হযরত উম্মাহাতুল মু'মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সংক্ষিপ্ত মুবারক পরিচিতি
النبى اولى بالـمؤمنين من انفسهم وازواجه امهاتهم
অর্থ : মু’মিনগণ উনাদের নিকট উনাদের জীবনের চেয়ে
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অতি প্রিয়। আর
উনার আযওয়াজুম
মুত্বহহারাহ আলাইহিন্নাস সালাম উনারা হচ্ছেন মু’মিনগণ উনাদের মাতা তথা উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম। (পবিত্র সূরা
আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ০৬)
অর্থাৎ, মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আযওয়াজুম মুত্বহহারাহ আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের কায়িনাতবাসীর মাতা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। যা দ্বারা উনাদের সীমাহীন মর্যাদা ও বুযুর্গী-সম্মানের
বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হয়েছে। সঙ্গত কারণেই
উনাদের সম্পর্কে
জানা, উনাদের সাওয়ানেহ উমরী মুবারক সম্পর্কে
অবহিত হওয়া সকলের জন্যই অত্যাবশকীয়।
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সংখ্যা
নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকম মত প্রদান করেছেন। তবে
সর্বাধিক মশহুর, গ্রহণযোগ্য, প্রণিধানপ্রাপ্ত এবং অধিক দলীল সম্মত মতে,
হযরত উম্মাহাতুল
মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সর্বমোট তের জন। নিম্নে উনাদের পরিচিতি মুবারক সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হলো।
১। উম্মুল
মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা
আলাইহাস সালাম
প্রথম উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতু বিনতে খুয়াইলিদ
আলাইহাস সালাম। মশহুর মতে,
আমুল ফীলের ১৫ বছর
পূর্বে তিনি সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। উনার বুযুর্গী,
সততা, একনিষ্টতা এবং আমানতদারীর দরুণ জাহিলিয়াতের সময়ও মানুষ
উনাকে ত্বহিরা লক্বব মুবারকে
অভিহিত করতো। তিনি
ছিলেন আরবের সবচেয়ে বড় এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পরপর দু’বার শাদী মুবারক হয়। কিন্তু দু’বারই তিনি বিধবা হন। অতপর,
আনুষ্ঠানিক
সম্মানিত নবুওওয়াত উনার প্রকাশের ১৫ বছর পূর্বে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ২৫
বছর বয়স মুবারকে
উনাকে শাদী মুবারক করেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নবুওওয়াত উনার ঘোষণার দশম বছরে
হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম ১৭ রমাদ্বান শরীফ ৬৫ বছর
বয়স মুবারকে পবিত্র বিছাল শরীফ
গ্রহণ করেন।
২। উম্মুল মু’মিনীন হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম
দ্বিতীয় উম্মুল মু’মিনীন হযরত সাওদা বিনতে যাময়া আলাইহাস
সালাম। হযরত সাকরান ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা
আনহু উনার সাথে হযরত সাওদা আলাইহাস
সালাম উনার প্রথম
শাদী মুবারক সংঘটিত হয়। উনারা দু’জন এক সাথেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণ করেন। এবং
আবিসিনায় হিজরত করেন। কিছুদিন সেখানে
অবস্থান করত উনারা
সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার মাঝে ফিরে আসেন। এবং সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার মধ্যেই হযরত সাকরান রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
আনুষ্ঠানিক সম্মানিত নবুওওয়াত উনার প্রকাশের দশম বছর হযরত
কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করলে
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুজরা শরীফ উনার আভ্যন্তরীন খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দেয়ার জন্য একজন
হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার মুবারক খিদমত উনার প্রয়োজন দেখা দেয়। এমতাবস্থায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম উনাকে শাদী মুবারক করেন।
(সীরাতে ইবনে হিশাম)
তিনি ২৩ হিজরীতে হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত কালে পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। (তারীখুল
খুলাফা)
৩। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম
হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনার কন্যা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন তৃতীয় উম্মুল মু’মিনীন। আনুষ্ঠানিক সম্মানিত নবুওওয়াত উনার প্রকাশের পঞ্চম বছর তিনি
সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার মাঝে
পবিত্র বিলাদত
শরীফ গ্রহণ করেন। হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পর হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মুবারক অনুরোধে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার
মুবারক নির্দেশে হিজরত উনার তিন
বছর পূর্বে নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে শাদী মুবারক করেন।
তখন উনার বয়স মুবারক ছয় বছর। প্রথম
হিজরীর ২১ শে
শাওয়াল শরীফ নয় বছর বয়স মুবারকে হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি মুবারক হুজরা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। এবং সুদীর্ঘ প্রায় সাড়ে নয় বছর মুবারক খিদমত
উনার আঞ্জাম দেন। উনার হুজরা শরীফ
উনার মধ্যেই
পবিত্র রওজা শরীফ স্থাপিত হয়। (ছীরাতে ইবনে হিশাম,বুখারী শরীফ)
হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে
৫৮ হিজরীর ১৭ই রমাদ্বান শরীফে ৬৭ বছর বয়স মুবারকে তিনি
পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
জান্নাতুল বাকীতে
উনার রওজা শরীফ স্থাপিত হয়েছে।
৪। উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম
হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ বা কন্যা
উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন চতুর্থ উম্মুল মু’মিনীন। আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত ঘোষণার পাঁচ বছর পূর্বে তিনি
মক্কা শরীফে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন।
প্রাথমিক সময়ে
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণকারী হযরত খুনাইস ইবনে হুযাইফা আস সাহমী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম উনার প্রথম শাদী মুবারক সংঘটিত হয়।
বদরী ছাহাবী হযরত খুনাইস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বদর উনার
জিহাদে আহত হন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে
তিনি সম্মানিত
মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। (বুখারী শরীফ, তাহযীবুত তাহযীব)
উহুদ যুদ্ধের পর তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম
উনাকে শাদী মুবারক
করেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে মুহাদ্দিছগণ ৬০ খানা পবিত্র
হাদীছ শরীফ সংরক্ষণ করার অবকাশ
পেয়েছেন। আমিরুল
মু’মিনীন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে ৪৫ হিজরীর শা’বান মাসে সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মধ্যে ৬৩ বছর হায়াত মুবারকে তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। সম্মানিত জান্নাতুল বাকীতে উনার রওজা শরীফ স্থাপিত হয়েছে।
(সিয়ারু আলামিন নুবালা, উসদুল গবা)
৫। উম্মুল মু’মিনীন হযরত যাইনাব বিনতে খুযাইমা আলাইহাস সালাম
কুরাইশ বংশের মুদ্বার গোত্রের বণী আমের শাখায় পবিত্র বিলাদত
শরীফ গ্রহণকারিণী উম্মুল মু’মিনীন হযরত যাইনাব বিনতে খুযাইমা আলাইহাস সালাম। ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণকারিণী মহিলা উনাদের মধ্যে তিনি অন্যতমা। সর্বাধিক
প্রসিদ্ধ মতে, হযরত যাইনাব বিনতে খুযাইমা আলাইহাস সালাম উনার সাথে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শাদী মুবারক হয়। তিনি
তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসে সংঘটিত
উহুদ উনার যুদ্ধে
মুবারক শাহাদাত বরণ করেন। পরবর্তীতে চতুর্থ হিজরীর শুরুতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয় সাল্লাম তিনি উনাকে শাদী মুবারক করেন। (মুসতাদরেকে
হাকীম)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত যাইনাব বিনতে খুযাইমা আলাইহাস
সালাম তিনি নূরে মুজাসসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
হুজরা শরীফ উনার
মধ্যে দুই মাস মতান্তরে তিন মাস অবস্থান করেন। অতপর,
তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। হিজরত
উনার পরে সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার
মাঝে পবিত্র বিছাল
শরীফ গ্রহণকারী মহিলা উনাদের মধ্যে তিনি প্রথম। (তিবরানী শরীফ)
৬। উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামাহ আলাইহাস সালাম
কুরাইশ বংশের বনী মাখযুম গোত্রে উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু সালামাহ
আলাইহাস সালাম
তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুধ ভাই এবং ফুফাতো ভাই হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে প্রথম শাদী মুবারক সংঘটিত হয়। সম্মানিত দ্বীন
ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগেই উনারা
সম্মানিত দ্বীন
ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত আবু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উহুদ উনার যুদ্ধে আহত হন। অতঃপর দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকার পর চতুর্থ হিজরীর জুমাদাল উখরা মাসে তিনি
শাহাদাত মুবারক বরণ করেন। আর সেই সময়
হযরত উম্মু
সালামাহ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন হামিলা। অতপর উনার কন্যা হযরত যাইনাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করার পর চতুর্থ হিজরীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি উনাকে শাদী মুবারক করেন। উনার হুজরা শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র আয়াতে তাত্বহীর নাযিল হয়। উনার সাথে হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম উনার সাক্ষাত মুবারক হয়। (বুখারী
শরীফ, তিরমিযী শরীফ,আসাহহুস সিয়ার)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামাহ আলাইহাস সালাম
উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণের সময়কাল নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে।
তবে মশহুর মতে, তিনি ৬৩ হিজরীতে পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। জান্নাতুল বাকীতে উনার রওজা শরীফ স্থাপিত হয়েছে। (আসমাউস সাহাবা ওয়ার রুয়াত, তারীখুত ত্ববারী)
৭। উম্মুল মু’মিনীন হযরত জুয়াইরিয়া আলাইহাস সালাম
পঞ্চম হিজরীতে নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বনু মুস্তালিক যুদ্ধ
পরিচালনা করেন। এ যুদ্ধে বনু
মুস্তালিক পরাজিত
হয়। প্রচুর পরিমান গণিমত অর্জিত হয়। এছাড়া ছয়শত লোকের অধিক বন্দী হয়। উম্মুল মু’মিনীন হযরত জুয়াইরিয়া আলাইহাস সালাম উনার
প্রথম স্বামী মাসাকি বিন সফওয়ান এ যুদ্ধে
মৃত্যুবরণ করে। আর তিনি বন্দীদের
অন্তর্ভুক্ত হন।
তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে
নিজকে মুক্ত করার আরযী করেন। তখন
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে আজাদ করে দিয়ে শাদী মুবারক করেন।
তিনি হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার
খিলাফতকালে সম্মানিত মদীনা শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। জান্নাতুল বাকীতে উনার রওজা শরীফ স্থাপিত হয়েছে। (মুসলিম শরীফ,আল ইসাবা)
৮। উম্মুল মু’মিনীন হযরত যাইনাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে
হযরত যাইনাব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম তিনি বিশেষ
খুছুছিয়ত মুবারকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত।
কুরাইশ বংশের
খুযাইমা গোত্রে উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ। উনার পিতা জাহাশ ইবনে রিয়াব। আর উনার মাতা হযরত উমায়মা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফুফু। সেই অনুযায়ী তিনি হলেন ফুফাতো বোন। তিনি প্রাথমিক যুগেই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণ করেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আজাদকৃত পালক সন্তান হযরত যায়িদ বিন হারিছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি উনাকে শাদী মুবারক করেন। বেশ
কিছুদিন উনারা
সংসার করলেও হযরত যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এক সময় উনাকে তালাক প্রদান করেন। নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
পঞ্চম হিজরীতে হযরত যাইনাব বিনতে
জাহাশ আলাইহাস
সালাম উনাকে শাদী মুবারক করেন।(আল ইস্তিয়াব)
হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে তিনি
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
জান্নাতুল বাকীতে উনার পবিত্র রওজা
শরীফ স্থাপিত
হয়েছে। (আল ইসাবা, সিয়ারুস সাহাবিয়ত, আল ইস্তিয়াব)
৯। উম্মুল মু’মিনীন হযরত রাইহানা আলাইহাস সালাম
পঞ্চম হিজরীতে আহযাব বা খন্দকের জিহাদ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে
ইহুদী গোত্র বনু কুরাইযা কুরাঈশদেরকে সাহায্য করে।
তাই মহান আল্লাহ পাক বনু কুরাইযা
জিহাদের মুবারক
নিদের্শ প্রদান করেন। জিহাদের সর্বশেষ ফায়সালা অনুযায়ী তাদের সমস্ত পুরুষকে হত্যা করা হয়। বিপুল পরিমান সম্পদ গনীমত হিসেবে আসে। তখন যুদ্ধবন্দি হিসেবে হযরত রাইহানা
আলাইহাস সালাম তিনি আসেন। হাকাম নামীয়
এক ব্যক্তির সাথে
উনার প্রথম বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে বনু কুরাইযা যুদ্ধে নিহত হয়। (সীরাতে ইবনে হিশাম)
নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্রাম
তিনি হযরত রাইহানা
আলাইহাস সালাম উনাকে পবিত্র ইসলাম উনার দাওয়াত মুবারক প্রদান করেন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করলে উনাকে উম্মুল মু’মিনীন হিসেবে নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
কবুল করেন। তিনি
ছিলেন অত্যাধিক খুব ছুরত মুবারকের অধিকারিনী। কয়েক বছর মুবারক খিদমতের আনযাম প্রদান করেন। অতপর তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। জান্নাতুল বাকী শরীফে উনার রওযা শরীফ
স্থাপিত হয়েছে। (আর রহীকিল মাখতুম)
১০। উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু হাবীবা আলাইহাস সালাম
কাতিবে ওহী,
আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বৈমাত্রিয় বোন উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু হাবীবা আলাইহাস সালাম।
বনী আসাদ গোত্রের উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশের
সঙ্গে উনার প্রথম বিবাহ হয়।
সম্মানিত ইসলাম
উনার প্রাথমিক যুগে তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হাবশায় হিজরত করেন। সেখানে উনার স্বামী উবাইদুল্লাহ মুরতাদ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। অতপর তিনি হাবশায় অবস্থান
করতে থাকেন। মুবারক স্বপ্নে তিনি
উম্মুল মু’মিনীন হওয়ার বিষয়টি অবগত হন। পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য শাদী মুবারকের পয়গাম প্রেরণ করেন। যা বাদশাহ
নাজ্জাশী বাস্তবায়ন করেন। সেখানে
অবস্থানরত
মুসলমানগণ উনাদেরকে সাক্ষী রেখে বাদশা নিজেই বিবাহ পড়ান এবং মোহর আদায় করেন। (উসদুল গাবা, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, উসদুল গাবা)
সপ্তম হিজরীতে উম্মুল মু’মিনীন,
হযরত উম্মু হাবীবা
আলাইহাস সালাম তিনি হাবশা হতে মদীনা শরীফে হিজরত করেন। সেই
বছরেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার ওয়ালিমা মুবারক ও উরুস মুবারক সম্পন্ন করেন। (মুসনাদে আহমদ,শরহুল মাওয়াহিব)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু হাবীবা আলাইহাস সালাম
উনার নিকট হতে মুহাদ্দিছগণ ৬৫ খানা পবিত্র হাদীছ শরীফ
সংকলন করতে সক্ষম হয়েছেন। হযরত
মুয়াবিয়া
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে তিনি মদীনা শরীফে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। জান্নাতুল বাকীতে উনার রওজা শরীফ স্থাপিত হয়েছে। (আল ইসাবা)
১১। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছাফিয়্যা আলাইহাস সালাম
হযরত হারুন আলাইহিস সালাম উনার অধঃস্তন সন্তান উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছাফিয়্যা বিনতে হুয়াঈ আলাইহাস সালাম।
ইহুদী গোত্র বনী নাযীরে তিনি বিলাদত
শরীফ গ্রহণ করেন।
সাল্লাম ইবনে মাশকামের সাথে উনার প্রথম শাদী সংঘটিত। সাল্লাম তালাক দিলে খাইবারের কামূস দূর্গের নেতা কিনানা ইবনে আবীলের সাথে উনার শাদী সংঘটিত হয়। সপ্তম হিজরীতে
খাইবার জিহাদে কামূস দূর্গের পতন ঘটে।
কিনানা ইবনে আবীল
নিহত হয়। (আসাহহুস সিয়ার)
খাইবার যুদ্ধে যুদ্ধবন্দী হিসেবে উনাকে আনা হয়। তখন
আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে উম্মুল মু’মিনীন হিসেবে গ্রহণ করেন। খাইবার হতে মদীনা শরীফে ফিরার
পথে ‘সাহবা’
নামক স্থানে উনার শাদী মুবারকের ওয়ালীমার আয়োজন করা হয়। আর
সেখানেই উনার মুবারক উরুস সংঘটিত
হয়। (বুখারী শরীফ, আসাহহুস সিয়ার)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছাফিয়্যা আলাইহাস সালাম উনার
কাছ থেকে মুহাদ্দিছগণ দশ খানা হাদীছ শরীফ সংকলনের অবকাশ
পেয়েছেন। তিনি আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফতকালে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। জান্নাতুল বাকীতে উনার রওজা শরীফ
স্থাপিত হয়েছে। (মাজমাউল ফাওয়ায়েদ)
১২। উম্মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম
ষষ্ঠ হিজরীতে নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম
উনার দাওয়াত দিয়ে মিসরে মুবারক পয়গাম
প্রেরণ করেন।
মিসরের শাসক মুকাওকিস মুসলমান প্রতিনিধি উনাকে অত্যধিক তা’যীমের সহিত গ্রহণ করেন। মুকাওকিস নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মুবারক খিদমতে মূল্যবান অনেক দ্রব্য
সামগ্রী, হাদিয়া করেন। পাশাপাশি হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনাকেও হাদিয়া স্বরুপ প্রেরণ করেন। (আসাহহুস
সিয়ার)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম
তিনি নাসারা ধর্মের অনুসারী ছিলেন। মদীনা শরীফে তাশরীফ
মুবারক গ্রহণ করে পবিত্র দ্বীন ইসলাম
উনাকে গ্রহণের
আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। তখন নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি উনাকে উম্মুল মু’মিনীন হিসেবে গ্রহণ করেন। নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত
আওলাদ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম
তিনি নবম হিজরীতে
হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফে বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। যিনি সতের বা আঠারো মাস বয়স মুবারকে বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
আমীরুল মু’মিনীন,
খলীফাতুল মুসলিমীন
হযরত ফারুকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিলাফত কালে ১৬ হিজরীতে উম্মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ
করেন। জান্নাতুল বাকীতে উনার রওজা
শরীফ স্থাপিত
হয়েছে।
বলা বাহুল্য যে,
অনেক ঐতিহাসিক
উম্মুল মু’মিনীন হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম উনাকে উম্মুল মু’মিনীন হিসেবে গণ্য না করে উম্মে ওয়ালাদ
হিসেবে গণ্য
করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! বিষয়টি অত্যন্ত আপত্তিকর। কেননা, তা অনেক ছহীহ হাদীছ শরীফ অস্বীকারের
নামান্তর।
১৩। উম্মুল মু’মিনীন হযরত মাইমূনা আলাইহাস সালাম
কুরাঈশ বংশে উম্মুল মু’মিনীন হযরত মাইমূনা বিনতিল হারিস আলাইহাস
সালাম তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। পরপর দু’বার উনার বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু
দু’বারই তিনি বিধবা হন। সপ্তম হিজরীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
উমরা আদায় করার জন্য মক্কা শরীফে
ইহরাম মুবারক বাধা
অবস্থায় তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। তখন তিনি হযরত মাইমূনা আলাইহাস সালাম উনাকে উম্মুল মু’মিনীন হিসেবে গ্রহণ করত আক্বদ মুবারক সম্পন্ন করেন। অতপর, মদীনা শরীফে ফিরার পথে ‘সারফ’
নামক স্থানে উনার শাদী মুবারকের ওয়ালিমা এবং উনার উরুস
মুবারক সংঘটিত হয়। (আসাহহুস সিয়ার,
বুখারী শরীফ)
উম্মুল মু’মিনীন হযরত মাইমূনা আলাইহাস সালাম উনার
কাছ থেকে মুহাদ্দিছগণ ৭৬ খানা হাদীছ শরীফ সংকলনের অবকাশ
পেয়েছেন। আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খিলাফত
কালে তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
(তাহবীবুত তাহযীব)
মূলত: হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মুবারক
শান, মুবারক খুছূছিয়ত, মুবারক হুলিয়া, মুবারক চাল-চলন এবং মুবারক সাওয়ানেহে
উমরী উপলব্ধি করতে হলে বর্তমান সময়ে রাজারবাগ
শরীফ উনার হযরত উম্মুল উমাম
আলাইহাস সালাম
উনার ছোহবত মুবারক উনার কোনো বিকল্প নেই। কেননা,
তিনি হলেন নকশায়ে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম।
মহান আল্লাহ পাক মুসলিম মিল্লাতকে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মুবারক শান উপলব্ধি করে
উনাদের ব্যাপারে হুসনে যন পোষণ করত:
উনাদের হক্ব
হাক্বীক্বীভাবে আদায় করার তাওফীক দান করুন। (আমীন)
No comments