সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদ যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী সানজিরী আজমিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
মহান আল্লাহ পাক উনার একান্ত মনোনীত আখাছছুল খাছ নিয়ামতপ্রাপ্ত মহান ব্যক্তিত্ব
হচ্ছেন, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম
এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ। পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ৬৯ নম্বর
আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি সে কথাই বলেছেন। সেখানে বর্ণিত আছে-
انعم الله عليهم
من النبيين والصديقين والشهداء والصالـحين.
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণ, ছিদ্দীক্ব, শহীদ এবং ছালিহীন (রহমতুল্লাহি
আলাইহিম) উনাদেরকে বিশেষ নিয়ামত হাদীয়া করেছেন।
আর সেই ছিদ্দীক্ব, শহীদ, ছালিহীন উনারা সবাই যে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম
উনাদের অন্তর্ভুক্ত। হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের আগমনের ধারা ক্বিয়ামত
পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আর সেই হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সাথে
যারা নিসবত (সম্পর্ক) রাখবে, উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার
করবে তারাও বিশেষ নিয়ামত প্রাপ্তগণের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদে যামান,
আওলাদে রসূল, হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন
সেইরূপ মহান ওলীআল্লাহ উনাদের অন্তর্ভুক্ত উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরম-পরম নৈকট্য-তায়াল্লুক, নিসবত, মুহব্বত,-মা’রিফাত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক
হাছিল করেছেন। উনারা বিছাল শরীফ গ্রহণের পর সম্মানিত আরশের অধিবাসী হয়েছেন এবং সর্বদা
মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
দায়িমী যিয়ারত মুবারকে লিপ্ত রয়েছেন উনাদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
৫৩৬ হিজরী সনের ১৪ই রজবুল হারাম শরীফ,
ইছনাইনিল
আযীম (সোমবার) পারস্য তথা ইরানের সানজার নামক পূণ্য ভূমিতে তিনি পবিত্র বিলাদতী শান
মুবারক প্রকাশ করেন। উনার সম্মানিতা মাতা সাইয়্যিদা হযরত উম্মুল ওয়ারাহ মাহে নূর রহমতুল্লাহি
আলাইহা তিনি উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের সময়ের অবস্থার কথা বর্ণনা করতে
গিয়ে বলেন- রাতের অন্ধকার দূর হয়ে দিনের আলোক রশ্মি ধরার বুককে আস্তে আস্তে আলোকিত
করতেছিল। আমি অনুভব করলাম আমার সন্তান যমীনে আসার সময় অতি নিকটে। যথারীতি আমি ফযরের
নামায আদায় করতঃ শয্যা গ্রহণ করলাম। আর সাথে সাথে দেখতে পেলাম আমাদের মুবারক ঘরে তাশরীফ
এনেছেন মহান আল্লাহ পাক উনার অনেক ওলী-বন্ধু। উনাদের অনেককেই আমি চিনি। আর অনেককে ইতঃপূর্বে
কখনো দেখিনি।
উনাদের আগমনকে ঘিরে আমার মনে অনেক প্রশ্নের উদয় হলো। এমন সময় হাতীব (মহান আল্লাহ
পাক উনার সম্মানিত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম) আমার প্রশ্নের উত্তরে বললেন, হে সম্মানিতা মাতা! আপনার কোল মুবারকে যিনি তাশরীফ আনতে যাচ্ছেন
তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব (পরম বন্ধু) রূপে সর্বত্র পরিচতি লাভ করবেন। কাজেই
উনাকে সালাম, অভিনন্দন ও মুবারকবাদ জানানোর
জন্যই এই সব গাউছ, কুতুব, অলী, আবদাল ও দরবেশগণ উনাদের
আগমন ঘটেছে। আর সাথে সাথেই সমস্বরে সবাই বলে উঠলেন, মারহাবা ইয়া কুতুবাল মাশায়িখ! মারহাবা ইয়া হাবীবাল্লাহ!! আমার তন্দ্রা কেটে গেল।
দেখতে পেলাম ঘরের মধ্যে কোনো লোকজন নেই। সবাই অদৃশ্য হয়ে গেছেন। আর আমার কাঙ্খিত আওলাদও
দুনিয়াতে তাশরীফ মুবারক এনেছেন। উনার মুবারক ঠোঁটদ্বয় নড়ছে। তা দেখে আমি উনার মুখ
মুবারকে কান লাগালাম। শুনতে পেলাম তিনি নফী-ইছবাত যিকির করছেন। সুবহানাল্লাহ! আমি উনাকে
আমার মুবারক কোলে তুলে নিলাম। উনার সমস্ত শরীর মুবারক কস্তুরীর (মৃগনাভী) খুশবুতে ভরপুর
হয়ে আছে। এমন দৃশ্য দেখে আমি বিস্ময়াবিভূত হয়ে পড়েছি। আমি কাউকে ডাকতে পারছি না। আমার
মুখ মুবারক দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। আমি নীরব নিথর দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার
শুকরিয়া আদায় করছি। আর ভাবছি এটাও কি সম্ভব। সাথে সাথে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা
আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে এ সমস্ত ঘটনার হিকমত বা রহস্য জানিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, আপনি ভাবছেন, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়াকালীন
ব্যাথা-বেদনা কোথায়? সন্তান ভূমিষ্ঠের পর নবজাতকের
শরীরে যা থাকে তা কোথায়? আর নাড়িইবা কাটলো কে?
তবে শুনে রাখুন! আপনি যখন তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মনোনীত
মহিমাময়ী সম্মানিতা মহিলা দ্বারা আপনার এসব কার্য সম্পন্ন করেছেন। পবিত্র হাউজে কাওসার
হতে পানি এনে সে পানি দ্বারা গোসল দিয়ে আপনার সন্তানকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
সাইয়্যিদা উম্মুল ওয়ারাহ রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি ইহা শুনে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র
দরবার শরীফে বারবার শুকরিয়া আদায় করতে লাগলেন। সুবহানাল্লাহ! (গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি
আলাইহি পূর্ণাঙ্গ জীবনী-৪১)
সম্মানিতা মাতা উনার রেহেম শরীফে থাকাকালীন অবস্থা মুবারক:
হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিতা মাতা
সাইয়্যিদাহ উম্মুল ওয়ারাহ রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি বলেন, আমার প্রথম দুজন মুবারক পুত্র সন্তান বিলাদত শরীফ গ্রহণের পর
আমরা আহাল ও আহলিয়া উভয়েই তৃতীয় সন্তানের প্রয়োজন অনুভব করতে থাকি। আমার যাওজুল মুকাররাম
আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদ গিয়াসুদ্দীন হাসান রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি একজন উচ্চ পর্যায়ের আলিম ও ওলীআল্লাহ ছিলেন। যে দিনটিতে আমার তৃতীয় আওলাদ
হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক অস্তিত্ব
আমার রেহেম শরীফে আগমন ঘটে, সেদিনটি ছিলো লাইলাতুল
খমীস বা বৃহস্পতিবার রাত। আমার যাওজুল মুকাররাম প্রতি রাতের মতো এ রাতেও পবিত্র ইশার
নামায আদায় করে ওযীফা শরীফ ও পবিত্র যিকিরে মশগুল হলেন এবং রাতের তৃতীয় প্রহরে তিনি
তাহাজ্জুদ নামায আদায় করলেন। আমিও উনার পাশে থেকেই একইভাবে পবিত্র নামায, ওযীফা শরীফ ও পবিত্র যিকির শেষ করে বিছানা মুবারকে এসে পবিত্র
ফজরের নামাযের সময় হওয়ার অপেক্ষা করছি।
কুতুবুল মাশায়িখ, আওলাদে রসূল হযরত খাজা
হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিতা মাতা সাইয়্যিদা হযরত উম্মুল ওয়ারাহ
মাহে নূর রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি বলেন,
আমরা সাধারণত
লাইলাতুল খমীস বা বৃহস্পতিবার রাত খাছভাবে ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকিরের মাধ্যমেই অতিবাহিত করতাম। আমার যাওজুল মুকাররাম
আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদ গিয়াসুদ্দীন রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি তাহাজ্জুদ নামায শেষ করে যখন মুনাজাতের জন্য হাত মুবারক তুললেন তখন সমস্ত
ঘর মনোমুগ্ধকর আকর্ষণীয় খুশবুতে ভরে গেলো।
উল্লেখ্য যে, রাতে শেষ প্রহরে পবিত্র
তাহাজ্জুদ নামায আদায়ের পর আহলিয়ার সাথে নিরিবিলি অবস্থান করা খাছ সুন্নত। নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ সময় হযরত উম্মাহাতুল
মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সাথে বিশেষ সাক্ষাৎ মুবারক করতেন। সাধারণত সেই সময়
যে সন্তান মায়ের রেহেম শরীফে তাশরীফ নেন;
তিনি পরহেযগার, মুত্তাক্বী, আল্লাহওয়ালা হয়ে থাকেন।
আর সেদিনেই আমার পবিত্র রেহেম শরীফে হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি তাশরীফ আনলেন। উনি তাশরীফ মুবারক আনার পর থেকে আমি প্রতি রাতেই বিভিন্ন
বুযুর্গানে দ্বীন উনাদের সাক্ষাৎ মুবারক লাভ করতাম। উনারা প্রত্যেক দিন আমাকে সাবধান
করে বলতেন, “মাহে নূর রহমতুল্লাহি আলাইহা!
আপনার পবিত্র রেহেম শরীফে এমন একজন ব্যক্তিত্ব তাশরীফ এনেছেন যিনি হবেন মহান ওলীআল্লাহ
উনাদের পথ প্রদর্শক কুতুবুল মাশায়িখ। মহান আল্লাহ পাক উনার পরম বন্ধু উনাদের মধ্যকার
একজন বিশেষ বন্ধু “হাবীবুল্লাহ”।
অতএব, আপনাকে সবসময় সাবধানতা অবলম্বন
করতে হবে। যেন আপনার দ্বারা কারও কোনো ক্ষতি না হয়। কোনো আদেশ-নিষেধের খিলাফ কাজ সংঘটিত
না হয়। কেউ যেন আপনার আচার-আচরণ মুবারক বা কথা মুবারক থেকে মনে কষ্ট না পায়। কোনো সুওয়ালকারী
যেন আপনার নিকট হতে খালি হাতে ফিরে না যায়। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার সময়কার
সকল মহিলাদের মধ্য হতে আপনাকে মনোনীত করেছেন উনার বন্ধুর মাতৃত্বের জন্য। এটা আপনার
জন্য এক মহান নিয়ামতের বিষয়। এ সৌভাগ্যের সম্মান যাতে রক্ষা পায় সে ব্যাপারে সদা যতœবান থাকবেন।” এছাড়াও মাঝে
মাঝে একটা গইবী আওয়াজ (অদৃশ্য আওয়াজ) আমাকে ব্যাকুল করে তুলতো। আমি যখনই মহান আল্লাহ
পাক উনার খেয়াল ও ধ্যান হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার উপক্রম হতাম তখনই হাতীব (মহান আল্লাহ
পাক উনার একজন ফেরেশতা আলাইহিস সালাম) আমাকে নির্দেশ মুবারক স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতেন, “হে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী-বন্ধুর মাতা! আপনার কিন্তু মহান
আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে অমনযোগী হওয়া উচিত নয়।” অতএব, আমি আমার অন্তর মনকে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরে মশগুল রাখার
সর্বাত্মক চেষ্টা করে যেতাম। একজন গৃহিনী হিসেবে আমাকে সংসারের যাবতীয় কাজও করতে হতো।
যখন থেকেই হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমার পবিত্র
রেহেম শরীফে অবস্থান করছেন তখন থেকে আমার সর্বপ্রকার অভাব, অনটন দূর হয়েছে। শত্রুরাও আমার বন্ধুত্বের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
পবিত্র রেহেম শরীফে অবস্থানের ১২০ দিন পূর্ণ হলো। তখন আর একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটলো।
সে রাতটি ছিলো জুমুয়াবার। পবিত্র ফজর নামাযের সময় আমার ঘর অদৃশ্য আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে
উঠলো। এক জ্যোতির্ময় ফেরেশতা আলাইহিস সালাম হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী হাবীবুল্লাহ
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রূহ মুবারক বহন করে এনে আমার নাভী মুবারক উনার মধ্য দিয়ে দেহ
মুবারক উনার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিলেন। আমার সমস্ত দেহে একটা বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি হলো।
আমি তখন নিদ্রিত ও জাগ্রতের মাঝামাঝি একটা অবস্থার মধ্যে ছিলাম। আমি কিছুটা ভীত সন্ত্রস্ত
হয়ে পরড়লাম। যখন চেতনা ফিরে পেলাম তখন চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলাম সেই অদৃশ্য আলো তখনও
বিলীন হয়ে যায়নি এবং একটা মনমুগ্ধকর খুশবুতে ঘর ছেয়ে আছে।
এরপর একটা তাসবীহ উনার আওয়াজ আমার কান মুবারকে আসতে লাগলো। আমি এ আওয়াজের উৎসমূল
খুঁজতে লাগলাম। কি নামের যিকির হচ্ছে তাও বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। অনেক অনুসন্ধানের
পর অবশ্য বুঝতে পারলাম যে, ওই আওয়াজ আমারই রেহেম
শরীফ হতে হচ্ছে। আমি বিহবল ও বিচলিত হয়ে পড়লাম। আমার যাওজুল মুকাররাম আমার পাশেই শায়িত
ছিলেন। আমি উনাকে জাগ্রত করে ব্যাপারটি অনুধাবনের জন্য জানালাম। তিনি প্রথমে ব্যাপারটি
মোটেই গুরুত্ব দিলেন না। কিন্তু উনাকে বারবার অনুরোধ করায় তিনি আমার রেহেম শরীফে কান
মুবারক লাগিয়ে আওয়াজটি শুনার চেষ্টা করে সফলকাম হলেন এবং অতি আশ্চর্য হয়ে পড়লেন। ঠিক
এই সময়ে হাতীব (সম্মানিত হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম) উনার মুখে অদৃশ্যবাণী উচ্চারিত
হলো- “হে গিয়াসউদ্দিন রহমতুল্লাহি আলাইহি ও মাহে নূর রহমতুল্লাহি আলাইহা আপনাদের এ
মুবারক সন্তান বয়োবৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত যেন এ ঘটনা অন্য কারো কর্ণগোচর না হয়।” ঠিক
এ সময়েই পবিত্র ফজর নামাযের আযান মসজিদ হতে ভেসে আসতে লাগলো। আমার যাওজুল মুকাররাম
ও আমি উভয়েই পবিত্র নামায উনার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলাম।
পবিত্র ফযর নামায শেষে বিষয়টি নিয়ে আমরা পুনরায় আলোচনা করতে লাগলাম। পরে পবিত্র
যিকির উনার লফজ বা শব্দটি আবিষ্কার করতে সমর্থ হলাম। লফজ বা শব্দটি ছিলো, “সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ।”
আমার যাওজুল মুকাররাম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদ গিয়াসুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “এ যিকির আলমে আরওয়াহ (রূহের জগতে) সকল ইনসানের জন্য নির্ধারিত
ছিলো। এটাই ওই জগতের একমাত্র ইবাদত হিসেবে নির্ধারিত রয়েছে। এ ইবাদতের উপর নির্ভর করেই
বান্দাগণ দুনিয়ায় নিজ মর্যাদা-মর্তবা লাভ করে জন্ম নেয়। কেউ ওলীআল্লাহ উনাদের ঘরে, কেউ আলিমের, কেউ জাহিদের ঘরে, কেউ মু’মিনের ঘরে,
কেউ কাফির
বেদ্বীন-বদদ্বীনের ঘরে। আর ওই জগতের ইবাদত-বন্দেগীর উপর নির্ভর করেই বান্দাগণ শারীরিক
সুস্থতা, অসুস্থতা, অন্ধ, কানা, খোঁড়া ও বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নেয়। কেননা ওই জগতে ইবাদত-বন্দেগীর
বিনিময়ে যা প্রাপ্তি ঘটে তাতে সে দুনিয়ায় নিজ মর্যাদা বা স্তর লাভ করে। আলমে আরওয়াহ
বা রূহের জগতের কর্মফল দুনিয়ায় লাভ হওয়ার পর সে নিষ্পাপ হয়ে জন্ম নেয়।” আমি আমার স্বামীর
এসব জ্ঞানগর্ভ কথা শুনে মোহিত হয়ে পড়েছিলাম। যেসব তথ্য আমার জানা ছিলো না, তাও জানতে পেরে যারপরনাই আনন্দিত হলাম।
এ মাসটি ছিলো আমার সন্তান রেহেম শরীফে অবস্থানের চতুর্থ মাস। এভাবেই একটা মহা আনন্দের
মধ্যে আমার সুযোগ্য সন্তান উনার পবিত্র যিকির শুনে শুনে আমার মধ্যেও জযবা ও হালের সৃষ্টি
হতো। আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলতাম। অবশ্য আমি নিজেও ওই যিকিরের সাথে সাথে যিকির করতাম।
এ সোনালি ও জান্নাতী আবেশে বিমোহিত দিনগুলো আস্তে আস্তে শেষ হতে হতে আরো ছয়টি মাস অতিবাহিত
হয়ে পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস আগমন করলো। যে মাস সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন, “رجب شهر الله” অর্থাৎ “পবিত্র রজব মাস হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মাস।” এ
পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনারই চৌদ্দ (১৪) তারিখ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার
শরীফ রাতে অবসানে দিনের শুরুতে আমার মুবারক সন্তান দুনিয়ার যমীনে আগমন করেন। আলহামদুলিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারকে আমরা আমাদের সন্তানের নাম মুবারক
‘মুঈনুদ্দীন’ এবং ডাক নাম ‘হাসান’ রাখলাম। আমরা উনাকে আদর করে ‘হাসান’ রহমতুল্লাহি
আলাইহি বলেই সবসময় ডাকতাম।
উনার সম্মানিত পিতা:
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, কুতুবুল বাররি ওয়াল বাহার, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল, হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত
পিতা ও মাতা উভয়ই ছিলেন বিশিষ্ট ওলীআল্লাহ। উনার সম্মানিত পিতা উনার নাম মুবারক হযরত
সাইয়্যিদ গিয়াসুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি।
তিনি ছিলেন সে যুগের অন্যতম বিশিষ্ট আলিম ও যাহিদ এবং সর্বাধিক ইবাদত গুজার মহান
ব্যক্তিত্ব। ইলিম, আক্বল ও সমঝের গভীরতার
কারনেণ সবাই উনাকে সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। গরীব-দুঃখিদের
সার্বিক সহযোগী ও তত্ত্বাবধানের হাত সবসময় তিনি প্রসারিত রাখতেন। কোনো সায়িল বা প্রার্থীকে
কখনো খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি। তাক্বওয়া-পরহেযগারিতার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আ’লা স্তরের।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন-
التاجر الصدوق الامين
مع النبيين والصديقين والشهداء
অর্থ: “সত্যবাদী, আমানতদার ব্যবসায়ী তিনি
হযরত নবী, ছিদ্দীক্ব এবং শহীদগণ উনাদের সাথী
হবেন।” (তিরমিযী শরীফ)
আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদ গিয়াসুদ্দীন
রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপূর্ণ মিছদাক্ব ছিলেন। তিনি
ছিলেন অত্যন্ত সত্যবাদী ও আমনতদার এবং সফল ব্যবসায়ী। খোরাসান ও ইস্পাহানসহ অনেক দেশ
থেকে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী কিনে এনে নিজের দেশে বিক্রি করতেন। এক্ষেত্রে উনার বড় দুইজন
ছেলে উনাকে সহযোগিতা করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত কর্মঠ, কর্তব্য পরায়ণ। তৎকালীন সকলে উনাকে উঁচু স্তরের ওলীআল্লাহ হিসেবে
জানতেন ও মানতেন। এতো বড় ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করা সত্ত্বেও তিনি কখনো ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির, রিয়াজত-মাশাক্কাত থেকে
কখনো বিমুখ হননি। (গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি পূর্ণাঙ্গ জীবনী-৪৯, মুসালিকুছ ছালিকীন-২৭১)
সম্মানিতা মাতা:
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, কুতুবুল মাশায়িখ, সুলত্বানুল হিন্দ আওলাদে রসূল, হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিতা
আম্মা ছিলেন একজন বিশিষ্ট ওলীআল্লাহ। উনার পুরো নাম মুবারক: সাইয়্যিদাহ উম্মুল ওয়ারা
বিবি মাহে নূর রহমতুল্লাহি আলাইহা।
সাইয়্যিদা উম্মুল ওয়ারা রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি উনার সম্মানিতা পিতা হযরত সাইয়্যিদ
দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট থেকে শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করেন। উনার সম্মানিত পিতা
সাইয়্যিদ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরবী ও ফার্সী ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ
ছিলেন। তিনি উনার প্রাণপ্রিয় কন্যাকে উনার বিশাল জ্ঞানভা-ার থেকে প্রচুর জ্ঞান দান
করেন। সাইয়্যিদা হযরত উম্মুল ওয়ারা রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ হিফয
করেই ক্ষান্ত হননি। বরং উনার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, তাফসীর-তা’বীলের পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। পবিত্র হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহ শাস্ত্রের
প্রচুর জ্ঞান হাছিল করেছিলেন। তিনি অত্যন্ত পরহেযগার, মুত্তাক্বীয়া ছিলেন। তিনি নামায রোযা ও নফল ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির বেশি বেশি করতেন। জীবনে কখনো কোনোদিন তাহাজ্জুদ
নামায ত্যাগ করেননি। সুবহানাল্লাহ!
তিনি উনার সম্মানিতা আম্মা উনার কাছ থেকে গৃহস্থালীর সকল কাজ-কর্ম, যাওজুল মুকাররাম তথা স্বামীর সেবা, সন্তান পালনের যাবতীয় নিয়ম-কানুন, বিধি-বিধান শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি রান্না-বান্নার কাজে
যেমন ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ-অভিজ্ঞ, তেমনি হস্ত শিল্পে ছিলেন
বিশেষ পারদর্শী। ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতায় তিনি ছিলেন পাহাড়সম। সুবহানাল্লাহ!
যাওজুল মুকাররাম তথা স্বামীর সেবা ছিলো উনার জীবনের উল্লেখযোগ্য বিষয়। যাওজুল মুকাররাম
তথা স্বামীর সন্তুষ্টিকে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক মনে করতেন। তিনি
উনার সম্মান-মুহব্বত দ্বারা স্বামীকে এমনিভাবে জড়িয়ে রেখেছিলেন যে, যাওজুল মুকাররাম কখনো নিঃসঙ্গতা অনুভব করতেন না। সাংসারিক কাজ-কর্ম, সন্তান প্রতিপালনের মধ্যে থেকেও যাওজুল মুকাররাম তথা স্বামীর
সেবার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতেন। তিনি উনার স্বামী সাইয়্যিদ গিয়াসুদ্দীন রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার প্রতি এতো বিনীত-বিনম্র ছিলেন যে, তিনি উনাকে মাঝে মাঝে এতো বিনয়ী হওয়ার জন্য নিষেধ করতেন। সুবহানাল্লাহ!
মায়ের কোলে হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি:
কিতাবে বর্ণিত আছে-
الولى وليا ولو
كان صبيا
অর্থ: “ওলীআল্লাহগণ শিশুকাল থেকেই ওলীআল্লাহ।”
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, আওলাদে রসূল, হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ
চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন সেই খাছ অনুগ্রহ প্রাপ্ত, পূর্ব থেকে মনোনীত মহান ব্যক্তিত্ব। মায়ের কোল থেকে তার বহিঃপ্রকাশ
ঘটেছিল। তিনি উনার আম্মা উনার রেহেম শরীফে যেদিন তাশরীফ আনেন সেদিন থেকেই উনার আম্মার
পবিত্র রহেম শরীফ থেকে “সুবহানাল্লাহ” লফয মুবারকের যিকির হতো।
তিনি যখন যমীনে তাশরীফ নিলেন তখন উনার যিকির পরিবর্তন হয়ে গেলো। তিনি “সুবহানাল্লাহ”
উনার স্থলে ‘নফী ইসবাত’ তথা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” উনার যিকির আরম্ভ করলেন। মনে হচ্ছিল
উনার শরীর মুবারকে জান্নাতী খুশবু মাখানো। উনার শিশুকালের কয়েকটি বিশেষ ঘটনা উনার সম্মানিতা
আম্মা উনার বারবার স্মরণে আসতো।
উনার শরীর মুবারকে খুশবুতে ভরা। উনার “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” যিকির করা। কখনো উনার
মায়ের কোল মুবারকে ইস্তিঞ্জা না করা। এতে উনার সম্মানিতা আম্মাজান উনার পবিত্রতার কোনো
ত্রুটি হতো না। ক্ষুধা পেলে তিনি কখনো চিৎকার করে কাঁদতেন না। উনার বয়স মুবারক যখন
কিছুটা বৃদ্ধি পেল তখন কোনো মহিলা যদি তার শিশু সন্তান নিয়ে উনাদের বাসায় আসতো তখন
তিনি উনার সম্মানিতা আম্মা উনার প্রতি ইশারা করতেন ঐ শিশুকে উনার নিজের ভাগের দুধ হতে
কিছু দান করতে।
ইশারা পাওয়ার পর উনার আম্মা ঐ বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে নিজের দুধ পান করাতেন। আর তখন
শিশু গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক মুখে একটা তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠতো।
(সুবহানাল্লাহ!)
কথিত আছে যে, যেসকল শিশু গরীবে নেওয়াজ
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইশারা মুবারকে উনার মায়ের দুধ মুবারক পান করেছেন উনারা সবাই
পরবর্তীতে ওলীআল্লাগণ উনাদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ।
এক বছর বয়স মুবারকে তিনি হাঁটতে শিখেন। তখন কিছু কিছু কথা বলতে শুরু করেন। উনার
সম্মানিতা আম্মা উনাকে প্রথমে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” শিক্ষা দেন। পরে আল্লাহ
আল্লাহ বলতে শিখান। তারপর এক এক করে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র নিরানব্বই নাম মুবারক
শিক্ষা দেন। বয়স মুবারক কিছুটা বেড়ে গেলে পবিত্র কালাম পাক থেকে কিছু পবিত্র আয়াত শরীফ
ও পবিত্র সূরা শরীফ মুখস্ত করান। এভাবে উনার বয়স মুবারক ২ বছরের কোঠায় চলে গেলো।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, আওলাদে রসূল, হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ
চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স মুবারক যখন দুই বছর পূর্ণ হলো তখন উনার নেওয়াজির
প্রকার পরিবর্তন হতে লাগলো। সেই সময় তিনি সবকথা পরিষ্কারভাবে বলতে পারতেন। জ্ঞান রাখতেন
বড়দের মতো। ঐ সময় তিনি উনার সমবয়সীদের রাস্তা থেকে ডেকে আনতেন এবং সম্মানিতা মাতা উনাকে
বলে তাদেরকে আহার করাতেন।
ঐ সময় উনার শিক্ষার দায়িত্ব ভার উনার সম্মানিত পিতার দিকে স্থানান্তরিত হয়। আমরা
পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, উনার সম্মানিত পিতা আওলাদে
রসূল সাইয়্যিদ মুহম্মদ গিয়াসুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেই সময়ের একজন নেতৃস্থানীয়
আলিম ও জাহিদ ছিলেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অত্যন্ত আদর ও স্নেহের মাধ্যমে গরীবে নেওয়াজ
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মৌখিকভাবে শিক্ষা দিতে থাকেন।
তিনি এক বছর বয়স মুবারক হতেই উনার জায়নামাযে বসে আল্লাহ আল্লাহ যিকির করতেন এবং
সিজদা করতেন। দুই বছর বয়স মুবারকে তিনি উনার সম্মানিতা মাতা উনার সাথে নামায পড়তেন।
উনার সম্মানিতা পিতা উনাকে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র সূরা শরীফ শিক্ষা দিতেন।
পাশাপাশি নামাযের জরুরী বিষয়গুলো শিক্ষা দিতেন।
উনার বয়স মুবারক বাড়ার সাথে তিনি উনার সম্মানিত পিতা উনার কাছ থেকে ইলমে তাছাওউফের
তা’লীমও গ্রহণ করতে থাকেন।
যে বয়সের শিশু-সন্তানরা খেলা-ধুলায় মত্ত থাকে সে বয়স মুবারকে গরীবে নেওয়াজ রহমাতুল্লাহি
আলাইহি তিনি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি ছিলেন ধীরস্থির, অচঞ্চল, গাম্ভীর্যপূর্ণ থাকতেন
যেন একজন পূর্ণ বয়সের লোক। দুই বছর বয়স হতে তিন বছর পর্যন্ত তিনি উনার বাড়ির পাশে পাথরের
উপর বসে কখনো যিকির করতেন। কখনো মুরাকাবা (ধ্যানমগ্ন) থাকতেন। উনার সমবয়সীরা কখনো উনাকে
খেলার সাথী বানাতে পারতো না। তিনি তাদেরকে অতি পরিষ্কার ভাষায় বলে দিতেন- এসব আমার
ভালো লাগে না।
তিনি সকালে ও সন্ধ্যায় স্বীয় সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদ গিয়াস উদ্দীন রহমাতুল্লাহি
আলাইহি উনার নিকট হতে ইলিম হাছিল করতেন। উনার মেধাশক্তি এতোই প্রখর ছিলো যে, কোনো একটি বিষয় একবারের বেশি দুবার পাঠ করতে হতো না। উনার নিকট
কেউ কোনো বিষয় আলাপ করলে তিনি সেটা উনার মধ্যে গেঁথে রাখতেন। এভাবে বয়স মুবারক বাড়ার
সাথে সাথে উনার ইলিম ও হিকমত মুবারকের ভা-ারও বাড়তে থাকে।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, আওলাদে রসূল, হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ
চিশতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স মুবারক যখন চার বছর ৪ মাস ৪ দিন তখন উনার বাসার
নিকটবর্তী একটি মক্তবে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। সেখানে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ এবং
বিভিন্ন মাসয়ালা-মাসায়িল শিক্ষা করেন। ঐ সময় তাতার দস্যূরা সাধারণ মানুষ ও তাদের বাড়ি-ঘরগুলো
ধ্বংসের সাথে সাথে খোরাসানের বড় বড় মাদরাসা,
খানকা শরীফসহ
অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছিলো।
শিশুকালেই তা’লীম-তরবিয়ত দাতার মাক্বামে:
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ হযরত
খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শিশুকালেই তা’লীম তরবিয়ত দানকারীর
মাক্বামে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। অতি অল্প বয়স মুবারকে তিনি সমবয়সীদেরকে তা’লীম তরবিয়ত দিয়েছিলেন।
মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের
গভীর তায়াল্লুক, নিসবত প্রাপ্ত তারই বহিঃপ্রকাশ।
উনার বাড়ির পাশে আঙ্গুর বাগান সংলগ্ন একটা মাঠ ও একটা টিলা বা পাহাড় ছিল। তিনি
দুপুরের পর সেই মাঠটাকে সামনে রেখে একটা পাথরের উপর বসে যিকিরে মশগুল থাকতেন। এ সময়
উনার সমবয়সী ছেলেরা ঐ মাঠে খেলা-ধুলায় মেতে উঠতো। তারা উনাকে বারবার তাদের সাথে খেলাধুলায়
অংশগ্রহণ করার জন্য পীড়াপীড়ি করতো। তিনি তাদেরকে ভদ্র ও অতি কোমল স্বরে বলতেন, “আসলে তোমাদের এসব আমার ভালো লাগে না।” তিনি তাদেরকে আরো বলতেন, আচ্ছা বলতো, তোমরা এ খেলাধুলা থেকে
কি লাভ করে থাক?
তারা বলতো, খেলাধুলার মাধ্যমে শারীরিক ব্যায়াম
হয়। যার ফলে শরীর, মন ভালো থাকে। তিনি তাদেরকে
বললেন, আচ্ছা আমি যদি তোমাদেরকে এমন একটা
শিক্ষা দান করি যার মাধ্যমে তোমাদের দেহ,
মন উভয়ই
সুস্থ ও প্রফুল্ল থাকবে। সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করতে পারবে। তারা
বললো, এমনকি থাকতে পারে যার মাধ্যমে
আপনার কথার সত্যতা যাচাই হবে? তিনি বললেন, তাহলে আসো। একবার পরীক্ষা করে দেখা যাক। তারা রাজি হলো।
তখন সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাদেরকে
একটা ঝর্ণার পাশে নিয়ে গেলেন। অযু করতে বললেন। তারা অযু করার পর তাদেরকে একটি সুন্দর
ফুল বাগানের পাশে নিয়ে গেলেন। সেখানকার পরিবেশ ছিল আরো সুন্দর ও মনোরম। একদিকে পানির
ঝর্ণাধারা অপর দিকে ফুলের বাগান। গোলাপের সুবাসে স্থানটি ছিল মোহিত। তিনি তাঁদেরকে
সেখানে গোল করে বসালেন। নফী-ইছবাতের (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) যিকির শিক্ষা দিয়ে যিকির
শুরু করলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের হালের সৃষ্টি হলো। এভাবে কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত
হলো। পরে তারা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিলে আসলো। হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনাকে জড়িয়ে ধরলেন। জিজ্ঞাসা করলেন,
এ শিক্ষা
আপনি কোথা থেকে শিখেছেন?
তিনি বললেন, আমার সম্মানিত আব্বাজান
উনার কাছ থেকে। হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনাদেরকে জিজ্ঞাসা
করলেন এটা আপনাদের কাছে কেমন লাগলো? উত্তরে উনারা বললেন, অত্যন্ত সুন্দর। বেমেছাল, অতুলনীয়। আপনি যা বলেছিলেন তার চেয়েও অনেক বেশি ইতমিনান (শান্তি) লাভ করেছি। আপনার
যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমরা প্রতিদিন এখানে এসময় একবার মিলিত হতে পারি। হযরত খাজা
হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আমি এই আমল মুবারক অনেক পূর্ব থেকে করে আসছি। আপনারা আমার ছোহবত মুবারকে থাকলে
আমি অত্যন্ত খুশি হবো। পরবর্তীতে সবাই প্রতিনিয়ত উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতেন।
বিশেষ নিয়ামত মুবারক প্রাপ্তি:
১৫ বছর বয়স মুবারকে সম্মানিত পিতা,
আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদ হযরত গিয়াসউদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছাল শরীফ
গ্রহণ করেন। পিতার বিরহ ব্যথায় তিনি তখন জর্জরিত। পৈত্রিক সূত্রে যা পেলেন তা ছিল একটি
ফলের বাগান এবং গম পিষার জন্য একটি যাঁতাকল। অন্যান্য জিনিসপত্র থাকলেও এ দুটি ছিল
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পিতার বিরহে বাগানের দেখা-শুনা ও পরিচর্যার ভার উনার কাছে অর্পিত
হয়। তিনি নিবিড় ও গভীরভাবে সেই বাগানের কাজ দেখা-শুনা করেন। আর যারা বাগানে কাজ-কর্ম
করেন কাজের ফাঁকে তাদেরকে তা’লীম-তরবিয়ত দান করেন। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মা’রিফাত-মুহব্বত
হাছিলের জন্য তারগীব বা উৎসাহ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য যে, ওলীআল্লাহগণ ছোট-বড় প্রত্যেক
কাজই গভীর মনোযোগের সাথে গুরুত্ব সহকারে করেন। আর সাধারণ লোক গুরুত্বহীন ও অমনোযোগের
সাথে করে থাকে। এটাই ওলীআল্লাহ এবং সাধারণ লোকের মাঝে বিশেষ পার্থক্য সূচিত করে।
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রতিনিয়ত
সেই বাগান পরিচর্যায় লিপ্ত। হঠাৎ একদিন হযরত ইবরাহীম কান্দুজী রহমতুল্লাহি আলাইহি নামীয়
একজন মহান ব্যক্তিত্ব সেই বাগানে তাশরীফ নিলেন। সুলত্বানুল হিন্দ, হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দেখে অত্যন্ত তা’যীম-তাকরীম
করতঃ একটি ছায়াদার গাছের নিচে বসতে দিলেন। বাগান থেকে ভালো দেখে কিছু আঙ্গুর ফল, সাথে আরো অনেক ফল-ফলাদি নিয়ে এসে অত্যন্ত খুশি মনে উনার খিদমত
মুবারকে পেশ করলেন। সেই বুযূর্গ ব্যক্তিত্ব তিনি সেগুলো খেলেন। সেখান থেকে কিছু অংশ
চিবিয়ে নরম করে হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুখ মুবারকে দিলেন।
হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত মুহব্বত ও তা’যীম-তাকরীমের
সাথে তা খেলেন।
অপর একটি বর্ণনায় এসেছে, সেই বুযূর্গ ব্যক্তিত্ব
হযরত ইবরাহীম কান্দুজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার থলে থেকে কিছু খাবার বের করে চিবিয়ে
নরম করে সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুখ মুবারকে দিলেন। তিনি অত্যন্ত
মুহব্বত ও আদব-ইহতিরামের সাথে তা খেয়ে ফেললেন। সেই খাবার ভিতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশেষ
হাল ও জজবা পয়দা হলো। উনার অবস্থার পরিবর্তন হলো। উনার সাথে দুনিয়ার সম্পর্ক ছিন্ন
হলো। ফলে আঙ্গুরের বাগান, যাঁতাকলসহ যা কিছু ছিল
তিনি সবগুলি বিক্রি করে নিজের জন্য যৎসামান্য রেখে সমুদয় মূল্য গরীব, দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়ে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক হাছিলের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন।
তারপর সমরখন্দ গিয়ে ইলমে তাফসীর, ইলমে হাদীছ, ইলমে ফিক্বাহ, ইলমে কালাম, ইলমে বালাগাত, ইলমে মানতেকসহ সম্মানিত
ইসলামী শরীয়ত উনার সমস্ত ইলিম শিক্ষা করলেন। মাত্র সাড়ে সাত বছরে যাহিরী সকল ইলম মুবারক
উনার বিশেষ বুৎপত্তি অর্জন করেন। (মাশায়িখে চিশত-১৯৪)
কামিল শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত:
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, আওলাদে রসূল, হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ
চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করতঃ ইলমে তাছাওউফ হাছিলের দিকে
মনোনিবেশ করলেন। তিনি উপলব্ধি করলেন যে,
ইলমে ফিক্বাহ
শিক্ষার সাথে সাথে ইলমে তাছাওউফ হাছিল করতে হবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
العلم علمان علم
فى القلب فذاك العلم النافع وعلم على اللسان فذالك حجة الله عز وجل على ابن ادم
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন, ইলিম দু’ প্রকার ১. ক্বলবী
ইলিম (ইলমে তাছাওউফ) যা উপকারী ইলিম। ২. যবানী ইলিম (ইলমে ফিক্বাহ) যা মহান আল্লাহ
পাক উনার পক্ষ থেকে আদম সন্তানের জন্য দলীলস্বরূপ। (মিশকাত শরীফ)
ক্বলবী ইলিম তথা ইলমে তাছাওউফ যা কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার তত্ত্বাবধান
ব্যতীত, ছোহবত ইখতিয়ার করা ব্যতীত হাছিল
করা যায় না। যা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের সিনা-ব-সিনা হাছিল হয়ে
থাকে। মহান আল্লাহ পাক এজন্যই ওলীআল্লাহগণ উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে বলেছেন।
ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
يا ايها الذين امنوا
اتقوا الله وكونوا مع الصادقين
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। আর ছদিক্বীন তথা ওলীআল্লাহ
উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করো। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)
কাজেই, তিনি কামিল শায়েখ উনার তালাশে
বের হলেন। সে লক্ষ্যে নিশাপুর, খোরাসান হয়ে ইরাকের উদ্দেশ্যে
বের হলেন। পথিমধ্যে নিশাপুরের রাস্তায় ‘হারুন’ নামক একটি গ্রাম ছিল। সেখানে সে যুগের
বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত খাজা উসমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বসবাস করতেন। কুতুবুল
মাশায়িখ হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেখানে গিয়ে উপস্থিত
হলেন।
সুলত্বানুল হিন্দ, হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ
চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইলমুত তাছাওউফ বা মা’রিফাত ও মুহব্বত হাছিলের জন্য একজন
কামিল শায়েখ উনার সন্ধান করতেছিলেন। হযরত খাজা উসমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
সাথে সাক্ষাতৎ মুবারকের পর তিনি বুঝতে পারলেন উনার চেয়ে কামিল বুযুর্গ দ্বিতীয় কেউ
নেই। এমনকি এমন কামিল শায়েখ পাওয়াও অত্যন্ত দুরূহ। সুতরাং তিনি কিছুদিন উনার ছোহবত
মুবারকে থেকে তরীক্বত শিক্ষা করলেন। হযরত খাজা উসমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও
হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাতিনী অবস্থা বুঝতে পেরেছিলেন।
যার জন্য তিনি উনাকে সাথে রাখা জরুরী মনে করলেন। হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ চিশতী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার মুবারক ইচ্ছানুযায়ী হযরত খাজা উসমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বাইয়াত
করালেন এবং নিজের মুরীদের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন।
নিজের বাইয়াতের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে সুলত্বানুল হিন্দ, সাইয়্যিদুনা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এমন ছোহবত মুবারকে যেখানে বড় বড় খ্যাতিমান সম্মানিত মাশায়িখগণ
একত্রিত হতেন, আমিও আদবের সাথে উপস্থিত হলাম।
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাকে দুই রাকায়াত নামায পড়ার আদেশ মুবারক
দান করলেন। আমি সাথে সাথে তা আদায় করলাম। অতঃপর পবিত্র ক্বিবলা উনার দিকে মুখ মুবারক
করে বসার আদেশ মুবারক করলেন। তারপর আদেশ মুবারক করলেন পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ পাঠ
করুন। আমি মুহব্বতের সাথে সম্পূর্ণ সূরা শরীফ পাঠ করলাম। হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা তিনি
উঠে দাঁড়ালেন এবং আমার হাত মুবারক উনার হাত মুবারকের মধ্যে রাখলেন। আকাশের দিকে তাকালেন
এবং বললেন আমি আপনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি। এ অবস্থার পর হযরত
মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিশেষ ধরনের একটি টুপি, যাকে “চাহার কুল্লাহ” বলা হয়ে থাকে। আমার মাথা মুবারকে তা পরিয়ে
দিলেন এবং নিজের কম্বল দ্বারা আমাকে আবৃত করলেন। অতঃপর বললেন, বসুন। সাথে সাথে আমি বসে পড়লাম। পুনরায় বললেন, এক হাজারবার পবিত্র সূরা ইখলাছ শরীফ পাঠ করুন। আমি তা পড়ে শেষ
করলাম। তারপর বললেন, আমাদের মাশায়িখ উনাদের
নিয়মানুসারে এটা এক দিন-এক রাতের মুজাহাদাহ। সুতরাং আপনি সম্পূর্ণ একদিন ও একরাত মুজাহাদা
করুন। এ আদেশ মুবারকের পরিপ্রেক্ষিতে আমি সম্পূর্ণ একদিন ও এক রাত মহান আল্লাহ পাক
উনার ইবাদত অর্থাৎ পবিত্র নামায, যিকির-ফিকির ইত্যাদিতে
কাটালাম।
দ্বিতীয় দিন পুনরায় উপস্থিত হয়ে যথারীতি সম্মান প্রদর্শন করলাম। আদেশ মুবারক হলো, বসুন। আমি বসে পড়লাম। অতঃপর আদেশ মুবারক হলো উপরের দিকে তাকান।
আমি আকাশের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম। আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কি দেখতে পাচ্ছেন। আমি বললাম, পবিত্র আরশে মুয়াল্লা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি। তারপর বলা হলো, নিচের দিকে তাকান। আমি যমীনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম। পুনরায়
সে কথাই জিজ্ঞাসা করা হলো- কি দেখতে পাচ্ছেন?
আমি বললাম, তাহতাছছারা তথা যমীনের সর্বশেষ স্তর। আবার বলা হলো, উপরের দিকে তাকান। আমি উপরের দিকে তাকালাম। বলা হলো, কিত দেখতে পাচ্ছেন?
আমি বললাম, ‘হিজাবে আযমত’ পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি। আদেশ মুবারক হলো চোখ মুবারক
বন্ধ করুন। আমি চোখ মুবারক বন্ধ করলাম। আদেশ মুবারক হলো, চোখ মুবারক খুলুন। আমি চোখ মুবারক খুললাম। তারপর হযরত শায়েখ
ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দুটি আঙ্গুল মুবারক আমার দৃষ্টি মুবারকের সম্মুখে
রাখলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন কি দেখতেছেন?
আমি বললাম, আঠার হাজার মাখলূক্বাত দেখতে পাচ্ছি। যখন আমার মুখ মুবারক হতে
একথা শুনতে পেলেন তখন বললেন, এখন আপনার কাজ সম্পূর্ণ
হয়েছে। তারপর সম্মুখে একটি ইটের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, এটি উঠান। আমি তা উঠালে এটার নিচ থেকে কিছু দিনার বের হলো। তিনি
বললেন, যান এগুলো অন্যান্য দরবেশ উনাদেরকে
দান করুন। আমি আদেশ মুবারক অনুযায়ী কাজ করলাম।
No comments