ফখরুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, ছাহিবে শাফায়াতে কুবরা, আল আমীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বপ্ন যোগে
من رانى فى المنام فقد رانى فان الشيطان لم يتمثل بى.
হাদীস শরীফে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখে সে মূলতঃ আমাকেই
দেখে। কেননা শয়তান আমার ছূরত ধারণে অক্ষম।” (তিরমিযী শরীফ)
এ প্রসঙ্গে হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “নবী প্রেমে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত আউলিয়া-ই-কিরাম
রহমতুল্লাহি আলাইহিম-এর পক্ষে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রূহানী
(স্বপ্নযোগে) সাক্ষাৎ লাভ কামালিয়াতের একটা বিশেষ স্তর।”
নিম্নে কতিপয় মশহুর ও অনুসরণীয় আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম-এর জীবনী হতে
কতিপয় স্বপ্ন উল্লেখ করা হলো- নকশায়ে নবী,
আশিকে
রসূল হযরত বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিখ্যাত
বুযূর্গ হযরত বিশর হাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, একদা আমি স্বপ্নযোগে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “ওহে বিশর! তুমি কি বলতে পার, তোমার জামানার বুযূর্গদের মধ্যে তোমার মর্যাদা সর্বাধিক কেন
করা হলো?” আমি বিনীত ভাবে বললাম, “ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
তা তো আমার জানা নেই।” তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, “তুমি সুন্নতের অনুসরণ করে থাক, বুযূর্গ লোকদের সম্মান
প্রদর্শন করে থাক, মুসলমানদের সৎ পথ
প্রদর্শন কর এবং আমার যারা আছহাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং আহলে বাইত রয়েছেন
তাঁদেরকে তুমি মুহব্বত করে থাক। এই কারণেই
আল্লাহ্ পাক তোমাকে এত মরতবা দান করেছেন।” (তাযকিরাতুল আউলিয়া)
হযরত শায়খ আবুল মাওয়াহেব শাযালী রহমতুল্লাহি
আলাইহি-এর স্বপ্ন হযরত শায়খ আবুল মাওয়াহেব শাযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ্ পাক-এর একজন
বিশিষ্ট ওলী। তিনি প্রায়শঃই স্বপ্নে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর যিয়ারত লাভ করতেন। তিনি বলেন,
“আমি
রসূলে মকবুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রায়শঃই স্বপ্নে দেখি এবং তাঁর নিকট
থেকে সরাসরি নির্দেশপ্রাপ্ত হই। এ ব্যাপারে কেউ কেউ সন্দেহ পোষণ করতো। এমনকি আমাকে
মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করারও চেষ্টা করতো। তিনি বলেন, এ সম্পর্কে একবার রসূলে মকবুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আমাকে বললেন, “আমি আমার উম্মতের
মধ্য থেকে আমার প্রিয়জনদের সাক্ষাৎ দান করি এবং তারা আমার নিকট থেকে বিভিন্ন বিষয়ে
জ্ঞানও আহরণ করে। এ সত্য যারা অস্বীকার করবে তারা ইহুদী-নাছারাদের মত মৃত্যুবরণ করবে।”
(নি’মাতে উযমা, ৩য় খন্ড)
ইমামুল আইম্মা, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর স্বপ্ন একাদ্বশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ
হলেন হযরত শায়খ আহমদ ফারুকী সেরহিন্দী মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি
বলেন, একদা আমি কতিপয় শুভাকাঙ্খিদের
অনুরোধে ইলমে তাছাউফের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব রচনা করি। কিতাবটি রচনা করার পর
একদিন আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর সাথে আমার দীদার হয়। আমি দেখলাম,
হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার সেই
কিতাবটি হাতে নিয়ে তাতে অনুগ্রহ করে চুমো দিলেন এবং সমবেত সকল আউলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি
আলাইহিমগণকে কিতাবটি দেখিয়ে বলতে লাগলেন,
“আক্বীদা
বিশ্বাস এমনই হওয়া দরকার।” (মাকতুবাত শরীফ)
রঈসুল মুহাদ্দিসীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী
রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন,
আমার
আব্বা হযরত শাহ্ আব্দুর রহীম মুহাদ্দিস দেহলভী
রহমতুল্লাহি আলাইহি একদা স্বপ্নে হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
মুবারক জিয়ারত লাভ করলেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর শারীরিক অবস্থা
সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন এবং বললেন,
“আল্লাহ্
পাক-এর রহমতে তোমার স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। অতঃপর পানি আনতে বললেন ও সেই পানি দ্বারা
ওজু করলেন। ওজু শেষ হওয়ার পর দাঁড়ি মুবারকে চিরুনী করলেন। এ সময় দাঁড়ি মুবারকের পবিত্র
দু’খানা কেশ চিরুনীর মধ্যে চলে এলো। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই
পবিত্র কেশ দু’খানা আমার আব্বার হাতে দিলেন। আব্বা বললেন, আমি জাগ্রত হয়ে দেখি সেই পবিত্র দু’খানা কেশ
মুবারক আমার হাতে রয়েছে। আমীরুল মু’মিনীন, মুজাদ্দিদুয্ যামান হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি হিজরী ত্রয়োদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও আল্লাহ্ পাক-এর
লক্ষ্যস্থল হলেন আমীরুল মু’মিনীন,
খলিফাতুল
মুসলিমীন, আওলাদে রসূল, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি
আলাইহি। একদা তিনি স্বপ্নে দেখলেন,
হযরত
নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরম স্নেহ ও আদরের সাথে তাঁর মুখে তিনটি খুরমা
তুলে দিচ্ছেন। নিদ্রা ভঙ্গ হওয়ার পরও তিনি মুখে সে খুরমার স্বাদ অনুভব করতে থাকেন।
তখন থেকেই তাঁর আচরণের মধ্যে এ বিরল ঘটনার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। (সীরাতে সাইয়্যিদ আহমদ
রহমতুল্লাহি আলাইহি)
No comments