নাসেখ ও মানসুখ সম্পর্কিয় আলোচনাঃ ১
উছূলে তাফসীর শাস্ত্রে ناسخ (নাসেখ) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাফসীরবিদ ও হাদীছবিদগণ তথা সকল ইমাম-মুজতাহিদগণ বলেন, ناسخ (নাসেখ) منسوخ (মানসুখ)-এর জ্ঞানার্জন ব্যতীত কারো জন্য কুরআন শরীফের তাফসীর, হাদীছ শরীফের তাশরীহ এবং ফতওয়া প্রদান করা বৈধ নয়।
যেমন, হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে, হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম এক বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন,
اتعرف الناسخ والمنسوخ قال لا قال على رضى الله تعالى عنه هلكت واهلكت.
অর্থঃ- “তুমি কি নাসেখ এবং মানসুখের পরিচয় করতে পার? বিচারক বললো না, তখন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম বললেন, তুমি নিজেও ধ্বংস তথা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছো এবং অন্যকেও ক্ষতিগ্রস্থ করেছো।” (নাসিখূল কুরআন ১ম খ- ১০৫ পৃষ্ঠা)
এ সম্পর্কে ‘নাওয়াসিখুল কুরআন’ নামক কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায় আরো বর্ণিত আছে যে,
لذا كان السلف الصالح يرى معرفة الناسخ والمنسوخ شرطا اهلية المفسر للتفسير والمحدث للحديث.
অর্থঃ- “এ কারণে সলফে ছলিহীন তথা প্রথম যুগের ইমাম-মুজতাহিদগণ, হাদীছ ও তাফসীর শাস্ত্রবিদগণের জন্য নাসেখ ও মানসূখের পরিচয়ের জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে শর্তারোপ করেছেন।” উক্ত কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায় আরো বলা হয়,
وقد كان الامام على بن ابى طالب وعبد الله بن عمر وعبد الله بن عباس رضى الله تعالى عنهم لايرضون لاحد ان يتحدث فى الدين الا اذا كان عارفا عالما بالناسخ والمنسوخ من القران.
অর্থাৎ- “ইমামুল মু’মিনীন হযরত আলী ইবনে আবূ তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমাগণ এমন ছিলেন যে, দ্বীনের ব্যাপারে কেউ কোন মতামত পেশ করলে তাতে তাঁরা কোন প্রকার সম্মতি দিতেন না, তবে হ্যাঁ যদি সে ব্যক্তি পবিত্র কুরআনের নাসেখ ও মানসুখের ব্যাপারে পরিচয় করতে পারতো এবং জ্ঞান রাখতো, তাহলে তাতে তাঁরা রায় পেশ করতেন।”
এ প্রসঙ্গে আরো বর্ণিত আছে যে,
وقد جاء فى الأثر عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما بأنه كان يفسر قوله تعالى ومن يؤت الحكمة فقد اوتى خيرا كثيرا بان الحكمة معرفة ناسخ القران ومنسوخه ومحكمه و متشابهه و مقدمه ومؤخره وحلاله وحرامه وأمثاله.
অর্থঃ- “আছার নামক কিতাবে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি তথায় আল্লাহ্ পাক-এর কালাম পাক-এর من يؤت الحكمة فقد اوتى خيرا كثيرا “(অর্থঃ আল্লাহ পাক যাকে হিক্মত বা প্রজ্ঞা দান করেছেন, তাঁকে অনেক কল্যাণ দান করেছেন।)”
এ আয়াত শরীফের মধ্যে حكمة এর অর্থ করেছেন এভাবে যে, ‘হিকমত’ হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফের নাসেখ ও মানসুখ, আয়াতে মুহকামা এবং মুতাশাবিহা, মুকাদ্দিমা, মুয়াখ্খারা, হালাল, হারাম এবং উপমাসমূহ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা” ‘নাসেখ ও মানসূখের’ জ্ঞানার্জন কতটুকু জরুরী সে সম্পর্কে নাসিখুল কুরআন নামক কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায় আরো বলা হয়েছে,
اوجب على العلماء وعلى المتعلمين على كافة المسلمين من علم الناسخ القران ومنسوخه.
অর্থঃ- “প্রত্যেক আলিম, মুতায়াল্লিম (ইল্ম অন্বেষণকারী) এবং সমস্ত মুসলমানগণের জন্য পবিত্র কুরআন শরীফের নাসেখ ও মানসুখের (ফরয পরিমাণ) জ্ঞানার্জন আবশ্যক।”
নাসেখ বা শারেহ-মানসূখ বা মাশ্রূহ-এর সংজ্ঞা, প্রকারভেদ এবং লুগাতী ও ইছতিলাহী অর্থ ناسخ (নাসিখুন) ইস্মে ফায়িল এর একবচন। نسخ (নাস্খুন) মূলধাতু থেকে নির্গত। যার লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, বদল করা, দূরীভূত করা, স্থলাভিষিক্ত করা, বাতিল করা, পরিবর্তণ করা, চুড়ান্ত ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি।
তবে ناسخ (নাসিখুন) শব্দের অর্থ হচ্ছে ব্যাখাকারী। منسوخ (মানসূখুন) শব্দটি অনুরূপ نسخ (নাস্খুন) মূলধাতু থেকে উদগত। যার লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো, বদল করা, দূরীভূত করা, স্থলাভিষিক্ত করা, বাতিল করা, পরিবর্তণ করা, চুড়ান্ত ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি। তবে منسوخ (মানসুখ)-এর অর্থ হচ্ছে ‘যা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, নাসখুন-এর অর্থ বিভিন্ন লুগাতে এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, النسخ (আন্ নাসখু) অর্থ الازالة (আল ইযালাহ) অর্থাৎ দূরীভূত করা। (আল ইতকান ৭৩২ পৃষ্ঠা, লিসানুল আরব, আল কামুস ইত্যাদি)
No comments