতুড়ি দিয়ে এমনভাবে আঘাত করছে যে, সে মাটির নিচে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। এরপরও সে আবার উঠছে এবং বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে।
এটা শুনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “সে হলো আবু জাহিল। কিয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে। আর তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য একজন হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম উনাকে নিযুক্ত করা হয়েছে।” নাঊঝুবিল্লাহ! (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)

No comments

ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য।

  ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য। ডাল খাওয়ার ফলে কলব প্রসারিত হয় এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়। পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উ...

Powered by Blogger.