Header Ads

Islamic Quotes Urdu Facebook Cover. QuotesGram

প্রাণীর ছবির ক্ষেত্রে শরয়ী ফায়সালা --> পর্ব-৮ (চাকরি, ব্যবসা, লেখা-পড়া, পাসপোর্ট, ব্যাংক একাউন্ট, জমি রেজিস্ট্রী ইত্যাদির জন্য ছবি তোলার বিধান)


পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী করা, কারানো ও ছবি আঁকা, তোলা, তোলানো, রাখা, রাখানো, দেখা, দেখানো হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরয়ী ফায়সালা:

চাকরি, ব্যবসা, লেখা-পড়া, পাসপোর্ট, ব্যাংক একাউন্ট, জমি রেজিস্ট্রী ইত্যাদির জন্য ছবি তোলার বিধানঃ

কেউ কেউ বলে থাকে যে, ছবি তোলা হারাম এটা আমরা মানি ও বিশ্বাস করি তবে কথা হলো সরকার অনেক ক্ষেত্রেই আমাদেরকে ছবি তুলতে বাধ্য করে থাকে| যেমন চাকরি, ব্যবসা, লেখা-পড়া, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্যাংক একাউন্ট, জমি রেজিস্ট্রী ইত্যাদি কনেক ক্ষেত্রেই আমরা ছবি তুলতে বাধ্য| শরীয়তের ফায়সালা কি?

এর জবাবে বলতে হয় যে, ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন| এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ মুবারক করেন, “আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিলাম| তোমাদের উপর আমার নিয়ামত সমাপ্ত করলাম| আর ইসলামকেই তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করে সন্তুষ্ট রইলাম|”
দলীল- সূরা মায়িদা/৩

অর্থাৎ দ্বীন ইসলামে সব বিষয়ের ফায়সালাই রয়েছে| তাছাড়া মহান আল্লাহ্ পাক যে শুধু দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন তাই নয়| বরং এর সাথে সাথে দ্বীন ইসলামকে সহজও করে দিয়েছেন| এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
আল্লাহ্ পাক তোমাদের জন্য দ্বীনকে কঠিন করেননি|”

দলীল- সূরা হজ্জ/৭৮

অন্যত্র মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন,
আল্লাহ্ পাক তোমাদের জন্য সহজ চান, কঠিন চান না|”

দলীল- সূরা বাক্বারা/১৮৫

অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে,
দ্বীনের মধ্যে কোন প্রকার কাঠিন্যতা নেই|”

দলীল- সূরা বাক্বারা/২৫৬

আর পবিত্র হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে,

ان الدين يسر
অর্থাৎ, ‘দ্বীন বা শরীয়ত হচ্ছে সহজ|’

দলীল- ইয়ুসরুন

তাই ইসলাম কোন ক্ষেত্রেই যেমন বাড়াবাড়ি বা জোড় জবরদস্তী করেনি বা করার অনুমতিও দেয়নি তেমনিভাবে কঠিনও করেননি|
বরং সহজ করে দিয়েছে| যেমন- ফরয নামাযের সময় ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো হচ্ছে ফরয| এখন কেউ যদি এরূপ হয় যে, সে দাঁড়াতে সক্ষম নয় তার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়সালা কি? তার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়সালা হলো সে যদি দাঁড়াতে না পারে তবে সে বসে বসেই নামায আদায় করবে| যেহেতু সে দাঁড়ানোর ব্যাপারে মাজুর বা অক্ষম|

অনুরূপভাবে হারাম খাওয়া সকলের জন্যই হারাম| কিন্তু কেউ যদি “একাধারে তিনদিন না খেয়ে থাকে তার নিকট যদি কোন হালাল খাদ্য মওজুদ না থাকে তবে তার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি” তার ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা হলো- এমতাবস্থায় হারামটা তার জন্য মুবাহ হয়ে যায় জীবন রক্ষার্থে| এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন,

فَاتَّقُوا اللهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ
অর্থাৎ, “তোমরা আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর তোমাদের সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী|
দলীল- সূরা তাগাবুন/১৬
অর্থাৎ সাধ্যের বাইরে শরীয়ত কাউকে কোন আদেশ করেনি|

মহান আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,

لاَ يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا اِلاَّ وُسْعَهَا
অর্থাৎ, আল্লাহ পাক কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেন না|

দলীল- সূরা বাক্বারা/২৮৬

আর উছুলের কিতাবে উল্লেখ আছে,
الضرورة تبيح الـمحذورات
অর্থাৎ, জরুরত হারামকে ‘মুবাহ’ করে দেয়|

দলীল- উছূলে বাযদূবী, উছূলে কারখী

শরীয়তের পরিভাষায় এরূপ অবস্থাকে ‘মাজুর বা অপরাগতা’ বলা হয়| ফিক্বাহ-এর কিতাবসমুহে এরূপ অসংখ্য মা’জুর এর মাসয়ালা বর্ণিত রয়েছে|

চাকরি-ব্যবসাঃ

এখন চাকরি-ব্যবসা একটি জরুরী বিষয়| কারণ বেঁচে থাকতে হলে খেতে হবে| অর্থাৎ প্রত্যেককে বাঁচার জন্য তার জীবন রক্ষা করা হচ্ছে ফরয| আর সে জন্য হালাল রিযিক তালাশ করা বা কামাই করাও ফরয|
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,

فَاِذَا قُضِيَتِ الصَّلٰوةُ فَانْتَشِرُوْا فِى الْاَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللهِ.
অর্থাৎ, “নামায শেষ করে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহ পাক উনার ফযল তথা হালাল রিযিক অন্বেষণ কর|”

দলীল- সূরা জুমুয়া/১০

আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم طلب كسب الحلال فريضة بعد الفريضة.
অর্থাৎ, হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, (পুরুষের জন্য) অন্যান্য ফরযের পর হালাল কামাই করাও ফরয|

দলীল- বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান, মিশকাত-২৪২ পৃঃ

এখন কারো জন্য যদি হালাল কামাই করতে গিয়ে চাকরি-ব্যবসা করতেই হয়| তবে তাকে প্রথমতঃ কোশেশ করতে হবে ছবি ছাড়া চাকরি ও ব্যবসা করার| যদি ছবি ছাড়া চাকরি-ব্যবসার কোন ব্যবস্থা না হয় তবে সেক্ষেত্রে মা’জুর বা অপারগ হিসেবে চাকরি বা ব্যবসার ক্ষেত্রে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই ছবি তুলতে পারবে| তবে অবশ্যই তাও হারাম জেনেই তুলতে হবে|

পাসপোর্টঃ

যদি কারো পক্ষে দেশে থেকে জরুরত আন্দাজ হালাল কামাই করা সম্ভব না হয় এবং কেউ এরূপ অসুস্থ হয় যে- দেশে তাকে চিকিৎসা করে ভাল করা সম্ভব নয় বিদেশে নিলে ভাল হবে এক্ষেত্রে মা’জুর হিসেবে ছবিসহ পাসপোর্ট করে বিদেশ যেতে পারবে| এছাড়া ভ্রমণ বা জরুরত ব্যতীত অন্যকোন কারণে ছবিসহ পাসপোর্ট করা জায়িয নেই|

ড্রাইভিং লাইসেন্সঃ

যানবাহন বর্তমানে একটি জরুরী বিষয়| আর ড্রাইভার ব্যতীত যান বাহনের কোন চিন্তাই করা যায় না| তাছাড়া অনেকের জন্য ড্রাইভিং পেশাটাও যেহেতু হালাল কামাইয়ের একটি অন্যতম মাধ্যম তাই এক্ষেত্রে মা’জুর হিসেবে লাইসেন্স এর জন্য ছবি তোলা মুবাহ|

ব্যাংক একাউন্টঃ

যদি কারো জন্য টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার, নিজ ঘরে রাখা নিরাপদ মনে না হয়| বরং চুরি-ডাকাতির আশঙ্কা থাকে তবে এক্ষেত্রেও ছবিসহ ব্যাংক একাউন্ট করা মা’জুর হিসেবে মুবাহ হবে|

জমি রেজিস্ট্রীঃ

জমি ক্রয় বিক্রয়ের বিষযটিও ক্ষেত্র বিশেষে জরুরী| কাজেই যদি কারো জন্য জমি ক্রয় করা বিক্রয় করা অপরিহার্য হয়েই পরে তবে সেক্ষেত্রে মা’জুর হিসেবে ছবিসহ জমি ক্রয় বিক্রয় করতে পারবে|

লেখা-পড়াঃ

যেহেতু জরুরত আন্দাজ ইলমঅর্জন করা সকলের জন্য ফরয| তার পাশাপাশি হুনর বা দুনিয়াবী জ্ঞানঅর্জন করাও জরুরী বিধায় উল্লিখিত ক্ষেত্রে ছবি তোলার ব্যাপারে সকলে মা’জুর| তবে ছবি ছাড়া পড়া-শুনা করার যদি কোন সুযোগ থাকে তবে সেক্ষেত্রে ছবিসহ পড়া-শুনা করা জায়িয হবে না|

মূলতঃ উল্লিখিত প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা মা’জুর| যেহেতু আমাদের দেশে খিলাফত জারী নেই| গণতান্ত্রিক সরকার জোড় পূর্বক অনেক শরীয়ত বিরোধী আদেশ আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে থাকে| যেমন ছবি চাপিয়ে দিয়েছে| এক্ষেত্রে জরুরতে মা’জুর হিসেবে যারা ছবি তুলবে কোন গুণাহ হবে না বরং এ সমস্ত গুনাহের দায়-দায়িত্ব সরকারের উপরই বর্তাবে| কেননা হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,

عنْ جرير رَضِى الله تَعَالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بـها من بعدهومن سن فى الاسلام سنة سيئة كان عليها وزرها ووزر من عمل بـها من بعده.
অর্থঃ- “হযরত জারীর বিন আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত| সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে কেউ ইসলামে কোন উত্তম পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়তসম্মত) তার জন্যে তিনি ছওয়াব পাবেন এবং তারপর যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে তার ছওয়াবও তিনি পাবেন| … আবার যে কেউ দ্বীন ইসলামে কোন শরীয়ত বিরোধী পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে, তার গুনাহ সে পাবে এবং তার পরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে তাদের গুনাহও তার আমলনামায় দেয়া হবে|”

দলীল- মুসলিম শরীফ

তাই সরকারের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হবে উল্লিখিত প্রতিটি ক্ষেত্রে ছবিকে বাদ দেয়া| যেহেতু শরীয়তে ছবি তোলা বা তোলার শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ| কাজেই ৯৭% মুসলমানের এদেশে শরীয়ত বিরোধী ও গুনাহের কাজ মুসলমানদের উপর জোর পূর্বক চাপিয়ে দেয়া সরকারের উচিত হবে না| যেখানে পরিচয় বা সনাক্ত করণের জন্য ছবি ছাড়া বৈধ আরো পদ্ধতি রয়েছে- যেমন ফিঙ্গার প্রিন্ট| সেখানে ছবিকে বাধ্যতামূলক করা হারাম ও কুফরী হবে|

আইডি কার্ডের জন্য ছবি তোলার শরয়ী বিধানঃ

সাধারণভাবে কোন প্রকার আইডি কার্ড বা পরিচয় পত্রের জন্যই ছবি তোলা জায়িয নেই| ভোটার আইডি কার্ড ও ন্যাশনাল আইডি কার্ডের জন্যও ছবি তোলা জায়িয নেই| কারণ এগুলো কোনটাই জরুরতের মধ্যে পড়ে না| কাজেই সাধারণভাবে এক্ষেত্রে মা’জুরের মাসয়ালাও গ্রহণযোগ্য নয়|

তবে হ্যাঁ সরকার বা কোম্পানী অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ যদি জোরপূর্বক ছবিসহ পরিচয় পত্র করতে বাধ্য করে আর পরিচয় পত্র না করলে যদি চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে সেক্ষেত্রে সে মা’জুর বলে গণ্য হবে|

ছবি সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য খন্ডনঃ

আইডি কার্ডের জন্য ছবিকে বৈধ করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা শরীয়তের দৃষ্টিতে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়| বরং সম্পূর্ণ মনগড়া ও দলীলবিহীন| তারা প্রথম যে যুক্তি দিয়েছে তা হলো-
যদি হজ্জের জন্য ছবি তোলা যায় তবে আইডি কার্ডের জন্য যাবে না কেন? তাদের এ বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, “হজ্জের জন্য ছবি তোলা যাবে বা জায়িয” এটা তারা কোথায় পেল? তারা কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ থেকে দলীলও কি পেশ করতে পারবে যে, হজ্জের জন্য ছবি তোলা জায়িয| কস্মিনকালেও তারা তা পারবে না| আর বিনা দলীলে কোন কথাই ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়| কাজেই, নির্বাচন কমিশনের উক্ত বক্তব্য ভুল ও বাতিল বলে প্রমাণিত হলো|


উল্লেখ্য, হজ্জের জন্যও যে ছবি তোলা কুরআন শরীফ-সুন্নাহ শরীফ-এর দৃষ্টিতে জায়িয নেই তার দলীল ভিত্তিক আলোচনা সামনে আসবে ইনশাআল্লাহ্|

No comments

ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য।

  ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য। ডাল খাওয়ার ফলে কলব প্রসারিত হয় এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়। পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উ...

Powered by Blogger.