সূরা নিসা উনার ৬৫ নাং আয়াত শরীফ উনার সহীহ অনুবাদ ও তাফসীর দ্বারা প্রমাণিত যারা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ফায়ছালাকারী-কাজী মেনে না নিবে তারা কখনো মুমিন হতে পারবে না অর্থাৎ তারা বেঈমান।
আল্লাহ পাক বলেন,
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
অর্থঃ “অতএব হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের যাহিরী এবং বাতিনী প্রত্যেক বিষয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ফায়ছালাকারী-কাজ
তাফসীরঃ এক ব্যক্তি ছিল, তার নাম ছিল বিশর। সে মুসলমান দাবি করতো, হাক্বীক্বত সে ছিল মুনাফিক। এই মুনাফিক বিশরের সাথে এক ইহুদীর সাথে গন্ডগোল হয়ে যায়। যখন গন্ডগোল হয়ে গেল, তখন মুনাফিক বিশরকে ইহুদী বললো, হে বিশর এটার বিচার বা ফায়ছালা করতে হবে। কে বিচার করবেন? ইহুদী বললো, তোমাদের যিনি নবী ও রসূল, যিনি আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিচার করবেন।
মুনাফিক বিশর মনে মনে চিন্তা করলো, নূরে মুজাসসাম ,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি বিচার করেন, উনি তো হক্ব বিচার করবেন, তাহলে ইহুদীর পক্ষে রায় চলে যাবে। তখন মুনাফিক বিশর বললো যে, না তুমি এক কাজ করো, তোমাদের যে বিচারক, কাব ইবনে আশরাফ অথবা আবু রফে ইহুদী রয়েছে তারা বিচার করবে। কিন্তু ইহুদী ব্যক্তি জানতো যে, কাব ইবনে আশরাফ অথবা আবু রফে যদি বিচার করে, তাহলে তারা মুনাফিকী করবে। হেরফের করবে, তারা ঘুষ খেয়ে পক্ষপাতিত্ব করবে। কারণ পূর্বেও তারা এমন অনেক করেছে যার নজির রয়েছে। তখন সেই ইহুদী বললো- না, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিচার করবেন।
এই কথা বলে মুনাফিক বিশরকে বুঝিয়ে নিয়ে গেল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে। বিচার হয়ে গেল। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিচার করলেন। মুনাফিক বিশরের বিরুদ্ধে ইহুদীর পক্ষে রায় পড়লো। মুনাফিক বিশর সেখানে তা বাহ্যিকভাবে মেনে নিলেও দরবার শরীফ থেকে বের হয়ে বললো, বিচারটা আমার মনঃপূত হচ্ছে না। নাউযুবিল্লাহ!
ইহুদী বললো, হে বিশর তুমি বলো কি? তোমাদের যিনি রসূল, যিনি আল আমীন উনার বিচার তোমার মনঃপূত হয়নি? তবে তুমি কার বিচার মানবে? সেই যামানায় খলীফায়ে ছানী সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বিচার করতেন। মুনাফিক বিশর সে মনে করলো যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খুব জালালী তবিয়ত। উনার প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন-
اشداء على الكفار
অর্থাৎ “উনি কাফিরদের প্রতি কঠোর।” (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৯)
তিনি হয়তো আমার পক্ষেই রায় দিবেন এবং ইহুদী কাফির তার বিপক্ষে রায় দিবেন। মুনাফিক বিশর সে ইহুদীকে নিয়ে গেল সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার কাছে বিচারের জন্য। ইহুদী খুব চালাক ছিল, সে বললো, হে উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম! এই বিশর আমাকে নিয়ে এসেছে আপনার কাছে বিচারের জন্য, অথচ আমরা এই মাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবারে নববী শরীফ থেকে আসলাম; তিনি নিজে বিচার করে দিয়েছেন। রায় আমার পক্ষে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিশর সে বিচার মানতে নারাজ; সেজন্য সে আমাকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছে পুনরায় বিচার করার জন্য। সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি একথা শুনে বললেন, ঠিক আছে তোমরা বস, আমি তোমাদের বিচার করবো। উনি ঘরে প্রবেশ করলেন, ঘরে প্রবেশ করে একটা তরবারী নিয়ে আসলেন। তরবারী এনে মুনাফিক বিশরকে এক কোপে দু’ভাগ করে দিলেন এবং বললেন, এটাই তোমার বিচার। কারণ, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে বিচার করেছেন, সেটা তুমি মান নাই। তোমার একমাত্র শাস্তি ও বিচার মৃত্যুদণ্ড।
যখন উনি তাকে হত্যা করে ফেললেন, তখন মুনাফিক বিশরের আত্মীয়-স্বজন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গিয়ে বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে আপনি বিচারের দায়িত্ব দিয়েছেন। উনি আমাদের একজন আত্মীয়কে হত্যা করে ফেলেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, দেখ এটা কি করে সম্ভব? সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনি তো খাছ লোক-
لوكان بعدى نبى لكان عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه.
“আমার পরে যদি কেউ নবী হতেন, তাহলে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি নবী হতেন।” কাজেই উনার পক্ষে এটা সম্ভব নয়, ঠিক আছে উনাকে ডাকা হোক। সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনাকে আনা হলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আপনি নাকি একজন মুসলমানকে হত্যা করেছেন?” সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মূলতঃ আমি তাকে হত্যা করার কারণ হচ্ছে- সে মুনাফিকী করেছে। আপনি যে বিচার করেছিলেন, সে বিচার সে মানেনি, সেজন্য আমি তাকে হত্যা করেছি। মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “হে ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আপনি যাকে হত্যা করেছেন, সে যে মুনাফিকী করেছে, তার প্রমাণ কি? কোথায় আপনার দলীল, আপনার সাক্ষী কোথায়?” যেহেতু ইসলামে সাক্ষী ছাড়া কোনো কথা গ্রহণযোগ্য নয়। সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি চুপ করে রইলেন। সাথে সাথে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নিজে সাক্ষী হয়ে গেলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করে দিলেন-
فلا وربك لايؤمنون حتى يحكمو ك فيما شجر بينهم ثم لا يجدوا فى انفسهم حرجا مما قضيت ويسلموا تسليما.
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের যাহিরী এবং বাতিনী প্রত্যেক বিষয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ফায়ছালাকারী-কাজ
সূত্রঃ
তাফসীরে জালালাইন শরীফ, ১/৮৪২
তাফসীরে দুররে মানছুর , ২/৩২২
তাফসীরে ইবনে কাছীর , ২/৪০২
আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেনঃ
وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى
অর্থঃ আমার হাবীব রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি নিজের ইচ্ছামতো কোন কথা বলেন না। আমি যা ওহীর মাধ্যমে উনার কাছে পাঠাই তাই বলে থাকেন। (সূরা নাজম শরীফঃ ৩-৪)
তার মানে এই আয়াত শরীফ প্রমাণ করে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কথাই বলতেন তা সম্মানিত ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত
মহান আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক করেনঃ
مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا
যে লোক রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার হুকুম মান্য করবে সে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম মান্য করলো। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে (হে রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকার
আল্লাহ পাক বলেন,
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا
“রসুলূল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের যা দিয়েছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর তিনি যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।” (সূরা হাশরঃ ৭)
তাহলে আল্লাহ পাক উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলতেন , যা করতেন সবই ওহীর অন্তর্ভুক্ত। উনি যে বিচার করতেন , ফায়সালা করতেন তা উনার নিজের মত বা নিজের ফায়সালা না সবই ছিল আল্লাহ পাক উনার ওহী।সুবহানাল্লা
[এক নাস্তিকের দাবী রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি নিজের আইন দিয়ে বিচার করতেন।নাউজুবিল্
No comments