অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারাও ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করেন।
সূরা আল ইমরান উনার ৮১ নাং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে আলমে
আরওয়াহতে কৃত ওয়াদার বাস্তবতা প্রতিপালনের লক্ষ্যে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম
উনারা যমিনে আগমন করে সারা জীবন স্বীয় উম্মতগণের সাথে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা
ছিফত বা প্রশংসা করেছেন।আর ঐ ওয়াদার বাস্তবতায়ই হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম তিনি
দু’শ থেকে তিনশত বছর কান্নাকাটি করার পর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করার কারণে উনার দুয়া
কবুল করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে এসেছে-
عن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما افترى ادم الخطئه قال يارب اغفرلى بحق محمد صلى الله عليه وسلم. قال الله تعالى ياادم عليه السلام كيف عرفت محمدا صلى الله عليه وسلم قال لانك لما خلقتنى بيدك ونفخت فى من روحك فرفعت رأسى فرأيت على قوام العرش مكتوبا لااله الا الله محمد رسول الله فعلمت انك لم تضف الى اسمك الا احب الخلق اليك. قال الله تعالى صدقت ياادم عليه السلام لولا محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم ماخلقتك.
অর্থ: হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত।মহান
আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম উনার দুয়া
কবুলের সময় হলো তখন তিনি বললেন,
হে
আল্লাহ পাক! আপনার হাবীব মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার উছীলায় আমার দুয়া কবুল করুন।তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, হে হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম! আপনি কিভাবে
আমার হাবীব মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চিনেছেন? উত্তরে হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে আল্লাহ্ পাক! আপনি যখন আমাকে কুদরতী হাতে
তৈরী করে আমার মধ্যে রূহ মুবারক ফুকে দিলেন,
তখন
আমি মাথা উত্তোলন করে দেখলাম আপনার আরশে মুয়াল্লার সাথে লিখা রয়েছে-
لا اله الا الله محمد رسول الله.
তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, আপনার নাম
মুবারকের সাথে যাঁর নাম মুবারক লিখা রয়েছে,
তিনিই
আপনার সবচেয়ে বেশী খাছ ও প্রিয় হাবীব হবেন।তাই আমি উনার উছীলা দিয়ে আপনার নিকট
দুয়া চেয়েছি।
তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বলেন, আপনি সত্যই বলেছেন।যদি মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য না থাকতো, তবে আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না।” (মুস্তাদরাকে
হাকিম, আছ্ছহীহা ১/৮৮, মুখতাসারুল মুস্তাদরাক ২/১০৬৯, আত তাওয়াসসুল/১১৫, তাফসীরুদ দুরারিল মানসূর ১/৫৮, কানযুল উম্মাল)
অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি দু’শ থকে তিন শত বছর কান্নাকাটি করার পরে
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ পবিত্র ঈদে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
পালন করার কারণে উনার দুয়া কবুল করা হয়েছে।সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপভাবে সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম যমিনে থাকাবস্থায় সারাজীবন আখিরী
রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন্ নবী তথা ছানা-ছিফত প্রশংসা ও
তা’যীম-তাকরীম করেছেন।
তদ্রুপ যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম যমিনে তাশরীফ আনার জন্য যখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আমিনা
আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ-এ কুদরতীভাবে তাশরীফ নিয়েছিলেন তখন নয় মাসে নয়
জন আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করার
জন্য হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার নিকট কুদরতিভাবে তাশরীফ এনেছিলেন।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
হযরত আমিনা আলাইহাস্ সালাম তিনি বলেন,
আমি
যখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব,
সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক পবিত্র রজবুল আছম মাসে আমার মধ্যে ধারণ করলাম তখন এক
রাত্রে আমি ঘুমের ঘোরে দেখতে পেলাম আমার সামনে সুউজ্জল চেহারা মুবারক নিয়ে
সীমাহীন সুঘ্রাণ ও নূরসহ এক সুপুরুষ হাজির হয়ে বললেন,
مرحبا بك يا محمد صلى الله عليه وسلم.
অর্থ:- হে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে
মারহাবা, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কে? উত্তরে আগন্তুক ব্যক্তি বললেন, আমি মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম।আমি
বললাম আপনি কি জন্য এসেছেন? উত্তরে তিনি
বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস্
সালাম আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন।আপনি সমস্ত মানব জাতির সাইয়্যিদ, রবীয়া ও মুদার গোত্রের ফখর হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আপনার রেহেম শরীফ-এ ধারণ করেছেন।দ্বিতীয়
মাসে আমার নিকট এক ব্যক্তি আগমন করে বললেন-
السلام عليك يارسول الله صلى الله عليه وسلم.
আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কে?
উত্তরে
তিনি বললেন, আমি হযরত শীশ
আলাইহিস্ সালাম।আমি বললাম আপনি কি জন্য এসেছেন? তিনি বললেন,
হে
হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম, আপনি সুসংবাদ গ্রহণ
করুন।আপনি আপনার রেহেম শরীফ-এ ছহিবে তাবীল ও ছহিবে হাদীছ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ধারণ করেছেন।অনুরূপ তৃতীয় মাসেও আমার নিকট এক ব্যক্তি
এসে বললেন-
السلام عليك يانبى الله صلى الله عليه وسلم.
আমি জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কে?
জবাবে
তিনি বলেন, আমি হযরত ইদরীস
আলাইহিস্ সালাম।আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
আপনি
কি জন্য এসেছেন? উত্তরে তিনি
বললেন, হে হযরত আমিনা আলাইহাস্
সালাম আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন।আপনি সমস্ত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের
শিরমনি রসূলে আকরাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আপনার রেহেম শরীফ-এ
ধারণ করেছেন।
চতুর্থ মাসেও এক ব্যক্তি এসে সালাম দিয়ে বললেন,
السلام عليك يا حبيب الله صلى الله عليه وسلم.
আমি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কে?
উত্তরে
তিনি বললেন, আমি হযরত নূহ
আলাইহিস্ সালাম।
আমি প্রশ্ন করলাম আপনি কেন এসেছেন?
তিনি
বললেন, আপনি সুসংবাদ গ্রহণ
করুন।আপনি যিনি সর্বপ্রকার সাহায্য ও মহা বিজয়ের মালিক উনাকে ধারণ করেছেন।পঞ্চম
মাসেও একজন এসে বললেন,
السلام عليك يا صفوة الله صلى الله عليه وسلم.
আমি জানতে চাইলাম আপনি কে এবং কেন এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন,
আমি
হযরত হুদ আলাইহিস্ সলাম আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন।আপনি কিয়ামতের কঠিন দিনে
শাফায়াতে কুবরার একমাত্র মালিক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
ধারণ করেছেন।৬ষ্ঠ মাসে এক ব্যক্তি আগমণ করে সালাম দিয়ে বললেন,
السلام عليك يارحمة الله صلى الله عليه وسلم.
আমি জানতে চাইলাম আপনি কে? কেন এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি হযরত ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস্
সালাম।আপনাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য আগমণ করেছি।হে হযরত আমীনা আলাইহাস্ সালাম, আপনি নবিয়্যূল জলীল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনাকে ধারণ করেছেন।আবার সপ্তম মাসে একজন আগন্তুক সালাম দিয়ে বললেন,
السلام عليك يا من اختاره الله صلى الله عليه وسلم.
আমি জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কে এবং কেন এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন,
আমি
হযরত ইসমাঈল আলাইহিস্ সালাম আপনাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য এসেছি।আপনি সকল নবীদের
শ্রেষ্ঠ নবী উনাকে ধারণ করেছেন।অষ্টম মাসে একজন তাশরীফ এনে বললেন,
السلام عليك يا خيرة الله صلى الله عليه وسلم.
আমি জানত চাইলাম, আপনি কে এবং কেন
এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি হযরত মূসা ইবনে ইমরান আলাইহিমাস্
সালাম।আপনাকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য এসেছি।আপনি এমন এক মহান ব্যক্তিকে ধারণ করেছেন
যাকে মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম কুরআন শরীফ দান করা হবে।নবম মাসে একজন তাশরীফ এনে
বললেন,
السلام عليك يا خاتم رسل الله دنى القرب منك يارسول الله صلى الله عليه وسلم.
আমি উনাকে বললাম, আপনি কে এবং কেন
এসেছেন? উত্তরে তিনি বললেন, আমি হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহিমাস্
সালাম।আপনাকে সুসংবাদ দিতে এসেছি।আপনি নাবিয়্যূল মুকাররাম ও রসূলুল মুয়াজ্জম
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ধারণ করেছেন। (আন নি’মাতুল কুবরা
আলাল আলাম)
অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম আলমে আরওয়াহতে সংঘটিত সেই ওয়াদা
বাস্তবায়নের জন্যই তথা মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করার জন্যই
হযরত আমিনা আলাইহাস্ সালাম উনার নিকটে আগমন করেছিলেন।
এছাড়া “মাওয়াহিবুল্ লাদুননিয়া” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
যেদিন যমীনে তাশরীফ আনেন সেই রাত্রিতে অগণিত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম অবতরণ করেন
এবং হযরত আমিনা আলাইহাস্ সালাম উনার হুজরা শরীফ-এর দরজায় দাঁড়িয়ে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করেন।”
No comments