Header Ads

Islamic Quotes Urdu Facebook Cover. QuotesGram

পবিত্র ঈদের নামাযের পর বা যেকোন সময় মুছাফাহা তথা হাতে হাত মিলানো এবং মুয়ানাকা তথা কোলাকুলি করা খাছ সুন্নত মুবারক


একজন মুসলমান অপর মুসলমানের সাথে সাক্ষাতান্তে সালাম বিনিময়ের পর সৌহার্দ ও মুহব্বত প্রকাশের মাধ্যমটির নাম হল মুছাফাহা। দেখা হলে মুছাফাহা বা করমর্দন করা একটি ইসলামী শরীয়ত উনার আইন ও উত্তম চরিত্র। এটি মুছাফাহাকারী ব্যক্তিদ্বয়ের মাঝে মুহব্বত-ভালবাসা ও হৃদ্যতার বহিঃপ্রকাশ। অন্যদিকে এটি মুসলমানদের পারস্পারিক হিংসা-বিদ্বেষ ও কলহ দূর করে দেয়। দুই হাতে মুছাফাহা করা খাছ সুন্নত মুবারক এবং এটা ছিল মুসলমানদের মাঝে ও হযরত ছাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের মাঝে সাধারণ অভ্যাসগত সুন্নত।
মুছাফাহা (مصافحة) সংঘটিত হয় কোন ব্যক্তি তার হাতের তালু (صفح) অপর ব্যক্তির হাতের তালু (صفح) তে রাখার মাধ্যমে। (মু’জামু মাকায়িসিল লুগাহ’ ৩/২২৯ ও অন্যান্য অভিধান)
মুছাফাহার সংজ্ঞা- সাধারনভাবে মুছাফাহা অর্থ হলো করমর্দন করা বা হাতে হাত মিলানো। প্রখ্যাত হাদীছ ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
هِيَ مُفَاعَلَةٌ مِنَ الصَّفْحَةِ وَالْمُرَادُ بِهَا الْإِفْضَاءُ بِصَفْحَةِ الْيَدِ إِلَى صَفْحَةِ الْيَدِ
অর্থ: এটা صفحة থেকে বাবে مفاعلة-এর মাছদার বা ক্রিয়ামূল। যার অর্থ হাতের তালুর সাথে হাতের তালু মিলানো। (ফাতহুল বারী, ১ম খন্ড, পৃঃ ৫৪, ‘মুছাফাহা’ অনুচ্ছেদ)
আল্লামা খাত্তাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
المصافحة : وضع كف على كف مع ملازمة لهما قدر ما يفرغ من السلام
অর্থাৎ মুছাফাহা হলো, সালাম থেকে অবসর না হওয়া পর্যন্ত পরস্পর সংযুক্ত থেকে হাতের তালুর উপর হাতের তালু রাখা।
হযরত ইবনুল আছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘আন-নিহায়া’ গ্রন্থে লিখেছেন,
وَمِنْهُ حَدِيثُ المُصَافَحَة عِنْدَ اللِّقاء وَهِيَ مُفُاعلَة مِنْ إلْصاقِ صَفْح الكَفِّ بالكَفِّ، وَإِقْبَالِ الوجْه عَلَى الوجْه
অর্থ: ‘এক হাতের তালুর ভিতরের অংশের সাথে অন্য হাতের তালুর ভিতরের অংশ মিলানো এবং পরস্পরের চেহারা মুখোমুখি করা। (ইবনুল আছীর, আন-নিহায়া, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৮৮)
হযরত মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনিও মুছাফাহার অনুরূপ সংজ্ঞা প্রদান করেছেন-
اَلْمُصَافَحَةُ: هِيَ الْإِفْضَاءُ بِصَفْحَةِ الْيَدِ إِلَى صَفْحَةِ الْيَدِ
অর্থ: ‘মুছাফাহ হলো হাতের তালুর সাথে হাতের তালু মিলানো’। (মিরক্বাত শরহে মিশকাত, ২য় খন্ড, পৃঃ ৮৪)
আাল্লামা জযরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, মুছাফাহা হল এক জনের হাতের তালুকে অন্যের হাতের তালুর সাথে মিলানো। ছহীহ হাদীছ দ্বারা মুছাফাহা করা বা হাত মেলানো সুন্নত। সাক্ষাতের প্রাক্কালে মুছাফাহা করতে হয়। বিদায়ের সময়েও মুছাফাহা হতে পারে। গায়রে মাহরাম এবং যেসব ক্ষেত্রে সালাম দেয়া নিষেধ সেসব ক্ষেত্রে মুছাফাহা করাও নিষেধ।

মুছাফাহার ফযীলত ও মুছাফাহার বিধান:
প্রকাশ থাকে যে, মুছাফাহা করা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আিমল মুবারক দ্বারা প্রমাণিত। আর এটি গুনাহ মাফ হওয়ার মাধ্যমও বটে। হযরত বারা ইবনে আযেব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلاَّ غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَفْتَرِقَا
যখন দু’জন মুসলমান পরস্পরে সাক্ষাৎকালে মুছাফাহা করে তখন তাদের পৃথক হওয়ার পূর্বেই উভয়ের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়’। (তিরমিযী শরীফ-২৭২৭ ‘অনুমতি প্রার্থনা’ অধ্যায় ‘মুছাফাহার বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: “কোন মুসলিমদ্বয় যদি সাক্ষাত করে পরস্পর মুছাফাহা করে তাহলে তারা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বেই তাদের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়।” (সুনানে আবু দাউদ শরীফ -৫২১২)
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে এবং তৎকালীন সমাজে মুছাফাহা একটি মশহুর অভ্যাস ছিল। যেটা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ قَتَادَةَ، قَالَ قُلْتُ لأَنَسٍ أَكَانَتِ الْمُصَافَحَةُ فِي أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ نَعَمْ‏.‏
অর্থ: হযরত কাতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললাম: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে কি মুছাফাহার প্রচলন ছিল? তিনি বলেন: হ্যাঁ।” (বুখারী শরীফ-৬২৬৩)
হযরত ইবনে বাত্তাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: “সর্বস্তরের আলেমদের মতে, মুছাফাহা একটি নেক কাজ। ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন: সাক্ষাতের সময় মুছাফাহা করা সুন্নত মর্মে ইজমা বা আলেমদের ঐক্যমত্য সংঘটিত হয়েছে।” (যেমনটি রয়েছে ‘ফাতহুল বারী’ ১১/৫৫)
১. ইমাম নাববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে মুছাফাহা মুস্তাহাব। এ প্রসঙ্গে রদ্দুল মোখতার ফত্ওয়া গ্রন্থে আছে-
قال اعلم ان المصافحة مستحبة عند كل لقاء
অর্থ: তিনি বলেন, জেনে রেখো, প্রত্যেক সাক্ষাতের সময় মুছাফাহা করা মুস্তাহাব।
২.ফতওয়া শামী মুছাফাহা অধ্যায়ে উল্লেখ আছে-
لابأس بتقبىل يد الرجل العالم والمتورّع على سببل التبرك
অর্থাৎ বরকত অর্জনের জন্য আলেমেদ্বীন ও দ্বীনদার মুত্তাকী লোকদের হাত চুম্বন করা জায়েয।
৩. হযরত শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রণীত ‘আশিয়াতুল লুমআত’ (মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ) ৪র্থ খন্ড ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
مصافحه سنت ست نزد ملاقات وبايد كه بهر دودست بود
অর্থাৎ সাক্ষাতের সময় মুছাফাহা করা সুন্নত। দু’ হাতের দ্বারা মুছাফাহা করা সমীচীন।
মুছাফাহা সুন্নত হওয়া সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফটিও প্রণিধানযোগ্য। হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন,
قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللهِ الرَّجُلُ مِنَّا يَلْقَى أَخَاهُ أَوْ صَدِيْقَهُ أَيَنْحَنِىْ لَهُ؟ قَالَ لاَ، قَالَ أَفَيَلْتَزِمُهُ وَيُقَبِّلُهُ قَالَ لاَ قَالَ أَفَيَأْخُذُ بِيَدِهِ وَيُصَافِحُهُ قَالَ، نَعَمْ.
অর্থ: ‘এক ব্যক্তি বলল, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল! আমাদের কেউ তার ভাই বা বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করলে সে কি তার দিকে ঝুঁকবে? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, না। সে বলল, তাহ’লে কি সে আলিঙ্গন করবে এবং চুম্বন করবে? উত্তরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, না। পুনরায় সে প্রশ্ন করল, তবে কি সে হাত ধরে মুছাফাহা করবে? উত্তরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হ্যাঁ’। (তিরমিযী শরীফ- ২৭২৮)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন বুসর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন,
تَرَوْنَ كَفِّى هَذِهِ فَأَشْهَدُ أَنِّى وَضَعْتُهَا عَلَى كَفِّ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم
অর্থ: ‘তোমরা আমার এই হাতের তালু দেখছ। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি এই হাতের তালুকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক হাতের তালু মুবারকে রেখেছি’। (মুসনাদে আহমাদ শরীফ-১৭৭২৬, ৪/১৮৯;)
মুসনাদে আহমাদ শরীফের আরেক বর্ণনায় আছে, হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন,
بَايَعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِى هَذِهِ يَعْنِى الْيُمْنَى عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِيْمَا اسْتَطَعْتُ
অর্থ: ‘আমি আমার এই হাত দ্বারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে সাধ্যমত ইমাম উনার কথা শোনার ও মান্য করার উপর বাইয়াত করেছি’। (মুসনাদে আহমাদ শরীফ- ১২৭৮৬)
উপরোক্ত হাদীছ দু’টিতে يد كف শব্দের উল্লেখ রয়েছে। যার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, বাইয়াতের জন্য হাত ব্যবহার করা হয়েছে। আর মুছাফাহার জন্যও এটিই সুন্নতী পদ্ধতি।
হযরত ছাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা সাধারণতঃ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আসতেন এবং উনার কাছে বাইয়াত ও মুছাফাহা করতেন।
হযরত আমর ইবনুল ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
فَلَمَّا جَعَلَ اللهُ الإِسْلاَمَ فِىْ قَلْبِىْ أَتَيْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ ابْسُطْ يَمِينَكَ فَلأُبَايِعْكَ. فَبَسَطَ يَمِينَهُ قَالَ : فَقَبَضْتُ يَدِى. قَالَ : مَا لَكَ يَا عَمْرُو. قَالَ قُلْتُ أَرَدْتُ أَنْ أَشْتَرِطَ. قَالَ : تَشْتَرِطُ بِمَاذَا. قُلْتُ أَنْ يُغْفَرَ لِى. قَالَ : أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الإِسْلاَمَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ-
অর্থ: ‘অতঃপর যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার মনে ইসলাম গ্রহণের আগ্রহ সৃষ্টি করলেন, তখন আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটে এসে বললাম, আপনার ডান হাত মুবারক বাড়িয়ে দিন, আমি আপনার নিকটে বাইয়াত হতে চাই। তিনি উনার ডান হাত মুবারক বাড়িয়ে দিলে আমি আমার হাত টেনে নিলাম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার কি হল? আমি বললাম, আমি কিছু শর্ত আরোপ করতে চাই। তিনি বললেন, কি শর্ত? আমি বললাম, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তিনি বললেন, হে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি কি জানেন না যে, ইসলাম পূর্ববর্তী সব গুনাহকে মিটিয়ে দেয়’।
প্রকাশ থাকে যে, হাতের উপর হাত রাখাকে বাইয়াত বলে। মুছাফাহারও এটাই সুন্নতী তরীকা। মুছাফাহাও এক হাতের তালুর সাথে আরেক হাতের তালু মিলানোকে বলা হয়। এজন্য মুছাফাহারও সুন্নতী তরীকা সেটাই, যেটা উক্ত হাদীছ শরীফে উল্লিখিত হয়েছে। উল্লেখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ গুলির সমর্থনে কতিপয় হানাফী মাযহাবের তথা ফিক্বহে হানাফীর প্রসিদ্ধ ও প্রচলিত গ্রন্থ ‘হেদায়াতে’ আল্লামা মুরগীনানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেছেন,
ولا بأس بالمصافحة لأنه هو المتوارث-
অর্থ: ‘মুছাফাহা করাতে কোন দোষ নেই। কারণ এটা মশহূর মাসআলা’ (হেদায়া, ২য় খন্ড, পৃঃ ১৫৫ ‘অপছন্দ’ অধ্যায়)

দু হাতে মুছাফাহা করা সুন্নত:
মুছাফাহা এক হাতে হবে, না দুই হাতে? সে বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য ফক্বীহদের মতামতের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা জরূরী। ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি দুই হাতে মুছাফাহা করার হাদীছ শরীফখানা বুখারীতে উল্লেখ করেছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
عَلَّمَنِىْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم التَّشَهُّدَ وَكَفِّى بَيْنَ كَفَّيْهِ
অর্থ: ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে তাশাহহুদ শিক্ষা দিয়েছেন। তখন আমার হাত উনার দুই পবিত্র হাত মুবারক উনার তালু মুবারকে ছিল’।
পক্ষান্তরে, কিছু হানাফি আলিম ও মালিকী আলিম মত দিয়েছেন যে, দুই হাতে মুছাফাহা করা মুস্তাহাব; তা এভাবে যে, বাম কব্জির তালু অপর ব্যক্তির কব্জির পিঠের ওপর রাখা। এ পদ্ধতিতে মুছাফাহা করা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অভ্যাসগত সুন্নত।
হাম্মাদ বিন যায়েদ থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মুবারক রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে দুই হাতে মুছাফাহা করেছেন। (বুখারী শরীফ ‘তালীক’ (পৃষ্ঠা-১২০৬)

যাদের সাথে মুছাফাহা করা যাবেনা:
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত কোন পুরুষ পর নারীর সাথে এবং কোন নারী পর পুরুষের সাথে মুছাফাহা অনুমোদন করেনা। এটা সম্মানিত দ্বীন ইসলামে নাজায়েজ ও হারাম। পুরুষ ব্যক্তি পুরুষের সাথে আর নারীরা অন্য নারীদের সাথে মুছাফাহা করবে এটা ইসলাম অনুমোদিত ও স্বীকৃত। পর পুরুষ ও পরনারীর সাথে উদারতা ও আধুনিকতার নামে যেভাবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করছে, তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয় ও পরিত্যাজ্য তথা হারাম।
উম্মতের পূর্ববর্তী পরবর্তী সকল আলিম ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, পরনারীর সাথে পুরুষের মুছাফাহা করা হারাম। চার মাযহাবের সুপ্রতিষ্ঠিত দলীলাদির মাধ্যমে এটা হারাম হওয়ার প্রমাণ বহন করে। চার মাযহাবের কোন মাযহাবে পরনারীকে স্পর্শ করা, হাত স্পর্শ করে মুছাফাহা করা অনুমোদন ও সমর্থন করেনা। কারণ এটা পর্দার খেলাফ। সম্মানিত শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে বেগানা পুরুষ বেগানা মহিলার সাথে পর্দা করা ফরযে আইনের অন্তর্ভুক্ত। আর বেপর্দা হওয়া হারাম।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، أَنَّهُ سَمِعَ مُحَمَّدَ بْنَ الْمُنْكَدِرِ، قَالَ سَمِعْتُ أُمَيْمَةَ بِنْتَ رُقَيْقَةَ، تَقُولُ جِئْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فِي نِسْوَةٍ نُبَايِعُهُ فَقَالَ لَنَا ‏ إِنِّي لاَ أُصَافِحُ النِّسَاءَ‏ ‏.‏
অর্থ: উমায়মাহ বিনতু রুকাইকাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বাইয়াত হওয়ার উদ্দেশ্যে আমি কতক মহিলাসহ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাদের বললেন, আমি মহিলাদের সাথে মুছাফাহাহ (করমর্দন) করি না। (ইবনে মাজাহ শরীফ)
মুছাফাহা বা করমর্দন করার দুয়া:
يَغْفِرُاللهُ لَنَا وَلَكُمْ   উচ্চারণ: ইয়াগফিরুল্লাহু-লানা ওয়ালাকুম। অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাকে ও আমাকে ক্ষমা করুন।
কাজেই মুছাফাহা সম্পর্কে সুষ্পষ্ট দলীল রয়েছে এবং এটা খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। মহান আল্লাহ পাক তিনি পাক তিনি সকলকে ছহীহ সমঝ দান করুন। আমীন!
মুয়ানাকা বা কোলাকুলি করা খাছ সুন্নত:
মুয়ানাকা (معانَقَه) শব্দের অর্থ কোলাকুলি করা, বুকে বুক মিলানো। দীর্ঘদিন পর একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে পরস্পরে মুয়ানাকা বা কোলাকুলি করা সুন্নত। কেউ সফর থেকে এলে দীর্ঘদিন পর দেখা-সাক্ষাৎ হওয়ায় হযরত ছাহাবায়ে-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মুয়ানাকা বা কোলাকুলি করতেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশোদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حضرت عَائِشَةَ الضديقة عليها السلام قَالَتْ قَدِمَ زَيْدُ بْنُ حَارِثَةَ الْمَدِينَةَ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي بَيْتِي فَأَتَاهُ فَقَرَعَ الْبَابَ فَقَامَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عُرْيَانًا يَجُرُّ ثَوْبَهُ وَاللَّهِ مَا رَأَيْتُهُ عُرْيَانًا قَبْلَهُ وَلاَ بَعْدَهُ فَاعْتَنَقَهُ وَقَبَّلَهُ
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত, হযরত যায়েদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন পবিত্র মদিনা শরীফে এলেন তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার ঘরে ছিলেন। হযরত যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আমার ঘরে এলেন এবং দরজায় টোকা দিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের কাপড় অর্থাৎ চাদর সামলাতে সামলাতে উঠে গেলেন এবং হযরত যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে মুয়ানাকা কোলাকুলি করলেন এবং বুছা দিলেন।’ (তিরমিযী শরীফ : ২৭৩২)
হযরত শাবিহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ছাহাবায়ে-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পরস্পরে সাক্ষাতে মুছাফাহা করতেন আর দূরের সফর থেকে ফিরে এলে মুয়ানাকা বা  কোলাকুলি করতেন।’ (মুসন্নাফ ইবনে আবী শায়বা : ২৬২৩৪)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ لِلْحَسَنِ ‏ "‏ اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُ فَأَحِبَّهُ وَأَحِبَّ مَنْ يُحِبُّهُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ وَضَمَّهُ إِلَى صَدْرِهِ ‏
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইমামুছ ছানী সাইয়্যিদুনা হযরত হাসান আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে বলেন, হে মহান আল্লাহ্ পাক! আমি অবশ্যই ইমামুছ ছানী সাইয়্যিদুনা হযরত হাসান আলাইহিস সালাম উনাকে মুহব্বত মুবারক করি অতএব আপনিও উনাকে মুহব্বত মুবারক করুন এবং যারা উনাকে ভালোবাসে আপনি তাদেরও ভালোবাসুন। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি উনাকেনিজের বুক মুবারকের সাথে জড়িয়ে ধরেন। (বুখারী শরীফ ২১২২, ৫৮৮৪; মুসলিম শরীফ, আহমাদ শরীফ ৭৩৫০, ৮১৮০, ১০৫১০)
তাবরানী শরীফ উনার এক বর্ণনায় হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা একে অন্যের সাথে সাক্ষাত হলে মুছাফাহা করতেন আর কোন সফর থেকে এলে মুয়ানাকা বা কোলাকুলী করতেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কারো সাক্ষাতে মোছাফাহা করার পর নিজের হাতটি আগে সরাতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত সে ব্যক্তি নিজের হাত না সরাতো। (ফাতহুল বারীঃ ১১/৬১ পৃ.)


মুয়ানাকার সময় এই দোয়া পড়া সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত:
اَللَّهُمَّ زِدْمُحَبَّتِيْ لِلِّهِ وَرَسُوْلِهِ
উচ্চারণ:- আল্লাহুম্মা ঝিদ মুহাব্বাতী লিল্লাহি ওয়া রাসূলিহী। অর্থ: আয় বারে ইলাহী! মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্য আমার মুহব্বত বৃদ্ধি করে দিন। [জামিউস সুনান : ১৫৯]

মুয়ানাকা বা কোলাকুলী করার সঠিক পদ্ধতি:
মুয়ানাকা বা কোলাকুলী করার সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে- প্রথমে ডান গলা মিলাবে, অতঃপর বাম গলা মিলাবে অতঃপর পুনঃরায় ডান গলা মিলাবে। অর্থাৎ মুয়ানাকা তিনবার আলাদা করাই আফযল বা উত্তম। অনেকে একবার মুয়ানাকার কথা বলে থাকে তা সঠিক নয়। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
نهى رسول الله صلى صلى الله عليه وسلم عن الوتيرا.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছোট বেজোড় থেকে নিষেধ করেছেন। আর ছোট বেজোড় হচ্ছে এক। তাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে সকল কাজ বেজোড় সংখ্যক করতেন তা ৩, , ৭ বার করতেন। যেমন অযূতে প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করা, নামাযে রুকুর তাছবীহ সিজদার তাসবীহ পাঠ করা, ঈদগাহে খেজুর খেয়ে যাওয়া ইত্যাদী। তাই মুয়ানাকা বা কোলাকোলীও কমপক্ষে ৩ বার করাই আফযল বা উত্তম অর্থাৎ মুস্তাহাব সুন্নত।
উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্ট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করা খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। যারা ছোঁয়াচে বিশ্বাস করে পবিত্র ঈদের দিন বা অন্য যে কোনো সময় মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করতে নিষেধ করবে বা উক্ত আমল থেকে বিরত থাকবে তারা কুফরী করে মুরতাদে পরিণত হবে। তাছাড়া আমভাবে কোনো সুন্নতকে অবজ্ঞা বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে আক্বাইদের কিতাবে উল্লেখ আছে,
اهانة السنة كقر
অর্থ: পবিত্র সুন্নত উনাকে ইহনাত বা অবজ্ঞা করা কুফরী।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে উপরোক্ত কুফরী আক্বীদা থেকে হিফাজত করে পবিত্র সুন্নত মুতাবিক আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন!

x

No comments

ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য।

  ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য। ডাল খাওয়ার ফলে কলব প্রসারিত হয় এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়। পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উ...

Powered by Blogger.