হাবীবুল আউয়ালীন ওয়াল আখিরীন, ছাহিবু ফাতহিম মুবীন, রফিকু ছাহিবুল কুদরত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের আত্মত্যাগ
لايؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من ماه ونفسه و والده وولده واناس اجمعين.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঐ আল্লাহ্ পাক-এর কছম! যাঁর হাতে আমার রূহ। তোমরা
শুনে রাখ এবং জেনে রাখ, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত
মু’মিনে কামিল হতে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের জান-মাল, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততির চেয়ে আমাকে বেশী মুহব্বত করতে না পারবে।” (বুখারী,
মুসলিম)
ঠিক এই হাদীস শরীফের মেছদাক ছিলেন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ।
তাঁরা তাঁদের জান-মাল, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততির থেকেও বেশী মুহব্বত করতেন হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে।
একদিন আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব,
আখিরী
রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
দরবার শরীফে এক ব্যক্তি এসে হাযির হলেন এবং বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্,
ইয়া
হাবীবাল্লাহ্, ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম! কিছু দিন পর আমার মেয়ের বিয়ে কিন্তু আমি অনেক গরীব, আমার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার মত আমার কোন সামর্থ নেই। দয়া করে আপনি আমাকে কিছু
সাহায্য করুন।” যখন সে লোকটি আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, “হে ব্যক্তি তুমি এক কাজ কর, এই জামানার যিনি ধনী ব্যক্তি এবং আমার জলীলুল
ক্বদর ছাহাবী হযরত উছমান জুন্ নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর কাছে গিয়ে আমার
কথা বলবে, আমি তোমাকে পাঠিয়েছি। তিনি
যেন তোমাকে সাহায্য করেন।” তখন সেই ব্যক্তি হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর
দরবারে এসে হাযির হলেন এবং তিনি সেখানে পৌঁছে দেখতে পেলেন হযরত উছমান জুন্ নূরাইন
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার এক ব্যবসার শরীকদারের কাছ থেকে এক পয়সার হিসাব বুঝে
নিচ্ছেন। তখন সে ব্যক্তি মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন, যে ব্যক্তি এক পয়সার হিসাব নিতে পারেন সে ব্যক্তি
আমাকে কিভাবে সাহায্য করবেন? এই কথা চিন্তা করে
তিনি হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দরবার ত্যাগ করলেন এবং আবার গিয়ে হাযির
হলেন আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে।
সে ব্যক্তি হাযির হয়ে বললেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
আমি হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম
তিনি কোন এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক পয়সার হিসাব বুঝে নিচ্ছেন। এবং লোকটি বললেন, “যিনি এক পয়সার হিসাব নেন তিনি কিভাবে দান করতে
পারেন?” হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বললেন, “হে ব্যক্তি! তুমি
তাঁর কাছে গিয়ে আমার কথা বলো, তাহলে তিনি তোমাকে
সাহায্য করবেন।” তখন সেই ব্যক্তি আবার হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর দরবারে
হাযির হলেন এবং বললেন, “হে জলীলুল ক্বদর
ছাহাবী হযরত উছমান জুন্ নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আমাকে আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। আপনি যেন আমাকে কিছু
সাহায্য করেন।” তখন হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “হে ব্যক্তি আপনি এক কাজ করুন। আপনি ওমুক পাহাড়ে
গিয়ে দাঁড়ান, সেখানে কিছুক্ষণ
পর দেখতে পাবেন সেই পাহাড়ের পিছন দিক থেকে আমার একটি উটের কাফেলা আসছে; এবং সকল উটের পিঠের উপর বোঝাই করা সম্পদ রয়েছে।
সেখান থেকে আপনার যতটুকু ইচ্ছে ততটুকু সম্পদ আপনি নিয়ে যান।” সে ব্যক্তি হযরত উছমান
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কথা অনুযায়ী সেই পাহাড়ে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং ঠিক কিছুক্ষণ
পরে দেখা গেলো সেই পাহাড়ের পিছন দিক থেকে বিরাট এক উটের কাফেলা আসছে এবং সমস্ত উটের
পিঠে বোঝাই করা সম্পদ রয়েছে। অতঃপর উক্ত বিরাট কাফেলা সেই ব্যক্তির সম্মুখে আসলো। তখন
সেই ব্যক্তি হাত উচু করে সেই উটের কাফেলাটিকে থামিয়ে দিলো। তখন সেই কাফেলার যিনি সর্দার
ছিলেন তিনি বললেন, “হে ব্যক্তি! তুমি
কেন এই উটের কাফেলাটিকে থামিয়ে দিলে।” তখন সেই ব্যক্তি জবাব দিলো, “হে কাফেলার সর্দার! আমাকে হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু পাঠিয়েছেন, এই উটের কাফেলা থেকে
আমার যে উটটি পছন্দ হয় সে উটটিই যেন সম্পদসহ নিয়ে যাই।”
একথা শুনে কাফেলার সর্দার বললেন, “ঠিক আছে, আপনার যে উটটি পছন্দ হয় সে উটটি সম্পদসহ নিয়ে যান।” তখন সে ব্যক্তি
সবার সামনের সবচেয়ে সুন্দর এবং সব চাইতে বেশী সম্পদ বোঝাই করা উটটিকে পছন্দ করলেন।
তখন সেই কাফেলার সর্দার বললেন, “হে ব্যক্তি! আপনাকে
এই উটটি দেয়া যাবে না। কেননা, উটের নিয়ম হলো, সামনের উট যেদিকে যায় পিছনের উটগুলোও তার পিছনে
পিছনে সেদিকে যায়।” সেজন্য কাফেলার সর্দার সে ব্যক্তিকে সামনের উটটিকে দিতে চাচ্ছেন না। তখন দু’জনে মিলে হযরত উছমান
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কাছে গিয়ে হাযির হলেন এবং কাফেলার সর্দার বললেন, “হে হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি
কি এই ব্যক্তিকে আমাদের কাফেলা থেকে যে কোন একটি উট সম্পদসহ নিয়ে যেতে বলেছেন?” তখন হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “হ্যাঁ,
আমি
বলেছি।” তখন সেই কাফেলার সর্দার বললেন,
“হে
হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! ঐ ব্যক্তি আমাদের কাফেলার সর্বপ্রথম উটটিকে
পছন্দ করেছেন। এখন যদি এ ব্যক্তিকে সেই উটটিকে দিয়ে দেয়া হয় তাহলে সমস্ত উট এবং সমস্ত
সম্পদও চলে যাবে। তাহলে আমাদের কিছুই থাকবে না।” তখন হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু-এর চেহারা মুবারক লাল হয়ে গেল এবং তিনি বললেন, “হে কাফেলার সর্দার! তুমি কি জান, এই ব্যক্তিকে কে আমার কাছে পাঠিয়েছেন? তিনি হলেন, সরওয়ারে দো’জাহান,
নূরে
মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
কাজেই এ ব্যক্তি তো শুধু আমার উট এবং সম্পদ চেয়েছে। হে কাফেলার সর্দার, তুমি শুনে রাখ এবং জেনে রাখ, এই ব্যক্তি যদি আমাকেও চায় তাহলে আমি হযরত উছমান
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকেও তাঁর সঙ্গে চলে যেতে হবে।” (সুবহানাল্লাহ্)
তখন হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর নির্দেশে সে ব্যক্তি কাফেলার এক হাজার উট
খাদ্য শষ্যসহ সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন। জান-মাল সবকিছু কুরবানী করার বিনিময়ে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ লাভ করেছেন মহান আল্লাহ্ পাক এবং তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি। সেই সন্তুষ্টি পেতে হলে আমাদেরকেও সবকিছু
কুরবানী করে দিতে হবে। আল্লাহ্ পাক আমাদের তাওফিক দান করুন। (আমীন)
No comments