পবিত্র দ্বীন ইসলামে খেলাধুলা হারাম হওয়ার কারণ সমুহ:

পবিত্র দ্বীন ইসলামে খেলাধুলা হারাম হওয়ার কারণ সমুহ:
------------------------
যত প্রকার খেলা রয়েছে তার প্রত্যেকটির মধ্যেই না কোন দ্বীনি ফায়দা রয়েছে এবং
না কোন দুনিয়াবী ফায়দা রয়েছে। বরং প্রতিটি খেলা তিনটি অবস্থার কোন এক অবস্থা থেকে
খালি নয়। হয় তা কুফরী হবে অথবা হারাম হবে,
আর না হয়
তা মাকরূহ হবে।
.
১) কালামুল্লাহ শরীফে কি বলা আছে?
--------------------
ক) মহান আল্লাহ পাক তিনি স্পষ্টভাষায় ইরশাদ করেছেন, “আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী
কোনো কিছু ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি,
আমি এগুলো
যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি; কিন্তু তাদের অধিকাংশই
বোঝে না।” (সূরা দুখান : আয়াত শরীফ ৩৮,
৩৯)
.
খ) মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন,
“আমি নভোমন্ডল, ভূ-মন্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী যা আছে তা খেলাচ্ছলে সৃষ্টি
করিনি। ক্বিয়ামত অবশ্যই আসবে। অতএব, পরম অবজ্ঞার সাথে ওদের
ক্রিয়াকর্ম উপক্ষো করুন।” (সূরা হিজর : আয়াত শরীফ ৮৫)
.
গ) মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন,
“আমি নভোমন্ডল, ভূ-মন্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী যা আছে তা খেলাচ্ছলে সৃষ্টি
করিনি। ক্বিয়ামত অবশ্যই আসবে। অতএব, পরম অবজ্ঞার সাথে ওদের
খেলাধুলা উপেক্ষা করুন।” (সূরা হিজর : আয়াত শরীফ ৮৫)
.
২) হাদীস শরীফে কি বলা আছে?
-----------------------
ক) হাদীছ শরীফের বিখ্যাত কিতাব ‘মুসতাদরেকে হাকিম’ এর মধ্যে হযরত আবু হুরায়রা
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে,
আল্লাহ পাক-এর
হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘সর্বপ্রকার খেলাধুলা হারাম।
তিনটি বিষয় খেলাধুলার অন্তর্ভুক্ত নয়। যেমন, ১. তীরধনুক চালনা করা, ২. অশ্বকে প্রশিক্ষণ দান
করা, ৩ স্ত্রীর সাথে শরীয়তসম্মত হাসি-খুশী
করা।’
.
খ) হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
ইরশাদ করেন, মু’মিনের শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণ হচ্ছে
সাতার কাটা,আর নারীর শ্রেষ্ঠ কাজ হচ্ছে সূতা
কাটা।’
.
গ) ‘প্রতিযোগিতা বৈধ কেবল তীরন্দাজিতে,
উট ও ঘোড়
দৌড়ে। [তিরমিযী : ১৭০০; নাসাঈ : ৩৬০০]
৩) স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য কিংবা ব্যায়ামের জন্য খেলাধুলার দরকার কতটা সঠিক?
---------------------
হাদীছ শরীফ বা শরীয়তে যে সমস্ত বিষয়গুলোকে জায়িয বলা হয়েছে বা অনুমোদন করা
হয়েছে, সে সমস্ত বিষয়গুলোতে যেমন দ্বীনি
ফায়দা রয়েছে, তেমনি দুনিয়াবী ফায়দাও নিহিত
রয়েছে। যেমন, তীর চালনা করা, অশ্বকে প্রশিক্ষণ দেয়া, সাতার কাটা, দৌড় অনুশীলন ইত্যাদি
জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের অন্তর্ভুক্তএবং স্বাস্থ্যকে সুঠাম ও বলিষ্ঠ রাখার কারণ।
.
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “কোন ব্যক্তির জন্য দ্বীনের
সৌন্দর্য হলো, অহেতুক বা অপ্রয়োজনীয় কাজ-কর্ম
থেকে বিরত থাকা।’(তিরমিযী, ইবনে মাযাহ, মুয়াত্তা)
শুধুমাত্র ব্যায়ামের জন্য,বিধর্মী, বিজাতি ও বেদ্বীনদের দ্বারা প্রবর্তিত ক্রিকেট বা ফুটবল,অলিম্পিক খেলা জায়িয হতে পারে না। কারণ,ব্যায়ামের জন্য হাদীছ শরীফে বর্ণিত বিষয়গুলো যেমন তীর চালনা
করা, অশ্বকে প্রশিক্ষণ দেয়া,সাতার কাটা, দৌড় অনুশীলন করা ইত্যাদিই
যথেষ্ট। আর বিনোদন, সেটা যদি নাজায়িয পদ্ধতিতে
হয় তাহলে যত সামান্যই হোক তাও সম্পূর্ণ নাজায়িয।
.
এসম্পর্কে হাফিযে হাদীছ হযরত মাওলানা মুহম্মদ রুহুল আমীন বশিরহাটি রহমতুল্লাহি
আলাইহি ‘ফতওয়ায়ে আমিনিয়া’ কিতাবে বলেছেন,
‘জায়িয
কাজ দ্বারা যখন ব্যায়াম করার উপায় আছে,
তখন নাজায়িয
কাজের দ্বারা কিরূপে জায়িয হবে? খেলায় প্রতিযোগিতা করলে
কি ফল হবে? কিন্তু লাঠি, তীর ছোড়ো,তরবারী ভাঁজা, ঘোড়-দৌড় ইত্যাদিতে শত্রুদের হস্ত হতে কতকটা নিষ্কৃতি লাভের
উপায় হতে পারে।পক্ষান্তরে খেলাতে এই প্রকার কোন লাভ হতে পারেনা। বরং ওটা খাঁটি খেলবাজি
ভিন্ন আর কিছুই নয়।কাজেই ওটা কিছুতেই জায়িয হতে পারে না।"
.
৪) খেলাধুলার জন্য টাকা খরচ করা অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত:
---------------
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
‘খাও, পান করো; অপচয় করো না। নিশ্চয়ই
মহান আল্লাহ পাক তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
“নিশ্চয়ই
(সর্বপ্রকার) অপচয়কারী শয়তানের ভাই।” (সূরা বণী ইসরাঈল : আয়াত শরীফ ২৭)
.
খেলাধুলার ফলে সময় নষ্ট হয়, কাজ নষ্ট হয়, পয়সা নষ্ট হয়,
স্বাস্থ্য
নষ্ট হয়, বাজি ধরা, হাতে তালি দেয়া,
ছতর খোলা
ইত্যাদি অসংখ্যগুনাহর সংমিশ্রণ ঘটে থাকে। খেলার কারণে ফরয নামায পর্যন্ত ক্বাযা হয়, কুসংসর্গে মেশা ইত্যাদিসহ শরয়ী হুকুম-আহকাম পালনে ব্যাঘাত ঘটে।
অর্থাৎ একদিকে যেমন স্বাস্থ্য সময় ও টাকা-পয়সার অপচয় হয় তদ্রুপ পরস্পরের মধ্যে
হিংসা-বিদ্বেষও সৃষ্টি হয়। সুতরাং তা জায়িয নয়।
.
৫) মুসলমানের জন্য খেলাধুলা চিত্ত বিনোদন নয়ঃ
---------------------
যারা খেলায় মগ্ন তারা বলে চিত্তবিনোদনের প্রয়োজনে খেলার দরকার আছে যার কোন প্রমান
তারা শরিয়ত থেকে দিতে পারবেনা। একজনের মুসলমানের অন্তরের প্রশান্তি কিসে আসবে তা আল্লাহ
পাক বলে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বান্দাকে লক্ষ্য উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা
শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ (সুরা রা’দ
: আয়াত ২৮)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,‘আর জিন ও মানুষকে কেবল
এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে।’ (সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত : ৫৬)
তার মানে অন্তরের প্রশান্তি খেলায় নয় ,
আল্লাহর
যিকিরে রয়েছে।
.
৬) খেলা-ধূলায় মুসলমানগণকে নিমজ্জিত রাখা কাফির-মুশরিকদেরসূক্ষ সুদূর প্রসারী
চক্রান্ত:
-------------------
ক্রিকেট, ফুটবল এবং এ জাতীয় সকল খেলাধুলার
উদ্ভাবক হচ্ছে বিধর্মীরা। অর্থাৎ বর্তমানে প্রচলিত সমস্ত খেলাধুলাই বিধর্মীদের দ্বারা
প্রবর্তিত তাহলে মুসলমানদের জন্য তা অনুসরণ ও সমর্থন করা কি করে জায়িয হতে পারে? কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,”তোমরা ইহুদী-নাছারা তথা বিধর্মীদের অনুসরন করোনা।“ বাংলাদেশে এ মৌসুম আসলে স্কুল-কলেজে, পাড়ায়-মহল্লায় ফুটবল খেলা হয়। ইদানীং মেয়েদেরকেও বাধ্য
করা হচ্ছে ফুটবল খেলার জন্য(নাউযুবিল্লাহ)।
.
মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করে কুফরীতে নিমজ্জিত করার জন্য ইহুদী-খ্রিস্টানরা বিশ্বকাপ
ক্রিকেট, ফুটবল, অলিম্পিক ইত্যাদি নানা প্রকার হুজুগ দ্বারা মুসলমানদেরকে হারাম
আনন্দে মশগুল করে দিচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “ইহুদী-নাছারা তথা আহলে কিতাবদের মধ্যে অনেকেই প্রতিহিংসাবশত চায় যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদের যে কোন রকমে কাফিরে পরিণত করতে।”
(সূরা বাক্বারা : আয়াত শরীফ ১০৯)
.
তাই তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে থাকে,
মুসলমানদেরকে
ঈমানহারা করার জন্য। যেমন একদিকে খেলার সাথে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে চেষ্টা করছে, অপরদিকে টেলিভিশনে খেলা ও হাজারো অশ্লীলতা দেখিয়ে মুসলমানদের
ধর্মীয় অনুভূতি নষ্ট করে চরম পাপাচারে মত্ত করার কোশেশ করে যাচ্ছে। মাঠে গিয়ে হোক
আর টিভিতে হোক সর্বাবস্থায়ই খেলা দেখা নাজায়েজ ও কবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত।
খেলা সম্পর্কিত কোন দেশকে, দলকে বা ব্যক্তিকে সমর্থন
করা, প্রশংসা করা, খেলা দেখার ব্যাপারে সাহায্য করা, পতাকা উড়ানো, দেশের, দলের, ব্যক্তির জয় কামনা করে
দোয়া করা, রোযা রাখা, দেশের, দলের, ব্যক্তির জয়ে খুশি প্রকাশ করা, হাতে তালি দেয়া,
রং ছিটানো
ও শুকরিয়া আদায় করা সম্পূর্ণ নাজায়িজ।
তাই নিজের ঈমান এবং আমল ঠিক রেখে যদি ইহকাল এবং পরকালে মুক্তি পেতে চান তাহলে খেলাধুলা
বর্জন করুন।
No comments