Header Ads

Islamic Quotes Urdu Facebook Cover. QuotesGram

আমরা কি জানি ‘ভাত’ একটি পবিত্র সুন্নতী খাবার ?




মহান আল্লাহ পাক হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দোয়ার প্রেক্ষিতে যখন আসমান থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা নাযিল করেছিলেন সেই খাঞ্চার মধ্যে ভাতও ছিলো। সুবহানাল্লাহ। তিনি দোয়া করেছিলেন,

اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ

অর্থ: হে মহান রব আল্লাহ পাক ! আপনি আসমান থেকে আমাদের জন্য খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা নাযিল করুন যেন সেই দিনটা আমাদের পূর্ববর্তী পরবর্তী সকলের জন্য ঈদের দিন হয় এবং আপনার তরফ থেকে সেটা একটা নিদর্শন হবে। (সূরা মা’য়িদা ১১৪)

উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফের তাফসিরে,

انزل علينا مائدة من السماء قال .........

انه كان خبزا وارز

আসমান থেকে খাদ্য ভর্তি খাঞ্চা নাযিল করুন.... সেখানে রুটি ও ভাত ছিলো। (তাফসিরে ইবনে আবি হাতিম ৪/১২৪৬)

উক্ত আয়াত শরীফ উনার তাফসিরে বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ তাফসিরে ইবনে আবি হাতিমে সনদ সহ একটি বর্ণনা উল্লেখ আছে,

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْحُسَيْنِ , ثنا مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ حَمْزَةَ , ثنا عَلِيُّ بْنُ الْحُسَيْنِ , عَنْ أَبِيهِ , عَنْ يَزِيدَ , عَنْ عِكْرِمَةَ , حَدَّثَهُ: أَنَّ الْخُبْزَ الَّذِي أُنْزِلَ مَعَ الْمَائِدَةِ كَانَ مِنْ أُرْزٍ

হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, দস্তরখানায় যে রুটি নাযিল হয়েছিলো তার সাথে ভাতও ছিলো।  (তাফসিরে ইবনে আবি হাতিম ৪/১২৪৬: হাদীছ শরীফ ৭০২৮)

সূতরাং বোঝা গেলো মহান আল্লাহ পাক আসমান থেকে যে খাবার পাঠিয়েছিলেন তার মধ্যে ভাতও ছিলো। رز শব্দে অর্থ হচ্ছে ভাত। এই ভাত স্বয়ং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে গ্রহন করেছেন।

পৃথিবীতে যত মুহাদ্দিছ ছিলেন তাদের মধ্যে প্রথম শ্রেনীর একজন মুহাদ্দিছ এবং চিশতিয়া খান্দানের বিখ্যাত ওলীআল্লাহ ও মুজাদ্দিদ হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজে ভাত খাওয়া সুন্নত এ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন এবং সে হাদীছ শরীফকে বিশুদ্ধ বা ছহীহও বলেছেন। উনার মালফুজাত সংকিলত একটি কিতাব হচ্ছে “ফাওয়ায়েদুল ফাওয়াদ” উক্ত কিতাবের ৪র্থ খন্ডের ৫৬ তম মজলিসে এ বিষয়ে উল্লেখ আছে,

ছাপ্পান্নতম মজলিস, সাবতি , ১১ই জিলহজ্ব, ৭১৮ হিজরী কদমবুসি হাসিল হলো। আমি আরজ করলাম, এ মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত আইয়্যামে তশরিকের কারণে রোজা রাখা যাবে না, কিন্তু আইয়্যামে বেজের  রোজা তো রাখা যেতে পারে, কেননা তা আইয়্যামে তশরিকের মধ্যে পড়ে না। তিনি বললেন, ১৬ তারিখ পর্যন্ত  রোজা রাখবে। হযরত ইমাম শাফি রহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে আইয়্যামে বেজের  রোজা প্রতি চন্দ্রমাসের ১৪, ১৫ ও ১৬ তারিখে রাখা হয়। এ সময়কাল আইয়্যামে বেজের হুকুম প্রদান করে। ১৪ ও ১৫ তারিখ কিন্তু এ মাসে ১৬ তারিখেও  রোজা রাখবে। এ সময় দরবার শরীফে খাবার আনা হলো যার মধ্যে ভাতও ছিলো। আমি বললাম যে, الارز مني এটা কি হাদীছ শরীফ? তিনি বললেন এটা বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ। তিনি এরপর বললেন একবার হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দস্তরখানায় কয়েক রকম খাবারের আয়োজন ছিলো এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারাও অংশগ্রহন করেছিলেন। যে যার পছন্দের খাবার নিজেদের দিকে টেনে নিচ্ছিলেন। কেউ বলেছিলেন, اللحم مني অর্থাৎ আমাকে গোশত দিন। কেউ বলছিলেন, الحواءج مني এমনি প্রত্যেকেই কিছু কিছু  বলছিলেন, অবশেষে হাবীবুল্লাহ হুযর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, الارز مني অর্থ: আমাকে ভাত দিন।”

সূতরাং প্রমাণিত হলো ভাত একটি সুন্নতী খাবার। মহান আল্লাহ পাকের  কাছে বেশুমার শুকরিয়া যে আমাদের বাঙালী জাতীর জাতীয় খাবার হচ্ছে ভাত। আমাদের বলা হয় মাছে ভাতে বাঙালী। মাছ খাওয়াও যেমন সুন্নত সেভাবে ভাত খাওয়াও পবিত্র সুন্নত। অর্থাৎ আমরা ৩ বেলা একটা সুন্নতী খাবার গ্রহনের মাধ্যমে আমাদের জীবন অতিবাহিত করে আসছি। সুবহানাল্লাহ।

স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ভাত খেয়েছেন। শুধুমাত্র ভাত খেয়েছেন তাই নয় বরং ভাতের ফযিলতও বর্ণনা করেছেন।

বিখ্যাত মুহাদ্দিছ মুহম্মদ ইবনে ইউছূফ ছলেহ আশ শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৯৪২ হিজরী) উনার বিখ্যাত কিতাব “সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ফি সিরাতে খাইরুল ইবাদ” গ্রন্থের ১২তম খ-ের ২২৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন,

رواه البيهقي في الشعب وأبو نعيم في الطب وعنه عليه الصلاة والسلام أنه قال: (سيد الأدام في الدنيا والآخرة اللحم) وعنه عليه الصلاة والسلام قال: (سيد طعام الدنيا والآخرة اللحم ثم الأرز).

অর্থ : ইমাম হযরত বায়হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শুয়াবুল ঈমান কিতাবে এবং ইমাম হযরত আবু নুয়াইম আসবাহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবুত ত্বীবে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, দুনিয়া ও আখিরাতে শ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে গোশত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেছেন, দুনিয়া ও আখিরাতের শ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে গোশত এরপর ভাত।”

          সুতরাং দেখা গেলো গোশতের পর ভাতের ফযীলতও বর্ণিত আছে। এবং এই ফযীলত মুবারক আরো বিস্তারিতভাবে বিখ্যাত আলেমে দ্বীন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুস সালাম ছাফুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ৮৯৪ হিজরী) তিনি উনার ‘নুযহাতুল মাজালিস’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন,

رأيت في كتاب شرعة الإسلام يستحب إكثار الصلاة على النبي عند أكل الأرز لأنه كان جوهرا في الجنة أودع الله فيه نور محمد صلى الله عليه وسلم فلما خرج منه النور تفتت فصار حبا وعن علي عن النبي صلى الله عليه وسلم كل شيء أخرجته الأرض داء وشفاء إلا الأرز فإنه شفاء لا داء فيه وعن علي في قوله تعالى لينظر أيها أزكى طعاما أنه الأرز في كتاب البركة عن النبي صلى الله عليه وسلم كلوا الأرز فإنه بركة

অর্থ : আমি ‘শারিয়াতুল ইসলামিয়া’ কিতাবে দেখেছি পছন্দনীয় কাজ হচ্ছে ভাত খাওয়ার সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বেশি পরিমাণ পবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করা, কারন এটা পাঠকারীর জন্য পবিত্র জান্নাতে মনিমুক্তা হিসাবে থাকবে। মহান আল্লাহ পাক সেখানে সম্মানিত নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জমা করে রাখবেন। অতঃপর সেখান থেকে নূর বের হবে তা মুহাব্বত আকারে বিচ্ছুরিত হতে থাকবে। হযরত আসাদুল্লাহিল গলিব, আহলু বাইতে রসূল্লিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সাইয়্যিদুনা কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, পৃথিবীর জমিনে যা কিছু উৎপন্ন হয় তার মধ্যে রোগও আছে সুস্থতাও আছে, একমাত্র ভাত ব্যতীত। ভাতের মধ্যে শুধুই শেফা রয়েছে কোন রোগ নেই। হযরত আসাদুল্লাহিল গলিব, আহলু বাইতে রসূল্লিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সাইয়্যিদুনা কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন, “সে (আছহাবে কাহাফের একজন) যেন দেখে কোন খাদ্য পবিত্র।” (সূরা কাহাফ আয়াত শরীফ নং ১৯) আর তা ছিলো ভাত। ‘কিতাবুল বারাকাতে’ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণিত আছে, তোমরা ভাত খাও নিশ্চয়ই এতে বরকত রয়েছে। (নুজহাতুল মাজালিস ১ম খ- ২৮৪ পৃষ্ঠা)

          বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ইমাম সাখাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আল মাকাসিদুল হাসানা’ কিতাবে ‘দুনিয়া ও আখিরাতে শ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে গোশত’ এ হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে এর সমর্থনে আরেকটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন,

وله شواهد ، منها عن علي رفعه بلفظ : سيد طعام الدنيا اللحم ، ثم الأرز ، أخرجه أبو نُعيم في الطب النبوي ، وعن صهيب بلفظ : سيد الطعام في الدنيا والآخرة اللحم ، ثم الأرز ، وسيد الشراب في الدنيا والآخرة الماء ، أخرجه الديلمي من جهة الحكم ، ثم من طريق هشيم عن عبد الحميد بن صيفي بن صهيب ، عن أبيه عن جده به مرفوعا ،

অর্থ : এর শাওয়াহেদ বা সমর্থিত আরেকটি বর্ণনা যা হযরত আসাদুল্লাহিল গলিব, আহলু বাইতে রসূল্লিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত সাইয়্যিদুনা কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ধিত শব্দে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে, দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে গোশত, অতঃপর ভাত। এটা ইমাম আবু ন্য়ুাইম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ত্বীব্বে নববী কিতাবে বর্ণনা করেছেন। হযরত ছুহাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে এই শব্দে বর্ণনা এসেছে, দুনিয়া ও আখিরাতে শ্রেষ্ঠ খাবার হচ্ছে গোশত এরপর ভাত। দুনিয়া ও আখিরাতে শ্রেষ্ঠ পানীয় হচ্ছে পানি। ইমাম দায়লামী রহমতুল্লাহি আলাইহি এটা হিকামের ছুরতে বর্ণনা করেছে। অতঃপর তা হিশামের সনদে তিনি আব্দুল হুমাইদ ইবনে ছাইফি ইবনে ছুহাইব থেকে, তিনি তার পিতা থেকে তিনি উনার দাদা থেকে মারফু সনদে বর্ণনা করেছেন। (মাকাসিদুল হাসানা ২৮৬ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: দারু কুতুব আল ইলমিয়া, বাইরুত- লেবানন)

          ভাত সংশ্লিষ্ট পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ থেকে যে বিষয় সমূহ প্রমাণিত হলো,

১) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে ভাত খেয়েছেন।

২) হযরত রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দোয়ার ফলে আসমান থেকে যে খাদ্য ভর্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্তি খাঞ্চা নাযিল হয়েছিলো সেখানেও ভাত ছিলো।

৩) আছহাবে কাহাফের জন্য যে খাবার আনতে বলা হয়েছিলো সেখানেও ভাত ছিলো।

৪) দুনিয়া ও আখিরাতে শ্রেষ্ঠ খাবার গোশত এরপরেই ভাত।

৫) ভাতের মধ্যে কোন রোগ নেই বরং শেফা রয়েছে।

৬) ভাতের মধ্যে বরকত রয়েছে।

৭) ভাত খাওয়ার সময় পবিত্র দরূদ শরীফ পাঠ করলে, পাঠকারীর জন্য তা জান্নাতে মনিমুক্তা হয়ে থাকবে। সুবহানাল্লাহ !

No comments

ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য।

  ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য। ডাল খাওয়ার ফলে কলব প্রসারিত হয় এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়। পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উ...

Powered by Blogger.