Header Ads

Islamic Quotes Urdu Facebook Cover. QuotesGram

সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক।



পরিচিতি মুবারক:
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আযওয়াজুম মুত্বহহারাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে উলা বা প্রথমা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ও ঐশ্বর্যশালী ব্যক্তিত্বা। জাহিলি যুগে উনার লক্বব মুবারক বা উপাধী ছিল ‘ত্বাহিরা’ (পবিত্রা), কুবরাও উনার একখানা বিশেষ উপাধী এবং এই উপাধীতে তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি কুরাঈশ গোত্রের সম্মানিত শাখা-গোত্র বনু আসাদে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার পিতা উনার নাম হযরত খুওয়ায়লিদ ইবনে আসাদ আলাইহিস সালাম, মাতা উনার নাম হযরত ফাতিমা বিনতে যা’ইদা আলাইহাস সালাম। তিনি উনার সম্মানিত পিতা উনার দিক থেকে ৪র্থ পুরুষে গিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মিলিত হয়েছেন। আবার তিনি উনার সম্মানিতা মাতা উনার দিক থেকে ১০ম পুরুষে গিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মিলিত হয়েছেন। বনু আসাদ গোত্র কুরাঈশের সেই নয়টি বিশিষ্ট গোত্রের অন্যতম ছিল, যাদের মধ্যে দশটি জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় গৌরবজনক দায়িত্ব ছিল। “পরামর্শ” ছিল এই গোত্রের দায়িত্বে, আর এজন্যই “দারুন নাদওয়া”-এর ব্যবস্থাপনা ছিল উনাদের অধীনস্থ। কুরাঈশদের যখন কোন জাতীয় অথবা রাষ্ট্রীয় সমস্যা দেখা দিত এবং তারা ঐক্যবদ্ধভাবে কোন কাজ করতে মনস্থ করত, তখন সুপরামর্শের জন্য এই গোত্রের নিকট আগমন করত।
 সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার পিতা হযরত খুয়ায়লিদ ইবনে আসাদ আলাইহিস সালাম উনার পাঁচ ছেলে-মেয়ে (দুই ছেলে ও তিন মেয়ে) উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান। উনার এক ভাই ‘আওয়াম’ হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিতা ছিলেন। দুই ভাই (হিযাম ও আওয়াম) ও এক বোন (রাকীকা) ইসলামী যুগের পূর্বেই ইনতিকাল করেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার এক বোন, হযরত হালাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করেন। উনার সম্মানিত আওলাদ হযরত যুন নূর (আবুল আ’ছ ইবনুর রবী) আলাইহিস সালাম উনার সাথেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা মেয়ে সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুল উলা আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ সুসম্পন্ন করেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র জুমাদাল উলা শরীফ মাসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সঙ্গত কারণেই এ বরকতময় মাসে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক আলোচনা করা অতীব জরুরী। তাই, ধারাবাহিকভাবে উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক আলোচনা করা হবে। ইনশায়াল্লাহ।

পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
 সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি আমুল ফীল অর্থাৎ আবরাহার হস্তী বাহিনীর বছরের ১৫ বছর পূর্বে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ মাস উনার ১৪ তারিখ ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) বা’দ ফজর পবিত্র মক্কা শরীফে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সেই হিসাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার ১৫ বছর পূর্বে উম্মুল মু’মিনীন আল উলা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

প্রাথমিক জীবন:
 সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার প্রাথমিক জীবন মুবারক সম্পর্কে বিশেষ কিছু উল্লেখ করতে পারেনি। তবে এ বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন যে, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি জাহেলী সমাজে অতি পূতঃপবিত্র স্বভাব বৈশিষ্ট্য মুবারক নিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন।
 সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পিতা হযরত খুওয়াইলিদ বিন আসাদ আলাইহিস সালাম নিজ খান্দান বনু আসাদের একজন সম্মানিত ব্যক্তি এবং নেতা ছিলেন। তিনি জাহেলী যুগে ফিজার যুদ্ধে উনার গোত্রের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং এই যুদ্ধে বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। ফিজার যুদ্ধ সংঘঠিত হয় ‘আমুল ফীল’ বা হাতীর বছরের ১৫ বছর পর (৫৮৫ ঈসায়ী সনে) এবং অতঃপর ৪/৫ বছরে কয়েক বার এই যুদ্ধ চলতে থাকে। পবিত্র হারাম মাসে কুরাইশ ও হাওয়াযিন গোত্রের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘঠিত হয় বলে একে হারবুল ফিজার অর্থাৎ নিষিদ্ধ সময়ের যুদ্ধ বলা হতো। জাহেলী যুগেও পবিত্র হারাম মাস সমূহে (জিলক্বদ শরীফ, জিলহজ্জ শরীফ, মুহররম শরীফ ও রজব শরীফ এই চার মাস) যুদ্ধ বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে। তবে তিনি কাউকে আঘাত করেন নি। তিনি উনার কোন এক চাচাকে তীর কুড়িয়ে দিয়েছিলেন বলে সীরতগ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খেদমতে আসার পূর্বে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার দু’টি নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথম নিসবাতুল আযীম মুবারক হয় বনু তামীম গোত্রের আবু হালাহ ইবনে যুরারার উনার সঙ্গে। আবু হালার দাদা তার গোত্রের মধ্যে একজন সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। উনার ঔরসে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার দুই পুত্র এবং এক মেয়ে বিলাদতি শান মুবারক প্রকাশ করেন।
এক পুত্রের নাম হযরত হিন্দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি প্রথম দিকেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং একজন বদরী ছাহাবী ছিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুলিয়া মুবারকের অধিকাংশ হাদীছ শরীফ তিনিই বর্ণনা করেছেন। তিনি শুদ্ধ ভাষী এবং বিখ্যাত বাগ্নী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে জঙ্গে জামালে যোগদান করে শাহাদতি শান মুবারক প্রকাশ করেন।
দ্বিতীয় পুত্রের নাম হযরত হালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনিও একজন ছাহাবী ছিলেন। তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে অবস্থান করতেন। একটি হাদীছ শরীফে উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম বর্ণনা করেন: একবার সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার হালাহ নামে এক ছেলে আগমন করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন নাওমী শান মুবারকে বা ঘুমন্ত ছিলেন। তিনি জাগ্রত হয়ে উনাকে নিজ নূরুল ইলম বা বক্ষ মুবারকে জড়িয়ে ধরে তিনবার বললেন: হালাহ, হালাহ, হালাহ। সুবহানাল্লাহ! (যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব)।
আর যিনি মেয়ে ছিলেন উনার নাম মুবারক ছিলেন যায়নাব। তিনি শিশুকালেই বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে প্রথম জওজ মুকাররম আবু হালা জাহেলী যুগেই মৃত্যুবরণ করেন।
 সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার দ্বিতীয় নিসবাতুল আযীম মুবারক হয় বনু মাখযুম গোত্রের ‘আতীক বিন ‘আবিদের সঙ্গে। এই জওজ মুকাররমের ঔরসে উম্মুল মু’মিনীন আল উলা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফে এক পুত্র ও এক মেয়ে বিলাদতি শান মুবারক প্রকাশ করেন। যিনি পুত্র ছিলেন, উনার নাম মুবারক ছিলেন আবদুল্লাহ। তিনি শিশুকালেই বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর যিনি মেয়ে ছিলেন উনার নাম মুবারক ছিলেন হযরত হিন্দাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। তিনি ইসলাম গ্রহণ করে ছাহাবিয়া হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন। তিনি ছিলেন তাবেয়ী হযরত মুহম্মদ বিন ছায়ফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিত মাতা। (যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব)

ব্যবসা-বাণিজ্য:
কুরাঈশ গোত্রের মত সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার আয়ের উৎস ছিল ব্যবসা বাণিজ্য। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ব্যবসা বাণিজ্য সম্পর্কে আল্লামা ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন: “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি একজন অত্যন্ত সম্মানিত, সম্পদশালী এবং ব্যবসায়ী ছিলেন। উনার মালের চালান সিরিয়ায় যেত এবং উনার একার ব্যবসায়িক মালামাল সমগ্র কুরাঈশ গোত্রের সম্মিলিত মালামালের সমান হত। ব্যবসায়ের এ বিশালতা থেকে উনার সম্পদের প্রাচূর্য কিরূপ ছিল এ সম্পর্কে ধারণা করা যায়। তিনি বেতনভোগী লোকের দ্বারা ব্যবসা চালাতেন এবং অধিকাংশ সময় উনার গোলাম হযরত মাইসারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার তত্ত্বাবধানে ব্যবসা চলত। মুদারাবা (কমিশন) ভিত্তিতেও তিনি ব্যবসা চালাতেন।”

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে মুদ্বারাবা ব্যবসা:
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন দুনিয়াবী হায়াত মুবারক উনার পঁচিশ বছরে পদার্পন করেন, তখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ব্যবসায়িক পণ্যের সাথে পাঠানোর জন্য বিশ্বস্ত লোকের খোঁজ করছিলেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পিতার ইনতিকালের পরে উনার চাচা আমর বিন আসাদ উনার ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা করতেন। উনার সাথে খাজা আবু তালিব উনার সম্পর্ক ছিল। খাজা আবু তালিব বিষয়টি নিয়ে উনার সাথে আলোচনা করেন।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন আল উলা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খুছুছিয়ত মুবারক সম্পর্কে ইতিপূর্বেই শুনেছিলেন। তিনি উনার নিকট প্রস্তাব পাঠালেন: আপনি ইচ্ছা মুবারক করলে আমার ব্যবসায়ীক পণ্য সিরিয়া নিয়ে অংশীদার ভিত্তিক মুদ্বারাবা ব্যবসা করতে পারেন। আমার গোলাম হযরত মাইসারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আপনার সঙ্গে থাকবে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ প্রস্তাবে রাজী হন। অতঃপর পণ্যদ্রব্য নিয়ে রওয়ানা হলেন। (তাবাক্বাত, সীরতে ইবনে হিশাম)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সিরিয়া পৌঁছে নাস্তুরা নামে এক ঈসায়ী পাদ্রীর গীর্জার নিকটবর্তী একটি গাছের ছায়ায় বসলেন। পাদ্রী হযরত মাইসারার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট এসে জিজ্ঞাসা করলেন: এই গাছের ছায়ায় যে মহান ব্যক্তি বসেছেন তিনি কে? হযরত মাইসারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন: ইনি পবিত্র হারাম শরীফ উনার কুরাইশ খান্দানের সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। তখন পাদ্রী উনাকে বললেন: একজন নবী ব্যতীত অন্য কেউ এই গাছের ছায়ায় বসেননি। পাদ্রী আরো জানতে চান: উনার চোখ মুবারক দু’টি কি লালচে? হযরত মাইয়সারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন: হাঁ। এই লাল আভা কখনও দূর হয় না। তখন পাদ্রী বললেন: ইনি নবী। ইনিই হচ্ছেন আখিরুল আম্বিয়া তথা শেষ নবী। সুবহানাল্লাহ (ইছাবা ৪/২৮১)।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মায়সারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সঙ্গে নিয়ে যে পণ্য সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন তা বিক্রয় করে অন্য পণ্য ক্রয় করে নিলেন। এক বর্ণনামতে এই পণ্য নিয়ে তিনি সিরিয়ার বুছ্রা বাজারে গিয়েছিলেন। (তাবাক্বাত, আল-ইছাবা)
অতপর কাফিলা নিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার পথে রওয়ানা হলেন। পথে হযরত মায়সারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু লক্ষ্য করলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উটের উপর সওয়ার হয়ে চলেছেন, আর দু’জন ফেরেশতা দুপুরের প্রচন্ড রোদে উনার নূরুল হুদা বা মাথা মুবারক উনার উপর ছায়া বিস্তার করে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে ফিরে এসে নতুন যে পণ্য নিয়ে এসেছিলেন তাও বিক্রয় করলেন। এতে প্রচুর লাভ হল। সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম এই উপার্জনে সন্তুষ্ট হয়ে উনাকে মুদারাবা ভিত্তিতে যে মুনাফা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার দ্বিগুণ প্রদান করলেন। (তাবাক্বাত, উসুদুল গাবা)
এই সফরে খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত মায়সারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অন্তরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও প্রগাঢ় ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। তিনি যেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গোলামে পরিণত হন। (তাবাকাত)। সুবহানাল্লাহ!
হযরত মায়সারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অত্যন্ত সততা ও বিশ্বস্ততার সাথে সিরিয়া সফরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাবতীয় কর্মকান্ড, পাদ্রীর মন্তব্য, ফেরেশতাগণ উনাদের ছায়াদান, ব্যবসায় দ্বিগুণ মুনাফা ইত্যাদি বিষয় বিস্তারিতভাবে উনার মনিব সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট পেশ করেন। হযরত মায়সারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এ কথাও বলেন: আমি যখন উনার সাথে খেতে বসতাম, আমাদের পেট ভরে যেত, অথচ অধিকাংশ খাবার রয়ে যেত (আনসাবুল আশরাফ)। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে নিসবাতুল আযীম শরীফ:
 সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন তৎকালীন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার একজন বিচক্ষণ বুদ্ধিমতী এবং পূতঃপবিত্র চরিত্রের দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বা। উনার ধন-সম্পদ, ভদ্রতা ও লৌকিকতায় পবিত্র মক্কা শরীফ উনার সর্বস্তরের মানুষ মুগ্ধ ছিল। বংশগত কৌলিন্যে দিক দিয়ে তিনি ছিলেন কুরাইশদের মধ্যমণি। অনেক অভিজাত কুরাইশ যুবকই উনাকে সহধর্মিনী হিসাবে পাওয়ার প্রত্যাশী ছিল। তাদের অনেকে প্রস্তাবও পাঠিয়েছিল এবং সেজন্য প্রচূর অর্থও ব্যয় করেছিল (আল-ইসাবা, তাবাক্বাত)। তিনি তাদের সকলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। সুবহানাল্লাহ! (সীরতে ইবনে হিশাম)।
 সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি বিশ্বস্ত গোলাম হযরত মায়সারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মুখে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নৈতিক গুণাবলী ও অলৌকিক ঘটনাবলীর কথা শুনে মুগ্ধ হন এবং নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার সিদ্ধান্ত নেন। এটাই মূল কারণ হতে পারে। তবে এর পশ্চাতে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার কতিপয় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাও কাজ করতে পারে। যেমন ঐতিহাসিক ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন: সিরিয়া থেকে ফেরার সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চলতে চলতে এক সময় যখন পবিত্র মক্কা শরীফে প্রবেশ করেন, তখন ছিল দুপুর বেলা। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন আল উলা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তখন ঘরের ছাদে ছিলেন। তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে দেখলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উটের উপর বসে আছেন এবং দু’জন ফেরেশতা উনাকে ছায়া দান করে আছেন। তিনি আশ্চর্যান্বিত হয়ে সঙ্গের অন্যান্য মহিলাদেরকে এ এই অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখান (তাবাকাত)।
তাছাড়া আরো একটি ঘটনার কথা ঐতিহাসিক মাদায়েনী হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সূত্রে বর্ণনা করেন: একবার পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মহিলাগণ কোন এক ঈদ অনুষ্ঠানে একত্র হন। এ সময় একজন অপরিচিত লোক এসে উচ্চস্বরে ঘোষণা করেন: আপনাদের শহরে অচিরেই “আহমদ” নামে একজন নবী আবির্ভূত হবেন। আপনাদের মধ্যে কেউ যদি উনার আহলিয়া হতে সক্ষম হন, তবে হয়ে যাবেন। এ ঘোষণা শুনে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন আল উলা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ব্যতীত সকল মহিলাই সেই লোকটিকে পাথর নিক্ষেপ করে। কিন্তু সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন আল উলা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি লোকটির কথার প্রতি আস্থা স্থাপন করেন, তিনি অন্যান্যদের মত উনার বিরোধিতা করেননি। (শরহে আল্লামা যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব) সুবহানাল্লাহ!
বাণিজ্য হতে প্রত্যাবর্তনের প্রায় তিন মাস পর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন আল উলা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হযরত নাফিসাহ বিনতু মুনিয়াহ নামে উনার এক বান্ধবীর মাধ্যমে নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব পাঠান। উল্লেখযোগ্য যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন আল উলা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পিতার ইনতিকালের পর উনার চাচা আমর ইবনে আসাদ জীবিত ছিলেন। নিদ্ধারিত দিনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচা খাজা আবু তালিব উনার গোত্রের সকল নেতৃবর্গকে সঙ্গে নিয়ে, যাঁদের মধ্যে সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালামও ছিলেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার গৃহে গমন করেন। খাজা আবু তালিব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার খুত্বা পাঠ করেন। সুবহানাল্লাহ!
যখন খাজা আবু তালিব উনার খুতবা শেষ হলো, তখন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার চাচাত ভাই হযরত ওয়ারাকা ইবনে নওফল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খুতবা দেন। সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুল আমালী)।
অতঃপর খাজা আবু তালিব বলেন: হে ওয়ারাকা ইবনে নওফল! আমর ইবনে আসাদ (হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার চাচা) এখানে উপস্থিত আছেন। আমি ভাল মনে করি যে, তিনিও আপনার খুতবায় শরীক হোন। তখন আমর ইবনে আসাদ বলে উঠেন: “আমিও হযরত খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ আলাইহাস সালাম উনাকে হযরত মুহম্মদ ইবনে আবদিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফে সোপর্দ করলাম”। এ কথার উপর উভয় পক্ষ ইজাব কবুল করেন। সুবহানাল্লাহ! (আসাহহুস সিয়ার, আল্লামা আবদুর রউফ দানাপুরী ক্বাদেরী)।
বর্ণিত আছে এই নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠানে তশরীফ আনয়নের সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে উম্মুল মু’মিনীন আল উলা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম এত অর্থ ব্যয় করেছিলেন যে, যেখানে নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয় সেখান থেকে উনার সম্মানিত হুযরা শরীফে তাশরীফ আনয়ন পর্যন্ত প্রতি কদমে একটি সোনার থালা মুবারক বিছিয়ে দিয়েছিলেন, যার উপর কদম মুবারক রেখে পবিত্র হুযরা শরীফে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তশরীফ মুবারক আনয়ন করেন। সুবহানাল্লাহ! যদি ১০০টি সোনার প্লেট বসানো হয়ে থাকে এবং প্রতি প্লেট ৫ থেকে ৭ কেজি ওজন ধরা হয়, তা হলে দেখা যায় ৫০০ থেকে ৭০০ কেজি স্বর্ণ, বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ৩৫০ কোটি থেকে ৪০০ কোটি টাকা। সুবহানাল্লাহ! এ থেকে অনুমান করা যায় যে, উম্মুল মু’মিনীন আল উলা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি কত বেশী সম্পদশালিনী ছিলেন এবং কত বেশী তা’যীম তাকরীমের সাথে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আপ্যায়ন করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক ছিলেন ২৫ বছর এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার দুনিয়াবী বয়স মুবারক হয়েছিলেন ৪০ বছর। এই মহা পবিত্র আযীমুশ শান নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয় ২২শে জুমাদাল উলা শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার)। সুবহানাল্লাহ! ( সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম-১ম খন্ড)

নবুওওয়াত প্রকাশের সূচনায়:
নবুওওয়াত প্রকাশের পূর্বে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হেরা পর্বতের গুহায় খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত বন্দেগী ও মোশাহাদায় নিমগ্ন থাকতেন। সেখানে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খাবার মুবারক নিয়ে যেতেন। সুবহানাল্লাহ! সঙ্গে উনার খাদিমাহ হযরত উম্মে আয়মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনিও থাকতেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম ওহী মুবারক নাযিল হওয়ার পর বিষয়টি আরববাসীদের অবগতির জন্য সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত ওয়ারাকা ইবনে নওফল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট নিয়ে গেলেন। তিনি জাহেলী যুগে ঈসায়ী ধর্ম অনুসরণ করতেন। তিনি অতিশয় বৃদ্ধ ছিলেন, উনার দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়েছিল। তিনি আরবী লিখতে জানতেন এবং ইনজিল কিতাব আরবীতে লিপিবদ্ধ করতেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন: হে চাচাতো ভাই! আপনার ভ্রাতুষ্পুত্র উনার কথা শুনুন। হযরত ওয়ারাকা ইবনে নওফল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন: আপনি কি দেখতে পান ? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা দেখেছিলেন তা সবিস্তারে উনাকে বললেন। হযরত ওয়ারাকা ইবনে নওফল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন: ইনি সেই ফেরেশ্তা, যাঁকে আল্লাহ পাক হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট পাঠিয়েছিলেন। আপনার জাতি যখন আপনার সাথে শত্রুতা করে আপনাকে আপনার শহরে থাকতে বাধা দিবে। আহ্, ততদিন যদি আমি জীবিত থাকতাম, যদি আমার শক্তি থাকত! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রশ্ন করলেন:
أوَ مُخْرِجِىْ هُمْ ؟
অর্থ: তারা কি আমাকে থাকতে বাধা দিবে ?
হযরত ওয়ারাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন:
 نَعَمْ، لَمْ يَأتِ رَجُلٌ قَطٌّ بِمِثْلِ مَا جِئْتَ بِهِ إلَّا عُوْدِىْ، وَ إنْ يُدْرِكْنِىْ يَوْمُكَ أنْصُرُكَ نَصْرًا مُؤَزَّرًا
অর্থ: হাঁ, আপনি যা নিয়ে আগমন করেছেন, দুনিয়াতে যখনই কেউ উহা নিয়ে আগমন করেছেন, তখনই বিশ্ববাসী উনার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি যদি তখন জীবিত থাকি, তবে আপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা করব।
এর অল্প কয়েক দিন পরেই হযরত ওয়ারাকা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ইনতিকাল করেন। এই রিওয়ায়াত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে শ্রবণ করে বর্ণনা করেছেন (বুখারী শরীফ) সুবহানাল্লাহ!

সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ তথা দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণ:
আল্লামা ইবনুল আছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনামতে, সকল মুসলমান এ ব্যাপারে একমত যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন আল উলা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম সর্বপ্রথম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঈমান আনয়ন করেন (সিয়ারু আলামিন নুবালা)। ইসলাম গ্রহণের সময় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক ছিলেন ৫৫ বছর।

দ্বীন ইসলাম উনার জন্য সমুদয় ধন-সম্পদ ওয়াক্ফ:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি উনার সমুদয় ধন-সম্পদ ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য ওয়াক্ফ করে দেন। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে দেন এবং খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক ইবাদতে ও দীন ইসলাম প্রচারে নিমগ্ন হন।

হযরত আল-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম:
হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা অনুযায়ী, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার উছীলায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত তিনজন আবনা বা ছেলে সন্তান আলাইহিমুস সালাম ও চারজন বানাত বা মেয়ে সন্তান আলাইহিন্নাস সালাম পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
একমাত্র সাইয়্যিদুনা হযরত আন নুরুর রবী’ (হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম) ব্যতীত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সব আওলাদ আলাইহিমুস সালামই সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক উছীলায় পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন্নবী, ইবনুল আছীর)।

কাফিরদের অসৎ আচরণে সান্ত¦না মুবারক:
যতই দিন যেতে লাগল, কাফির মুশরিকদের বিরোধিতা বৃদ্ধি পাচ্ছিল এবং সেজন্য সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি চিন্তিত হয়ে পড়ছিলেন। তিনি ধৈর্য সহকারে পরিস্থিতির মুকাবিলা করতেন। আল-ইসতীয়াব কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “কাফিরদের বিরোধিতা ও অসৎ আচরণের জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মনে যে আঘাত পেতেন, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সান্ত¡না বাক্য দ্বারা তা দুরীভূত হতো। সুবহানাল্লাহ!

শি‘বে আবু তালিবে অবরূদ্ধ জীবন:
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হাবশায় হিজরত শুরু করার পর থেকে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি কাফিরদের অসৎ আচরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। নবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের ৭ম বছর মুহররম মাস হতে উনাকে شعب أبى طالب (শি‘বে আবী ত্বালিব) নামক উপত্যকায় অবস্থান মুবারক গ্রহণ করেন। সীরতে ইবনে হিশামে উল্লেখ আছে: কুরাঈশগণ যখন দেখল যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ হাবশায় পূর্ণ নিরাপত্তা লাভ করেছেন এবং সম্রাট নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদেরকে আশ্রয় প্রদান করেছেন এবং সকল গোত্রে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার চর্চা শুরু হয়ে গেছে, তখন তারা পরামর্শ করে বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিব সম্পর্কে এক অঙ্গীকার নামা প্রদান করে যার মৌলিক বিষয়বস্তু ছিল এইরূপ: বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিব যতক্ষণ পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করার জন্য তাদের নিকট সোপর্দ না করবে। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে কেউ আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করবে না, ক্রয় বিক্রয় করবে না, তাদের সাথে মেলামেশা ও কথাবার্তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখবে এবং তাদের নিকট কোন খাদ্য সামগ্রী পৌঁছতে দিবে না। (নাউযুবিল্লাহ) উপায়ান্তর না দেখে বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিব “শি‘বে আবী তালিব” নামক এক পার্বত্য উপত্যকায় অবস্থান গ্রহণ করলেন। এই উপত্যকাটির অবস্থানস্থল হচ্ছে আবু কুবাইশ পাহাড় ও হেরা পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে। ইহা ছিল বনু হাশিম গোত্রের মিরাছী সুত্রে প্রাপ্ত। খাজা আবু তালিব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে ছিলেন। আবু লাহাব তার পরিবারবর্গ নিয়ে পৃথক হয়ে যায় এবং কুরাঈশদের সাথে যোগ দেয়। নূরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালামও এই উপত্যকায় ছিলেন। দীর্ঘ তিন বছর পর্যন্ত উনারা এই উপত্যকায় অবস্থান মুবারক করেন। প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে অতি সন্তর্পনে সেখানে খাদ্য পৌঁছান হতো। কতিপয় হƒদয়বান ব্যক্তি কোন কোন সময় উটে করে খাদ্য সরবরাহ করে যেতেন। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার তিন ভাতিজা হযরত হাকীম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আবুল বুখতারী এবং যুম‘আ ইবনে আসওয়াদ সকলই ছিলেন কুরাইশ নেতৃবর্গের অন্যতম। অমুসলিম হওয়া সত্বেও উনারা বিভিন্ন ভাবে একঘরে করা মুসলমানদের কাছে খাদ্যশস্য পাঠানোর ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
একদিন হযরত হাকীম বিন হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু চাকরের মাথায় কিছু গম উঠিয়ে নিয়ে চলেছেন উনার ফুফু হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার নিকট। পথে নরাধম আবু জেহেলের সাথে দেখা। সে রাগতভাবে বলে উঠল: খাদ্য নিয়ে তুমি বনু হাশিমের কাছে যাচ্ছ? আল্লাহ পাক উনার কসম! এই খাদ্য সহ তুমি সেখানে যেতে পারবে না। যদি যাও, তোমাকে আমি মক্কা শরীফে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করব। এমন সময় আবুল বুখতারী সেখানে উপস্থিত হলো। সে বললো: তোমরা ঝগড়া করছ কেন? আবু জেহেল বলল: সে বনু হাশিমের কাছে খাদ্য নিয়ে যাচ্ছে। আবুল বুখতারী বললো: এ খাদ্য তো তার ফুফুর, হাকীমের কাছে ছিল। ফুফুর সে খাদ্য সে দিতে যাচ্ছে, আর তুমি তাতে বাধা দিচ্ছ কেন? পথ ছেড়ে দাও। কিন্তু আবু জেহেল তার কথায় কান দিল না। তখন দু’জনের মধ্যে মারপিট হলো। এতদসত্বেও হযরত হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খাদ্য পৌঁছাতে সক্ষম হলেন। এভাবে হযরত হাকীম বিন হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মাঝে মাঝে খাদ্য পাঠাতেন (সীরতে ইবনে হিশাম)।
তবে প্রয়োজনের তুলনায় সে খাদ্য খুবই সামান্য ছিল। অনেক সময় খাদ্য না পৌঁছার কারণে উনাদেরকে না খেয়ে থাকতে হতো। খাদ্য পৌঁছতে না দেয়ার কারণে কোন কোন সময় উনাদেরকে গাছের পাতাও খেতে হয়েছিল। এভাবে পঞ্চাশের অধিক ব্যক্তিত্ব অতি দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে সেই পার্বত্য উপত্যকায় সময় অতিবাহিত করতে থাকেন। অবশেষে মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক জাহির হলেন। দুশমনের মধ্যেই তাদের পক্ষ হতেই লিখিত অঙ্গীকার ভঙ্গ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলো। পবিত্র নবুওওয়াত ও রিছালত মুবারক প্রকাশের ১০ম বছরে উনারা শিবে আবী তালেব থেকে বের হয়ে আসেন। সুবহানাল্লাহ!

পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ
শি‘বে আবু তালিব থেকে বের হওয়ার পরপরই খাজা আবু তালিব ও সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনাদের মারিদ্বী শান মুবারক জাহির হন। অবশেষে একই বছরে উনারা উভয়ই বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। এজন্য এ বছরকে عَامُ الْحُزْن (‘আমুল হুযন অর্থাৎ দুঃখের বছর) বলা হয়ে থাকে। প্রথমে খাজা আবু তালিব ২২শে রজব ওফাত প্রাপ্ত হন। অতঃপর উনার ওফাতের পর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র ১৭ই রমাদ্বান শরীফ পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত একটি হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে যখন তিনি মারিদ্বী শান মুবারকে ছিলেন, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জান্নাতের আঙ্গুর দ্বারা আপ্যায়ন করেন। সুবহানাল্লাহ! (শরহে আল্লামা যারক্কানী আলাল মাওয়াহিব)।
শি‘বে আবু তালিব থেকে বের হওয়ার পর পরই (অর্থাৎ নামায ফরয হওয়ার পূর্বে এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে মিরাজ শরীফ সংঘটিত হওয়ার পূর্বে) নবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের ১০ম বছরে ১৭ই পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ, ইয়াওমুস সাবত শরীফ, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তখন উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারক হয়েছিলেন ৬৪ বছর ৬ মাস ৩ দিন।
হযরত উম্মে আইমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও হযরত উম্মুল ফদ্বল রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে গোসল মুবারক প্রদান করেন। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার হাজুন নামক স্থানে যেখানে জাদ্দে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওযা শরীফ উনার সামান্য দূরে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার রওযা শরীফ স্থাপন করা হয়। এই রওযা শরীফ উনার দূরত্ব বায়তুল্লাহ শরীফ থেকে ১ মাইল উত্তর দিকে অবস্থিত। বর্তমানে ইহাকে জান্নাতুল মু‘য়াল্লা (جنة المعلى) বলা হয়। জান্নাতুল মু‘য়াল্লায় উম্মুল মু’মিনীন আল উলা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার রওযা শরীফ উনার স্থান লোক মুখে সনাক্ত করা আছে। তবে কোন নির্দিষ্ট স্থান উনার রওযা শরীফ হিসাবে পৃথক করে রাখা হয় নি (উসুদুল গাবা, ইছাবা)।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশিত হলে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নুরুর রাবিয়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ফরিয়াদ করতে থাকেন। তিনি বার বার বলতে থাকেন أين أمى، أين أمى (আমার আম্মাজান কোথায় গেলেন, আমার আম্মাজান কোথায় গেলেন)। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে সান্ত¡না দেন এবং আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়ার সুসংবাদ দেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: সেদিন উম্মতের উপর এমন দু’টি মুছিবত ( সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম ও খাজা আবু তালিব-উনাদের ওফাত শরীফ) আপতিত হয় যে, আমি বুঝে উঠতে পারছি না যে, আমি কোন্টির উপর বেশী দুঃখ করব। এই দুঃখ ও চিন্তার কারণেই উক্ত বছরের নাম রাখা হয় عام الحزن (‘আমুল হুযন অর্থাৎ দুঃখের বছর)।
পরম শ্রদ্ধেয় চাচা খাজা আবু তালিব এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনাদের বিছালী শান মুবারক প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে কুরাইশ পাষন্ডরা একেবারে বেপরোয়া হয়ে উঠে। তারা অতি নির্দয়ভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রতি অসৎ আচরণ করতে থাকে। (নাউযুবিল্লাহ) এই সময়েই তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ হতে তায়েফ গমন করেন।

একক ভাবে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ফযীলত ও মর্যাদা মুবারক:
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সারা জীবন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার কথা স্মরণ করেছেন। তিনি যখন ছাগল জবাই করতেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার খাদেমাদের নিকট গোশ্ত হাদীয়া পাঠাতেন। উনার সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেছেন-
وَ اللهِ مَا أبدلنى اللهُ خَيْرًا مِنْهَا: آمَنَتْ بِىْ حِيْنَ كَفَرَ النَّاسُ، وَ صَدَقَتْنِىْ إذْ كَذَّبَنِىَ النَّاسُ، وَاسَطْنِىْ بِمَالِهَا إذْ حَرَّمَنِىَ النَّاسُ، وَ رَزَقَنِىَ اللهُ مِنْهَا الْوَلَدُ دُوْنَ غَيْرِهَا مِنَ النِّسَاءِ -
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! মহান আল্লাহ পাক আমাকে যেসব নিয়ামত দান করেছেন, তম্মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বোত্তম। মানুষ যখন কুফরী করেছে, তখন তিনি আমার উপর ঈমান এনেছেন, মানুষ যখন আমার উপর মিথ্যারোপ করেছে, তিনি তখন আমাকে সত্য বলে সাক্ষ্য দান করেছেন, মানুষ যখন আমাকে মাহরুম করতে চেয়েছে, তিনি আমাকে উনার ধন সম্পদ দিয়ে খিদমত করেছেন। আর উনার মাধ্যমেই মহান আল্লাহ পাক আমাকে আওলাদ হাদিয়া মুবারক করেছেন, যা তিনি আমাকে অন্য কারো মাধ্যমে দেননি। (মুসনদে ইমাম আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি)।
মুসলিম শরীফের একটি হাদীছ শরীফে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,
إنى قد رُزقتُ حبها

অর্থাৎ খালিক, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার অন্তরে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল উলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার জন্য মহব্বত মুবারক সৃষ্টি করে দিয়েছেন (মুসলিম শরীফ)।

খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন আল উলা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাকে এমন এক বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন, যা অন্য কাউকে দেন নি। তা হচ্ছে এই যে, তিনিই হচ্ছেন উম্মু আ’লে বায়তিন নাবীয়ে ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ আওলাদে রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রথম মূল। সাইয়্যিদাতু নিসাঈ আহলিল জান্নাহ, হযরত আন নুরুর রাবিয়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনারই সম্মানিত সন্তান, যাঁর নছব শরীফ থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতে রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতে রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মাধ্যমে সম্মানিত আওলাদে রসুলগণ ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারী আছেন এবং থাকবেন এবং দুনিয়াবাসীদের মধ্যে হিদায়েতের নূর দ্বারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম ক্বায়েম রাখবেন। সুবহানাল্লাহ!

(সূত্রসমূহ: উসুদুল গাবা, ইছাবা, তাবাকাত, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ইসলামী বিশŸকোষ, আসহহুস সিয়ার, আল্লামা আবদুর রউফ দানাপুরী কাদেরী, শরহে যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব)

No comments

ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য।

  ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য। ডাল খাওয়ার ফলে কলব প্রসারিত হয় এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়। পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উ...

Powered by Blogger.