সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোজা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য- পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোজা নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (১)

(সময়ের ভিন্নতার কারণে যদি ভিন্ন সময়ে ঈদ পালন ও রোজা শুরু করতে হয়,
তাহলে অবশ্যই দিনের পার্থক্যের কারণেও ভিন্ন দিনে ঈদ পালন করতে হবে এবং
রোজা শুরু করতে হবে)
সারা বিশ্বের প্রত্যেক অঞ্চল ও প্রত্যেক
দেশের স্থানীয় সময় ভিন্ন ভিন্ন তাই প্রত্যেক অঞ্চল ও দেশের লোকেরা তাদের স্থানীয় সময়
অনুযায়ী নামায, রোজা, ঈদ, ক্বুরবানী সহ অন্যান্য
ইবাদত বন্দেগী করে থাকে। তাই সময়ের ভিন্নতার কারণে নামায, রোজা,
ঈদ ইত্যাদি ইবাদত বন্দেগী তারা কখনো একই সময়ে, একই সাথে আদায় করতে পারেনা এবং তা কখনো সম্ভবও নয়। মূলত সময়ের পার্থক্যের কারণেই
দিনের পার্থক্য হয়। আর সময় ও দিনের পার্থক্য মূলত ভৌগলিক দূরত্বের কারণেই ঘটে থাকে।
এইগুলি একটা অন্যটার পরিপূরক। তাই সময়ের ভিন্নতকে গ্রহন করে যদি সারা বিশ্বে ভিন্ন
ভিন্ন সময়ে পবিত্র ঈদ পালন ও পবিত্র রোজা শুরু করা জায়েয হয় বা শুরু করতে হয়,
তাহলে সময়ের ভিন্নতার কারণে সারা বিশ্বে ভিন্ন ভিন্ন দিনেই পবিত্র ঈদ
পালন ও পবিত্র রোজা শুরু করা হাজার বার জায়েয এবং অবশ্যই ভিন্ন দিনেই পবিত্র ঈদ পালন
ও পবিত্র রোজা শুরু করতে হবে। এক সাথে একই দিনে কখনো ঈদ পালন ও রোজা শুরু করা যাবে
না। নচেৎ ঈদ ও রোজা কোনটাই আদায় হবে না বরং
অসময়ে ঈদ ও রোজা পালন করা জায়েয মনে করার কারণে কুফরী হবে এবং অসময়ে পবিত্র ঈদ ও রোজা
পালন কারীরা ফেৎনাবাজ ও মুরতাদ বলে সাব্যস্ত
হবে এবং মুরতাদের অন্যান্য হুকুমও তাদের উপর বর্তাবে। এটাই পবিত্র দ্বীন ইসলাম তথা
শরীয়ত উনার বিধান।
পর্ব-১
নতুন চাঁদ ও তার মনযিল সমূহের পরিচয় :
الأهلة جمع
هلال وهو أول حال القمر حين يراه الناس
يقال له هلال ليلتين من أول الشهر ثم يكون قمرا بعد ذلك
অর্থ: أهلة শব্দটি هلال শব্দের বহুবচন, এটা হলো সর্বপ্রথম
মানুষ যে চন্দ্র দেখে থাকে চন্দ্রের উক্ত অবস্থা। প্রত্যেক চন্দ্র মাসের প্রথম দুই
রাতকে হিলাল বলা হয়। তারপর উহাকে ক্বামার বলা হয়। (তাফসীরে মাফাতীহুল গইব ৫/২৮১)
ويقال سمي بدراً
لتمامه وامتلائه وكل شيء تم فهو
بدر
অর্থ: আর বলা হয়ে থাকে যে, চন্দ্রের পরিপূর্ণ
অবস্থাকে বদর বলা হয়। আর প্রত্যেক জিনিস যা পরিপূর্ণ তাকে বদর বলা হয়। (মাহাসিনুত্ব
তাবীল )
في البحر الكبير أن السنة الشرعية قمرية لا شمسية
অর্থ: “বাহরোল কাবীর” নামক কিতাবে রয়েছে নিশ্চয়ই ইসলামী শরীয়তে বৎসর গণনা করা হয়
ক্বমারী বা চন্দ্রের হিসাবে, সূর্যের হিসেবে গণনা করা হয় না। (মাহাসিনুত্ব তাবীল )
أنه سبحانه
وتعالى جعل الزمان مقدرا من أربعة أوجه السنة والشهر واليوم والساعة
অর্থ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সময়কে নির্ধারণ করেন চারটি পন্থায়, তা হলো বৎসর,
মাস, দিন, ঘন্টা। (তাফসীরে
মাফাতীহুল গইব ৫/২৮২)
ولو جعل القمرَ
مدوَّراً كالشمس أبداً لَم تُعرفِ المواقيتُ ولا السُّنونُ ولا الشهورُ.
অর্থ: যদি চন্দ্রটি সূর্যের মত সর্বদা গোল হতো তাহলে মাস, বৎসর,
সময় কিছুই জানা যেত না। (তাফসীরু ক্বুরআনিল আযীম আল মানসূব লিল ইমামিত্ব
ত্ববারানী )
فإن الشَّمسَ
تدورُ على الفَلَكِ كلِّه في ثلاثِمائة وخمسةٍ وستِّين يوماً ورُبع يومٍ، والقمرَ
يدورُ على الفَلَكِ كلِّه في ثَمانٍ وعشرين ليلةً، ويكون مستُوراً في ليلتين، ثم
يعودُ إلى ما كان، فيعرفُ الناسُ بذلكَ آجالَ عقودِهم، وأوقاتَ معاملاتِهم
وعبادتِهم، وسنينَ أعمارهم.
অর্থ: নিশ্চয়ই সূর্য তার নিজস্ব কক্ষ পথের প্রত্যেকটিতে তিনশত পয়ষট্টি দিনে এবং
একদিনের চার ভাগের একভাগ সময়ে পরিভ্রমণ করে।
আর চন্দ্র তার নিজস্ব কক্ষ পথের প্রত্যেকটিতে আটাশটি রাতে সম্পন্ন করে। আর দুই
রাতে সে গোপন থাকে তারপর সে তার নিজস্ব অবস্থানে
ফিরে আসে। ফলে মানুষ এর মাধ্যমে তাদের সময়ের দশকসমূহ এবং ইবাদত ও মুয়ামালাতের সময় জানতে পারে। (তাফসীরু ক্বুরআনিল আযীম আল মানসূব
লিল ইমামিত্ব ত্ববারানী )
ومنازل القمر
ثمانية وعشرون منزلا، أساميها معلومة عند العرب، تكون أربعة عشر منها ظاهرة أبدا،
وأربعة عشر منها غائبة أبدا، وكلما طلع واحد غاب واحد، والقمر ينزل كل ليلة منزلا
منها
অর্থ: চন্দ্রের আটাশটি মনযিল রয়েছে। আরবদের নিকট এই মনযিলগুলির নাম জানা থাকে।
তার মধ্যে চৌদ্দটি সর্বদা প্রকাশ্য থাকে আর চৌদ্দটি সর্বদা গোপন থাকে, কখনো যদি একটি
প্রকাশ পায় সাথে সাথে অন্যটি গোপন হয়ে যায়। চন্দ্রটি প্রতি রাতে তার এই মনযিলসমূহ থেকে
একটি মনযিলে অবতরণ করে। (তাফসীরে সাময়ানী ২/ ৩৬৭)
قال ابن قتيبة:
منازل القمر ثمانية وعشرون منزلاً من أول الشهر إلى ثماني وعشرين ليلة، ثم
يستسرُّ. وهذه المنازل هي النجوم التي كانت العرب تنسب إِليها الأنواء، وأسماؤها
عندهم: الشِّرََطان، والبُطَيْن، والثُّرَيَّا، والدَّبَرَان، والهَقْعة،
والهَنْعة، والذِّراع، والنَّثْرة، والطَّرْفُ، والجبهة، والزُّبْرة، والصَّرْفة،
والعَوَّاء، والسِّماك، والغَفْر، والزُّبَانَى، والإِكليل، والقلب، والشَّوْلَة،
والنعائم، والبلدة، وسعد الذَّابح، وسعد بُلَعْ، وسعد السُّعود، وسعد الأخبية،
وفَرْغ الدَّلو المقدَّم، وفرغ الدلو المؤخّر، والرّشاء وهو الحوت.
অর্থ: হযরত ইবনে ক্বুতাইবাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন মাসের প্রথম রাত থেকে
আটাশ রাত পর্যন্ত চন্দ্রের আটাশটি মনযিল রয়েছে। তারপর ইহা গোপন হয়ে যায়। আর এই মনযিলগুলিকে
আরবগণ নক্ষত্রের সাথে সম্পর্কযুক্ত গণনা করে। তাদের নিকট এই মনযিলগুলির নাম হলো শিরাত্বান, বুত্বাইন,
ছুরাইয়্যা, আদ্দাবারান, আল
হাক্বয়া’হ, আল হানয়া’হ, আজ জিরা’,
আন নাছরাহ, আত্ব র্ত্বফ, আল জাবহাহ্, আয যুবরাহ্, আছ ছরফাহ্,
আল আওয়্যাউ,আস সিমাক, আল
গাফ্র, আয যুবানা, আল ইকলিল, আল ক্বলব, আশ শাওলাহ্,আন নায়ায়িম,
আল বালদাহ, সা’দুয যাবিহ, সা’দুল বুলয়া, সা’দুস সুয়ূদ, সা’দুল
আখবিয়াহ্, ফারগুদ দালবিল মুক্বাদ্দাম, ফারগুদ
দালবিল মুয়াখখার, আর রাশাউ এটা হলো হুত। ( যাদুল মুইয়াছছার ফী
ইলমিত তাফসীর ২/ ৩১৭)
وَمَنَازِلُ الْقَمَرِ ثَمَانِيَةٌ وَعِشْرُونَ
مَنْزِلًا وَأَسْمَاؤُهَا: الشَّرْطَيْنُ، وَالْبُطَيْنُ، والثُّرَيَّاءُ،
وَالدُّبْرَانُ، وَالْهَقْعَةُ، وَالْهَنْعَةُ، وَالذِّرَاعُ، وَالنِّسْرُ،
وَالطَّوْفُ، وَالْجَبْهَةُ، وَالزُّبْرَةُ، وَالصِّرْفَةُ، وَالْعُوَاءُ،
وَالسِّمَاكُ، وَالْغَفْرُ، وَالزِّبَانِيُّ، وَالْإِكْلِيلُ، وَالْقَلْبُ،
وَالشَّوْلَةُ، وَالنَّعَايِمُ، وَالْبَلْدَةُ، وَسَعْدُ الذَّابِحِ، وَسَعْدُ
بَلْعٍ، وَسَعْدُ السُّعُودِ، وَسَعْدُ الْأَخْبِيَةِ، وَفَرْعُ الدَّلْوِ
الْمُقَدَّمِ، وَفَرْعُ الدَّلْوِ الْمُؤَخَّرِ، وَبَطْنُ الْحُوتِ.وَهَذِهِ
الْمَنَازِلُ مَقْسُومَةٌ عَلَى الْبُرُوجِ، وَهِيَ اثْنَا عَشَرَ بُرْجًا:
الْحَمَلُ، وَالثَّوْرُ، وَالْجَوْزَاءُ، وَالسَّرَطَانُ، وَالْأَسَدُ،
وَالسُّنْبُلَةُ، وَالْمِيزَانُ، وَالْعَقْرَبُ، وَالْقَوْسُ، وَالْجَدْيُ، وَالدَّلْوُ،
وَالْحُوتُ
অর্থ: চন্দ্রের আটাশটি মনযিল রয়েছে। মনযিলগুলির
নাম হলো শারত্বইন, বুত্বাইন, ছুরাইয়্যা, আদ্দুবরান,আল হাক্বয়া’হ, আল হানয়া’হ,
আজ জিরা’, আন নিছ্র, আত্ব
ত্বাওফ, আল জাবহাহ্, আয যুবরাহ্,
আছ ছিফরাহ্, আল উওয়্যাউ, আস সিমাক, আল গাফ্র, আয যিবানী,
আল ইকলিল, আল ক্বলব, আশ শাওলাহ্,
আন নায়ায়িম, আল বালদাহ, সা’দুয
যাবিহ, সা’দুল বালয়ি, সা’দুস সুয়ূদ,
সা’দুল আখবিয়াহ্, ফারউদ দালবিল মুক্বাদ্দাম,
ফারউদ দালবিল মুয়াখখার, বাত্বনুল হুত। এই মনযিলসমূহ
আবার বারটি বুরূজে বিভক্ত তাহলো ; আল হামালু, আছ ছাওরু, আল জাওজাউ, আস সারাত্বনু,
আল আসাদু, আস সুমবুলাতু, আল মীযানু, আল আক্বরাবু, আল ক্বওসু,
আল জাদ ইউ,আদ দালউ, আল হুত (তাফসীরুল বাগাবী ৪/ ১২১)
No comments