Header Ads

Islamic Quotes Urdu Facebook Cover. QuotesGram

“সহস্রাধিক কিতাব লিখলেই “মুজাদ্দিদ” হওয়া যায় না” । আহমদ রেযা খানের “মুজাদ্দিদ” হওয়ার মিথ্যা দাবী খন্ডন-



~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে, “আল্লাহ পাক প্রত্যেক হিজরী শতাব্দীর শুরুতে এই উম্মতের জন্য এরূপ লোক প্রেরণ করবেন, যিনি দ্বীনের সংস্কার করবেন।
এই হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় নবম শতাব্দির মুজাদ্দিদ হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মিরকাত শরীফেলিখেছেন, “মুজাদ্দিদ হওয়া ফক্বীহগণের বৈশিষ্ট্য নয়। কেননা তাঁদের দ্বারা এই উম্মতের উপকার সাধিত হলেও (ইনসাফগার) খলীফাগণ, মুহাদ্দিসগণ, ক্বারীগণ, ওয়ায়েজগণ ও পীর-দরবেশ কর্তৃক তাদের বিস্তর উপকার সাধিত হয়ে থাকে। আমার নিকট সমধিক প্রকাশ্য মত এই যে, মুজাদ্দিদ এক ব্যক্তি হবে না বরং একদল হবে।

হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আশয়াতুল লুময়াতকিতাবে লিখেন, “উক্ত মুজাদ্দিদ এক ব্যক্তি হতে পারেন কিংবা একদলও হতে পারেন।
আর একদল আলিম, বুযুর্গদের আভিমত- মুজাদ্দিদ একজন বা একাধিকও হতে পারেন তবে মূল মুজাদ্দিদ একজন থাকবেন আর বাকিরা তার সহকারী হিসেবে কাজ করবেন।
আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মিরকাত শরীফেরব্যাখ্যায় ভারতরত্ন, ফকীহুল উম্মত, বাহরুল উলূম, হাফিজে হাদীছ, মুবাহিছে আযম, আল্লামা রুহুল আমীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সায়াকাতুল মুসলিমীন এবং একখানা বিজ্ঞাপন রদকিতাবে উপমহাদেশে মুজাদ্দিদের আগমণ সম্পর্কে বলেন, “একাদশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ হযরত ইমামে রব্বানী, মুজাদ্দীদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, দ্বাদশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ত্রয়োদশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং চতুর্দশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ ছিলেন, কাইয়্যুমে জামান, মুহইস সুন্নাহ, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

মূলতঃ মুজাদ্দিদ-এর সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা ব্যাপক ও বিস্তৃত এবং এটি কোন প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাঙ্গন থেকে অর্জিত সার্টিফিকেট সমতুল্য নয় বা চেষ্টা কিংবা কোশেশ করেও এটি লাভ করা যায় না। এটা আল্লাহ পাক-এর দয়া ও অনুকম্পা। তিনি যাকে ইচ্ছা এটি দান করতে পারেন।

আকাবারে আওলিয়া-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে মুজাদ্দিদ হওয়ার জন্য প্রধান শর্ত হচ্ছে- আল্লাহ পাক ও তাঁর প্রিয় হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে সারাসরি সম্পর্ক ও যোগাযোগ থাকবে এবং তিনি ইলমে লাদুন্নী প্রাপ্ত ওলী হবেন ও মুজাদ্দিদ হওয়ার সম্পর্কেও তার খোশ-খবরী থাকবে।

এছাড়া পীরানে তরীক্বতের নিসবত হাছিল আকাবারে আওলিয়া-ই-কিরাম, ইমাম-মুসতাহিদের সাথেও তার রূহানী সম্পর্ক থাকতে হবে। তাঁর সমস্ত আমল-আখলাক সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্মভাবে কুরআন-সুন্নাহ্ মোতাবিক হতে হবে। এমনকি তিনি স্ব-ইচ্ছায় একটি মুস্তাহাবও তরক করবেন না। ইলমে শরীয়ত ও তরীকত এবং তাঁর সমসাময়িক কালের যে কোন জটিল সমস্যার সমাধান তিনি দিতে সক্ষম হবেন। চাই তার মাদ্রাসার সার্টিফিকেট থাকুক অথবা নাই থাকুক, মানুষ তাকে মানুক অথবা নাই মানুক, তাঁর সম্পর্কে জানুক অথবা নাই জানুক তাঁকে গ্রহণ করুক অথবা নাই করুক।

হযরত আওলিয়া-ই-কিরামগণের এই উক্তি সম্পূর্ণ সত্য। কেননা, আল্লাহ পাক সৃষ্টির শুরু থেকে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার বা দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু প্রত্যেক নবী-রসূলকে তাঁর কওম বা জাতি গ্রহণ করতে পারেনি। এবং তাদের প্রত্যেক জামানায়ই কিছু জাহেরী জ্ঞানী দার্শনিক, পন্ডিত, মৌলভী ছিল। কিন্তু সেই নবী-রসূলকে চিনতে না পাবার কারণে তাঁর পবিত্রতম সোহবত লাভ থেকে তারা বঞ্চিত রয়েছে। গ্রীক, দার্শনিক সক্রেটিস সম্পর্কে বলা হয়, “তাঁর জামানায় নবী বিদ্যমান ছিল অথচ সে তার নাপাক গর্হিত জ্ঞানের অহংকারের কারণে সেই নবীর সোহবতে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস সালাম-এর জামানায় দরবেশ বালাম বিন বাওর অধিক জ্ঞানী ও পন্ডিত ছিল
তার বাতেনী শক্তি সম্পর্কে বর্ণিত আছে, সে উপরের দিকে তাকালে আরশে আজিমের মালায়েকাদের কাতার দেখতে পেতো এবং জমিনের দিকে তাকালে সপ্ত জমিনের রহস্য তার নিকট উদ্ভাসীত হতো। কিন্তু তাঁর জামানার নবী হযরত ইউশা বিন নুন আলাইহিস সালামকে গ্রহণ করতে না পারার কারণে সে চিরতরে মরদুদ ও পথভ্রষ্ট হয়ে যায়।

হযরত আদম আলাইহিস সালাম-এর রিসালাত ও নুবুওওয়াতকে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করার কারণে মালউন ইবলিস আবাদুল আবাদঅর্থাৎ চিরকালের জন্য অগ্নির খোরাকে পরিণত হয়। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জামানায় জাজিরাতুল আরবেঅনেক জ্ঞানী-গুনী, পন্ডিত এবং উচ্চ সম্ভ্রান্ত গোত্রের লোক ছিল। স্বয়ং আবু জেহেল আরবে আবুল হাকামবা জ্ঞানীর পিতাবলে অধিক পরিচিত ছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক সকল গোত্র বংশ থেকে হাশেমী গোত্রের হযরত আব্দুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম-এর ছেলে হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নুবুওওয়াত রিসালাত দানের জন্য মনোনীত করলেন। যখন তাঁর নুবুওওয়াত প্রকাশিত হলো তখন আরব ভূমিতে গোত্রে গোত্রে, বংশে বংশে অসন্তোষের ভাব ফুটে উঠলো। তারা বলতে লাগলো, ওমুক ওমুক বংশে নবী আসার কথা। অথচ একজন ইয়াতীম ব্যক্তি, যে আমাদেরই মত একজন মানুষ, যে হাটে-বাজারে যায়, খাদ্য ভক্ষণ করে, সে কি করে নবী হতে পারে?

মূলতঃ সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণের ব্যাপারেই এরূপ দেখা যায়। তাদের ক্বওমবা জাতি তাদের উপর প্রেরিত নবী-রসূলগণকে বলতো, আমরা কি আমাদেরই মত একজন সাধারণ মানুষকে নবী হিসেবে মেনে নিবো? কখনোই নয়। আর এই সমস্ত নবী-রসূলগণ কেউই প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাঙ্গন থেকে সার্টিফিকেট প্রাপ্ত নয়। আল্লাহ পাক সৃষ্টির শুরু থেকেই তাঁদের মনোনীত-নির্বাচিত করে রেখেছেন।

মানুষের চেষ্টা বা কোশেশের একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে। ইচ্ছা করলে রিয়াজত-মুশাক্কত মুজাহিদা ও কঠোর পরিশ্রম করে মানুষ সে স্তরে পৌছতে পারে। কিন্তু এরপর শত ইচ্ছা থাকা সত্বেও একচুলও আর সামনে অগ্রসর হওয়ার যোগ্যতা তার মধ্যে থাকে না। এবং এখানেই ইনসানের কোশেশের পরিসমাপ্তি ঘটে। এবং এটাই তার শেষ মাক্বাম। তারপর থেকে আল্লাহ পাক-এর মেহেরবানীর দরজা শুরু হয়। তিনি যদি চান তাঁর কোন খাছ বান্দাকে এরপরও সায়ের বা উন্নতি করাবেন তবে এটা তাঁর মেহেরবাণী। অন্যথায় এখানেই সালিকের গন্তব্যের শেষ। আর এটা হচ্ছে বেলায়েতে ছোগরার মাক্বাম।

দ্বিতীয় সহস্রাব্দীর মুজাদ্দিদ, ক্বাইয়্যূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মাকতুবাত শরীফেবলেছেন, “মানুষের চেষ্টার শেষ সীমা হচ্ছে বেলায়েতে ছোগরা। আর নুবুওওয়াত, রিসালাত, ছাহাবিয়াত ও বেলায়েতের আরো অন্যান্য মাক্বাম আছে যা কোশেশের গন্ডির বহির্ভূত। অর্থাৎ কস্মিনকালেও যা রিয়াজত-মুশাক্কত মুজাহিদা ‍ও কিতাব লিখার দ্বারা হাছিল হবার নয়। বরং এ সমস্ত মাক্বাম পূর্ব থেকেই নির্ধারিত হয়ে আছে। মহান রাব্বুল আলামীনের ফযল-করম তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।

সম্মানিত পাঠক বর্গ! মনে রাখবেন, আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে, “অধিক কিতাব লিখা মুজাদ্দিদ হওয়ার জন্য শর্ত নয় এবং আহমদ রেযা খাঁর মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবী খন্ডন নিয়ে।

স্মরণ রাখা জরুরী, বেলায়েতে ছোগরা যা ওয়াহদাতুল ওজুদ বা একত্ববাদের স্তর এবং এটাই আওলিয়া--কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মাক্বাম। কিন্তু এরপরও আরো বেলায়েতের বহু মাক্বাম আছে। যেমন, বেলায়েতে কোবরা, বেলায়েতে উলিয়া, হাক্বীক্বতে ক্বাইয়্যূমিয়াত ইত্যাদি যা বিশেষ বিশেষ আওলিয়া--কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের জন্য খাছ। আর মুজাদ্দিদের মাক্বামও এরূপ একটি মাক্বাম যা আখাচ্ছুল খাছ শ্রেণীর ওলীগণের জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত। আর এই শ্রেণীর ওলীগণই হচ্ছেন, জাহেরী-বাতেনীর দিক থেকে প্রকৃতপক্ষে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ। তারা শয়তানের সকল প্রকার ধোকাবাজী থেকে হিফাযতকৃত। হযরত মাশায়েখ--কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে, “তাঁদের কাশফ, ইলহাম শয়তানের সকল প্রকার মকর বাজী থেকে মুক্ত। এমনকি শয়তান তাঁদের ছূরত পর্যন্ত ধারণ করতে সাহস পায় না।” (সুবহানাল্লাহ)

ভারতীয় উপমহাদেশে এই শ্রেণীর ওলীগণের মধ্যে হযরত দাতা গঞ্জে বখশ রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুলতানুল হিন্দ খাজা মুঈনুদ্দীন চীশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ফরিদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আমীরুল মুমিনীন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি।

যাদের প্রতিটি কথা, কাজ, চিন্তা-চেতনা, বিশুদ্ধ কাশফ ও ছহীহ ইলহাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। উনাদের পবিত্র আত্মাসমূহ প্রতিটি মুহুর্তে দীদারে ইলাহী ও রিসালতে পানাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত থাকে। যদিও বা উনারা বাহ্যিক দৃষ্টিতে খলকুল্লাহর খিদমতে নিয়োজিত থাকেন। এই শ্রেণীর ওলীদের সংখ্যা খুবই কম। উনাদের দ্বারা লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি মানুষ হিদায়েতপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। উনারা খোদা তায়ালার বারগাহে মনোনীত ও মক্ববুল বান্দা। ক্বিয়ামত পর্যন্ত উনাদের ক্বালবের ফয়েজ জারী থাকবে। যদিও বা উনারা এই ক্ষণস্থায়ী নশ্বর জগত ছেড়ে চলে গেছেন বা চলে যাবেন। উনারা হচ্ছেন, বেলায়েতে খাচ্ছার মাক্বামের ওলী। কিতাব লিখা উনাদের জন্য জরুরী নয় এবং কিতাব লিখার মাধ্যমে এই মাক্বামও হাছিল হবে না। সহস্রাধিক কেন লক্ষ-কোটি কিতাব লিখলেও এই মাক্বামের বিন্দু বিসর্গ হাছিল হবার নয়। এটা আল্লাহ পাক-এর এক খাছ দান। তিনি যাকে ইচ্ছা এ আলমমাক্বাম দান করেন। এমনকি সমস্ত জগত উনাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও উনাদের বেলায়েতের কমতি হবে না। বরং যারা মুখ ফিরিয়ে নিবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত ও নিয়ামত থেকে বঞ্চিত থাকবে।

উপমহাদেশের এই শ্রেণীর আওলিয়া--কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মধ্য হতে অনেকেই দুচারটির বেশী কিতাব লিখেননি। যেমন, হযরত দাতা গঞ্জে বখশ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর একমাত্র তাছাউফের বিখ্যাত কিতাব কাশফুল মাহজুবব্যতীত আর কোন কিতাবের সন্ধান মিলে না। সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দুচারটি কিতাব ব্যতীত তেমন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিতাব নেই। হযরত বাবা ফরিদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শোকর রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ফাওয়ায়েদুস সালেকীন, ইসরারুল আওলিয়াএবং হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর রাহাতিল মুহিব্বীন, রাহাতিল কুলুব, ফাওয়ায়েদুল ফুয়াদইত্যাদি সামান্য সংখ্যক কিতাবেরই সন্ধান মিলে।

এভাবে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এরও মাত্র কিছু কিতাবের সন্ধান মিলে। যেমন, “মাকতুবাত শরীফ, রেসালায়ে মাবদা মাআদ, মুকাশিফাতে আইনিয়া, মাআরিফে লাদুন্নিয়া, রদ্দে রাওয়াফিজ, ইসবাতে নবুওওয়াতইত্যাদি মাত্র কয়েকটি কিতাবের সন্ধান পাওয়া যায়। হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি অবশ্য প্রায় দুশত কিতাব লিখেছেন। কিন্তু আহমদ রেযা খাঁর মত তো আর অধিক সংখ্যক কিতাব লিখেননি।

আমীরুল মামিনীন হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর স্বহস্তে লিখিত কোন কিতাবই নেই। ফুরফুরা শরীফের হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি গত শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন উনার অসিয়তনামা ব্যতীত আর কোন লিখিত কিতাব নেই। বেরেলীদের দাবী ও বক্তব্য অনুযায়ী এই সমস্ত বুযুর্গগণ কেউই মুজাদ্দিদ হবার উপযুক্ত নয়। কারণ উনারা তো আর সহস্রাধিক কিতাব লিখেননি। কাজেই কি করে তারা মুজাদ্দিদ হতে পারেন? (নাউযুবিল্লাহ)

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! বেরেলীদের সাহস ও স্পর্ধা লক্ষ্য করুন। তারা শুধু এতটুকু নিয়েই সন্তুষ্ট নয়। তাদের দাবী, আহমদ রেযা খাঁ হচ্ছেন মুজাদ্দিদে আযমঅর্থাৎ সবচাইতে বড় মুজাদ্দিদ।

আমরা বলি, মূর্খতারও সীমা থাকা দরকার। যারা তাকে মুজাদ্দিদ বলে তারা যেমন জাহিল, মূর্খ। আর যে মুজাদ্দিদের মসনদে দাবী করা হয়েছে সে হচ্ছে, তরীক্বতের অন্ধ (অন্ধ ব্যক্তির নিজের পরিচিত জায়গা ব্যতীত বহিঃজগতের কোন খবর তার থাকে না।) চক্ষুস্মান ব্যক্তির আলামত হচ্ছে, দেখে-শুনে, চিন্তা-ফিকির করে কথা বলা। কাজেই যাদের কাফির বলা হলো, বুদ্ধিমান হিসেবে প্রথমে দেখা উচিত ছিল উনারা কোন স্থানের অধিবাসী। উনারা কি জান্নাতী? না জাহান্নামী? কিন্তু আহমদ রেযা খাঁ তরীক্বতের অন্ধ ছিল অর্থাৎ তার আত্মা এতটুকু অগ্রসর হতে পারেনি তাই অপরকে কাফির বলার কারণে সে নিজেই কুফরীতে গ্রেফতার হয়েছে।

শত আফসুস। আহমদ রেযা খাঁর জন্য। সম্ভবতঃ দারেমী শরীফের এই হাদীছ শরীফ তার জানা ছিল না। আর জানা থাকলেও সে ফিকির করেনি। দারেমী শরীফে উল্লেখ আছে, “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনুহু বর্ণনা করেন, “ক্বিয়ামতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে আল্লাহ পাক-এর নিকট অধিক মন্দ সেই ব্যক্তিই হবে, যে তার ইলম দ্বারা উপকৃত হতে পারেনি
উপমহাদেশের বাইরে যারা অধিক কিতাব লিখেননি তাদের মধ্যে প্রধানতঃ চার মাযহাবের চার ইমাম যেমন, ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর স্বহস্তে লিখিত কোন কিতাব নেই। অবশ্য কেউ কেউ বলেন, হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফিক্বাহ্ আকবর ও মুসনাদে আবূ হানীফাহাদীছ শরীফের কিতাবটি মূলতউনারই লিখিত।

দ্বিতীয়তঃ হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মূল হাদিছগ্রন্থ হচ্ছে আল মুয়াত্তা।হযরত ইমাম শাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিশিষ্ট ফিক্বাহর উপর লিখিত কিতাব হচ্ছে কিতাবুল উম্ম।মুসনাদের উপর লিখিত হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রধান ও প্রসিদ্ধ কিতাব হচ্ছে, “মুছনাদে আহমদ।ছয়টি বিশিষ্ট হাদীছ গ্রন্থের মুসান্নিফ বা লেখকগন যেমন, মুহম্মদ বিন ইসমাইল বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর বিখ্যাত কিতাব আল জামিউল সহীহুল মুখতাসারু মিন উমুরী রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহি।যা বুখারী শরীফহিসেবে সারা দুনিয়ায় মশহুর হয়ে আছে। দ্বিতীয়ঃ মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ ইবনে দারদ ইবনে কোশদা কুশাইরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর শ্রেষ্ঠ হাদীছ শরীফের কিতাব হচ্ছে, “সহীহ্ মুসলিম।

তৃতীয়তঃ সুলায়মান ইবনে আশহার ইবনে ইসহাক ইবনে বশীর ইবনে শাদ্দাদ ইবনে আমর ইবনে ইমরান আল আজাদী সিজিস্তানী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি ইমাম আবু দাউদ নামে মশহুর। উনার প্রসিদ্ধ ফিক্বাহ্ ও হাদীছ শরীফের কিতাব হচ্ছে সুনানে আবু দাউদ।

চতুর্থতঃ ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লিখিত বিখ্যাত কিতাবের নাম হচ্ছে, “জামে তিরমিযী।

পঞ্চমতঃ মুহম্মদ ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মাজা আল কাযদিনী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মশহুর কিতাব, “সুনানে ইবনে মাযাহ্ শরীফ।

ষষ্ঠতঃ আহমদ ইবনে আলী ইবনে শুয়াইব নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লিখিত একটি কিতাবই উনাকে সারা জাহানে প্রসিদ্ধ করে রেখেছে আর তাহলো হাদীছ শরীফের উপর উনার লিখিত কিতাব, “আল মুজতাবাবা সুনানে নাসাঈ শরীফ।

অবশ্য চার মাযহাবের ইমামগণের মধ্যে একমাত্র হযরত নুমান ইবনে সাবিত, ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ব্যতীত অন্য তিনজনের লিখিত আরো কিতাবের সন্ধান ইতিহাসে পাওয়া যায়। তদ্রুপ সিহাহ্ সিত্তাহ্ বা ছয়খানা প্রসিদ্ধ হাদীছ শরীফ লেখকের বেলায়ও একই বর্ণনা পাওয়া যায়। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে আল্লামা আমিমুল ইহসান রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “উনারা অনেক কিতাব লিখেছেন কিন্তু কোন সহীহ্ গ্রন্থে উনাদের বর্ণিত বিপুল কিতাবের তালিকার সন্ধান পাওয়া যায় না।এরপর সলফে সালেহীন এবং হযরত সূফিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মধ্য হতে অনেকেই কোন কিতাবই লিখেননি এবং উনাদের স্বহস্তে লিখিত কোন কিতাবের সন্ধান আজ পর্যন্ত ইতিহাস দিতে পারেনি। যেমন, হযরত মালিক বিন দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ফুজাইল বিন আয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইব্রাহীম বিন আদহাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু সুলায়মান দারায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বিশর বিন হারিস রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ফতেহ্ মওসুলী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ আব্দুল্লাহ্ জাল্লা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ আব্দুল্লাহ্ মানাযিল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইউছুফ আসবাত রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবুল সায়েগ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আহমদ ইবনে হারব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবুল আব্বাস নাহা ওয়ান্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু আমর ইব্রাহীম ‍যুজাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি, খাজা আবু আবদাল চীশতি রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খাজা হাজী শরীফ জিন্দানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খাজা আহমদ আনজীর ফাগনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সাইয়্যিদ আমির কুলাল রহমতুল্লাহি আলাইহি, খাজা হযরত আলাউদ্দীন আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মত জগত বরেণ্য আওলিয়া, বুযুর্গ, সূফীদের স্বহস্তে লিখিত অন্তত একটি কিতাবের সন্ধান কি আজ পর্যন্ত কেউ দিতে পেরেছে? তবে সলফে সালেহীন ও হযরত সূফীয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মধ্যহতে বিশিষ্ট বেলায়েতধারী ওলী ও শাহেন শাহে তরীকরেত ইমামগণের মধ্যে হতে আবার কেউ কেউ কিছু সংখ্যক কিতাব লিখেছেন।

যেমন, কাদেরিয়া তরীক্বার ইমাম, পীরানে পীর দাস্তগীর হযরত শায়খ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লিখিত কিতাবের মধ্যে আল ফাতহুর রব্বানী, গুণিয়াতুত্ তালেবীন, সিররুল আসরার, ফতহুল গায়ব, কাসিদায়ে গাউসিয়াছাড়া আরো দুএকটি কিতাবের বর্ণনা পাওয়া যায়।

রেফাইয়া তরীক্বার ইমাম, শায়খ আহমদ ইবনে আবুল হাসান রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর স্বহস্তে আরবী ভাষায় লিখিত আল বুরহানুল মুইয়াদ, আল বুনইয়ানুল মুশাইয়্যাদ, সিরাতুল মুস্তাকিম, কিতাবুত তানবীহ, নেজমুল খাছ, হালাতু আহলিল হাকীকাহ্, কিতাবুল আরবাঈন, হেকামুর রিফাইয়্যাহ, আহযাবুর রিফাইয়্যাহ, মাজালিসে আহম্মদীয়াহ, আকায়েদে রিফায়ী প্রমুখ কিতাবের সন্ধান পাওয়া যায়।

সোহরাওয়ার্দীয়া তরীক্বার ইমাম হযরত শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর রচনাবলীর মধ্যে বিশ্ববিখ্যাত তাফাউফের উপর লিখিত উনার অনন্য কিতাব আওরারিফুল মাআরিফপ্রসিদ্ধ। এছাড়া উনার অন্যান্য লেখনী গ্রন্থের মধ্যে হিকমাতুল ইশরাক, হায়াকিলনূর এবং গোরবাতুল গারাবিয়ানামক কিতাবের সন্ধানও মিলে।

শাযালীয়া তরীক্বার অন্যতম শ্রেষ্ঠ তরীক্বতের ইমাম হযরত আবুল হাসান শাজালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর স্বহস্তে লিখিত কোন কিতাবের সন্ধান মিলেনা।

নকশবন্দীয়া তরীক্বার ইমাম মুশকিল কুশা শাহেন শাহে বিলায়েত হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর স্বহস্তে লিখিত কিতাবের সন্ধান উনার জীবন চরিতকারকগণে কেউই উল্লেখ করেননি।

পাঠক সমাজ! চিন্তা করুন। সারা দুনিয়ায় যাঁদের হিদায়েতের নূর প্রজ্জলিত ও উদ্ভাসিত ক্বিয়ামত পর্যন্ত উনাদের হিদায়েতের ঝান্ডা বুলন্দ থাকবে। যারা খোদা তায়ালার বারগাহে মাকবুলিয়াতের সনদ হাছিল করেছেন। উনাদের কারো দ্বারা সহস্রাধিক কেন শতাধিক কিতাব পর্যন্ত লিখিত হয়নি। স্বয়ং পৃথিবীর প্রথম মুজাদ্দিদ হযরত ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি পর্যন্ত কিতাব লিখার জন্য কলম ব্যবহার করেননি।

এখন বেরেলী মৌলভীরা যদি বলে, সহস্রাধিক কিতাব না লিখলে কাউকে মুজাদ্দিদ স্বীকৃতি দেয়া যাবে না। তাহলে পৃথিবীর প্রথম মুজাদ্দিদ ইমামুল আদিল হযরত ওমর ইবনুল আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি মুজাদ্দিদগণের তালিকা হতে প্রথমেই বাদ পড়বেন। (নাউযুবিল্লাহ)

পাঠক! চিন্তা করুন, বেরেলী মৌলভীরা কত গন্ড মূর্খ, জাহিল, অজ্ঞ, জাহেরী কিতাব লিখাকেই কেবল তারা মুজাদ্দিদের জন্য শর্ত আরোপ করেছে। অথচ ইতোপূর্বে আর কেউই এ কথা বলেনি।
 


No comments

ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য।

  ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য। ডাল খাওয়ার ফলে কলব প্রসারিত হয় এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়। পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উ...

Powered by Blogger.