প্রানীর ছবির ক্ষেত্রে শরয়ী ফায়সালা --> পর্ব-২ (ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত ক্ষতি-আ’মালী বা আমলগত ক্ষতি)
পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী
করা, কারানো ও ছবি আঁকা, তোলা,
তোলানো, রাখা,
রাখানো, দেখা,
দেখানো
হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরয়ী ফায়সালা।
স্মরনীয় যে, ইহুদীদের এজেন্ট, ওহাবী মতাবলম্বী দাজ্জালে কাযাযাব তথা উলামায়ে
‘ছূ’রা উল্লিখিত বিষয়গুলোর ন্যায় ‘প্রাণীর ছবি’ সম্পর্কেও সমাজে বিভ্রান্তি ছাড়াচ্ছে| যেমন গত জাতীয় নির্বাচনের সময় দৈনিক পত্রিকায়
প্রকাশিত হয়েছিল, “নির্বাচন কমিশনার
বলেছে, ছবি তোলার বিরুদ্ধে বললে
জেল-জরিমানা হবে, নির্বাচন কমিশনার
ভোটার আই,ডি কার্ডের জন্য ছবিকে বাধ্যতামূলক
করেছে এবং ছবির পক্ষে মসজিদে মসজিদে প্রচারণা চালাবে বলেও মন্তব্য করেছে| আর উলামায়ে ‘ছূ’রা তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করে
বক্তব্য দিয়েছে যে, “রাষ্ট্রিয় প্রয়োজনে
পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যই ছবি তোলা জায়িয|”
(নাউযুবিল্লাহ্)
শুধু তাই নয় তারা নিজেরাও অহরহ ছবি তুলে বা তোলায়|
অথচ তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, চরম বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক| তাদের এ বক্তব্যের কারণে তারা নিজেরা যেরূপ ক্ষতিগ্রস্ত
হচ্ছে, তদ্রুপ তাদের উক্ত কুফরীমুলক
বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত ও আ’মালী বা আমলগত
উভয় দিক থেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হচ্ছে|
<><><><><><><><>
ই’তেক্বাদী
বা আক্বীদাগত ক্ষতি <><><><><><><><>
তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ এটাই মনে করবে যে, সত্যিই বুঝি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয| (নাউযুবিল্লাহ্)
কাজেই তাদের উক্ত বক্তব্যের কারণে যারা এ আক্বীদা পোষণ করবে যে, “রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়িয” তারা ঈমান
হারা হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে|
কারণ
শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম বা নাজায়িযকে হালাল বা জায়িয বলা কুফরী|
অতএব বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে,
উলামায়ে
“ছূ”দের উক্ত বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আক্বীদা বা ঈমানের জন্য বিশেষভাবে হুমকীস্বরূপ| অথচ বান্দার ইবাদত-বন্দেগী বা নেক আমল কবুলযোগ্য
হওয়ার জন্যে প্রধানতম শর্ত হচ্ছে- আক্বীদা শুদ্ধ থাকা অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের
আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা|
কারণ
বিশুদ্ধ আক্বীদা আমল কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত|
তাই
মহান আল্লাহ্ পাক, পবিত্র কালামে পাকে
ইরশাদ করেন, “আছরের কছম বা সময়ের
কছম! সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে,
একমাত্র
তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে
এবং নেক আমল করেছে|”
√ সূরা আছর
উপরোক্ত আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক মানব জাতিকে ধ্বংস হতে নাযাত পাওয়ার প্রথম
উপায় হিসাবে ঈমান (আক্বীদা)কে আখ্যায়িত করেছেন| অতঃপর আমলের প্রশ্ন|
কারণ
ঈমানহীন ব্যক্তির নেক আমলের কোন মূল্যই মহান
আল্লাহ্ পাক উনার নিকট নেই| কাজেই বান্দার জন্যে
প্রধানতম ফরজ এই যে, সে সর্ব প্রথম তার
ঈমান বা আক্বীদাকে বিশুদ্ধ করবে অর্থাৎ ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা পোষণ
করবে| অর্থাৎ ইসলামে যা হারাম তা
হারাম জানবে ও মানবে এবং যা হালাল তা হালাল জানবে ও মানবে|
কেননা আক্বীদাগত কারণেই ইসলামে ৭২টি বাতিল ফেরক্বার আবির্ভাব হয়েছে| যদিও তাদের কথাবার্তা, চাল-চলন, ছূরত-সীরত ইত্যাদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে অনেক ক্ষেত্রেই মুসলমানের
ন্যায় বা ইসলামসম্মত, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই
তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়ে ইসলাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ,
ইজমা
ও ক্বিয়াস অর্থাৎ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণ বিপরীত আক্বীদা পোষণ
করে থাকে, যা সুস্পষ্ট কুফরী| যেমন-
√ ক্বদরিয়া সম্প্রদায়- তারা তক্বদীরকে অবিশ্বাস
করে, অথচ তক্বদীরের উপর ঈমান আনা
ফরজ|
√ খারেজী সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা হলো- হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ কাফির (নাউযুবিল্লাহ্), অথচ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুমগণের প্রতি সুধারণা পোষণ করা ঈমানের অঙ্গ বা ফরজ|
√ রাফেজী বা শিয়া সম্প্রদায়- তাদের আক্বীদা মতে
শিয়াদের ঈমামের মর্যাদা নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের চেয়েও বেশী, বর্তমান কুরআন শরীফ পরিবর্তীত, হযরত আলী আলাইহিস সালাম ব্যাতীত খুলাফায়ে রাশেদীনের
সকলেই মুরতাদ, ছবি আঁকা হারাম তোলা
জায়িয| (নাউযুবিল্লাহ্)
√ অনুরূপ বর্তমান যামানার ভয়ঙ্কর ফিৎনা- কাদিয়ানী
সম্প্রদায়, তাদের আক্বীদা হলো-
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেষ
নবী নন, উনার পর আরো নবী পৃথিবীতে
আসবে, তাই তারা গোলাম কাদিয়ানীকে
নবী বলে বিশ্বাস করে, যা অকাট্য কুফরী|
অথচ তারা প্রত্যেকেই বাহ্যিক দৃষ্টিতে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাতের কথা বলে, টুপি,
কোর্তা, পাগড়ী পরিধান করে| সবকিছুর পরও তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের
ফতওয়া মোতাবেক কাফির বা অমুসলিম|
কারণ
তাদের উপরোক্ত আক্বীদাসমূহ সম্পূর্ণই কুফরী|
আর এদের প্রসঙ্গেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহ্ তায়ালা আনহু বর্ণনা
করেন, আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, অতি শীঘ্রই আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত সকল দল জাহান্নামে যাবে| জিজ্ঞাসা করা হলো- যে দলটি (নাযাত পাবে) সেটা
কোন দল? ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল
মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে (মত-পথের) উপর
আমি আমার ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ রয়েছি তার উপর যারা থাকবে, তারাই সেই নাযাত প্রাপ্ত দল|”
√ দলীলঃ- আহমদ, আবু দাউদ,
মিশকাত, মিরকাত, লাময়াত ইত্যাদি
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের যেকোন আমলই হোক না কেন এবং যে কেউই করুক
না কেন, তা যদি আক্বীদা শুদ্ধ রেখে
শরীয়ত সম্মতভাবে করা হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য| আর যদি আক্বীদার মধ্যে কোন ক্রটি থাকে, তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য| যেমন- খারেজী, রাফেজী, কাদিয়ানী ইত্যাদি
সম্প্রদায় পরিত্যাজ্য ও বাতিল| সুতরাং ইসলামে হারামকৃত
প্রাণীর মূর্তী বা ছবিকে যারা জায়িয বলবে তারাও কুফরী আক্বীদার কারণে বাতিল ও পরিত্যাজ্য
বলে গণ্য হবে|
================ আ’মালী বা আমলগত
ক্ষতি =====================
“রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে
সকলের জন্য ছবি তোলা জায়িয” উলামায়ে “ছূ”দের এ বক্তব্য সাধারণ মুসলমানদের আমলের ক্ষেত্রেও
বিশেষ ক্ষতির কারণ| কেননা যারা তাদের
উক্ত বক্তব্যের কারণে ছবি তুলবে তারা মহান আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত
কাজে তথা হারাম কাজে মশগুল হবে যা শক্ত আযাব বা কঠিন গুণাহের কারণ| যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ﻗﺎﻝ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺍﻻﻋﻤﺶ ﻋﻦ ﻣﺴﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻛﻨﺎ ﻣﻊ ﻣﺴﺮﻭﻕ ﻓﻰ ﺩﺍﺭ ﻳﺴﺎﺭ ﺑﻦ ﻧﻤﻴﺮ ﻓﺮﺍﻯ ﻓﻰ ﺻﻔﺘﻪ ﺗﻤﺎﺛﻴﻞ ﻓﻘﺎﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻥ ﺍﺷﺪ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﺬﺍﺑﺎ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻤﺼﻮﺭﻭﻥ .
অর্থঃ- “হযরত আ’মাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুসলিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর সঙ্গে
ইয়াসার ইবনে নুমাইরের ঘরে ছিলাম,
তিনি
উনার ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন,
অতঃপর
বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহর নিকট
শুনেছি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ্ পাক
কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর
ছবি তোলে বা আঁকে|”
√ দলীল- পবিত্র বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃষ্ঠাঃ৮৮০ |
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى زرعة قال مع ابى هريرة دار مروان بن الحكم فراى فيها تصاوير وهى تبنى فقال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول يقول الله عز وجل ومن اظلم ممن ذهب يخلق خلقا كخلقى فليخلقوا ذرة او ليخلقوا حبة او ليخلقوا شعيرة.
অর্থঃ- “হযরত আবু যুরয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর
সঙ্গে মদীনার এক ঘরে প্রবেশ করলাম,
অতঃপর
তিনি ঘরের উপরে এক ছবি অঙ্কনকারীকে ছবি অঙ্কণ করতে দেখতে পেলেন এবং বললেন, আমি আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি,
তিনি
বলেছেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তি
অধিক অত্যাচারী, যে ব্যক্তি আল্লাহ্
পাক উনার সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছুরত সৃষ্টি করে| তাকে বলা হবে,
একটি
দানা সৃষ্টি কর অথবা একটি কণা সৃষ্টি কর|”
√ দলীল- পবিত্র বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ৮৮০,
√ পবিত্র মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০২|
এ ধরনের আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে,
যাতে
প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা, ছবি আঁকা, আঁকানো, তোলা তোলানো ও রাখা,
রাখানোর
ব্যাপারে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে|
অর্থাৎ
যারা এগুলো করবে তারা মহান আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার কঠিন অসন্তুষ্টির পাত্র হবে|
অতএব নিঃসন্দেহে বলা যায় যে,
উলামায়ে
“ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ছবি তুলে প্রকাশ্য হারাম কাজে
মশগুল হয়ে কঠিন আযাবের পাত্র হবে যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর|
কাজেই যারা এ ধরণের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও
আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে| অর্থাৎ মূর্তি বা
ছবিসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে
এবং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ্
পাক উনার রেজামন্দী হাছিল করতে পারে|
সে
জন্যই “পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী
করা, কারানো ও ছবি আঁকা, তোলা,
তোলানো, রাখা,
রাখানো, দেখা,
দেখানো
হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরয়ী ফায়সালা” তুলে
ধরা হচ্ছে|
এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে,
আমাদের
সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ| অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই| আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই| কারণ বন্ধত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র মহান আল্লাহ্
পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয়-এর জন্যেই হতে হবে|
এপ্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
বর্ণনা করেন, আল্লাহ্ পাক উনার
হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয়-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মুহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে তার ঈমান পরিপূর্ণ|”
√ দলীল- পবিত্র আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, বযলুল মাযহুদ,
উরফুশশাজী
ইত্যাদি|
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক,
তাই
এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত| কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
বলেন, আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্যে আয়না| যখন সে তার মধ্যে কোন দোষক্রটি দেখবে তখন সে
তাকে সংশোধন করে দিবে|”
√ দলীল- পবিত্র বুখারী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত |
এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
আমীরুল
মু’মিনীন, হযরত উমর ইবনূল খত্তাব আলাইহিস
সালাম স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল
মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত আনছার এবং মোহাজির রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুমগণকে জিজ্ঞাসা করলেন,
“যদি
আমি দ্বীনের হুকুম-আহকামকে সহজতম করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল| হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম দ্বিতীয়
এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন|
তখন
হযরত বশীর ইবনে সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়|” এ কথা শুনে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম
বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী|”
√ দলীল- আওয়ারিফুল মা’য়ারিফ |
অতএব, মূর্তি বা প্রাণীর ছবি সম্পর্কে
যারা ফিৎনা বা বিভ্রান্তিতে রয়েছে,
তাদের
সে ফিৎনা ও বিভ্রান্তি নিরসন করা ও উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফের মিছদাক হওয়াই “মূর্তি”
ও “প্রাণীর ছবি” বিষয়ে শরয়ী ফায়সালা তুলে ধরার মূল কারণ|
No comments