মাইক দিয়ে আযান ও নামাজ পড়া হারাম বলনেওয়ালা ফেত্নাবাজ মুরতাদদের দলিল ভিত্তিক স্বরূপ উন্মোচন
--------------
ইসলামের মূলনীতির আলোকে, ইবাদতে মাইকের ব্যবহারের
বিভ্রান্তি নিরসনে আজকের এই আর্টিকেল টি লিখতে হয়েছে। প্রশ্ন হলোঃ "ইবাদতে মাইকের
ব্যবহার কি বৈধ-হালাল নাকি অবৈধ-হারাম?
চট্রগ্রামের কোন এক এলাকার অখ্যাত এক ভন্ড ইমামের অনুসারীরা শরীয়তের কোনো বিষয়ে
সম্মানিত পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ মুবারক উনাদের পরোয়া না করে নিজেদের বাবা যা বলছে
তা নিজে গিলতেছে এবং মানুষকেও তা গেলাতে চাচ্ছে। তাদের গুরুর থেকে যাই পায় তাই তারা
দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করে। ঐ নতুন ফিরকার নিজস্ব মতবাদ হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার “ইবাদতে মাইক ব্যবহার করা শিরিক, হারাম এবং যারা ব্যবহার করবে তারা সবাই কাফের মুশরিক”। নাউযুবিল্লাহ!!!
তাদের এরূপ ফতোয়া শোনে আমি অনেক বছর আগেই হয়রান হয়েছিলাম, ফেসবুকে উত্তর ও দিয়েছিলাম বিচ্ছিন্নভাবে কিন্তু তারা ফিরে আসেনি।
গত কয়দিন থেকে সেইসব বাতিল ফেরকা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে এবার পার্মানেন্ট একটি উত্তর দেওয়ার
চিন্তা করলাম। ভাবলাম, যে মাইক রাসূল ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগে ছিলনা, যা হারামের সুস্পষ্ট দলিলেও
পাওয়া যায়না, তা ব্যবহার করা কিভাবে হারাম হয়?
তাদের সাথে তর্কের করতে গিয়ে যা বুঝতে পারলাম তা হলো, তাদের নিজেদের মনগড়া বিষয়টি না মানলে খুব সহজে তারা হালালকে
হারাম বানিয়ে দিচ্ছে। খুব সহজেই তারা মুসলিমকে কাফের বানিয়ে দিচ্ছে। তারা ইবাদতে মাইক
ব্যবহার করা হারাম সম্পর্কে অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর মনগড়া ফতওয়া আর বিভ্রান্তিকর বই বের
করেছে আর তা দ্বারা মানুষকে গুমরাহ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যেখানে সম্মানিত পবিত্র আল
কুরআন ও সুন্নাহ মুবারক উনাদের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং তা দিয়ে সেই ভন্ড ও তার অনুসারীরা
তাদের আশেপাশে থাকা মানুষগুলোকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে।
সম্মানিত পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে,
মহান আল্লাহ
পাক যেকোন জিনিষের মানদন্ড তথা হালাল ও হারাম হওয়ার বিষয় মানুষের নয় বরং উনার ও উনার
হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আয়ত্বে রেখেছেন। একেরনে কেউ ইচ্ছে করলেই
কোন জিনিস কে হালাল অথবা হারাম বলতে পারবেনা। বরং কেউ যদি হালাল কে হারাম আর হারাম
কে হালাল বলে দাবী করে তাহলে সে আল্লাহ পাক ও রাসূলূল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাদের চেয়েও নিজেকে বড় বলে দাবী করলো। যার দরূন সে মুরতাদ তথা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে
কাফের হয়ে গেল।
রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ- ‘মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত
কিতাব কালামুল্লাহ শরীফে যা হালাল করেছেন তাই হালাল, যা হারাম করেছেন তাই হারাম, আর যে বিষয়ে তিনি নীরব
থেকেছেন তা ক্ষমা হিসেবে ধরে নেবে। সুতরাং তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত ক্ষমাকে
গ্রহণ কর। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি কখনো বিস্মৃত হন না। অতঃপর তিনি এ আয়াত শরীফ
পাঠ করেন, ‘আপনার প্রতিপালক কখনো বিস্মৃত
হন না’।
√ সূরাহ মারিয়াম ১৯/৬৪। হাকেম, দারাকুৎনী; সিলসিলা আস ছহীহাহ হা/২২৫৬।
রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেনঃ ‘আমি তোমাদেরকে যা কিছু
নিষেধ করি তোমরা সেসব থেকে বিরত থাক। আর যা কিছু আদেশ করি তা যথাসাধ্য পালন কর’।
√ মুসলিম শরীফ, হা/১৩৩৭ ‘ফাযায়েল’ অধ্যায়।
যে নিয়মের ভিত্তিতে হালাল-হারাম নির্ধারণ হয়েছে মহান আল্লাহ পাক তাও আমাদেরকে
জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ ‘তিনি পবিত্র বস্ত্তকে তাদের জন্য হালাল এবং অপবিত্র
বস্ত্তকে হারাম করেন’
√ আল কুরআন, সূরাহ আ‘রাফ শরীফঃ আয়াত
শরীফ ১৫৭।
সুতরাং যা পবিত্র তা হালাল এবং যা অপবিত্র তা হারাম। কোন কিছু হালাল ও হারাম করার
অধিকার একমাত্র মহান আল্লাহ পাক ও রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারাই।
কোন মানুষ নিজের জন্য তা দাবী করলে কিংবা কেউ তা অন্যের জন্য সাব্যস্ত করলে সে হবে
একজন বড় মাপের কাফির ও মুসলিম উম্মাহ বহির্ভূত ব্যক্তি।
যেমন মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ তবে কি তাদের এমন সব উপাস্য রয়েছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের এমন সব বিধান দিয়েছে যার অনুমতি মহান
আল্লাহ পাক দেননি।
√ আল কুরআন, সূরাহ শূরা শরীফঃ আয়াত
শরীফ ২১।
এতএব কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে অত্যন্ত পারদর্শী আলেমগণ ব্যতীত হালাল-হারাম সম্পর্কে
কথা বলারই অধিকার অন্য কারো নেই। যে ব্যক্তি না জেনে হালাল-হারাম সম্পর্কে কথা বলে
আল-কুরআনে তার সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ তোমাদের
জিহ্বা দ্বারা মিথ্যা উচ্চারিত হয় বলে তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি মিথ্যা আরোপের
নিয়তে এরূপ বল না যে, এটা হালাল, ওটা হারাম’
√ আল কুরআন, সূরাহ নাহল শরীফঃ আয়াত
শরীফ ১১৬।
যেসব বস্ত্ত অখন্ডনীয়ভাবে হারাম তা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন
মহান আল্লাহ পাক বলেছেনঃ (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলুন, এসো, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের
উপর যা হারাম করেছেন তা পড়ে শুনাই। তোমরা উনার সাথে কাউকে শরীক করো না, মাতা-পিতার সাথে সদাচরণ করবে আর দরিদ্রতার কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে
হত্যা করো না।
√ আল কুরআন, সূরাহ আন‘আম শরীফঃ আয়াত
শরীফ ১৫১।
অনুরূপভাবে হাদীছ শরীফেও বহু হারাম জিনিসের বিবরণ এসেছে সরাসরি। যেমন- রাসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ পাক তিনি মদ, মৃত প্রাণী, শূকর ও মূর্তি কেনা-বেচা
হারাম করেছেন।
√ আবুদাঊদ শরিফঃ হা/৩৪৮৬।
উপরোক্ত কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফ দ্বারা আমরা যা পেলাম তা হলোঃ
১) হালাল স্পষ্ট।
২) হারাম স্পষ্ট।
৩) যে বিষয়ে হারাম হওয়ার দলিল নাই সেই বিষয়ে আছে ক্ষমা।
এতএব এই যামানায় কোন একটি বিষয়ে যদি মতানৈক্য দেখা যেয় তাহলে দেখতে হবে সেই জিনিস
এর সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার কালামুল্লাহ শরীফ দ্বারা হারাম প্রমাণিত হওয়া জিনিষের, অথবা সরাসরি হাদীস শরীফ দ্বারা হারাম প্রমাণিত হওয়া জিনিষের
সাথে তার সম্পর্ক আছে কি না। যদি না থাকে তাহলে তাকে হারাম বলা যাবেনা। বরং কেউ মনগড়া
হারাম বললেই ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে।
আশাকরি জ্ঞানিমাত্রই বুঝে গেছেন, যে হারাম হালাল কিভাবে
নির্ধারণ করতে হবে। যারা এখনো বুঝেন নাই,
তাদের জন্য
একটি উদাহরণ দেই তাহলে বুঝবেন।
সাবান একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় হালাল জিনিস,
এখন ধরেন
আপনি দোকান থেকে একটি সাবান কিনেছেন, কিন্তু এতে যদি সাবান
কোম্পানি শুকরের চর্বি ব্যবহার করে থাকে,
অথবা মৃত
কোন হারাম প্রাণীর কোন উপাদানকে বানানোর সময় ব্যবহার করে থাকে তাহলে তা ব্যবহার করা
হারাম।
পাঠক লক্ষ্য করুণ, এইখানে মূল বিষয় হলো, হালাল সাবানের মধ্যে থাকা একটি উপাদান কুরআন সুন্নাহ দ্বারা
সরাসরি হারাম হওয়ার কারনে সম্পূর্ণ জিনিস হারাম হয়েছে, অথচ সাবান হারাম এর কথা কিন্তু কুরআন হাদিসে কোথাও বলা হয়নি।
অর্থাৎ যে জিনিষের ব্যপারে কুরআন শরীফ বা হাদীস শরীফে হারাম বলা হয়নি তা কেবল তখনই
হারাম হবে যখন এর মধ্যে হারামের উপাদান উপস্থিত থাকবে।
সম্মানিত নামাজ হলো ফরজ ইবাদতের মধ্যে সবার উপরে। নামাজ সম্পাদন হয় দুইটি জিনিষের
মাধ্যমেঃ
১. ক) নিজের নামাজ নিজে আদায় করতে হয় আপন শরীর দ্বারা যাকে ইবাদত বলা হয়।
২. খ) এই ইবাদত আদায়ের জন্য যেসব জিনিস লাগে তাকে বলা হয় উপকরন।
এবার আসুন জেনে নিই ইবাদত ও উপকরণের মধ্যে পার্থক্যঃ
ক) ইবাদতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার তরীকা মতে যে কাজ সম্পাদন করা হয় তাই ইবাদত।
খ) উপকরণঃ ইবাদত সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য যা কিছু ব্যবহার করা হয়
তাই ইবাদতের উপকরণ।
- ইবাদত উপকরণ নির্ভর নয় কিন্তু
উপকরণ ইবাদত নির্ভর।
- ইবাদত ইচ্ছাকৃত ভাবে পরিবর্তন
বা বাদ-দেয়া যায়না কিন্তু উপকরণ ইচ্ছাকৃত ভাবে কিংবা অপ্রয়োজনেও বাদ-দেয়া যায়। তাতে
ইবাদতের সওয়াব কমবেশি হয়না।
- ইবাদত কখনো পরিবর্তন বা ভিন্ন
হয়না কিন্তু উপকরণ স্থান, কাল ও পাত্র অনুসারে ভিন্ন
হতে পারে।
- ইবাদত হলোঃ নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত, আজান, কুরআন সুন্নাহর থেকে দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করা, দ্বীন প্রচার করা ইত্যাদি যা নির্ধারিত নিয়মে করতে হয় কিন্তু
উপকরণ তথা মসজিদ, মাদ্রাসা, মাইক, যানবাহন, পোশাক ইত্যাদি বদল করা যায়।
এবার আসি মাইক হারাম হওয়ার কথিত দাবীদারদের প্রসঙ্গে। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার
শরিয়ত উনার মূলনীতি হলো, প্রত্যেক বস্তুই যায়েজ
তথা হালাল যতক্ষন না সেই জিনিষের ব্যপারে কুরআন সুন্নাহ থেকে সরাসরি হারাম হওয়ার দলিল
পাওয়া যাবে অথবা সেই জিনিষের মধ্যে এমন কোন জিনিষের উপস্থিতি থাকবে যেটার নিসবত সরাসরি
নিষিদ্ধ বলা হারামের সাথে।
তাদের দাবী হলোঃ “ইবাদতে মাইক ব্যবহার করলে তা ইবাদাতের পরিবর্তন ঘটায় কারণ নবীজী
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইবাদতে মাইক ব্যবহার করেন নাই” এই উদ্ভট দাবীর
কি কোন যৌত্তিকতা আছে? না নাই, বরং একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবো উক্ত কথাটি কতটুকু অযৌক্তিক
ও বিভ্রান্তিকর। যেমনঃ আমাদের নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তপ্ত গরমে খুবই
কষ্ট করে নামাজ আদায় করতেন। আর আমরা কত আরাম আয়েশের মধ্যে নামাজ আদায় করি, তাদের দাবী অনুসারে ইহা কি ইবাদতের পরিবর্তন নয়? নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো দ্বিতল মসজিদ বানিয়ে
নামায আদায় করেন নি। আর আমরা ৪/৫ তালা বানিয়ে ইমামের উপরে বসে নামায আদায় করি। তাদের
দাবী অনুসারে ইহা কি ইবাদতের পরিবর্তন নয়?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলো অযৌক্তিক মনে হলেও এগুলোর যৌত্তিকতা রয়েছে যদি কেউ বিশ্বাস
করে, ইবাদতে মাইক ব্যবহার করলে তা ইবাদতের
পরিবর্তন ঘটায়।
আসলে এই ধরনের বাহ্যিক পরিবর্তনকে ইবাদতের পরিবর্তন বুঝায়না। বরং ইবাদতের মধ্যে
এমন কিছু সংযোজন ও বিয়োজন করাকে ইবাদতের পরিবর্তন ঘটায় বুঝায়, যা অপ্রয়োজনীয়,
যা সওয়াবের
আশায় করা হয় এবং যা সুন্নতের পরিপন্থী।
যেমনঃ ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ এক রাকাত বা চার রাকাত পড়লে অর্থাৎ কম বেশি করলে
তা ইবাদতের পরিবর্তন বলে গণ্য হবে। কারণ এখানে সংযোজন বিয়োজন অপ্রয়োজনীয়। এখানে সওয়াবের
আশা করা হবে এবং সুন্নতের পরিবর্তনও ঘটবে। যেহেতু ফজরের ফরজ নামাজ দুই রাকাত আদায় করা
সুন্নত। এবার চিন্তা করলেই বুঝা যায় যে,
ফজরের ফরজ
নামাজ এক রাকাত বা চার রাকাত আদায় করলে ইবাদতের যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় তা ইবাদতে
মাইক ব্যবহারের কারণে লক্ষ্য করা যায়না। কারণ মাইকের কারনে সূরাহ কেরাত বেশিও হচ্ছেনা
আর নিজে না পড়লেও মাইক তা নিজ থেকে পাঠ করছেন। তাই বলা যায়, ইবাদতে মাইক ব্যবহার করলে ইবাদতের পরিবর্তন ঘটে এমন ধারণা বা
বিশ্বাস অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন এবং ভ্রান্ত আক্বিদাহ। তাছাড়া ইবাদতে মাইক ব্যবহার করা
হয় কেবল মাত্র ইবাদতের উপকরণ (Comforts)
হিসেবে, ইবাদতের অংশ (Parts)
হিসেবে নয়।
যদি মাইক সওয়াবের উদ্দেশ্যে ইবাদতের অংশ (Parts)
হিসেবে ব্যবহার
করা হত, তবে অবশ্যই ইবাদতের পরিবর্তন ঘটেছে
বলে গণ্য হত। এখন আপনার মনে ছোট একটি প্রশ্ন রয়ে যেতে পারে। তা হচ্ছে, ইবাদতের উপকরণ (Comforts)
জিনিসটা
কি? উত্তর হলো, ইবাদত করার সময় তাতে ঐ জিনিসের ব্যবহার করা, যা ব্যবহারের মধ্যে সওয়াবের আশা করা হয়না, যা অপ্রয়োজনীয় নয় বরং শুধু মাত্র ইবাদত করার সুবিধার্থে হিকমা
(Strategy) স্বরূপ ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তা ইবাদতের উপকরণ। যেমন, কেউ যদি সুগন্ধ পেলে সে মানসিকভাবে সেটিস্ফাইড থাকে, একাগ্রচিত্তে ইবাদত করতে পারে তাহলে সে যদি তার পাশে কিছু বেলি
ফুল বা গোলাপ ছড়িয়ে দেয় তাহলে সেটা ইবাদতের উপকরণ (Comforts)। যদি
গরমকালে ও শীতকালে মসজিদে প্রশান্তির সহিত নামাজ পড়ার জন্য ফ্যান, এয়ার কুলার, এসি ব্যবহার করে তাহলে
সেটা ইবাদতের উপকরণ (Comforts)। এছাড়াও দ্বীনের প্রচার করাও একটি
ইবাদত। তাই কেউ যদি তা পত্রিকা, ফেসবুক, টুইটার, অডিও, কিংবা কিতাবাদি ইত্যাদির সাহায্যে প্রচার করে, তবে এসব হবে উক্ত ইবাদতের উপকরণ (Comforts)। এভাবে, মসজিদ, মিনার, মাইক, ফ্যান, এসি ইত্যাদি সবই ইবাদতের
উপকরণ। অতএব, উপরের আলোচনা থেকে একথা বুঝতে
পারলাম যে, ইবাদতে মাইক ব্যবহার করলে তাতে
ইবাদতের কোনো পরিবর্তন ঘটেনা বরং মাইক ইবাদতের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হয়। যার কাজ হলো
আওয়াজকে বুলন্দ করা। যেরূপ নামাজ চলাকালীন বিদ্যুৎ চলে গেলে এসি ফ্যান বন্ধ হয়ে গেলে
নামাজে কোন সমস্যা হয়না, অনুরূপ মাইক ও বন্ধ হয়ে
গেলে নামাযের কোন সমস্যা হয়না কারণ নামাজ ব্যক্তি পড়ায় বা পড়েন মাইক নয়।
তাদের দাবী "মসজিদের ভিতর আযান দেয়া মাকরূহ" (ফাতহুল মুবীন, পৃষ্ঠা নং - ১)। যেসব লোকেরা ইবাদতে মাইক ব্যবহারকে হারাম মনে
করে, তার এটাও একটি কারণ যে, তারা বিশ্বাস করে মসজিদের ভিতর আযান দেয়াটা মাকরূহ। কারণ নবীজি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদের ভিতর কখনো আযান দেননি। উনার সাহাবীগণ
ও দেননি। তাই তারা মসজিদের ভিতর আযান দেয়াকে মাকরূহ মনে করে। এখানে তাদের দলিল পবিত্র
আল কুরাআন ও হাদীস শরীফের দ্বারা প্রমাণিত কোন সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা নয়। বরং একটি খোড়া
যুক্তি ও কিছু বিশেষজ্ঞদের মতামত। তাই আমি এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
এ কথা সত্য যে, নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ও উনার পরবর্তী সময়ে কোনো আলেম মসজিদের ভিতর আযান দেয়নি। তার কারণ, আযান দেয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য মুসল্লীদের নামাজের জন্য আহ্বান
করা। কিন্তু এই আযান মসজিদের ভিতর দিলে অনেক মানুষই আযান শোনতে পারবেনা। তাই মসজিদের
বাইরে আযান দেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ শর্ত আযানের। ইহা বাদ দিলে আযানের উদ্দেশ্যেই
ব্যর্থ হয়ে যাবে। অর্থাৎ মসজিদের ভেতরে দেওয়া হয়নি যেন দূর দুরান্তের মানুষ আযান শুনতে
পারে ও নামাজে এসে শরীক হয়। সুতরাং এ অবস্থায় মসজিদের ভিতর আযান দিলে তা আদৌ গ্রহণযোগ্য
হবেনা। তাছাড়া সুন্নাহ থেকে আযানের নুন্যতম যে শর্তাবলী পাওয়া যায়, তার একটিও বাদ পড়লে আযানের হক আদায় হবেনা।
শর্তগুলো হলোঃ
১) রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শিখানো কালিমা গুলো বলতে হবে।
২। পুরুষ মানুষের কন্ঠে হতে হবে।
৩। মুসল্লীদের আযান শোনানোর যথাযথ চেষ্টা করতে হবে।
৪। আযান দেয়ার সময় ক্বিবলা মূখি হয়ে দাড়াতে হবে।
অথচ যেহেতু, মাইকের মাধ্যমে আযান দিলে
উপরোক্ত শর্তাবলীর একটিও বাদ পড়েনা উপরন্তু আযানের মূল উদ্যশ্যকে আরো ব্যপকভাবে বিস্তৃত
করে, তাই মাইক দিয়ে আযান দিলে মাকরূহ
হবে, এমন ধারণা অবান্তর ও ভিত্তিহীন
বরং কুফুরি কথা এটা। এরপরও কেউ যদি এই ধরনের প্রশ্ন তুলে, হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আযান মসজিদের ভিতরে
দিয়েছেন নাকি বাইরে দিয়েছেন, উচুতে দাড়িয়ে দিয়েছেন
নাকি নিচুতে দাড়িয়ে দিয়েছেন, পাচ ফুট উপরে দাড়িয়ে দিয়েছেন
নাকি দশ ফুট উপরে দাড়িয়ে দিয়েছেন, ইটের উপর দাড়িয়ে দিয়েছেন
নাকি পাথরের উপর দাড়িয়ে দিয়েছেন। ইত্যাদি প্রশ্ন তুলে ফিতনা সৃষ্টি করে, তবে এমন লোকদের শয়তান বলা ছাড়া আর কোনো ফতোয়া আমার জানা নেই।
আযানঃ মুয়াজ্জিন কর্তৃক ইবাদতের উদ্দেশ্য প্রতিদিনের নির্ধারিত নামাযের সময় ৫
বার আহ্বান করাকে আযান বলা হয়, আযান শব্দের মূল অর্থ
হলো শোন বা কাউকে অবগত করানো আর সেই অবগত করানোটা যত সুন্দর বা যত উচ্চ স্বরে মানুষের
কাছে মহান আল্লাহ পাক উনার বাণী পৌছানো যায় ততই উত্তম কারণ রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উচ্চস্বরে আযান দেওয়ার জন্য নিজেই তাগিদ দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে
মানূষ আজ যন্ত্রের মাধ্যমে দূর দূরান্ত থেকে আযানের ধ্বনি পৌছে দিচ্ছে এতে হালাল হারামের
কি বিষয় সেটাই আমার মাথায় ঢুকছেনা। যাই হোক,
আমি এবার
কিছু ফতোয়ার দলিল ও সহিহ হাদীস শরীফ পেশ করবঃ
ফতোয়ায়ে আলমগীরী ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১ম খন্ড ১৫১ পৃষ্টা- সেখানে বলা আছে যদি কোন
ব্যক্তি কোন বাগান বা ক্ষেতে থাকে আর সে যদি কোন শহর বা গ্রামের নিকট থাকে তাহলে
তার জন্য সেই শহর বা গ্রামের আযান যতেষ্ট। পাঠকগণ খুব মনোযোগ সহকারে খেয়াল করুন শহর
থেকে একটি বাগান বা ক্ষেত কতটুকু দুরত্ব হতে পারে মিনিমাম ১ থেকে ২ কিলোমিটার হবে
নিশ্চয়ই। এতএব এখান থেকেই বুঝা যায় আযানের ধ্বনিকে মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য কোন
মাধ্যম ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে নতুবা শহর বা গ্রাম এর দুরত্বটা আসতো না। এছাড়াও
যদি মানুষ টয়লেটে তাকলে আযান শুনবে বা সহবাসে থাকলে আযান শুনবে এরূপ খোড়া যুক্তি কে
ধরা হতো তাহলে উপরোক্ত ফতওয়া প্রদান করা হতো না।
দিত্বীয়তঃ ১৫০ পৃষ্টার ১০ নং মাসালায় বলা হয়েছে, কোন মুসল্লি যদি মসজিদে এসে আস্তে আযান দেয় আর সেই আযান যদি অন্য কেউ শুনতে না
পায় তাহলে পুনরায় অন্য মুসল্লি এসে জোরে বা উচ্চস্বরে আযান দিবে। দেখুন পাঠকগণ এখানেও
আযানকে উচ্চস্বরে দেওয়ার ঘোষনা আসল।
তৃতীয়তঃ ১৫৪ পৃষ্টায় বলা হয়েছে উচু যায়গায় দাড়িয়ে উচ্চস্বরে আযান দেওয়া সুন্নত
তবেই প্রতিবেশীরা ভালভাবে শূনতে পারবে। দেখেন এখানেও আযানকে উচ্চ স্বরে দেওয়ার এবং
প্রতিবেশীগণ যেন ভালভাবে শুনতে পায় সেই ব্যবস্তা করতে হবে। সূতরাং এখান থেকে এটা প্রতীয়মান
হয় যে মাইক দিয়ে আযান দিলে সেটা প্রতিবেশীরা যেমন শুনতে পাবে তেমনি মহান আল্লাহ পাক
উনার বাণী সকল মানুষের কাছে পৌছে যাবে।
এবার আসূণ হাদীস শরীফ থেকে কিছু দলিল নিয়ে আলোচনা করি। তিরমিযী শরীফের হাদীস শরীফে
আযান অধ্যায়ে বলা হাদীস শরীফটি নিম্নরুপঃ সাইদ ইবনে ইয়াহিয়া ইবন সাইদ আল-উমাবী (রহমতুল্লাহি
আলাইহি) আবদুল্লাহ ইবন যায়দ (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত যে, সকাল হলে আমি রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে
আসলাম এবং উনাকে আমার স্বপ্নের কথা বললাম। তিনি বললেন এটি নিশ্চয় সত্য স্বপ্ন। আপনি
হযরত বিলাল (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) সঙ্গে দাড়ান উনার আওয়াজ আপনার চেয়ে উচ্চ এবং
দীর্ঘ। আপনাকে স্বপ্নে যা বলে দেয়া হয়েছে উনাকে তা বলে দিন, তিনি সেইভাবে ডাক দিবেন। পাঠকগণ এখানে খেয়াল করুন আযান দেওয়া
নিয়ে এক সাহাবী সপ্নে যা দেখেলেন বিল্লাল (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)ও তা দেখলেন আর
সেই সাহাবী রাসূল রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে স্বপ্নে আযান দেওয়ার
কথাটি খূলে বললে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বললেন আপনার থেকে হযরত বিলাল (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)-এর স্বর অনেক
উচ্চ এবং দীর্ঘ। দেখেন রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই হাদীস শরীফে উচ্চ কন্ঠে
আযান দেওয়া সাহাবী (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু)-কে নিয়োগ করলেন আর সেই সাহাবী (রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু)-কে করলেন না। এখান থেকে কি প্রমান হয় না যে আযানের জন্য উচ্চকন্ঠ বা উচু
আওয়াজের মাধ্যম ব্যবহার করা যায়েয? কারন এখানে দুই সাহাবীর
মধ্যেই তো ব্যাপারটি পরিষ্কার হলো যার আওয়াজ যত উচু তাকেই নিয়োগ করলেন আর যার আওয়াজ
নিচু তাকে নিয়োগ করলেন না। কত সুন্দর ফায়সালা আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার।
রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন মুয়াযিনের আযানের আওয়াজ যত দুরত্বে
যাবে ঠিক ততটুকু দুরত্ব অনযায়ী তার গুনাহ মাফ করা হবে সুবাহানাল্লাহ!!!
√ সূনানে নাসাই শরীফঃ হাদীস শরীফ নং ৬৪৬ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
দেখেন পাঠকগণ এখানে আযানের ধ্বনিকে দুরত্বের সাথে তুলনা করা হয়েছে আর বর্তমান যমানায়
মাইকবিহীন আপনি কত দুরত্বে পার করবেন?
আপনারাই
বলেন?
এছাড়াও রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যখন আযান দিবে, উচ্চস্বরে আযান দিবে কারণ জ্বিন মানূস ফেরেশতা পাথর নদী নালা
গাছপালা যে কোন বস্তু আযানের ধ্বনি শুনবে কিয়ামতের দিন তারা মুয়াজ্জিনের জন্য সাক্ষ্য
প্রদান করবে সুবাহানাল্লাহ!!!
মুসনাদে আহমদ শরীফঃ হাদীস শরীফ নং ৩৩৮ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) পাঠকগণ এখানে দেখেন
আযানের ধ্বনি যতদুর যাবে আর সেখানকান বস্তুরা সেই ধ্বনি যদি শুনতে পারে তবে তারা সাক্ষ্য
প্রদান করবে তো এখন আপনারাই বলেন মাইকবিহীন আওয়াজ কত দুর যেতে পারে। এ রকম অনেক অসংখ্য
হাদীস শরীফ আছে যা আমি আল্লাহ পাক উনার নগন্য বান্দা লিখে শেষ করতে পারবো না।
এবার আসূন যারা বেদাত বলেন মাইকে আযান দেওয়া কে নিয়ে সেটি একটু আলোচনা করিঃ
বিদাত কিঃ বিদয়াত হলো-দ্বীনের পূর্ণতার পর নতুন কোন বিষয় উদ্ভব হওয়া অথবা সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামান্নাবীঈন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর আমল ও খাহেশাত সম্পর্কিত
কোন বিষয় নতুন উদ্ভব হওয়া।
√ (লোগাতুল কামূস আল মহীত্ব ৩য় জিলদ, পৃষ্টা ৩. বায়ানুল লিসান, পৃষ্টা ১১৫)
বিদয়াত মূলতঃ ওটাকেই বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত
সৃষ্টি করা হয়েছে।”
√ (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী ৪র্থ জিলদ, পৃষ্টা ২১৯, মিরকাত শরীফ)
বিদয়াতের শরীয়তী অর্থঃ
১) বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ্ আল্লামা বদরুদ্দীন
আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন,
“প্রকৃতপক্ষে
বিদয়াত হলো- এমন জিনিসের আবির্ভাব, যার নমুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় ছিলনা।” (ওমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৫ম জিঃ পৃঃ৩৫৬) অর্থাৎ
এমন কোন ইবাদত যার সাথে মূলেই কোন নিসবত নাই রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার।
শরীয়তের দৃষ্টিতে বিদয়াত শব্দের মূল অর্থ হলো- ঐ নতুন উদ্ভব বিষয়, যার ভিত্তি কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে নেই।
সুতরাং সহজ ভাবে বলতে গেলে বিদআত হল নতুন সৃষ্টি, যার কোন নমুনা রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুনিয়াবি হায়াত মুবারকে ছিল
না। নতুন আবিষ্কৃত জিনিসটি ভালও হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে। যদি ভাল হয় তথা কোরআন
সুন্নাহ ইজমা ও কিয়াসের বিরোধী না হয় তাহলে তা জায়েয এবং এতে উত্তম প্রতিদান রয়েছে
যেমন হাদীস শরীফে আছেঃ “যে ব্যক্তি ইসলামে একটি নতুন ভাল প্রথার (বিদয়াতে হাসানাহ)
প্রচলন করবে তার জন্য উত্তম প্রতিদান রয়েছে,
এবং যারা
এর উপর আমল করবে তাদের জন্যও উত্তম প্রতিদান রয়েছে এতে লোকেরা যত আমল করেছে, তাকে সব আমলকারীর সমান সওয়াব দেওয়া হবে (মুসনাদে আহমদ-১ম খন্ড-১৬১
পৃষ্টা) অন্যদিকে বলা আছে যদি নতুন আবিষ্কৃত কাজটি খারাপ বা শরীয়ত বিরোধী কাজ হয় তাহলে
তা হারাম হবে যেমন হাদীস শরীফে আছেঃ “আর যে ব্যক্তি ইসলামে একটি খারাপ প্রথা চালু করবে
ও লোকেরা সে অনুযায়ী আমল করবে, তাকে সব আমলকারীর সমান
পাপ দেওয়া হবে। আবার তাদের পাপে কম করা হবে না (মুসনাদে আহমদ-১ম খন্ড-১৬০ পৃষ্টা) আশা
করি বুঝতে পেরেছেন উত্তম বিদাতের জন্য সওয়াব নির্ধারিত তা হাদীস শরীফ দ্বারাই প্রমান
হলো আর মাইক দিয়ে আযানের ধ্বনি মানষের কাছে পৌছে দেওয়া হলো উত্তম বেদাত যার জন্য
সওয়াব নির্ধারিত তাই এটাকে হারাম বলার কোন ওপেক্ষাই রাখেনা। যারা বলে থাকেন তারা বেকুব
মূর্খ জাহেল ছাড়া আর কিছুই না।
আর সব বেদাত যদি ভ্রান্ত হয় তাহলে রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমলে
কুরআন শরীফ কি এরকম ছিল পাঠ্য আকারে আজকে আমরা যেরূপ আল কুরআন পড়ি সওয়াবের আশায়? তাহলে এটা কি হারাম হবে? নাউযুবিল্লাহ!!! রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমলে তো তারাবী নামায
জামাত আকারে ছিলনা, খতম তারাবীও ছিলনা, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জামাতে ও পড়েন নাই, খতম তারাবীও পড়েন নাই পড়ান ও নাই, এখন তা জামাত আকারে পড়া হচ্ছে খতম সহ, তাহলে সেটা কি হারাম হবে? নাউযুবিল্লাহ!!! রাসূলুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় তো
ইন্টারনেট মেবাইল ছিলনা তাই বলে এগুলি দ্বীন প্রচারের কাজে ব্যবহার করা কি হারাম হবে? আপনি নতুন করে পন্ডিত জন্মাইছেন মাইক দিয়ে আযান দেওয়া হারাম, নামাজ পড়া হারাম,
ইবাদত করা
হারাম। বাহ কত বড় মুজাদ্দীদ আপনি ভাবতে অবাক লাগে।
গ) “মাইকের আওয়াজ বক্তার আসল আওয়াজ নয়,
তাই ইহার
মাধ্যমে ইবাদত করা হারাম” তার মানে এখানে আসল আওয়াজ ও নকল আওয়াজ নিয়ে বিতর্ক। এ বিতর্ক
যে অযৌক্তিক ও অবান্তর তা বুঝার জন্য তো নবী রাসূল হওয়া লাগেনা। মাইকে যিনি পাঠ করেন
মাইক কি তা বিকৃত করে, অর্থ বদল করে? ব্যক্তি পাঠ না করলে মাইক কি নিজ থেকে ব্যক্তির পাঠ করে দিতে
পারে? এই উদাহরণ থেকে এই কথা বুঝানোর
চেষ্টা করেছি যে, মাইকের মাধ্যমে বের শব্দের
আওয়াজ আসল না নকল তা মূল বিষয় নয়। বরং মূল বিষয় হচ্ছে, মাইকের মাধ্যমে বের হওয়া শব্দের অর্থ। মাইকের কারণে যদি শব্দের
অর্থের কোনো পরিবর্তন না ঘটে, তিলাওয়াতে বিঘ্ন না ঘটে
তবে অবশ্যই তা সঠিক ও সত্য বলে মেনে নিতে হবে।
উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি, প্রায় ৬৮১ সালের পূর্ব
সময় পর্যন্ত কোরআনের মধ্যে কোনো হরকত ছিলনা। পরে অনারব মুসলমানদের কুরান পাঠের সুবিধার
জন্য উপকরণ স্বরূপ ৬৮১ সালে হাজ্বাজ বিন ইউসুফ (রাজত্ব: ইরাক, ৬৬১-৭১৪ ইং) আল কুরআনে হরকত সংযোজন করে। তাই বলে এই আল কুরাআন
নকল হয়ে গেছে কিংবা পরিবর্তন হয়ে গেছে এমনটা কেউ বলেনা। কারণ এখানে অর্থটাই আসল। অর্থের
কোনো পরিবর্তন হয়নি বলেই সকল আলেমেদ্বীন একমত যে, আল কুরাআনে হরকত সংযোজনে কোনো দোষ নেই।
একই ভাবে মাইক দিয়ে কোরান পাঠ শোনালে এবং তাতে যদি অর্থের পরিবর্তন না ঘটে, তবে তা দ্বারা কুরআন পাঠ ও শোনা উভয় জায়েজ। এতে পৃথিবীর সকল
বিশেষজ্ঞগণ একমত কেবলমাত্র বিচ্ছিন্ন কিছু ভন্ড ব্যতীত।
ঘ) “মাইকের কারণে মুকাব্বির প্রথা বিলুপ্ত হচ্ছে যা রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সুন্নত” আমি আবারও এ কথা স্বীকার করতেছি যে, মুকাব্বির দেওয়া সুন্নত, তবে তা প্রয়োজনের ভিত্তিতে অপ্রয়োজনে নয়। নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার সময় যখন মসজিদে মুসল্লীদের সংখ্যা বেড়ে যেত, তখন পিছনের মুসল্লীরা ইমামের ক্বিরাত ও তাকবীর বলা কিছুই শোনতে পেতোনা। এতে নামাজে
ইমামের অনুকরণ করে নামাজ আদায় করা সম্ভব হতোনা। নামাজে ক্বিরাত না শোনলেও অন্তত ইমামের
অনুকরণ করে রুকু-সেজদার বা উটা-বসা যাতে ইমামের সাথে করতে পারেন, সেজন্য রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মুকাব্বির
প্রথার নিয়ম চালু করেন। কিন্তু নামাজে মাইক ব্যবহারের ফলে বর্তমানে মুকাব্বিরের প্রয়োজন
নেই, তাছাড়া ইহা নামাজ কবুল হওয়ার কোনো
শর্তও নয়। তাই ইহা বাদদিলে নামাজের কোনো ক্ষতি হবে এমনটা বিশ্বাস করা সঠিক নয়। তারপরও
সুন্নত বর্জিত হয়েছে মনে করে অনেকেই এটা নিয়ে সংশয়ে থাকতে পারেন। তাই মনের সংশয় দূর
করার জন্য একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করতে চাই। তা হলো, আমরা সকলেই জানি সময় মত নামাজ আদায় করা ফরজ। আর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি এই সময় নির্নয় করতেন সূর্য দেখে এবং রাতের পশ্চিম আকাশের লাল আভা দেখে। এখন কি
কেউ বলে ঘড়ি দেখে নামাজ পড়া হারাম? প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে
জামায়াত করা হারাম? কারণ নবীজী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি এরূপ করেন নাই অথচ নামাজ আদায় এর পূর্বে এর অন্যতম শর্ত হলো
সময় হওয়া। আসলে নিজেদের মনগড়া আক্বিদার দোহাই দিয়ে মাইক ও ঘড়ির মতো প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ
ইবাদতের উপকরণ থেকে দূরে থাকা সত্যিই গোড়ামির বহির্প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়।
ঙ) “মাইক গান বাজনায় ব্যবহার করা হয় বলে ইবাদতে ব্যবহার করা হারাম” এটা যে অবান্তর, অযৌক্তিক ও বিভ্রান্তিকর কথা তা অধিকাংশ মানুষই বুঝতে পারে দলিল
ও ব্যখা ছাড়াই। তবে যারা বুঝতে পারেনা বা বুঝার চেষ্টা ও করেনা তাদের জন্য দুটি প্রশ্ন
রাখলামঃ
১। আমরা মুখ দিয়ে অনেক সময় খারাপ কথা বলি,
তাই বলে এই মুখ দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার পাক নাম নেয়া হারাম?
২। মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ঘর, তাই বলে এই
ঘরে কাফেরদের তৈরি করা বাল্ব, ফ্যান, টাইচ, রং ইত্যাদি ব্যবহার করা
হারাম?
এছাড়াও, বাদ্যযন্ত্র হচ্ছে এমন একপ্রকার
যন্ত্র বা বস্তু যা এমনভাবে তৈরি বা সংস্কার করা হয়েছে যা নিজ থেকে সুর বা সুরেলা
শব্দ সৃষ্টি করতে পারে এবং গানের সহায়ক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। অর্থগত দিক থেকে বিবেচনা
করলে দেখা যায়, যেকোনো বস্তু যা নিজস্ব
শব্দ সৃষ্টি করতে পারে, তাকেই বাদ্যযন্ত্র হিসেবে
ধরা হয়ে থাকে।
চ) "কোরআন মাজিদে এমন ১৪ টি আয়াত শরীফ আছে যা শোনলে সেজদাহ দিতে হয় এবং সেজদাহ
দেওয়া ওয়াজিব। কিন্তু মাইকের কোরআন শোনলে অনেক মানুষ সেজদাহ দিতে পারেনা, তাই মাইক দিয়ে কোরআন পাঠ হারাম। তা হোক নামাজের ভিতরে বা বাহিরে"
সেজদার আয়াত শরীফগুলো শোনলে তাতে সেজদার দেয়া ওয়াজিব। কিন্তু কিভাবে শোনলে সেজদাহ দেয়া
ওয়াজিব হয় তা আমরা রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এর সুন্নত এবং উনার পরবর্তী
সাহাবী, তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈ উনাদের কাছ
থেকে শিক্ষা পাই।
রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সেজদার আয়াত শরীফগুলো পাঠ করতেন
তখন সেজদা দিতেন আবার মাঝে মাঝে তা থেকে বিরত থাকতেন। এই বিষয়ে একটি দলিল হলো, সূরা আন নজম শরীফে সেজদার আয়াত শরীফ আছে, অথচ নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কখনো সূরাহ আন
নজম পড়ে সেজদাহ দেননি।
√ (সহীহ আল বুখারি,
খন্ডঃ ০২, হাদীস শরীফ নং ১০১১-১২)।
আর আল কুরআন শোনতে আসেনি বা কুরআন শোনতে অনিচ্ছুক ব্যক্তি যদি সেজদার আয়াত শোনে
তবে তাকে সেজদার দিতে হবেনা। এই বিষয়ে ইমরান ইবনে হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে
জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, যে লোক কোরআন শোনতে আসেনি
কিন্তু সে সেজদার আয়াত শোনলে তাকে কি সেজদার দিতে হবে? উত্তরে তিনি উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, বসলেও কি তাকে সেজদার দিতে হতো? তিনি আরও বলেন,
আমরা এ জন্য
আসেনি। তার মানে এই অবস্থায় সেজদাহ ওয়াজিব হয়না। হযরত উসমান যুন্নুরাঈন আলাইহিস সালাম
বলেন, যে মনোযোগ সহকারে সেজদার আয়াত
শরীফ শোনে তার উপর সেজদাহ ওয়াজিব হয়। আর সায়িব ইবনে ইয়াযিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বক্তার
বক্তৃতায় সেজদারর আয়াত শোনে সেজদার করতেন না।
√ (সহীহ আল বুখারি,
খন্ড ০২, অনুচ্ছেদঃ ৬৯২)।
উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম জুমার খুতবায় বলেন, হে লোক সকল! আমরা যখন সেজদার আয়াত শরীফ তেলাওয়াত করি তখন যে
সেজদা করবে সে ঠিকই করবে। আর যে করবেনা তার কোনো গুনাহ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম সেজদা করেননি। নাফি রহমতুল্লাহি
আলাইহি উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম থেকে আরও বলেন, আল্লাহ তায়ালা সেজদা ফরজ করে দেননি। তবে আমরা ইচ্ছা করলে সেজদা
দিতে পারি। (সহীহ আল বুখারি, খন্ডঃ ০২, হাদীস নং ১০১৬)।
আশা করি উপরোক্ত আলোচনা থেকে সেজদার দেয়ার ব্যপারে কিছু নিয়মনীতি শিখতে পারলাম
এবং প্রয়োজনে মাইকে কুরআন পাঠ করলেও তাতে সেজদার জনিত সমস্যা আছে কিনা তা জানতে পারলাম।
এতএব পাঠকগণ আশা করি উপরোক্ত দলিলগুলোর ভিত্তিতে আমি যে আলোচনা করলাম আপনারা
আশাকরি বুঝতে পেরেছেন যে মাইক দিয়ে আযান দেওয়া বিদয়াতে হাসনাহ যা উত্তম বিদয়াত এবং
তার জন্য সওয়াব নির্ধারিত। আর মাইক দিয়ে নামাজ পড়া বা যেকোন ইবাদতের সময় মাইক একটা
উপকরণ মাত্র এর সাথে নামাজ বা ইবাদত নষ্ট হওয়ার কোন সম্পর্ক নাই। মহান আল্লাহ পাক সকলকে
সঠিক জ্ঞ্যান দান করুন এই কামনা।
বিঃদ্রঃ এইখানে উল্লেখিত আপত্তি ও কয়েকটি উত্তরের কিছু অংশ নেওয়া হয়েছিল অনেক বছর
আগের পুরাতন একটি ফেসবুকের পোষ্ট থেকে যেখানে মাইক হারাম বলনে ওয়ালা ভ্রান্ত আক্বিদার
কতিপয় লোকের সাথে বিতর্ক হয়েছিল।
No comments