বাতিল ফিরকা লা-মাজহাবীরা ৮ রাকাত তারবীহ প্রমাণ করতে কিভাবে কিতাব বিকৃত করেছে তার প্রমান।
আমরা সাধারণ মুসলমানেরা গত ১৪০০ বছর ধরে ২০ রাক’আত তারাবীর নামায পড়ে আসছি। প্রায় ২৫০ বছরের ব্রিটিশদের তৈরীকৃত ওহাবী-খারেজী মতবাদের অনুসারীরা আজ হঠাৎ করে বলে বেড়াচ্ছে তারাবীর নামায নাকি ৮ রাক’আত। শুধু তাই নয় তাদের এই মিথ্যা দাবীকে সত্য বলে প্রমাণ করা জন্য এরা অনেক আলেমদের বই পর্যন্ত পরিবর্তন করেছে। আমরা দুইটির উদাহরণ দিচ্ছি।
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
১।বড় পীর গউসুল আযম আব্দুল ক্বদীর জিলানী
রাহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি বিখ্যাত কিতাব “গুনিয়াতুত তালিবীন” এর কথা। এই ওহাবী-খারেজী মতবাদের প্রচারকারীরা পাকিস্তান থেকে এই বইটি
প্রকাশের সময় ২০ রাকা’আত এর স্থলে ১১(তারাবীহ
৮+বিতর ৩) লিখে ছাপায়। স্ক্যান কপি দেখুনঃ
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
মূল কপিঃযেখানে ২০ রাকায়াত উল্লেখ
আছে
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
গুনিয়াতুত
তলিবিনঃ৩৯২ পৃষ্ঠা ;তামির ইনসানিয়াত,পাকিস্তান
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
বিকৃত
কপিঃ যেখানে ৮ রাকায়াত উল্লেখ করা হয়েছে।
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
গুনিয়াতুত তলিবিনঃ৫৯১
পৃষ্ঠা ;মাকতাবা সৌদিয়া,হাদিস মনযিল,পাকিস্তান
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
সুনানে আবু
দাউদ শরীফে ১৪২৯ নম্বর হাদীস শরীফে “ইশরীনা রাকায়াতান” পাল্টিয়ে “ইশরীনা লাইলাতান” করার রহস্য উম্মোচন
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
মূল সুনানে
আবু দাউদ শরীফ কিতাবে ১৪২৯ নম্বর হাদীস শরীফে তারাবীহ নামাজের ২০ রাকায়াতের
পরিবর্তে ২০ রাত লেখা রয়েছে। এই বিষয়টা
নিয়ে অনেক অনুসন্ধান করা হলো। আবু দাউদ শরীফ এর অনেক গুলো ছাপ চেক করলাম। শরাহ
সমূহ দেখলাম। মজার বিষয় দেখলাম সালাফীরা প্রথম থেকেই কৌশলে “রাকয়াতের” পরিবর্তে “রাত” শব্দ ঢুকিয়ে দিয়েছে। এখানেই শেষ হয়নি,
বরং উপমহাদেশের হানাফীদের প্রতি অভিযোগ আরোপ করে বলেছে এই হানাফী
আলেমরাই নাকি ২০ রাতকে ২০ রাকায়াত করেছে। নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক। এ যেন চুরি করেও
সিনা জুড়ি। নিজেরা চুরি করে তাদের প্রকাশনা থেকে ২০ রাকায়াতকে ২০ রাত বানিয়ে উল্টা
হানাফীদের প্রতি মিথ্যা অভিযোগ। বাস্তবতা হল, স্পষ্ট
প্রমাণ আছে যে সুনানে আবু দাউদের একটি রেওয়ায়েতকে পরবর্তী যুগের হানাফী উলামারা
বিকৃত করেছেন বলে যে অভিযোগটি করা হয়েছে, এই উগ্রপন্থীদের
কাছে তার কোন প্রমাণ নেই। এটা শুধু দাবী নয় আমাদের পক্ষ থেকে, বরং এটি একটি বাস্তব সত্য যা হাদীসশাস্ত্রের বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ ২ জন
ইমামের কিতাব, যা প্রায় ৬৫০ বছরেরও বেশী আগে লিখা হয়েছে,
সেখান থেকে স্ক্যান সহকারে দেখানো হবে সামনে ইনশাআল্লাহ্। এবং
সবচেয়ে বাস্তব সত্য হল, হাদীসের এই ২ জন হাফেয যাদের নাম
পরে উল্লেখ করা হবে তারা দুজনই শাফী মাযহাবের ! সালাফীরা দাবি করে, ১৩১৮ হিঃ পর্যন্ত ভারতে ছাপানো আবু দাউদের সমস্ত পাণ্ডুলিপিতে হাদীসে '২০ রাত্রি' শব্দটি আছে এবং এর ব্যতিক্রমের কোন
চিহ্ন নেই। অন্যদিকে, মাওলানা মাহমুদল হাসান (দেওবন্দী)
তার ব্যাখ্যাসহ আবু দাউদ ছাপিয়েছেন, প্রকাশকরা নিজেরা
অথবা অন্য কারও পরামর্শে হাদীসের 'রাত্রি' শব্দটির উপরে 'নুন' হরফটি
অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন এবং এরপর এর পাদটীকায় লিখেছেন যে এই 'নুন' হরফটি দ্বারা পাণ্ডুলিপির পার্থক্য
বুঝানো হচ্ছে এবং এই পার্থক্যটি হল 'রাকাআত'। পরবর্তীতে মাওলানা ফাহার আল হাসান (দেওবন্দী) এর ব্যাখ্যাসহ যখন সুনানে আবু দাউদ ছাপানো হয়, তখন 'রাকাআত'
শব্দটি হাদীসের মধ্যে লিখা হয় এবং 'নুন'
হরফটি 'রাকাআত' শব্দের উপরে লিখা হয়। তারপর পাদটীকায় 'রাত্রি'
শব্দটি লিখে উল্লেখ করা হয় যে, 'নুন'
হরফটির মাধ্যমে পাণ্ডুলিপির পার্থক্য বুঝানো হয়েছে। অতএব সবকিছু
পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে এবং এর উদ্দেশ্য ছিল পাণ্ডুলিপির বিভিন্নতার চরিত্র অংকন
করে বুঝানো। একইভাবে সুনানে আবু দাউদের সাথে ছাপানো 'বাযাল
মাজহুদ' কিতাবেও হাদীসে 'রাত্রি'
শব্দটি রয়েছে এবং এই 'রাত্রি' শব্দটির উপরে 'নুন' হরফটি
লিখা হয়েছে এবং পাদটীকায় 'রাকাআত' শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। পাদটীকায় 'রাকাআত'
শব্দটির সাথে এটি লিখা হয়েছে যে, " শায়খ মুহাম্মাদ ইসহাক এর পাণ্ডুলিপিতে এমনই আছে। " এগুলো এজন্যই
লিখা হয়েছে যাতে এটি বুঝা যায় বা স্পষ্ট হয় যে কার কাছ থেকে এটি এসেছে, কে এই পাণ্ডুলিপিটি দেখেছে এবং এটি কোথায় আছে এখন?
সূতরাং তাদের
কথা থেকেই বোঝা যায় পুরানো একটা পন্ডুলিপি ছিলো যেখানে “লাইলাতান” শব্দের পরিবর্তে “রাকায়াতান” শব্দটার অস্তিত্ব ছিলো। হ্যাঁ,
বিষয়টা তাই, প্রায় ৬৫০ বছরেরও বেশী আগে
এবং পরবর্তী যুগের হানাফী মুহাদ্দীস, শায়খ মুহাম্মাদ
ইসহাক দেহলভী এর অনেক আগে, হাদীসশাস্ত্রের প্রধান ২ জন
ইমাম সুনানে আবু দাউদের পাণ্ডুলিপিটি দেখেছেন এবং তাদের সেই পাণ্ডুলিপিতে '২০ রাকাআত' শব্দটিই ছিল ! হাদীসের এই ২
মহান হাফেজরা হলেন, হাফিয শামসুদ্দীন আয্ যাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাতঃ ৭৪৮ হিঃ) এবং তাঁর সমসাময়িক হাফিয ইমাদুদ্দীন ইবনে
কাসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাতঃ ৭৭৪ হিঃ)।
কোন হানাফীই
সুনানে আবু দাউদে বিভ্রান্তিমূলকভাবে 'রাত্রি' শব্দটিকে 'রাকাআত' শব্দটিতে পরিবর্তন করে অন্তর্ভূক্ত
করে দেয়নি, তার প্রথম প্রমাণ ইমাম শামসুদ্দীন আয্ যাহাবী
রহমতুল্লাহি আলাইহি এর 'সিয়ারু আ'লামিন নুবালা' কিতাব ১ম খন্ড ৪০০-৪০১
পৃষ্ঠা থেকে। নিচে স্ক্যান দেওয়া হয়েছে মুয়াসসাসা আর্ রিসালা কর্তৃক প্রকাশিত 'সিয়ারু আ'লামিন নুবালা' প্রথম পাতা ও স্ক্যান কপি সমূহ দেয়া হলোঃ-
আয্ যাহাবী
এর 'সিয়ারু আ'লামিন নুবালা' কিতাব (১/৪০০-৪০১) থেকে স্ক্যান
যেখানে সুনানে আবু দাউদের রেওয়ায়েতটি '২০ রাকাআত' শব্দ সহকারে রয়েছে, '২০ রাত্রি' শব্দ সহকারে নয়।
উপরের
স্ক্যানে উল্লেখযোগ্য অংশগুলোতে “ইশরিনা রাকায়াতান” শব্দটা রয়েছে, আবু দাউদ শরীফের রেফারেন্সে। যে হাদীস শরীফ খানা হযরত
হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। সূতরাং প্রমান হলো পূর্ববর্তী কিতাব
সমূহেও '২০ রাকাআত' শব্দটি
আছে।
কোন হানাফীই
সুনানে আবু দাউদে বিভ্রান্তিমূলকভাবে 'রাত্রি' শব্দটিকে 'রাকাআত' শব্দটিতে পরিবর্তন করে অন্তর্ভূক্ত
করে দেয়নি, তার দ্বিতীয় প্রমাণ ইমাম ইবনে কাসীর
রহমতুল্লাহি আলাইহি এর 'জামি'উল মাসানীদ' কিতাব থেকে। এখানে দারুল ফিকর
থেকে প্রকাশিত,
ইবনে কাসীর
এর 'জামি'উল মাসানীদ' কিতাব ১ম খন্ড ৫৫ পৃষ্ঠা থেকে
স্ক্যান যেখানে সুনানে আবু দাউদের রেওয়ায়েতটি '২০
রাকাআত' শব্দ সহকারে রয়েছে, '২০ রাত্রি' শব্দ নেই।
এবার আপনারাই
বলুন, সুনানে আবু দাউদের
বিভিন্ন পাণ্ডুলিপিতে বর্ণিত আল হাসান আল বসরী এর এই রেওয়ায়েতটির সঠিক শব্দ কোনটি?
এবার আপনারাই
বলুন, সুনানে আবু দাউদের
বিভিন্ন পাণ্ডুলিপিতে বর্ণিত আল হাসান আল বসরী এর এই রেওয়ায়েতটির সঠিক শব্দ কোনটি?
যাইহোক, এখন সত্য অনুসন্ধানকারীদের জন্য
সুনানে আবু দাউদ শরীফের কিতাবুছ ছালাত এর ২০২ পৃষ্ঠার স্ক্যান কপি দেয়া হলো। “ইশরিনা রাকায়াতান” বাক্যটার নিচে লাল আন্ডার
লাইন করে দেয়া হয়েছে। বিশ রাকায়ত তারাবীহ অাছে কিনা নিজের চোখেই দেখে নিন। আল্লাহ
পাক হেদায়েতের মালিক। ওমা আলাইনা ইল্লাল বালাগ....
এখন ইনসাফের
দৃষ্টিতে বলুন ১৩১৮ হিঃ এর অনেক আগেই ইমাম যাহাবী এবং ইবনে কাসীর এর কাছে '২০ রাকাআত' শব্দ
সম্বলিত সুনানে আবু দাউদের পাণ্ডুলিপি ছিল এবং সাথে সাথে পূর্বযুগের হানাফী
উলামাদের বিরুদ্ধে আলোচ্য রেওয়ায়েত বিকৃতির যে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন তা কত জঘন্য
মিথ্যা। মূলত সুনানে আবু দাউদে ইশরিনা রাকায়াতান ই ছিলো, সালাফীরা
যাতে সিয়া সিত্তায় এমন অকাট্য দলীল না থাকতে পারে সে জন্য তারা বিভিন্ন ছাপা থেকে
অত্যান্ত ঘৃণিত ভাবে বাদ দিয়েছে। যেমনটা ইহুদী ও নাছারারা করতো।
No comments