Header Ads

Islamic Quotes Urdu Facebook Cover. QuotesGram

কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে শবে বরাতের কোন অস্তিত্ব নেই- এ বক্তব্য সম্পূর্ণ জিহালতপূর্ণ ও গুমরাহীমূলক, যা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত -------- পর্ব -> (২)

No photo description available.



>>> কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই “শবে বরাত” প্রমাণিতঃ

শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক স্বীয় কুরআন শরীফ-এ সূরা ‘আদ দোখান’ এর ৩-৪ নম্বর আয়াত শরীফে ليلة المبارك (বরকত পূর্ণ রাত) হিসেবে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

(১)

انا انزلناه فى ليلة مباركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক বরকতপূর্ণ রাত্রিতে নাজিল করেছি | অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি | নিশ্চয় আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপূর্ণ কাজসমূহের বন্টন করা হয় তথা বন্টনের ফায়সালা করা হয় |”
(সূরা আদ দোখান/৩-৪)

>>> উক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা অনুসরনীয় মুফাসসিরীনে কিরামগণ শবে বরাতকেই বুঝিয়েছেনঃ

ليلة مباركة দ্বারা বিশ্ববিখ্যাত ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা এবং হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন-

(২)

هى ليلة النصف من شعبان وسمى ليلة الرحمة والليلة المباركة وليلة الصك
অর্থ: “লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান তথা অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত) কে বুঝানো হয়েছে যেমন ليلة الرحمة (লাইলাতুর রহমত) তথা রহমতের রাত, ليلة المباركة (লাইলাতুল মুবারাকাতু) তথা বরকতের রাত | ليلة الصك (লাইলাতুছ ছেক) ভাগ্য লিপিবদ্ধকরণের রাত তথা ভাগ্য রজনী |”
আর ليلة مبارك (বরকতপূর্ণ রাত) দ্বারা শবে বরাত তথা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে তার যথার্থ প্রমাণ বহন করে তার পরবর্তী আয়াত শরীফের يفرق (বন্টন করা হয়) শব্দ দ্বারা | কেননা তাফসীর জগতের সকল তাফসীরে সমস্ত মুফাসসীরীনে কিরাম উনারা يفرق শব্দের তাফসীর করেন يكتب (বন্টন বা নির্ধারণ করা হয়) يبرم (বাজেট করা হয়) “ فيصله ” (নির্দেশনা দেয়া হয় বা ফায়সালা করা হয়) ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে | কাজেই يفرق শব্দের অর্থ ও তার ব্যাখ্যার দ্বারা আরো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠল যে, ليلة المباركة দ্বারা ليلة النصف من شعبان অর্ধ শা’বানের রাত, বা শবে বরাত তথা ভাগ্য রজনীকে বুঝানো হয়েছে | যেই রাতে সমস্ত মাখলুকাতের ভাগ্যগুলো সামনের এক বৎসরের জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়, আর সেই ভাগ্য লিপি অনুসারে রমাদ্বান মাসে ليلة القدر বা শবে ক্বদরে তা চালু করা হয় | এ জন্য
ليلة النصف من شعبان
অর্ধ শাবানের রাতকে ليلة التجويز (নির্ধারণের বা বৈধকরণের রাত) এবং ليلة القدر কে ليلة التنفيذ (নির্ধারিত ফয়সালা কার্যকরী করার রাত বা বৈধকরণ বিষয়ের কার্যকরীকরণের রাত) বলা হয় |
(তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে খাযেন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী ও রুহুল বায়ান)

# ليلة مباركة এর ব্যাখায় বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর, তাফসীরে মাযহারী এর ৮ম খণ্ডের ৩৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৩)

قال عكرمة هى ليلة النصف من شعبان يبرم فيه امر السنة وينسخ الاحياء من الاموات فلا يزاد فيهم ولا ينقص منهم احد. روى البغوى عن محمد بن الميسرة بن الاخفس ان رسول الله صلى عليه وسلم قال يقطع الاجال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكح ويولد له ولقد اخرج اسمه فى الموتى.
وروى ابو الضحى عن ابن عباس ان الله يقضى الاقضية فى ليلة النصف من شعبن ويسلمها الى اربابها فى ليلة القدر.
অর্থ: “প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, (সূরা দুখানের ৩ নম্বর আয়াত শরীফ) ليلة مباركة হচ্ছে ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের রাত | এ রাত্রে সারা বৎসরের কাজ কর্মের ফায়সালা করা হয় কতজন জীবিত থাকবে ও কতজন মারা যাবে তারও ফায়সালা করা হয় | অতঃপর এ ফায়ছালার থেকে কোন কিছু বেশি করা হয় না এবং কোন কমতিও করা হয় না | হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেছেন, হযরত মুহম্মদ ইবনে মাইসারা ইবনে আখফাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর থেকে | তিনি বলেন, ‘রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, শা’বান মাসে পরবর্তী শা’বান মাস পর্যন্ত মৃত্যুর ফায়ছালা করে দেয়া হয় | এমনকি লোকেরা যে বিবাহ করবে, সেই বৎসর তার থেকে কত জন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তার তালিকা এবং তার মৃত্যুর তালিকাও প্রস্তুত করা হয় ওই বৎসরে অর্ধ শাবানের রাতে তথা শবে বরাতে |’
আবুদ্বহা এর বর্ণনায় এসেছে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন, শা’বানের মাঝামাঝি অর্থাৎ ১৫ই শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে আল্লাহ্ পাক সমস্ত কিছুই ফায়ছালা করেন, আর রমাদ্বানের ক্বদর রাতে (শবে ক্বদরে) সেই ফায়ছালার তালিকা (কপি) বাস্তবায়ন করার জন্য বাস্তবায়নকারীদের কাছে অর্পণ করা হয় |”

# “তাফসীরে মাযহারী” কিতাবের ৮ম খণ্ডের ৩৬৭ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

(৪)

انها ليلة النصف من شعبان .... وما روى عن القاسم بن محمد عن ابيه او عمه عن جده عن رسول الله صلى الله عليه وسلم انه قال ينزل الله جل ثناؤه ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لكل نفس الا انسانا فى قلبه شحناه او مشركا بالله.
অর্থ: (অনেকেই বলেছেন ليلة مباركة তথা বরকতপূর্ণ রাতই হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত (১৫ই শা’বানের রাত) এবং এ রাতের বুযূর্গী সম্পর্কে হাদীছ শরীফও বর্ণিত আছে, হযরত মুহম্মদ ইবনে কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর পিতার মাধ্যমে অথবা তাঁর চাচার মাধ্যমে | তাঁর পিতা অথবা চাচা তাঁর পিতামহ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি আবার রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন | আর হযরত রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন অর্ধ শা’বানের (১৫ই শা’বান) রাতে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন | তবে ওই সকল লোকদের ক্ষমা করেন না যাদের অন্তরে হিংসা রয়েছে অর্থাৎ হিংসুকদের এবং আল্লাহ্ পাক-এর সাথে শরীককারীদের তথা মুশরিকদেরকে ঐ অর্ধ শাবান তথা শবে বরাতে ক্ষমা করেন না |
(তাফসীরে বাগবী)

# বিশ্বখ্যাত তাফসীর তাফসীরে মাদিরক-এ ليلة المباركة এ আয়াতাংশের তাফসীরে উল্লেখ আছে-

(৫-৬)

وهذه الليلة مفرق كل أمر حكيم ومعنى يفرق يفصل ويكتب كل أمر من ارزاق العباد واجالهم وجميع أمورهم من هذه الليلة الى ليلة القدرالتى تجى فى السنت المقبلة
অর্থ: ليلة مباركة (লাইলাতুম মুবারাকাহ) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবেবরাত এবং এই মুবারকময় রাতে সকল প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়সালা করা হয় | আয়াত শরীফ-এর يفرق শব্দের অর্থ হচ্ছে يفصل (ইউফাছছালু) তথা ফায়ছালা করা, এবং يكتب (ইউকতাবু) তথা লেখা হয় প্রত্যেক বান্দাদের রিযিক বা জীবিকাসমূহ | তাদের মৃত্যুর সময় সীমাও লেখা হয় এবং সমস্ত বিষয়ের তালিকা লেখা হয় এই মুবারক রাতে তথা শবে বরাতে | আর ক্বদর রাতে তথা মর্যাদাবান রাতে ওই সমস্ত ফায়সালাকৃত বিষয়গুলো চালু করা হয় তথা কার্যকরী করা হয় যা সামনের এক বৎসর পর্যন্ত চলতে থাকে |

(তাফসীরু হাশিয়াতিল খাযিন ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১১২)

উল্লেখ্য যে, যদিও কেউ কেউ ليلة مباركة দ্বারা ليلة القدر বুঝে থাকেন মূলত তা নয়, বরং ليلة القدر দ্বারা শবে বরাতের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন বা কার্যকরী করার রাতকেই বুঝানো হয়েছে |

# যেমন এ প্রসঙ্গে সূরা ক্বদরের তাফসীরে, বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর, তাফসীরে খাযিন ৪র্থ খণ্ডের ৩৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৭)

فقيل له (للحسين بن الفضل) فما معنى ليلة القدر قال سوق المقادير الى المواقيت وتنفيذ القضاء المقدر.
অর্থ: “হযরত হুসাইন ইবনে ফযল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করা হললাইলাতুল ক্বদর’-এর অর্থ কি? তিনি উত্তরে বলেন, পূর্বে স্থিরীকৃত সিদ্ধান্তসমূহ নির্ধারিত সময়ের দিকে পরিচালনা করা এবং পূর্ব নির্ধারিত সিদ্ধান্তের যথার্থ বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে ক্বদর রাতের অর্থ |”

কাজেই উল্লিখিত দলীলের ভিত্তিতে সুস্পষ্ট হয়ে উঠল যে, অর্ধ শা’বানের রাত হচ্ছে ليلة التجويز তথা বন্টনের বা সিদ্ধন্তের রাত | আর লাইলাতুল ক্বদর হচ্ছে ليلة التنفيذ তথা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের রাত |

১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাত সম্পর্কে বিশ্ব বিখ্যাত ও সুপসিদ্ধ তাফসীর “তাফসীরুল বাগবী”-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(৮)
(انا انزلناه فى ليلة المباركة) ..... وقال اخرون هى ليلة النصف من شعبان اخبرنا عبد الواحد المليحى انا ابو منصور السمعانى ثنا ابو جعفر الريانى ثنا حميد بن زنجوية ثنا الا صبغ بن الفرج اخبرنى ابن وهب اخبرنى عمرو بن الحارث ان عبد الملك بن عبد الملك حدثه ان ابن ابى ذئب حدثه عن القاسم بن محمد عن ابيه او عمه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ينزل الله جل ثناءه ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لكل نفس الا انسانا فى قلبه شحناء او مشركا بالله (فيها) اى فى الليلة المباركة (يفرق) اى يفصل (كل امر حكيم)
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ এক বরকতময় রাত্রিতে নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি | অন্যান্য অসংখ্য, মুফাসসিরীনে কিরাম তাঁরা বলেন, লাইলাইতুম মুবারাকা তথা বরকতপূর্ণ রাত হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত (শবে বরাত) এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল ওয়াহিদ মালীহী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আবু মানছুর সাময়ানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন, হযরত আবু জাফর রাইইয়ানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত হুমাইদী ইবনে যানজুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আছবাগ ইবনে ফারজ রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেন ইবনে ওহাব, তিনি বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন আমর ইবনে হারিছ, অবশ্য যা বর্ণনা করেছেন আব্দুল মালেক ইবনে আব্দুল মালেক | তিনি ইবনে আবু যিব, তিনি কাসিম ইবনে মুহম্মদ উনার থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে কিংবা চাচা থেকে, তিনি হযরত নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন, হযরত রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ্ পাক অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাতে (শবে বরাতে) দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন | অতঃপর সমস্ত ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করেন, তবে ওই সমস্ত ব্যক্তিদের ক্ষমা করেন না- যাদের অন্তরে হিংসা রয়েছে এবং যারা আল্লাহ্ পাক-এর সাথে শরীক করেছে | অর্থাৎ হিংসুক ও মুশরিক ব্যতীত সবাইকে শবে বরাতে ক্ষমা করে থাকেন |”

অতঃপর পরবর্তী আয়াত শরীফে উল্লেখ করেছেন-
(فيها) اى فى الليلة المباركة (يفرق) اى يفصل كل امر حكيم.
অর্থ: “ওই মুবারক রাতে তথা শবে বরাতে ভাগ্য বন্টন হয় অর্থাৎ যাবতীয় হিকমপূর্ণ বিষয়ের ফায়সালা করা হয় |”
এখানে-
فيها يفرق كل امر حكيم
(প্রত্যেক হিকমতপূর্ণ বিষয়ের ফায়ছালা করা হয় ওই মুবারক রাতে)

# এই আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর “তাফসীরে বাগবী”-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৪৩ পৃষ্ঠায় একইবাবে শবে বরাতের রাতকেই বুঝানো হয়েছে | যেমন উল্লেখ আছে-

(৯)

وقال عكرمة رضى الله تعالى عنه هى ليلة النصف من شعبان يبرم فيها امر السنة وتنسخ الا حياء من الاموات فلايزاد فيهم احد ولا ينقص منهم احد. اخبرنا عبد الله الواحد الملحى انا ابو منصور السمعانى ثنا ابو جعفر الريانى ثنا حميد بن زنجوية ثنا عبد الله بن صالح حدثنا الليث حدثنى عقيل عن ابن شهاب اخبرنى عثمان بن المغيرة بن الاخنس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال تقطع الاجال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكح ويولد له ولقد خرج اسمه فى الموتى وروى ابو الضحى عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما ان الله تعالى يقضى الاقضية فى ليلة النصف من شعبان ويسلمها الى اربابها فى ليلة القدر.
অর্থ: “হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, লাইলাতুম মুবারাকা এবং ফায়ছালার রাত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান এর (১৫ই-শাবানের) রাত তথা শবে বরাত | আর এই শবে বরাতের রাতে সামনের এক বৎসরের যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্যলিপি প্রস্তুত করা হয় | এবং জীবিত ও মৃত্যুদের ভাগ্য তালিকাও প্রস্তুত করা হয় এই শবে বরাতে | অতঃপর ওই ভাগ্য তালিকা থেকে কোন কম বেশি তথা হেরফের করা হয় না | আর এ প্রসঙ্গে (সনদসহ) হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল ওয়াহিদ মালাইহী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আবু মানছুর সাময়ানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত হুমাইদী ইবনে যানজুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ছলেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেন, হযরত আল লাইছ রহমতুল্লাহি আলাইহি, তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করেন হযরত আক্বিল রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইবনে শিহাব থেকে | তিনি বলেন, আমার কাছে হযরত উসমান ইবনে মুহম্মদ ইবনে মুগীরাহ ইবনে আখনাস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন | হযরত রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, এক অর্ধ শা’বান থেকে পরবর্তী অর্ধ শা’বান পর্যন্ত সমস্ত মৃতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয় | এমনকি লোকেরা সেই বৎসর কখন বিবাহ করবে এবং তার কি সন্তান জন্মগ্রহণ করবে সেই বৎসর কোন সময়ে ওই সন্তানের মৃত্যু হবে সে তালিকাও প্রস্তুত করা হয় অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে |”
কেননা এ অর্ধশা’বানে তথা ১৫ই শা’বানের রাত সম্পর্কে হযরত আবুদ্বহা রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন | হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক ১৫ই শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে যাবতীয় বিষয়ের সিদ্ধান্ত প্রস্তুত করেন তথা ভাগ্যের তালিকা প্রস্তুত করেন | আর ক্বদরের রাতে তথা শবে ক্বদরে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্য ভাগ্য লিপি অর্পন করেন বাস্তবায়নকারীদের (ফেরেশতাদের) হাতে |
ইহা ছাড়া আরো উল্লেখ্য যে, লাইলাতুল ক্বদর দ্বারা যে (ليلة التنفيذ) লাইলাতুত তানফীয তথা পূর্ব সিদ্ধান্ত বা ভাগ্য বাস্তবায়ন করার রাতকে বুঝানো হয়েছে | এর মাধ্যমেও প্রমাণিত হয় যে, পূর্ব সিদ্ধান্তের রাতই হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাত |
(তাফসীরে বাগবী, (সূরা ক্বদর), হাশিয়ায়ে খাযেন ৭/২৭৪ পৃষ্ঠা)

# এ প্রসঙ্গে “তাফসীরে নাযমুদ দুরার” কিতাবের ৭ম খণ্ডের ৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(১০)

او ليلة النصف من شعبان
অর্থ: “লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত তথা ১৫ই শা’বানের রাত |”

# উক্ত তাফসীরে ৭ম খণ্ডের ৬৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

(১১)

قال وروى ابو الضحى عنه ان الله تعالى يقضى الاقضية فى ليلة النصف من شعبان فيسلمها الى اربابها فى ليلة القدر وقال الكرمانى فيسلمها الى اربابها وعمالها من الملائكة ليلة السابع والعشرين من شهر رمضان.
অর্থ:হযরত ইমাম বাগবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন- হযরত আবু দ্বহা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে যাবতীয় বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন | আর ক্বদরের রাতে তথা শবে ক্বদরে সেই সিদ্ধান্তকে কার্যকরী তথা বাস্তবায়ন করার জন্য তালিকা পেশ করেন বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের হাতে | হযরত ইমাম কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পূর্ব সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার জন্য বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের হাতে যেই রাত্রিতে তালিকা পেশ করা হয়, সেই রাত্রিটি হচ্ছে রমাদ্বান মাসের ২৭ তারিখের রাত |”

# এ প্রসঙ্গে তাফসীর জগতের সুবিখ্যাত তাফসীর “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ৮ম খণ্ডের ১৬তম জুযের ১২৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

(১২)

ليلة النصف من شعبان ولها اربعة اسماء الليلة المباركة وليلة البراءة وليلة الصك وليلة القدر ووصفها بالبركة لما ينزل الله فيها على عباده من البركات والخيرات والثواب
অর্থ: “লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাতকে বুঝানো হয়েছে | এই ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের চারটি নাম রয়েছে, যেমন- ১. লাইলাতুম মুবারাকা বা বরকতপূর্ণ রাত, ২. লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত, ৩. লাইলাতুছ ছক্কি বা ক্ষমা স্বীকৃতিদানের রাত, ৪. লাইলাতুল ক্বদর বা ভাগ্য রজনী | আর শবে বরাতকে বরকতের সঙ্গে এই জন্য সম্বন্ধ করা হয়েছে যেহেতু আল্লাহ্ পাক ওই শবে বরাতে বান্দাদের প্রতি বরকত, কল্যাণ, এবং পূণ্যময় দানের জন্য দুনিয়ায় কুদরতীভাবে নেমে আসেন অর্থাৎ কাছ রহমত নাযিল করেন |”

# উক্ত কিতাবের ১২৬ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-

(১৩)

وقال عكرمة رضى الله تعالى عنه الليلة المباركة ههنا ليلة النصف من شعبان
অর্থ: “বিখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা এখানে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাতকে অর্থাৎ শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে |”

No comments

ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য।

  ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য। ডাল খাওয়ার ফলে কলব প্রসারিত হয় এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়। পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উ...

Powered by Blogger.