প্রাণীর ছবির ক্ষেত্রে শরয়ী ফায়সালা --> পর্ব-৬ (ক্যামেরায় ছবি তোলা আর হাতে আঁকার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই)
পবিত্র কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে প্রাণীর মূর্তি তৈরী
করা, কারানো ও ছবি আঁকা, তোলা,
তোলানো, রাখা,
রাখানো, দেখা,
দেখানো
হারাম নাজায়িয হওয়ার অকাট্য প্রমাণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরয়ী ফায়সালা:
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া মোতাবেকক্যামেরায় ছবি তোলা আর হাতে আঁকার মধ্যে
কোন পার্থক্য নেই|
-----------------------------------------------------------------
কিছু লোক কমজ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, শরীয়তে ছবি তোলা জায়িয, আঁকা হারাম|
নাউযুবিল্লাহ্| মূলতঃ আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ছহীহ
ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া হচ্ছে, “প্রাণীর ছবি হাতে
আঁকা যেরূপ হারাম তদ্রুপ ক্যামেরা বা অন্য যে কোন পদ্ধতিতেই হোক না কেন তোলাও হারাম|”
মূলতঃ তোলা প্রকৃত পক্ষে আকারই বৈজ্ঞানীকরূপ| কেননা কোন বস্তু বা প্রাণীর ছবি হাতে তৈরী করাকে আঁকা বলে| আর আলোর দ্বারা, যন্ত্রের দ্বারা রাসায়নিক পদ্ধতিতে বা যে কোন
প্রকারের আধুনিক পদ্ধতিতে কোন বস্তু বা প্রাণীর ছবি তৈরী করাকে তোলা বলে, কাজেই হাতে আঁকা বা তোলার মধ্যে মূলতঃ কোন পার্থক্যই
নেই| পার্থক্য শুধু আধুনিকতার|
তবে ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্যতম একটি ফিরক্বা শিয়া বা রাফিযীদের বক্তব্য
হচ্ছে, প্রাণীর ছবি তোলা জায়িয ও
আঁকা হারাম|” নাউযুবিল্লাহ্| কাজেই,
যে
বা যারাই প্রাণীর ছবির ব্যাপারে অনুরূপ আক্বীদা পোষণ করবে সে বা তারাই বাতিল ফিরক্বা
শিয়াদের অন্তুর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে|
কারণ
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن عبدالله بن عمر رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من تثبه بقوم فهو منهم
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে-
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভূক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই
হবে|”
√ দলীল- মসনদে আহমদ,
√ সুনানে আবূ দাউদ|
মূল কথা হলো- আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া মতে প্রাণীর
ছবি ক্যামেরায় বা হাতে অর্থাৎ যে কোন পদ্ধতিতেই তুলুক বা আঁকুক না কেন তা সর্বাবস্থায়ই
হারাম| নিম্নে এ সম্পর্কিত কতিপয়
দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করা হলোঃ
“প্রাণীর ছবি চাই
ওটা প্রাচীর গাত্রে ঝুলানো থাকুক,
চাই
ওটা দেহ বিশিষ্ট হোক কিংবা আঁকা হোক অথবা পরিধেয় বস্ত্র অথবা পাগড়িতে আঁকা থাকুক সর্বাবস্থায়
ব্যবহার করা হারাম|”
√ দলীল- শরহে মিরকাত,
√ ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়াহ- পৃঃ৩৮৩,
√ নাইলুল আওতার ২য় জিঃ পৃঃ১০৫|
“প্রাণীর ছবি তৈরী
করা বা তৈরী করানো প্রত্যেক অবস্থায় হারাম|
চাই
হাতে হোক অথবা ক্যামেরায় উভয়ের হুকুম অর্থাৎ হারাম|”
√ দলীল- বাহারে শরীয়ত ৩য় জিঃ, পৃঃ ১২৩|
“প্রাণীর ছবি তৈরী
করা এবং তৈরী করানো নাজায়িয এবং হারাম,
চাই
হাতে হোক অথবা অন্য কোন পদ্ধতিতে হোক উভয়ের একই হুকুম অর্থাৎ উভয়েই ছবি|”
√ দলীল- কিফায়াতুল মুফতী ৯ম জিঃ, পৃঃ২২৮|
“ক্যামেরার দ্বারা
প্রাণীর ছবি আঁকা বা করানো এবং ওটার পেশাও নাজায়িয| কেননা ক্যামেরার ছবিও উচ্চমানের পরিপূর্ণ ছবি| তাই ছবির হুকুম সমূহ ওটার উপর বর্তাবে|”
√ দলীল- কিফায়াতুল মুফতী ৯ম জিঃ, পৃঃ২৩৪|
“প্রাণীর ছবি তৈরী
করা বা করানো সাধারণতঃ হারাম| কলম দ্বারা হোক অথবা
ক্যামেরার মাধ্যেমে অর্থাৎ যে পদ্ধতিতেই হোক না কেন সকলের একই হুকুম অর্থাৎ হারাম| (কেননা) ছহীহ্ হাদীছ শরীফসমূহ এবং ফেক্বহি ইবারত
সমূহের দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে,
প্রাণীর
ছবি তৈরী করা নাজায়িয ও হারাম|”
√ দলীল- ফতওয়ায়ে নঈমিয়াহ্ পৃঃ৪৮|
“কিছু লোকের ধারণা, হাদীছ শরীফে হাত দ্বারা প্রাণীর ছবি তৈরী করা
হারাম করা হয়েছে ক্যামেরার দ্বারা নয়|
এটা
তাদের ভুল এবং ভ্রান্ত ধারণা| মূলতঃ হাদীছ শরীফ
দ্বারা প্রাণীর ছবি হারাম হওয়াই মূল উদ্দেশ্য ওটা যে পদ্ধতিতেই তৈরী করা হোক না কেন|”
√ দলীল- তোহফায়ে খাওয়াতীন পৃঃ৯২১|
“কলম দ্বারা যেরূপ
প্রাণীর ছবি তৈরী করা নাজায়িয (ও হারাম) তদ্রুপ ক্যামেরা, প্রেস,
ছাঁচ, মেশিন ইত্যাদির দ্বারাও প্রাণীর ছবি তৈরী করা
নাজায়েয (ও হারাম) |”
√ দলীল- জাদীদ মাসায়িল কে শরয়ী আহকাম পৃঃ৪৪|
“আধুনিক যে কোন পদ্ধতিতে
প্রাণীর ছবি তৈরী করা বা তৈরী করানো,
হাতে
তৈরী করা বা তৈরী করানোর মতোই হারাম ও নাজায়িয এবং প্রাণীর ছবি রাখাও তদ্রুপ হারাম| উক্ত আমলকারী ব্যক্তি ফাসিক এবং ইমাম নিযুক্ত
করা হারাম| এবং তার পিছনে নামায
পড়া মাকরূহ তাহরীমী|”
√ দলীল- ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ১ম জিঃ পৃঃ৭৪২|
“প্রাণীর ছবি কলম
দ্বারাই আঁকা হোক আর ছাপাখানায় ছাপা হোক অথবা ক্যামেরাতেই ফটো তোলা হোক সকলেরই এক হুকুম
অর্থাৎ জায়িয নয়|”
√ দলীল- বাংলা বে ফায়দা গুনাহ্ পৃঃ৭৭|
“শরীয়ত ছবি তোলা ও
ফটোর ব্যবহারকে হারাম বলে সাব্যস্ত করেছে|
চিত্রাঙ্কন
ও ফটোগ্রাফিদের একই বিধান| অর্থাৎ কোন প্রাণীর
ফটো তোলা হারাম| প্রাণহীন বস্তুর
মধ্যে যা পূঁজা করা হয়, ওটার ছবি তোলাও হারাম| ছবি তোলা, রাখা ও প্রচার করা নাজায়িয|”
√ দলীল- আধুনিক যন্ত্রপাতির ইসলামী আহকাম পৃঃ ১০২|
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, প্রাণীর ছবি হাতে আঁকা যেরূপ হারাম তদ্রুপ ক্যামেরা
বা অন্য যেকোন পদ্ধতিতে তোলাও হারাম|
এর
খিলাফ আক্বীদা পোষণকারীরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর অন্তর্ভূক্ত নয়|
No comments