মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিামাহ্
দ্বাদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘ইযালাতুল খফা শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
بينا عمر رضي الله عنه ذات ليلةٍ
يَعُسّ سمع صوت امرأةٍ من سطح وهي تُنشد
تطاول هذا الليل وازدرّ جانبه -
وليس الي جنبي خليلٌ الاعبه
فوالله لو لا الله لا شئ غيره -
لزعزع من هذا السرير جوانبه
مخافة ربي والحياء يصدني - واكرم
بعلي ان تنال مراكبه
فقال عمر لا حول ولا قوة الا بالله
ماذا صنعت يا عمر بنساء المدينة ثم جاء فضرب الباب علي حفصة ابنته فقالت ماجاء بك
في هذه الساعة قال اخبريني كم تصبر المرأة المغيبة عن اهلها قالت اقصاه اربعة اشهر
فلما اصبح كتب الي امرائه في جميع النواحي ان لا تجمّر البعوثُ وان لا يغيب رجلٌ
عن اهله اكثر من اربعة اشهر.
অর্থ: “এক রাতে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ঘুরে ঘুরে জনগনের
অবস্থা দেখছিলেন। তখন তিনি এক ঘরের ছাদ থেকে একজন মহিলার আওয়াজ শুনতে পান। মহিলা কবিতা
পাঠ করছেন, ‘এ রাত দীর্ঘ হয়ে গেছে, আঁধারও ছেয়ে গেছে অথচ আমার পাশে বন্ধু নেই যার সাথে মন দেয়া-নেয়া করব। মহান আল্লাহ
পাক উনার কসম! যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি না হতেন, তাহলে তিনি ছাড়া আর কেউ
ছিল না বাধা দেয়ার। তখন এ খাটের সর্বাংশ অবশ্যই কাঁপতে থাকত। নিজ প্রতিপালকের ভয় ও
লজ্জা আমাকে বাধা দিচ্ছে। তা ছাড়া নিজ স্বামীর মর্যাদাবোধ আমার রয়েছে। তাই তার সওয়ারীতে
আমি তো অন্য কাউকে আরোহী করতে পারি না।’
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এ কবিতা শুনে বলে উঠলেন, লা-হাওলা ওয়া লা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। হে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম
আলাইহিস সালাম! আপনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার নারীদের সাথে কিরূপ আচরণ
করতেছেন? অত:পর তিনি গিয়ে নিজের মহাসম্মানিত মেয়ে ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার দরজা মুবারক-এ
কড়া নাড়লেন। ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস
সালাম তিনি এগিয়ে এসে বললেন, কী কারণে আপনি এই অসময় এখানে উপস্থিত হয়েছেন? তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমাকে সংবাদ দিন, কোনো মহিলার স্বামী বিদেশে থাকা অবস্থায় মহিলা তার
স্বামীর জন্য কতদিন ধৈর্য ধারণ করতে পারে? তিনি জবাব দিলেন, খুব বেশী হলে চার মাস।
অত:পর সকাল হওয়া মাত্র তিনি সমস্ত গভর্নর বা দায়িত্বশীল উনাদের নিকট লিখলেন, কোনো সৈন্যকে যেন বেশী দিন আটকে না রাখা হয়। বিশেষত বিবাহিত সৈনিকদের যেন চার মাস
অন্তর ছুটি দেয়া হয়।” সুবহানাল্লাহ!
অপর বর্ণনায় রয়েছে,
ثُمَّ
دَخَلَ عَلَى حَفْصَةَ فَقَالَ إِنِّي سَائِلُكِ عَنْ أَمْرٍ قَدْ أَهَمَّنِي
فَأَفْرِجِيهِ عَنِّي كَمْ تَشْتَاقُ الْمَرْأَةُ إِلَى زَوْجِهَا فَخَفَضَتْ رَأْسَهَا
فَاسْتَحَيَتْ فَقَالَ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ فَأَشَارَتْ
ثَلَاثَةَ أَشْهُرٍ وَإِلَا فَأَرْبَعَةً فَكَتَبَ عُمَرُ أَلَّا تُحْبَسَ
الْجُيُوشُ فَوْقَ أَرْبَعَةِ أَشْهُرٍ.
অর্থ: “অত:পর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি (গভীর রাতেই)
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস
সালাম উনার নিকট গিয়ে বললেন যে, নিশ্চয়ই আমি আপনাকে এমন
একটি বিষয়ে সুওয়াল করছি, যে বিষয়টা আমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। আপনি আমাকে
সে বিষয়ে সংবাদ দিন। একজন মহিলা কতদিনে তাঁর আহাল বা স্বামীকে কামনা করে? তখন ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস
সালাম তিনি লজ্জায় উনার সম্মানিত মাথা মুবারক নিচু করে ফেলেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত
ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন,
فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ
الْحَقِّ
‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সত্য বিষয় প্রকাশে লাজ্জাবোধ করেন না।’
তখন ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস
সালাম তিনি ইশারা মুবারক করলেন- ‘তিন মাস। আর যদি তা না হয়, তাহলে চার মাস’। অর্থাৎ তিন থেকে চার মাস। অত:পর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম
আলাইহিস সালাম তিনি চিঠি লিখেন, সৈন্যদেরকে যেন চার মাসের
অধিক সময় আটকিয়ে রাখা না হয়। অর্থাৎ প্রতি চার মাস অন্তর যেন ছুটি দেয়া হয়।” সুবহানাল্লাহ!
(মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)
সুতরাং ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস
সালাম তিনি হচ্ছেন একমাত্র যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি অর্থাৎ উনারা ব্যতীত সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের
মহাসম্মানিত মু‘য়াল্লিমাহ। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত দয়া-দান, ইহসান মুবারকের বদৌলতেই সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলে
ইলম মুবারকসহ সমস্ত প্রকার নিয়ামত মুবারক হাছিল করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকেসহ সমস্ত কায়িনাতবাসীকে
সম্মানিত তা’লীম মুবারক দান:
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘মুসনাদে
আহমদ শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
عَنْ
حضرت نُدبَةَ رحمة الله عليها مَوْلَاةِ ام الؤمنين سيدتنا حضرت الثالثة عشر عليها
السلام (سيدتنا حضرت مَيْمُونَة عليها السلام) زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ أَرْسَلَتْنِي ام الؤمنين سيدتنا حضرت الثالثة عشر
عليها السلام (سيدتنا حضرت مَيْمُونَةُ بِنْتُ الْحَارِثِ عليها السلام) إِلَى
امْرَأَةِ حضرت عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ رضى الله تعالى عنه وَكَانَتْ
بَيْنَهُمَا قَرَابَةٌ فَرَأَيْتُ فِرَاشَهَا مُعْتَزِلًا فِرَاشَهُ فَظَنَنْتُ
أَنَّ ذَلِكَ لِهِجْرَانٍ فَسَأَلْتُهَا فَقَالَتْ لَا وَلَكِنِّي حَائِضٌ فَإِذَا
حِضْتُ لَمْ يَقْرَبْ فِرَاشِي فَأَتَيْتُ ام الؤمنين سيدتنا حضرت الثالثة عشر
عليها السلام (سيدتنا حضرت مَيْمُونَة عليها السلام) فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهَا
فَرَدَّتْنِي إِلَى حضرت ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله تعالى عنه فَقَالَتْ أَرَغْبَة
عَنْ سُنَّةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَقَدْ كَانَ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنَامُ مَعَ الْمَرْأَةِ مِنْ نِسَائِهِ
الْحَائِضِ وَمَا بَيْنَهُمَا إِلَّا ثَوْبٌ مَا يُجَاوِزُ الرُّكْبَتَيْنِ.
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ্
‘আশার আলাইহাস সালাম উনার দাসী হযরত নুদ্বাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত
আছ ছালিছাহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি আমাকে (উনার সম্মানিতা বোন উনার ছেলে তথা উনার
সম্মানিত ভাগিনা) সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা
আনহু উনার সম্মানিতা আহলিয়াহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার নিকট পাঠালেন। সাইয়্যিদুনা হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার এবং উনার সম্মানিতা আহলিয়াহ্
উনার অর্থাৎ উনাদের উভয়ের সম্পর্ক খুব গভীর ছিলো। কিন্তু আমি দেখলাম যে, উনার সম্মানিতা আহলিয়াহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার বিছনা মুবারক এবং সাইয়্যিদুনা
হযরত ইবনে ‘আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সম্মানিত বিছানা মুবারক পৃথক পৃথক।
অর্থাৎ উনারা উভয়ে পৃথক পৃথক বিছানায় শয়ন করেছেন। ফলে আমি ভাবলাম যে, নিশ্চয়ই এটা জুদায়ীর লক্ষণ। অর্থাৎ উনাদের উভয়ের মাঝে জুদায়ী ঘটতে পারে। তখন আমি
উনার সম্মানিতা আহলিয়াহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহা উনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি জবাবে
বললেন যে, না। বরং আমি স্বাভাবিক মাজুরতার মধ্যে আছি। যখন আমি স্বাভাবিক
মাজুরতার মধ্যে থাকি, তখন তিনি আমার বিছানার নিকটবর্তী হন না। (যার কারণে
আমরা উভয়ে এখন আলাদা বিছানায় শয়ন করেছি।) তারপর আমি যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল
মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার নিকট এসে এ বিষয়টা
আলোচনা করলাম। অর্থাৎ উনাকে পুরো বিষয়টা খুলে বললাম, তখন তিনি আমাকে হযরত ইবনে
‘আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা উনার নিকট পাঠালেন। (উনাকে ডেকে আনার জন্য। যখন হযরত
ইবনে ‘আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা তিনি উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক আসলেন, তখন) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ্
‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি (হযরত ইবনে ‘আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা উনাকে উদ্দেশ্য
করে) বললেন, আপনি কি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক থেকে দূরে সড়ে গেছেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি তখনও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের
সাথে (একই সম্মানিত ও পবিত্র বিছানা মুবারক-এ) ঘুমাতেন, যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা
মহাসমম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরানী শান মুবারক প্রকাশ করতেন। এই অবস্থায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহাসম্মানিত ও
মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের উভয়ের মাঝে শুধু একটি
সম্মানিত ও পবিত্র কাপড় মুবারক থাকতো, যা দুই হাটু মুবারক অতিক্রম
করতো। সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ ৪৪/৪০২, আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ২৪/১২)
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি, হযরত ইমাম আব্দুর রাজ্জাক্ব
রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত ইমাম ত্ববারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ
উনারাসহ আরো অন্যান্য ইমাম মুজতাহিদ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উনাদের নিজ নিজ কিতাবে
উল্লেখ করেছেন,
عَنْ
حضرت مَنْبُوذٍ رحمة الله عليه عَنْ أُمِّهِ قَالَتْ كُنْتُ عِنْدَ ام الؤمنين
سيدتنا حضرت الثالثة عشر عليها السلام (سيدتنا حضرت مَيْمُونَة عليها السلام)
فَأَتَاهَا حضرت ابْنُ عَبَّاسٍ رضى الله تعالى عنه فَقَالَتْ يَا بُنَيَّ مَا
لَكَ شَعِثًا رَأْسُكَ قَالَ حضرت أُمُّ عَمَّارٍ رحمة الله عليها مُرَجِّلَتِي
حَائِضٌ قَالَتْ أَيْ بُنَيَّ وَأَيْنَ الْحَيْضَةُ مِنَ الْيَدِ كَانَ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْخُلُ عَلَى إِحْدَانَا وَهِيَ حَائِضٌ
فَيَضَعُ رَأْسَهُ فِي حِجْرِهَا فَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَهِيَ حَائِضٌ.
অর্থ: “হযরত মানবূয রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার সম্মানিতা আম্মাজান উনার থেকে
বর্ণনা করেন। উনার আম্মাজান বলেন, একদা আমি মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার
নিকট ছিলাম। তখন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উনার নিকট আসলেন।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ্ ‘আশার আলাইহাস
সালাম তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, হে বৎস! কি ব্যাপর, আপনার মাথার চুল মুবারক এলোমেলো কেন? তিনি বলেন, হযরত উম্মু ‘আম্মার রহমাতুল্লাহি আলাইহা (আমার সম্মানিত
আহলিয়াহ্) তিনি আমার চুল মুবারক পরিপাটি করে থাকেন। তিনি এখন স্বাভাবিক মাজুরতায় আছেন।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ্ ‘আশার আলাইহাস
সালাম তিনি বলেন, হে বৎস! হাতে কি কিছু থাকে? আমরা যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরানী শান মুবারক-এ থাকতাম, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের নিকট আসতেন এবং আমাদের সম্মানিত কোল মুবারক-এ উনার
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুল হুদা মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাথা মুবারক)
রাখতেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত মুবারক
করতেন।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ ৪৪/৩৯২, মুছান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক্ব ১/৩২৫, আল মু’জামুল কাবীর লিত্ব ত্বাবারানী ২৪/১৪৪, মুসনাদে হুমাইদী ১/৩১৬, মুছান্নাফে আবী শায়বাহ্ ১/১৮৪ ইত্যাদী)
বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি ছিলেন
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে ‘রঈসুল মুফাস্সিরীন’।
সুবহানাল্লাহ! উনার কাছ থেকে সমস্ত উম্মত হাদীছ, তাফসীর, ফিক্বাহসহ যাবতীয় বিষয়ে তা’লীম গ্রহণ করেছে। সুবহানাল্লাহ! আর উনাকেই তা’লীম-তাকলক্বীন
দিয়েছেন উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি।
সুবহানাল্লাহ! তাহলে এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন
আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারাসহ
সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলকেই তা’লীম দান করেছেন এবং হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকেসহ সমস্ত কায়িনাতবাসীকে সম্মানিত
তা’লীম মুবারক গ্রহণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
‘মুসলিম শরীফ’সহ আরো অন্যান্য
কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
عَنِ
حَضْرَتْ ابْنِ عَبَّاسٍ رضى الله تعالى عنه أَنَّهُ قَالَ إِنَّ امْرَأَةً
اشْتَكَتْ شَكْوَى فَقَالَتْ إِنْ شَفَانِي اللهُ لَأَخْرُجَنَّ فَلَأُصَلِّيَنَّ
فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ فَبَرَأَتْ ثُمَّ تَجَهَّزَتْ تُرِيدُ الْخُرُوجَ
فَجَاءَتْ ام الؤمنين سيدتنا حضرت الثالثة عشر عليها السلام (سيدتنا حضرت
مَيْمُونَة عليها السلام) زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
تُسَلِّمُ عَلَيْهَا فَأَخْبَرَتْهَا ذَلِكَ فَقَالَتْ اجْلِسِي فَكُلِي مَا
صَنَعْت وَصَلِّي فِي مَسْجِدِ الرَّسُولِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ صَلَاةٌ
فِيهِ أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ مِنَ الْمَسَاجِدِ إِلَّا
مَسْجِدَ الْكَعْبَةِ.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক মহিলা অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তিনি বলেন, যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সুস্থ করেন, তাহলে আবশ্যই আমি বাইতুল
মুকাদ্দাস শরীফ যেয়ে নামায আদায় করবো। তারপর উক্ত মহিলা তিনি যখন আরোগ্য লাভ করেন, তখন তিনি বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এ যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার
নিকট এসে উনাকে সালাম মুবারক দিয়ে এই বিষয়ে উনাকে অবহিত করেন। তখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি উক্ত মহিলাকে
বলেন, আপনি বসুন এবং আমি যা তৈরী করেছি তা খান। আর আপনি (বাইতুল মুকাদ্দাস
শরীফ না যেয়ে) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদে নববী শরীফ-এ নামায আদায় করুন। সুবহানাল্লাহ!
কেনানা, নিশ্চয়ই আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র
মসজিদে নবীব শরীফ উনার মধ্যে নামায আদায় করা অন্যান্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মসজিদ
মুবারক-এ নামায আদায় করার চেয়ে হাজার গুন শ্রেষ্ঠ এবং উত্তম। তবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র
মসজিদে কা’বা শরীফ উনার বিষয়টি আলাদা।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, মুসনাদে আহমদ ৪৪/৪০৮, আস সুনানুল কুবরা লিল
বাইহাক্বী ১০/১৪১, জামি‘উল উছূল ১১/৫৪০, তারীখে বাগদাদ ২/১৯৯ ইত্যাদী)
এই সকল বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আছ ছালিছাহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি আক্বাইদসহ যাবতীয় বিষয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকেসহ সমস্ত জিন-ইনসান তামাম কায়িনাতবাসী সবাইকে
তা’লীম-তালক্বীন মুবারক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! আর তিনি হচ্ছেন সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা
হচ্ছেন যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার মাহবূব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ উনারা সমস্ত
জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ। সুবহানাল্লাহ!
No comments