পশুর উচ্ছিষ্টের বাজার বিশাল ॥ আয় হবে হাজার কোটি টাকা
গবাদি পশুর গোশত আর চামড়ার কদর আমাদের সবারই
জানা। কিন্তু অজানা ব্যাপারটি হলো- গোশত আর চামড়া ছাড়া বাকি সব
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রয়েছে বিরাট অর্থমূল্য। অছে বিপুল রফতানি সম্ভাবনাও। একবার ভাবুন
তো আমরা উচ্ছিষ্ট হিসেবে গবাদি পশুর যেসব অংশ ফেলে দিই বিদেশীরা সেগুলো কিনে নেয়
ডলার দিয়ে। পশু জবাইয়ের পর একটি মাঝারি আকারের গরুর ১৫ থেকে ২০ কেজি হাড় ফেলে দেয়া
হয়। আমরা জানিই না যে, প্রতিদিন এই হাড় নিয়ে বাণিজ্য হয় ১০ থেকে ১৫
লাখ এবং নাড়িভুঁড়ি বিক্রি হয় ১২ লাখ টাকার। শুধুমাত্র কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী ১
মাসে সারাদেশে প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন পশুর হাড় সংগ্রহ করা হয়। গরুর শিংসহ হাড়
বিক্রিতে প্রতিবছর ১০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। বাংলাদেশ বোন এক্সপোর্টার
এ্যান্ড মার্চেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, প্রতিদিন এই হাড় কেনা-বেচায়
কোটি কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। জবাই করা পশুর ফেলে দেয়া হাড়গোড় সংগ্রহ করে
প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রফতানি করে হাজার কোটি টাকা আয় সম্ভব।
বাংলাদেশ বোন এক্সপোর্টার এ্যান্ড মার্চেন্ট
এ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেয়া
গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার হাড়, শিং, অন্ডকোষ, নাড়িভুঁড়ি, মূত্রথলি, চর্বি বিভিন্ন পণ্যের
কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে শিল্প কারখানায়।
পশুর হাড় দিয়ে- জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ক্যাপসুলের
কভার, ক্যামেরার ফিল্ম, সিরিষ কাগজ, পশুপাখির খাবার, বোতাম, সিরামিক পণ্য, মেলামাইন, খেলনা, শোপিসসহ ঘর সাজানোর নানা
উপকরণ,
নাড়ি দিয়ে অপারেশনের সুতা,
রক্ত দিয়ে- পাখির খাদ্য,
চর্বি দিয়ে- সাবান,
পায়ের ক্ষুর দিয়ে বিভিন্ন প্রকার ক্লিপ ইত্যাদি
উপকরণ তৈরি হয়।
পিত্তথলি দিয়ে তৈরি হয় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ।
জাপান, চীন, কোরিয়া আর থাইল্যান্ডে
উপাদেয় খাবার সুপ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয় গবাদি পশুর লিঙ্গ।
নাড়িকোষ দিয়ে তৈরি হয় জাপানের জনপ্রিয় খাবার
সুসেড রুল।
দেশেই ওষুধ কোম্পানি অপসোনিন তৈরি করছে
ক্যাপসুলের কভার।
রফতানিকারকরা মনে করেন, পশুর বর্জ্য রফতানিতে
সরকারের সহায়তা পেলে কয়েক হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।
সচেতনতা কিংবা প্রচার না থাকায় গবাদি পশুর
হাড়-গোড়, ক্ষুর, শিং, লেজ কিংবা রক্ত শত কোটি
টাকার সম্পদ উচ্ছিষ্ট হিসেবে স্থান হয় আবর্জনার ডাস্টবিনে।
No comments