কুরআন শরীফে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের দলিলঃ
আসুন সূরা ইউনুস এর ৫৭ ও ৫৮ নং আয়াত দুটি দেখি
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِين
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
অর্থ: “হে মানবজাতি! অবশ্যই মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন নসিহতকারী, অন্তরের পরিশুদ্ধতাদানকা
হে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, তারা যে মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে ‘ফযল ও রহমত’ পেয়েছে সে জন্য তারা যেনো খুশি প্রকাশ করে। নিশ্চয় তাদের এ খুশি প্রকাশ করাটা তাদের সমস্ত সঞ্চয়ের থেকে উত্তম।
(সূরা ইউনুস শরীফ : ৫৭-৫৮)
সূরা ইউনুসের ৫৭ ও ৫৮ নং আয়াতে বোঝা যাচ্ছে, মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ যে বিষয়টি এসেছে, তার জন্য খুশি প্রকাশ করতে বলা হচ্ছে। সেই বিষয়টির হচ্ছে-
১) নসিহতকারী
২) অন্তরের পরিশুদ্ধতাদানকা
৩) হেদায়েত দানকারী
৪) রহমতদানকারী
এবার আসুন, কুরআন পাকের সূরা আলে ইমরানের ১৬৪ নং আয়াতখানা দেখি-
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ
“আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট। (সুরা আলে ইমরান ১৬৪)
এ আয়াত শরীফ অনুসারে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই হচ্ছেন নসিহতকারী, আমাদের অন্তরের পরিশোধকারী এবং হেদায়েতদানকারী।
আবার সূরা আল আম্বিয়ার ১০৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছে-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। ( সুরা আল আম্বিয়া, ১০৭) অর্থাৎ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছে সমগ্র কায়েনাতের জন্য রহমত।
সূরা ইউনুসের ৫৭ ও ৫৮ নং আয়াত, সূরা আল ইহরানের ১৬৪ নং আয়াত এবং সূরা আম্বিয়ার ১০৭ আয়াত গুলো থেকে পাওয়া যায়---
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন নসিহতকারী, হেদায়েতদানকারী,
বিস্তারিত ব্যাখ্যা:
সূরা ইউনুসের ৫৭ ও ৫৮নং আয়াতের অর্থ ও ব্যাখ্যা
يايها الناس قد جاءتكم موعظة من ربكم وشفاء لـما فى الصدور وهدى ورحمة للمؤمنين. قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا هو خير مـما يجمعون.
অর্থ: হে মানুষেরা! তোমাদের রব তায়ালা’র তরফ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন উপদেশ দানকারী, তোমাদের অন্তরের আরোগ্য দানকারী, হিদায়েত দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য রহমত দানকারী। (অতএব হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি (স্বীয় উম্মতদেরকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় ফদ্বল ও রহমত স্বরূপ অর্থাৎ অপার দয়া ও অনুগ্রহ হিসেবে উনার প্রিয়তম রসূল হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়েছেন; সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশের আমলটি তাদের সমস্ত নেক আমল অপেক্ষা উত্তম বা শ্রেষ্ঠ।
জানা আবশ্যক যে, উক্ত সূরা ইউনুসের ৫৭নং আয়াত শরীফের মধ্যে موعظة-شفاء-هدى-
(তাফসীরে রূহুল মায়ানী, তাফসীরে মুহাররারুল ওয়াজীয, তাফসীরুল মানার, তাফসীরে বয়ানুল মায়ানী, তাফসীরে মাফাতীহুল গইব, তাফসীরে কবীর ইত্যাদি )
ঊছুলে ফিক্বাহের সমস্ত কিতাবেই উল্লেখ আছে যে,
الامر للوجوب
অর্থাৎ আদেশসূচক বাক্য দ্বারা সাধারণতঃ ফরয-ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়ে থাকে। যেমন কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
اقيموا الصلوة
অর্থাৎ “তোমরা নামায আদায় কর” কুরআন শরীফ-এর এ নির্দেশ সূচক বাক্য দ্বারাই নামায ফরয সাব্যস্ত হয়েছে। অনুরূপ হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, واعفوا للحى অর্থাৎ “তোমরা (পুরুষরা) দাড়ী লম্বা কর।” হাদীছ শরীফ-এর এ নির্দেশ সূচক বাক্য দ্বারাই কমপক্ষে এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ী রাখা ফরয-ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়েছে।
ঠিক একইভাবে ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা অর্থাৎ ১২ রবিউল আউয়াল শরীফ সোমবার শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে ঈদ করা বা খুশি প্রকাশ করা বান্দা-বান্দি ও উম্মতের জন্য ফরয-ওয়াজিব-এর অন্তর্ভূক্ত। কেননা এব্যাপারেও কুরআন শরীফ-এ পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে বহু স্থানে আদেশ-নির্দেশ রয়েছে। যেমন-
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ-এর সূরা আল ইমরানের ১০৩ নং আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন,
اذكروا نعمة الله عليكم
অর্থাৎ “তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্মরণ করো।” (সূরা আল ইমরান/১০৩)
এ আয়াত শরীফ দ্বারা মহান আল্লঅহ পাক প্রদত্ত নিয়ামত স্মরণ করা, নিয়ামত-এর আলোচনা করা নিয়ামত প্রাপ্তি উপলক্ষে নিয়ামত প্রপ্তির দিন ঈদ বা খুশি প্রকাশ করা ফরয সাব্যস্ত হয়। অর্থাৎ নিয়ামত প্রাপ্তি উপলক্ষে নিয়ামত প্রাপ্তির দিনে নিয়ামতকে স্মরণ করে ঈদ বা খুশি পালন করা ফরয। আর সে নিয়ামতকে ভূলে যাওয়া বা খুশি প্রকাশ না করা কঠিন শাস্তির কারণ। আর এ ব্যপারে সকলেই একমত যে, শাস্তি থেকে বাঁচা ও বান্দা-বান্দি ও উম্মতের জন্য ফরয।
এ বিষয়টি মহান আল্লাহ পাক সূরা মায়িদাহ-এর ১১৪ নং আয়াত শরীফ-এ আরো স্পষ্টভাবে ইরশাদ করেন,
قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاء تَكُونُ لَنَا عِيداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ. قَالَ اللّهُ إِنِّي مُنَزِّلُهَا عَلَيْكُمْ فَمَن يَكْفُرْ بَعْدُ مِنكُمْ فَإِننِّي أُعَذِّبُهُ عَذَابًا لاَّ أُعَذِّبُهُ أَحَدًا مِّنَ الْعَالَمِينَ.
অর্র্থ: “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশতী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি, অর্র্থাৎ খাদ্যসহ খাঞ্চাটি যেদিন নাযিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ (খুশি) স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ হতে একটি নিদর্শন হবে। আমাদেরকে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের প্রতি খাদ্যসহ খাঞ্চা নাযিল করবো। অতঃপর যে ব্যক্তি সে খাদ্যসহ খাঞ্চাকে এবং তা নাযিলের দিনটিকে ঈদ বা খুশির দিন হিসেবে পালন করবে না বরং অস্বীকার করবে আমি তাকে এমন শাস্তি দিব, যে শাস্তি সারা ক্বায়িনাতের অপর কাউকে দিব না।” (সূরা মায়িদাহ/১১৪)
এ আয়াত শরীফ দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হল যে, নিয়ামত প্রাপ্তির দিনটি পূর্ববর্তী-পরবর
এখন কথা হলো- সাধারণ ভাবে কোন নিয়ামত প্রাপ্তির কারণে নিয়ামত প্রাপ্তির দিন ঈদ বা খুশি করা যদি ফরয হয়, আর হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উম্মতের জন্য আসমান থেকে খাদ্য বা নিয়ামত নাযিল হওয়ার কারণে সে দিনটি যদি পূর্ববর্তী-পরবর
তবে যিনি কুল-কায়িনাতের জন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত অর্থাৎ নিয়ামতে কোবরা আলাল আলামীন তিনি যেদিন যে সময়ে পৃথিবীতে তাশরীফ আনলেন সেদিনটা কেন পূর্ববর্তী-পরবর
মূলতঃ সেদিন অর্থাৎ ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ সোমবার শরীফ শুধু পূর্ববর্তী-পরবর
قُلْ بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُواْ
অর্র্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক তিনি ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সেজন্য তারা যেনো খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সবকিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (সূরা ইউনুস-৫৮)
অনুসরনীয় ইমাম-মুজতাহিদ, মুদাক্কিক্ব ও মুহাক্কিক্বগণ উনারা এ আয়াত শরীফ দ্বারা ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে ঈদ বা খুশি প্রকাশ করাকে ফরয বলে ফতওয়া দেন। কেননা উক্ত আয়াত শরীফ-এ
فَلْيَفْرَحُواْ
অর্থাৎ “তারা যেন খুশি প্রকাশ করে।” আদেশ সূচক বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে। আর আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা যে ফরয সাব্যস্ত হয় তা উদাহরণ ও দলীলসহ শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। কাজেই প্রত্যেক বান্দা-বান্দি ও উম্মতের জন্যতো অবশ্যই বরং কুল-কায়িনাতের সকলের জন্য ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা ফরযের অন্তর্ভূক্ত। এটাই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া। এর বিপরীত মত পোষণ কারীরা বাতিল ও গোমরাহ।
No comments