আহলি বাইত রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনার পবিত্রতম সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
পবিত্রতম বিলাদতী শান মুবারক ও পবিত্র
নাম মুবারক:
সাইয়্যিদুশ শুহাদা ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম তিনি ৩য় হিজরী সনের পবিত্র ১৫ই রমাদ্বান
শরীফ, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার), বাদ-আছর পবিত্রতম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করে সমগ্র কুলকায়িনাতবাসীকে
রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত ও নাজাত মুবারক
দানে ধন্য করেন। সুবহানাল্লাহ! পবিত্রতম বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের পরপরই সম্মানিত
নানাজান নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
এসে উনার সম্মানিত পিতাজান সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম
উনাকে জিজ্ঞেস করেন, পবিত্র আওলাদ আলাইহিস
সালাম উনার নাম মুবারক কি রেখেছেন?
: জ্বি ..... উনার নাম মুবারক ‘হারব’
রাখবো বলে ভেবেছি।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন বলেন, না...উনার নাম মুবারক ‘ইমাম হাসান’ আলাইহিস সালাম। যাঁর অর্থ: ‘উত্তম থেকে উত্তমতম’।
সুবহানাল্লাহ! এর আগে সমগ্র আরবে আর কেউই নিজ সন্তানের জন্যে এ নাম রাখেনি। এ নাম মুবারক
উনার সাথে তাদের পরিচয়ও ছিলো না। সুবহানাল্লাহ!
যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
حضرة
الـحسن عليه السلام وحضرة الـحسين عليه السلام اسـمان من اهل الـجنة
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন
আলাইহিস সালাম উনাদের এই পবিত্রতম নাম মুবারক দুটি পবিত্র জান্নাতী নাম মুবারকসমূহের
অন্তর্ভুক্ত।” সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)
পবিত্র আকীকা মুবারক:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা
হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনার ‘চুল মুবারক’ কাটিয়ে সমপরিমাণ রূপা ছদকা করে দিতে
নির্দেশ মুবারক দেন। আর সপ্তম দিবসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ
ছানী আলাইহিস সালাম উনার আকীকা মুবারক উনার উদ্দেশ্যে মোটাতাজা দুটি ভেড়া জবাই করেন।
ধাত্রী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে ভেড়ার একটি রান দেন। তারপর তিনি উনার মুবারক
হাত দিয়ে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার মাথা মুবারক উনার মধ্যে সুগন্ধি মুবারক
মেখে দেন। সুবহানাল্লাহ!
উনার পবিত্রতম দুধ মা:
পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের পরে হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত
আহলিয়া হযরত উম্মুল ফযল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনিই সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী
আলাইহিস সালাম উনাকে পবিত্রতম দুধ মুবারক পান করান।
তিনি বলেন, একদিন আমি উনাকে নিয়ে এসে নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম কোল মুবারক উনার মধ্যে দেই। কোল মুবারক উনার মধ্যে
দেয়া মাত্রই তিনি ইস্তিঞ্জা মুবারক করে দেন। তখন আমি উনার কাঁধ মুবারক উনার উপর আলতোভাবে
তথা হালকাভাবে আমার হাত মুবারক রাখলাম। এ দেখে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
আমাকে লক্ষ্য করে বলেন, আমার আওলাদ আলাইহিস সালাম
উনাকে আপনি ব্যথা দিলেন! মহান আল্লাহ পাক আপনার উপর ইহসান করুন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত
ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কি পরিমাণ
মুহব্বত মুবারক করতেন তা ভাষায় বর্ণনাতীত।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনার ফাযায়িল-ফযীলত প্রসঙ্গে পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-
عَنِ
حضرة البَرَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَـى عَنْهُ قَالَ رَاَيَتُ النَّبِـىَّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَ حضرة الْـحَسَنُ بْنُ عَلِىٍّ كرم الله وجهه عليهما
السلام عَلٰى عَاتِقِهٖ
يَقُوْلُ اَللّٰهُمَّ اِنِّـىْ اُحِبُّه فَاَحِبَّه.
অর্থ: “হযরত বারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছি যে, তিনি হযরত ইমাম হাসান
ইবনে কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে নিজের কাঁধ মুবারক উনার উপর রেখে
বলছেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আমি উনাকে
মুহব্বত করি, আপনিও উনাকে মুহব্বত করুন।” সুবহানাল্লাহ!
(মুত্তাফাকুন আলাইহি শরীফ)
ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীমাহীন
ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-
عن
حضرة ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم حامل حضرة
الحسن بن حضرة علي عليهما السلام على عاتقه فقال رجل نعم المركب ركبت يا غلام فقال
النبي صلى الله عليه وسلم ونعم الراكب هو.
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ইমামুছ ছানী ইবনে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিমাস সালাম
উনাকে নিজের কাঁধ মুবারক উনার উপর বসিয়ে রেখেছিলেন। তখন এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তিনি বললেন, হে আওলাদ তথা হযরত ইমামুছ
ছানী আলাইহিস সালাম! কত উত্তম বাহন মুবারক উনার মধ্যেই না আপনি আরোহণ করেছেন? তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তিনিও তো অতি উত্তম আরোহী!
সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)
গঠনপ্রকৃতি মুবারক উনার দিক থেকে তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুবহু সাদৃশ্যপূর্ণ।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেন-
عن
حضرة أنس رضى الله تعالى عنه قال لم يكن أحد أشبه بالنبي صلى الله عليه وسلم من
حضرة الحسن عليه السلام بن حضرة علي عليه السلام
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম ইবনে হযরত কাররামাল্লাহু
ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ ছূরত মুবারক অন্য কেউই ছিলেন না।
সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ)
ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সীমাহীন
ফযীলত সম্পর্কে আরো বর্ণিত আছে। হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, যতবার আমি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনাকে
দেখেছি, ততবার আমার দু’চোখ মুবারক দিয়ে
অশ্রু ঝরেছে। কারণ, একদিন প্রিয় নবীজী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফ থেকে বাইরে আসেন। আমি তখন মসজিদে। এসে আমার হাত
মুবারক ধরে আমার শরীর মুবারক-এ ভর দিয়ে চলতে থাকেন। চলতে চলতে আমরা ‘কাইনুকা বাজারে’
এসে পৌঁছি। সেখানে পৌঁছে তিনি ঘুরে ফিরে বাজারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দেখে ফিরে
আসেন। সঙ্গে আমিও ফিরে আসি। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এসে মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিয়ে- আমাকে
উদ্দেশ্য করে বলেন, হে হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু! আমার আওলাদ আলাইহিস সালাম উনাকে নিয়ে আসুন।’
একটু পর হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনাকে এনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোল মুবারকে দেয়া হয়। এ সময় তিনি কোল মুবারকে
বসে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দাড়ি
মুবারক ধরে নাড়তে থাকেন। অতঃপর উনার মুখ মুবারক নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুখ মুবারক উনার সাথে মিলিয়ে দেন। তখন নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, اللهم
انى احبه و احب من يحبه “আয় আল্লাহ পাক! হযরত ইমাম
হাসান আলাইহিস সালাম উনাকে আমি মুহব্বত করি এবং উনাকেও মুহব্বত করি যিনি উনাকে মুহব্বত
করেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম মূল মধ্যমণি হচ্ছেন হযরত
যাহরা আলাইহাস সালাম এবং হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম ও হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস
সালাম উনারাই। উনাদের মাধ্যমেই নবী পরিবার ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবেন:
এ প্রসঙ্গে স্পষ্টভাবে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عن
حضرة عمر بن الخطاب عليه السلام قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول كل
سبب ونسب منقطع يوم القيامة الا سببى ونسبى..... كل ولد اب فان عصبتهم لابيهم
ماخلا ولد حضرة فاطمة عليها السلام فانى انا ابوهم و عصبتهم-
অর্থ: সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি ক্বিয়ামতে আমার বংশ পরম্পরা ব্যতীত অন্য সব বংশ বন্ধ
হয়ে যাবে প্রত্যেক সন্তানের সম্বন্ধ তাদের পিতার সাথে হয়। কিন্তু উম্মু আবীহা হযরত
যাহরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্রতম দু’নূরী আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনাদের পবিত্রতম
পূর্ববংশীয় পিতা আমিই এবং উনাদের পূর্বপুরুষও আমি। (তবারানী শরীফ)
* সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর
আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম ইমামতিতে আমরা পবিত্র ছলাত
আদায় করতেছিলাম তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম তিনি দুনিয়াবী দৃষ্টিকোণ
থেকে অল্প বয়স মুবারকে ছিলেন, এমতাবস্থায় তিনি পবিত্র
মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করতেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যতবার সিজদা মুবারক-এ যেতেন, ততবার তিনি কাঁধ মুবারক-এ এবং পিঠ মুবারক উনার মধ্যে উঠতেন।
এমতাবস্থায় সিজদা মুবারক থেকে উঠার সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে প্রথম নামাতেন, অতঃপর ধীরে ধীরে স্বীয় মাথা মুবারক উঠাতেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনারা বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনার সাথে
এমন মুহব্বত দেখি যা অন্য কারো সঙ্গে এরকম মুহব্বত দেখি না! সুবহানাল্লাহ!
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি দেখেছি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম তিনি
আসেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন
সিজদারত। এসেই তিনি সোজা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার পিঠ মুবারক উনার উপর উঠে বসেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওইভাবেই থাকেন। যতক্ষণ তিনি নিজে পিঠ মুবারক থেকে নেমে না
গেছেন; নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে নামাননি। আবার কখনো দেখেছি রুকু মুবারক
অবস্থায় এসেছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি তখন দু’পা মুবারক ফাঁক করে দিয়েছেন,
তিনি অপর
দিক দিয়ে বেরিয়ে গেছেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের প্রতি খুব
খেয়াল রাখতেন। কখনো কখনো এমনও দেখা গেছে যে,
নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুতবা মুবারক দিচ্ছেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা
হযরত ইমামুছ ছালিছ হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা মানুষের মাঝখান দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে এগিয়ে আসছেন। আসার সময় হোঁচট খাচ্ছেন। নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন খুতবা মুবারক বন্ধ করে
দিয়ে মিম্বার শরীফ থেকে নেমে যেতেন। গিয়ে উনাদের উঠিয়ে নিয়ে এসে একেবারে নিজের সামনে
বসাতেন। সুবহানাল্লাহ!
শুধু তাই নয়; সাইয়্যিদুনা ইমামুছ ছানী
আলাইহিস সালাম উনার আদত মুবারক এতই নরম ছিলেন তা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। একদিনের
ঘটনা- কোনো ব্যক্তি উনার প্রতি খারাপ ব্যবহার করলে তিনি তার প্রতি রূঢ় হতেন না। একদিন
সইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ-এ একটি বাজারের
মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় একজন সিরীয় ব্যক্তি উনার মহান ব্যক্তিত্ব দেখে উনার পরিচয়
জানতে চাইলে লোকেরা বললো, ইনি ইমামুছ ছানী মিন আহলি
বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এতে লোকটি উত্তেজিত হয়ে গেল এবং
উনার কাছে এসে উনাকে গালাগালি করতে লাগলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম
তিনি শান্তভাবে তার গালমন্দ শুনলেন। যখন সে থামলো তখন সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী
আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, তাহলে তুমি আমার সঙ্গে
আসো এবং আমার সঙ্গেই থাকো, এ বলে অনেক উপঢৌকনও হাদিয়া
মুবারক করলেন। সুবহানাল্লাহ! শত্রুদের সাথে কিরূপ আচরণ করা দরকার তা কায়িনাতবাসীর জন্য
ইবরত ও নছীহত মুবারক রেখে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!
জিহাদে নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ:
তিনি ছিলেন সম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম উনার সেই লক্বব মুবারক ‘আসাদুল্লাহিল গালিব’
রঙে রঙ্গীন। তিনি দুনিয়াবী অল্প বয়স মুবারক-এ অনেক জিহাদে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জিহাদের
ক্ষেত্রে উনার সামনে কোনো শত্রু দাঁড়িয়ে স্থির থাকার কোনো সাহসই রাখতো না।
হিজরী ৩০ সনে হযরত সাঈদ ইবনুল আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে তাবারিস্তানে
যে সেনাবাহিনী প্রেরিত হয়, হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস
সালাম তিনিও তাতে অংশ গ্রহণ করেন এবং নেতৃত্ব দেন। সুবহানাল্লাহ!
তিনি জঙ্গে জামালে কূফা থেকে নয় হাজার ছয়শত পঞ্চাশ জন সৈন্য নিয়ে যীকার নামক স্থানে
পৌঁছেন এবং হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাথে যোগ দেন। ৩৭ হিজরীতে
সংঘটিত ছিফ্ফীনের জিহাদেও তিনি অংশ গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
খিলাফত মুবারক পরিচালনা:
যখন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র শাহাদতী শান মুবারক
প্রকাশ করলেন, হিজরী ৪০ সনের পবিত্র রমাদ্বান
শরীফ মাসে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম তিনি খিলাফত মুবারক গ্রহণ করলেন।
৪০ হাজার লোক উনার পবিত্র হাত মুবারকে বাইয়াত হন। তিনি খিলাফত ৬ মাস পর্যন্ত পরিচালনা
করেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন, আমার পরে খিলাফত মুবারক ৩০ বছর।
তন্মধ্যে ২৯ বছর ৬ মাস পূর্ববর্তী খলীফাগণ উনাদের সময়ে অতিবাহিত হয়। বাকি ৬ মাস সাইয়্যিদুনা
হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম তিনি পূর্ণ করেন।
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ বা পবিত্র
শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ:
বর্ণিত আছে, আহলু বাইত শরীফ উনাদের
শত্রু তথা কাফিরেরা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করার জন্য
একে একে ৬ বার মারাত্মক বিষ পান করায়। প্রতিবারই তিনি মারীদ্বী শান মুবারক অবস্থায়
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম
রওযা শরীফ গিয়ে দুয়া করেন এবং সাথে সাথেই তিনি সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু শেষবার যে বিষ
পান করানো হয় তা ছিল অত্যন্ত মারাত্মক বিষ তথা হিরকচূর্ণ। হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস
সালাম উনার আদত মুবারক ছিল এই যে, তিনি প্রতিদিন তাহাজ্জুদ
নামায আদায়ের সময় পানি মুবারক পান করতেন। তিনি যে কলসী মুবারক থেকে পানি মুবারক পান
করতেন সে কলসী মুবারক উনার মুখ একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতেন যেন কেউ কিছু ফেলতে বা বিষ
মিশ্রিত করতে না পারে। কিন্তু শত্রুরা হিরকচূর্ণ বিষ কলসীর মুখে বেঁধে রাখা কাপড়ে মিশিয়ে
দিলো। হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম তিনি প্রতিদিনের ন্যায় পানি পান করার জন্য কলসী
মুবারক থেকে পাত্রে পানি ঢাললেন- তখন হিরকচূর্ণ বিষসহ পানি পাত্রে পড়লো। তিনি তা পান
করার সাথে সাথে মারাত্মক বিষক্রিয়া শুরু হলো এবং তিনি মারাত্মক মারীদী শান প্রকাশ করলেন।
এবার আর উনার পক্ষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার রওযা শরীফ যাওয়া সম্ভব হলো না। হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম তিনি বুঝতে পারলেন
যে, উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের
সময় নিকটবর্তী। তাই তিনি ছোট ভাই হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনাকে সংবাদ দিলেন।
তিনি আসলেন, হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম
তিনি বললেন, হে ভাই! এই খিলাফত মুবারক উনার
জন্য আমাদের পিতাজান আলাইহিস সালাম তিনি শহীদ হয়েছেন। আমিও শহীদ হচ্ছি। কাজেই, এই খিলাফত আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি এই খিলাফত থেকে দূরে
থাকবেন। খিলাফত ফিরিয়ে দেয়ার শর্ত বাতিল করে দেয়া হলো। এ কারণেই হযরত মুআবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে তিনি খিলাফত ফিরিয়ে নেননি।
মূলকথা হলো- উক্ত মারাত্মক বিষক্রিয়ার কারণেই ৪৯ হিজরী সনের পবিত্র ২৮শে ছফর প্রায়
৪৬ বছর বয়স মুবারক-এ তিনি পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন বা পবিত্র বিছালী
শান মুবারক প্রকাশ করেন।
বর্ণিত আছে- হযরত সাঈদ ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, যিনি মদীনা শরীফ উনার গভর্নর ছিলেন, তিনি উনার জানাযায় উপস্থিত হন। হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম
উনাকে নামায পড়ানোর জন্য সম্মুখে ঠেলে দিলেন এবং বললেন, যদি ইহা সুন্নত না হতো তবে আমি আপনাকে জানাযা পড়ানোর জন্য সম্মুখে
ঠেলে দিতাম না। এতদ্ব্যতীত জানাযায় মদীনা শরীফবাসীর অসংখ্য লোক উপস্থিত ছিলেন। হযরত
ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনার রওযা শরীফ পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী শরীফ উনার মধ্যে
অবস্থিত। (উসুদুল গাবা)
No comments