পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় দিবস সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী
কুরাইশদের চুক্তি ভঙ্গ ও মক্কা শরীফ বিজয়ের সূচনা:
হুদাইবিয়ার চুক্তিপত্রে যেসব শর্ত লিপিবদ্ধ করা হয়েছিলো, সেসব শর্তাবলী মুসলমানগণ যথাযথভাবে মেনে চলতেছিলেন। হুদায়বিয়ার
শর্তের মধ্যে একটি শর্ত এই ছিলো যে, মুসলমান ও কুরাইশ এই দু’পক্ষের
সাথে আরবের যেকোনো গোত্র বা দল মিত্রতা স্থাপন করতে পারবে। এতে কারও কোনো আপত্তি থাকতে
পারবে না। এ শর্তানুযায়ী বনু বকর কুরাইশের পক্ষ অবলম্বন করলো, আর বনু খুযায়া মুসলমানদের পক্ষ অবলম্বন করলো। এ দুটি গোত্রের
মধ্যে ভীষণ শত্রুতা চলে আসছিলো। তাদের মধ্যে যুদ্ধ বিগ্রহ, মারামারি ও হানাহানি লেগেই থাকতো। তারা একগোত্রের লোক অন্য গোত্রের
লোককে কোনোভাবেই সহ্য করতে পারতো না। কিন্তু তাদের এই পক্ষ অবলম্বন করার কারণে চুক্তি
অনুযায়ী এই শত্রুতা ও বিবাদ কিছুটা স্থগিত হয়ে রইলো। বনু বকর হুদাইবিয়ার এই সন্ধিকে
অপূর্ব সুযোগ মনে করে, বনু খুযায়ার উপর আকস্মাৎ
প্রতিশোধ নেয়ার চিন্তা করলো। নওয়াফেল ইবনে মরিয়া দয়ালি, বনু বকরের একটি দল নিয়ে বনু খুযায়ার উপর রাতের শেষ ভাগে অতর্কিত
আক্রমণ করে বসলো। বনু খুযায়া এসময় ওয়াতীর নামক নীরাশয়ের নিকট নিদ্রায় বিভোর ছিলো। বনু
বকরের এই আক্রমণের পিছনে কুরাইশদের সহযোগিতা ছিলো। কুরাইশরা গোপনে তাদেরকে জিহাদের
সরঞ্জামাদি সরবরাহ করেছিলো। বনু খুযায়া হুদাইবিয়ার সন্ধির ভিত্তিতে নিশ্চিন্তভাবে জীবনযাপন
করতেছিলো। তাদের ধারণা ছিলো যে, তাদের উপর এখন কেউ আক্রমণ
চালাবে না। তাই রাতের বেলা তারা আরামে নিদ্রায় গিয়েছিলো। একারণে বনু খুযায়া-এর লোকেরা
বনু বকরের আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারছিলো না। তারা প্রাণ রক্ষার জন্য পবিত্র মক্কা
শরীফ-এ গিয়ে হারাম শরীফ-এ প্রবেশ করলো। কিন্তু বনু বকর এই হারাম শরীফ উনার প্রতিও সম্মান
প্রদর্শন করলো না। তারা হারাম শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করে হত্যাকা- শুরু করে দিলো।
বাকী লোকেরা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বুদায়েল ইবনে ওরাকার ঘরে আশ্রয় নিলো।
বনু খুযায়ার লোকেরা এই আক্রান্ত হওয়ার সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক নিয়ে তাদের উপর আক্রমণ না করার জন্য
আবেদন করেছিলো। মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমে,
মজলুমদের
এই আবেদন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
নিজ কর্ণে শুনেছিলেন এবং ‘লাব্বাইক’ ‘লাব্বাইক’ বা আমি উপস্থিত, আমি উপস্থিত বলে আওয়াজ দিয়েছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত লোকদের বলেছিলেন যে, কুরাইশরা তাদের চুক্তি ভঙ্গ করেছে। তাদের সাহায্যে বনু বকরেরা
বনু খুযায়ার উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়েছে। এ সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত মায়মুনা আলাইহাস সালাম উনার
গৃহে অবস্থান করছিলেন। এই ঘটনার তিনদিন পর হযরত উমর বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু খুযায়ী মদীনা শরীফ-এ আগমন করে তাদের প্রতি যুলুমের সব ঘটনা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবহিত করেন। এ সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের নিয়ে মসজিদে নববীতে অবস্থান করতেছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মজলুমের এই অভিযোগ শুনলেন এবং এর প্রতিশোধ
নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন।
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুদ্ধের প্রস্তুতি:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে যুদ্ধের
জন্য প্রস্তুত হতে বললেন। তিনি উনার পরিবার পরিজনকেও যুদ্ধের সরঞ্জামাদি প্রস্তুত করার
জন্য নির্দেশ মুবারক দিলেন। কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি উনার উদ্দেশ্য কাউকেই বললেন না। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম
তিনি উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা
আলাইহাস সালাম উনার গৃহে বসে দেখলেন যে,
তিনি যুদ্ধের
সরঞ্জামাদি বের করছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা
করলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি যুদ্ধের সরঞ্জাম প্রস্তুত করার জন্য নির্দেশ
মুবারক দিয়েছেন? উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন,
হ্যাঁ। অতঃপর
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, উনার কোথায় গমনের ইচ্ছা? উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম
তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি
জানি না।
পবিত্র মক্কা শরীফ উনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৮ম হিজরী
সনের ১০ই রমাদ্বানুল মুবারক আসরের নামাযের পর দশ হাজার মুসলমানের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে
পবিত্র মক্কা শরীফ উনার উদ্দেশ্যে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে রওয়ানা দিলেন। পথে আরো দুই
হাজার মুসলমান এই মুসলিম বাহিনীর সাথে একত্রিত হলেন।
‘কাদীদ’ নামক স্থানে পৌঁছার পর
মাগরিবের সময় হলে সকলেই সেখানে বসে ইফতার করলেন। অতঃপর মুসলিম বাহিনী মনজিলের পর মনজিল
অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হতে লাগলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার
পরিবার পরিজনসহ ‘জুহফা’ নামক স্থানে এসে মুসলিম বাহিনীর সাথে একত্রিত হলেন। বদরের জিহাদের
পর তিনি প্রকাশ্যে মুসলমান হন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুমতিক্রমে তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর
তিনি হিজরতের উদ্দেশ্যে মদিনা শরীফ আসতেছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচার সাক্ষাৎ পেয়ে মনের খুশিতে উনার সাথে আলিঙ্গন
করলেন এবং বললেন, “সম্মানিত নুবুওয়ত উনার
ধারাবাহিকতা যেরূপ আমার দ্বারা শেষ, হিজরতের ধারাবাহিকতাও
আমার চাচা সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা শেষ”। অর্থাৎ আমি যেমন
শেষ নবী, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস
সালাম তিনি সেরূপ সর্বশেষ হিজরতকারী।”
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে চললেন, আর উনার পরিবার-পরিজন সকলে পবিত্র মদীনা শরীফ চলে গেলেন। ‘মাররায যাহরান’ নামক
স্থানে পৌঁছে মুসলমানগণ শিবির স্থাপন কলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশে শিবিরের সামনে আগুন জ্বালানো হলো।
পবিত্র মক্কা শরীফ শহরের মুশরিকরা মুসলমানের এই আগমন সম্পর্কে একেবারেই বে-খবর ছিলো।
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফেই প্রতিপালিত হয়েছিলেন।
উনার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সকলেই সেখানে
বসবাস করতেন। এ কারণে উনার মনে আফসোস হলো যে,
এই মুসলিম
বাহিনী যদি পবিত্র মক্কা শরীফ-এ প্রবেশ করেন এবং উনাদের উপর আক্রমণ করে বসেন তবে পবিত্র
মক্কা শরীফ উনার লোকেরা একেবারেই ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি তাদের নিকট এই খবর পৌঁছানো যেতে
পারে যে, তাদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার
পক্ষ থেকে মহা বিপদ আসতেছে। সুতরাং বিপদ আসার পূর্বেই তারা যেনো মহান আল্লাহ পাক উনার
রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হয়ে উনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা
করে এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার জন্য আবেদন করে। হয়তো, দয়ার নবী তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করতে পারেন এবং তারা মহা
বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারে। কুরাইশদের নিকট এই খবর এসেছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি মদীনা শরীফ থেকে রওয়ানা হয়েছেন। কিন্তু তিনি যে ‘মররায যাহরান’ পর্যন্ত
এসে পৌঁছেছেন সে খবর তাদের নিকট পৌঁছেনি। এ কারণে হযরত আবু সুফিয়ান বিন হারব রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু, হাকিম বিন হুযায, বুদাইল বিন ওয়ারাকা,
মুসলিম বাহিনীর
অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়লো। তারা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বাইরে বেরিয়ে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি
দেখে পেরেশান হয়ে পড়লো। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি তো এরূপ প্রজ্জ্বলিত অগ্নি আর কখনো দেখিনি। বুদাইল বিন ওয়ারাকা
বললো, আমার মনে হয় এই দলটি বনু খুযায়ার
দল। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, বনু খুযায়ার দল এতো বড় হতে পারে না। এতোলোক তাদের কোথা থেকে
আসবে। আর তাদের এত বড় সাহসও নেই। এ সময় হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি সেখানে এসে পৌঁছলেন এবং তাদের এই কথোপকথন শুনলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কণ্ঠস্বর চিনতে
পেরে উনাকে ডাক দিলেন। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ডাকে সাড়া
দিলেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, আপনাদের মাথার উপর মহাবিপদ
এসে পড়ছে। কুরাইশদের রক্ষা পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিশাল বাহিনী নিয়ে আগমন করেছেন। আগামীকাল পবিত্র
মক্কা শরীফ উনার ফায়ছালা হয়ে যাবে। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এই
কথা শুনে থর থর করে কেঁপে উঠে বললেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস
আলাইহিস সালাম! আমার মাতা-পিতা আপনার উপর কুরবান হোক, আপনি আমাকে এর থেকে পরিত্রাণের পথ বলে দিন। তিনি বললেন, আমার পিছনে খচ্চরের উপর সওয়ার হউন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হয়ে ক্ষমা চান ও নিরাপত্তা
প্রদানের জন্য আবেদন করুন।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস
সালাম উনার পিছনে খচ্চরের উপর সওয়ার হয়ে বসে পড়লেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস
সালাম তিনি অতি দ্রুত হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নিয়ে মুসলিম
শিবিরের দিকে চলতে লাগলেন। পথে যাঁর সাথেই সাক্ষাৎ হয়, সেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার খচ্চর দেখে চুপ হয়ে যান। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম
তিনি হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখে বললেন, আপনি আমার দুশমন। মহান আল্লাহ পাক উনার শোকর। আজ আপনাকে হত্যা
করার সুযোগ পেয়েছি। এ বলে তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার নিকট অনুমতি চাইতে গেলেন। এর মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস
সালাম তিনি হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নিয়ে অতি দ্রুত আমীরুল
মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা
হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পূর্বেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট উপস্থিত হলেন।
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা
হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক উনার
রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে অনুমতি দিন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার এই দুশমনকে হত্যা করি। সাইয়্যিদুনা
হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি বললেন,
হে মহান
আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি আশ্রয় দিয়েছি। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম
তিনি হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ব্যাপারে অনেক কিছু বলতে শুরু
করলেন। এ সময় সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম
উনাকে বললেন, হে হযরত উমর আলাইহি সালাম! যদি
বনি আদী বিন কাবের কোনো ব্যক্তি হতো, তবে আপনি এভাবে কঠোরতা
দেখাতেন না। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা
হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম আপনি এটা কেমন কথা বলতেছেন? খোদার ক্বসম! আপনার মুসলমান হওয়াটা আমার নিকট আমার পিতা খাত্তাবের
মুসলমান হওয়ার চাইতেও অধিক পছন্দনীয়। কারণ আমি জানি আপনার মুসলমান হওয়ায় নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুবই খুশি ও আনন্দিত। অতঃপর
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা
হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন,
“আপনি একে
এখন নিয়ে যান। তাকে আপনার নিকট রাখুন। সকাল বেলা এখানে নিয়ে আসবেন, তখন একটি ফায়ছালা করা হবে। সুতরাং সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস
সালাম তিনি হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নিয়ে উনার তাঁবুতে চলে
আসলেন এবং পরদিন সকালবেলা উনাকে নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে উপস্থিত হলেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত
আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সম্বোধন করে বললেন, “হে হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! সে সময় কি আপনার
এখনও আসেনি যে, আপনার বিশ্বাস হবে যে, মহান আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই।”
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই কথায় অত্যন্ত অনুতপ্ত হলো এবং বললো, আমার মাতা-পিতা আপনার উপর উৎসর্গিত, আপনি বড়ই ধৈর্যশীল ও দয়াশীল। আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ককে খুবই
অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে যদি অন্য আর কেউ শরীক থাকতো, তবে এই মহাবিপদ থেকে সে আমাদেরকে অবশ্যই রক্ষা করতো।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
বললেন, আপনার কি সময় এখনো আসেনি যে, আপনি বিশ্বাস করবেন যে, “আমি আল্লাহ পাক উনার রসূল”? হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু
তয়ালা আনহু তিনি বললেন, আমার মাতা-পিতা আপনার
উপর উৎসর্গিত, আপনি ধৈর্যশীল দয়াশীল ও আত্মীয়তা
সম্পর্ক রক্ষাকারী। কিন্তু এ ব্যাপারে আমার মনে এখনও সংশয় রয়েছে। এ সময় সাইয়্যিদুনা
হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে
বললেন, হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু! অতি শীঘ্র কালিমা শরীফ পড়–ন আপনার গর্দান উড়িয়ে দেয়ার পূর্বে জলদি মুসলমান
হয়ে যান। সুতরাং হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কলিমা শরীফ পাঠ করলেন
এবং বললেন, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, মহান আল্লাহ পাক ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আর সাক্ষ্য দিচ্ছি, হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ
পাক উনার রসূল।”
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অন্তর এখনো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেনি।
যে লোকটি সারা জীবন কুরাইশদের সর্দারী করে আসছে, সে লোকটি উনার পক্ষে এতো সকালেই সম্ভব নয় যে, তিনি অনুগত হয়ে সাধারণ মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন। এ কারণে সাইয়্যিদুনা
হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার নিকট আরয করলেন, হে আল্লাহ পাক উনার রসূল
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আবু সুফিয়ানকে এমন এক বিশেষ মর্যাদা দিন, যাতে উনার সম্মান বজায় থাকে। সুতরাং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘোষণা করলেন, “আজ যে আবু সুফিয়ানের গৃহে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ” অতঃপর তিনি
আরো ঘোষণা করলেন যে, যেই ব্যক্তি তার নিজ গৃহে
দরজা বন্ধ করে থাকবে, অথবা হেরেম শরীফ-এ প্রবেশ
করবে সেও নিরাপদ।
পবিত্র মক্কা শরীফ-এ প্রবেশ:
মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা দশ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায় অষ্টম হিজরীর দশ তারিখে মুসলমানগণ
পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের উদ্দেশ্যে সফল অভিযানে রওয়ানা হন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
রওয়ানার পূর্বে কুলছুম গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার
দায়িত্বে নিয়োজিত করে যান।’ (ইবনে হিশাম,
মাত্বালিবুল
আলীয়া, মুস্তাদরাকে হাকিম)
অন্য বর্ণনায় আছে, মুসলিম বাহিনী যথাসময়ে
পবিত্র মক্কা শরীফ উনার নিকটবর্তী ‘মাররুজ জহরান’ উপত্যকায় উপস্থিত হয়ে শিবির স্থাপন
করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেনাবাহিনীকে
ভিন্ন ভিন্ন স্থানে বাতি জ্বালাবার নির্দেশ দেন। সমগ্র মরুভূমি তাতে ঝলমল করে উঠলো।
কুরাইশ প্রধানগণ এই দৃশ্য দেখে হাকিম ইবনে হিযাম হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু, হযরত হাকিম ইবনে হিযাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু এবং হযরত বুদাইশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহের
জন্য পাঠায়। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে তাঁবু পাহরারত সৈন্যগণ
দেখে উনাকে বন্দি করেন। ফারূক্বে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম
তিনি হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনো ঈমান আনেননি) উনাকে হত্যা
করতে চাইলেন; কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুমতি দিলেন না। তিনি দীর্ঘ ২১ বছরের
অমানুষিক যুলুম-নির্যাতনের কথা ভুলে গেলেন। তিনি হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনি এখনো কী এক মহান
আল্লাহ পাক উনাকে বিশ্বাস করতে পারেননি?
অবশেষে তিনি
ঈমান এনে মুসলমান হয়ে যান।
মরু উপত্যকা ছুবহে সাদিকের শুভ প্রভাতের সাথে সাথে আযান ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠলো।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ঘুম থেকে উঠলেন এবং ফযরের নামায
জামায়াতে আদায় করলেন। নামাযান্তে রওয়ানার আদেশ হলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
উনাকে মুসলমানদের জনসংখ্যা, শক্তি সামর্থ্য, রণ-সরঞ্জাম ও শৃঙ্খলা ইত্যাদি দেখানোর লক্ষ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত
আব্বাস আলাইহিস সালাম উনাকে নির্দেশ মুবারক দিলেন তিনি যেন হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনাকে নিয়ে ‘মাররুজ জাহরানের’ গিরিপথে দাঁড়িয়ে থাকেন। তিনি তাই করলেন।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সামন দিয়ে রণসাজে সুসজ্জিত কল্পনাতীত
বিশাল মুসলিম বাহিনী সুশৃঙ্খলভাবে কাতারবদ্ধ হয়ে অপরাজেয় মনোবল নিয়ে একের পর এক এগিয়ে
যান। মুসলিম বাহিনীর এরূপ কল্পনাতীত উন্নত অবস্থা দেখে হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি এতে উপলব্ধি করেন যে,
মুসলমানদের
শক্তি আজ চির অপরাজেয়। উনাদের মুকাবিলা করার মতো কুরাইশদের কোনো শক্তি সামর্থ্যই নেই।
একে একে আনছার ও মুহাজির বাহিনী পার হয়ে যান। আর উনাদের নেতৃত্বে ছিলেন স্বয়ং যিনি
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। এ সময় হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ! আজ আপনার ভাতিজা এক বিরাট মুলকের
মালিক। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
আজ মহান
আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে মর্যাদা দান করবেন। আজ পবিত্র কা’বা শরীফ
উনাকে গিলাফ পরানো হবে। মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা, রণশক্তি, রণকৌশল ও নীতি, সৈন্যদের বীরত্ব ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করার পর হযরত আবু সুফিয়ান
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করে উনার সম্প্রদায়কে
(কুরাইশদেরকে) চিৎকার করে সতর্ক করতে থাকেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আজ এমন
এক বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে এসেছেন, যার মুকাবিলা ও প্রতিরোধ
করার ক্ষমতা তোমাদের নেই। এরপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি যে, হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনাকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন,
হে হযরত
আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি গিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ বাসীদেরকে অভয়
দিন আজ তাদের প্রতি কোনোই কঠোরতা হবে না। আমার পক্ষে আপনি নগরময় ঘোষণা করে দিন, “যে ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করবে, সে নিরাপত্তা লাভ করবে, যে ব্যক্তি হযরত আবু সুফিয়ান
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাড়িতে আশ্রয় নিবে সে নিরাপত্তা লাভ করবে; আর যে ব্যক্তি নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে অবস্থান করবে, সেও নিরাপত্তা লাভ করবে এবং যে ব্যক্তি মসজিদে হারাম তথা কা’বা
শরীফ উনার মধ্যে আশ্রয় নিবে সেও নিরাপত্তা লাভ করবে।”
‘মাররুজ জাহরান’ নামক স্থানে নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গোটা বাহিনীর
ব্যূহ রচনা করেন। তিনি অশ্বারোহী দলকে তিন ভাগে ভাগ করেন। ডানে, বামে ও মাঝখানে। এরপর তিনি ডান দিকের দায়িত্ব হযরত খালিদ বিন
ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে,
বাম দিকের
নেতৃত্ব যুবায়ের ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে অর্পণ করেন এবং হযরত
আবু উবায়দা আমের ইবনে জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট পদাতিক বাহিনীর দায়িত্ব
প্রদান করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার বড় পতাকাগুলো ছিলো কালো বর্ণের এবং ছোট পতাকাগুলো ছিলো সাদা। পবিত্র মক্কা শরীফ
উনার উচ্চভূমি দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি মক্কা শরীফ প্রবেশ করেন। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
মক্কা শরীফ উনার নিম্নভূমি দিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করেন। প্রবেশকালে
কুরাইশদের দ্বারা সামান্য বাধাপ্রাপ্ত হলে তাদের সাথে মুসলিম বাহিনীর মুখোমুখী সংষর্ঘ
বেঁধে যায়। বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণনা মতে, এ সময় মুসলমানদের দু’জন অশ্বারোহী সৈন্য শাহাদাতবরণ করেন। সে
সময় মুশরিকদের বারো জন নিহত হয়। এইভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার গায়িবী মদদে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রায় বিনা বাধায় এবং বিনা
রক্তপাতে পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় করেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ শহরবাসীদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। পবিত্র
মক্কা শরীফ উনার লোকজন যখন বায়তুল্লাহ শরীফ উনার পাশে সমবেত হয়ে তাদের সম্পর্কে নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফায়ছালার অপেক্ষা
করছিলো, তখন তিনি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে
বললেন, তোমরা আমার সম্পর্কে কিরূপ ধারণা
পোষণ করো, আমি তোমাদের সাথে কেমন আচরণ করবো? উত্তরে তারা বললো,
‘ভালো।
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ঘোষণা করেন, “আজ তোমাদের প্রতি কোনো অভিযোগ
নেই; যাও তোমরা সবাই মুক্ত স্বাধীন।”
মহাসম্মানিত ১৭ই রমাদ্বান শরীফ পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় সূচিত হয়। সেই সময় পর্যন্ত
পবিত্র কা’বা শরীফ-উনার ভিতরে ৩৬০টি মূর্তি ছিলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন এবং তিনি নিজেও
মূর্তি ভাঙার কাজে শরীক হন ও নি¤েœাক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ
তিলাওয়াত করেন, “সত্য এসেছে এবং মিথ্যা
দূরীভূত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা দূরীভূত হওয়ারই যোগ্য।” (পবিত্র সূরা বনী ইসরাইল শরীফ:
পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১)
পবিত্র কা’বা শরীফ যখন পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করা
হলো- তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ভিতরে প্রবেশ করে নামায আদায় করেন। এরপর তিনি হাজরে আসওয়াদ
চুম্বন করেন এবং ইহরাম বাঁধা ব্যতীত তাকবীর,
তাহলীল, হামদ, যিকর ইত্যাদি পাঠ করার
মাধ্যমে পবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ করেন। অতঃপর তিনি বিভিন্ন স্থানের মূর্তিপূজার কেন্দ্র
ও মন্দিরগুলো ধ্বংস করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। উনার মুবারক নির্দেশ পালিত। পবিত্র
মক্কা শরীফ থেকে প্রতিমা পূজা বিদায় নিলো। এরপর দলে দলে লোক ইসলাম গ্রহণ করতে থাকলো।
অল্প সময়ের মধ্যে সারা আরবময় পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সাড়া পড়ে গেলো। এরপর বিশ্বের
বিভিন্ন দেশে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত নিয়ে দূত প্রেরিত হতে থাকেন।
পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় এক বিরাট বিজয়। এ থেকে আমাদেরকে নছীহত হাছিল করতে হবে।
পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ভিতর ও আশেপাশে যে ৩৬০টি মূর্তি ছিলো তা তখন অপরাসরণ করা হয়
এবং সারা আবর থেকে দূরীভূত করা। কিন্তু অতি আফসুস ও দুঃখের বিষয় এই যে, বর্তমানে এই মূর্তির স্মৃতিচারক সিসিটিভি পবিত্র কা’বা শরীফ
ও পবিত্র রওযা শরীফ উনার ভিতর রয়েছে এবং সারা আরব থেকে শুরু করে সমগ্র পৃথিবী তাতে
ভরে গেছে। নাঊযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদ, সাইয়্যিদুল খুলাফা, সুলত্বানুল নাছির, রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা খলীফাতুল্লাহ
হযরত ইমাম আস সাফফাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উসীলায় পবিত্র কা’বা শরীফ, রওযা শরীফ, মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ
উনাদের হুরমত ফিরিয়ে আনবেন এবং সারা পৃথিবী থেকে সমস্ত হারাম, নাজায়িয ও কুফরী-শিরকীমূলক কার্যকলাপকে মিটিয়ে দিবেন। মুসলমানদের
আবারো ফতেহ পবিত্র মক্কা শরীফ উনার হিসসা নছীব হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে
কবুল করুন। আমীন।
No comments