এপ্রিল ফুল – বারংবার কাফিরদের দ্বারা প্রতারিত হয়েও মুসলিমরা শিক্ষা গ্রহণ করে না কেন !

‘এপ্রিল ফুল’ অর্থাৎ এপ্রিলের বোকা
– এটি মুসলিমদের জন্য ইতিহাসের এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। এইদিনে সরলপ্রাণ (আসলে বোকা) মুসলমানগণ
ধোঁকা ও প্রতারণার শিকার এদিন কাফিররা মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিয়ে নির্মমভাবে শহীদ করেছিল।
যার কারণে কাফিররা আজও আনন্দ করে উদযাপন করে এই দিনটি।
৭১১ ঈসায়ী সনে উমাইয়া শাসনামলে বীর মুজাহিদ তারিক বিন জিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি
খুব কম সংখ্যক মুসলিম সৈন্য নিয়ে নৌবহর ভূমধ্যসাগরে ভাসিয়ে দিয়ে ঘোষণা দিয়ে ছিলেন যে
– “ হে মুসলিম বাহিনী! আপনাদের সামনে শত্রুসেনা এবং পিছনে ভূমধ্যসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা, আপনারা কি ভূমধ্যসাগরে ডুবে নিজেদের জীবনকে বিপন্ন করতে চান? নাকি অত্যাচারী স্পেনীয় যালিম শাসক রডরিকের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে
জিহাদ করে ইসলামের বিজয় নিশান স্পেনের বুকে উড়াতে চান। যদি তাই হয়, তাহলে সামনে অগ্রসর হোন।“
মুসলমান সৈন্যরা উনার এ ঈমানদীপ্ত জজবাপূর্ণ ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেন এবং বিজয়
লাভ করেন। ৭১২ ঈসায়ী সন হতে ৭১৪ ঈসায়ী সনের মধ্যে যালিম খ্রিস্টান রাজার শোষিত স্পেনের
প্রায় সমগ্র অঞ্চল শান্তির দ্বীন ইসলামের সুশীতল পতাকাতলে এসে গড়ে উঠেছিলো গ্রানাডা
ও কর্ডোভায় প্রায় ৮০০ বছরের আলোড়ন সৃষ্টিকারী ইসলামী সভ্যতা।
এরপর কয়েক শতাব্দী স্পেনে মুসলিম শাসন চললেও একদিকে শাসকরা অনৈসলামিক অর্থাৎ শরীয়তবিরোধী
কাজে মত্ত হয়ে উঠে। অপরদিকে মুনাফিক ও ধর্মব্যবসায়ীরাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। এই সুযোগকে
চরমভাবে গ্রহণ করে মহা যালিম খ্রিস্টান শাসক ফার্ডিনান্ড ও ইসাবেলা দম্পতি।
তারা বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসায় তাদের খ্রিস্টান গুপ্তচর ব্যক্তিকে ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদরাসার উস্তাদ পদেও
ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়। সেই সাথে তারা ধর্মব্যবসায়ী আলেমদের(উলামায়ে ‘সূ’) হাত করতে
সমর্থ হয়। তারা সবাই ইসলামী আদর্শের উপর অটলতা ছেড়ে দিয়ে ঢিলেঢালা চলার পক্ষে জনমত
তৈরি করে। ফলত, মুসলমান তাদের ঈমানী বল হারিয়ে
ফেলে। সেইসাথে তারা আরো প্রচার করে যে,
খ্রিস্টানরা
মুসলমানদের শত্রু নয়।
এইরূপ ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে ধুরন্ধর ফার্ডিনান্ড দম্পতি অবশেষে মুসলমানদের
থেকে পর্যায়ক্রমে স্পেন ছিনিয়ে নেয়। তারা প্রথমে আল হামরা দুর্গের পতন ঘটায়। এরপর গ্রানাডা
তুলে দিতে বলে। দিশেহারা, ঈমানহারা, বিভ্রান্ত মুসলমানরা মুনাফিক ও উলামায়ে সূ’দের প্রতারণার কারণে
তখন খুব সহজেই তাদের কাছে দেশটা সোপর্দ করে দেয়।
মুসলিম শাসনের পতনের পর কচুকাটা করা হয় মুসলিমদের এবং তারপর রাজা ফার্ডিনান্ড আদেশ
জারি করে মসজিদগুলোকে নিরাপদ হিসাবে ঘোষণা করে। এই আদেশে আরো বলা হয় যে, যারা মসজিদে আশ্রয় নেবে তারা নিরাপদ থাকবে। অসংখ্য স্পেনীয় মুসলমান
সরল বিশ্বাসে মসজিদগুলোতে আশ্রয় গ্রহণ করে আবদ্ধ হয়। যালিম খ্রিস্টান শত্রুরা মসজিদগুলিকে
তালাবদ্ধ করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয় অবশিষ্ট স্পেনীয় মুসলমানদের। আর বাইরে
থেকে যালিম খ্রিস্টনরা উল্লাসভরে কৌতুক করে সমস্বরে Fool! Fool!! বলে অট্টহাসি আর চিৎকারে মেতে
উঠে।
দিনটি ছিলো ১লা এপ্রিল ১৪৯২ ঈসায়ী সন। অদ্যাবধি প্রতারক খ্রিস্টানরা তাদের সেই
শঠতার স্মরণে ধোঁকা বা প্রতারণার দিবস হিসেবে পালন করে ‘এপ্রিল ফুল’।
মহান আল্লাহ পাকের আদেশ ও নিষেধ অমান্য করে কাফিরদের উপরে বিশ্বাস করার কারণে বর্বর, অসভ্য, যালিম খ্রিস্টানদের প্রতারণার
ফলে মুসলমানদেরই হাতে গড়ে উঠা একটি সভ্যতা লাখ-লাখ মুসলমানদেরই তাজা খুনের স্রোতে ভেসে
যায়।
কাফিরদের উপরে বিশ্বাস করা এবং মুসলিমদের ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতার ফল
হল স্পেনের মুসলিমদের গণহত্যা ও মুসলিম শাসনের অবসান। যার পরেও আমরা শিক্ষা নিই নি।
এরপরও একের পর এক গণহত্যা হয়েছে ঠিক একই কারণে। যার একটি বড় উদাহরণ হল কয়েকবছর আগে
ঘটা বসনিয়াতে মুসলিমদের গণহত্যা। আর ভারতে তো এমন উদাহরণ ভুরিভুরি।
তাই মুসলিমদের উচিত, কাফির-মুশরিক ও মুনাফিক-ধর্মব্যবসায়ী
উলামায়ে সূ’দের কথা না শুনে, কাফিরদের উপরে বিশ্বাস
না করা ও তাদের সাথে বন্ধুত্ব না করা।
শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য কয়েকটি পবিত্র আয়াত শরীফ -
১) “নিশ্চয়ই সমস্ত প্রাণীর মাঝে মহান আল্লাহ পাকের নিকট কাফিররাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা ঈমান আনেনি।” (সূরা আনফাল : আয়াত ৫৫)
২) “নিশ্চয়ই কাফিররা মহান আল্লাহতায়ালার সাথে শত্রুতা করে।” (সূরা বাকারা : আয়াত
৯৮)
৩) “তোমরা (মুসলমানরা) তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে প্রথমতঃ ইহুদীদেরকে
অতঃপর মুশরিকদেরকে।” (সূরা মায়িদা : আয়াত ৮২)
৪) নিশ্চয়ই মুশরিকরা নাপাক বা অপবিত্র। (সূরা তাওবাহ : আয়াত ২৮)
৫) “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা
একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত
হবে।” (সূরা মায়িদা : আয়াত ৫১)
৬) "হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো
না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন
ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত
বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে
বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন
করতে সমর্থ হও।" (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১১৮)
৭) "(হে ঈমানদারগণ) দেখো, তোমরাই তাদের ভালোবাস, তারা (কাফিররা) কিন্তু তোমাদের প্রতি মোটেও মুহববত পোষণ করে
না। আর তোমরা সমস্ত কিতাবেই বিশ্বাস কর। অথচ তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে, বলে, আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে
তারা যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের উপর রোষবশতঃ
আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। বলুন, তোমরা আক্রোশে মরতে
থাক। আর আল্লাহ মনের কথা ভালই জানেন।" ( সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১১৯)
৮) " তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়;
তাহলে তাদের
খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ
কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের
কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে।"
( সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত ১২০)
No comments