পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের অগণিত দলীল-আদিল্লা দ্বারা প্রমাণিত যে-‘ছোঁয়াচে রোগ বা সংক্রামক রোগ বলতে ইসলামে কিছু নেই
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে ‘ছোঁয়াচে’ বা ‘সংক্রামক’ বলতে
কোনো রোগই নেই। কোনো রোগের কোনো ক্ষমতা নেই যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা ব্যতীত কারো উপর আক্রমণ করে। আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত
জিন-ইনসান ও প্রাণী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের হায়াত-মাওত, বালা-মুছীবত, বিপদ-আপদ, রোগ-বালাই এবং রিযিক্বসমূহ সবকিছুই পূর্ব থেকে নির্ধারণ করে
রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! এ সম্পর্কে অসংখ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ রয়েছেন।
যেমন-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ
حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَليْهِ وسَلَّمَ لَا عَدْوٰى وَلاَ طِيَرَةَ وَلاَ هَامَةَ
وَلاَ صَفَرَ.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই, অশুভ বলতে কিছু নেই, পেঁচার মধ্যে কোন কুলক্ষণ
নেই এবং সম্মানিত ছফর শরীফ মাসে কোন খারাপী নেই।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ্ শরীফ
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৩৫৩৯, হাশিয়াতুস সিন্দী ২/৩৬৩)
অপর বর্ণনায় রয়েছে,
عَنْ
حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِـىِّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا عَدْوٰى وَلَا طِيَرَةَ وَلَا هَامَةَ
وَلَا صَفَرَ.
অর্থ: “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই, অশুভ বলতে কিছু নেই, পেঁচার মধ্যে কোন কুলক্ষণ
নেই এবং সম্মানিত ছফর শরীফ মাসে কোন খারাপী নেই।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৫৭৫৭,
৫৩১৬, এবং ৫৪২৫, তাহ্যীবুল আছার লিত্ ত্ববারী ৩/৪৩২, মুসনাদে ইসহাক্ব ইবনে রাহওয়াইহ্ ১/২৩৫, উমদাতুল ক্বারী ৩১/৩৮২, আত্ তাওদ্বীহ্ লি ইবনে মুলক্বিন ২৭/৫২১, আত্ তাওশীহ্ ৮/৩৫৪২, আল কাওয়াকিবুদ্ দুরারী ২১/৩৩, ইরশাদুস সারী ৮/৩৯৮, ফাইদ্বুল বারী ৬/৬৩, আল কাওছারুল জারী ৯/২৯১, আল লামি‘উছ ছবীহ্ ১৪/৩৬০, মিনহাতুল বারী ৯/৪৭, কাশফুল খাফা ২/৪৫০, নুযহাতুল আলবাব ৪/২৪০৯ ইত্যাদি)
অনুরূপ হাদীছ শরীফ আরও উল্লেখ আছে-মুসলিম শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ
নং ৫৯২৬ এবং ৪১১৮, আবূ দাঊদ শরীফ মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৩৯১৪ এবং ৩৯১২, আহাদীছু ইসমা‘ঈল ইবনে জা’ফর ১/৩৪০, মুসনাদে আবী ইয়া’লা ৬/৭৬, জামি‘উল আহাদীছ লিস সুয়ূত্বী ১৬/৪৩৯, আল ফাতহুল কাবীর লিস সুয়ূত্বী ৩/৩৩২, জাম‘উল জাওয়ামি’ লিস সুয়ূত্বী ১১/৫৫৯, জামি‘উল উছূল লি ইবনে আছীর ৭/৫৮০৯, কানযুল ‘উম্মাল ১০/১১৮, আল জাম‘উ বাইনাছ ছহীহাইন ৩/৭৮, মুসতাখরজে আবী ‘আওয়ানাহ্ ১৭/৫০৬, আল আহ্কামুশ শর‘ইয়্যাহ্ লিল ইশবীলী ৩/৫৯, শরহুস সুন্নাহ্ লিল বাগবী ১২/১৭৪, মিশকাত শরীফ ৩৯১, মিরক্বাতুল মাফাতীহ্ ৭/২৮৯৫, শরহুত্ ত্বীবী ৯/২৯৮০, তুহফাতুল আশরাফ ১০/২৩৪, ইকমালুল মু’লিম ৭/১৪৫, ফাতহুল মুন‘ইম ৮/৬১১, আল কাওকাবুল ওয়াহ্হাজ ২২/৩০৪, বযলুল মাজহূদ ১১/৬৪৩, আল বাহ্রুল মুহীত্বুছ ছাজ্জাজ ৩৬/৩৭৪, মিন্নাতুল মুন‘ইম ৩/৪৬৯, আল মুসনাদুল মাওদ্বূ‘য়ী ৩/৪৫৯ ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ
حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا عَدْوٰى وَلاَ صَفَرَ وَلاَ هَامَةَ
فَقَالَ اَعْرَابِـىٌّ يَا رَسُوْلَ اللَّهِ فَمَا بَالُ اِبِلِىْ تَكُوْنُ فِـى
الرَّمْلِ كَاَنَّـهَا الظِّبَاءُ فَيَأْتِـى البَعِيْـرُ الاَجْرَبُ فَيَدْخُلُ بَيْنَهَا
فَيُجْرِبُـهَا فَقَالَ فَمَنْ اَعْدَى الاَوَّلَ.
অর্থ: “হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই, সম্মানিত ছফর শরীফ মাসে কোন খারাপী নেই এবং পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণের কিছুই নেই।
তখন একজন বেদুঈন ছাহাবী বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে আমার উটের এ অবস্থা হলো কেন? যে উটগুলো হরিণের মতো তরুতাজা ছিল, যেগুলো ময়দানে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতো। এমতাবস্থায় কোথা থেকে
খুঁজলি-পাঁচড়া যুক্ত একটি উট এসে সে উটের পালে মিলিত হলো এবং উটগুলোকে খুঁজলি-পাঁচড়ায়
আক্রান্ত করে দিলো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তাহলে প্রথম উটটিকে কে
সংক্রামিত করলো? (বুখারী শরীফ মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৫২৭৮,
৫৩৮৭ এবং ৫৭১৭, মুসলিম শরীফ হাদীছ শরীফ
নং ২২২০, জামি‘উ মা’মার ইবনে রশিদ
১০/৪০৪, আবূ দাঊদ শরীফ ৪/১৭, মুসনাদে বায্যার ১৪/২৮০, শরহু ইবনে বাত্ত্বাল ৯৪১৭, আত্ তাওদ্বীহ্ ২৭/৪৪৪, আত্ তাওশীহ্ ৮/৩৫২৪, আল কাওকাবুদ দুরারী ২১/৯, ইরশাদুস সারী ৮/৩৭৮, আল কাওছারুল জারী ৯/২৭২, মিনহাতুল বারী ৯/২৭, আল লামি‘উছ ছবীহ্ ১৪/৩২১, নাখবুল আফকার ১৪/৮৫, ফাইদ্বুল বারী ৬/৫৪, আল মাত্বালিবুল ‘আলিয়াহ্ ১/১১৬৭ ইত্যাদি)
অর্থাৎ প্রথমটি যেভাবে খুজলিযুক্ত হয়েছিলো ঠিক পরবর্তী উটগুলোও সেভাবেই খুজলিযুক্ত
হয়েছে। অর্থাৎ ছোঁয়াচে বলতে কোন রোগ নেই।
‘ছোয়াঁচে রোগ নেই’ -এ সম্পর্কে সম্মানিত
ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের ব্যাখ্যা:
‘আবূ দাঊদ শরীফ’ উনার বিশ্বখ্যাত
ব্যখ্যাগ্রন্থ ‘মু‘আমিলুস সুনান’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
قَوْلُهٗ
لَا عَدْوٰى يُرِيْدُ اَنَّ شَيْئًا لَا يُعْدِىْ شيئاً حَتّٰـى يَكُوْنَ
الضَّرَرُ مِنْ قِبَلِهٖ
وَاِنَّـمَا هُوَ تَقْدِيْرُ اللهِ جَلَّ وَعَزَّ وَسَابِقُ قَضَائِهٖ
فِيْهِ وَلِذٰلِكَ قَالَ فَمَنْ اَعْدَى الْاَوَّلَ يَقُوْلُ اِنَّ اَوَّلَ بَعِيْـرٍ
جَرِبَ مِنَ الْاِبِلِ لَـمْ يَكُنْ قَبْلَهٗ
بَعِيْـرٌ اَجْرَبٌ فَيُعْدِيْهٖ
وَاِنَّـمَا كَانَ اَوَّلُ مَا ظَهَرَ الْـجَرَبُ فِـىْ اَوَّلِ بَعِيْـرٍ مِّنْهَا
بِقَضَاءِ اللهِ وَقَدَرِهٖ
فَكَذٰلِكَ مَا ظَهَرَ مِنْهُ فِـىْ سَائِرِ الْاِبِلِ بَعْدُ .
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক ‘ছোঁয়াচে
বা সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই’ উনার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোন কিছুই কোন কিছুকে সংক্রামিত করতে পারে না। ক্ষতি (রোগ) যেটা
হয়, সেটা তার থেকেই হয়। আর নিঃসন্দেহে
এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে পূর্বনির্ধারিত এবং পূর্বফায়ছালাকৃত। এ কারণে নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, প্রথম উটটিকে কে সংক্রামিত করলো? তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই উট পালে হতে যেই উটটি প্রথম খুঁজলি-পাঁচড়া যুক্ত হলো, তার পূর্বে তো কোন উট খুঁজলি-পাঁচড়া যুক্ত হয়নি, যেটা তাকে সংক্রামিত করবে। আর নিশ্চয়ই উট পালের মধ্য হতে প্রথম
উটের মধ্যে যে খুঁজলি-পাঁচড়া প্রকাশ পেয়েছে,
এটা মহান
আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ফায়ছালাকৃত,
যেটা মহান
আল্লাহ পাক তিনি নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। অনুরূপভাবে প্রথম উটটির পর বাকি যেই উটগুলোর
মধ্যে খুঁজলি-পাঁচড়া প্রকাশ পেয়েছে, সেটাও মহান আল্লাহ পাক
উনার পক্ষ থেকে পূর্বনির্ধারিত ও পূর্বফায়ছালাকৃত।” সুবহানাল্লাহ! (মু‘আমিলুস সুনান
৪/২৩৩)
হযরত ইমাম বাগভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘শারহুস সুন্নাহ
শরীফ’ উনার মধ্যে রয়েছে,
قَوْلُهٗ
لَا عَدْوٰى يُرِيْدُ اَنَّ شَيْئًا لَا يُعْدِىْ شَيْئًا بِطَبْعِهٖ
اِنَّـمَا هُوَ بِتَقْدِيْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَسَابِقِ قَضَائِهٖ
بِدَلِيْلِ قَوْلِهٖ
لِلْاَعْرَابِـىِّ فَمَنْ اَعْدَى الْاَوَّلَ يُرِيُد اَنَّ اَوَّلَ بَعِيْـرٍ جَرِبَ
مِنْهَا كَانَ جَرَبُهٗ
بِقَضَاءِ اللهِ وَقَدَرِهٖ
لَا بِالْعَدْوٰى فَكَذٰلِكَ مَا ظَهَرَ بِسَائِرِ الْاِبِلِ مِنْ بَعْدُ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক ‘ছোঁয়াচে
বা সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই’ উনার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোন কিছুরই এমন কোন শক্তি নেই যে, সে অন্য কিছুকে সংক্রামিত করতে পারে। অর্থাৎ কোন কিছুই কোন কিছুকে
সংক্রামিত করতে পারে না। নিশ্চয়ই রোগ যেটা হয়, সেটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে পূর্বনির্ধারিত এবং পূর্বফায়ছালাকৃত। এ বিষয়ে
বেদুঈন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে উদ্দেশ্য করে বলা ‘প্রথম উটটিকে কে
সংক্রামিত করলো?’ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক দ্বারা দলীল সাব্যস্ত হয়েছে। তিনি উদ্দেশ্য
করেছেন, নিশ্চয়ই উটের পাল হতে যে উটটি
প্রথম খুঁজলি-পাঁচড়া যুক্ত হলো, তার পূর্বে তো কোন উট
খুঁজলি-পাঁচড়া যুক্ত হয়নি যে, তাকে সংক্রামিত করবে।
আর উটের পাল হতে প্রথম উটের মধ্যে যে খুঁজলি-পাঁচড়া প্রকাশ পেয়েছে, এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ফায়ছালাকৃত, যেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। এটা ছোঁয়াচের
কারণে হয়নি। অনুরূপভাবে প্রথম উটটির পর বাকি যেই উটগুলোর মধ্যে খুঁজলি-পাঁচড়া প্রকাশ
পেয়েছে, সেটাও মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ
থেকে পূর্বনির্ধারিত এবং ফায়ছালাকৃত।” সুবহানাল্লাহ! (শারহুস সুন্নাহ শরীফ ১২/১৬৯)
আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
اَمَّا
قَوْلُهٗ
لَا عَدْوٰى فَمَعْنَاهُ اَنَّهٗ
لَا يُعْدِىْ شَىْءٌ شَيْئًا وَلَا يُعْدِىْ سَقِيْمٌ صَحِيْحًا وَاللهُ يَفْعَلُ مَا
يَشَاءُ لَا شَىْءَ اِلَّا مَا شَاءَ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
কথা মুবারক ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামিত রোগ বলে কিছুই নেই’ উনার অর্থ হচ্ছে, কোন কিছুই কোন কিছুকে সংক্রামিত করতে পারে না এবং কোন রোগী কোন
সুস্থ ব্যক্তিকে সংক্রামিত করতে পারে। অর্থাৎ কোন রোগী কোন সুস্থ ব্যক্তিকে রোগী বানাতে
পারে না। বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন। উনার ইচ্ছার বাইরে কোন কিছু
হয় না।” সুবহানাল্লাহ! (আল ইস্তিযকার ৯/৩৮৫)
মুয়াত্ত্বা শরীফ উনার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আল মুন্তাক্বা শরীফ’ উনার মধ্যে রয়েছে,
قَوْلُهٗ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَا عَدْوٰى قَالَ حَضْرَتْ عِيْسَى بْنُ دِيْنَارٍ
رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ مَعْنَاهُ لَا يُعْدِىْ شَىْءٌ شَيْئًا اَىْ لَا يَتَحَوَّلُ
شَىْءٌ مِّنَ الْمَرَضِ اِلـٰى غَيْـرِ الَّذِىْ هُوَ بِهٖ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক ‘ছোঁয়াচে
বা সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই’। হযরত ঈসা ইবনে দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার অর্থ হচ্ছে,
কোন কিছুই
কোন কিছুকে সংক্রামিত করতে পারে না অর্থাৎ রোগী যেই রোগে ভুগছে, সেই রোগ থেকে কোনো কিছুই অন্যের নিকট স্থানান্তরিত হয় না।” সুবহানাল্লাহ!
(আল মুন্তাক্বা ৭/২৬৩, তানওইরুল হাওলিক ২/২৩১)
‘মুসলিম শরীফ’ উনার বিশ্বখ্যাত
শরাহগ্রন্থ ‘আল মু’লিম বিফাওয়াইদিল মুসলিম’ উনার মধ্যে রয়েছে,
قَوْلُهٗ
لَا عَدْوٰى تَفْسِيْـرُهٗ
اَنَّ الْعَرَبَ كَانَتْ تَعْتَقِدُ اَنَّ الْمَرَضَ يُعْدِىْ وَيَنْتَقِلُ اِلَـى
الصَّحِيْحِ فَاَنْكَرَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِعْتِقَادِهِمْ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক ‘ছোঁয়াচে
বা সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই’। উনার ব্যাখ্যা হচ্ছেন- নিশ্চয়ই জাহিলী যুগে আরবরা এটা বিশ্বাস
করতো যে, রোগ অসুস্থ ব্যক্তির থেকে সুস্থ
ব্যক্তির দিকে সংক্রামিত হয়, স্থানান্তরিত হয়। নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের এই বিশ্বাসকে প্রত্যাখান করেছেন, বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’লিম বিফাওয়াইদিল
মুসলিম ৩/১৭৭)
মুসলিম শরীফ উনার বিশ্বখ্যাত শরাহগ্রন্থ ‘আল কাওকাবুল ওয়াহ্হাজ’ উনার মধ্যে রয়েছে,
لَا
عَدْوٰى اَىْ لَا سِرَايَةَ لِمَرَضٍ عَنْ صَاحِبِهٖ
اِلـٰى غَيْـرِهٖ.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই’। অর্থাৎ রোগ তার ছাহিব
তথা রোগীর থেকে অন্যের দিকে কখনোই স্থানান্তরিত হয় না।” সুবহানাল্লাহ! (আল কাওকাবুল
ওয়াহ্হাজ ২২/২৯৮)
এ জন্যই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ
جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَخَذَ بِيَدِ مَـجْذُوْمٍ فَاَدْخَلَهٗ مَعَهٗ
فِـى الْقَصْعَةِ ثُـمَّ قَالَ كُلْ بِسْمِ اللهِ ثِقَةً بِاللهِ وَتَوَكُّلًا
عَلَيْهِ.
অর্থ: “হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন।
নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন কুষ্ঠরোগীর হাত ধরলেন। অতঃপর তার হাতকে উনার
সাথে (খাবার খাওয়ানোর জন্য) উনার পাত্র মুবারক-এ প্রবেশ করালেন। তারপর ইরশাদ মুবারক
করলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক
নিয়ে উনার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে এবং পূর্ণ ভরসা করে খাবার গ্রহণ করুন।” (তিরমিযী
শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং ১৮১৭/ আবূ দাউদ শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র
হাদীছ শরীফ নং ৩৯২৫, সুনানে ইবনে মাজাহ্ মহাসম্মানিত
ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৩৫৪২, মুসনাদে আবী ইয়া’লা ৩/৩৫৪, মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ শরীফ ৫/১৪১, আল মুন্তাখাব মিন মুসনাদে আব্দ ইবনে হুমাইদ ১/৩২৯, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাতি ১/৪১২, আল আদাবু লিল বাইহাক্বী ১/১৪৬, শু‘আবুল ঈমান ২/৪৮৮,
শারহু সুনানি
ইবনে মাজাহ লিস সুয়ূত্বী ১/২৭১, বাযলু মাজহূদ ফী হাল্লি
সুনানি আবী দাঊদ ১১/৬৫৩, আনীসুস সারী, আওনুল মা’বূদ ২১/২৪৭,
আল মাসালিক
ফী শারহি মুয়াত্ত্বাই মালিক ৭/৪৭১ ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ اُمِّ
الْـمُؤْمِنِيْـنَ الثَّالِثَةِ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلصِّدِّيْقَةِ عَلَيْهَا
السَّلَامُ (سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ عَائِشَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ) قَالَتْ كَانَ
لَنَا مَوْلـٰى مَـجْذُوْمٌ فَكَانَ يَأْكُلُ فِـىْ صِحَافِـىْ وَيَشْرَبُ فِـىْ
اَقْدَاحِىْ وَيَنَامُ عَلـٰى فِرَاشِىْ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম
উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের একজন কুষ্ঠরোগী গোলাম ছিলেন। তিনি আমার পাত্র মুবারক-এ
খাবার খেতেন, আমার বাটি মুবারক-এ পানি পান করতেন
এবং আমার বিছানা মুবারক-এ ঘুমাতেন।” (শারহুন নববী, তুহফাতুল আহওয়যী ৫/২০, আওনুল মা’বূদ, নাইলুল আওত্বার ৭/২২০,
কাশফুল মানাহিজ
৪/১১৭ ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ
اَبِـىْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلْ مَعَ صَاحِبِ الْبَلَاءِ تَوَاضُعًا لِرَبِّكَ
وَاِيْـمَانًا.
অর্থ: “হযরত আবূ যর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা
আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন, তুমি তোমার রব মহান আল্লাহ
পাক উনার প্রতি বিনয়ী হয়ে এবং পূর্ণ বিশ্বাস রেখে রোগ-মুছীবতগ্রস্ত ব্যক্তির সাথে খাদ্য
গ্রহণ করো।” সুবহানাল্লাহ! (নাখবুল আফকার ফী তানক্বীহি মাবানিইল আখবার ফী শারহি মা‘আনিইল
আছার লিবাদরিদ্দীন আইনী হানাফী ১৪/৯৪,
আওনুল মা’বূদ
১০/৩০০, আত তানওইর ৮/২২১, আল ফাতহুল কাবীর ২/৩০০, জাম‘উল জাওয়ামি’ ৬/৪৪৩, ফাইযুল ক্বাদীর, আল জামিউছ ছগীর ২/১৬৬,
তুহ্ফাতুল
আহ্ওয়াজী ৫/২০, মিরক্বাতুল মাফাতীহ্ ৭/২৮৯৮, জামি‘উল আহাদীছ ১৫/৩৬৬ ইত্যাদি)
‘মুয়াত্ত শরীফ’ উনার বিশ্বখ্যাত
শরাহগ্রন্থ ‘শারহুয যারক্বানী’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ قَالَ لَا عَدْوٰى اَىْ لَا يُعْدِىْ شَىْءٌ شَيْئًا اَىْ لَا يَسْرِىْ
وَلَا يَتَجَاوَزُ شَىْءٌ مِّنَ الْمَرَضِ اِلـٰى غَيْـرِ مَنْ هُوَ بِهٖ.
অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক
রোগ বলে কিছুই নেই’। অর্থাৎ কোন কিছুই কোন
কিছুকে সংক্রামিত করতে পারে না অর্থাৎ রোগী যেই রোগে ভুগছে, সেই রোগ থেকে কোনো কিছুই অন্যের নিকট ভ্রমণ করে না এবং যায় না।”
সুবহানাল্লাহ! (শারহুয যারক্বানী ‘আলাল মুওয়াত্ত্বা ৪/৪২৪)
‘মুয়াত্ত শরীফ’ উনার বিশ্বখ্যাত
শরাহগ্রন্থ ‘আল মুন্তাক্বা’ উনার মধ্যে রয়েছে,
اَنَّ
الْعَرَبَ كَانَتْ تَعْتَقِدُ اَنَّ الصَّحِيْحَ اِذَا جَاوَرَ الْمَرِيْضَ
اِعْدَاهُ مَرَضُهٗ اَىْ تَعَلَّقَ بِهٖ اَوْ اِنْتَقَلَ اِلَيْهِ.
অর্থ: “জাহিলী যুগে আরবরা এটা বিশ্বাস করতো যে, কোন সুস্থ ব্যক্তি যখন কোন রোগীকে দেখতে যায়, তখন অসুস্থ ব্যক্তির রোগ সুস্থ ব্যক্তিকে সংক্রামিত করে। অর্থাৎ সুস্থ ব্যক্তির
সাথে ঐ রোগটা সংগযুক্ত হয় অথবা রোগীর রোগটা সুস্থ ব্যক্তির নিকট স্থানান্তরিত হয়।”
না‘ঊযুবিল্লাহ! (আল মুনতাক্বা ৭/২৬৩)
‘আবূ দাঊদ শরীফ’ উনার ব্যখ্যাগ্রন্থ
‘আউনুল মা’বূদ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
لَا عَدْوٰى
نَفْىٌ لِمَا كَانُوْا يَعْتَقِدُوْنَهٗ مِنْ سِرَايَةِ الْمَرَضِ مِنْ صَاحِبِهٖ
اِلـٰى غَيْـرِهٖ.
অর্থ: “ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই’। এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মাধ্যমে যারা এই আকীদা পোষণ করে থাকে যে, রুগ্ন ব্যক্তির রোগ তার থেকে অন্যের উপর যায়। তার আক্বীদাকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।”
সুবহানাল্লাহ! (আওনুল মা’বূদ শারহু সুনানি আবী দাঊদ ৯/৮৫৯)
‘ফাইযুল ক্বাদীরে’ বর্ণিত রয়েছে
لَا عَدْوٰى
اَىْ لَا سرَايَةَ لِعِلَّةِ مِنْ صَاحِبِهَا لِغَيْـرِهٖ يَعْنِـىْ اَنَّ مَا
يَعْتَقِدُهُ الطَّبَائِعِيُّوْنَ مَنْ اَنَّ الْعِلَلَ الْمُعْدِيَةَ مُؤَثَّرَةٌ
لَا مَـحَالَةَ بَاطِلٌ بَلْ هُوَ مُتَعَلَّقٌ بِالْمَشِيْئَةِ الرَّبَّانِيَّةِ.
অর্থ: “(নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ মুবারক করেন,) ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক
রোগ বলে কিছুই নেই’। অর্থাৎ রোগ তার ছাহিব
তথা রোগীর থেকে অন্যের দিকে স্থানান্তরিত হয় না। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ প্রকৃতিবাদী
বা নাস্তিকরা যেটা বিশ্বাস করে যে, ‘সংক্রামক রোগসমূহ হচ্ছে
ক্রিয়াশীল।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! তাদের এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে ভিত্তিহীন, বাতিল। বরং রোগের বিষয়টি খোদায়ী ইচ্ছা তথা মহান আল্লাহ পাক উনার
ইরাদার সাথে সম্পৃক্ত।” সুবহানাল্লাহ! (ফাইযুল ক্বাদীর ৬/৫৬১, মাছাবীহুত তানওইর ২/৯৬)
সুতরাং করোনা কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটা হচ্ছে- কাফিরদের উপর নিপতিত এক মহা গযব।
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী ছোঁয়াচে রোগ বা সংক্রামক রোগ বলতে
কিছু নেই। যা অসংখ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে ছহীহ সমঝ দান করুন এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার
উপর অবিচল থাকার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!
No comments