কবরের ভয়াবহ আযাব
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি কবরের চাইতে অধিক ভয়াবহ দৃশ্য কোথাও দেখিনি।” (তিরমিজি শরীফ)
এক আল্লাহ্ পাক উনার অলীর ইন্তেকালের সময় ঘনিয়ে এসেছিল। তিনি পরিবার-পরিজন, মুরিদ মুতাক্বেদদের বললেন, “আমি ইন্তেকাল করলে যখন দাফন করবে তখন কাফনের উপর আমার সিনার উপরে একটি খাতা ও একটি
কলম দিয়ে দিও। তোমরা তিনদিন পর আমার কবরে যাবে। সেখানে গিয়ে দেখবে সেই খাতা ও কলম আমার
কবরের উপর রয়েছে। কবরের মধ্যে কি ঘটনা ঘটে তা সব আমি লিখে দিব।” তারপর তিনি ইন্তেকাল
করলে অসীয়ত মোতাবেক দাফনের সময় একটা সাদা খাতা ও কলম সিনার উপরে রেখে দেয়া হল। তিনদিন
পর হাজার হাজার লোক উনার কবরের নিকটে জমায়েত হল। দেখা গেল সত্যিই সিনা বরারবর কবরের
উপরে খাতা ও কলমটা রয়েছে। খাতা খুলে দেখা গেল সেখানে লিখা আছে, “আমি তো বলেছিলাম কবরের মধ্যে কি সংঘটিত হয় তা হুবহু লিখে দিব।
কিন্তু আমি যখন কবরে প্রবেশ করলাম তখন দেখলাম কুরআন শরীফ, হাদিছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে অর্থাৎ
শরীয়তে আল্লাহ্ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যা বলেছেন
কবর সম্পর্কে, হুবহু তাই সংঘটিত হয়েছে কবরের
মধ্যে। তাই নতুন করে আর লিখার কিছু নেই।” সুবহানআল্লাহ!
কি বলা আছে কবর সম্পর্কে? হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
মুর্দাকে
যখন কবরে রেখে তার সঙ্গীরা বিদায় নিয়ে চলে যায়, এবং সে তাদের পায়ের জুতা বা স্যান্ডেলের আওয়াজও শুনতে পায়। ওই সময়েই দু’জন ফেরেশতা
আলাইহিমুস সালাম কবরে প্রবেশ করে তাকে বসিয়ে দেন। জিজ্ঞেস করেন, মান রাব্বুকা (তোমার প্রতিপালক কে?) মুর্দা মুমিন হলে উওর দিবে, রাব্বি আল্লাহ্ (আমার প্রতিপালক মহান আল্লাহ পাক। দ্বিতীয় প্রশ্ন করা হয়, মা দ্বীনুকা (তোমার দ্বীন কী?) মুমিন মুর্দা উত্তর দিবে, দ্বীনি আল ইসলাম (আমার
দ্বীন ইসলাম)। সবশেষে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখিয়ে বলা হবে ‘মান হাযার রাজুল? (ইনি কে?) মুমিন মুর্দা উত্তর দিবে, হাযা রাসুলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তিনি আল্লাহ
পাক উনার রসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম
উনারা জিজ্ঞেস করবেন, কিভাবে জানলে? মুর্দা উত্তর দিবে,
আমি আল্লাহ্
পাক উনার কিতাব পড়েছি, ঈমান এনেছি ও সত্য বলে
বিশ্বাস করেছি। তখন আসমান থেকে ঘোষণা করা হবে, “আমার বান্দা সত্য বলেছে! তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও! তাকে জান্নাতের
পোশাক পড়িয়ে দাও! তার জন্য জান্নাতের দিকের দরজা খুলে দাও! জান্নাতের দিকের দরজা খুলে
দেয়া হলে জান্নাতের সুঘ্রাণ তার কবরে প্রবাহিত হতে থাকবে। সুবহানআল্লাহ! এমনকি তার
কবর যতদূর চোখের দৃষ্টি যায় ততদূর পর্যন্ত বিস্তৃত করে দেয়া হবে। সুবহানআল্লাহ!

অপরদিকে মুর্দা যদি কাফির বা মুনাফিক হয় তাহলে কবরে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম
উনাদের জিজ্ঞাসার জবাবে বলে, হায় আমি কিছু জানি না!
তখন আসমান থেকে ঘোষিত হয়, “এ লোক মিথ্যা বলছে! তার
জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও! তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও! তার জন্য জাহান্নামের
দিকের একটি দরজা খুলে দাও!” অতঃপর জাহান্নামের দিকে দরজা খুলে দেয়া হলে সে দরজা পথে
তার কবরে জাহান্নামের তপ্ত লু হাওয়া প্রবাহিত হতে থাকে। অতঃপর তার কবরকে এতো সংকুচিত
করা হয় যে, মাটির চাপে তার উভয় পাঁজরের হাড়
পরস্পর বিপরিত দিকে বের হয়ে পরে। তারপর তাকে শাস্তি দেবার জন্য এমন একজন ফেরেশতা মোতায়েন
করা হয়, যিনি অন্ধ ও বধির। উনার হাতে থাকে
বিরাট এক লোহার গদা। যার প্রকৃতি এমন যে,
যদি তা দিয়ে
পাহাড়ের ওপর আঘাত করা হয়, তবে পাহাড়ও মাটির সাথে
মিশে যাবে। এ গদা দ্বারা এক বার আঘাত করলে মানুষ ও জিন ছাড়া পূর্ব পশ্চিমে সমস্ত প্রাণী
তার চিৎকারের শব্দ শুনতে পায়। আর একবার আঘাত করলে মুর্দা মাটির সাথে মিশে যায়। অতঃপর
তাকে পুনরায় জীবিত করা হয়। নাউযুবিল্লাহ! কাফের ও মুনাফিকদের কবরে ৯৯টি বিষধর সাপ
নিয়োজিত করা হয়। যারা কেয়ামত পর্যন্ত তাকে দংশন করতে থাকে। সাপ গুলোর বিষ এতো মারাত্মক
হবে যে, তার একটি সাপ ও যদি পৃথিবীতে নিঃশ্বাস
ছাড়ে, তাহলে পৃথিবীতে কোন উদ্ভিদ জন্মাবে
না। নাউযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ্ পাক আমাদের হাক্বীকি মুমিন হবার ও কবরের ভয়াবহ আযাব থেকে হেফাযত
থাকার তৌফিক দান করুন!আমীন আমীন আমীন....
No comments