পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা, কারানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরয়ী ফায়সালা --> পর্ব-১
সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আ’লামীন-এর দরবারে, যিনি অসংখ্য মাখলূকাতের মধ্যে একমাত্র মানব জাতিকে
তথা মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দান করেছেন অর্থাৎ “আশরাফুল মাখলুকাত” করেছেন| সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার প্রতি অনন্তকালের জন্য অফুরন্ত ছলাত ও সালাম|
মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “আমি বনী আদম তথা
মানব জাতিকে সম্মানিত করেছি|”
√ সূরা বনী ইসরাঈল-৭০
কিন্তু কথা হলো- শুধু মানুষ বা “আশরাফুল মাখলুকাত” হিসাবে সৃষ্টি হওয়াই কি কামিয়াবী
বা সফলতা? কখনো নয়| কারণ,
যদি
তাই হতো তবে আবূ জাহিল, আবূ লাহাব জাহান্নামী
হতোনা, কেননা তারাও মানুষ ছিল|
মূলতঃ মানব জাতির “আশরাফিয়াত” তখনই বজায় থাকবে, যখন সে মহান আল্লাহ্ পাক উনার বিধানের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও
আনুগত্যতা প্রকাশ করবে| আর যদি এর বিপরীত
হয়, তবে সে হবে মাখলুকাতের মধ্যে
সবচেয়ে নিকৃষ্ট| আর তাই এ প্রসঙ্গে
কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“নিশ্চয়
আমি মানব জাতিকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি| অতঃপর তাদেরকে জাহান্নামের অতল তলে পৌছে দেব, একমাত্র তাদেরকে ব্যতীত, যারা ঈমান আনবে এবং নেক আমল করবে|”
√ সূরা ত্বীন
উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, মানব জাতির মধ্যে যারা মহান আল্লাহ্ পাক ও উনার
রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে আহলে সুন্নত ওয়াল
জামায়াত-এর আক্বীদা মোতাবিক আক্বীদাহ্ পোষণ করবে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করবে, একমাত্র তারাই আশরাফিয়াত বা শ্রেষ্ঠত্ব তথা পূর্ণ
সফলতা লাভ করতে পারবে| এছাড়া শুধুমাত্র
আক্বল-বুদ্ধি, ধন-দৌলত, বংশ মর্যাদা দ্বারা কখনোই কামিয়াবী বা শ্রেষ্ঠত্ব
লাভ করা সম্ভব নয়| আর তাই মহান আল্লাহ্
পাক কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
“নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে
একজন পুরুষ ও একজন মহিলা হতে সৃষ্টি করেছি এবং একজন আরেক জনের পরিচয় লাভের জন্যে বিভিন্ন
গোত্রে ও বংশে বিভক্ত করেছি| (তবে) নিশ্চয় তোমাদের
মধ্যে ঐ ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক উনার নিকট সবচেয়ে বেশী সম্মানিত, যে ব্যক্তি আধিক মুত্তাক্বী বা পরহিজগার|”
√ সূরা হুজরাত-১৩
উপরোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার শানে নুযুল সম্পর্কে বলা হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন
মক্কা শরীফ কাফিরদের কবল হতে মুক্ত করলেন,
তখন
হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কাবা শরীফে আযান দেয়ার নির্দেশ দিলেন| ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন, হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কাবা শরীফে
আযান দিলে কেউ কেউ বলতে লাগলো যে,
হযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন হাবশী গোলাম হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুকে আযান দিতে বললেন? উনার চেয়েও তো সুন্দর
আকৃতির, উত্তম বংশীয় লোক ছিল| ঠিক তখনই মহান আল্লাহ্ পাক উপরোক্ত আয়াত শরীফ
নাযিল করে দিলেন যে আল্লাহ্ পাক উনার নিকট উত্তম আকৃতি, উত্তম বংশ ইত্যাদির কোনই মূল্য নেই, যদি তার মধ্যে তাক্বওয়া বা পরহিজগার না থাকে|
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও শানে নুযুলের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, যদি কেউ কামিয়াবী তথা আল্লাহ্ পাক ও উনার রসূল
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই ‘তাক্বওয়া’ অর্জন করতে হবে|
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- “তাক্বওয়া” কি?
মুত্তাক্বী
কাকে বলে এবং কি করে মুত্তাক্বী হওয়া যাবে?
মূলতঃ হাক্বীক্বী ‘তাক্বওয়া’ হলো- সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ পাক উনার মতে মত ও রসূলে
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হওয়া| অর্থাৎ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসকে পরিপূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ করা| আর যে ব্যক্তি তা করবে, সে ব্যক্তিই হাক্বীক্বী মুত্তাক্বী বা পরহিজগার|
এখানে উল্লেখ্য যে, মহান রাব্বুল আ’লামীন, উম্মতে মুহম্মদীর জন্যে দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণ
করে দিয়েছেন| এ প্রসঙ্গে কালামে
পাকে ইরশাদ হয়েছে,
“আজ আমি তোমাদের জন্যে
তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম,
তোমাদের
উপর আমার নি’য়ামত সমাপ্ত করলাম এবং তোমাদের জন্যে ইসলামকেই দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম|”
√ সূরা মায়িদা-৩
আর তাই আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আ’লামীন ঈমানদারগণকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করছেন,
“হে ঈমানদারগণ, “দ্বীন ইসলামে” পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর| শয়তানের পদানঙ্ক অনুসরণ করোনা, নিশ্চয় শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শক্র|”
√ সূরা বাক্বারা-২০৮
প্রমাণিত হলো যে, হাক্বীক্বী মুত্তাক্বী
বা ঈমানদার হতে হলে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা দ্বীন ইসলামকে বা শরীয়তকে
পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে| কেননা আল্লাহ্ পাক
তো বলেই দিয়েছেন,
“রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা আদেশ করেছেন,
তা
আঁকড়িয়ে ধর, আর যা থেকে বিরত
থাকতে বলেছেন, তা থেকে বিরত থাক
এবং আল্লাহ্ পাককে ভয় কর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তিদাতা|”
√ সূরা হাশর-৭
সুতরাং সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল
মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা তথা উনার পরিপূর্ণ ইত্তেবা বা অনুসরণ করাই হচ্ছে
হাক্বীক্বী তাক্বওয়া| কেননা হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন ‘আতক্বা’ অর্থাৎ ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মুত্তাক্বী|’ অতএব যারা উনার পুঙ্খানুপুঙ্খ ইত্তেবা বা অনুসরণ
করবে, একমাত্র তারাই মুত্তাক্বী
হিসাবে গণ্য হবে| আর এর বিপরীত যারা
করবে, তাদের পক্ষে হাক্বীক্বী মুত্তাক্বী
বা ঈমানদার হওয়া কখনোই সম্ভব নয়|
এ প্রসঙ্গে
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“হযরত আনাস ইবনে মালিক
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
(একবার)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
ইবাদত সম্পের্কে জানার জন্যে উম্মুল মু’মিনীনগণের নিকট তিনজন ছাহাবী আসলেন| যখন উনাদেরকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার ইবাদত সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হলো, তখন উনারা ধারণা করলেন যে, উনার ইবাদতগুলো পরিমাণে কম| পরক্ষণে চিন্তা করে বললেন, আমরা উনার তুলনায় কোথায়? আল্লাহ্ পাক তো উনার পূর্বের ও পরের সকল গুণাহখাতা ক্ষমা করেছেন, অর্থাৎ উনি মাছুম বা নিষ্পাপ| (কাজেই উনার অল্প ইবাদত করলেও চলবে, কিন্তু আমরা তো মাছুম নই, তাই আমাদের আরো বেশী ইবাদত করতে হবে|) সুতরাং উনাদের মধ্য হতে একজন বললেন, আমি (আজ থেকে) সারা রাত্র নামায পড়বো, ঘুমাবো না| দ্বিতীয়জন বললেন,
আমি
সারা বৎসর রোজা রাখবো, ভঙ্গ করবোনা| তৃতীয়জন বললেন, আমি আহলিয়ার নিকট থেকে দূরে থাকবো | (এমন সময়) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের
নিকট এসে উপস্থিত হলেন এবং বললেন,
তোমরা
কি এরূপ কথা বলেছ? সাবধান! আল্লাহর
কসম, তোমাদের চেয়েও আমি আল্লাহ্
পাককে অধিক ভয় করি এবং আমি তোমাদের চেয়েও অধিক মুত্তাক্বী| (তারপরও) আমি রাত্রে নামায পড়ি ও ঘুমাই, রোযা রাখি আবার বিরত থাকি এবং আমি আহলিয়া গ্রহণ
করেছি| সুতরাং এগুলো আমার সুন্নতের
অন্তুর্ভূক্ত, যে ব্যক্তি আমার
সুন্নত থেকে ফিরে যাবে, সে আমার উম্মত নয়|”
√ দলীল- বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফের ভিত্তিতে দু’টো বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেল যে,
১) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন, “আতক্বা” অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ মুত্তাক্বী|
২) কেউ যদি হাক্বীক্বী মুত্তাক্বী হতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই প্রতি ক্ষেত্রে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
পরিপূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে|
অর্থাৎ
উনি যে দ্বীন তথা শরীয়ত নিয়ে এসেছেন,
উক্ত
দ্বীন বা শরীয়ত মোতাবেক চলতে হবে|
আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“হযরত
আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল
মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার প্রত্যেক উম্মত
জান্নাতে যাবে একমাত্র ঐ ব্যক্তি ব্যতীত,
যে
আমাকে অস্বীকার করেছে| জিজ্ঞাসা করা হলো-
কোন ব্যক্তি আপানাকে অস্বীকার করলো ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে অনুসরণ-অনুকরণ করবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে| আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করেছে অর্থাৎ আমাকে
অনুসরণ-অনুকরণ করেনি সে ব্যক্তিই মূলতঃ আমাকে অস্বীকার করেছে|”
√ দলীল- বুখারী শরীফ, মুসলীম শরীফ, মিশকাত শরীফ
অতএব, স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, ইহকালীন ও পরকালীন সফলতা তথা আল্লাহ্ পাক ও হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি লাভ করতে হলে, দ্বীন ইসলাম অর্থাৎ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসকে অনুসরণ-অনুকরণ করতে হবে| কারণ,
কুরআন
শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসকে অনুসরণ-অনুকরণ করার অর্থই হচ্ছে
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে
অনুসরণ-অনুকরণ করা, যা আল্লাহ্ পাক উনার
সন্তুষ্টি লাভের পূর্ব শর্ত| আর তাই মহান আল্লাহ্
পাক রাব্বুল আ’লামীন, উনার পবিত্র কালামুল্লাহ্
শরীফে ইরশাদ ফরমান,
“হে হাবীব! আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহ্ পাককে ভালবাসতে চাও আমার ইত্তেবা
কর| তবেই আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে
মহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুণাহসমূহ ক্ষমা করবেন| আল্লাহ্ পাক ক্ষমাশীল ও দয়ালু|”
√ সূরা আলে ইমরান-৩১
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, মানুষ ‘আশরাফুল মাখলূকাত’ সত্য কথাই, তবে এই আশ্রাফিয়তই নাযাত পাওয়ার জন্যে যথেষ্ট
নয় বরং নাযাত পেতে হলে সর্ব প্রথম আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদা মোতাবেক আক্বীদা
পোষণ করতে হবে| অতঃপর তাক্বওয়া অর্জন
করতে হবে| আর তাক্বওয়া অর্জন করার একটাই
পথ, তা হলো- সর্বক্ষেত্রে সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা
কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসকে অনুসরণ ও অনুকরণ করা| কাজেই বলার অপেক্ষই রাখেনা যে, মূর্তি বা প্রাণীর ছবির ব্যাপারেও কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসকেই অনুসরণ করতে হবে| অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম প্রাণীর মূর্তি বা ছবি সম্পর্কে যে ফায়সালা দিয়েছেন বা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে প্রাণীর মূর্তি বা ছবি সম্পর্কে যে ফায়ছালা
রয়েছে সকলকেই হুবহু তাই বিশ্বাস করতে হবে ও মেনে চলতে হবে| তবেই ঈমান আমল হিফাযত করা সম্ভব হবে এবং হাক্বীক্বী
মুত্তাক্বী হওয়া যবে|
উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ্ পাক
পবিত্র কালামে পাকে ‘সূরা মায়িদা’র’ ৮২নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
“তোমরা তোমাদের সবচেয়ে
বড় শক্র হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে|
অতঃপর
যারা মুশরিক তাদেরকে|”
মূলতঃ এই ইহুদীরাই মুনাফিক সেজে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল
মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দিয়েছিল,
উনাকে
শহীদ করার চক্রান্ত করেছিল| এই ইহুদীরাই মুনাফিকী
করে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহ্ তায়ালা আনহুমগণের পরস্পরের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি
করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল| আর মূলতঃ এই ইহুদীরাই
মুসলমানের ঈমান-আমল বিনষ্ট করে দ্বীন ইসলামে ফিৎনা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাতিল
ফিরকার উদ্ভব ঘটিয়েছে| অর্থাৎ শিয়া, খারিজী, মু’তাযিলা,
জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, বাহাই, কাদিয়ানী ও ওহাবী
ইত্যাদী বাতিল ফিরকাগুলো ইহুদীদেরই সৃষ্টি এবং এদেরই এজেন্ট|
বর্তমানে ইহুদীদের এজেন্ট হিসেবে মুসলামনদের ঈমান আমলের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করছে
যারা, তারা হলো ‘ওহাবী সম্প্রদায়’, বর্তমানে তারা বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন- আহলে হাদীছ, ছালাফী, রফে ইয়াদাইন|
ইহুদীদের এজেন্ট ওহাবী মতাবলম্বী উলামায়ে ‘ছূ’রা হারাম টিভি চ্যালেন, পত্র-পত্রিকা, কিতাবাদি ও বক্তব্য বা বিবৃতির মাধ্যমে একের পর এক হারামকে হালাল, হালালকে হারাম, জায়িযকে নাজায়িয, নাজায়িযকে জায়িয বলে প্রচার করছে| যেমন,
তারা
প্রচার করছে- ফরয নামাযের পর মুনাজাত করা বিদয়াত ও হারাম| নিয়ত করে রওযা শরীফ ও মাযার শরীফ যিয়ারত করা
শিরক, কদমবুছী করা নাজায়িয ও শিরক, মাযহাব মানার কোন প্রয়োজন নেই, পীর-মুরীদী শরীয়ত বিরোধী প্রথা, মীলাদ-ক্বিয়াম করা শিরক-বিদয়াত, শবে বরাত পালন করা বিদয়াত, তারাবীহ নামায জরুরী কোন নামায নয়, আট রাকায়াত তারাবীহ পড়লেই চলে ইত্যাদি ইত্যাদি| (নাউযুবিল্লাহ্) অথচ উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়টি
কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ্ শরীফ তথা শরীয়তসম্মত এবং তন্মধ্যে কোনটা সুন্নত আবার কোনটা ফরয|
পক্ষান্তরে উলামায়ে ‘ছূ’ তথা দুনিয়াদার মাওলানারা টেলিভিশন, সিনেমা, নাটক, নোবেল, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব মানা,
ভোট
দেয়া, রোযা অবস্থায় ইনজেকশন নেয়া, মহিলাদের জামায়াতের জন্যে মসজিদে যাওয়া, মহিলাদের বাইরে বের হওয়ার সময় হাত ও মুখ খোলা
রাখা, হরতাল করা, লংমার্চ করা, গণতন্ত্র করা,
ব্লাশফেমী
আইন চাওয়া, মৌলবাদী দাবী করা, কুশপুত্তলিকা দাহ করা, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম বা অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি
নাজায়িয কাজগুলোকে জায়িয বলে প্রচার করছে|
(নাউযুবিল্লাহ্)
অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে,
মুসলমানদেরকে
ইসলাম থেকে সরিয়ে ইবাদত থেকে সরিয়ে অনৈসলামিক ও হারাম কাজে মাশগুল করে দিয়ে বেঈমান
করে দেয়া|
মূলতঃ যুগে যুগে দুনিয়া লোভী উলামায়ে ‘ছূ’রা দুনিয়াবী ফায়দা লুটার উদ্দেশ্যে হারামকে
হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়ে আসছে|
যেমন, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যামানায় উলামায়ে ‘ছূ’রা আবুল ফযল, ফৈজী ও মোল্লা মুবারক নাগোরী গংরা বাদশা আকবরকে
সন্তুষ্ট করে দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের মনগড়া
অপব্যাখ্যা করে বহু হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম ফতওয়া দিয়েছিল|
বর্তমান যামানার উলামায়ে ‘ছূ’ তথাকথিত পীর, আমীর, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাসসিরে কুরআন
ও তার অনুসারী গংরা যেন আবুল ফযল গংদেরই পূর্ণ মিছদাক তথা নমুনা|
দুনিয়াবী ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যে এবং খানিকটা পদ লাভের প্রত্যাশায় তারা নাজায়িয
ও হারাম কাজগুলো নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে|
সাথে
সাথে নাজায়িয ও হারাম কাজগুলোকে হালাল বলে ফতওয়া দিচ্ছে| বস্ত্ততঃ এরাই হচ্ছে হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালের
চেলা|
যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
“হযরত আবূ হুরাইরা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত|
তিনি
বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু
সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে,
তারা
তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও
শুনেনি| সাবধান! তোমরা তাদের থেকে
দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে| তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা|”
√ মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ
No comments