‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ বলা কি অলি আল্লাহ উনাদের বেলায় নতুন কিছু?
দেওবন্দি ওহাবী ও কতিপয় সুন্নি নামধারী,
বলে থাকে
যে কারো নামের আগে পিছে কেউ ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ লাগালে সে ভন্ড ও নিজেকে নাকি নবী
দাবীকারী হিসেবে সাব্যস্থ হয় নাউযুবিল্লাহ।
এবার তাদের আকাবিরদের থেকেই দলিল দিচ্ছি দেখি কি ফতোয়া মারে তাদের বাপদের বেলায়ঃ
মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গোহী লিখেছে,
“ ‘রাহমাতুল্লিল
আলামিন’ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাস সিফত নয় বরং অন্যান্য আওলিয়া
ও আম্বিয়া, ওলামায়ে কেরাম উনাদের ও জগতের
রহমত স্বরুপ ছিলেন। যদিও হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকলের মধ্যে
শ্রেষ্ঠ। অতএব যদি অপরের প্রতি তাবিল করে বলা হয় তাহলে তা জায়েজ আছে।” (ফতোয়ায়ে রশীদিয়া, খন্ড-২)
এদিকে এই ইবারতটিকে রেযাখানী সম্প্রদায় ও লা মাজহাবী গায়ের মুকাল্লিদ সম্প্রদায়ের
লোকেরা প্রচন্ডভাবে প্রতিবাদ করেছে। বেরেলীদের আবু তাহের আল কাদেরী ‘কে ইমানদার?’ পুস্তকে উক্ত ইবারতটিকে নকল করার পর লিখেছে, “ইহা গাঙ্গোহী সাহেবের চুড়ান্ত বেইমানির পরিচয়।” (পৃষ্ঠা-৩৮)
এবার দেখা যাক রেযাখানী সম্প্রদায় শুধু মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গোহীর মতো সেখ সাদী
রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকেও ‘বেইমান’ বলে ফতোয়া দেয় কিনা। কারণ সেখ সাদী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার বিশ্ববিখ্যাত ফারসী কাব্যগ্রন্থ ‘গুলিস্তা ও বোস্তা’ কিতাবের দ্বিতীয় অধ্যায়ে
‘এহসান’ এর বায়ানে নিজের যুগের বাদশাহর প্রশংসায় লিখেছেন, “আপনি কায়েনাতের উপর আল্লাহর অনুগ্রহের ছায়া। আপনি নবীর গুনে
গুনান্বিত ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’।”
এখানে সেখ সাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যুগের বাদশাহকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’
বলে সম্বোধন করেছেন কিন্তু রেযাখানী বেরেলী সম্প্রদায় ও লা মাজহাবী গায়ের মুকাল্লিদ
(বেদীন) সম্প্রদায়ের লোকেরা উনার প্রতি বেইমানীর ফতোয়া জারি করেনি অথচ রশীদ আহমদ গাঙ্গোহী
বাদশাহের থেকেও বেশী সম্মানীয় আওলিয়া,
আম্বিয়া, ওলামাদেরকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ বলাতে বেইমানীর ফতোয়া জারি
করে দিল।
সুতরাং দেওবন্দী মুলা যারা আজকে রাজারবাগ শরীফের প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ ও আক্রোশ বশত ফতোয়া মারছে তারা নিজেদের গুরুর প্রতি
আর রেযাখানীরা সেখ সাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিরুদ্ধে ফতোয়া মারুক। কিন্তু তারা
তো এই ব্যপারে টুঁ শব্দ পর্যন্ত করতে পারে নি। কেননা সেখ সাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি বেইমান
বলে ফতোয়া জারি করলে জনগনের কাছে জুতোর বাড়ি খেতে হবে। আর সেখ সাদী রহমতুল্লাহি আলাইহির
বিখ্যাত ফারসী কবিতা “বালাগাল উলা বি কামা লিহি, কাসাফাদ্দু জা বি জামালিহি, হাসানাতে জামি ও খিসা
লিহি, ছল্লু আলাইহি ওয়া লিহি।” পড়াটাকেও
বন্ধ করতে হবে। রেযাখানী বেরেলীরা ভেবে দেখুন কি করবেন?
বেরেলীদের নিকট ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ কারা?
বেরেলীরা নিজেদের বিভিন্ন আওলিয়ায়ে কেরামগণকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ বলেছে ভিবিন্ন
যায়গায়। যেমন বেরেলী মৌলবী ইকবাল আহমদ কাদেরী লিখেছে,
শাহ সুলাইমান ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ কুতুবুল ওয়ারা।”
(তুহফাতুল আবরার, পৃষ্ঠা-৩০৬-৩০৭)
এখানে খাজা সুলাইমান তৌনসবী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে বেরেলী মৌলবী ইকবাল আহমদ কাদেরী
‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ বলেছে।
অপরদিকে মৌলবী মুহাম্মাদ আলম মুখতার হক লিখেছে, শাহ গিলানী তেরা হক দর ওজুদ, ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’
আওরদাহ আসত। (তোহফা কাদেরিয়া, পৃষ্ঠা-৪৯)
এখানে শায়খ আব্দুল ক্বাদির জিলানি রহমতুল্লাহি আলাইহিকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’
বলা হয়েছে।
‘আল্লাহ শরীফ’ নামক খানকার মুহম্মদ
হোসেন লিল্লাহীর পুত্র লিখেছে, শাহ সুলাইমান ‘রাহমাতুল্লিল
আলামিন’ অন্য জায়গায় খাজা শাহ সুলাইমান রহমতুল্লাহি আলাইহির শান বর্ননা করতে গিয়ে লিখেছে, ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ কুতুবুল ওয়ারা। (হযরত খাজা মুহম্মদ সুলাইমান
তৌনসবী আওর উনকে খুলাফা, পৃষ্ঠা-১৪৪, তাযকিরা হযরত খাজা সুলাইমান তৌনসবী, পৃষ্ঠা-২১)
অপরদিকে মাসিক ‘জিয়ায়ে হারা’ পত্রিকার সম্পাদক খাজা আবিদ নিজামী ‘রাহতুল কুলুব’
নামক একখানি কিতাব লিখেছে। যার উর্দূ অনুবাদ খাজা হাসান নিজামীর মুরিদ এবং খলিফা মুহম্মদ
আরতাযা উল মা’রুফ মুল্লা ওয়াহাদী (সম্পাদক নিজামুল মাশায়েখ, দিল্লী) সাহেবের নির্দেশে করেছিল। তার মধ্যে আছে, সোহবাতুস স্বালেহীন ও নুর ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ (পৃষ্ঠা-৮১)
অর্থাৎ স্বালেহীনদের সংস্পর্শে যারা থাকে তারা নুর এবং ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’।
বেরেলীদের বিখ্যাত আলেম শামস ব্রেলভী হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আওলিয়া রহমতুল্লাহি
আলাইহিকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ বলেছে । (দেখুন-ফাওয়ায়েদুল ফুয়াদ, পৃষ্ঠা-৫৭)
বেরেলীদের পীর জামাআত আলী শাহ আওলিয়াদের সম্পর্কে লিখেছেন, “এরা মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে মকবুল এবং এরা ‘রাহমাতুল্লিল
আলামিন’।” (সিরাতে আলীরে মিল্লত, পৃষ্ঠা-৬০৯)
বেরেলীদের মৌলবী আশরাফ জালালী তাঁর মাসিক ‘জালালিয়া’ পত্রিকায় খাজা বাকিবিল্লাহর
প্রশংসায় লিখেছে, হাসত জাতে খাজা বাকি
‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ । (জালালিয়া, সংখ্যা-১২, ডিসেম্বর ২০১১,
পৃষ্ঠা-২৬)
এখানে খাজা বাকিবিল্লাহকে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ বলা হয়েছে ।
বেরেলবী মৌলবী গোলাম জাহানিয়া লিখেছেন,
“শায়খুল
মাশায়েখ সুনতানুল আশেকীন ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’। মাহবুবে ইলাহী হযরত খাজা নিজামুল হক
ওয়ালেদীন মুহম্মদ বিন আহমদ বুখারী চিসতী ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’।” (হাফতা আফতাব, পৃষ্ঠা-৭০)
এখানে বেরেলবী মৌলবী খাজা নিজামুল হককে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ বলেছেন ।
সুতরাং এইসব স্থানে বেরেলীরা মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হুজুরে আকরাম ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ছাড়া বিভিন্ন আওলিয়ায়ে কেরামদের ‘রহমাতুল্লিল আলামিন’ বলেছেন
।
এইবার দেওবন্দি ও বেরেলীরা বলুক, উপরিউক্তঁ দেওবন্দি ও
বেরেলী আলেমদের উপর কি ফতোয়া জারি করবে?
যদি তাদের
কলিজায় দম থাকে তাহলে উপরিউক্ত দেওবন্দি ও বেরেলী আলেমদের উপরেও কাফের এর ফতোয়া জারি
করে দেখাও, যে ফতোয়া তোরা রাজারবাগ শরীফের
সাইয়্যীদুনা মামদুহ হযরত মুর্শিদ কিবলা আলাইহিস সালাম উনার উপর মেরেছিস।
No comments