পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার উসুল-২(পবিত্র হাদীছ শরীফ)
=========================================
শরীয়তের কোন বিষয়ের মীমাংসা বা ফায়সালা করতে হলে তা কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতেই করতে হবে, এর বাইরে কোন কথা বা কাজ মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, শরীয়তের ভিত্তি বা দলীলই হলো উপরোক্ত চারটি। এ প্রসঙ্গে উসূলের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে,
“মূলতঃ শরীয়তের ভিত্তি হলো তিনটি। কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা এবং চতুর্থ হলো- ক্বিয়াস।” (নুরুল আনোয়ার)
(ধারাবাহিক)
(২) পবিত্র হাদীস শরীফঃ
------------------------
কুরআন শরীফ-এর ন্যায় হাদীস শরীফও শরীয়তের অকাট্য দলীল। কারণ হাদীস শরীফ ব্যতীত উম্মতের জন্য কুরআন শরীফ-এর সঠিক ব্যাখ্যা অনুধাবন করা কোন দিনও সম্ভব নয়। আর তাই হাদীস শরীফকে কুরআন শরীফ-এর তাফসীর বা ব্যাখ্যা বলা হয়ে থাকে। মূলতঃ হাদীস শরীফও ওহীর অন্তর্ভূক্ত।
অতএব কুরআন শরীফ-এর ন্যায় হাদীস শরীফ মানা ও তার অনুসরণ-অনুকরণ করা অবশ্যই কর্তব্য।
আর তাই মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ করেন,
وما اتكم الرسول فخذو. وما نهاكم عنه فانتهوا.
“আমার রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা নিয়ে এসেছেন, তা আঁকড়িয়ে ধর এবং যার থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তার থেকে বিরত থাক।”
উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা হাদীস শরীফ-এর অনুসরণ-অনুকরণ করা ফরজ প্রমাণিত হয়। সুতরাং যারা হাদীস শরীফ অস্বীকার করবে এবং তার অনুসরণ-অনুকরণ করবেনা, তারা গোমরাহ্ ও বাতিল এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। যেমন মহান আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন বলেন,
فليهذر الذين يخالقون عن امره ان تصيبهم فتنة اوبصيبهم عذاب اليم.
“সুতরাং যারা তাঁর (রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর) আদেশের বিরোধিতা করে, তাদের ভয় করা উচিত যে, তাদের উপর এসে পড়বে কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”
আর হাদীস শরীফে ইরশাদ করা হয়েছে,
হযরত আবূ রা’ফের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত রসূলে মকবুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি তোমাদের কাউকে যেন এরূপ না দেখি যে, সে তার গদীতে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে। আর তার নিকট আমার আদেশাবলীর কোন একটি আদেশ পৌছাল, যাতে আমি কোন বিষয়ে আদেশ বা নিষেধ করেছি। তখন সে বলবে, আমি এসব কিছু জানিনা, আল্লাহর কিতাবে যা পাবো, তাই অনুসরণ করবো।” (তিরমীযি শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ইবনে মাজাম, আহমদ)
হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ করা হয়,
হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, একদিন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার গদীতে ঠেস দিয়ে একথা মনে কর যে, আল্লাহ্ পাক যা এ কুরআন শরীফে অবতীর্ণ করেছেন, তা ব্যতীত তিনি আর কিছুই হারাম করেননি? তোমরা জেনে রাখ, আমি খোদার কসম করে বলছি- নিশ্চয়ই আমি তোমাদের অনেক বিষয়ে আদেশ দিয়েছি, উপদেশ দিয়েছি এবং নিষেধও করেছি, আমার এরূপ বিষয়ও নিশ্চয়ই কুরআন শরীফ-এর বিষয়ের ন্যায়।” (আবূ দাউদ শরীফ)
এ হাদীস শরীফ দ্বারা বুঝা যায় যে, কুরআন শরীফ-এর ন্যায় হাদীস শরীফও শরীয়তের দলীল।
কাজেই উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ শরীয়তের অকাট্য দলীল এবং তার অনুসরণ ও অনুকরণ করা অবশ্যই কর্তব্য। সুতরাং যারা কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফকে অনুসরণ করবে না , দলীল হিসাবে মানবে না, তারা গোমরাহ্ ও পথভ্রষ্ট হবে। আর তাই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
تركت فيكم امرين لن تضلوا ما غسكيم بهما كتاب الله و سنتى.
“আমি তোমাদের জন্য দু’টি জিনিস রেখে গেলাম, একটি হলো- আল্লাহ্ পাক-এর কিতাব কুরআন শরীফ, দ্বিতীয়টি হলো- আমার সুন্নত হাদীস শরীফ।”
সুতরাং যারা এ দু’টোর অনুসরণ করবে, তারা হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে। আর যারা এর বিপরীত করবে, তারা অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে।
No comments