ছাহিবুছ ছিদক্ব, ছাহিবু লাওলাক্ব, ছাহিবুল আয়াত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক স্বপ্ন
لقد صدق الله رسوله الرؤيا بالحق.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক তাঁর রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্বপ্নকে বাস্তবে
প্রতিফলিত করেছেন।” (সূরা ফাত্হ/২৭)
আলোচ্য প্রবন্ধে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দেখা একটি মুবারক
স্বপ্ন আলোকপাত করা হল। এ থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, নবী-রসূলগণের স্বপ্ন কত গুরুত্বপূর্ণ, কত তাৎপর্যপূর্ণ এবং বিধি-বিধান ও হুকুম-আহ্কাম
সম্বলিত।
বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত সামুরা ইবনে
জুনদুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়শঃ
ফজর নামায আদায় করে আমাদের দিকে মুখ করে জিজ্ঞেস করতেন, “আজ রাতে তোমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছ কি?” রাবী বলেন, যদি কেউ স্বপ্ন দেখতেন তাহলে তিনি তা বর্ণনা করতেন। আর তিনি
আল্লাহ্ পাক-এর বিধি মুতাবিক তাবীর করতেন। যথারীতি একদা জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের কেউ আজ রাতে কোন স্বপ্ন দেখেছ কি?” আমরা (হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণ) বললাম দেখিনি। তিনি বললেন,
‘কিন্তু
আমি দেখেছি, আজ রাতে আমার কাছে
দু’জন লোক আসলেন। তাঁরা আমার হাত ধরে এক পবিত্র স্থানে নিয়ে গেলেন। সেখানে দেখলাম এক
ব্যক্তি বসে আছে। আর অপর ব্যক্তি লোহার সাঁড়াশী হাতে দাঁড়ানো। সে সেই সাঁড়াশী উক্ত
বসা লোকের গালের ভিতর ঢুকিয়ে গর্দান পর্যন্ত ফেঁড়ে ফেলছে। ইত্যবসরে প্রথম গালটি ভাল
হয়ে যায়। আবার সে পূর্বের মত করতে থাকে। আমি বললাম, ‘এটা কি?’ তারা উভয়ে বললো, সামনে চলুন। আমরা সামনে গেলাম। অতঃপর এমন এক
ব্যক্তির নিকট পৌঁছলাম, যে ঘাড়ের উপর চিৎ
হয়ে শুয়ে আছে। আর এক ব্যক্তি একটি ভারী পাথর নিয়ে তার মাথার নিকট দাঁড়িয়ে আছে। সে পাথরের
আঘাতে শায়িত ব্যক্তির মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ করছে। যখন পাথরটি নিক্ষেপ করে পাথরটি গড়াতে
গড়াতে দূরে চলে যায়। সে ব্যক্তি যখন পাথরটি পূনরায় তুলে আনতে যায়, ফিরে আসতে আসতে তার ছিন্ন মাথা ঠিক হয়ে যায়।
পুনঃ সে এটা দ্বারা আঘাত করতে থাকে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা বললো,
সামনে
চলুন। আমরা সামনে চললাম। অবশেষে একটি তন্দুরের মত গর্তের নিকট পৌঁছলাম। যার উপরের
অংশ ছিলো সংকীর্ণ। নিচের অংশ ছিলো প্রশস্ত। এর তলদেশে আগুন প্রজ্বলিত ছিলো। আগুনের
লেলিহান শিখা যখন উপরে উঠে তখন তার ভিতরে যারা রয়েছে তারাও উঠে আসে এবং গর্ত হতে বের
হওয়ার উপক্রম হয়। আর যখন অগ্নিশিখা কিছুটা স্তিমিত হয় তখন তারাও ভিতরে চলে যায়। এর
মধ্যে রয়েছে কিছু উলঙ্গ নারী-পুরুষ। আমি বললাম, “এটা কি?” তারা বললো, সামনে চলুন। আমরা সামনে অগ্রসর হয়ে একটি রক্তের
নহরের নিকট এসে পৌঁছলাম। দেখি নহরের মাঝে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে। আর তীরে দাঁড়ানো
আছে একজন। তার সামনে রয়েছে পাথরের খন্ড। নহরের লোকটি যখনই তীরে উঠতে চায় তখনই তীরে
দাঁড়ানো ব্যক্তি তাকে পাথর নিক্ষেপে পূর্বের স্থানে পৌঁছে দেয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “এটা কি?” সঙ্গীদ্বয় বললেন,
সামনে
চলুন। আমরা সামনে চলতে চলতে এক সবুজ শ্যামল বাগানে এসে পৌঁছলাম। বাগানে ছিলো এক বিরাট
গাছ। সে গাছের গোড়ায় বসা রয়েছে একজন বৃদ্ধ এবং অনেক বালক। আর তার পাশে আর এক ব্যক্তিকে
দেখলাম যার কাছে আগুন রয়েছে। আর তিনি তা প্রজ্বলিত করছেন। এরপর তারা আমাকে সেই বৃক্ষটির
উপর চড়ালো। সেখানে বৃক্ষরাজির মাঝে এমন একটি ঘরে আমাকে নিয়ে গেলো, এমন সুন্দর মনোরম ঘর আমি কখনও দেখিনি। এর মধ্যে
ছিলো কতিপয় বৃদ্ধ, যুবক, নারী ও বালক। এরপর তাঁরা আমাকে সে ঘর হতে বের করে আরো উপরে চড়াল এবং এমন এক ঘরে ঢুকালো
যা প্রথমটি হতে সমধিক উত্তম ও সুন্দর। এতেও রয়েছে কতিপয় বৃদ্ধ ও যুবক। অতঃপর আমি
সঙ্গীদ্বয়কে বললাম, “আপনারা আজ আমাকে
অনেক কিছু ঘুরিয়ে দেখালেন। এখন বলুন এর রহস্য কি? “তাঁরা বললেন,
হ্যাঁ, (আমরা তা জানাবো), ঐ যে এক ব্যক্তিকে দেখেছেন লোহার সাঁড়াশী দিয়ে
গাল চিরা হচ্ছে, সে মিথ্যাবাদী, মিথ্যা বলতো। তার মিথ্যা রটনা সারা দেশে ছড়িয়ে
পড়ত।
সুতরাং তার সাথে ক্বিয়ামত পর্যন্ত এরূপ আচরণ করা হবে, যা আপনি দেখলেন। আর যাকে পাথর মেরে মাথা চুর্ণ-বিচূর্ণ করতে দেখেছেন, সে ঐ ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন কিন্তু সে রাতে
গাফিলের মত ঘুমাত। দিনেও এর আদেশ-নিষেধ আমল করত না। সুতরাং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার সাথে
এরূপ ব্যবহার করা হবে যা আপনি দেখলেন। আর আগুনের
তন্দুরে যাদেরকে দেখেছেন তারা হলো জিনাখোর। আর রক্তের নহরে যাকে দেখেছেন, সে হলো সুদখোর। আর ঐ বৃদ্ধ যাকে বৃক্ষের গোড়ায়
বসা দেখেছেন তিনি হলেন হযরত ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম। আর তাঁর চারপাশের
বালকরা মানুষের সন্তানাদি। আর যে লোকটিকে অগ্নি প্রজ্বলিত করতে দেখেছেন তিনি হলেন দোযখের রক্ষক মালেক ফেরেশ্তা। আর যে ঘরটিতে
আপনি প্রথম প্রবেশ করেছেন তা হলো সাধারণ মু’মীনদের। পরে যে ঘরে প্রবেশ করেছেন তা শহীদদের
ঘর। আর আমি হলাম হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম আর ইনি হলেন হযরত মীকাঈল আলাইহিস্ সালাম।
এবার আপনি উপরের দিকে তাকান। আমি উপরের দিকে
তাকিয়ে একের পর এক স্তবক বিশিষ্ট সাদা মেঘের মত কিছু দেখলাম। তাঁরা বললেন, এটা আপনার বাসস্থান। আমি বললাম, আমার ঘরে প্রবেশ করতে দিন। তারা বললেন এখনও আপনার
হায়াত্ বাকি আছে। যখন আপনার নির্দিষ্ট হায়াত্ পূর্ণ হবে তখন আপনি আপনার বাসস্থানে প্রবেশ
করবেন।”
উপরোক্ত বর্ণনার মাধ্যমে আমরা মিথ্যাবাদী
ব্যক্তি, কুরআন শরীফ শিক্ষা করার পর
তার হক্ব আদায় না করার পরিণতি, সুদখোর, জিনাখোর ব্যক্তিদের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে অবগত
হলাম।
মহান আল্লাহ্ পাক যেন আমাদেরকে সত্যস্বপ্ন দেখার এবং সর্বপ্রকার পাপ কাজ হতে বিরত
থাকার তওফিক দান করেন এবং কুরআন শরীফ,
হাদীস
শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের উপর পরিপূর্ণ
দায়িম ও ক্বায়িম থেকে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাক্বীক্বী
সন্তুষ্টি নছীব করেন। (আমীন)
No comments