নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অবমাননার শাস্তিঃ
-----------------------------------------------------------------------------------
মদীনায় আবু ইফক নামে এক কুলাঙ্গার ছিল। সে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কুৎসামূলক কবিতা রচনা করে, তখন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিলে সালেম আমের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নামে একজন সাহাবী তাকে হত্যা করেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম-৪/২৮৫)
গুরফা বিন হারেস আল কিন্দী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নামের একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি এমন ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। যার সাথে এ চুক্তি ছিল যে, তার জান-মালের হিফাজতের দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধানের। বিনিময়ে সে ইসলামী রাষ্ট্রে কোষাগারে কর (জিজিয়া) জমা দিত। হযরত গুরফা বিন হারেস আল কিন্দী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু লোকটিকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। লোকটি জবাবে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে গালি দিল। হযরত গুরফা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু রেগে লোকটিকে সেখানেই হত্যা করে ফেলেন।
এ সংবাদ হযরত আমর বিন আস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর কাছে পৌঁছলে তিনি গুরফা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে বললেন, এ লোকের সাথেতো আমাদের অঙ্গিকার আছে। সে হিসেবে সে তো নিরাপত্তা পাওয়ার যোগ্য। আপনি তাকে হত্যা করলেন কেন?
গুরফা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু জবাব দিলেন- “তার সাথে আমাদের অঙ্গিকার একথার উপর নয় যে, সে আল্লাহ ও হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে গালাগাল দিবে আর আমরা তার হিফাজত করবো”। (হায়াতুস সাহাবা-২/৩৫১)
কুরআন হাদীস, সীরাত ও ঐতিহাসিক গ্রন্থ এবং মুজতাহিদ ইমামদের ইজমা তথা সর্বসম্মত মতানুসারে এ কথা প্রমানিত যে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে গালাগালকারী, কুৎসাকারী এবং মুরতাদের শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড।
আর উম্মতে মুহাম্মদীর বিগত চৌদ্দশত বৎসর যাবত কোন মুসলমান নবী অবমাননাকারীকে মুসলমানরা হত্যা না করে ছাড়েনি। কেননা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে গুস্তাখী করা মুরতাদ হওয়াকে আবশ্যক করে।
আল্লামা কাজী ইয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন একথার উপর ইজমা হয়েছে,
আল্লামা কাজী ইয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কুরআন হাদীস ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে কি কি হক রয়েছে তা প্রমানিত। এবং তাকে কতটুকু সম্মান-ইজ্জত দিতে হবে তা’ও সুনির্দিষ্ট। এ হিসেবে আল্লাহ পাক কুরআনে কারীমে হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়াকে হারাম করেছেন। আর উম্মত একথার উপর ইজমা তথা ঐক্যমত্বে পৌঁছেছেন যে, মুসলমানদের মাঝে যে উনার কুৎসা বলবে, কিংবা গালি দিবে তাকে হত্যা করা হবে। (সুবুলু হুদা ওয়ার রাশাদ-১২/২১, আশ শিফা-২/২১১)
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাম্বীহুল ওলাত ওয়াল আহকামের মাঝে আল্লামা তাক্বীউদ্দীন সুবকী রহমতুল্লাহি আলাইহি কিতাব “আসসাইফুল মাসলূল আলা মান সাব্বার রাসূল” কিতাব থেকে নকল করেন-
ইমামে খাতিমাতুল মুজতাহিদীন তাক্বীউদ্দীন আবুল হাসান আলী বিন আব্দুল কাফী আস সুবকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার “আসসাইফুল মাসলূল আলা মান সাব্বার হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” গ্রন্থে লিখেন যে, কাজী ইয়াজ বলেন, উম্মতের ইজমা একথার উপর যে, মুসলমানদের মাঝে যে ব্যক্তি হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে বেয়াদবী করবে, গালাগাল করবে তাকে হত্যা করা আবশ্যক। আবু বকর ইবনুল মুনজির বলেন, সমস্ত আহলে ইলম একথার উপর একমত যে, যে ব্যক্তি হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে গালাগাল করবে, বা মন্দ বলবে তাকে হত্যা করা ওয়াজিব।
ইমাম মালেক বিন আনাস, ইমাম আবুল লাইস, ইমাম আহমাদ এবং ইমাম ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহিম এ বক্তব্যের প্রবক্তা। আর এটাই ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি এর মাজহাব।
আল্লামা কাজী ইয়াজ বলেন, এমনিভাবে একই মত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হানাফী ফুক্বাহাদের, এবং ইমাম সাওরী, আহলে কুফা ও ইমাম আওজায়ী থেকে গুস্তাখে হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যাপারে এমনটিই বর্ণিত (তাদের হত্যা করা হবে)।
ইমাম মুহাম্মদ বিন সুহনুন বলেন, ওলামায়ে কেরাম হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে গালাগালকারী ও তার কুৎসাকারীদের কাফের হওয়ার উপর ইজমা তথা ঐক্যমত্ব হয়েছেন। আর এমন ব্যক্তির উপর আল্লাহর শাস্তি ও ধমক রয়েছে। আর যে ব্যক্তি এমন ব্যক্তির কাফের হওয়া ও শাস্তির অধিকারী হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করবে সেও কাফের।
আর ইমাম আবু সুলাইমান খাত্তাবী বলেন যে, আমি এমন কোন মুসলমানের ব্যাপারে জানি না যে, এমন ব্যক্তির হত্যার আবশ্যকতার ব্যাপারে মতবিরোধ করে। (রাসায়েলে ইবনে আবেদীন-১/৩১৬)
ইসলামের বিজয়ের যুগে যখন মুসলমানদের আইন-আদালত অমুসলিমদের প্রভাব-প্রতিপত্তি থেকে মুক্ত ছিল তখন এ ধরনের অপরাধী মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হত। এমনকি ইতিহাসে আছে যে, নবম শতকের মাঝামাঝিতে আন্দালুসে এক খ্রিস্টানের নেতৃত্বে কিছু লোক দলবদ্ধভাবে হুযুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবমাননায় লিপ্ত হয়েছিল। মুসলিম বিচারকরা সে সময় বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি। এদের মৃত্যুদন্ড দেওয়ার কারণে স্পেন থেকে এই ফিতনা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ( তারীখে ইসপানিয়া ১/২০০)
তাহলে বাংলাদেশে এই শাস্তি নেই কেন ???
___________________________________________________________________________________________________________
২৯ মাহে যিলহজ্জ শরীফ,
১৪৩৮
হিজরী
২৩ রবি’, ১৩৮৫ শামসি
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ঈসায়ী
ইয়াওমুল খম্স (বৃহস্পতিবার)
No comments