সুন্নতি সুগন্ধি ধুপ ও চন্দনকাঠ। সুবহানাল্লাহ।

হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, শাহিদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইস্তিঞ্জার ঢেলা নিতে হয় বেজোড়, জামারায় পাথর মারা বেজোড়, সাফা মারওয়ায় সা‘ঈ বেজোড় এবং তাওয়াফ করতে হয় বেজোড়। সুতরাং তোমাদের কেউ যদি সুগন্ধি ধোঁয়া গ্রহণ করে সেও যেন বেজোড় লাগায়।(মুসলিম শরীফ , হাদীছ- ১৩০০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী শরীফ , হাদীছ-৯৩২১, সহীহ আল জামি‘ শরীফ , হাদীছ-২৭৭২)

ঘরে চন্দন কাঠ পোড়ানো এবং ধুপ জ্বালানোঃ

ঘরে ধুপ জ্বালানোর ব্যাপারে আমাদের জন্যে ইমাম মাসূম আলাইহিস সালাম উনার কাছ থেকে পরামর্শ এসেছে। কেননা, ধুপের প্রতিটি দানা জ্বালানোর ফলে একটি করে ফেরেস্তা মুক্ত হয়ে আল্লাহর গুণকীর্তন এবং আমাদের গৃহাভ্যন্তরে ইতিবাচক শক্তি সৃষ্টি করে। আর তা দুষ্ট জ্বীন ও শয়তানগুলোকে দূর করে দেয়। ধুপের ব্যবহার সমন্ধে হযরত ইমাম জাফর সাদিক্ব আলাইহিস সালাম-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছেনঃ

وقَد سُئِلَ عَنِ الحَرمَلِ وَاللُّبانِ فَقالَ: أمَّا الحَرمَلُ فَما يُقَلقَلُ لَهُ عِرقٌ فِي الأَرضِ ولا فَرعٌ فِي السَّماءِ، إلاّ وُكِّلَ بِهِ مَلَكٌ حَتّى يَصيرَ حُطاما ويَصيرَ إلَى ما صارَت؛ فَإِنَّ الشَّيطانَ لَيَتَنَكَّبُ سَبعينَ دارا دونَ الدّارِ الَّتي هُوَ فيها، وهُوَ شِفاءٌ مِن سَبعينَ داءً أهوَنُهُ الجُذامُ، فَلا تَغفُلوا عَنهُ.

“ধুপের হাজার দানার কোন শিকড় মাটির নিচে যায় না এবং এর কোন ডাল আসমানের দিকে উঠে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহপাক একজন ফেরেস্তা এর উপর নিয়োগ না করেন। আর এটা ঐ সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত তা শুষ্ক না হয়ে যায় অথবা অন্য কোন পরিবর্তন ঘটে। যে ঘরে ধুপের হাজার দানা ব্যবহার হয় শয়তান সেই ঘর থেকে সত্তর ঘর পর্যন্ত দূরে সরে যায়। এই ধুপ সত্তরটি রোগ আরোগ্য করে। এর সবচেয়ে ছোট রোগটি হচ্ছে কুষ্ঠ রোগ। অতএব, এ বিষয় থেকে অসচেতন থেকো না।” (তিব্বুল আয়িম্মা লি ইবনি বুস্তাম, পৃঃ নং ৬৮; মাকারিমুল আখলাক্ব, খণ্ড ১, পৃঃ নং ৪০৪, হাদীছ নং ১৩৭৭; বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৬২, পৃঃ নং ২৩৪, হাদীছ নং ২)।

তাছাড়াও এই ধুপ জ্বালানোর কারণে বদ নজর থেকে মুক্ত থাকা যায়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও এর বিভিন্ন প্রভাব ও উপকার উল্লেখ করেছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ এ বিজ্ঞান বসবাসের পরিবেশ থেকে নেতিবাচক শক্তি দূর করা এবং সেই পরিবেশকে বিভিন্ন প্রকার রোগ জীবানু থেকে মুক্ত রাখার ব্যাপারে ধুপ জ্বালানোর কথা বলেছে।

চন্দন কাঠ পোড়ানোর ব্যাপারেও ইমাম মাসূম আলাইহিস উনার কাছ থেকে পরামর্শ এসেছে। চন্দন কাঠের হৃদয়গ্রাহী সুগন্ধি আল্লাহর ফেরেস্তাদের আকৃষ্ট করে এবং ফেরেস্তাদের উপস্থিতির মাধ্যমে আমাদের বসবাসের পরিবেশকে পবিত্রতায় ভরে দেয়। তবে শর্ত হলো, এ পরিবেশকে যেন কবিরা গুনাহের মাধ্যমে দুষিত না করি এবং ফেরেস্তাদেরকে নিজেদের নোংরামীর দূর্গন্ধ দিয়ে দূরে সরিয়ে না দেই। চন্দন কাঠ পোড়ানোর ফলে এর অসামান্য প্রভাব চারদিকে ছড়িয়ে যায়। এর পরিণতিতে আল্লাহতায়ালার পবিত্র নামসমূহ ও যিকিরের মুওয়াক্কিলরা উপস্থিত হন। মনে রাখবেন, প্রতিটি যিকিরের একটি নির্দিষ্ট প্রভাব আছে। তাই, যখন যিকির করবেন সম্ভব হলে সেই স্থানে চন্দন কাঠ জ্বালাবেন।

বিহরুল আনওয়ার কিতাবে আছে যে,

كان النّبيّ(ص) يستجمر بالعود القماري

“নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্বিমার এলাকার চন্দন কাঁঠ জ্বালাতেন।”(বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৭৬, পৃঃ নং ১৪৩)।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরও ইরশাদ মুবারক করেন

عليكم بهذا العود الهندي فانّ فيه سبعه اشفیه

“এই ভারতীয় চন্দন কাঠের ব্যাপারে গাফেল থেকো না। কেননা, এতে সাতটি রোগের আরোগ্য নিহিত রয়েছে।”

(বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৭৬, পৃঃ নং ১৪৩)।