Header Ads

Islamic Quotes Urdu Facebook Cover. QuotesGram

নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ্‌ ,হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মাটির তৈরী প্রমাণে খারেজী,ওহাবী,লা-মাজহাবীদের পেশকৃত হাদীছ শরীফ উনার তাহক্বীক।




যারা বলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটির তৈরী, তারা দলীল হিসেবে এ হাদীস শরীফ খানা পেশ করে থাকে, হাদীস শরীফ খানা হলো-“হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আমি একই মাটি থেকে সৃষ্টি।” আর সে জন্যই উনারা তিন জন একই স্থানে দাফন হয়েছেন।
         
এখন সত্যিই কি উক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটির তৈরী প্রমাণিত হয়? এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা কি?
মুলতঃ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘মাটির তৈরি’ নন। তিনি ‘নূরের তৈরী।’ তাই বলা হয়,  তিনি ‘নূরে মুজাস্সাম।’
         
তবে যারা এই হাদীস শরীফের উপর ভিত্তি করে বলে থাকে যে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘মাটির তৈরী।” তাদের এ বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ নয়। তারা এ হাদীস শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা না জানা ও না বুঝার কারণেই এরূপ বক্তব্য পেশ করে থাকে। এই হাদীস শরীফের ছহীহ্ ও আসল ব্যাখ্যা বুঝতে হলে কয়েকটি বিষয় প্রথমে বুঝতে হবে।
(ক) সর্বপ্রথম কিসের সৃষ্টি হয়?
(খ) হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের তৈরী,
(গ) মাটির তৈরী বলতে কি বুঝায়?
আসুন আমরা আলোচনায় যাইঃ
()সর্ব প্রথম কিসের সৃষ্টি হয়?
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
اول ما خلق الله نورى ومن نورى خلق كل شيئى.
অর্থঃ- “মহান আল্লাহ্ পাক সর্বপ্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন এবং আমার নূর মুবারক থেকেই সবকিছু সৃষ্টি করেন” (মাতালেউল মাসাররাত)
তিনি আরো বলেন,
اول ما خلق الله نورى وكل شئ من نورى.
অর্থঃ- “মহান আল্লাহ্ পাক সর্ব প্রথম আমার ‘নূর’ সৃষ্টি করেন এবং আমার ‘নূর’ থেকেই(মাটিসহ) সব সৃষ্টি করেন।”
         
এই হাদীস শরীফকে হযরত আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “মাদারেজুন্ নুবুওয়াত” কিতাবে বিশুদ্ধ বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক সর্বপ্রথম নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি করেন। অতঃপর তা থেকে মাটিসহ সমস্ত কায়েনাত সৃষ্টি করেন।

()হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরের তৈরীঃ
মহান আল্লাহ্ পাক-এর সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
 عن جابر قال قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم بابى انت وامى اخبرنى عن اول شيئ خلق الله تعالى قبل الاشياء قال يا جابر ان الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره فجعل ذلك النور يدور بالقدرة حيث شاء الله تعالى ولم يكن فى ذلك الوقت لوح ولا قلم ولاجنة ولا نار ولا ملك ولاسماء ولا ارض ولاشمس ولا قمر ولاجنى ولا انسى.
অর্থঃ- “হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্ পাক উনার রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, ইয়া রসুলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবানী হয়ে যাক, আপনি আমাকে জানিয়ে দিন যে, আল্লাহ্ পাক সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন তিনি বললেন, ‘হে জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক সব কিছুর পূর্বে তোমার নবীর সম্মানিত ‘নূর মুবারককে’ সৃষ্টি করেছেন উনার নূর থেকে। অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক উনার প্রথম সৃষ্টিই হচ্ছে নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর সেই ‘নূর মুবারক’ আল্লাহ্ পাক-এর ইচ্ছানুযায়ী কুদরতীভাবে ঘুরছিল। আর সে সময় লওহো-ক্বলম, বেহেশ্ত-দোযখ, ফেরেশ্তা, আসমান-যমীন, চন্দ্র-সূর্য, মানুষ ও জিন কিছুই ছিলনা।” (মসনদে আব্দুর রাজ্জাক, দালায়েলুন নুবুওওয়াত, আফজালুল ক্বোরা, মুতালেউল মাসাররাত, তারীখুল খামীছ, মাওয়াহেব, শরহে যুরকানী, মাদারেজুন নুবুওওয়া, নূরে মুহম্মদী, ফাতওয়ায়ে হাদীসিয়্যাহ, নশরুততীব)
         
এখানে উল্লেখ্য যে হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত এ হাদীস শরীফের অর্থ উপলদ্ধিতে অনেকেই বিভ্রান্তির স্বীকার হন। বিশেষ করে বর্ণিত হাদীস শরীফে من نوره শব্দাংশের সঠিক মর্ম উদ্ধারে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দেন।
এ প্রসঙ্গে হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিস, আশেকে রসূল, আল্লামা যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত ও মশহুর কিতাব “শরহে মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া”-এর ১ম জিঃ ৪৬ পৃষ্ঠায় লিখেন,
... من نوره اضافة تشريف واشعار بانه خلق عجيب وان له شانا له مناسبة ما الى الحضرة الربوبية على حد قوله تعالى ونفخ فيه من روحه او هى بيانية اى من نور هو ذاته لا بمعنى انها مادة خلق نوره منها بل بمعنى تعلق الارادة به بلا واسطة شئ فى وجوده وهذا اولى من الاحتمال ان المرادمن نور مخلوق له تعالى قبل خلق نور المصطفى لما يلزم عليه من سبق مخلوق على نور المصطفى وهو خلاف المنصوص والمراد ومن تجويز انه معنى عبر عنه بالنور مشابهة اى خلق نور المصطفى من معنى بشبه النور موجودا ازلا لما فيه من اثبات تعدد القدما.
অর্থঃ- "من نوره" -এর তা’বীলী অর্থ বা ব্যাখ্যা হলো- উক্ত শব্দে যে “ইযাফত” (সম্বন্ধ) রয়েছে তা “ইযাফতে তাশরীফী” অর্থাৎ সম্মান বা মর্যাদা প্রকাশার্থেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার “নূর মুবারককে” “আল্লাহ্ পাক উনার নূর” বলা হয়েছে এবং এটাই বুঝানো হয়েছে যে, উক্ত “নূর” অর্থাৎ নূরে মুহম্মদী মহান আল্লাহ্ পাক উনার  অতি আশ্চর্যজনক এক সৃষ্টি এবং আল্লাহ্ পাক উনার সাথে উনার বিশেষ ও গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
যেমন, মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম উনার মধ্যে নিজ রূহ ফুঁকে দিলেন।” এ আয়াত শরীফে সম্মান বা মর্যাদা প্রকাশার্থেই হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম উনার রূহকে আল্লাহ্ পাক উনার রূহ বলা হয়েছে। অথবা উক্ত “ইযাফত” হচ্ছে- “ইযাফতে বয়ানিয়া।” অর্থাৎ "نوره" অর্থ- “আল্লাহ্ পাক উনার জাত” কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ্ পাক উনার জাত রসূলের নূর সৃষ্টির উপাদান বা ধাতু। বরং এ কথার অর্থ হলো¬- “মহান আল্লাহ্ পাক উনার জাত কর্তৃক রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নূর তথা “নূরে মুহম্মদী” সৃষ্টি হয়েছে।” অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ্ পাক নিজেই কোন প্রকার মাধ্যম ছাড়াই নিজ ইরাদা (ইচ্ছা) দ্বারা বিনা উপাদানে সেই ‘নূর’ সৃষ্টি করেন।

এক্ষেত্রে আরো দু’টি অর্থের সম্ভাবনা রয়েছে।
(১) “নূর” আরেকটি বস্তু যা নূরে মুহম্মদীর পূর্বে আল্লাহ্ পাক সৃষ্টি করেন, আর উক্ত বস্তু হতেই নূরে মুহম্মদীকে সৃষ্টি করা হয়। অথচ এ অর্থ এ হাদীস শরীফ ও অন্যান্য হাদীস শরীফের সম্পূর্ণই বিপরীত। কেননা সকল হাদীস শরীফে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, “নূরে মুহম্মদীর” পূর্বে অন্য কোন মাখলুক ছিল না।
(২) অথবা “নূর” অর্থ নূর সাদৃশ্য এমন একটি গুণ যা আল্লাহ্ পাক-এর ছিফাতে ক্বাদীমার মত অনাদিকাল থেকে বিদ্যমান আর তা দ্বারাই রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার “নূর মুবারক” সৃষ্টি করা হয়েছে। অথচ এ অর্থ গ্রহণ করলে একাধিক ক্বাদীম সাব্যস্ত হয়ে যায় যা  তাওহীদের সম্পূর্ণই বিপরীত অর্থাৎ র্শিক। তাই শেষোক্ত দু’টি অর্থ গ্রহণ করা কিছুতেই শুদ্ধ নয়।”
         
এ প্রসঙ্গে মাওলানা আব্দুল হাই লাখনবী ছাহেব উনার “মাজমুয়ায়ে ফতওয়া”-এর ২য় জিঃ ২৬০ পৃষ্ঠায় লিখেন,
السوال: ماقولكم اليها العلماء السادات فى ذات الله عز وجل فهل يكون اصلا وماذة لدات نبينا صلى الله عليه وسلم من نور الله وايضا ذاته صلى الله عليه وسلم هل هو حادث ام قديم بينوا.
الجواب: ان ذات الله قديم وذات نبينا حادث لايكون اصلا ومادة للحادث لان القديم فرد واحد لايتجزى ولا يتبعض فلا ينفصل منه شئ فالذى لايتجزى ولا ينفصل منه شئ لايكون اصلا لشئ كما يفهم من كتب العقائد وقال الزرقانى قى شرح المواهب الدنية فى شرح من نوره اى من نور هو ذاته لابمعنى انها مادة خلق نوره منها بل بمعنى تعلق الارادة به بلا واسطة شئ فى وجوده ...... وهذا هو معتقد. جميع اهل الاسلام ومن اعتقد خلافه فهو اما مانف مجاهر او ملحد وزنديق عند اهل الاسلام.
অর্থঃ- “সুওয়াল হলো, ওলামা-ই-কিরামগণের নিকট প্রশ্ন এই যে, মহান আল্লাহ্ পাক-এর জাত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জাত সৃষ্টির মূল বা উপাদান হতে পারে কিনা? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “আল্লাহ্ পাক উনার নূর হতে সৃষ্টি” এ কথার অর্থ কি? আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জাত মুবারক হাদেছ না ক্বাদীম? বিস্তারিত জবাব দানে বাধিত করবেন।
         
জাওয়াব হলো, মহান আল্লাহ্ পাক উনার জাত ক্বাদীম। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জাত হচ্ছে হাদেছ। আর ক্বাদীম কখনো হাদেছ সৃষ্টির মূল বা উপাদান হতে পারেনা। কেননা জাতে ক্বাদীম এক ও একক। তিনি খন্ডিত ও বন্টিত হননা। বিভক্ত ও বিভাজ্য হননা। উনার জাত হতে কোন কিছু বিচ্ছিন্ন হতে পারেনা। তাই আল্লাহ্ পাক-এর জাত কস্মিনকালেও অন্য কোন বস্তুর উপাদান বা ধাতু হতে পারেনা। এ বিষয়টি আক্বীদার কিতাবসমূহে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে।”
         
হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীস শরীফের এ অংশ "من نوره" এর ব্যাখ্যায় আল্লামা যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি “শরহে মাওয়াহেবে” লিখেন যে, "من نوره" “মিন  নূরিহী” এ কথার অর্থ হচ্ছে "من ذاته" “মিন জাতিহী” অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক উনার নূর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্ পাক উনার জাত। এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ্ পাক উনার জাত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর সৃষ্টির উপাদান বা ধাতু।
বরং এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ্ পাক উনার জাত কর্তৃক রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক স্বয়ং নিজেই কোন প্রকার মাধ্যম ও উপাদান ছাড়াই নিজ ইরাদা দ্বারা “নূরে মুহম্মদী” সৃষ্টি করেন। .... এটাই আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের তথা সকল মুসলমানের আক্বীদা। এর বিপরীত আক্বীদা পোষণকারী সকল মুসলমানের ঐক্যমতে প্রকাশ্য কাফির অথবা মুলহিদ ও যিন্দিক।”
         
মহান আল্লাহ্ পাক উনার জাতে পাক “নূর বা আলো” নয়, বরং মহান আল্লাহ্ পাক “নূর বা আলোর” স্রষ্টা। আর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ্ পাক উনার জাতের অংশ নন। উনাকে মহান আল্লাহ্ পাক উনার জাতের অংশ বলে বিশ্বাস করা স্পষ্ট র্শিক ও কূফরী।
যারা মহান আল্লাহ্ পাককে “নূর বা আলো” বলে বিশ্বাস করে, তারা ৭২টি বাতিল ও জাহান্নামী ফিরক্বার অন্যতম “মুশাব্বিহা বা মুনাব্বিরাহ্” ফিরক্বার অন্তর্ভূক্ত।
         
অতএব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-মহান আল্লাহ্ পাক উনার “নূর বা জাতের” অংশ একথা যেরূপ ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য নয় তদ্রুপ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “নূরের তৈরী নন” বরং মাটির তৈরী এ কথাও ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ছহীহ্ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, উনার সৃষ্টিই হয়েছে “নূর” হিসেবে।
         
অথচ কিছু লোক কুরআন শরীফের কতিপয় আয়াত শরীফ ও দুই একটি হাদীস শরীফের সঠিক ব্যাখ্যা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে বলে বা লিখে থাকে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “মাটির তৈরী”, “নূরের তৈরী নন।”
          এক্ষেত্রে তারা যে, “যুক্তি-প্রমাণ” পেশ করে থাকে তা এতই দুর্বল যে, তা দলীল হিসেবে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “নূর” এ কথার স্বপক্ষে যে সকল দলীল-প্রমাণাদি রয়েছে তার তুলনায় উক্ত দলীলগুলো নেহায়েতই নগন্য ও পরিত্যাজ্য।
          সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপাদমস্তক “নূর বা নূরে মুজাস্সাম।” এর স্বপক্ষে কুরআন শরীফের আয়াত শরীফ, ছহীহ্ হাদীস শরীফ ও ইমাম-মুজতাহিদগণের ক্বওল দলীল হিসেবে মওজুদ রয়েছেদ্দ যা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নূরে মুজাস্সাম। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় সকল বিখ্যাত ও অনুসরণীয় হক্কানী ওলামা-ই-কিরামগণ যেমন- রঈসুল মুহাদ্দিসীন আল্লামা হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল মুফাস্সিরীন আল্লামা হাফেয ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বাহরুল উলূম আল্লামা ইবনে সাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি, শায়খুল ওলামা আল্লামা শায়খ ইব্রাহীম বেজোরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল মুহাদ্দিসীন, আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হাফিজুল হাদীস আওলাদুর রসূল আল্লামা সাইয়্যিদ যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ওলীয়ে কামিল আল্লামা হুসাইন ইবনে মুহম্মদ দিয়ারে বিকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, আশেকে রসূল আল্লামা সুলায়মান জামাল রহমতুল্লাহি আলাইহি, ফক্বীহুল উম্মত শায়খ মুহম্মদ তাহের রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল জলীল আল্লামা কাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি, আলিমুল ফাযিল আল্লামা মুহম্মদ বিন ছিবান রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল আইম্মা আল্লামা আহমদ বিন মুহম্মদ কুস্তলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, বিখ্যাত বুযুর্গ ইমাম ইবনে হাজার মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তাজুল মুফাস্সিরীন আল্লামা মাহমূদ নাসাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি, কাইয়্যূমুয্ যামান হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, শাইখুল মুহাদ্দিসীন শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ফক্বীহুল আছর আল্লামা শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা শিহাবুদ্দীন খাফফাজী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকে তাঁদের নিজ নিজ কিতাবসমূহে উল্লেখ করেন যে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘নূর’ তথা নূরে মুজাস্সাম।

মাটির তৈরী বলতে কি বুঝায়?”
কুরআন শরীফে মাটির তৈরী বলতে একমাত্র হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে বুঝানো হয়েছে। কুরআন শরীফে কোথাও হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাটির তৈরী বলে উল্লেখ করা হয়নি।
         
হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাদীস শরীফেও তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
فلما اراد الله تعالى ان يخلق الخلق قسم ذالك النور اربعة اجزاء فخلق من الجزء الاول القلم ومن الثانى اللوح ومن الثالث العرش ثم قسم الرابع اربعة اجزاء دخلق من الاول حملة العرش ومن الثانى الكرسى ومن الثالث باقى الملئكة ثم قسم الرابع اربعة اجزاء مخلق من الاول السموت ومن الثانى الارضين.
অর্থঃ- “..... অতঃপর যখন মহান আল্লাহ্ পাক ‘মাখলুকাত’ সৃষ্টি করার ইচ্ছা পোষণ করলেন তখন সেই ‘নূর’ মুবারক (অর্থাৎ “নূরে মুহম্মদী থেকে একটি অংশ নিয়ে উনাকে) চার ভাগ করলেন। প্রথম ভাগ দ্বারা ‘কলম’ দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা ‘লওহে মাহ্ফুজ’ তৃতীয় ভাগ দ্বারা ‘আরশে মুয়াল্লা’ সৃষ্টি করলেন। চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগ করেন। প্রথম ভাগ দ্বারা ‘আরশ বহনকারী ফেরেশ্তা, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা ‘কুরসী’ আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা অন্যান্য সব ফেরেশ্তাদেরকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর এ চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগ করেন। প্রথম ভাগ দ্বারা ‘আসমান’ আর দ্বিতীয় ভাগ যমীন অর্থাৎ মাটি সৃষ্টি করেন ....
         
উপরোক্ত ছহীহ্ হাদীস শরীফের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, মাটি মূলতঃ সমস্ত কায়েনাত অর্থাৎ মাটিসহ সমস্ত কিছু উনার নূর থেকে সৃষ্টি। এতে বুঝা যাচ্ছে মাটিও নূরের একটা অংশ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পানির তিনটি ছূরত। (১) পানির সাধারন অবস্থা তরল, (২) পানিকে তাপ দিলে তা বাতাস বা বায়বীয় পদার্থ হয়ে যায়, (৩) পানিকে ঠান্ডা করলে তা বরফ বা শক্ত পদার্থে পরিণত হয়ে যায়।
         
এখন যদি উক্ত বায়বীয় পদার্থকে ঠান্ডা করা হয় তাহলে তা পূর্বের মত তরল পদার্থ বা পানিতে পরিণত হবে। একইভাবে যদি বরফকে তাপ দেয়া হয় তাহলে উক্ত বরফ বা শক্ত পদার্থটিও তরল পদার্থে বা পানিতে পরিণত হয়ে যাবে।
         
উল্লেখ্য, যেই পানি নূর থেকে সৃষ্টি সেই পানির যদি তিন তিনটি ছূরত হতে পারে তাহলে নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা থেকে সবকিছু সৃষ্টি উনার কত ছূরত হতে পারে সেটা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। অর্থাৎ মাটি নূরের একটা ছূরত ও তার অংশ।
         
প্রসঙ্গত কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, হ্যাঁ,  হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে,
عن عبد الله بن مسعود رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما من مولود الا وفى سرته من تربته التى خلق منها حتى يدفن فيها وانا وابو بكر وعمر خلقنا من تربة واحدة وفيها ندفن.
অর্থঃ- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রত্যেক সন্তানের নাভীতে মাটির একটি অংশ রাখা হয়, যেখানকার মাটি তার নাভীতে রাখা হয়েছিল মৃত্যুর পর সে ঐ স্থানেই সমাধিস্থ হবে। আমি, হযরত আবূ বকর ও হযরত উমর একই মাটি থেকে সৃষ্টি হয়েছি এবং একই স্থানে সমাধিস্থ হবো। (মাযহারী, আল মুত্তাফিক ওয়াল মুফতারিক) এই হাদীস শরীফে মাটি থেকে সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। সুতরাং তার জবাব হবে কি?
         
এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, মাতৃগর্ভে সন্তানের বয়স যখন চার মাস হয়, তখন নিয়োজিত ফেরেশ্তা উক্ত সন্তানের হায়াত-মউত ও মৃত্যুস্থান সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক-এর নিকট জিজ্ঞাসা করেন, তখন আল্লাহ্ পাক লওহে মাহফুজ দেখে নিতে বলেন। নিয়োজিত ফেরেশ্তা লওহে মাহফুজ দেখে যেখানে তার কবর হবে সেখান থেকে সামান্য মাটি এনে সন্তানের নাভীতে দিয়ে দেন। এটা মূলতঃ প্রতিটি মানুষের “কবরের স্থান” নির্ধারণের জন্যে দেয়া হয়। দেহ সৃষ্টির জন্য নয়।
নিম্নে এর কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো।
         
যেমন, আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি “শরহুছ্ ছুদুর” নামক কিতাবে উল্লেখ করেন, হাদীস শরীফে রয়েছে,
 اخرج ابو نعيم عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما من مولود الا وقد ذر عليه من تراب حفرته.
অর্থঃ- “হযরত ইমাম আবূ নঈম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘এমন কোন সন্তান নেই যার উপর তার কবরের মাটি ছিটিয়ে দেয়া হয়না।”
         
আল্লামা শা’রানী রহমতুল্লাহি আলাইহি “তায্কেরায়ে কুরতুবী” কিতাবে উল্লেখ করেন,
روى الديلمى مرفوعا كل مولود ينشر على سرته من تراب حفرته فاذا مات رد الى تربته.
অর্থঃ- “ইমাম দায়লামী হতে মরফু’ হিসেবে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, প্রতিটি সন্তানের নাভীর উপর (মাতৃগর্ভে) তার কবরের মাটি ছিটিয়ে দেয়া হয় এবং মৃত্যুর পর তাকে উক্ত মাটিতেই ফিরিয়ে নেয়া হয়।”
হযরত আবূ আব্দুল্লাহ্ মুহম্মদ ইবনে আহ্মদ আল আনছারী আল কুরতুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “তাফসীরে কুরতুবী-এর ৩য় জিঃ, ৩৮৭ পৃষ্ঠায় লিখেন,
عن ابن مسعود ان الملك الموكل بالرحم يأخذ النطفة فيضعها على كفه ثم يقول يارب مخلقة او غير مخلقة؟ فان قال مخلقة قال يارب ما الرزق ما الاثر ما الاجل؟ فيقول انظر فى ام الكتاب فينظر فى اللوح المحفوظ فيجد فيه رزقه وأثره واجله وعمله ويأخذ التراب الذى يدفن فى بقعته ويعجن به نطفته.
অর্থঃ- “হযরত আবূ নঈম হাফিজ মুররা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই রেহেম অর্থাৎ গর্ভের জন্য নির্ধারিত ফেরেশ্তা (মাতৃগর্ভে) নুত্ফা বা মনিকে নিজ হাতের তালুতে রাখেন। অতঃপর বলেন, হে প্রতিপালক! এই মনি দ্বারা সন্তান সৃষ্টি হবে কি হবেনা?’ যখন আল্লাহ্ পাক বলেন, ‘ইহা দ্বারা সন্তান সৃষ্টি হবে। তখন ফেরেশ্তা বলেন- তার রিযিকের ব্যবস্থা, মৃত্যুর আলামত কি ও মৃত্যু কোথায় হবে? প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ্ পাক বলেন, লওহে মাহ্ফুজে দেখে নাও। ফেরেশ্তা লাওহে মাহ্ফুজ দেখে সেখানে তার রিযিক, মৃত্যুর আলামত, মৃত্যুর স্থান ও আমল সম্পর্কে জেনে নেন। অতঃপর যেখানে তাকে দাফন করা হবে সেখান থেকে একটু মাটি নিয়ে তা নুত্ফা বা মনির সঙ্গে মিশিয়ে দেন।”
         
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় তা হলো, এক হাদীস  শরীফে যদিও বলা হয়েছে যে, কবরের মাটি নাভীমূলে রেখে দেয়া হয়, কিন্তু অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, নুতফার সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ সন্তানের বয়স যখন মাতৃগর্ভে চার মাস হয় তথা সন্তানের দেহ বা আকার-আকৃতি যখন সৃষ্টি হয়ে যায়, তখন রূহ ফুঁকে দেয়ার সময় ফেরেশ্তা তার কবরস্থান থেকে মাটি এনে নাভীমূলে রেখে দেন। এতে বুঝা গেল যে, উক্ত মাটি মূলতঃ দেহ সৃষ্টির জন্যে নয় বরং কবরস্থান নির্ধারণের জন্যে। যদি দেহ সৃষ্টির জন্যই হতো তবে দেহ সৃষ্টির পরে উক্ত মাটি নাভীতে রাখা হলো কেন? উক্ত মাটি রাখার পূর্বেই তো দেহ সৃষ্টি হয়ে গেছে তাই এখন রূহ ফুঁকে দেয়া হবে।       সুতরাং বলার আর অপেক্ষাই রাখেনা যে, কবরের মাটি নাভীমূলে রেখে দেয়া হোক বা নুতফার সাথে মিশিয়ে দেয়া হোক তা দেহ সৃষ্টির জন্য নয় বরং কবরের স্থান নির্ধারণের জন্য।
         
এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের রওজা শরীফ চিহ্নিত করার জন্য নির্দিষ্ট স্থান থেকে মাটি যা তার হাক্বীক্বী ছূরতে এনে নূর বানিয়ে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের (নুত্ফার সঙ্গে মিশ্রিত করা হয়না বরং তা) নাভী মুবারকের উপর রাখা হয়। এর মেছালস্বরূপ বলা হয়, হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম এবং হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম যারা বিনা নুত্ফাতে কুদরতীভাবে সৃষ্টি হয়েছেন। এছাড়াও হযরত হাওয়া আলাইহাস্ সালামও বিনা নুত্ফায় কুদরতীভাবে সৃষ্টি হয়েছেন।
আর আখিরী রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সৃষ্টি মুবারক উনাদের চাইতেও অনেক বেশী রহস্যময় ও কুদরতের অন্তর্ভূক্ত।
         
এছাড়াও আল্লাহ্ পাক-এর কিছু খাছ বান্দা বা বান্দী রয়েছেন যাদের কবরস্থান চিহ্নিত করার জন্য উনাদেরও নাভীমূলে মাটি রাখা হয়েছে।
         
আর আওয়ামুন্ নাস বা সাধারণ লোকদের কবরস্থান চিহ্নিত করার জন্য তাদের নির্দিষ্ট স্থান থেকে মাটি এনে নুত্ফার সাথে মিশ্রিত করা হয়।
         
কাজেই “হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আমি (হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই স্থানের মাটি দ্বারা সৃষ্টি” এ কথার অর্থ হলো উনাদের তিনজনের নাভী মুবারকে একই স্থানের মাটি রাখা হয়েছে, তাই উনারা একই স্থানে শায়িত রয়েছেন।”
         
শুধু তাই নয়, হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামও সেই একই স্থানে শায়িত হবেন। তাই রওজা শরীফের পাশে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামের জন্যে জায়গা খালি রাখা হয়েছে। আর “মাকতুবাত শরীফে” হযরত মুজাদ্দিদে আলফেছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন,“আমিও রওজা শরীফের মাটি দ্বারা সৃষ্ট। অর্থাৎ আমার নাভী মূলেও রওজা শরীফের মাটি রাখা হয়েছে। তবে উনার মাযার শরীফ সেরহিন্দ শরীফে হওয়ার কারণ হলো হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম উনার বন্যার সময় রওজা শরীফের কিছু মাটি সেরহিন্দ শরীফে আসে। তাই তাঁর মাযার শরীফ সেরহিন্দ শরীফেই হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রতিটি সন্তানের কবরের স্থান নির্ধারণের জন্যে যেরূপ তাদের কবরের স্থান থেকে মাটি এনে নাভীতে দিয়ে দেয়া হয় ঠিক; তদ্রুপ আখেরী রসূল, সাইয়্যিদূল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর “রওজা শরীফ” নির্ধারণের জন্যেও উনার নাভী মুবারকে রওজা শরীফের যে নূরানী ও পবিত্র মাটি মুবারক রাখা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে তা বেহেশ্তের পানি দ্বারা ধৌত করে এবং তার হাক্বীক্বী ছূরত অর্থাৎ নূরে পরিণত করে রাখা হয়েছে। তাই হাদীস শরীফেও রওজা শরীফের উক্ত মাটি মুবারককে “নূর” বলা হয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
 عن كعب الاحبار قال لما اراد الله تعالى ان يخلق محمدا صلى الله عليه وسلم امر جبريل ان ياتيه بالطينة التى هى قلب الارض وبهائها ونورها قال فهبط جبريل فى ملائكة الفردوس وملائكة الرفيع الاعلى فقبض قبضة رسول الله صلى الله عليه وسلم من موضع فبره الشريف وهى بيضاء منيرة فعجنت بماء التسنيم فى معين انهار الجنة حتى صارت كالدرة البيضاء .....
অর্থঃ- “হযরত কা’ব আহবার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যখন মহান আল্লাহ্ পাক আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলেন, তখন হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে (উনার নাভী মুবারকে রাখার জন্য) এমন খামীর নিয়ে আসার নির্দেশ দিলেন যা মূলতঃ যমীনের আত্মা, ঔজ্জ্বল্য ও ‘নূর’ এ নির্দেশ পেয়ে হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম জান্নাতুল ফিরদাউস ও সর্বোচ্চ আসমানের ফেরেশ্তাদেরকে নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। অতঃপর রওজা শরীফের স্থান থেকে এক মুষ্ঠি স্বচ্ছ নূরানী মাটি নেন। উক্ত মাটিকে বেহেশতের প্রবাহিত ঝরণা সমূহের মধ্যে ‘তাসনীম’ নামক ঝরণার পানি দ্বারা ধৌত করার পর তা একখানা শুভ্র মুক্তার আকার ধারণ করে। অর্থাৎ নূরে পরিণত হয়ে যায়। ...”
         
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, আখেরী রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাভী মুবারকে যে মাটি রাখা হয়েছে তা মাটির ছূরতে রাখা হয়নি।  কারণ উনার নূরে মুজাস্সাম শরীর মুবারকে মাটিকে মাটির ছূরতে রাখা সম্ভব নয় বা রাখার কোন অবকাশ নেই। তাই তা পূনরায় তার পূর্বের হাক্বীক্বী ছূরতে পরিবর্তন করে অর্থাৎ মাটিকে নূর বানিয়ে সেই নূরকে নাভী মুবারকে রাখা হয়। সত্যিকার অর্থে তা হলো নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এরই একটা অংশ যা প্রকৃতপক্ষে “নূর।”
         
শুধু তাই নয়, বরং আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জিস্ম বা শরীর মুবারকের সব কিছুই যেমন রক্ত মুবারক, ইস্তিঞ্জা মুবারক, কেশ মুবারক ইত্যাদি সবই ‘নূর’ যার কারণে ফতওয়া দেয়া হয়েছে “দুররুল মুখতার” কিতাবে হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সমস্ত কিছু পাক বা পবিত্র। শুধু পাক বা পবিত্রই নয় বরং তা পান করলে বা খেলে যে পান করবে বা খাবে সে জান্নাতী হবে বা তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে।
         
তাই কবি বলেছেন, “আমরা যা খাই তা মল-মূত্র হয়ে বের হয়ে যায়। আর হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা খান তা ‘নূর’ হয়ে যায়।”
         
সুতরাং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাটির তৈরী হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। কারণ উনার সৃষ্টি, আগমণ ও অবস্থান প্রত্যেকটিই ‘নূর’ হিসেবে। আর মাটিসহ সব কিছুই  উনার সৃষ্টির পর উনারই ‘নূর মুবারক’ থেকে সৃষ্টি হয়েছে।
         
অতএব,         সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একই স্থানের মাটি দ্বারা সৃষ্টি” এর সরাসরি অর্থ গ্রহণ করলে আখিরী রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান ও মানের খিলাফ হবে যা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। তাই এর ছহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য তা’বীল বা ব্যাখ্যা হলো, “রওজা শরীফ উনার স্থান নির্ধারণের জন্যে নাভী মুবারকে যা রাখা হয়েছে। তাই তা পূনরায় তার পূর্বের হাক্বীক্বী ছূরতে পরিবর্তন করে অর্থাৎ মাটিকে নূর বানিয়ে সেই নূরকে নাভী মুবারকে রাখা হয়। সত্যিকার অর্থে তা হলো নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই একটা অংশ যা প্রকৃতপক্ষে “নূর।”    

কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাটির তৈরি বলা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার শামীল। আর হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাটির তৈরি বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা কুফরী। আর যে এ কুফরী করে সে কাট্টা কাফির ও লা’নতের উপযুক্ত।
         
যেমন- ইবলিস লা’নতের উপযুক্ত হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ্ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
قال ما منعك الا تسجد اذا امرتك قال انا خير منه خلقتنى من نار وخلقته من طين.
অর্থঃ-“আল্লাহ্ পাক বললেন, (হে ইবলিস আমি যখন তোকে হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সিজদা করতে আদেশ করলাম তখন) কোন জিনিষ তোকে সিজদা করতে নিষেধ করলো। ইবলিস বললো, আমি হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম থেকে উত্তম। কারণ আপনি আমাকে তৈরি করেছেন আগুন থেকে আর হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে তৈরি করেছেন মাটি থেকে।” (সূরা আ’রাফ/১২)
তখন আল্লাহ্ পাক ইবলিসকে বললেন,
فاهبط منها فما يكون لك ان تتكبر فيها فاخرج انك من الصغرين.
অর্থঃ-“তুই এখান থেকে নেমে যা লা’নতের সহিত এখানে তোর অহংকার করার কোন অধিকার নেই। অতএব তুই বের হয়ে যা। নিশ্চয়ই তুই লাঞ্ছিত, অপমানিত ও হীনতমদের অন্তর্ভূক্ত।” (সূরা আ’রাফ/১৩)
         
উল্লেখ্য, ইবলিস হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে মাটির তৈরি বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে সিজদা না করায় অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে যথাযথ সম্মান না করার কারণে সে আল্লাহ্ পাক-এর রহমত থেকে বিতাড়িত হয়ে মালউনের অন্তর্ভূক্ত হয়ে শয়তানে রাজীম হয়েছে।
         
অতএব, কেউ যদি হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাটির তৈরি বলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে যথাযথ সম্মান না করে তাহলে সেও ইবলিসের মত আল্লাহ্ পাক উনার রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে মালউনের অন্তর্ভূক্ত হয়ে শয়তানের কায়েম-মোকাম হবে।
         
মূলকথা হলো, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সৃষ্টি, আগমণ, অবস্থান, বিদায় ও বর্তমান অবস্থান সর্বাবস্থায়ই তিনি নূর বা নূরে মুজাস্সাম। এটাই আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা আর এই আক্বীদাই পোষণ করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয।
         
দলীলসমূহঃ
(১) আহ্কামুল কুরআন লি ইবনিল আরাবী,
(২) কুরতুবী,
(৩) রুহুল মায়ানী,
(৪) মাযহারী,
(৫) তাবারী,
(৬) কবীর,
(৭) বায়যাবী,
(৮) শায়খ যাদাহ্,
(৯) আবী সাউদ,
(১০) মায়ানিউত তানযীল,
(১১) মাদারিকুত্ তানযীল,
(১২) জালালাইন,
(১৩) মুয়ালিমুত্ তান্যীল,
(১৪) যাদুল মাসীর, 
(১৫) নিশাপুরী,
(১৬) রুহুল বয়ান,
(১৭) ক্বাদেরী,
(১৮) মাওয়ারেদী,
(১৯) নাযমুদ্দুরার,
(২০) মুদ্বীহুল কুরআন,
(২১) দুররুল মানছুর,
(২২) দুররুল মাছূন,
(২৩) আল জাওয়াহির,
(২৪) আত্ তাসহীল,
(২৫) ফাতহুল ক্বাদীর,
(২৬) হাশিয়াতুশ্ শিহাব,
(২৭) মাওয়াহেবুর রহমান,
(২৮) হাক্কানী,
(২৯) মাজেদী,
(৩০) কাশফুর রহমান,
(৩১) ওছমানী,
(৩২) খাযায়েনুল ইরফান,
(৩৩) জিয়াউল কুরআন,
(৩৪) ক্বাসেমী, 
(৩৫) আলী হাসান,
(৩৬) তাহেরী,
(৩৭) নূরুল কুরআন,
(৩৮) কামালাইন,
(৩৯) হাশিয়ায়ে জুমাল,
(৪০) মুছান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক,
(৪১) দালায়েলুন নবুওওয়াত,
(৪২) ফেরদাউস্ লি দায়লামী,
(৪৩) আবু নাঈম,
(৪৪) মুসনদে আহমদ,
(৪৫) হাকেম,
(৪৬) শরহুস্ সুন্নাহ্,
(৪৭) মিশকাত,
(৪৮) মিরকাত,
(৪৯) আশয়াতুল লুময়াত,
(৫০) মুযাহেরে হক্ব,
(৫১) ফয়জুল ক্বাদীর,
(৫২) মাওজুআতুল কবীর, 
(৫৩) খাছায়েছুল কুবরা,
(৫৪) মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া,
(৫৫) শরহে মাওয়াহেব,
(৫৬) সীরতে হালবীয়া,
(৫৭) নি’মাতুল কুবরা,
(৫৮) বুলুগুল আমানী,
(৫৯) ইবলুল আসাকির,
(৬০) জাওয়াহিরুল বিহার,
(৬১) তাহ্ক্বীকুল মাকাম,
(৬২) শরফুল আলম,
(৬৩) তাওয়ারিখে মুহম্মদী,
(৬৪) উমদাতুন নুকূল,
(৬৫) বেদায়া ওয়ান নেহায়া,
(৬৬) আনওয়ারে মাহমুদীয়া,
(৬৭) নুযহাতুল মাযালিশ,
(৬৮) মাদারেজুন নবুওওয়াত,
(৬৯) হাদিয়াতুল মাহ্দী,
(৭০) আল আনওয়ার ফী মাওলিদিন্ নাবিয়্যীল মুহম্মদ,
(৭১) নূরে মুহম্মদী,
(৭২) মকতুবাত শরীফ,
(৭৩) হাদিকায়ে নাদিয়া শরহে তরীকায়ে মুহম্মদীয়া,
(৭৪) মায়ারিফে মুহম্মদী,
(৭৫) ইওয়াকীত, ইত্যাদি।}

No comments

ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য।

  ডাল একটি বরকতময় পবিত্র খাদ্য। ডাল খাওয়ার ফলে কলব প্রসারিত হয় এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়। পূর্ববর্তী হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উ...

Powered by Blogger.