কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে শবে বরাতের কোন অস্তিত্ব নেই- এ বক্তব্য সম্পূর্ণ জিহালতপূর্ণ ও গুমরাহীমূলক, যা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত ------- পর্ব -> (৩)

>>> কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ দ্বারাই “শবে বরাত” প্রমাণিতঃ <<<
(ধারাবাহিক)
শবে বরাত বা ভাগ্য রজনীকে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক স্বীয় কুরআন শরীফ-এ “সূরা আদ দুখান”-এর ৩-৪ নম্বর আয়াত শরীফে ليلة مباركة (বরকত পূর্ণ রাত) হিসেবে উল্লেখ করে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
انا انزلناه فى ليلة مباركة انا كنا منذرين. فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি উহা (কুরআন শরীফ) এক বরকতপূর্ণ রাত্রিতে নাজিল করেছি | অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি | নিশ্চয় আমি সতর্ককারী, ওই রাত্রিতে সমস্ত হিকমতপূর্ণ কাজসমূহের বন্টন করা হয় তথা বন্টনের ফায়সালা করা হয় |”
(সূরা আদ দুখান/৩-৪)
# এখানে فيها তথা মুবারকপূর্ণ রাতের ব্যাখ্যায় সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ১৬তম খণ্ডের ১২৬/১২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(১৪-১৬)
وقال عكرمة رضى الله تعالى هى ليلة النصف من شعبان يبرم فيها امر السنة وينسخ الا حياء من الا موات ويكتب الحاج فلا يزاد فيهم احد ولا ينقص منهم احد. وروى عثمان ان المغيرة رضى الله تعالى عنه فال فال النبى صلى الله عليه وسلم تقطع الا جال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكح ويلد له وقد خرج اسمه فى الموتى.
عن النبى صلى الله عليه وسلم فال اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلتها وصوموا نهارها فان الله ينزل لغروب الشمس الى سماء الدنياء يقول الا من مستغفر فاغفر له الا مبتلى فاعافيه الا مسترزق فارزقه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.
ذكر الثعلبى وخرج الترمذى بمعناه عن عائشة عليها السلام عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ان الله عز وجل ينزل ليلة النصف من شعبان الى سماء الدنيا فيغفر لاكثر من شعر غنم كلب. وقد ذكر حديث عائشة عليها السلام مطولا صاحب كتاب العروس. واختار ان الليلة التى يفرق فيها كل امر حكيم ليلة النصف من شعبان وانها تسمى ليلة البراءة.
অর্থ: “বিখ্যাত ছাহাবী হযর ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, ফায়ছালার রাতই হচ্ছে- অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাত | এই শবে বরাতে সামনে এক বৎসরে যাবতীয় কিছুর ফায়ছালা করা হয় এবং তালিকা প্রস্তুত করা হয় মৃত ও জীবিতদের | এমনকি হজ্জ পালনকারীদের তালিকাও করা হয় সেই অর্ধ শা’বানের রাতে | ওই রাতে যার যার ভাগ্যে যা কিছু লেখা হয় তা থেকে কোন কমতিও করা হয়না এবং কোন কিছু বেশিও করা হয় না |
হযরত উসমান ইবনে মুহম্মদ ইবনে মুগীরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত | তিনি বলেন, হযরত মুগীরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, এক শা’বান হতে পরবর্তী শা’বান পর্যন্ত মৃতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়ে থাকে | অর্থাৎ এক অর্ধ শা’বান থেকে পরবর্তী অর্ধ শা’বান পর্যন্ত মৃতদের ভাগ্য তালিকা প্রস্তুত করা হয় | এবং ওই রাত্রিতে এটাও লেখা হয় ব্যক্তির বিবাহ কখন হবে এবং সেই বৎসর তার কি সন্তান হবে এবং সেই বৎসর কখন মৃত্যুবরণ করবে তার তালিকাও প্রস্তুত করা হয় শবে বরাতে |
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ করেন, যখন অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাত তোমাদের কাছে সমাগত হয়, তখন তোমরা ওই ১৫ই শা’বানের রাত্রিতে ইবাদত বন্দেগী করে রাত্রি জাগরণ করিও এবং উহার দিবা বেলায় রোযা রাখিও | কেননা মহান আল্লাহ্ পাক ওই ১৫ই শা’বানের রাত্রির সূচনালগ্নে সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে সাথেই পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, হে পৃথিবীবাসী! তোমাদের মধ্যে এমন কে আছ? ক্ষমা প্রার্থী, আমার কাছে ক্ষমা চাও (আজ) আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব | কে আছো রোগী? আমার কাছে দরখাস্ত কর আমি রোগ মোচন করে দিব | কে আছো রিযিক তালাশী? আমার কাছে রিযিক চাও, আজ আমি তাকে প্রচুর পরিমাণে রিযিক দিয়ে দিব | সাবধান! সাবধান! এইভাবেই মহান আল্লাহ্ পাক বান্দাদেরকে ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন | হযরত ইমাম ছালাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি এভাবে বর্ণনা করে এবং ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উপরোক্ত হাদীছ শরীফখানার সমার্থবোধক হিসেবে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেন |
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম হযরত রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করে বলেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক অর্ধ শাবান তথা ১৫ই শা’বানের রাত্রে অর্থাৎ শবে বরাতে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন | অতপর বনী কলব গোত্রেয় ছাগলের লোম পরিমাণ অধিক সংখ্যক গুনাহগার ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করে থাকেন |
আর উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম-উনার এই বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা অনেক লম্বা হাদীছ শরীফ যেটা “কিতাবুল উরুস” গ্রন্থকার উল্লেখ করেন | আর তিনি নির্ভরযোগ্য মত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, নিশ্চয়ই যেই রাত্রিতে সমস্ত প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয়ে থাকে সেই রাত্রিই হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত | আর অবশ্যই ওই রাতকেই লাইলাতুল বরাত বা বরাতের রাত তথা ভাগ্য রজনী বলা হয় |”
# এ প্রসঙ্গে সূরা ক্বদরের তাফসীরে “তাফসীরে কুরতুবী”-এর ২০তম জুযে ১৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(১৭)
وعن ابن عباس رضى الله تعالى عنه ايضا ان الله تعالى يقضى الاقضية فى ليلة النصف من شعبان ويسلمها الى اربابها فى ليلة القدر.
অর্থ: “প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ তায়ালা অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত্রিতে অর্থাৎ শবে বরাতে যাবতীয় বিষয়ের ভাগ্য তালিকা প্রস্তুত করেন | আর ক্বদরের রাত্রিতে ওই ভাগ্যতালিকা পেশ করেন বাস্তবায়নকারী ফেরেশতাদের হাতে |
কাজেই উক্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠলো যে, শবে বরাত বান্দাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয় আর শবে ক্বদরে সেই ভাগ্যতালিকা জারি বা কার্যকরী করা হয় |
# এ প্রসঙ্গে সুবিখ্যাত তাফসীর “তাফসীরে গারায়িবুল কুরআন ওয়া রাগায়িবুল কুরআন, হাশিয়ায়ে জামিউল বয়ান”- এর ৩০তম জুযের ১৩৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(১৮-২০)
وعن عكرمة رضى الله تعالى عنه انها ليلة البراءة
অর্থ: “প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত আকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ যে রাতে অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয় তা হচ্ছে বরাতের রাত | তথা শবে বরাতে |”
(তাফসীরে তাবারী, ৩০ খণ্ড)
# এ প্রসঙ্গে তাফসীর জগতের সুবিখ্যাত এবং সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর, “তাফসীরে ইবনে কাছীর”-এর ৪র্থ খণ্ডের ২১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(২১-২২)
ومن قال انها ليلة النصف من شعبان كما روى عن عكرمة ..... والحديث الذى رواه عبد الله بن صالح عن الليث عن عقيل عن االزهرى. اخبرنى عثمان بن محمد بن المغيرة الاخنس فال ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال تقطع الاجال من شعبان الى شعبان حتى ان الرجل لينكح ويولد له وقد اخرج اسمه فى الموتى.
অর্থ: “যারা বলে থাকেন লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য অর্ধ শা’বানের রাত তথা শবে বরাত | তারা দলীল হিসেবে পেশ করেন যেমন, হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ছলেহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত লাইছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন, তিনি হযরত আকীল রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন | তিনি বলেন, আমাদের কাছে হযরত উসমান ইবনে মুহম্মদ ইবনে মুগীরা ইবনে আখনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেছেন | তিনি বলেন, হযরত রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, এক শা’বান থেকে পরবর্তী শা’বান পর্যন্ত অর্থাৎ ১৫ই শা’বান হতে পরবর্তী ১৫ই শা’বান পর্যন্ত মৃতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয় এবং এমনকি ব্যক্তির বিবাহ সেই বৎসর তার কি সন্তান জন্মলাভ করবে এবং সেই বৎসর কখন মৃত্যুবরণ করবে তার যাবতীয় তালিকা প্রস্তুত করা হয় এই শবে বরাতে |”
(অনুরূপভাবে তাফসীরে জালালাইন শরীফ-এর ৪১০ পৃষ্ঠায় ২২ নম্বর হাশিয়ায় উল্লেখ আছে)
# এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত ‘তাফসীরে তাবারী”-এর ২৫তম খণ্ডের ৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(২৩)
وقال اخرون بل هى ليلة النصف من شعبان
অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণের অনেকেই উল্লেখ করেছেন যে, লাইলাতুল মুবারকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের রাত |”
# “তাফসীরে তাবারী” কিতাবের ২৫তম খণ্ডের ৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(২৪)
فيها يفرق كل امر حكيم
অর্থ: “ওই রাতেই সমস্ত হিক্বমতপূর্ণ বিষয়সমূহের ফায়ছালা করা হয় |”
# এই আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে উল্লেখ আছে-
(২৫-২৬)
وروى عن عكرمة فى تفسير هذه الاية ان الله تعالى يفصل للملئكة فى ليلة النصف من شعبان.
অর্থ: “প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে এই আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ১৫ই শা’বানের রাত্রে তথা শবে বরাতে ফেরেশতাদের দায়িত্বও বন্টন করে থাকেন |”
(তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন, নূরুল ইরফান)
# “তাফসীরে বায়যাবী শরীফ”-এর ৩য় খণ্ডের ২৮৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(২৭)
او البراءة ابتدأ فيها انزاله او انزل فيها جملة الى السماء الدنيا من اللوح.
অর্থ: “অথবা লাইলাতুল মুবারাকা উদ্দেশ্য হচ্ছে বরাতের রাত তথা শবে বরাত | এই রাতেই লাওহে মাহফুয থেকে কুরআন শরীফ নাযিল হওয়া শুরু হয় | অথবা এই শবে বরাতে লাওহে মাহফূয থেকে দুনিয়ার আকাশে এক সাথে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ নাযিল হয় |”
# এই লাইলাতুল বরাতের ব্যাখ্যায় উক্ত তাফসীরে ২৮৭ পৃষ্ঠার ৭নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
(২৮)
ليلة البراءة اى ليلة النصف من شعبان وقبل فى تسميتها ليلة البراءة ان البندار اذا استوفى الخراج من اهله كتب لهم البراءة كذالك الله تعالى يكتب لعباده المؤمنين البراءة فى هذه الليلة.
অর্থ: “লাইলাতুল বরাত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান মাসের রাত তথা ১৫ই শা’বান মাসের রাত্রি | আর কেউ কেউ বলেন, লাইলাতুল বরাত নামে এই জন্য নামকরণ করা হয় | যেমন যাকাত বা খাজনা আদায়কারী খাজনা বা যাকাত আদায় করার পর যাকাতদাতা বা খাজনাদাতাকে এক প্রকার রসিদ বা সিদ্ধান্তের সনদ দিয়ে থাকে | অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ্ পাক এই শবে বরাতে মু’মিন বান্দাদেরকে মুক্তির সনদ দিয়ে থাকেন |”
# “তাফসীরে জালালাইন শরীফ”-এর ৪১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(২৯)
او ليلة نصف من شعبان
অর্থ: “অথবা লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শাবানের রাত |”
# এই উক্তর সমর্থনে উক্ত তাফসীরের ৪১০ পৃষ্ঠার ২৪ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
(৩০)
قوله ليلة النصف من شعبان هو قول عكرمة وطائفة ومنها ان ليلة النصف من شعبان لها اربعة اسماء الليلة المباركة وليلة البراءة وليلة الرحمة وليلة الصك.
অর্থ: “মহান আল্লাহ্ পাক-এর বাণী লাইলাতুম মুবারাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ই শা’বানের রাত | এটা হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং অন্যান্য একদল ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মতে | আর এই ১৫ই শা’বানের রাত তথা শবে বরাতের ৪টি নাম রয়েছে | যেমন, লাইলাতুম মুবারাকা তথা বরকতের রাত, লাইলাতুল বরাত তথা বরাতের রাত, লাইলাতুর রহমত এবং লাইলাতুছ ছক তথা ভাগ্য নির্ধারণের রাত |
এই বর্ণনা তাফসীরে ছবী ও তাফসীরে কামালাইন এবং মাওয়াহিবে উল্লেখ আছে |
# “তাফসীরে রুহুল বয়ান” কিতাবের ৮ম খণ্ডের ২৫তম জুযের ৪০২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(৩১)
فال بعض المفسرين المراد من الليلة المباركة ليلة النصف من شعبان ولها اربعة اسماء الاول الليلة المباركة لكثرة خير وبركتها على العاملين ...... الثانى ليلة الرحمة والثالث ليلة البراءة والرابع ليلة الصك.
অর্থ: “মুফাসসিরীনে কিরামগণের মধ্যে অনেকেই লাইলাতুল মুবারক দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন অর্ধ শা’বান তথা ১৫ শা’বানের রাতকে | এবং ইহাই তথা শবে বরাতের চারটি নাম রয়েছে | প্রথমত: লাইলাতুল মুবারকা তথা বরকতের রাত্রি | কেননা এই বরকতের রাত্রিতে যারা আমল করে থাকেন তথা ইবাদত বন্দিগী করে থাকেন তাদের জন্য অনেক খায়ের বরকত রয়েছে |
দ্বিতীয়ত: লাইলাতুর রহমত তথা রহমতের রাত্রি |
তৃতীয়ত: লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভাগ্যের রাত্রি |
চতুর্থত: লাইলাতুছ ছক তথা চেক প্রদানের রাত |
# এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর “তাফসীরে রুহুল মায়ানী”-এর ১৩তম খণ্ডের ১১০-১১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
(৩২-৩৭)
وقال عكرمة وجماعة : هى ليلة النصف من شعبان وتسمى ليلة الرحمة والليلة المباركة وليلة الصك وليلة البراءة ..... وذكروا فى فضل هذه الليلة اخارا كثيرة منها ما اخرجه ابن ماجه والبيهقى فى شعب الايمان عن على كرم الله وجهه رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الاكذا حتى يطلع الفجر.
وما اخرجه الترمذى وابن ماجه ابى شيبة البيهقى وابن ماجه عن عائشة عليها السلام قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات ليلة فخرجت اطلبه فاذا هو بالبقيع رافعا رأسه الى السماء فقال يا عائشة عليها السلام أكنت تخافين ان يحيف الله تعالى عليك ورسوله ؟ فقلت مابى من ذالك ولكن ظننت أتيت بعض نسائك فقال ان الله تعالى عزوجل ينزل ليلة النصف من شعبان الى السماء الدنيا فيغفر لاكثر من عدد شعر غنم كلب.
وما اخرجه احمد بن حنبل فى المسند عن عبد الله ابن عمرو بن العاص ان رسول الله صلى الله صلى الله عليه وسلم قال يطلع الله تعالى الى خلقه ليلة النصف من شعبان فيغقر لعباده الا الاثنين مشاحن وفاتل نفس.
অর্থ: “হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি জামায়াত বলেন, ‘লাইলাতুম মুবারাকা’ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্ধ শা’বান তথা ১৫ শা’বানের রাত তথা শবে বরাত | ১৫ শা’বানের রাতকে লাইলাতুর্ রহমত তথা রহমতের রাত হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে এবং লাইলাতুম মুবারাকা তথা বরকতের রাত হিসেবেও নামকরণ করা হয়েছে এবং লাইলাতুছ ছক্ক তথা চেক বা রসিদ কাটার রাত হিসেবেও নাম করণ করা হয়েছে এবং লাইলাতুল বারায়াত তথা মুক্তি বা ভগ্যের রাত হিসেবেও নামকরণ করা হয়েছে |
…….. উনারা সকলে এই শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে অসংখ্য হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন | তন্মধ্যে যেটা হযরত ইমাম ইবনে মাজাহ এবং হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘শুয়াবুল ঈমান’-এর মধ্যে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন | হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইরশাদ করেন, রসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যখন অর্ধ শা’বানের রাত আগমন করেন তখন তোমরা (ইবাদতে) রাত্রি জাগরণ কর এবং দিনের বেলায় রোযা রাখ | কেননা, মহান আল্লাহ্ পাক ওই শবে বরাতে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন |
অতঃপর বলেন, সাবধান! কে আছো ক্ষমাপ্রার্থী? আমি আজ তাকে ক্ষমা করে দিব | কে আছো রিযিক তালাশকারী? আজ আমি তার রিযিক (পর্যাপ্ত) দিয়ে দিব | কে আছ রোগী? আমি তার রোগ মাফ করে দিব | (সাবধান! সাবধান!) জেনে রাখ, জেনে রাখ | এভাবেই ফজর পর্যন্ত ডাকতে থাকেন |
অতঃপর হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম ইবনে আবি শাইবা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম বাইহাক্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম ইবনে মাজাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন | উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ করেন, আমি একদা রাত্রিকালে রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হারিয়ে ফেললাম অর্থাৎ দেখতে না পেয়ে তালাশ করার জন্য আমি ঘর থেকে বের হয়ে উনাকে জান্নাতুল বাকীতে আকাশের দিকে মাথা মুবারক উঠানো অবস্থায় দেখতে পেলাম | তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! আপনি কি আশঙ্কা করতেছিলেন যে, আল্লাহ্ পাক এবং উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার (আমানত) খিয়ানত করছেন? উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম জাওয়াবে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ইয়া হাবীবাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি মনে করেছিলাম হয়তোবা আপনি আপনার অন্যান্য উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ নিয়েছেন | অতঃপর রসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক ১৫ই শা’বানের রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বনী কলব গোত্রের ছাগলের লোমের সংখ্যা পরিমাণ থেকেও অধিক সংখ্যক গুনাহগার বান্দাদের মহান আল্লাহ্ পাক ক্ষমা করে দেন | সুবহানাল্লাহ্!
হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুসনাদে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ্ পাক অর্ধ শা’বান তথা শবে বরাতে বান্দাদের উদ্দেশ্যে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন এবং উনার অসংখ্য বান্দাদেরকে ক্ষমা করার কথা ঘোষণা করেন | তবে হিংসুক এবং মুসলমানকে হত্যাকারী ব্যতীত |
অতএব, এ পর্যন্ত ৩৭টি বিশ্বখ্যাত, সুপ্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থের দলীলের মাধ্যমে প্রমাণীত হলো- ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা ‘লাইলাতুল বরাত’ বা ‘শবে বরাতকে’ বুঝানো হয়েছে |
বিঃদ্রঃ- আমার কাছে সুবিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থের আরো ৪৬টি দলীল মওজুদ রয়েছে, প্রয়োজনে দেয়া যেতে পারে | এপর্যন্ত তাফসীর গ্রন্থ থেকে যে ৩৭টি দলীল পেশ করেছি তা হক্বতালাশীদের জন্যে যথেষ্ট |
এরপরে পবিত্র ছহিহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারাও শবে বরাত প্রমাণ করবো ইনশাআল্লাহ্ |
No comments