রসূলে আরাবী নূরে মুজাসসাম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারক চাক।
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক সাক্ষাতে মি’রাজ
শরীফ-এ যাওয়ার সময় যখন কা’বা শরীফ-এ তাশরীফ নেন তখন উনার সিনা মুবারক চাক করা হয়।
হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার হতে বর্ণিত, হযরত জিবরীল আলাইহিস
সালাম তিনি আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
নিয়ে তা’যীমের সাথে জমজম কূপের নিকট শোয়ার ব্যবস্থা করেন এবং বক্ষ মুবারক বিদীর্ণ করেন।
তৎপর হিকমত ও ঈমানের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণের তশতরি
(পাত্র) আনেন এবং এটা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারকে
সূরতান ঢেলে দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণ করে সিনা মুবারক জোড়া লাগিয়ে দেন। (তাফসীরে ইবনে
কাছীর,
৫ম জিলদ ১৬ পৃষ্ঠা)
মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ
করেন,
“আমি কি আপনার সিনা মুবারক চাক ও প্রসারিত করিনি? অর্থাৎ আমি আপনার সিনা মুবারক চাক ও প্রসারিত করেছি।” (সূরা
ইনশিরাহ/১)
উক্ত আয়াত শরীফ-এ আল্লাহ পাক উনার প্রিয়
হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরহে সুদুর বা সিনা মুবারক প্রসারিত
করার কথা বলেছেন। যা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে প্রকাশকৃত উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি নিয়ামতসমূহের মধ্যে বিশেষ এক
নিয়ামত।
ছহীহ ও বিশুদ্ধ মতে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারক চাক করা
হয়েছিলো চারবার। প্রথম বার যখন তিনি স্বীয় দুধ মা হযরত হালীমা সা’দিয়া আলাইহাস সালাম
উনার লালন-পালনে, তখন উনার বয়স মুবারক
তিন থেকে পাঁচ বছর ছিল। দ্বিতীয় বার দশ থেকে চৌদ্দ বছর বয়স মুবারকে। তৃতীয়বার আনুষ্ঠানিকভাবে
নুবুওওয়াত প্রাপ্তির সময় হিরা গুহায় এবং চতুর্থবার আনুষ্ঠানিকভাবে মি’রাজ শরীফ-এর রাতে
কা’বা শরীফ-এ।
কাফির, মুনাফিক, দাজ্জালের চেলা, পথভ্রষ্ট, ফিতনাবাজ, বেয়াদব ও বাতিল ফিরকার লোকেরা বলে থাকে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রথমবার সিনা
মুবারক চাকের সময় উনার ভিতর থেকে ক্বলব বের করে তা ফেড়ে শয়তানের অংশ বের করে ফেলে দিয়ে
ক্বলবকে পবিত্র করা হয়েছিল এবং শিশুসুলভ আচরণ দূরীভূত করা হয়েছিল। নাঊযুবিল্লাহ!
মূলত তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণ কুফরীমূলক
এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ইহানত ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের
শামিল। কারণ উম্মতদের শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আল্লাহ পাক তিনি যাকে
প্রেরণ করলেন উনারই মধ্যে যদি শয়তানের অংশ থাকে তাহলে তিনি হিদায়েত করবেন কিভাবে? নাঊযুবিল্লাহ! আর শিশুসুলভ আচরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘নবীগণ তো নবী যদিও তিনি শিশু হন না কেন।’ (আল ইতকান)। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “আমি তখনও নবী ছিলাম যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি মাটি ও পানিতে অবস্থান করছিলেন।
রূহ এবং শরীরে ছিলেন।”
কেননা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াস তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মতে, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সমস্ত প্রকার খারাপ বিষয় এবং
অপবিত্রতা থেকে সম্পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র এমনকি পবিত্র থেকে পবিত্রতম।
ওই সমস্ত কাফির, মুনাফিক, বেয়াদব, ওহাবী, খারিজীরা আরো বলে, দ্বিতীয়বার সিনা মুবারক চাকের সময় উনার ভিতর থেকে হিংসা, বিদ্বেষ ও কামভাব দূর করা হয়েছিলো। নাঊযুবিল্লাহ! তাদের এ বক্তব্য
ও কুফরীমূলক এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনার প্রতি চরম অপবাদ। হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ
পাক তিনি বলেন, “আমি আপনাকে খলীল ও হাবীব হিসেবে গ্রহণ
করেছি।” তারা আরো বলে, তৃতীয় বার সিনা মুবারক
চাক করা হয়েছিলো নুবুওওয়াত ভার বহন ও ধারণ করার জন্য। নাঊযুবিল্লাহ!
গুমরাহ ও বাতিল ফিরকার লোকদের এ বক্তব্য
কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর খিলাফ। কারণ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার
নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা বিনা সিনা মুবারক চাকে নুবুওওয়াত ও রিসালতের ভার ধারণ
ও বহন করলেন। আর যিনি নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, যিনি সৃষ্টি না হলে আল্লাহ পাক তিনি কিছুই সৃষ্টি করতেন না উনার
পক্ষে সিনা মুবারক চাক ব্যতীত নুবুওওয়াত ও রিসালতের ভার বহন ও ধারণ করা সম্ভব ছিলো
না। নাঊযুবিল্লাহ! এ ধারণা পোষণ করা কাট্টা কুফরী। যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ। আল্লাহ
পাক তিনি বলেন, “আল্লাহ পাক তিনি ফেরেশতা ও মানুষের মধ্য
হতে রসূল মনোনীত করেছেন।”
কাফির, মুনাফিক, দাজ্জালের চেলা, পথভ্রষ্ট, ফিতনাবাজ, বেয়াদব ও বাতিল ফিরকার লোকেরা বলে থাকে যে, মিরাজ শরীফ-এর পূর্বে সিনা মুবারক চাক করা হয়েছিল মিরাজ শরীফ
করা ও তা বরদাশত করার যোগ্যতা হাছিলের জন্য। নাঊযুবিল্লাহ।
মূলত তাদের বক্তব্য কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও কিয়াসের সম্পূর্ণ খিলাফ; যা কুফরীমূলক। কারণ আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনার প্রতিটি বিষয় ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
সুতরাং উনার ত্রুটি, অক্ষমতা, অযোগ্যতা ইত্যাদি ছিল বলে চিন্তা করাটাও কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
No comments