নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ থেকে দুনিয়ায় তাশরীফ মুবারক নেয়ার তরতীব মুবারক।
সুওয়ালঃ কেউ কেউ বলে থাকে যে, সমস্ত মানুষ
মায়ের রেহেম শরীফ হতে যেভাবে জন্মগ্রহণ করে থাকে, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লামও সেভাবে আগমণ করেছেন। তারা দলীল হিসেবে নিম্নোক্ত হাদীস শরীফদ্বয় উল্লেখ
করে থাকে।
اخرج ابو نعيم وكذا ابن سعد عن بريدة عن مرضعته صلى الله عليه وسلم فى بنى سعد ان أمنة قالت رأيت كانه خرج من فرجى شهاب اضائت له الارض حتى رأيت قصور الشام.
وعن همام بن يحيى عن اسحاق بن عبد الله ان ام رسول الله صلى الله عليه وسلم قالت لما ولدته خرج من فرجى نور اضاء له قصور الشام فولدته نظيفا مابه قذر.
অর্থঃ- “আবূ নঈম এবং অনুরূপ ইবনে সা’দ বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু বর্ণনা করেন। তিনি বণী সা’দ গোত্রীয় হজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুধ মা (হযরত হালিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই
হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, আমি দেখেছি যে, আমার র্ফজ
থেকে একটি আলোক বর্তিকা বের হলো। তার দ্বারা সমস্ত যমীন আলোকিত হলো। এমনকি আমি সিরিয়ার
প্রাসাদসমূহ দেখতে পেলাম।
“হুমাম ইবনে ইহাহইয়া তিনি ইসহাক ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আম্মা বলেন, যখন হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে আগমণ করলেন তখন আমার র্ফজ থেকে একটি নূর
বের হলো।যার দ্বারা সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হলো। তিনি আগমণ করেছেন পাক-সাফ অবস্থায়।
উনার মধ্যে কোন নাপাকী ও ময়লা ছিলনা।”
তাদের উক্ত কথা কতটুকু সঠিক? দলীল-আদিল্লাহ দ্বারা জানিয়ে
বাধিত করবেন।
জাওয়াবঃ প্রকাশ থাকে যে, কুরআন শরীফ
এবং হাদীস শরীফের বর্ণনাগুলো খুবই সূক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বিষয়। এর জাহির ও বাতিন দু’টা দিক
রয়েছে। যে কারণে সাধারণভাবে এর অর্থ ও ব্যাখ্যা উপলব্ধি করতে অনেকেই ব্যর্থতার পরিচয়
দিয়েছে এবং দিয়ে থাকে।
আবার বর্ণনা গুলোর শাব্দিক ও ব্যবহারিক অর্থের সাথে আকাঈদী ও
আ’মালী বিষয়টি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। এক্ষেত্রে কেবল শাব্দিক কিংবা ব্যবহারিক অর্থ ও
ব্যাখ্যা গ্রহণ করলে দেখা যাবে, তা আদৌ ছহীহ্ হয়নি তাই তা গ্রহণযোগ্যও নয়। উপরোক্ত
উক্ত অশুদ্ধ অর্থ ও ব্যাখ্যা কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে থাকে।
কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের অর্থ ও ব্যাখ্যা করা সম্পর্কে আহলে
সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া হলো, “শুধু আরবী ভাষা জানলেই কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের
অর্থ ও ব্যাখ্যা করা যাবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা ভিত্তিক
অর্থ ও ব্যাখ্যা সে না শিখবে।”
মেছাল স্বরূপ বলা যেতে পারে-
(১) যেমন "ضالا" শব্দ যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে গোমরাহী। এ শব্দটি যখন কুরআন শরীফ
ও হাদীস শরীফে কাফিরদের সম্পর্কে আসবে তখন এর অর্থ হবে গোমরাহী। যেমন আল্লাহ্ পাক ইরশাদ
করেন,
ومن يعص الله ورسوله فقد ضل ضللا مبينا.
অর্থঃ- “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক ও উনার রসূল
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাফরমানী করবে সে অবশ্যই
প্রকাশ্য গোমরাহীতে নিপতিত হবে।” (সূরা আহ্যাব/৩৬)
আর এ ضالا শব্দ যখন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে আসবে তখন এর অর্থ যদি কেউ “গোমরাহ” করে তাহলে
সে কাট্টা কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হয়ে যাবে।
যেমন ‘সূরা ‘দুহা’-এর ৭নং আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, و وجدك ضالا فهدى.
এ আয়াতে কারীমার শাব্দিক অর্থ করলে অর্থ দাড়ায় “আর তিনি
(আল্লাহ্ পাক) আপনাকে অর্থাৎ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পথভ্রষ্ট
বা গোমরাহ্ পেয়ে হিদায়েত দান করলেন।” (নাউযুবিল্লাহ)
এ অর্থ মূলত কুফরী। কারণ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
কোন সময়ই গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট ছিলেন না।
কারণ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
ما ضل صاحبكم وماغوى.
অর্থঃ- “তোমাদের সঙ্গি হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না
কখনো গোমরাহ্ হয়েছেন না বিপথগামী হয়েছেন।” (সূরা নজম/২)
আরো ইরশাদ করেন,
ليس بى ضللة ولكنى رسول من رب العلمين.
অর্থঃ- “হে আমার ক্বওম! আমার নিকট গোমরাহী বলতে কিছুই নেই বরং আমি মহান
রব্বুল আলামীনের প্রেরিত রসূল।” (সূরা আ’রাফ/৬১)
তিনি তো সৃষ্টিই হয়েছেন নবী হিসেবে। হাদীস শরীফে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, كنت نبيا وادم بين الماء والطين.
অর্থঃ- “আমি তখনো নবী ছিলাম যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম মাটি ও পানিতে
অবস্থান করতেন।”
হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم متى وجبت لك النبوة قال وادم بين الروح والجسد.
অর্থঃ- “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, ছাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
আপনাকে কখন নবুওওয়ত দেয়া হয়েছে, অর্থাৎ আপনি কখন থেকে নবী? তিনি বললেন, আমি তখনো
নবী ছিলাম যখন হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম রূহে এবং শরীরে অবস্থান করছিলেন। অর্থাৎ হযরত
আদম আলাইহিস্ সালাম সৃষ্টির পূর্ব থেকেই আমি নবী।” (তিরমীযী, মিশকাত)
অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সৃষ্টি করার পূর্বেই নবী
হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।
তাহলে এ অর্থ কি করে ছহীহ্ হতে পারে যে, তিনি (হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট ছিলেন? মুলতঃ এরূপ
অর্থ করা হচ্ছে সম্পূর্ণ কুফরী যা ঈমান ও আমল উভয়টি বিনষ্ট হওয়ার কারণ।
এ আয়াত শরীফের ছহীহ্ অর্থ হলো “তিনি (আল্লাহ্
পাক) আপনাকে কিতাবহীন পেয়েছেন অতঃপর কিতাব দান করেছেন।”
(২) যেমন "مكر" শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ধোকাবাজী বা প্রতারণা’। এ শব্দটি যখন কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে কাফিরদের সম্পর্কে আসবে
তখন এর অর্থ হবে ধোকাবাজী বা প্রতারণা।
আর এ শব্দটি যখন আল্লাহ্ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে আসবে
তখন এর অর্থ হবে হিকমত বা কৌশল। যেমন আল্লাহ্ পাক সূরা আলে ইমরান ৫৪ নং আয়াত শরীফে
ইরশাদ করেন,
ومكروا ومكر الله والله خير المكرين.
এ আয়াত শরীফের শাব্দিক অর্থ হলো, “তারা(কাফিররা)
ধোকাবাজী করল, আল্লাহ্ পাকও ধোকাবাজী করলেন। আর আল্লাহ্ পাক হলেন উত্তম ধোকাবাজ।” (নাউযুবিল্লাহ্)।
কেউ যদি এ আয়াত শরীফের শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করে তাহলে সে কাট্টা
কাফির হয়ে চির জাহান্নামী হয়ে যাবে।
এর ছহীহ অর্থ হলো, “তারা অর্থাৎ কাফিররা ধোকাবাজী করলো, আর আল্লাহ্
পাক হিকমত করলেন। আল্লাহ্ পাক হলেন উত্তম হিকমতওয়ালা।”
(৩) যেমন "يقين" শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিশ্বাস। এ শব্দটি কুরআন শরীফে
৮ বার এসেছে। এর মধ্যে ৬ বার বিভিন্ন অর্থে এসেছে। যেমন- নিঃসন্দেহে, নিশ্চিত, সত্য, অবশ্যই
সত্য, বিশ্বাসযোগ্য ইত্যাদি। আর ২ বার এসেছে মৃত্যু অর্থে। যেমন- সূরা হিজরের ৯৯ নং আয়াত
শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
واعبد ربك حتى يأتيك اليقين.
অর্থঃ- “এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, “তোমার রব আল্লাহ্ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগী কর বিশ্বাস আসা পর্যন্ত।”
যদি কেউ এ অর্থ করে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ তাতে বুঝা
যায় বিশ্বাস আসার পর আর ইবাদত-বন্দেগী করার
দরকার নেই। যা কুফরী আক্বীদা। স্বয়ং আখিরী নবী হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বিদায় নেয়া পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগী করেছেন। বরং শেষ যিন্দেগী মুবারকে আরো বেশী বেশী
করেছেন।
এখানে يقين শব্দের অর্থ হচ্ছে মৃত্যু।
আয়াত শরীফের ছহীহ অর্থ হলো “তোমার রবের ইবাদত-বন্দেগী কর মৃত্যু আসা পর্যন্ত।”
উল্লেখ্য, আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পছন্দনীয়
ভাষা হচ্ছে আরবী। জান্নাতের ভাষাও আরবী। এ আরবী ভাষাকে আল্লাহ্ পাক এমন সমৃদ্ধ ও পরিপূরক
করেছেন যে,
ক্ষেত্র বিশেষে এর একটি শব্দ একাধিক ও ভিন্ন অর্থ প্রদান করে
থাকে। অনুরূপ একাধিক শব্দ একই অর্থের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সুতরাং কেউ যদি কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের ছহীহ্ অর্থ প্রয়োগ
ও ব্যবহারের ক্ষেত্র বুঝতে অক্ষম হয় এবং এই অক্ষমতা নিয়েই ব্যাখ্যা করে তাহলে তার অবস্থা
অনুরূপই হবে যেরূপ অবস্থা হয়েছে মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর।
কাদিয়ানী خاتم النبين. আয়াতাংশে خاتم -এর ছহীহ্ অর্থ
“শেষ” এর পরিবর্তে “মহর” ভুল অর্থ করার কারণে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়েছে।
এমনিভাবে কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের ভুল অর্থ, ভুল ব্যাখ্যা, ভুল ফতওয়া, ভুল আমল
ও আক্বীদার কারণে কলেমা,
নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি
সবকিছু স্বীকার করা ও আমল করার পরও অনেকে বিভ্রান্ত বা গোমরাহ হয়ে গেছে। এর উদাহরণ
হচ্ছে মু’তাজিলা, শিয়া, খারেজী, মরজিয়া, নাজ্জারিয়া,
জাবারিয়া, মুশাব্বিহা ইত্যাদি ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী
ফিরক্বা।
কাজেই কুরআন শরীফ কিংবা হাদীস শরীফের বরাত দিয়ে কোন কথা বললেই
যে তা ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য হবে তা নয়। বরং দেখতে হবে, উক্ত কথা আহ্লে সুন্নত ওয়াল
জামায়াতের আক্বীদা ও আমলের খেলাফ কিনা, উক্ত কথা আল্লাহ্ পাক ও উনার প্রিয় বান্দা নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ উনাদের শান ও মর্যাদার খেলাফ কিনা? বিশেষ করে
সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান ও ফযীলতের খেলাফ কিনা? অতঃপর ছাহাবা-ই-কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম,
অতঃপর আউলিয়া-ই-কিরামগণের খেলাফ কিনা?
স্মরণীয় যে, আমাদেরকে একদিন অবশ্যই আল্লাহ্ পাক
এবং উনার প্রিয় হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে হাযির হতে হবে। এবং হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাফায়াত-শুপারিশ সবার জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়বে। কাজেই এমন কথা কস্মিনকালেও
বলা শুদ্ধ হবে না যা হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান ও মর্যাদার বিন্দুতম খেলাফ হয়।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্
নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ পূর্ববর্তী আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ
সকলেই সাধারণ মানুষের মত ভূমিষ্ট হননি, যেহেতু নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ
মহান আল্লাহ্ পাক উনার খাছ ও বিশেষভাবে মনোনীত বান্দা।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
الله يجتبى اليه من يشاء.
অর্থঃ- “আল্লাহ্ পাক উনার দিকে মনোনীত
করেন যাকে ইচ্ছা তাকেই।” (সূরা শুরা/১৩)
আর তাই আল্লাহ্ পাক নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণকে উনাদের শান হেতু স্বীয় কুদরতে আলাদাভাবে
সৃষ্টি করেছেন।
আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্
নাবিয়্যীন, হাবীবুল্লাহ্,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সৃষ্টি অন্যান্য সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম এবং সকল মানুষের সৃষ্টি থেকে
এক ভিন্ন প্রক্রিয়ায় হয়েছে।
মানবীয় আকৃতি মুবারকে তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন সত্যি কিন্তু তার সৃষ্টির উৎস, উপাদান, মায়ের রেহেম
শরীফে তাশরীফ আনয়ণ এবং রেহেম শরীফ হতে যমীনে আগমণ প্রত্যেকটি ছিল আল্লাহ্ পাক উনার খাছ কুদরতের অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার শরীর মুবারক যে নূর মুবারক হতে সৃষ্টি হয়েছে সে নূর মুবারক
কুদরতীভাবে উনার আম্মার রেহেম শরীফে প্রবেশ করেছে এবং কুদরতীভাবেই
তিনি উনার আম্মার বাম পাঁজরের নিচ থেকে ভূমিষ্ট হয়েছেন। এটাই
ছহীহ্ এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা।
যারা বলে, “সমস্ত মানুষ মায়ের রেহেম শরীফ হতে যেভাবে জন্মগ্রহণ
করে থাকে, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সেভাবে আগমণ করেছেন।”তাদের একথা
সম্পূর্ণ ভুল। তাদের বক্তব্য ভুল হওয়ার সবচাইতে বড় কারণ হলো তারা হাদীস শরীফে বর্ণিত
"فرج" শব্দের একাধিক শাব্দিক অর্থ থেকে একটি অর্থের উপর ভিত্তি করেই
বক্তব্য পেশ করেছে।অর্থটি হচ্ছে “শরমগাহ”।
অথচ এ অর্থ ব্যতীত আরো
যে অর্থের বর্ণনা পাওয়া যায় বিভিন্ন লুগাত বা অভিধানে তাহলো ছিদ্র, ফাঁক, ফাটল, প্রবেশ
পথ, সুড়ঙ্গ, দু’হাত কিংবা দু’পায়ের মধ্যেবর্তী স্থান, দু’জিনিসের মাঝে ব্যবধান সৃষ্টিকারী
বস্তু, পুরুষ-মহিলা,
যুবক প্রত্যেকের শরমগাহ্ এবং তার চতুর্দিকের স্থান ও সন্তান
মায়ের রেহেম শরীফ হতে যে স্থান দিয়ে ভুমিষ্ঠ হয় ইত্যাদি। অর্থাৎ এক কথায় فرج শব্দের
অর্থ হলো ঐ রাস্তা যে রাস্তা দিয়ে সন্তান ভুমিষ্ঠ হয়।
فرجশব্দটি সকলের ক্ষেত্রে এক অর্থ প্রদান
করবেনা। যেমন সাধারণ মানুষের শানে যখন فرج শব্দটি
ব্যবহার হবে তখন এর অর্থ হবে সাধারণ ও স্বাভাবিক স্থান।
আর অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণের শানে যখন এ শব্দ ব্যবহার
হবে তখন এর অর্থ হবে নাভী ও শরমগাহের মধ্যবর্তী স্থান।
আর যখন আখিরী রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার শানে এ শব্দ ব্যবহার হবে তখন এর অর্থ হবে ডান পাঁজরের নীচের
স্থান।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্
নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভুমিষ্ঠ হওয়া সম্পর্কে কিতাবে চারটি
মত বর্ণিত হয়েছে। যেমন- এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত হয়েছে,
اعلم ان فى موضع ولادة النبى صلى الله عليه وسلم اربعة اقوال الاول انه ولد من الخاصرة اليسرى والثانى انه ولد من نقبة بين الفرج والسرة والثالث انه ولد من فم امه – والرابع انه ولد من ولهذا افتى المالكية بقتل من قال ان النبى صلى الله عليه وسلم ولد من مجرى البول.
অর্থঃ-“জেনে রাখ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভুমিষ্ঠ হওয়ার স্থান সম্পর্কে চারটি ক্বওল রয়েছে।”
(১) হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (স্বীয় মাতার) বাম পার্শ্বের পাঁজরের
নীচ থেকে ভুমিষ্ঠ হয়েছেন।
(২) শরমগাহ্ ও নাভীর মধ্যবর্তী স্থান হতে।
(৩) উনার মাতা হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা উনার মুখ থেকে।
(৪) স্বাভাবিকভাবে।
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভুমিষ্ঠ হওয়া সম্পর্কে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সকল ইমাম-মুজ্তাহিদ ও
আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের অভিমত হলো,
كل مولود غير الانبياء يولد من الفرج وكل الانبياء غير نبينا مولودون من فوق الفرج وتحت السرة واما نبينا صلى الله عليه وسلم فمولود من الخاصرة اليسرى تحت الضلوع.
অর্থঃ- “আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ ব্যতীত সমস্ত মানুষই (স্বীয় মায়ের)
শরমগাহ্ থেকে জন্ম গ্রহণ করে। আর সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ শরমগাহ্রে উপর ও
নাভীর নীচ থেকে ভুমিষ্ঠ হয়েছেন। আর আমাদের নবী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহা উনার বাম পার্শ্বের পাঁজরের নীচ থেকে ভুমিষ্ঠ
হয়েছেন।”
(উমদাতুন্নুকুল ফি কাইফিয়াতে বিলাদাতির রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,খতামুন্ নাবিয়্যীন,
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সমস্ত নবী-রসূল
আলাইহিমুস সালামগণ সাধারণ মানুষের মতো ভুমিষ্ঠ হননি। বরং আল্লাহ্ পাক উনাদেরকে খাছ কুদরতীভাবে শরমগাহ্ ব্যতীত অন্যস্থান দিয়ে ভুমিষ্ঠ করিয়েছেন। এ সম্পর্কে
আরো বর্ণিত আছে যে,
ولم يصح نقل ان نبيا من الانبياء ولد من الفرج ولهذا افتى المالكية بقتل من قال ان النبى صلى الله عليه وسلم ولد من مجرى البول.
অর্থঃ- “আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ স্বীয় মাতার শরমগাহ্ থেকে জন্মগ্রহণ
করেছেন একথা সম্পূর্ণরূপেই অশুদ্ধ। আর এজন্যই মালিকী মায্হাবের ইমামগণ ঐ ব্যক্তিকে
ক্বতল করার ফতওয়া দিয়েছেন যে ব্যক্তি বলবে যে, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম (উনার মাতার) শরমগাহ্ দিয়ে ভুমিষ্ঠ হয়েছেন।” (ওমদাতুন্নুকুল
ফি কাইফিয়াতি বিলাদাতির রসূল)
উল্লেখ্য, বর্তমানে আমরা দেখতে পাই যে, সন্তান
যখন স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ী ভুমিষ্ট হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে তখন সে সন্তানকে অপারেশন করে
মায়ের রেহেম শরীফ থেকে বের করে আনতে হয়। এ অবস্থায় নাভীর নীচে ও শরমগাহের উপর অপারেশন
করতে হয়। অর্থাৎ এ অবস্থায়ও সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক পথে ভুমিষ্ট হয় না।
অতএব, এ বিষয়ে সকলকেই আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের
আক্বীদা মোতাবেক আক্বীদা পোষণ করতে হবে। আর তাহলো “আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ ব্যতীত
সমস্ত মানুষই (স্বীয় মায়ের) শরমগাহ্ থেকে জন্ম গ্রহণ করে। আর সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস্
সালামগণ শরমগাহ্রে উপর ও নাভীর নীচ থেকে ভুমিষ্ঠ হয়েছেন। আর আমাদের নবী সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার আম্মা (হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা) উনার বাম পার্শ্বের পাঁজরের নীচ থেকে ভুমিষ্ঠ হয়েছেন।”
সুতরাং এর খেলাফ আক্বীদা পোষণ করার অর্থ হলো আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইহানত করা যা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।
{দলীলসমূহঃ (১) আহ্কামুল কুরআন জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) মাযহারী, (৪) রুহুয়
মায়ানী, (৫) রুহুল বয়ান,
(৬) খাযেন, (৭) বাগবী, (৮) গারায়িবুল কুরআন, (৯) হাশিয়াতুছ
ছাবী, (১০) ক্বাদিরী,
(১১) মুদ্বীহুল কুরআন, (১২) মাজেদী, (১৩) ইবনে
কাছীর, (১৪) তাবারী,
(১৫) কবীর, (১৬) যাদুল মাছীর, (১৭) তাফসীরে
ওয়াহেদী, (১৮) উমদাতুন্ নুকুল ফি কাইফিয়াতে বিলাদাতির রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, (১৯) তালখীছ, (২০) আত্
তাহ্সীল ওয়াল বয়ান,(২১) জামিউল ফুছুলীন,
(২২) হাশিয়াতু আলাশ্ শিফা, (২৩) খোলাছা, (২৪) হাশিয়ায়ে
জামিউল ফুছুলীন,
(২৫) ইক্বদুছ ছামীন, (২৬) নেহায়াতুল আমল,
(২৭) ইবনে সা’দ, (২৮) খামীছ, (২৯) আন্
নি’মাতুল কুবরা,
(৩০) আন্ নি’মাতুল কুবরা, (৩১) ফতওয়ায়ে
মাহমুদিয়া, (৩২) মিশকাত,
(৩৩) মিরকাত, (৩৪) আশয়াতুল লুময়াত, (৩৫) লুময়াত, (৩৬) কামূছ
আল মুহীত, (৩৭) ওয়াসীত,
(৩৮) জাদীদ, (৩৯) লিসানুল আরব, (৪০) মুনজিদ
আরবী, (৪১) মুনজিদ উর্দূ,
(৪২) মিছবাহুল লুগাত, (৪৩) লুগাতে হীরা, (৪৪) গিয়াছুল
লুগাত, (৪৫) লুগাতে সাঈদী,
(৪৬) বয়ানুল লিসান, (৪৭) আল কামূসুদ্ দরসী, (৪৮) মিছবাহুল মুনীর, (৪৯) নেহায়া, (৫০) আল
মু’জামুল ওয়াজীয,
(৫১) মু’জামু মাক্বায়ীসুল লুগাত, (৫২) মাগরিব, (৫৩) আল
মু’জামুল বুলদান,
(৫৪) আল মুহীত ফিল লুগাত, (৫৫) আল মানার, (৫৬) লুগাতে
কিশওয়ারী, (৫৭) তাজুল আরুস,
(৫৮) ইফরাতুল মাওয়ারীদ, (৫৯) ফরহঙ্গ-ই রব্বানী, (৬০) করীমুল
লুগাত,(৬১) আরবী ও বাংলা অভিধান, (৬২) আর রইদ, (৬৩) ক্বামুসুল কুরআন, (৬৪) ফিরুজুল
লুগাত, (৬৫) ফরহঙ্গে আমেরা,
(৬৬) আল ক্বামুসুল জাদীদ, (৬৭) করীমুল লুগাত, (৬৮) ফতর্হু
রহমান, (৬৯) আল ক্বামুসুল ইছত্বলাহিল জাদীদ, (৭০) মু’জামু লুগাতিল
ফুক্বাহা, (৭১) লুগাতুল হাদীস,
(৭২) আল মুরাদাত, (৭৩) ঞযব ঝপযড়ড়ষ উরপঃরড়হধৎু অৎধনরপ ঊহমষরংয, (৭৪) অষ- ঋধৎধরফ অৎধনরপ ঊহমষরংয উরপঃরড়হধৎু
ইত্যাদি।
No comments