খাতুনে জান্নাত, উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার জীবনী মুবারক ১

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে রূহানী, জিসমানী সার্বিক দিক থেকে গভীরতম, মুবারক ও সুমহান গভীরতম, অবিচ্ছেদ্য নিছবত থাকার কারণেই হযরত উম্মাহতুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুন্ নিসায়িল আলামীন, আযওয়াজুম মুতাহহারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুসম্মানিতা আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালামগণকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে পূত-পবিত্রা থেকে পূত-পবিত্রাতমা করেছেন এবং পবিত্র কুরআন শরীফ উনার প্রতিটি আয়াত শরীফে, হরফে-হরফে, নুকতায় নুকতায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফতের সাথে সাথেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবেই হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ছানা ছিফত রয়েছে। (সুবহানাল্লাহ)

সমগ্র পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে যেমন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফতে গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্যপূর্ণ গভীর ও নিবিড় সুসম্পর্ক এবং নিছবত বিদ্যমান। অনুরূপভাবে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন নাস সালাম উনাদের সঙ্গেও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এক গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ, অকৃত্রিম এবং অবিচ্ছেদ্য অন্তর্নিহিত গভীর থেকে গভীরতম চিরস্থায়ী মুহব্বতের চিরন্তন বন্ধনে চির আবদ্ধ। কাজেই যেখানেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানেই হযরত উম্মাহতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অবিচ্ছেদ্যভাবে রয়েছেন। কেননা উনারা সুখে-দুঃখে সমআনন্দে, সমবেদনায়, খিদমতে সাহায্য-সহযোগিতায় এবং সহমর্মিতায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূত-পবিত্রতম অন্তরের গভীরতম মুবারক এক কোনে মহান স্থান করে নিয়েছেন। তা থেকে কস্মিনকালেও জুদায়ী নন। হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাহিননাস সালাম উনাদের মর্যাদা, মর্তবা, শান-মান ও বিশালতা কেউই পরিমাপ করতে কস্মিনকালে পারেনি এবং পারবেও না। কারণ উনাদের সাথে মহান রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মহান  আল্লাহ পাক উনার সাথে গভীর থেকে গভীরতম এক নিগুঢ় ও তাত্ত্বিক সুমহান অবিচ্ছেদ্য নিছবত রয়েছে। উনারা নিজেদের ধন-সম্পদ, টাকা- পয়সা, শ্রম-সাধনা, ত্যাগ-তিতীক্ষা এমনকি নিজের জানকেও উৎসর্গ করতে বিন্দু থেকে বিন্দুতম দ্বিধাগ্রস্থ হননি। বরং তা থেকে ছিলেন পূত-পবিত্র থেকে পবিত্রতম। যা কল্পনাতীত ও বর্ণনাতীত। এটাই ছিল উনাদের সুমহান আদর্শ, গুণ ও বৈশিষ্ট্য। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে কত যে গরক্ব ছিলেন, যা অন্য কোনো মানুষের পক্ষে থাকা সম্ভব নয়। এ কারণেই উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী এবং প্রশংসা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনিই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উল্লেখ করেছেন, “হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূত-পবিত্রা থেকে পূত-পবিত্রাতমা সহধর্মীনী আলাইহিননাস সালাম! আপনারা অন্যান্য কোনো রমনীগণের মত নন।” (পবিত্র সূরা  আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২)
কাজেই উল্লেখিত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত ও প্রকাশিত হলো যে, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, মর্তবা-মর্যাদা কত অধিক। উনাদের প্রশংসায় মহান আল্লাহ পাক তিনিই বলে দিলেন যে, উনারা শানে-মানে-মর্তবায়- মর্যাদায় বেমেছাল সম্মানের অধিকারীনী। (সুবহানাল্লাহ)। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মু’মিনগণ উনাদের প্রাণের চেয়েও নিকট থেকে নিকটতম আর হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন মু’মিনগণ উনাদের পূত-পবিত্রা থেকে পূত-পবিত্রাতমা মাতা।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মাধ্যমেও মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, মর্তবা-মর্যাদা তুলে ধরেছেন এবং সমস্ত জিন ও ইনসানের সম্মানিতা মাতা হিসেবে মুবারক লক্ববে ভুষিত করেছেন। এরূপ সমগ্র পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উনাদের শান-মান, মর্তবা-মর্যাদার আলোচনা করেছেন। আর এই শান-মান ও মর্যাদার আলোচনা করার কতটুকু ইল্মই বা আমাদের আছে! তদুপরি আমাদের নিজেদের ধন্য করার লক্ষ্যে তা আলোচনা করা আমাদের  প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও রমনীগণের জন্য ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। শুধু তাই নয়, এটাই  হচ্ছে মূল ইবাদত তথা উত্তম ইবাদত উনার শামীল এবং মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত, মা’রিফাত, নৈকট্য নিছবত, কুরবত ও নাযাত হাছিলের উত্তম পাথেয়।
অতএব, এখন থেকে পর্যায়ক্রমে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মুবারক জীবনচরিত আলোচনা  করা হবে ইনশাআল্লাহ তা’য়ালা।