প্রাণীর ছবির ক্ষেত্রে শরয়ী ফায়সালা --> পর্ব-৯ (শরীয়তের দৃষ্টিতে টেলিভিশন দেখা ও টেলিভিশনে প্রোগ্রাম করার শরয়ী ফায়সালা)
পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী
করা, কারানো ও ছবি আঁকা, তোলা,
তোলানো, রাখা,
রাখানো, দেখা,
দেখানো
হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরয়ী ফায়সালা:
► শরীয়তের দৃষ্টিতে টেলিভিশন দেখা ও টেলিভিশনে প্রোগ্রাম করার
শরয়ী ফায়সালাঃ
ইসলামী শরীয়তের ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া মতে, টেলিভিশনে প্রাণীর ছবি ভিত্তিক যেকোন প্রোগ্রাম দেখা ও ইসলামী
বা অনৈসলামিক যেকোন প্রোগ্রাম করা সম্পূর্ণরূপেই হারাম ও নাজায়িয| কোন কোন জাহিল ও গোমরাহ লোক বলে থাকে যে, টেলিভিশন “আয়নার মত” আয়নায় যা দেখা জায়িয টেলিভিশনেও
তা দেখা জায়িয| নাউযুবিল্লাহ্| আবার কেউ কেউ বলে, টেলিভিশনে পূর্বে ধারণকৃত অনুষ্ঠান করা ও দেখা
হারাম| কারণ তা ছবি বা ফটোর অন্তর্ভূক্ত| আর যে সকল অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হয়
তা দেখা বা করা হারাম নয়| কারণ তা ছবি বা ফটোর
পর্যায় পড়ে না|
মূলতঃ টেলিভিশন ও ছবি সম্পর্কে আশাদ্দুদ দরজার জাহিল হওয়ার কারণেই তারা এরূপ জিহালতপূর্ণ
মন্তব্য করে থাকে| এ ব্যাপারে সকলেই
একমত যে, টেলিভিশনের পর্দায় যা দেখা
যায় তা ধারণকৃত হোক বা সরাসরি সম্প্রচারিত হোক প্রত্যেকটাই ‘ছবি’| কেননা ছবির সংজ্ঞায় উল্লেখ আছে যে, “আলোর প্রতিফলণ বা প্রতিসরণ” ব্যতীত অন্য যে কোন
পদ্ধতিতেই হোক না কেন, যদি কোন বস্তু বা
জীব যে কোন স্থানে আকার আকৃতিতে দৃশ্যমান হয়,
তবে
সেই আকার আকৃতিটিকে শরীয়তেরে দৃষ্টিতে উহার ছবি বলে| পক্ষান্তরে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন বস্তু বা জীব যেখানেই যে অবস্থায়ই
থাকুক, আলোর প্রতিফলণ বা প্রতিসরণ
বা উভয়ের মাধ্যমে যদি তা যে কোন স্থানে আকার আকৃতিতে দৃশ্যমান হয় তবে সেই আকার আকৃতিটি
ছবি নয়|
আর টেলিভিশনে প্রদর্শিত দৃশ্যাবলী যে ছবি তা নিন্মোক্ত বর্ণনা দ্বারাই প্রমাণিত
হয়-
► টেলিভিশন (Television)ঃ
টেলিভিশনের মাধ্যমে শব্দ শোনার সাথে সাথে বস্তুর ছবি দেখতে পাওয়া যায়| বৃটিশ বিজ্ঞানী লজি বেয়ার্ড ১৯২৩ সালে প্রথম
টেলিভিশন আবিষ্কার করে| ১৯৪০ সালে টি.ভি
বর্তমান অবস্থায় উন্নত হয়| T.V /
Closed Circuit T.V / Video Cassette Recorder / Video Cassette player ইত্যাদির কার্যাবলীকে
তিনভাগে ভাগ করা যায়| যথাঃ-
(১) Transmission বা প্রেরন,
(২) Medium বা মাধ্যম,
(৩) Reception বা গ্রহন|
T.V এবং V.C.R বা V.C.P
এর
ক্ষেত্রে প্রথমে কোন বস্তুর ছবি তুলে সেই ছবির বিভিন্ন অংশের, আর Closed
circuit T.V এর ক্ষেত্রে কোন বস্তুর সরাসরি বিভিন্ন অংশের প্রতিফলিত ফোটনের Frequency অনুযায়ী এক ধরনের Electrical Signal তৈরী হয়| সেই Signal
কে
আরও Processing এর পর Transmit করা হয়| T.V. এর ক্ষেত্রে Transmit করা হয় বাতাসে| আর V.C.R
এবং
Closed Circuit T.V এর ক্ষেত্রে তারের
মধ্যে| মাধ্যম বাতাসই হোক আর তারই
হোক সেটা Receiver (অর্থাৎ T.V.) এ যখন আসে তখন সেটা Receive করার পর কিছু Processing করা হয়, এই Signal
গুলো
T.V. তে অবস্থিত একটি Electronic Gun কে নিয়ন্ত্রন করে| ফলে এই Gun টি T.V. এর পর্দার যে অংশে
যতটুকু Electron ছাড়লে হুবহু Transmit করা ছবির মত হবে সে অংশে
ততটুকু ইলেকট্রন ছাড়ে| এই Electron গুলো রাসায়নিক প্রলেপ পতিত
হয়ে উজ্জল ও অনুজ্জল বিন্দুর সমন্বয়ে ছবি তৈরী করে| এই ছবি T.V.
এর
পর্দায় দেখা যায়| অর্থাৎ T.V. / V.C.R. / V.C.P. / Closed Circuit T.V সবক্ষেত্রেই পর্দায়
যা আসছে সেটা সুস্পষ্ট এবং বিশেষভাবে অঙ্কিত ছবি|
কাজেই, টেলিভিশন আয়নার মত
এবং টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত দৃশ্যাবলী ছবি নয় তাদের একথা সম্পূর্ণ ভুল ও শরীয়ত
বিরোধী| মূলতঃ তারা টেলিভিশনে কিভাবে
ছবি আসে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান না থাকার কারণেই বিভ্রান্তিতে পড়েছে|
টেলিভিশন, ভি.সি.আর, ভি.ডি.ও ইত্যাদির মূলেই হচ্ছে ছবি আর শরীয়তের
দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবি তোলা, তোলানো, দেখা,
দেখানো
সম্পূর্ণরূপে হারাম|
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, টেলিভিশনের মূলই হচ্ছে ছবি| ছবি ছাড়া টেলিভিশন চিন্তাই করা যায় না| অর্থাৎ ধারণকৃত হোক বা সরাসরি সম্প্রচারিত হোক
প্রত্যেকটাই ছবি| অথচ ইসলামী শরীয়তের
দৃষ্টিতে যে কোন প্রাণীর ছবি তোলা,
তোলানো, আঁকা-আকানো, রাখা-রাখানো,
দেখা-দেখানো
চাই তা হাতে আঁকা ছবি হোক বা ক্যামেরায় তোলা ছবি হোক সম্পূর্ণরূপেই হারাম ও নাজায়িয| যারা তুলবে বা তোলাবে এবং দেখবে বা দেখাবে তারা
প্রত্যেকেই কবীরা গুণাহে গুণাহগার হবে|
যা
ছহীহ্ হাদীছ শরীফ, হাদীছ শরীফের শরাহ্, মশহুর ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ রয়েছে|
যা ইতোমধ্যেই ৩য় পর্ব-
http://13abdullah.blogspot.com/2015/09/blog-post_54.html
৪র্থ পর্ব-
http://13abdullah.blogspot.com/2015/09/blog-post_72.html
৬ষ্ঠ পর্বে-
http://13abdullah.blogspot.com/2015/09/blog-post_42.html
দলীলভিত্তিক আলোচনা করা হয়েছে,
যদ্বারা
অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, টেলিভিশন, ভি.সি.আর, ভিডিও ইত্যাদির মূলই হচ্ছে ছবি| আর শরীয়তে প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা,
দেখা, সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয| অতএব প্রাণীর ছবি ভিত্তিক টেলিভিশন, ভি.সি.আর ভিডিও ইত্যাদি দেখা ও রাখাও শরীয়তের
দৃষ্টিতে হারাম ও নাজায়িয|
► টেলিভিশন হারাম হওয়ার মূলে প্রাণীর ছবি তো রয়েছেই, সাথে সাথে বেপর্দা ও অশ্লীলতার কারণেও টেলিভিশন
দেখা, রাখা হারামঃ
টেলিভিশন ও টিভি চ্যানেলগুলো বেপর্দা ও অশ্লীলতা বিস্তারের একটি অন্যতম মাধ্যম| অথচ বেপর্দা ও অশ্লীলতা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম
ও নাজায়িয| পবিত্র কুরআন শরীফে
“সূরা নিসা, সূরা নূর ও সূরা
আহযাব” ইত্যাদি সূরাসমূহে এবং অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফে পর্দা করার ব্যাপারে কঠোর
আদেশ-নির্দেশ করা হয়েছে| যেমন মহান আল্লাহ্
পাক ইরশাদ মুবারক করেন,
“(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মু’মিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের
ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে| এটা তাদের জন্য পবিত্রতার
কারণ| নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তারা
যা করে তার খবর রাখেন| আর আপনি মু’মিনাদেরকে
বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত
রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে ও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে|”
√ সূরা নূর/৩০,
৩১
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن برىدة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله علىه وسلم لعلى ىا على لاتتبع النظرة النظرة فان لك الاولى ولىست لك الا خرة
অর্থঃ- “হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত| তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, দৃষ্টিকে অনুসরণ করবেন না| প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা)
ক্ষমা করা হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি
ক্ষমা করা হবে না|”
দলীল-
√ আহমদ,
√ তিরমিযী,
√ আবু দাউদ,
√ মিশকাত|
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن الحسن مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله علىه وسلم قال لعن الله الناظر والمنظور الىه
অর্থঃ- “হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, আমার নিকট এই হাদীছ শরীফ পৌছেছে, যে দেখে এবং দেখায় তার প্রতি আল্লাহ্ পাক উনার
লা’নত|”
দলীল-
√ বায়হাক্বী,
√ মিশকাত|
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা সরাসরি পর্দাকে
ফরয করে দিয়েছেন| শুধু তাই নয় বরং
চোখের দৃষ্টিসহ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হিফাযত করে পর্দা করতে বলেছেন|
স্মরণীয় যে, গবেষণা করে দেখা
গেছে যে, “প্রত্যেক মানুষ পুরুষ কিংবা
মহিলা হোক, সে প্রতি দু’সেকেন্ডে
পাঁচটি করে চোখের পলক বা দৃষ্টি ফেলে থাকে|
হিসেবে
প্রতি মিনিটে ১৫০টি পলক বা দৃষ্টি করে থাকে|
আর
ঘন্টা হিসেবে প্রতি ঘন্টায় ৯০০০ (নয় হাজার) পলক বা দৃষ্টি করে থাকে| সে হিসেবে বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের
প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের উভয়ের প্রতি এক মিনিটে তিনশ’টি এবং এক ঘন্টায় আঠারো
হাজার কবীরা গুনাহ্ লিখা হয়| এ হিসাব একজন পুরুষ
ও একজন মহিলার ক্ষেত্রে| আর যদি কোন মিটিং
মিছিলে উপস্থিত মহিলা-পুরুষের পরস্পর পরস্পরের দৃষ্টির হিসাব করা হয় তাহলে গুনাহের
পরিমাণ আরো বহুগুন বৃদ্ধি পাবে| ধরা যাক, কমপক্ষে মিটিং-মিছিরের সময় ৩ ঘন্টা আর পুরুষ
ও মহিলার সংখ্যা ১০০+১০০= ২০০ জন|
এখন
একজন পুরুষ ও একজন মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি করার কারণে এক ঘন্টায় আঠারো
হাজার কবীরাহ গুনাহ হয় তাহলে একশ কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে ৩৬ লক্ষ এবং তিন ঘন্টায় হবে
১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ্|
অথচ একজন মানুষ যদি একশ বছর হায়াত পায়|
মহান
আল্লাহ্ পাক না করুন সে যদি নামায,
রোযা, হজ্জ,
যাকাত
(ফরয হওয়া সত্ত্বেও) কিছুই না করে তারপরও ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ হবেনা| যেমন,
একশ
বছরে অর্থাৎ জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয তা না করার কারণে ১টা কবীরা গুনাহ| যাকাত একশ বছরে একশটা ফরয তা না দেয়ার কারণে
১০০টা কবীরা গুনাহ| রোযা ২৯ বা ৩০ টা| হিসাবের সুবিধার্থে ৩০টা ধরে নেয়া হয় তা না রাখার
কারণে একশ বছরে ৩০০০ কবীরা গুনাহ|
এরপর
নামায দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ৫টা,
এক
ওয়াক্ত ওয়াজিব ১টা, সুন্নতে মুয়াক্কাদা-
ফজরের ফরযের পূর্বে ১টা, যুহরের ফরযের
আগে-পরে ২টা, মাগরিবের ফরযের পর
১টা, ইশার ফরযের পর ১টা, মোট ৫টা, তা আদায় না করার কারণে সবমিলে দৈনিক ১১টা কবীরা গুনাহ| বছরে ত্রিশ তারাবীহ (সু্ন্নতে মুয়াক্কাদা) তা
আদায় না করার কারণে ৩০টা এবং দু’ঈদ (ওয়াজিব) তা আদায় না করার কারণে ২টা মোট ৩২টা কবীরা
গুনাহ| এক বছরে নামায- ৪৪৭০০, যাকাত- ১০০, রোযা- ৩০০০,
হজ্জ-
১টা, সর্বমোট ৪৭৮০০১টা|
অর্থাৎ একশ বছর কোন ব্যক্তি নামায,
রোযা, হজ্জ,
যাকাত
না করলে তার সর্বোচ্চ কবীরা গুনাহর পরিমাণ হলো মাত্র চার লাখ সাত হাজার আটশ একটা|
আর একজন পুরুষ কিংবা মহিলা যদি এমন কোন স্থানে অবস্থান করে যেখানে পুরুষ বা মহিলার
সংখ্যা কমপক্ষে একশ’ জন এবং সেখানে একঘন্টা অবস্থান করে তাহলে শুধু চোখের দৃষ্টির কারণে
তার কবীরা গুনাহর পরিমান হবে আঠারো লক্ষ|
আর
লোক সংখ্যা বেশী হলে এবং বেশী সময় অবস্থান করলে কত লক্ষ-কোটি কবীরা গুনাহ হবে তা বলার
অপেক্ষা রাখে না| তাহলে পর্দার কত
গুরুত্ব রয়েছে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়|
কাজেই যারা টিভি দেখে বা টিভিতে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে বেপর্দা হচ্ছে, তারা দৈনিক যে কত কোটি কোটি কবীরা গুনাহ করে
থাকে তা মহান আল্লাহ্ পাক উনিই বেহতর জানেন|
এটাতো শুধু চোখের গুণাহর কথা বলা হলো|
এমনিভাবে
প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা গুনাহ হয়ে থাকে|
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هرىرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله علىه وسلم العىنان زناهما النظر والاذنان زناهما الا ستماع والرجل زناها الخطى والقلب ىهوى وىتمنى وىصدق ذلك الفرج وىكذ به
অর্থঃ- “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
“চোখের
ব্যভিচার হলো দৃষ্টি করা, কানের ব্যভিচার হলো
শ্রবণ করা, মুখের ব্যভিচার হলো
কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ
করা, পায়ের ব্যভিচার হলো ধাবিত
হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে
এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে|”
দলীল-
√ পবিত্র বুখারী শরীফ,
√ পবিত্র মুসলিম শরীফ,
√ কানযুল উম্মাল|
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
الد ىوث لاىدخل الجنة
অর্থঃ- “দাইয়্যূছ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবেনা|”
দাইয়্যূছ ঐ ব্যক্তি যে নিজে পর্দা করেনা এবং তার অধীনস্ত মহিলাদেরও পর্দা করায়না|
দলীল-
√ মুসনাদে আহমদ|
অর্থাৎ যারা বেপর্দা হয়ে থাকে পবিত্র হাদীছ শরীফের বর্ণনা মুতাবিক তারা সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের
দ্বারা অবৈধ কাজ তথা ব্যভিচারে মশগুল বা লিপ্ত হয়|
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে,
পর্দা
করা ফরযে আইন| আর বেপর্দা হওয়া
হারাম| প্রতি দৃষ্টিতে একটি করে
কবীরা গুণাহ| আর টেলিভিশন হচ্ছে
সেই বেপর্দা, অশ্লীলতা ও কবীরা
গুনাহ-এর অন্যতম মাধ্যম| তাহলে টেলিভিশন কি
করে শরীয়তে জায়িয হতে পারে?
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, বেপর্দা ও অশ্লীলতা বিস্তারকারী টিভি, ভিসিপি, ভিডিও, সিসিটিভি, সিনেমা দেখা ও রাখা হারাম ও নাজায়িয|
► টেলিভিশন হারাম হওয়ার অরেকটি কারণ হচ্ছে গান-বাজনাঃ
টেলিভিশন বা টিভি চ্যানেলগুলোতে ২৪ ঘন্টাই গান-বাজনা হয়ে থাকে| অথচ ইসলামী শরীয়তে গান-বাজনা করা ও শুনা সম্পূর্ণ
হারাম ও নাজায়িয| পবিত্র কুরআন শরীফ
ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অসংখ্য স্থানে গান-বাজনা সম্পর্কে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে| যেমন- পবিত্র কুরআন শরীফে “সূরা লোকমানের” ৬নং
আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ মুবারক করেন,
ومن الناس من يشترى لهو الحديث ليضل عن سبيل الله بغير علم و يتخذها هزوا اولئك لهم عذاب مهين.
অর্থঃ- “মানুষের মধ্যে কিছু লোক রয়েছে|
যারা
لهو الحديث “লাহ্ওয়াল হাদীস” খরীদ করে থাকে| যেন বিনা ইল্মে মানুষদেরকে আল্লাহ্ পাক উনার
পথ থেকে বিভ্রান্ত করে এবং হাসি-ঠাট্টারূপে ব্যবহার করে, তাদের জন্যে অপমানজনক শাস্তি রয়েছে|”
অসুস্বরণীয় মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিগণ এ আয়াত শরীফে বর্ণিত لهو الحديث দ্বারা “গান-বাজনাকে” সাব্যস্ত
করেছেন|
যেমন বিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইবনে কাছীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার “তাফসীরে
ইবনে কাছীরের” ৮ম খন্ড, ৩-৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ
করেন,
قال ابن مسعود فى قوله تعالى ومن الناس من يشترى لهو الحديث ....... قال هو والله الغناء ....... وكذا قال ابن عباس وجابر وعكرمة وسعيدين جبير ومجاهد و مكحول وعمربن شعيب وعلى بن بذيمة وقال حسن البصرى نزلت هذه الاية فى الغناء والمزامير.
অর্থঃ- “বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু لهو الحديث -এর ব্যাখ্যায় বলেন, “আল্লাহ্ পাক উনার কসম! لهو الحديث হচ্ছে- “গান-বাজনা” বা সঙ্গিত|” ...... হযরত ইবনে আব্বাস, হযরত জাবের, হযরত ইকরামাহ,
হযরত
সাঈদ বিন জুবাইর, হযরত মুজাহিদ, হযরত মাকহুল, হযরত আমর ইবনে শোয়াইব ও হযরত আলী ইবনে বোযায়মা রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুমা এ ব্যাখ্যাই করেছেন| আর বিশিষ্ট তাবেয়ী
হযরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
উক্ত
আয়াত শরীফ গান ও বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কে নাযিল হয়েছে|”
এছাড়াও তাফসীরে কুরতুবী, তাবারী, দুররে মানছুর, রুহুল মায়ানী,
মাদারেক, কাশ্শাফ, মায়ালিম,
ছায়লবী
ও ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার “আদাবুল মুফরাদ” কিতাবে لهو الحديث অর্থঃ- “গান-বাজনা”,“বাদ্য-যন্ত্র”বলে উল্লেখ করেছেন| অনুরূপ সূরা নজম ও বণী ইস্রাঈলেও “গান-বাজনা”
হারাম হওয়ার ব্যাপারে আয়াত শরীফ রয়েছে|
অতএব, কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ
যা কিৎয়ী দলীল, তাদ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, “গান-বাজনা”, “বাদ্য-যন্ত্র” ইত্যাদি সম্পূর্ণই হারাম ও আযাবের কারণ|
“গান-বাজনা” ও “বাদ্য-যন্ত্র” সম্পর্কে অসংখ্য হাদীছ শরীফও বর্ণিত রয়েছে, যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ
মুবারক করেন,
استماع الملاهى معصية جلوس عليها فسق وتلذذ بها من الكفر.
অর্থঃ- “গান শোনা গুণাহের কাজ,
গানের
মজলিসে বসা ফাসেকী এবং গানের সাধ গ্রহণ করা কুফরী|”
অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
الغناء ينبت النفاق فى القلب كما ينبت الماء الزرع.
অর্থঃ- “পানি যেরূপ জমীনে ঘাস উৎপন্ন করে “গান-বাজনা” তদ্রুপ অন্তরে মুনাফেকী পয়দা করে|”
দলীল-
√ বায়হাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান|
আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো
ইরশাদ করেন,
بعثت لكسر المزامير والاصنام.
অর্থঃ- “আমি “বাদ্য-যন্ত্র” ও “মুর্তি” ধ্বংস করার জন্যে প্রেরীত হয়েছি|”
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীস শরীফের আলোকে ইমাম-মুজাতাহিদ তথা ফুক্বাহা-ই-কিরাম
রহমাতুল্লাহি আলাইহিগণ ফতওয়া দেন যে,
“গান-বাজনা”
বা “বাদ্য-যন্ত্র” সম্পূর্ণই হারাম|
এটাকে
হালাল বলা কূফরী|
যেমন আল্লামা শাহ্ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দেস দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি “তাফসীরে
আযীযী”-এর ১ম খন্ডের ৬৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,
درمغنى كفته كه لهو الحديث غناء است وار حرام است باير نص و مستحل ار كافر است.
অর্থঃ- “মুগনী” কিতাবে উল্লেখ আছে,
لهو الحديث হচ্ছে- “গান-বাজনা”, সঙ্গিত| এ আয়াত শরীফ দ্বারা তা হারাম সাব্যস্ত হয়েছে| যে ব্যক্তি এটাকে হালাল জানবে সে কাফের হবে|”
فى جامع الفتاوى استماع الملا هى والجلوس عليها وضرب المزامير والرقص كلها حرام ومستحلها كافر.
অর্থঃ- “জামিউল ফতওয়াতে” উল্লেখ আছে,
“গান-বাজনা”
শ্রবন করা, “গান-বাজনার” মজলিশে
বসা, “বাদ্য-যন্ত্র” বাজানো, “নর্ত্তন-কুর্দ্দন” করা সবই হারাম, যে ব্যক্তি এগুলোকে হালাল মনে করবে সে ব্যক্তি
কাফের|”
অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র
হাদীছ শরীফের আলোকে ইমাম-মুজাতাহিদ তথা ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিগণ উনাদের
ফতওয়া দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে,
ইসলামী
শরীয়তের দৃষ্টিতে গান-বাজনা সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র
হাদীছ শরীফের আলোকে ইমাম-মুজাতাহিদ তথা ফুক্বাহা-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিগণ ফতওয়া
অথচ টিভি চ্যানেলগুলোতে সর্বদাই গান-বাজনা হয়ে থাকে| যদি তাই হয় তবে টেলিভিশন দেখা ও রাখা কি করে জায়িয হতে পারে? মূলতঃ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে টিভি, ভিসিপি, ভিসিআর, ডিস, সিনেমা ইত্যাদি দেখা ও রাখা কাট্টা হারাম ও নাজাযিয| একে হালাল জানা কুফরী|
No comments