‘আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম’ নাম মুবারক উনার খুছূছিয়াত মুবারক এবং সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও জাদ্দাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বেমেছাল ফযীলত মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ
‘আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম’ সম্মানিত ও
পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক উনার অর্থ মুবারক হচ্ছেন- ‘মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ অনুগত
বান্দা, মাহবূব ব্যক্তিত্ব মুবারক, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব’। সুবহানাল্লাহ!
আরবী অভিধান ও নাহু-ছরফের বিশ্বখ্যাত ইমাম
মুহম্মদ ইবনে ক্বাসিম ইবনে মুহম্মদ ইবনে বাশ্শার আবূ বকর আম্বরী রহমতুল্লাহি আলাইহি
(বিছাল শরীফ: ৩২৮ হিজরী) তিনি ‘আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম’ নাম মুবারক উনার অর্থ মুবারক
বর্ণনা করতে যেয়ে বলেন,
اَلْعَبْدُ الْـخَاضِعُ لِلّٰهِ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগত বান্দা।”
সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১/২৪৪)
আর সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ
قَالَ قَالَ النَّبِـىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اَحَبَّ الْاَسْـمَاءِ
اِلَـى اللهِ عَبْدُ اللهِ وَعَبْدُ الرَّحْمٰنِ.
অর্থ: “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সর্বাধিক প্রিয় ও পছন্দনীয়
নাম মুবারক হচ্ছেন, আব্দুল্লাহ এবং আব্দুর রহমান।”
সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, সুনানে দারিমী শরীফ, আল আদাব লিইবনে
আবী শায়বাহ)
একদিক থেকে ‘আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম’
সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক উনার অর্থ মুবারক হচ্ছেন- ‘মহান আল্লাহ পাক উনার
খাছ অনুগত বান্দা, মাহবূব ব্যক্তিত্ব মুবারক, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব’। অপরদিকে সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক
উনার নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও পছন্দনীয় নাম মুবারক হচ্ছে, ‘আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান’। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম
বা নাম মুবারক ‘আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম’ হওয়ার মাধ্যম দিয়েই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়
যে,
সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান
মুবারক কত বেমেছাল। সুবহানাল্লাহ! তিনি যে মহান আল্লাহ পাক উনার আখাছ্ছুল খাছ মাহবূব
ব্যক্তিত্ব মুবারক ছিলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব
ছিলেন সেটা উনার ‘আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম’ সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারাক
দ্বারাই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ! যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত যাকারিয়া আলাইহিস
সালাম উনার শান মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেছেন,
ذِكْرُ رَحْمَتِ رَبّـِكَ عَبْدَهٗ زَكَرِيَّا
অর্থ: “আপনার রব মহান আল্লাহ পাক উনার
অনুগ্রহের বিবরণ, উনার আব্দ তথা খাছ অনুগত বান্দা, মাহবূব ব্যক্তিত্ব মুবারক হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম উনার
প্রতি।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা মারইয়াম শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১)
আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
قَالَ اِنّـِــىْ عَبْدُ اللهِ
অর্থ: “(হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম) তিনি
বলেন,
নিশ্চয়ই আমি ‘আব্দুল্লাহ’ তথা মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ
অনুগত বান্দা, মাহবূব ব্যক্তিত্ব মুবারক।” সুবহানাল্লাহ!
(সম্মানিত সূরা মারইয়াম শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ৩০)
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সম্মানিত শান মুবারক-এ ইরশাদ মুবারক করেন,
اَسْرٰى بِعَبْدِهٖ لَيْلًا.
অর্থ: “(মহান আল্লাহ পাক) তিনি উনার আব্দ
তথা হাবীব (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে
রাতের সামান্য সময়ের মধ্যে ইসরা তথা ভ্রমণ করিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত সূরা
বানী ইসরাঈল শরীফ : সম্মানিত আয়াত শরীফ ১)
আর এখান থেকে এই বিষয়টিও অত্যন্ত সুস্পষ্ট
যে,
মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং জাদ্দাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাত্বিমাহ বিনতে ‘আমর আলাইহাস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের
বেমেছাল সম্মানিত তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক থাকার কারণেই উনাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে, উনাদের মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিস সালাম উনার ‘আব্দুল্লাহ আলাইহিস
সালাম’ সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রাখা। সুবহানাল্লাহ!
এখন একটি বিষয় ফিকিরের যে, উনারা কিভাবে সেই সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রাখলেন।
এর মূল জাওয়াব হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে
সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুনা
হযরত জাদ্দাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের দায়িমীভাবে
বেমেছাল সম্মানিত তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক ছিলো। উনারা দায়িমীভাবে সম্মানিত ইলহাম-ইলক্বা
মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিলেন। যদিও উনাদের উপর সরাসির সম্মানিত ওহী মুবারক নাযিল
হয়নি;
কিন্তু উনারা ‘নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’
উনাকে ধারণ মুবারক করার কারণে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সারা কায়িনাতের সমস্ত
কিছু উনাদের কাছে সুস্পষ্ট ছিলো। কোনো কিছুই উনাদের সম্মানিত দৃষ্টি মুবারক উনার আড়ালে
ছিলো না। সুবহানাল্লাহ! উনারা সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত
ইলম মুবারক উনার অধিকারী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! আর উনাদের উপর যে সম্মানিত ইলহাম ও ইলক্বা
মুবারক হতো সেটা ছিলো সর্বোচ্চ স্তরের। উনাদের সেই সম্মানিত ইলহাম-ইলক্বা মুবারকও
ছিলো সম্মানিত ওহী মুবারক উনার অনুসরণে চির অকাট্য। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!
মূলত সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং জাদ্দাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাত্বিমাহ বিনতে ‘আমর আলাইহাস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা
সম্মানিত ইলহাম-ইলক্বা মুবারক ও সম্মানিত স্বপ্ন মুবারক-এ আদিষ্ট হয়ে উনাদের মহাসম্মানিত
প্রাণপ্রিয় আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ও
পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক ‘আব্দুল্লাহ আলাইহিস সালাম’ রেখেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
আর উনাদের সেই সম্মানিত ইলহাম-ইলক্বা মুবারক
ও স্বপ্ন মুবারক যে, সম্মানিত ওহী মুবারক উনার
অনুসরণে চির অকাট্য ছিলো, সেই বিষয়টি পরবর্তীতে নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্পষ্টভাবে সমস্ত
কায়িনাতবাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যে
ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
اِنَّ اَحَبَّ الْاَسْـمَاءِ اِلَـى اللهِ عَبْدُ اللهِ وَعَبْدُ
الرَّحْمٰنِ
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট
সর্বাধিক প্রিয় ও পছন্দনীয় নাম মুবারক হচ্ছেন আব্দুল্লাহ এবং আব্দুর রহমান।” সুবহানাল্লাহ!
(মুসলিম শরীফ, আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, সুনানে দারিমী শরীফ, আল আদাব লিইবনে
আবী শায়বাহ ইত্যাদি)
আর এই বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে যায়, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সম্মানিত আক্বীক্বা মুবারক করা এবং সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক
‘মুহম্মদ ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ রাখার মাধ্যমে। সুবহানাল্লাহ! যেটা কিতাবে
বর্ণিত রয়েছে,
فَلَمَّا كَانَ الْيَوْمُ السَّابِعُ ذَبَحَ عَنْهُ وَدَعَا
لَهٗ قُرَيْشًا فَلَمَّا اَكَلُوْا قَالُوْا يَا سَيِّدَنَـا حَضْرَتْ عَبْدَ الْمُطَّلِبِ
عَلَيْهِ السَّلَامُ اَرَاَيْتَ ابْنَكَ هٰذَا الَّذِىْ اَكْرَمْتَنَا عَلـٰى وَجْهِهٖ
مَا سَـمَّـيْـتَهٗ قَالَ سَـمَّـيْـتُهٗ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী
শান মুবারক প্রকাশের সপ্তম দিনে উনার সম্মানিত আক্বীক্বা মুবারক করেন এবং কুরাইশদেরকে
দাওয়াত মুবারক করেন। খাওয়া-দাওয়া শেষে সম্মানিত মেহমানগণ বললেন, হে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম! যে মহাসম্মানিত
সন্তান উনার সম্মানার্থে আজকের এই সম্মানিত মেহমানদারী মুবারক উনার আয়োজন, আপনি উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক কী রেখেছেন? সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি উনার সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক রেখেছি ‘মুহম্মদ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’।” সুবহানাল্লাহ! (খছাইছুল কুবরা শরীফ ১/৮৫, দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিলবাইহাক্বী শরীফ ১/১১৩, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া শরীফ ২/৩২৫, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ শরীফ ইত্যাদি)
সুতরাং সাইয়্যিদুনা জাদ্দু রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত জাদ্দাতু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের সম্মানিত ইলহাম-ইলক্বা মুবারক ও সম্মানিত স্বপ্ন
মুবারক যে সম্মানিত ওহী মুবারক উনার অনুসরণে চির অকাট্য ছিলো তা আর বলার অপেক্ষাই রাখে
না। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!
No comments